জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

কামরুল হাসান

 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-ই হলেন সর্বশেষ নবী। তিনিই হলেন সমগ্র মানব জাতির জন্যে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের করুণাস্বরূপ। সমস্ত সৃষ্টিজগৎ তার শুভাগমনের জন্যে ছিল অত্যন্ত ব্যাকুল। পূর্বের সকল নবী রাসুল (আ.) এবং ধর্ম সংস্কারকগণ তাঁর শুভজন্ম সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। তিনিই পৃথিবীর জাতি ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মতের সকল শ্রেণীর ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাক্সিক্ষত ত্রাণকর্তা এবং ইহলৌকিক-পারলৌকিক মুক্তিদাতা। মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন ব্যতিত অন্য ধর্মগ্রন্থসমূহেও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন সংবাদ এবং তারও তাঁর সাহাবীগণের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

(ক) হিন্দু ধর্মগ্রন্থে শেষ নবী

হযরত মুহাম্মদ (সা.)

(১) অল্লো পনিষদ

এ বেদে ‘আল্লাহ’, ‘মুহাম্মদ’ রাসুল ‘তিনটি আরবী শব্দ যোগে যে শ্লোকটি লিখিত রয়েছে তাতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ট এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত মহাপুরুষ। যেমনÑ

‘হোতার মিন্দ্রো হোতার মিন্দ্রো মহাসুরিন্দ্রবোঃ।

অল্লো জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং পরমং পূর্ণং ব্রক্ষণং অল্লাম।

অল্লো রাসুল মুহাম্মদ রকং বরস্য অল্লো অল্লাম।

আদল্লাং বুকমেকং অল্লাবুকং ল্লান লিরখাতকম।’

অর্থাৎ দেবতাদের রাজা আল্লাহ আদি ও সকলের বড় ইন্দ্রের গুরু। আল্লাহ পূর্ণ ব্রক্ষা, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল পরম বরণীয়, আল্লাহই আল্লাহ। তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ট আর কেহ নাই। আল্লাহ অক্ষয়, অব্যয়, স্বয়ম্ভু।

(২) সাম বেদ

হিন্দুদের এ শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের নাম গন্ধ ও নেই। সেখানে যার কথা আছে তার নাম:

‘মদৌ বর্তিতা দেবা দ কারান্তে প্রকৃত্তিতা।

বৃক্ষানং; ভক্ষয়েৎ সদা মেদা শাস্ত্রেচ স্মৃতা।’

অর্থাৎ যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ ও শেষ অক্ষর ‘দ’ এবং যিনি বৃষ মাংস ভক্ষন সর্ব কালের জন্য পুনঃবৈধ করবেন, তিনিই হবেন বেদানুযায়ী ঋষি।

মুহাম্মদ (সা.)-এর নামের প্রথম ও শেষ অক্ষর বেদের নির্দেশ মত যথাক্রমে ‘ম’ ও ‘দ’ হওয়াতে তাঁকেই মান্য করা শাস্ত্রেরই নির্দেশ। তিনিই গো মাংস সর্বকালের জন্য পুনঃবৈধ করেছেন। পূর্বে ধর্মপরায়ণ হিন্দুগণ গো মাংস ভক্ষণ করিতেন। এর ভূরি ভূরি নজির শাস্ত্রে রয়েছে।

(৩) রামায়নের আদি ও অযোধ্যাকা-ে লিখিত আছে, ‘রাম গোমাংস ভক্ষণ করিতেন।’

সেখানে আরও আছে, ‘বশিষ্ঠ্য মুণি মদ্য ও গোমাংস প্রভৃতি দিয়া বিশ্বমিত্রকে তাঁহার সেনাগণের সহিত ভোজন করাইয়াছিলেন।’

আরও লেখা আছে, ‘ভরদ্বাজ মুণি ভরতকে গোমাংসাদি দিয়া পরিতৃপ্ত সহকারে ভোজন করাইয়াছিলেন। ও তৎকালে বিশ্বমিত্রের যজ্ঞে ব্রাহ্মনেরা দশ সহগ্র গোভক্ষণ করিয়া ছিলেন। মহর্ষি পানিনি বলেন, অতিথি আগমন করিলে তাহার জন্য গোহনন করিবে।’

