জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান-ফতওয়া বিভাগ-আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা-সমাধান ফতওয়া বিভাগ- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম

সমস্যা সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

 

 

সালাত

সমস্যা: আমরা জানি যে, মহিলারা ঈদের জামায়াত এবং অন্যান্য নামায রাসুল (সা.)-এর যামানায় মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করেছেন যা অনেক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে যে, শুধু ফিতনার আশংকায় তাদেরকে মসজিদে ও ঈদের নামাযে শরীক হতে বারণ করা যাবে কিনা
?এখানে কিয়াছকে হাদীসের ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কি না! বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ আলাউদ্দীন

চরফ্যাশন, ভোলা

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসুল (সা.)-এর যুগে মহিলাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামায ইত্যাদিতে মসজিদে যাওয়ার যে অনুমতি ছিল তার কারণ ছিলো যাতে মহিলারা নামায, জুমা ইত্যাদির পদ্ধতি শিখতে পারে। আর সে যুগ নবী (সা.)-এর পবিত্র যুগ ছিলো। পরবর্তীতে নবী সা, এর ওফাতের পর যখন হযরত ওমর (রাযি.)-এর যামানা আসলো তখন তিনি প্রখ্যাত সাহাবা কেরামের সাথে পরামর্শ করে
হাদীসের আলোকে মহিলাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াত এবং জুমা, ঈদের নামাযের জামায়াতে নিষেধ করা হয়। মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (রাযি.) হতে বর্ণিত, বর্তমান মহিলারা যে ধরনের সাজসজ্জা করে মসজিদে যাচ্ছে, নবী করীম (সা.) যদি তা
দেখতেন, তখন পরিষ্কার তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন। সহীহ মুসলিম: ১/১৮৩, সুনানে আবু দাউদ; ১/২২৩, মুসনদে বায্‌যার: ২/১৪৯, আদ-দুররুল মুখতার: ১/৫৬৬

সমস্যা: এমন ব্যক্তি যে এক মুষ্ঠি হওয়ার আগেই দাড়ি কেটে ফেলে, তার ইমামতি ও খেতাবতের হুকুম কী? এবং দাড়ি এক মুষ্ঠি হওয়ার আগে কাটলে কোন গোনাহ হবে কি না?

মাইনুদ্দীন

চাঁদপুর

শরয়ী সমাধান: শরীয়তের মধ্যে দাড়ি মুণ্ডানো বা এক মুষ্ঠির ভেতরে কর্তন করা কবীরা গুনাহ। কেননা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কারো থেকে এক মুষ্ঠির কম দাড়ি কর্তন করার প্রমাণ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি এ মুষ্ঠির ভিতর নিয়মিত দাড়ি কর্তন করে, সে শরীয়তের দৃষ্টিতে ফাসেক এবং ফাসেক ব্যক্তি ইমামতি ও খেতাবতের মত সম্মানিত পদের অযোগ্য। তার ইমামতি মাকরুহে তাহরীমী ও নাজায়েয।

মসজিদের মুতাওয়াল্লী বা মসজিদ কমিটির দীনী দায়িত্ব হলো, যথা শীঘ্রই সম্ভব উক্ত ফাসিক অযোগ্য ইমামকে অব্যাহতি দিয়ে তদস্থলে একজন দীনদার পরহেজগার সহীহ
শুদ্ধ কুরআন শরীফ পাঠকরী আলেমে দীনকে ইমাম নিয়োগ করা। নতুবা ফাসেক অযোগ্য ইমাম দ্বারা মুসল্লিদের নামায নষ্ট করার কারণে তাদেরকে আল্লাহর নিকট কঠোর জবাবদিহিতার সম্মুখিন হতে হবে। সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৫, ফতোয়ায়ে শামী: ২/২৯৮, ফতোয়ায়ে শামী: ২/২৯৯, কবীরী ৪৭৯

