বিপদ-আপদে মু’মিনের করণীয়
আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ আবদুল হালীম বুখারী (দা. বা.)
[পটিয়া আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়ার উস্তাদ, বিশিষ্ট ওয়ায়েয জনাব মাওলানা কাজী আখতার হোসাইন আনোয়ারী (দা. বা.)-এর সহধর্মীনির নামাযে জানাযায় জামিয়ার প্রধান পরিচালক আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ আবদুল হালীম বোখারী (দা. বা.)-এর সান্তনামূলক বক্তব্যের চুম্বকাংশ মাসিক আত-তাওহীদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি। বক্তব্যটি গ্রন্থনা করেন জামিয়ার উস্তাদ জনাব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী। মরহুমার ইন্তেকালে মাসিক আত-তাওহীদ পরিবার আন্তরিকভাবে শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছে এবং তাঁর মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা জানাচ্ছে।—সম্পাদক]
نحمده ونصلي علىٰ رسوله الكريم أما بعد! فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم، [كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِؕ ۰۰۱۸۵] {آل عمران}، وقال تعالىٰ: [الَّذِيْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ١ۙ قَالُوْۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَؕ۰۰۱۵۶] {البقرة}، صدق الله العظيم.
উপস্থিত সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম ও বেরাদারানে ইসলাম!
আল্লাহ পাকের ফয়সালা, গতকাল ২রা রবিউস সানী ১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ রোজ রোববার রাত এগারটার সময় আমাদের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সিনিয়র শিক্ষক স্নেহাস্পদ মাওলানা কাজী আখতার হোসাইন আনোয়ারী সাল্লামাহু রাব্বুহু তার সহধর্মীনি ইন্তিকাল করেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বয়স তেমন বেশি হয়নি। চার মেয়ে ও এক ছেলের জননী। বড় মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। ছোট মেয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার পর তিনি মারা যান। আমরা সকলেই তার মাগফিরাত কামনা করছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাকে জন্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে সবরে জমীল নসীব করেন, আমীন।
মৃত্যু আকস্মিক নয় নির্দিষ্ট সময়ে হয়
আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে, যখন কম বয়সে কোন মানুষ মারা যায় তখন মানুষ তাকে আকস্মিক মৃত্যু বলে। কিন্তু আমরা মুসলমান হিসাবে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, মৃত্যু কোন সময় আকস্মিক হয় না বরং মৃত্যু সবসময় নির্ধারিত সময়েই হয়ে থাকে। কেননা বুখারী শরিফের একটি হাদিসে রয়েছে। মানুষ যখন মায়ের পেটে থাকে তখনই আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে দেন এই ছেলে-মেয়ে পৃথিবীতে কত দিন থাকবে এবং কি খাবে? কি করবে? সকল বিষয় মায়ের পেটেই সিদ্ধান্ত হয়। যতদিন বেঁছে থাকা ভাগ্যে লেখা থাকে তা অতিবাহিত হওয়ার পরপরই ইন্তিকাল হয়ে থাকে। কোন মৃত্যুই আকস্মিক হয় না বরং সবকিছু প্লানিং এর ভিত্তিতে হয়ে থাকে। আল্লাহ পাকের গেজেট অনুযায়ী সবকিছু হয়ে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَهُوَ الصَّادِقُ الْـمَصْدُوْقُ: «إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِيْ بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُوْنُ فِيْ ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُوْنُ فِيْ ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يُرْسَلُ الْـمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوْحَ، وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ، وَأَجَلِهِ، وَعَمَلِهِ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيْدٌ، فَوَالَّذِيْ لَا إِلَهَ غَيْرُهُ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّىٰ مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ، فَيَدْخُلُهَا، وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ، حَتَّىٰ مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْـجَنَّةِ، فَيَدْخُلُهَا». متفق عليه