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) হিন্দুশাস্ত্রের বিলুপ্ত বিধান গোমাংস ভক্ষণকে পুনঃবৈধ করেন।

নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী বেদে তার সুস্পষ্ট প্রমান রয়েছে। যথাÑ

‘আল্লো রসূল মুহাম্মদ রকং বরস্য।’ অর্থাৎ মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং পরম বরণীয়। এটা সামবেদে আদিতে ‘ম’ ও শেষে ‘দ’ অক্ষর যুক্ত বেদ বানীর সমর্থক।

(৪) ভবিষ্য পুরাণে আছে,

‘এতাস্মিন্নসিরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ।

মুহাম্মদ ইতিখ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিতঃ।

নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থল নিবাসিনম।

চন্দ্রনাদিভিরভ্যরচ্য তুষ্টাব নসা হরম॥

নমস্তে গিরিজানাথ মরুস্থল নিবাসনে।

ত্রিপুরা সুরনাশায় বহুমায়া প্রবর্তীনে॥

ম্লেচ্ছৈরগপ্তায় সচ্চিদানন্দরুপিণে।

ত্বং মাং হি কিং করং বিদ্ধি শরণারথমুপাগতম॥’

ভাবার্থ: যথাসময়ে ‘মুহাম্মদ’ নামের একজন মহাপুরুষ আবির্ভূত হবেন। যার নিবাস ‘মরুস্থলে ‘(আরব দেশে) সাথে স্বীয় সহচর বৃন্দ ও থাকবেন। হে মরুর প্রভু! হে জগৎগুরু। আপনার প্রতি আমাদের স্তুতিবাদ। আপনি জগতের সমুদয় কলুষাদি ধ্বংসের উপায় সম্পর্কে অবগত আছেন। আপনাকে প্রণতি জানাই।

হে মহাত্মা! আমরা আপনার দাসানুদাস। আমাদের আপনার পদতলে আশ্রয় প্রদান করুন।

‘এতসিমন্নন্তিরে ম্লেচ্ছ ও আচার্য সমন্বিতঃ।

মহাম্মদ ইতিখ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিতঃ॥’

এ শ্লোকের ‘ম্লেচ্ছ’ শব্দগুলোর ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ হলো আরবের আদিম পৌত্তলিকা অধিবাসীকে দূরাগত আচার্যেরা ম্লেচ্ছ বলতেন। যেমন ভারতে আদিম পৌত্তলিক সম্প্রদায়কে আর্যরা শূদ্র বলতেন। আরবের আচার্য বংশই ছিল শেষ নবীর পিতৃবংশ।

মহান আল্লাহ বিশ্ব নবী (সা.) কে সত্য পথপ্রদর্শক নবী করে প্রেরণ করেছেন। তার হুবহু পরিচয় বেদ ও পুরাণাদিতে পূর্ব হইতে লিপিবদ্ধ আছে।

(৫) ছান্দোগ্য উপনিষদে (১৬/৬) তার পরিচয় এভাবে রয়েছে,

‘হিরণময় পুরুষ আদিত্যে অধিষ্টিত।

কেশ-শ্মশ্রু হয় তার হিরণ্য মণ্ডিত॥

পদনখ পর্যন্ত সমস্ত স্বর্ণময়।

অরুনার বিন্দ সমশোভে নেত্রদ্বয়।

‘উৎ অভিধানে তিনি অভিহিত হন।

যেহেতু সর্বপাপের উরদ্ধে তিনি রণ॥

এই তত্ব অবগত আছেন যে জন,

তিনি ও পাপের উরদ্ধে অবস্থিত হন।

ইতিতত্ব দেব পক্ষেঃ অধ্যাত্ম পক্ষেতে,

সে পুরুষ দৃষ্ট অন্তরক্ষি দর্পণেতে॥’

আলোচ্য শ্লোকটি পাঠে বোঝা যায় যে, সর্বদর্শী আল্লাহ জানতেন যে, কলি যুগের হিন্দুগণ শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও বেদের অদ্বিতীয় আল্লাহকে ভুলে বিপদ গামী হবে। এর জন্যই আল্লাহ শেষ নবীর দৈহিক সৌন্দর্য বর্ণনা শেষ করে বলেছেন যে, তিনি ‘উৎ’ অর্থাৎ দশম অবতার ‘ইতিতত্ব দেবপক্ষে’ বাক্য হতে জানা যায় যে, তার পরে সত্য পথ প্রদর্শক আর কোন অবতারের আবির্ভাব হবে না। এ সমাচার জেনে যিনি তার অনুসরণ করবেন তিনি নিষ্পাপ হয়ে মোক্ষ লাভ করবেন। শাস্ত্রপ্রণেতা মুণি ঋষীরা সুস্পষ্টভাবে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণের ওপর পারলৌকিক মুক্তি নির্ভরশীল বলে ব্যক্ত করেছেন।