সমস্যা: বর্তমানে দেখা যায় ফ্যাশন করতে গিয়ে এতো পাতলা সাদা লুঙ্গি পরা হয় যার ফলে অনেক সময় নামায আদায় করলে পিছন থেকে সতর দেখা যায়। এমন পাতলা লুঙ্গি পরে নামায আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

শরয়ী সমাধান: ফিকহ ও ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায়, যদি এ ধরণের পাতলা লুঙ্গির ওপর সতর ঢাকা যায় পরিমাণ মোটা অন্য কোন জামা ইত্যাদি না পরে (শুধু ওই লুঙ্গিটি পরিধান করে) অথবা (তার ওপরও) এতো পাতলা পোশাক পরেছে যে উভয়টি মিলেও সতর ঢাকা যায় পরিমাণ মোটা না হয়, তাহলে এ ধরণের কাপড়ে নামায তো শুদ্ধ হবেই না বরং সতর ঢাকার ফরজ তরক করার জন্য গুনাহগার হবে। তাই নামায পুনরায় পরতে হবে। ফতওয়ায়ে শামী: ২/৮৪, হিন্দিয়া: ১/৫৮, মাহমুদিয়া: ৯/২২৮, আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবুল আরবা’হ: ১/১৫২

সমস্যা: নামাযে মাথা ঢাকা বা টুপি পরিধানের বিধান কী? অনেকে মনে করে টুপি ছাড়া খালি মাথায় নামায আদায় মাকরুহ। জানার বিষয় হলো, এ ধরণের মনে করার ব্যাপারে শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন!

শরয়ী সমাধান: ফিকহ ও ফতওয়ার কিতাবাদি থেকে বোঝা যায়, যেহেতু আলোচ্য মাসআলার হুকুম বর্ণনার ভিত্তি হচ্ছে লোক-প্রচলন অর্থাৎ লোক-প্রচলনে মাথা ঢাকাটা আদব ও সম্মানের বিষয় হওয়া না হওয়ার ওপর। তাই যেহেতু পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা এটাকে আদব ও সম্মানের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে না, তাই তাদের জন্য খালি মাথায় নামাযের অনুমতি থাকলেও আমাদের পূর্বাঞ্চলীয়দের নিকট এটা আদব ও সম্মানের বিষয় হওয়ায় আমাদের জন্য মাথা ঢেকেই নামায আদায় করা উত্তম। সুতরাং গ্রহণযোগ্য কোন ওযর ও নিজেকে হেয় করার মানসিকতা ছাড়া শুধুই অলসতা ও অনিহাবশত খালি মাথায় নামাযাদায় মাকরুহে তানযীহী। ফতওয়ায়ে শামী: ২/৪০৭, হিন্দিয়া: ১/১০৬, হক্কানিয়া: ৩/২১৩, খইরুল ফতোয়া: ২/৪২১, জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: ১/১৪০

সমস্যা: হারাম শরীফে নামায পড়লে এ রাকাতে একলক্ষ রাকাত নামাযের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এটি কি কেবল মসজিদে হারামে নাকি পুরো হারাম শরীফের এরিয়ায় এই সাওয়াব পাওয়া যাবে?

মু. এরশাদুল হক

পানির চড়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: উক্ত প্রশ্নের ব্যাপারে আমাদের উলামায়ে কেরামের কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন, এ হুকুমটি যারা মসজিদে হারামে ফরয আদায় করে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কেননা হাদিস শরীফে নফল নামাযে ঘরে পড়া উত্তম বলা হয়েছে। আর কেউ বলেন, এ ফযীলত পুরো হারামের জন্য প্রযোজ্য হবে। শুধু মসজিদে হারামের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে না। কিন্তু হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে মসজিদে হারামের কথা উল্লেখ আছে। তবে যে সমস্ত মহিলারা পুরুষদের ভিড়ের কারণে মসজিদে হারামে নামায পড়তে অক্ষম হয়, তাদের ক্ষেত্রে এবং অসুস্থ ব্যক্তি যারা নিয়মিত মসজিদে হারামে যেতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতের ওপর আমল করে মসজিদে হারামের সাওয়াব পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। সুনানে ইবনে মাজাহ, ১/১০১, হাশিয়াতু ইবনে মাজাহ: ১/১০১, মিরকাতুল মাফাতীহ: ২/৩৬৮, আহসানুল ফতোয়া: ৩/৩৪

সমস্যা: মেহরাবের ভেতরে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব নামায পড়ানো শরীয়ত সম্মত হবে কিনা?

