কাদিয়ানিরা শুধু কাফের নয়, সুস্পষ্ট যিন্দিক
পাক ভারত উপমদেশে ব্রিটিশ বেনিয়া খেদাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে মুসলমানরা, সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে আলেমগণ, মূলত উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ট হাদীস বিশারদ শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) ঐতিহাসিক ফতোয়াদানের পর ইংরেজ শাসন শোষণে আগুন ধরে যায়, তিনি বলেন, ইংরেজকবলিত ভারত দারুল হরব (শত্রুকবলিত), তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’
এ ঘোষণার পর উপমহাদেশের মুসলমানগণ ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে, প্রতিরোধে ইংরেজরাও হাজার হাজার আলেম ওলামা, মুসলমানদের প্রকাশ্যে গাছে ঝুলিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, পানিতে নিক্ষেপ করে হত্যা করে, লাখ লাখ কুরআন শরীফ জ্বালিয়ে দেয়, মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস করে দেয়া হয়, ইতোমধ্যে ব্রিটিশবিরোধী জিহাদে মুসলিম সেনাপতি মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইংরেজদের এন্টি মিশন শুরু করে, সেখান থেকে তৈরি হতে থাকে খাটি আহলে সুন্নত মতাদর্শী ঈমানী স্পৃহা সমৃদ্ধ আলেম, ইংরেজরা মুসলমানদের এই অপ্রতিরোধ্য,সুদৃঢ় ইস্পাত প্রাচীর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে দমনে ব্যর্থ হয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, তারা যুদ্ধ, নিপীড়নের পরিবর্তে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনার আশ্রয় নেয়, খোদ ইংরেজ ভাড়াটে লেখকদের স্বীকারোক্তি মতে যা Divide of rule (ভাগ কর আর শাসন কর) নামে পরিচিত।
ইতিহাস সাক্ষী, Divide of rule-Gi ছক মোতাবেক ইংরেজরা প্রচুর অর্থ সম্পদের বিনিময়ে কিছু মাথা উঁচু পরিচিত লোক ভাড়া করে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ফিতনা, মতাদর্শ ও আকীদাগত বৈপরীত্যর বীজ বপন করতে থাকেন, আহমদ রেজাখান, যার মাধ্যমে প্রোথিত আকিদাগত ফিতনা কথিত সুন্নি নামক বিদআতি, আবদুল হক বেনারসী, যার প্রোথিত বীজ কথিত আহলে হাদীস তথা লা মাযহাবী ইত্যাদি, তারাই উপমহাদেশে বেনিয়া খেদাও আন্দোলনরত আলেম-ওলামা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফতওয়া, লেখনী ইত্যাদির মাধ্যমে ফিতনার বিষবাস্প ছাড়িয়ে ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করে।
ইংরেজরা চূড়ান্তভাবে লেলিয়ে দেয় পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক স্থানের অর্ধপাগল, কুরুচিপূর্ণ স্বভাব ও প্রকৃতির গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নামক এক ব্যক্তিকে, সে নিজেকে কখনো নবী, রসুল, বুরুজি নবী, যিল্লি নবী, কখনো ছায়া নবী, মুজাদ্দিদ, আবার কখনো ঈসা, প্রতিশ্রুত মসীহ, কখনো ঈশ্বর, অবতার, তার নিকট অহি, ইলহাম আসে ইত্যাদি বানোয়াট কল্পকাহিনী প্রচারের মাধ্যমে প্রকৃত ইসলাম বলে চালিয়ে যেতে থাকে।
ইসলামে যিল্লি নবী, ছায়া নবী, বুরুজী নবী হওয়া দূরের কথা মহানবী (সা.)-এর আগমনের মধ্য দিয়ে নবুওয়াত, রিসালত, অহির দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ থাকার ব্যাপারে সর্বকালের সকল আকিদার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থাকার পরেও নিজেকে ইসলামের নবী দাবি করে ইসলামের চিরন্তন বিধানকে অস্বীকার করে বসেন, পবিত্র নবী হযরত ঈসা (আ.)-এর শানে চরম পর্যায়ের অমর্যাদাকর উক্তি করেই নিজেকেই ঈসা দাবি করে বসেন, আবার পুরুষ হওয়ার পরেও নিজেকে মরিয়ম (আ.) দাবি করে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ দাজ্জাল, মিথ্যুক, ধোঁকাবাজ, প্রতারক গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে যারা নবী কিংবা প্রতিশ্রুত মসীহ বলে বিশ্বাস করে তারাই কাদিয়ানি, সকল যুগের সকল আকিদার সকল আলেম, ইসলামি স্কলারগণের সর্বসম্মত ফতোয়ামতে এরা কাফের হওয়ার পরেও নাম ধারণ করেছে আহমদিয়া মুসলিম জামায়াত, এদের মূলকেন্দ্র ঈসরাইলে, পরিচালিত হয় লন্ডন থেকে, বাংলাদেশে এদের প্রধান কার্যালয় যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বকশি বাজার এবং চকবাজার অলি খা মসজিদের পিছনে কথিত আহমদি তথা এ কাদিয়ানিরা শুধু কাফের নয়, যিন্দিকও। কারণ দেশে হিন্দু বৌদ্ধ, ইহুদি-খ্রিস্টান সবই আছে,তারা নিজ নিজ ধর্মমতে নিজ নিজ বিশ্বাসের সাথে আছে, তাদের দ্বারা উপকার না হলেও অন্তত অপকার হচ্ছে না, তাই তাদের নিয়ে আমাদের কোন বিরোধ নেই, তারা আমরা একত্রে সহাবস্থানে বিশ্বাস করি, কাদিয়ানিরা যদি তাদের ধর্মমত নিয়ে আপরাপর ধর্মাবলম্বীদের মত থাকত তাহলে আমাদের কোন আপত্তি ছিল না।
তারা অনান্য ধর্মের মত কুফর করলে কাফের হয়েই থাকত, কিন্তু তারা সুস্পষ্টভাবে, কোনরূপ সন্দেহ ছাড়া কাফের হওয়ার পরেও নিজেদের শুধু মুসলমান দাবি করে তা নয়, একই সাথে হাদীস কোরআনের অপব্যাখ্যা করে সেই ৭৩ দলের মধ্যে একমাত্র জান্নাতী দল এবং খাটি ইসলাম বলে ধোঁকা দিয়ে চলছে, অথচ তাদের ধর্মমত বিশ্বাস করলে ইসলামের মৌলিক সকল বিধান অস্বীকার করা হয়। তাই এরা শুধু কুফর করে ক্ষান্ত নয়, একই সাথে কুফুরিকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেওয়ার কারণে যিন্দিক।
কুফুরি করলে এক ঘা, কুফরকে ইসলাম বললে একশ ঘা, তাই কাদিয়ানিরা সাধারণ কাফেরের চেয়েও মারাত্মক। এদের ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার অবকাশ কোন প্রকৃত মুসলমানের নেই, আন্তর্জাতিক ইহুদি লবির পুষ্টিতে হৃষ্টপুষ্ট এ কাদিয়ানিরা প্রায় সকল মুসলিম দেশে অমুসলিম ঘোষিত, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে এই ঘোষণা না থাকার দরুন এরা তাদের ধর্মমত প্রচারের উর্বর ক্ষেত্র হিসাবে বেঁচে নিয়েছে।
সানাউল্লাহ সানি