(৬) উত্তরায়ন বেদ

‘লা-ইলাহা হরতি পাপম

ইল্ল ইলহা পরম পদম

জন্ম বৈকুণ্ঠ অপ ইনুতি

জপি নাম মুহাম্মদ॥’

সারসংক্ষেপ: লা-ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ-এর আশ্রয় ব্যতিত পাপ মুক্তির কোন উপায় নেই। ইলাহ অর্থাৎ আল্লাহর আশ্রয়ই মুক্তি লাভের প্রকৃত আশ্রয়। বৈকুণ্ঠে জন্ম লাভের আশা করলে ইলাহর আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আর এ জন্যে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথের অনুসরণ অপরিহার্য।

(৭) ঋগে¦দ ২.১২.৬

‘যো রধ্রস্য চোদিত্য যঃ কৃষস্য

মো ব্রণো নাম মানস্য কীরেঃ।

ভাবানুবাদ: যিনি তার ভক্ত, তিনিই তার প্রভুর সাথে সম্পর্কিত। ঋগ্বেদে উক্ত সম্পর্কিত ব্যক্তির ‘কীরি’ নামকরণ করা হয়েছে। এ ‘কীরি’ শব্দের বাংলা অর্থ মহা প্রভুর শেষ প্রশংসা কারী যার আরবি শব্দ হলো আহমদ।

এমনিভাবে অসংখ্য উক্তি রয়েছে ইসলাম ধর্মের মহান রাসুল ও সর্বশেষ নবী সম্পর্কে হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থে।

(খ) বৌদ্ধ ধর্মে শেষনবী

হযরত মুহাম্মদ (সা.)

প্রায় সব বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে আছে ভবিষ্যতে একজন মায়িত্রি আসবেন।

(১) চিপকমতি সিংঘনাথ সুকান্তার ‘ডি ১১১৭৬’-এ বলা হয়েছে, আরেকজন বুদ্ধ আসবেন তার নাম ‘মায়িত্রী’ যিনি পবিত্র, যিনি সবার উপরে, যিনি আলোকপ্রাপ্ত, খুব জ্ঞানী আর বিনয়ী, যিনি মঙ্গল জনক, যার রয়েছে বিশ্ব জগতের জ্ঞান। তিনি অলৌকিকভাবে যে জ্ঞান আরোহন করবেন সেটা পুরা পৃথিবীতে প্রচার করবেন। তিনি একটা ধর্ম প্রচার করবেন, যে ধর্মটা শুরুতে গৌরবময় থাকবে, চরম সময়ে গৌরবময় থাকবে এবং শেষেও গৌরবময় থাকবে। তিনি একটা জীবন দর্শন প্রচার করবেন যেটা হবে সত্য এবং পুরাপুরি সঠিক। তাঁর সাথে কয়েক হাজার সন্নাসী থাকবে যেখানে আমার সাথে কয়েকশ সন্নাসী থাকে। একথাটা আরও বলা হয়েছে।

(২) সেকেন্ড বুক অব ইস্টে ৩৫ নম্বর খ-ে ২৩৫ পৃষ্ঠায়: একজন মায়িত্রী আসবেন যার কিছু বৈশিষ্ট আর গুন থাকবে, তিনি হাজার হাজার মানুষকে নেতৃত্ব দিবেন যেখানে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি মাত্র কয়েকশো মানুষকে। এর পর আরো আছে।