মু. হুমায়ুর কবির

খামার পাটুরিয়া, গুরুদাশপুর, নাটোর

শরয়ী সমাধান: মেহরাবের ভিতর ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে নামায পড়ালে বিশেষ কোন অসুবিধা নেই। যদি ইমাম সাহেবকে প্রথম কাতারের সব মুসল্লিরা দেখতে পায়। আগে যে তাকে মাকরূহ বলা হত তার কারণ ছিল যে, সে সময় মেহরাবকে মসজিদের বাইরে মনে করা হত। কিন্তু পরে আল্লামা শামী তহকীক করে লিখেছেন যে, মেহরাব মসজিদের বাইরের অংশ নয় বরং মসজিদের অন্তর্ভুক্ত।  ফতোয়া মাহমূদিয়া; ৬/৫০৪, এমদাদুল ফতোয়া: ১/৩৩৪

সমস্যা: জনৈক ইমাম সাহেব কুরআন পাকের তেলাওয়াতের সময় বেশকিছু হরফ সঠিকভাবে আদায় করতে পারে না বা ইচ্ছাকৃত আদায় করে ন। বিশেষ করে, ص, س ও ز এ তিন হরফের স্থানে কখনো ت পড়ে আবার কখনো ث পড়ে থাকে। যেমন- اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَۙ۰۰۵-এর স্থনে اهدنا التراط বা اهدنا الثرات পড়ে, نَسْتَعِيْنُؕ۰۰۴-Gi স্থানে نثتعين পড়ে। অথচ এই ইমামের পিছনে বিজ্ঞ হাফেয, মুফতিগণ নামায পড়ে থাকে! আর কোন কোন সময় শুধু জনসাধারণরা পড়ে থাকে! এখন আমার জানার বিষয় হলো, এ অবস্থায় মুক্তাদীগণের নামাযের হুকুম কী? এবং মসজিদ পরিচলনা কমিটির করণীয় কী?

আবুল খাইর

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: যে ইমাম কিরাআতের মধ্যে প্রশ্লে উল্লিখিত বর্ণনা মতে লাহনে জলী করে থাকে; সে ইমামতির যোগ্য নয়। তার পিছনে শুদ্ধভাবে পাঠকারী ব্যক্তি যদি নামায পড়ে থাকে, কারো নামায সহীহ হবে না। আর যদি শুধু উক্ত ভুলকারী ইমামের মত ব্যক্তিরা নামায পড়ে তখন তাদের নামায সহীহ হবে। সুতরাং মসজিদের মুতাওয়াল্লী বা মসজিদ কমিটির দীনী দায়িত্ব হলো এরকম অশুদ্ধ কুরআন পাঠকারী ইমামকে যথাশীঘ্রই অব্যাহতি দিয়ে তদস্থলে একজন সহীহ শুদ্ধ কুরআন পাঠকারী আলেমে দীনকে ইমাম নিযুক্ত করা। নতুবা তাদের কে মুসল্লীগণের নামায নষ্ট করার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। ফতোয়ায়ে আলমগীরী: ১/৮৬, আল-মুহীতুল বুরহানী: ১/৩৬৬, ফতোয়ায়ে কাছেমিয়া: ৯/৬০৩

সমস্যা: চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয কী না? যদি জায়েয হয়, তাহলে কোন অবস্থায় জায়েয এবং কোন অবস্থায় নাজায়েয বিশদভাবে দলিলসহ জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

