জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিন্দু ধর্মে সমকামিতার শাস্তি কী!

হিন্দু ধর্মে সমকামিতার শাস্তি কী!

হিন্দু ধর্মে সমকামিতার শাস্তি কী!

শুভ্র ভাই

 

(সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বর্ণনা করা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। ব্রিটিশ জমানার এই বিতর্কিত আইনটির সুবাদে ‘অপ্রাকৃতিক যৌনতা‘র অপরাধে ভারতে কোনও ব্যক্তির ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারতো। ১৮৬১ সালের জারি করা ধারাটি ২০০৯ সালে সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছিল দিল্লির হাইকোর্ট। তবে তার বিরুদ্ধে আপীল করা হলে ২০১৩ সালে ওই আইনটি বহাল করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ। নিজেদের সেই আদেশ বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট)।

সমকামিতা কি? উইকিপিডিয়ার মতে সমকামিতা বলতে বোঝায়, সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরণের যৌন প্রবণতা। এ প্রবণতা কি ব্যধি না সুস্থ মানসিকাতর যৌন আকাঙ্ক্ষা? বিষয়টি বিতর্কের। তবে সমকামিতা যে কোনো ধর্মেই নিষিদ্ধ। ধর্মে কোনো কিছু নিষিদ্ধের একটি কারণ হচ্ছে তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ধর্ম কোনো ক্ষতিকর বিষয়কে সমাজের জন্য অনুমতি দেয় না। পশ্চিমা বিশ্বে সমকামিতার বৈধতা নিয়ে আন্দোলন চললেও এবার তা শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও। ইসলামে সমকামিতাকে ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হযরত লুত (আ.)-এর কালের লোকদের শুধুমাত্র এই কারণেই সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যে, তারা সমকামী ছিল।

যারা সমকামী তা সে ধর্মেরই হোক তারা এটুকু জানেন সমকামিতার শাস্তি সম্পর্কে ইসলাম বরাবরই সোচ্চার। পবিত্র আল কোরআনের ১৪ জায়গায় সমকামিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে সমকামীদের কি শাস্তি হওয়া উচিত এই বিষয়ে কোন প্রত্যক্ষ বিধান দেওয়া হয়নি। তবে অধিকাংশ ধর্মবিশারদের মতে সমকামিতার শাস্তি রজম বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। খ্রিস্টান ধর্মেও সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আব্রাহামিক রিলিজন বা ইবরাহিমীয় ধর্মমত গুলোতে সমকামিতার বিপক্ষে এত প্রবল মত কেন এসেছে সে বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি ধারণা আছে তবে তথ্যসূত্র দিয়ে সেটা প্রমাণ করতে পারবো না। এটা আমার একান্তই নিজস্ব ধারণা। তবে আজকে আলোচনা করবো হিন্দুধর্মে সমকামিদের কি বিধান রাখা হয়েছে।

এতদিন আমার ধারণা ছিলো হিন্দু ধর্মে প্রত্যক্ষভাবে সমকামিতার বিপক্ষে কিছু বলা হয়নি। বন্ধু কাম ছোট ভাই রাজা বাবুর সহায়তায় বেশ কিছু তথ্য যোগাড় করতে সমর্থ হলাম। হিন্দুশাস্ত্রে তৃতীয় প্রকৃতি উল্লেখ পাওয়া যায়। এটা কি পুরুষের মাঝে নারী সত্তার উপস্থিতি অথবা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হয়েছে আমি নিশ্চিত নই। প্রাচীন হিন্দু সমাজের কোন কোন অংশ এই তৃতীয় প্রকৃতির পূজার উল্লেখ আছে। দক্ষিণ ভারতে অর্ধনারীশ্বর বলে একজন দেবতার পূজা করা করা হয়।