(৩) গস্তল অব বুদ্ধায় ২১৭ ও ২১৮ নম্বর পৃষ্ঠায়, আনন্দ বুদ্ধকে প্রশ্ন করলেন, হে আশীর্বাদ প্রাপ্ত আপনি যখন চলে যাবেন কে আমাদের পথ দেখাবেন? গৌতম বুদ্ধ উত্তরে বললেন, আমি এই পৃথিবীতে প্রথম বুদ্ধ নই, এমন কি শেষ বুদ্ধ নই, ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে আরএকজন বুদ্ধ আসবেন যিনি পবিত্র, সবার উপরে, যিনি আলোকপ্রাপ্ত, যিনি মঙ্গল জনক, যার রয়েছে বিশ্বজগতের জ্ঞান, তিনি প্রচার করবেন একটা ভালা ধর্ম, তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার শুরুতে গৌরবময় থাকবে, চরম সময়ে গৌরবময় থাকবে এবং শেষ সময়েও গৌরবময় থাকবে। তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার ভিত্তি হবে সত্য আর সেঠাই হবে সঠিক জীবনদর্শন আর তার থাকবে হাজার হাজার শিষ্য যেখানে আমার রয়েছে মাত্র কয়েকশ শিষ্য। বুদ্ধের প্রধান শিষ্য আনন্দ তাঁকে প্রশ্ন করল, আমরা তাঁকে চিনব কিভাবে? বুদ্ধ উত্তর দিলেন, সেই লোকের নাম হবে মায়িত্রী। মায়িত্রী অর্থৎ ক্ষমাশীল, স্নেহময়, দয়ালু, করুণাময় এই শব্দটার আরবী করলে হবে রাহমা। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, সূরা আম্বিয়ার ১০৭ আয়াতে, ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামীন অর্থাৎ আমিতো তোমাকে শুধুমাত্র পাঠিয়েছি বিশ্ব জগতের প্রতি রহমত হিসাবে, জীবজগতের প্রতি রহমত হিসাবে পুরো মানুষ জাতির প্রতি রহমত হিসাবে। এই রহমতের সমর্থক শব্দ ক্ষমা যা পবিত্র কুরআনে আছে সব মিলিয়ে ৪০৯ বার। আর কুরআনের প্রত্যেক সূরা শুধুমাত্র সূরা তওবা বাদে প্রত্যেক সূরার শুরুতেই আছে, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম অর্থাৎ দয়াময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাহলে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থসমূহে মায়িত্রী নামে একজনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.), তিনি ছিলেন আলোকপ্রাপ্ত (যখন ওহী নাযিল হত তখন তিনি উজ্জল হতেন) হয়তো প্রশ্ন করবেন ওহী কি? ওহী হচ্ছে আল্লাহর দূত জিবরীল (আ.) যখন নবীর কাছে আসতেন তখন তিনি উজ্জল হতেন।

(৪) সেক্রেট বুক অব দ্যা ইস্টের ১১নং খ-ের ৩৬ পৃষ্ঠায় মহাপার নির্বার সুত্তা ২য় অধ্যায়ের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, গৌতম বুদ্ধের ক্ষেত্রে তাঁর কোন গুপ্ত অথবা প্রকাশ্য শিক্ষা ছিল না, হে আনন্দ তথাগতরা অথবা শিক্ষকরা মুঠোবন্ধ করে রাখবে না জ্ঞানটা তাদের নিজের কাছে রাখবে না এটা প্রচার করতে হবে। আমরা জানি মুহাম্মদ (সা.) ওহী হিসেবে যা পেয়েছিলেন তাহা সঙ্গে সঙ্গে সবার কাছে প্রচার করেছেন আর সাহাবা গণকে বলেছেন এগুলো মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখো না, এগুলো প্রচার করো। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে এখানে প্রকাশ্য বা গুপ্ত কিছুই নেই এখানে সব কিছুই প্রকাশ করতে হবে।

(৫) আরও আছে গস্তুল অব বুদ্ধাতে ২১৪ পৃষ্ঠায়: এই যে মায়িত্রী আসবেন বা যে বুদ্ধ আসবেন তাঁর ছয়টা গুন থাকবে। (১) তিনি আলোকপ্রাপ্ত হবেন রাতের বেলায়, (২) আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি উজ্জ্বল হবেন, (৩) তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা যাবেন, (৪) তিনি রাতের বেলায় মারা যাবেন, (৫) মারা যাবার সময় তিনি উজ্জ্বল হবেন, (৬) তিনি মারা যাবার পরে এই পৃথিবীতে তাঁকে আর সশরীরে দেখা যাবে না।

