জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাকাত না দেওয়ার পরিণাম

যাকাত না দেওয়ার পরিণাম

আবদুল হালীম

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। ঈমান ও সালাতের পরেই যাকাতের স্থান। মহান আল্লাহ পৃথিবীর মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির জন্য যাকাত ফরয করেছেন। পবিত্র কুরআনে ৩২ জায়গায় যাকাত আদায় করার ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। যাকাত না দিলে সম্পদ শুধু ধনীদের কাছে জমা হয়। ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং ধনীরা ও সুদখোররা জোঁকের মতো সমাজের রক্ত শোষণ করে নিজে বড় হয়, আর সমাজকে রক্তহীন করে দেয়। তাই পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীছে যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাত না দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদিস:

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক সোনা-রুপার মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বহু পাত তৈরি করা হবে এবং সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পাঁজর কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠাণ্ডা হবে, তখনই তা গরম করা হবে (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) সেই দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। সকল বান্দার বিচার নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত তার এ অবস্থা চলতে থাকবে। অতঃপর সে তার পথ ধরবে হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।

জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উট সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন, কোন উটের মালিক যে তার হক আদায় করবে না। আর তার হক সমূহের মধ্যে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করা এবং অন্যদের দান করাও এক হক। যখন কিয়ামতের দিন আসবে তখন এক প্রশস্ত বিশাল ময়দানে তাকে উপুড় করে ফেলা হবে এবং তার সকল উট যা একটি বাচ্চাকেও হারাবে না, পূর্ণভাবে তাকে ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে ও মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে পুনরায় প্রথম দল এসে পৌঁছবে। এরূপ করা হবে এমন দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান, যাবৎ না আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তার পথ জান্নাতে অথবা জাহান্নামের দিকে দেখতে পাবে।

জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! গরু ও ছাগল সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক গরু ও ছাগলের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করবে না, কিয়ামতের দিনে তাকে এক ধুধু মাঠে উপুড় করে ফেলা হবে এবং তার সকল গরু ও ছাগল তাকে শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে ও ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে। অথচ সেদিন তার একটি গরু বা ছাগলও শিং বাঁকা, শিং হীন বা শিং ভাঙ্গা হবে না এবং একটি গরু-ছাগলকেও সে হারাবে না। যখনই তার প্রথম দল অতিক্রম করবে, তখনই শেষ দল এসে পৌঁছবে। (এ রকম করা হবে) সে দিনে, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। যাবৎ না আল্লাহর বান্দাদের বিচার-মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তার পথ হয় জান্নাতে, না হয় জাহান্নামে দেখতে পাবে।

অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! ঘোড়া সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য পাপের কারণ, কারো জন্য আবরণস্বরূপ আর কারো জন্য সওয়াবের বিষয়:

  1. যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য পাপের কারণ তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে লোক দেখানো অহংকার ও মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে।
  2. যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে আবরণস্বরূপ তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে লালন-পালন করেছে আল্লাহর রাস্তায় এবং তার সম্পর্কে ও তার পিঠে আল্লাহর হক সম্পর্কে ভুলেনি। এই ঘোড়া তার মান-সম্মানের জন্য আবরণস্বরূপ|
  3. আর যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য ছওয়াবের কারণ তা হল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে কোন চারণভূমিতে বা ঘাসের বাগানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের দেশ রক্ষার জন্য। তখন তার সে ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানের যা কিছু খাবে, সে পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে এবং তার গোবর ও প্রস্রাব পরিমাণও নেকী লেখা হবে। যদি তা আপন রশি ছিড়ে একটি অথবা দুটি মাঠও বিচরণ করে তা হলে তার পদচিহ্ন ও গোবর পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে। এছাড়া তার মালিক যদি তাকে কোন নদীর কিনারে নিয়ে যায়, আর সেটা নদী হতে পানি পান করে, অথচ মালিকের ইচ্ছা ছিল না তাকে পানি পান করানোর। তবুও সে পানি পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে।

জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! গাধা সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন, গাধার বিষয়ে আমার নিকট শুধু এই স্বতন্ত্র ও ব্যাপকার্থক আয়াতটি নাযিল হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সেদিন সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ [সুরা আল-যিলযাল ৯৯:৭-৮; মুসলিম, মিশকাত: ১৭৭৩]

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