মুফতী আশরাফ

জামিয়া আবু হানিফা বাংলাদেশ

শরয়ী সমাধান: কোন ব্যক্তি যদি মাটিতে নামাযের সিজদা করতে অক্ষম হয় এবং কোন প্রকারে মাটিতে সিজদা করতে না পারে বা কোন মুসলমান অভিজ্ঞ ডাক্তার তাকে মাটিতে সিজদা নিষেধ করে বা মাটিতে সিজদা করলে তার রোগ বৃদ্ধি হওয়ার আশংকা প্রকাশ করে তখন আল্লামা শামী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ফতাওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করেন, সে অবস্থায় নামাযের মধ্যে দাঁড়িয়ে এবং মাথার ইশারায় রুকু সিজদা করার তুলনায় মাটিতে বসে বা চেয়ারে বসে মাথার ইশারায় রুকু সিজদা করা উত্তম লিখেছেন এবং সে সময় কিয়াম তথা দাঁড়নোর হুকুম মাফ হয়ে যাবে লিখেছেন। ফতোয়ায়ে শামী:  ২/৫৬৭, ২/৫৬৮ বাহরুর রায়েক: ২/১৯৯, মুহীতুল বুরহানী: ৩/২৬, ফাতহুল কাদীর: ১/৪৬০, হাক্কানিয়া: ৩/৩৩

নিকাহ-তালাক

সমস্যা: আমার পুত্রবধু উম্মে জয়নাব গত ২ মে ১৯ তারিখে ডাকযোগে তার স্বামী আমান উল্লাহ আমানকে স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় তিন তলাক প্রদান করেছে মর্মে তালাকের হলফনামা প্রেরণ করে। যার ৪র্থ নাম্বার শর্তে উল্লেখ রয়েছে, আমি আমার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা ভবনা করিয়া দেখিলাম যে, এই রকম অত্যাচারী স্বামীর হাতে আমার দাম্পত্য জীবন কোন দিন সুখের হইবে না। তাই আমার
স্বামীকে তালাক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমি অদ্য কক্সবাজার নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে অত্র হলফনামায় আমি আমার স্বামী আমান উল্লাহ আমানকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বায়েন প্রদান করে তার জৌজিয়ত হতে নিজেকে মুক্ত করলাম। উল্লেখ্য যে, কাবিননামার ১৮ নাম্বার শর্তে স্বামী
স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অতএব আমার জানার বিষয় হল উক্ত অবস্থায় স্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় তালাক স্বামীর ওপর পতিত হয়েছে কী না? এবং উক্ত হলফনামার ওপর ভিত্তি করে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে কী না? বিস্তারিত শরয়ী সমাধান জানিয়ে চির কৃতজ্ঞ করবেন।

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ

টেকনাফ, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, শরীয়তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আকদ নিকাহের পর স্ত্রীকে তালাক প্রদান-ক্ষমতার একমাত্র মালিক স্বামী| স্ত্রী তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে না, বরং স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হয়। সুতরাং প্রশ্নপত্রে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে যে তিন তালাক দেওয়া হয়েছে তা স্ত্রীর ওপর পতিত হয়নি এবং তার দ্বারা তাদের বৈবাহিক সম্পর্কও ছিন্ন হয়নি, বরং তাদের সাবেক নিকাহ তখন ও বহাল রয়েছে। সুতরাং তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করতে কোন অসুবিধা নেই।

উল্লেখ্য যে, বিয়ের কাবিননামার ১৭, ১৮ নাম্বার ধারায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পন করার যে কথা উল্লেখ করা হয় তার অর্থ স্বামীকে তালাক দেওয়া নয়, বরং স্ত্রী স্বামী কর্তৃক দেয়া ক্ষমতা বলে নিজের ওপর তালাক ব্যবহার করে বিয়ে বিচ্ছেদ করার কথা। কিন্তু উক্ত তালাকের হলফনামায় স্ত্রী নিজের ওপর কোন তালাক ব্যবহার করেনি, বরং সরাসরি স্বামীকে তালাক দিয়েছে, তাই তার দেওয়া তালাক পতিত হয়নি, বরং তাদের সাবেক নিকাহ এখনো বহাল রয়েছে। বায়হাকী শরীফ: ৭/৫৯১, শামী: ৪/৪৩১, হিন্দিয়া: ১/৩৯০

সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, একটি মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। তার সাথে আমার কিছুটা আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ আমার দাদা তার দাদার ফুফিকে বিয়ে করেছে। সেই হিসেবে সে আমার ভাতিজি হয়। অতএব আমার জানার বিষয় হল উক্ত সম্পর্কিত ভাতিজির সাথে আমার বৈবাহিক সম্পর্ক শুদ্ধ হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ আজিমুদ্দীন

ফেনী

শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত মহিলা আপনার দূরসম্পর্কীয় ভাতিজি হিসেবে গণ্য হয়েছে। আপনার নিকটবর্তী কোন ভাতিজি নয়। তাই উক্ত মহিলার সাথে
বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়তে কোন বাধা নেই। সূরা আন-নিসা: ২৩-২৪), শামী: ৪/৯৯, ফতাওয়ায়ে দারুল উলুম: ৭/১৭৮, বাদায়েউস সানায়ে: ৩/৪১১

বিবিধ

সমস্যা: আমি একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র, আমাদেরকে গবেষণাগারে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেখানো হয় যে, কিভাবে টেস্ট টিউবের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেওয়া যায়। সেখানে ৩টি পদ্ধতি শিখানো হয়। ১. স্বামী-স্ত্রীর বীর্য সংমিশ্রণ করে উক্ত স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর অথবা অন্য কোন মহিলার জরায়ুতে স্থানান্তর করা হয়। ২. স্বামীর বীর্য ইনজেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে স্ত্রীর জরায়ুতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ৩. স্বামী-স্ত্রীর বীর্য সংগ্রহ করে টিউবের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার প্রতিপালন করে সেই স্ত্রীর
জরায়ুতে স্থানান্তর করা হয় ইত্যাদি। এখন জানার বিষয় হল যে, এভাবে টেস্ট টিউবের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেওয়া জায়েয আছে কি? যদি জায়েয হয় তাহলে স্থায়ী বন্ধন এবং মীরাসনীতি জারি হবে কি? শরীয়তের প্রমাণাদি দ্বারা সমাধান দিলে চিরকৃতজ্ঞ হব।

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, স্বামীর বীর্যের সাথে স্ত্রীর বীর্যের সংমিশ্রণ করে টেস্ট টিউবের মাধ্যমে সেই স্ত্রীর জরায়ুতে পৌঁছে দেওয়ার পর বাচ্চা জন্ম দেওয়া হয় তখন উক্ত বাচ্চা ওই স্বামীর বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং স্বামীর সন্তান হিসেবে সব হুকুম-আহকাম জারি হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলেই কেবল কোন ব্যক্তি মহিলা ডাক্তারের মাধ্যমে টেস্ট টিউবের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। কেননা এটা এমন প্রয়োজন নয় যে, যার কারণে পুরুষের জন্য মহিলাদের গোপনীয় স্থান দেখা জায়েয হতে পারে। তেমনিভাবে স্বামীর বীর্য দ্বিতীয় স্ত্রীর বীর্যের সাথে সংমিশ্রণ করে প্রথম স্ত্রী বা অপর স্ত্রীর জরায়ুতে ঢুকিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া হয় তখনও ওই বাচ্চা স্বামীর বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে, এবং যে স্ত্রী থেকে প্রসব করা হয়েছে সন্তান তারই সন্তান হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সন্তানের মধ্যে পুরুষের বীর্যই আসল হয়ে থাকে সেজন্যই তার থেকেই সন্তানের বংশ বিস্তার হয়। তবে যদি স্বামীর বীর্য ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের বীর্য নিয়ে স্ত্রীর বীর্যের সাথে সংমিশ্রণ করে সন্তান প্রসব করা হয় তাহলে তা জায়েয ও বৈধ হবে না। যদিও তার দ্বারা প্রসবকৃত সন্তান বর্তমান স্বামীর বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে। কেননা যেহেতু সন্তান তার আকদকৃত স্ত্রী কর্তৃক প্রসব হয়েছে। তাই তার বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হলেও এটা মারাত্মক কবীরা গোনাহ, যার থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। সূরা আন-নূর: ৩১, সূরা আল-মাআরিজ: ৩১, মিশকাত: ২৬৮, ফতোয়ায়ে শামী: ৫/২১৩, বাহরুর রায়েক ১/১৫৬, জাওয়াহিরুল ফতোয়া: ১/১৫৬, ১৬০