এই ছয়টা গুণাবলি পাওয়া যায় শুধু মাত্র আমাদের নবীজী মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যে। আমরা জানি যে নবীজী প্রথম ওহী পেয়েছিলেন রাতের বেলায়. পবিত্র কুরআনের সূরা দুখানের দুই ও তিন নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে এছাড়াও সূরা কদরের এক নম্বর আয়াতে বলা আছে যে, কুরআন নাযিল হয়েছিল মহিমম্বিত রাতে। এরপরে আছে তিনি উজ্জ্বল হবেন, আমরা জানি যে এসময় আমাদের নবী উজ্জ্বল হয়েছিলেন বা আলোকিত হয়েছিলেন। এর পরে আছে তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা যাবেন আমরাও জানি নবীজী স্বাভাবিকভাবেই মারা গিয়েছিলেন।

চার নম্বরে আছে, তিনি রাতের বেলা মারা যাবেন, আর আয়িশা (রাযি.)-এর এর বলার হাদীস থেকে আমরা জানি যে, ওই রাতে তাদের ঘরে প্রদীপে কোন তেল ছিল না, আর আয়িশা (রাযি.) তেল আনতে পাশের বাড়িতে গিয়েছিলেন, অর্থাৎ নবীজী মারা যাবার সময় তখন রাত ছিল।

এর পর বলা হয়েছে তিনি মারা যাবার সময় উজ্জ্বল হবেন, আর হযরত আনাস (রাযি.) বলেছেন, ‘নবীজী মারা যাবার সময় খুব উজ্জ্বল ছিলেন।’

এর পরেরটা হলো মারা যাবার পরে তাঁকে আর সশরীরে দেখা যাবে না, আমরাও জানি যে নবীজী (সা.) স্বশরীরে আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। মদীনায় তাঁর রওযা রয়েছে, তাঁকে সশরীরে আর কখনো দেখা যাবে না।

বৌদ্ধ ধর্মে উল্লেখ করা এসকল কথা শুধুমাত্র নবীজী মুহাম্মদ (সা.) এর বেলাতেই খাটে।

(৬) দ্যা সেক্রেটবুক অব দ্যা ইস্টের ১০ম খ-ের ৬৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, তথাগতরা তারা শুধু প্রচার করবে অর্থাৎ যে বুদ্ধরা আসবেন তাঁরা শুধু প্রচার করবেন, আর আল্লাহ বলেছেন, সূরা আল-গাশিয়ার ২১ আয়াতে, বলা হয়েছে, ফাযাক্কির ইন্না মা আনতা মুযাক্কির অর্থাৎ আল্লাহ নবীজীকে বলছেন, তোমার কাজ ধর্ম প্রচার করা হেদায়েত করার মালিক আল্লাহ তাআলা।

(৭) সেক্রেট বুক অব দ্যা ইস্টের ১০ম খ-ের ৬৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে স্বর্গে যেতে হলে তোমার ভালকাজ গুলোর প্রয়োজন হবে।

আল্লাহ কুরআনে বলছেন, সূরা আসরের এক থেকে তৃতীয় আয়াতে, ‘ওয়াল আসর, ইন্নাল ইনসানা লাফি খুসর, ইল্লালাজিনা আমানু ওয়া আমেলুছসলেহাত, ওয়া তাওয়া সওবেল হাক্ক, ওয়া তাওয়া সওবিস সবর।’ অর্থাৎ দুর্ভোগ তাদের যারা সামনে ও পেছনে লোকের নিন্দা করে তারা বাদে যাদে বিশ্বাস আছে ন্যায় নিষ্ঠতা আছে, যারা মানুষকে সত্যের পথে আনে, যারা মানুষকে ধর্য আর অধ্যাবসায়ের পথে আনে। বেহেশতে যাওয়ার একটা শর্ত হলো ন্যায়-নিষ্ঠতা।

(৮) এছাড়াও ধম্মপটে উল্লেখ করা আছে, ‘মাত্তারসুক্তা ১৫১’। এখানে সর্বশেষ বুদ্ধ বা মায়িত্রীর বর্ণনা দেওয়া আছে, তিনি হবেন মানুষ জাতির প্রতি করুনা, তিনি হবেন ভদ্র, তিনি হবেন মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত, তিনি হবেন দয়ালু আর তিনি হবেন সত্যবাদী” আর এসকল কথা শুধুমাত্র খাটে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বেলায়। এ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মে নবীজী সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা।

(গ) ইহুদী ধর্মে শেষনবী

হযরত মুহাম্মদ (সা.)