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) আমাদের বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্রানু আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ (৪০ দিন) সময় থাকে। পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় (৪০ দিন) জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁক দেন। তখন তাকে (ওই ফেরেশতাকে) চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তাহলো, তার রিযিক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগ্যবান হবে অথবা সৌভাগ্যবান। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে, অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে, নিয়তি আগে বেড়ে যাবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে (নিয়তি আগে বেড়ে যাবে) ফলে সে তাতে প্রবেশ করবে।’’[1]
সর্বোত্তম সান্ত্বনা
কিতাবে লেখা আছে, সাতটি জিনিস আশ্চর্জজনক। সেখান থেকে একটি হল, মৃত্যু আসবে সেটা সকলেই জানে তবে তার জন্য প্রস্তুতি নেয় না। আরেকটি হল, ভাগ্যে যা লিখা আছে তা অবশ্যই হবে। তার পরেও মুসিবত আসলে মানুষ শোকাহত হয়। হযরত আব্বাস (রাযি.) রাসূলের চাচা ছিলেন। তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বড় মুফাসসির ও সাহাবী ছিলেন। যখন হযরত আব্বাস (রাযি.) ইন্তিকাল করেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) শোকাহত হন এবং খুবই অস্তির হয়ে যান। তখন একজন গ্রাম্যলোক তাকে দেখতে আসেন। [গ্রামে অনেক পণ্ডিত থাকেন, অনেক কবি-সাহিত্যিক বসবাস করেন। তাদের ভাষাও বিশুদ্ধ হয়ে তাকে। শহরের মানুষের ভাষা মিশ্রিত হয়ে যায় বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার কারণে] অতঃপর সেই গ্রাম্য লোকটি এসে হযরত আবদুল্লাহ (রাযি.)-কে বলেন, ধৈর্যধারণ করুন, আমরাও আপনার সাথে ধৈর্যধারণ করবো। কেননা, আপনি আমাদের সরদার। আপনি ধৈর্য ধারণ করলে আমরাও আপনার সাথে ধৈর্য ধারণ করবো।
روىٰ أن العباس h لما توفي قعد ابنه عبد الله h للتعزية فدخل الناس أفواجًا يعزونه فكان فيمن دخل أعرابي فأنشده:
اصبر نكن بك صابرين فإنما
صبر الرعية بعد صبر الرأس
خير من العباس أجرك بعده
والله خير منك للعباس
فقال ابن عباس: ما عزّاني أحد تعزية الأعرابي.
আব্বাস চলে গেছেন আল্লাহর কাছে। আপনার জন্য আব্বাস চলে যাওয়ার পর ধৈর্য ধারণ করা উত্তম। আর আব্বাসের জন্য আপনার চেয়ে উত্তম হল আল্লাহ। (অর্থাৎ আপনার জন্য ধৈর্য ভালো আর আব্বাসের জন্য আল্লাহ ভালো) অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, এই গ্রাম্য লোকের মত করে অন্য কেউ আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারেনি।
ধৈর্যধারণকারীর পুরষ্কার
সেদিনকার এক কিতাবে পড়লাম, কিয়ামতের দিন একদল ফেরেস্তা ডাক দেবেন। أين الصابرون في المصائب؟ যে সকল লোকেরা মুসিবতে সবর করেছ তারা দাঁড়াও। অনেক লোক দাঁড়াবে তখন। আর ওই ফেরেশতা তাঁদেরকে বেহেশেত নিয়ে যাবেন। বেহেশতের গার্ডকে বলবে দরজা খোল। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, কেন খুলবো? এখনো তো কারো হিসাব-নিকাশ হয়নি। তখন তিনি তাকে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন। আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে আল্লাহ বলবেন, আমি ধৈর্যধারণকারীদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছি।