সমস্যা: আমাদের এলাকায় প্রায় সময় মাইয়্যিতকে মনজিল করা নিয়ে ঝগড়া হয়ে থাকে। কেউ এক রকম বললে আর কেউ অন্য রকম বলে থাকে। যেমন কেউ বলে: যে সামনে মাইয়িতের ডানদিকে থাকে সে সামনে মাইয়িতের বামদিকে চলে যাবে আর যে সামনে মাইয়িতের বামদিকে থাকে সে পিছনে মাইয়িতের ডানদিকে চলে যাবে আর যে পিছনে মাইয়িতের বামদিকে থাকে সে পিছনে মাইয়িতের ডানদিকে চলে যাবে আর যে পিছনে মাইয়্যিতের ডান দিকে থাকে সে সামনের মাইয়্যিতের ডানদিকে চলে যাবে। এরকম দশ কদম দশ কদম গণনা করার আগে যে যেস্থানে ছিল চল্লিশ কদম গণনা করার পর সে সেস্থানে পৌছে যায়। এখন আমার জানার বিষয় হল মনজিল করা কি? এবং তার পদ্ধতিটা কি রকম? অর্থাৎ যেই চল্লিশ কদম গণনা করা হয় চার ব্যক্তি না থামিয়ে এক সাথে চল্লিশ কদমক গণনা করবে? নাকি এক ব্যক্তি দশ কদম দশ কদকম করে গণনা করার পর ডান দিক থেকে বাম দিকে সামনে থেকে পিছছনে পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে চল্লিশ কদম শেষ করবে? শরীয়তের দৃষ্টিতে জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

মু. এমদাদ

ছাগলনাইয়া, ফেনী

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, মাইয়িতকে মনজিল করা এটি একটি সুন্নাত কাজ যা ফতোয়ায়ে শামীর মধ্যে আল্লামা শামী (রহ.) উল্লেখ করেছেন, তাহল এই যে,
মনযিল একজনই করবে বাকিরা তার সহযোগী হিসেবে থাকবে এবং যে ব্যক্তি মনযিল করবে সে মাইয়িতের মাথার দিকে মাইয়্যিতের ডান পাশে নিজের ডান কাঁধে নেবে তার পর দশ কদম চলবে। তার পর উক্ত ব্যক্তি সোজা মাইয়্যিতের ডান পায়ের দিকে চলে যাবে এবং ডান কাঁধে নেবে। এরকম করে দশ কদম চলবে। অন্য লোক ও তার সাথে থাকতে পারে। তার পর উক্ত ব্যক্তি মাইয়িতের বাম দিকে সামনে চলে যাবে তার পর মাইয়িতকে বাম কাঁধে নেবে। এরকম দশ কদম চলবে তার পর সে ব্যক্তি মাইয়্যিতের বাম পাশে পায়ের দিকে চলে যাবে এং বাম কাঁধে নিয়ে দশ কদম চলবে। এভাবে চল্লিশ কদম মনযিল করবে। এছাড়া অন্য সব মনযিল মনগড়া, যার কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি মুস্তহাব কাজ তার মধ্যে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আদ-দুররুল মুখতার; ৩/১৩৫, ফতোয়ায়ে শামী: ৩/১৩৫, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৬৪, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/৩৩