তৌরাত (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম) যাকে হীব্রু ভাষায় ‘মেউদ দেউদ’ এবং ‘ভাববাদী’ বলে সম্বেধন করেছে তিনি হলেন সত্যের আত্মা, কলিযুগের মহাত্মা মুহাম্মদ (সা.)। সেই সত্যের আত্মার আগমন সম্পর্কে

(১) বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫-১৯ বলা হয়েছে,

‘১৫ তোমর ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে।

১৬ কেননা হোরেবে সমাজের দিবসে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে এই প্রার্থনাই ত করিয়াছিলে, যথা, আমি যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পুনর্বার শুনিতে ও এই মহাগ্নি আর দেখিতে না পাই, পাছে আমি মারা পড়ি।

১৭ তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে।

১৮ আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে মুখে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন।

১৯ আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব।’ [সূত্র: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮: ১৫-১৯]

আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব এখানে তোমার সদৃশ্য ভাববাদী বলতে ইহুদীরা মুসার সদৃশ্য একজন নবীর কথা বলেছেন। এখানে মুসার সদৃশ্য কোন নবীর কথা বলা হয়েছে—এ পশ্নের জবাবে সত্যবিমুখ ইহুদীরা বরাবরই বলে এসেছেন যীশু মসীহের (ঈসা) কথা। আদৌও মসীহ (ঈসা) হযরত মুসা (আ.) এর মত ছিলেন না। খ্রীষ্টানদের মতে ঈসা (আ.) একজন ঈশ্বর, কিন্তু মুসা (আ.) কোন ঈশ্বর নন। বাইবেল মতে মসীহ দুনিয়ার পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিন্তু হযরত মুসা (আ.) কে তেমনটি করতে হয়নি। বাইবেল মতে ঈসা (আ.) তিনদিনের জন্য জাহান্নামে গিয়েছিলেন। বাইবেলের পুরাতন সংস্করণে (তৌরাত) মুসা (আ.) সম্পর্কে এমন একটি বাক্যও নাই। তাছাড়া হযরত মুসা (আ.) তাঁর পিতা-মাতার স্বাভাবিক দৈহিক মিলনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, বাইবেলের যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পিতার অবর্তমানে কোনরুপ শরীরি মিলন ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে

(২) বাইবেল মথি লিখিত সুসমাচারের প্রথম অধ্যায়ের ১৮ শ্লোকে বলছে,

‘যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইরুপে হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগদত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ব হইয়াছে পবিত্র আত্মা হইতে।’

(৩) এ সম্পর্কে লূক ১ : ৩৪-৩৫ এ বলা আছে, ‘ইহা কিরূপে হইবে? আমি ত পুরুষকে জানি না। দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; হযরত মুসা (আ.) বিয়ে করেছিলেন, সন্তান উৎপাদন করেছিলেন; কিন্তু মসীহ (ঈসা আ.) অবিবাহিত (চিরকুমার) ছিলেন। আবার বাইবেল মতে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর পর তাঁকে পৃথিবীতে কবরস্থ করা হয়নি; ইহুদী মতে তিনি স্বর্গে অবস্থান করছেন। অপরদিকে হযরত মুসা (আ.) এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর তাঁদেরকে এই পৃথিবীতেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল। সুতরাং এখানে মুসা (আ.) এর মতো যে ভাববাদীর কথা বলা হচ্ছে তিনি মুহাম্মদ (সা.) ভিন্ন অন্য কেহ নন। হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে সর্ব বিষয়ে মুহাম্মদ (সা.) এর মিল পাওয়া যায়। যেমন, মুসা (আ.) এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম তাঁদের পিতা-মাতার দৈহিক মিলন থেকে, উভয়েই বিবাহিত ছিলেন এবং বিবাহ পরবর্তী জীবনে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন, উভয়েই রাসূল এবং রাজা (রাজ্য পরিচালনা এবং জাতির ওপর আইন প্রয়োগের ক্ষমতা অর্থে, যা ঈসা মসীহের ছিল না; বরং তিনি নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন রোমান রাজ্যপ্রধান পনটিয়াস পিলেট কর্তৃক। ঈসা মসীহ যে রাজা ছিলেন না।