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو k، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ^: «إِذَا جَمَعَ اللهُ الْـخَلَائِقَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، نَادَىٰ مُنَادٍ: أَيْنَ أَهْلُ الْفَضْلِ؟ فَيَقُوْمُ نَاسٌ وَهُمْ يَسِيْرٌ، فَيَنْطَلِقُوْنَ سِرَاعًا إِلَى الْـجَنَّةِ، فَتَتَلَقَّاهُمُ الْـمَلَائِكَةُ، فَيَقُوْلُوْنَ: إِنَّا نَرَاكُمْ سِرَاعًا إِلَى الْـجَنَّةِ، فَمَنْ أَنْتُمْ؟! فَيَقُوْلُوْنَ: نَحْنُ أَهْلُ الْفَضْلِ. فَيَقُوْلُوْنَ: وَمَا فَضْلُكُمْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ: كُنَّا إِذَا ظُلِمْنَا صبرنا، واذا أسيء إِلَيْنَا عَفَوْنَا، وَإِذَا جُهِلَ عَلَيْنَا حَلُمْنَا فَيقَالَ لَـهُمُ: ادْخُلُوا الْـجَنَّةَ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِيْنَ. قَالَ: ثُمَّ يُنَادِيْ مُنَادٍ: أَيْنَ أَهْلُ الصَّبْرِ، فَيَقُوْمُ نَاسٌ وَهُمْ يَسِيْرٌ، فَيَنْطَلِقُوْنَ إِلَى الْـجَنَّةِ سِرَاعًا، فتلقاهم الْـمَلَائِكَةُ، فَيَقُوْلُوْنَ: إِنَّا نَرَاكُمْ سِرَاعًا إِلَى الْـجَنَّةِ؟ فَمَنْ أَنْتُمْ؟! فَيَقُوْلُوْنَ: نَحْنُ أَهْلُ الصَّبْرِ، فَيَقُوْلُوْنَ: وَمَا صَبْرُكُمْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ: كُنَّا نَصْبِرُ عَلَىٰ طَاعَةِ اللهِ b وَكُنَّا نَصْبِرُ عَنْ مَعَاصِي اللهِ، فَيُقَالُ لَـهُمُ: ادْخُلُوا الْـجَنَّةَ، فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِيْنَ. قَالَ: ثُمَّ يُنَادِيْ مُنَادٍ: أَيْنَ الْـمُتَحَابُوْنَ فِي اللهِ – أَوْ قَالَ: فِيْ ذَاتِ اللهِ؟ فَيَقُوْمُ نَاسٌ وَهُمْ يَسِيْرٌ، فَيَنْطَلِقُوْنَ سِرَاعًا إِلَى الْـجَنَّةِ، فَتَتَلَقَّاهُمُ الْـمَلَائِكَةُ فَيَقُوْلُوْنَ: إِنَّا نَرَاكُمْ سِرَاعًا إلى الْـجنة، فمن أنتم؟ فيقولون: نحن المتحابون في الله – أو في ذات الله – فيقولون: وما كان تحابكم؟ فَيَقُولُونَ: كُنَّا نَتَحَابُّ فِي اللهِ b ونتزاور في الله، ونتعاطف في الله أو نتباذل في اللهِ، فَيُقَالُ لَـهُمُ: ادْخُلُوا الْـجَنَّةَ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ. قَالَ النَّبِيُّ ^: وَيَضَعُ اللهُ الْـمَوَازِيْنَ لِلْحِسَابِ بَعْدَمَا يَدْخُلُ هَؤُلَاءِ الْـجَنَّةَ». قال أحمد بن أبي بكر بن إسماعيل البوصيري في «إتحاف الخيرة المهرة بزوائد المسانيد العشرة» (8 / 203) (رقم: 7786): «رَوَاهُ أَبُوْ يَعْلَى الْـمَوْصِلِيُّ، وَفِيْ سَنَدِهِ الْعَرْزَمِيِّ، وَهُوَ ضَعِيْفٌ، وَاسْمُهُ مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ».
আল্লাহ সূরা আল-বাকারার ১৫৫-১৫৬ আয়াতে বলেন, ‘যারা সবর করে তাঁদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে। ধৈর্যধারণকারী ব্যক্তি হলো যারা মুসিবতের সময় ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলেন।’
জাহিলী প্রথা
জাহিলী যুগে বিপদ-আপদে মানুষ নিজের কাপড় ছেঁড়ে ফেলতো, শরীর ছেদ করতো, মুখমণ্ডল নষ্ট করতো। ইসলাম আসার পরে সেসব রহিত হয়ে গেছে। এই কাজকে শরিয়তের পরিভাষায় নাওহা বলা হয় অর্থাৎ কারো মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, জামা-কাপড় ছেড়া ইত্যাদি। এসব কাজ করা ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধ।
বিপদ-আপদে ইসলামের শিক্ষা হল, মুসিবতের সময় সবর করতে হবে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলবে। ‘ইন্না লিল্লাহ’ অর্থ; আমরা সকলেই আল্লাহর জন্য। ‘ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থ: তারা যেখানে গেছে আমাদেরকেও সেখানে যেতে হবে। অর্থাৎ অস্থির হওয়ার কোন কারণ নেই, সে যেখানে গিয়েছে ঠিক আমাদেরকেও সেখানে যেতে হবে।
ধৈর্যের ফল মিষ্ট!