সমস্যা: সম্মানিত ফতোয়া বিভাগের কাছে আমার বিনীত আর্জি এই যে, আমার এক ছোট শালিকার কাছ থেকে আমার স্ত্রীর মাধ্যমে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা হাওলাত নেই। টাকা হাওলাত নেওয়ার কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমার ছোট শালিকা অন্যজনের সাথে পালিয়ে যায় (প্রথম স্বামী হতে অপর পুরুষের সাথে)। হাওলাতি টাকার মধ্যে একলক্ষ দশ হাজার টাকা আমার স্ত্রীর ছোট বোনের হাত হতে এবং চল্লিশ হাজার টাকা ছোট বোনের স্বামীর হাত হাত থেকে গ্রহণ করে, টাকা হাওলাত দেওয়ার সময় প্রথম স্বামী একলক্ষ দশ হাজার টাকার বিষয়টা জানত না। দ্বিতীয়জনের কাছে চলে যাওয়ার পর প্রথম স্বামী একলক্ষ দশ হাজার টাকার বিষয়টা জানতে পারে।  টাকা হাওলাত নেওয়ার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আমার ব্যক্তিগত জামানতে আমার শালিকার আয়ের কোন উৎস ছিল না। দেনমহর হিসেবে যে টাকা পাওয়ার একটা উৎস ছিল সে দেনমোহর প্রথম স্বামী এখনো পর্যন্ত পরিশোধ করেনি। পালিয়ে যাওয়ার সময় আমার শালিকা স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। এখন উভয়ে হাওলাতি টাকা দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার সবিনয় আর্জি, কুরআন হাদিসের আলোকে উক্ত টাকার সত্যিকার হকদার কে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ

নাটোর

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত ঘটনায় স্ত্রী যখন অপর লোকের সাথে পালিয়ে গেছে এবং স্বামী তাকে কোন তালাক দেয়নি। তখন পালিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী প্রথম স্বামীর দেয়া যে অলংকরাদি নিয়ে গেছে সেসব যদি মহর পরিমাণ হয় তখন তার দ্বারা স্বামীর মহর আদায় হয়ে গেছে। আর যদি মহর পরিমাণ না হয় তখন বকেয়া মহর স্বামীর নিকট স্ত্রীর প্রাপ্য হিসেবে গণ্য হবে। আর আপনি সেই স্ত্রী থেকে যে কর্জ নিয়েছেন, উক্ত কর্জের টাকা যদি স্বামীর দেয়া আমানতের টাকা থেকে দিয়ে থাকে আর স্ত্রী স্বামীর কাছে মহর বাবদ কোন টাকা না পায়, তখন সেসব টাকা স্বামীর নিকট পরিশোধ করতে হবে। আর স্ত্রী যদি স্বামীর দেওয়া অলংকারাদির মূল্য ও আগের মহরের উসুলকৃত টাকা ব্যতীত অতিরিক্ত আরও কিছু টাকা স্বামীর কাছে পেয়ে থাকে, তখন সে পরিমাণ টাকা কর্জের টাকা থেকে স্ত্রী নিতে পারবে। আর স্ত্রী যে শরীয়ত বিরোধীভাবে অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে গেছে তা শরীয়ত মতে জঘন্য গোনাহের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। এখন অপর লোকের সাথে এ পর্যন্ত যা সংসার হয়েছে সব যিনা হিসেবে গণ্য হয়েছে এবং তার কর্তব্য হল আল্লাহর নিকট তওবা করে প্রথম স্বামীর নিকট চলে যাওয়া। কেননা এখনো তাদের নিকাহ বহাল রয়েছে। ফতোয়ায়ে শামী: ৪/২৩৩, বাদায়ে সানায়ে: ৩/৪৯৩, ৪৮৬, ফতোয়ায়ে আলমগীরী: ১/৩০৬, আল-কার্জুল হাসানা ওয়াল আহকাম: ১১৭

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