(৪) এ সম্পর্কে যোহন লিখিত সুসমাচরের ১৮:৩৬-এ বর্ণিত আছে, ‘আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।’

সুতরাং এখানে তোমার (মুসা আ.-এর) সদৃশ্য বলতে মুহাম্মদ (সা.)-কেই বোঝানো হয়েছে; ঈসা মসীহকে নয়। এই মহান ভাববাদী যে মুহাম্মদ (সা.) তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

(৫) বাইবেলের যিশাইয়ের ২৯ অধ্যায়ের ১২ গতে বলা হয়েছে, ‘আবার যে লেখা পড়া জানে না, তাহাকে যদি সে তাহা দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, আমি তোমার ইবাদত করি। তবে সে উত্তর করিবে আমি লেখা পড়া জানি না।’

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স যখন ৪০ বছরে উত্তীর্ণ হল তখন তিনি কাবার অদূরে (প্রায় তিন মাইল উত্তরে) হেরা নামক পাহাড়ের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় প্রধান ফেরেস্তা জিবরীল (আ.) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বললেন ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়’। মুহাম্মদ (সা.) ভয় পেয়ে বলে উঠলেন ‘আমি তো পড়তে জানি না।’

(৬) হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে হেরা (যার বর্তমান নাম জাবালে নূর অর্থাৎ আলোর পাহাড়) পর্বতে আসিবেন সে সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন সংস্করণের (ওল্ড টেস্টামেন্ট) দ্বিতীয় বিবরণে উল্লেখ আছে, ‘সদা প্রভু সীনয় হইতে আসিলেন, সেয়ীর হইতে তাহাদের প্রতি উদয় হইলেন, পারন পর্বত হইতে আপন তেজ প্রকাশ করিলেন।’ [সূত্র: দ্বিতীয় বিবরণ ৩৩:২]

সীনয়: এখানে, ‘সীনয়’ বলতে সিনাই অবস্থিত তুর পর্বতের কথা বলা হয়েছে। এই তুর পর্বতেই হযরত মূসা (আ.) নুবুওয়াতপ্রাপ্ত হন।

সেয়ীর: ‘সেয়ীর’ পর্বতে হযরত ঈসা (আ.) নুবুওয়াতপ্রাপ্ত হন।

পারন: ‘পারন’ বলতে হেরা (আরবীতে) পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। আর এই মহমান্বিত পর্বতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) নুবুওয়াতপ্রাপ্ত হন।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন নিরক্ষর। তিনি লেখা পড়া জানতেন না। এমনকি নিজের নামটাও স্বাক্ষর করতে পারতেন না। মহান রাব্বুল আলামীন উম্মী-জ্ঞানহীন মুহাম্মদ (সা.) কে শিক্ষিত করলেন তাঁর প্রত্যাদেশিত বাণী জিবরীল (আ.)-এর মাধ্যমে নবীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রত্যাদেশিত বাণী সমূহ ফেরেস্তা জিবরীলের কাছ থেকে শুনে ঠোঁঠ নেড়ে বাণীগুলো মুখস্থ করতেন। অর্থাৎ আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.) মুখে তাঁর (আল্লাহর) বাক্য দিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ইজ্জতে রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘তিনি [রাসূল (সা.)] নিজের খুশীমতো কিছু বলছেন না বরং এ হচ্ছে তার প্রতি অবতীর্ণ প্রত্যাদেশ (অহী) মাত্র।’ [সূরা আন- নাজম: ৩-৪]

রাসূলের নিরক্ষতার সাক্ষ্য দিয়ে আল্লাহ পাক বলছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন আল্লাহর বাণীসমূহ, তাদেরকে উত্তম নৈতিক চরিত্রের প্রশিক্ষণ দেন এবং শিক্ষা দেন কিবতা ও হিকমাত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।’ [সূরা আল-জুমুআ: ২]

সারওয়ারে কায়েনাত মানবতার মুক্তির দূতকে আল্লাহ আরশে আজীম যে তাঁর পবিত্রবাণী শিক্ষা দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে আল্লাহ ইলমে আলম সাক্ষ্যপ্রদান করে বলছেন, ‘আমি আপনাকে এমনভাবে পড়াবো যে আপনি ভুলতে পারবেন না, অবশ্য আল্লাহ যা ভুলাতে চান তার কথা স্বতন্ত।’ [সূরা আল-আ’লা: ৬-৭]