হজরত উম্মে সালামা (রাযি.) বলেন, একদিন আমার স্বামী আবু সালামা (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবার থেকে আমার নিকট আসেন এবং অত্যন্ত খুশী মনে বলেন, ‘আজ আমি এমন একটি হাদিস শুনেছি; যা শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। হাদিসটি হলো, যখন কোনো মুসলমানের ওপর কোনো কষ্ট বা বিপদ আসে এবং সে পড়ে: ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়াখলুফ লি খাইরাম মিনহা।’ অর্থ ‘হে আল্লাহ! আমার এ বিপদে আমাকে প্রতিদান দিন এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় প্রদান করুন।’ এ দোয়ার বরকতে তখন আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাঁর বান্দাকে উত্তম বিনিময় ও প্রতিদান দিয়ে থাকেন। হজরত উম্মে সালমা বলেন আমি দোয়াটি মুখস্ত করি। অতঃপর হজরত আবু সালমার ইন্তেকাল হলে আমি ÔBbœv লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করি এবং এ দোয়াটিও পড়ি। কিন্তু আমার ধারণা হয় যে, আবু সালামা অপেক্ষা আর ভালো লোক আমি কাকে পাবো? আমার ইদ্দত অতিবাহিত হলে আমি একদিন একটি চামড়া সংস্কার করতে থাকি। এমন সময় মহানবী (সা.) আগমন করেন এবং ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চান। আমি চামড়াটি রেখে হাত পরিষ্কার করে মহানবী (সা.)-কে ভেতরে আসার আবেদন করি। তাঁর জন্য নরম আসনে বসার ব্যবস্থা করি।
তিনি আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এটাতো আমার জন্য বড়ই সৌভাগ্যের কথা। কিন্তু প্রথমত আমি একজন লজ্জাবতী নারী। আমি আশংকা করছি, না জানি আমার দ্বারা আপনার মতের বিপরীত কোনো কাজ ঘটে যায় এবং এ কারণে আল্লাহ তাআলা আমাকে কোনো শাস্তি দেন কিনা! দ্বিতীয়ত আমি একজন বয়স্ক নারী। তৃতীয়ত আমার ছেলে মেয়ে আছে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, দেখ! আল্লাহ তাআলা তোমার এ অনর্থক লজ্জা দূর করে দেবেন। আর বয়স আমারওতো কম নয় এবং তোমার ছেলে মেয়ে যেন আমারই ছেলে মেয়ে।
আমি এ কথা শুনে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। অতঃপর আল্লাহর মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে যায়। আর এ দোয়ার বরকতে আমি আমার পূর্ব স্বামী আবু সালমা অপেক্ষা উত্তম স্বামী (সা.)-কে পেয়ে যাই। সুতরাং সমুদয় প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য। (মুসনদে আহমদ)
আজকে আমাদের আযীয মাওলানা আখতার সাহেব তার স্ত্রীকে হারিয়ে দুঃখিত হয়েছেন। দুঃখিত হওয়া স্বাভাবিক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তান ইবরাহীম ইন্তিকাল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু বের হতে লাগলো আর তিনি বলেছেন, أنا بفراقك لمحزونون ইবরাহীম তুমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো, আমরা পেরেশান। এক সাহাবী আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাযি.) বলেন, হুজুর আপনি আল্লাহর রাসুল আপনার চোখ থেকে অশ্রু কেন বের হচ্ছে? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর রহমত। আমি মানুষ হিসাবে চোখ থেকে অশ্রু বের হওয়া এবং অন্তর ব্যথিত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ h، قَالَ: دَخَلْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ^ عَلَىٰ أَبِيْ سَيْفٍ الْقَيْنِ، وَكَانَ ظِئْرًا لِإِبْرَاهِيْمَ n، فَأَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ ^ إِبْرَاهِيْمَ، فَقَبَّلَهُ، وَشَمَّهُ، ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ وَإِبْرَاهِيْمُ يَجُودُ بِنَفْسِهِ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ ^ تَذْرِفَانِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ h: وَأَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ فَقَالَ: «يَا ابْنَ عَوْفٍ إِنَّهَا رَحْمَةٌ»، ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَىٰ، فَقَالَ ^: «إِنَّ العَيْنَ تَدْمَعُ، وَالقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلاَ نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَىٰ رَبُّنَا، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيْمُ لَـمَحْزُونُوْنَ». رواه البخاري في «صحيحه» (2/83) (رقم: 1303).
অতএব আমরা মুসলমান হিসাবে বিপদে হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য কামনা করবো। কেননা এটি মুমিন বান্দার একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার এবং আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
সংকলন
মুহাম্মদ সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
[1] ১ (ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রূত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি,=২০০১ খ্রি.). খ. ৪, পৃ: ১১১, হাদীস: ৩২০৪; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তূরাস আল আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ৪, পৃ: ২০৩৬, হাদীস: ২৬৪৩