জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর পরও যে আমলের প্রতিদান বন্ধ হয় না

মৃত্যুর পরও যে আমলের প্রতিদান বন্ধ হয় না

মৃত্যুর পরও যে আমলের প্রতিদান বন্ধ হয় না

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়।’ (সুরা আল-ইমরান: ১৮৫)

‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা ভবে’ এ পঙ্‌ক্তিটি ইল্লখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলার ঘোষণারই অংশ। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব জানদারকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষের দুনিয়ার জীবনের সব আয়োজন বন্ধ হবে।

দুনিয়ার জীবনে মানুষ ছোট থেকে বড় যে কাজই করুন না কেন, তা হোক নিজের জন্য বা অন্যের জন্য; যে কাজই করুন না কেন, পরকালে কর্ম অনুযায়ী তার পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে।

যারা দুনিয়ার জীবনে ভালো কাজ করবে, মহান আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে; শুধু তাই নয়, তাদেরকে চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাত উপহার দেবেন। তারা তাদের কর্মের সুফল বহন করবে। এটা মহান প্রভুর ঘোষণা।

অতঃপর আল্লাহ বলেন, জেনে রেখো! দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবন ধোঁকা আর প্রতারণা ছাড়া বৈ কিছু নয়। অর্থাৎ দুনিয়ায় ভোগ বিলাসী, লোভ-লালসার জীবন পরিত্যাগ করে পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।

প্রিয়নবী (সা.) হাদিসে পাকে ইরশাদ করেন, ‘মানুষের জীবনে এমন তিনটি কাজ রয়েছে। যা শুধু জীবিত থাকা অবস্থায়ই কল্যাণমূলক কাজ নয় বরং মৃত্যুর পরও বান্দা এর উপকারিতা লাভ করবে।

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুনিয়ার জীবনের সব আয়োজন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তিনটি কাজ মানুষের কল্যাণে মৃত্যুর পরও সঙ্গী হবে। যার প্রমাণ বিশ্বনবি (সা.)-এর হাদিস:

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার (মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো তার পরিবার; তার ধন-সম্পদ ও তার আমলনামা। এর মধ্যে পরিবার ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধুমাত্র আমলনামাই থেকে যায়। (বুখারি মুসলিম)

যেহেতু মানুষের মৃত্যুর পর পরিবার, ধনসম্পদ ও আমলনামা মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করবে। আমলনামা সঙ্গে থাকবে আর পরিবার ও ধনসম্পদ কবরে যাবে না। সেহেতু মানুষের উচিত তার জীবদ্দশায় পরিবার প্রতিপালনে ধর্মীয় অনুভূতি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনা করা।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে পরকালের জবাবদিহিতার মানসিকতা সম্পন্ন লোক হিসেবে তৈরি করা। তাকওয়া ও দীন সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা। তবেই পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর পরও প্রতিফল পাওয়ার আশা করা যায়।

আবার দুনিয়ার জীবনে ধনসম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যায় ও পরের হক গ্রাস করা থেকে বিরত থাকা। কারণ অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থ মানুষের মৃত্যুর কোনো কাজে আসবে না, বরং পরকালে এ সম্পদ তার জন্য মহা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই হালাল ও বৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করা আবশ্যক।

এ কারণেই প্রিয়নবী (সা.) অন্য হাদিসে মানুষকে সতর্ক করতেই উল্লেখ করেছেন,

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) প্রিয়নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি কাজ ছাড়া মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রথমটি হলো অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে সাদকা করা, যে দানের সাওয়াব অবিরাম দানকারী মৃতবক্তির আমল নামায় পৌঁছবে।

দ্বিতীয়টি হলো এমন জ্ঞান অর্জন করা; যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। আর তৃতীয়টি হলো এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া; যে সন্তান মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। (মুসলিম)

পরিশেষে… এ দুনিয়া মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়। দুনিয়া হচ্ছে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। তাই দুনিয়াতে পরিবার প্রতিপালনের পাশাপাশি ধন-সম্পদ অর্জন করে পরকালের পাথেয় আমল অর্জন করা একান্ত কর্তব্য। এ আমলই হলো মানুষের শেষ সম্বল।

সুতরাং পরিবারকে দিতে হবে সঠিক শিক্ষা ও পথের সন্ধান। ধন-সম্পদ অর্জন করতে হবে হালাল উপায়ে। তাহলে এ পরিবার এবং ধন-সম্পদ কিয়ামাত পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে। মৃত ব্যক্তির পরকালীন জিন্দেগির জন্য আমলে পরিণত হবে। মানুষের পরকালীন জীবনের সফলতায় এ জিনিসগুলোর চিন্তা ও অনুভূতিই যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক পরিবার প্রতিপালন এবং ধন-সম্পদ অর্জন করে পরকালের চিরস্থায়ী সম্পদ আমল অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