তবে সমকামিতাকে কি হিন্দু সমাজ গ্রহণ করেছে? স্বীকৃতি দিয়েছে। না। হিন্দুদের ফিকাহ বা আইনশাস্ত্র বলা যায় মনুস্মৃতিকে।। এই গ্রন্থে হিন্দুদের জীবনাচারণের বিভিন্ন বিধান প্রদান করা হয়েছে। এই গ্রন্থের কয়েকটি স্থানে সমকামিতার শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে যদিও তা রজমের মত গুরুতর নয়। পৃথিবীতে এখনও ৪৪ টি দেশে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে জেলদন্ডের বিধান বলবৎ আছে। সৌদি, আরব, মিশরসহ অনেকে দেশে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। একদিন ইতালিতেও সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।

হিন্দুধর্মে দেবদেবীদের মাঝে সমকামি বৈশিষ্টের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন দেবতা চন্দ্রের সৌন্দর্যে অনেক দেবতার মুগ্ধ হওয়ার উল্লেখ আছে। দেবদেবীদের বাইরে ভাগীরথের জন্মবৃতান্তে একটি থ্রিসাম গল্পে আছে। সন্তানহীন অবস্থায় অযোধ্যার রাজা দিলীপ মারা যান। থাকে তার দুই বিধবা স্ত্রী। এই সূর্যবংশে বিষ্ণুর অবতার হয়ে আসার কথা। কিন্তু বংশ নির্মূল হলে সেটা কিভাবে সম্ভব! তখন ব্রহ্মা এর প্রতিকার করার জন্য শিবকে পাঠালেন। শিব এসে দু’বিধবাকে বর দিলেন যে তাদের একজনের গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মাবে। প্রমাণের জন্য পড়ুন বাংলা কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের ‘গঙ্গার জন্ম-বিবরণ ও ভগীরথের জন্ম’ নামক পর্ব।

মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায়ের ৩৬৯ এবং ৩৭০ নম্বর ছত্রে দুজন নারীর মধ্যে সমকামিতা সংঘটিত হলে কি শাস্তি হবে তার উল্লেখ আছে।

  • যদি দু’কুমারীর মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি ছিলো দু’শত মূদ্রা জরিমানা এবং দশটি বেত্রাঘাত। (Manu Smriti chapter 8, verse 369.)
  • যদি কোন বয়স্কা নারী অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীর (কুমারীর)সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে,তাহলে বয়স্কা নারীর মস্তক মুণ্ডন করে দুটি আঙুল কেটে গাধার পিঠে চড়িয়ে ঘোরানো হবে। (Manu Smriti chapter 8, verse 370.)

তবে নাঁটুবাবুরা কি ছাড়া পেয়ে গেলো? তারা কি ইচ্ছে মত পুরুষগমন করে বেড়াতে পারবে। জি না। তাদের জন্য কিঞ্চিত বিধান রাখা হয়েছে। কি সেটা? আসুন আবার মনুস্মৃতি খুলি। ১১ নম্বর অধ্যায়ের ১৭৫ নম্বর ছত্র।

  • দু’জন পুরুষ অপ্রাকৃতিক কার্যে প্রবৃত্ত হলে তাদেরকে জাতিচ্যুত করা হবে এবং জামা পরে তাকে জলে ডুব দিতে হবে। (Manu Smriti Chapter11, Verse 175.)

কি রে অস্টিন গত পূজোয় কেনা নতুন জামাটা পরে জলে ডুব দিতে রাজি আছিস তো! দিতেই কিন্তু হবে। রোমান সম্রাজ্যে দাসদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। তাদেরকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। তুমি যদি অন্য কারো দাসকে ধর্ষণ করো তবে সে রোমান আইনে তোমার বিরুদ্ধে সম্পত্তিহানির অভিযোগ আনতে পারতো। ভারতীয় সনাতন হিন্দু ধর্মও পুরুষকে সব কিছুর জন্যে উর্ধ্বে নিয়ে গেছে। স্ত্রী মারা গেলে স্বামী টোপর পরে কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে চলতো। না মরলে রাড়ি রাখতো। অন্যদিকে স্বামী মারা গেলে সদ্যবিধবা নারীকে বৈধব্যের জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে স্বামীর সঙ্গে একই চিতায় জীবন্ত পুড়ে মরতে হতো। তথ্যসূত্র চাইলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম প্রথম খণ্ড পড়ে দেখতে পারেন। ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই ধর্ম।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