মানবাধিকার দিবস কিছু কথা
১০ ডিসেম্বর বিশ্বমানবাধিকার দিবস। দুনিয়াব্যাপী এ দিবস পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর হাজার হাজার সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এ দিবস পালন করে থাকে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে দুনিয়ার স্বাধীন সমস্ত রাষ্ট্রে নানা প্রতিপাদ্য বক্তব্য নিয়ে এ দিবস উদযাপন করা হয়। এ দিন বিশ্বের নির্যাতিত নিষ্পেষিত শোষিত জনগণের অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়।
আসলে ঘুরে ফিরে প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আসলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়াম আলোচনা ও র্যালির মাধ্যমে মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়। পৃথিবীর শুরুতেই সর্বপ্রথম মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স.) হিলফুল ফুযুল সংগঠন প্রতিষ্টার মাধ্যমে মানবাধিকারের সূচনা করেন। সে থেকে মূলত মানবকল্যাণে জনকল্যাণে মানবতার অধিকার সুরক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়ন হতে থাকে। দেড় হাজার বছর পরে পৃথিবীর আজকের দিনে বিশ্বমানবতার জুলুম নির্যাতন নিষ্পেষণের বিরোদ্ধে হাজার হাজার মানবাধিকার সংগঠন জন্ম নিয়েছে।
বাস্তবে এসব সংগঠনের যে উদ্দেশ্যে জন্ম এবং প্রতিষ্টা তা কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশেই বাস্তবায়ন হতে দেখছি না। জনঅধিকার, গণঅধিকার, ভোটাধিকার, ব্যাক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক কোনো অধিকার আজকের পৃথিবীতে প্রতিষ্টিত নেই। পৃথিবীর নানা দেশে প্রতিষ্টিত মানবাধিকার সংগঠন দুনিয়ার মজলুম নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলে আসছে। কিন্তু ফলপ্রসু কোনো সমাধান নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আসছে না। অর্ধেক পৃথিবীর মানুষ দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত নির্যাতনের শিকার।
কেউ রাজনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার। কেউ আবার ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে বাড়ি-ভিটা বাস্তুহারা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নানাবিদ ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের সংখ্যালঘুরা বৃহত্তর ধর্মীয় গোষ্ঠীর হাতে নির্যাতিত নিষ্পেষিত। দিন দিন এ নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো দেশে রাজনৈতিকভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আবার কোথাও ধর্মীয় কারণে ভৌগলিক রাজনৈতিক মারপ্যাচে নিরীহ মানুষ মানবাধিকারথেকে বঞ্চিত। একশ্রেণির ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এ জন্য দায়ী। তাদের আধিপত্য অবৈধ ক্ষমতার দাপট প্রতিষ্টার জন্য এসব নির্যাতন। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ু করতে জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। আজকের দুনিয়ার নানা দেশের রাষ্ট্রীয় শাসকও শাসন দেখলে তাই মনে হয়। যারাই ক্ষমতায় অধিষ্টিত তারা জনগণের মৌলিক অধিকার এক প্রকার বলেই থাকেন।
ক্ষমতায় আরোহন করার জন্য জনগণের মতামত নিলেও পরবর্তীতে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের পর ওই জনগণের অধিকারের কথা অনেকেই বেমালুম ভুলেই যান। ফলে দুনিয়াজুড়ে আজ মানবাধিকারের চরম বিপর্যয়। একদিকে পৃথিবী নানাভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে,অন্যদিকে মানবতার বিপর্যয়ের জন্য লাখো কোটি ডলার খরচ করে অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র মওজুদ করা হচ্ছে। একদিকে মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য পৃথিবীর মজলুম মানুষ আহাজারি করছে।
অন্যদিকে পৃথিবীর অসংখ্য জমি খালি পড়ে আছে। খাদ্য সামগ্রী উচ্ছিষ্ট করে ধ্বংস করা হচ্ছে। মুসলিম অমুসলিম ধর্মীয় ভেদাভেদ না রেখে বলতে গেলে সব ধর্ম অনুসারীরা এ ধরনের মানব বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ধর্ম কাউকেই সেক্ষেত্রে বারণ করে রাখতে পারছে না। ধর্মীয় বাণী শিক্ষা উদ্দেশ্য শৃঙ্খলা সবকিছু সেখানে ব্যর্থ। আজকে এক দেশ অপর দেশের মানুষকে শুধুমাত্র ক্ষমতার অর্থের দাপটে মানুষ মনে করছে না।
ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হাজার হাজার নিরীহ নারী শিশুকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। তাদের অন্ন, বাসস্থান, নিরাপত্তা সব কিছু হুমকির মধ্যে। অনিরাপদ এ ধরনের লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষের জীবন। পৃথিবীর ক্ষমতাধর ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাষ্ট্র কেউ বাস্তবসম্মতভাবে এগিয়ে আসতে দেখছি না। আকাশে বাতাসে মানবতার আহাজারি শুনতে পাচ্ছি। বাড়ি-ভিটে হারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে পার্শ্ববর্তী দেশে।
কে শুনবে তাদের কথা? কে দেবে তাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার অধিকার? মানবতার মুক্তির কোনো নেতা বিশ্বে কী আছে? যদি থাকতো তাহলে আজকের দুনিয়ায় এভাবে মজলুম মানুষের আহাজারি শুনতে হতো না। মজলুম মানুষ তাদের মুক্তির জন্য একজন নেতা চায়। তারা বাঁচতে চায় সুন্দরভাবে। তারা তাদের বাড়ি ভিটা ফেরত চায়। তাদের ইজ্জত, সম্ভ্রম, রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করতে চায়। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে একজন মানুষের সৃষ্টির অধিকার নিয়ে সৃষ্টি করেছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সে অধিকার ক্ষমতাসীনদের নিকট চায়। মানবাধিকার দিবসে জনগণের মৌলিক অধিকার ফেরত চাই। ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় অধিকার সমানভাবে সব মানুষের দুনিয়াব্যাপী ফেরত দিতে হবে। জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন দুনিয়ার সব প্রান্ত হতে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। জনগণের অধিকার, মজলুমের মানবাধিকার প্রতিষ্টা করতে হবে। আজকের দিনে বিশ্বব্যাপী সুশাসন প্রতিষ্টার প্রত্যাশায় হোক সকলের।
মাহমুদুল হক আনসারী চট্টগ্রাম