সারওয়ারে কায়েনাত দু’জাহানের প্রশংসিত, বাইবেলের প্যারাক্লীতোস, পবিত্রআত্মা, মুসা (আ.)-এর সদৃশ্য ভাববাদী, হিন্দুধর্মের মহভারত-গীতার রাজা, বেদের কল্কি অবতার জনাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কুরআনের বাণীসমূহ জিবরীল (আ.)-এর কাছ থেকে শ্রবণের সাথে সাথে নিজেও পাঠ করতেন যাতে করে বাণীর কোন অংশ ছাড়া না পড়ে এবং বাণীসমূহ পাঠে তারতম্য না হয়। তিনি মুখস্থ করার জন্য বাণীসমূহ দ্রুত আবৃত্তি করতেন। তার এই পেরেশনি দেখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীকে আশ্বস্ত করে বললেন,

‘এ অহীকে তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্য দ্রুত আবৃত্তি করবেন না। তা মুখস্থ করানো এবং সন্নিবেশ করা আমার দায়িত্ব। সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। পরন্তু এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার কাজ।’ [সূরা আল-কিয়ামা: ১৬-১৯]

আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, এখানে বলা হচ্ছে, হযরত মুসা (আ.)-এর সদৃশ্য যে ভাববাদী আসবেন তিনি সব সময় তাঁর (গ্রস্টার) নামে তাঁর প্রত্যাদেশিত বাণীগুলো প্রচার করবেন। পবিত্র কুরআনের দৃষ্টি ক্ষেপন করলে দেখা যায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বাণী পাঠ করার পূর্বে তাঁর (আল্লাহর) নাম উচ্চারণ করতেন। তিনি বলতেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম অর্থা] পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

উপসংহারে আসা যায় যে, বাইবেলের পুরাতন সংস্করণে (ওল্ড টেস্টামেন্টে) হযরত মুসা (আ.)-এর সদৃশ্য যে নবীর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তিনি মরিয়ম পুত্র যীশু মসীহ নন, তিনি হলেন মরুনিবাসী স্নেহময়ী-পরিতৃপ্ত আত্মা মা আমিনার গর্ভজাত পুত্র জগতের আলো, মুক্তির দিশারী, সারওয়ারে কায়েনাত, পবিত্র কুরআনের ধারক, বিশ্বমানবতার মহান নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

(ঘ) খ্রিস্টান ধর্মে শেষনবী

হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বাইবেলে যাকে সত্যের আত্মা, সহায় এবং গ্রিক ভাষায় বলা হয়েছে প্যারাক্লীতোস (শব্দের অর্থ হল প্রসংশিত), তিনিই হলেন মুহাম্মদ (প্রশংসিত), তিনিই আহম্মদ (প্রশংসনীয়)।

সত্যের আত্মার আগমন সম্পর্কে বাইবেলের নূতন নিয়মের যোহন লিখিত সুসমাচারে বর্ণিত আছে,

‘৭ তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় তোমাদের নিকট আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব।’ [সূত্র: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাইবেলের নূতন নিয়মের যোহন ১৬:৭]

‘১৩ পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না; কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন।’ [সূত্র: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাইবেলের নূতন নিয়মের যোহন ১৬:১৩]

‘১৬ আর আমি পিতাকে অনুরোধ করব, এবং তিনি অপর একজন সহায়ক তোমাদের দেবেন, যেন চিরকাল ধরে তোমাদের সঙ্গে থাকেন।’ [সূত্র: নিউ টেস্টামেন্ট যোহন ১৪:১৬]

প্রশ্ন এসে যায় বাইবেলের নতুন নিয়মের এই প্যারাক্লীতোস বা সহায়ক বা সত্যের আত্মা কে? তিনি কি স্বীয় ঈসা মসীহ নিজে না অন্য কেউ? নিশ্চিতভাবেই বলা চলে বাইবেলের এই সহায়ক খোদ যিশু খ্রিস্ট নয় বরং যিশু খ্রিস্টই ঈশ্বরের কাছে একজন সহায়কের প্রার্থনা করেছেন পরবর্তী উম্মতের জন্য।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