আকীদা-বিশ্বাস
সমস্যা: দু’ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা ও মুআনাকার যে প্রচলিত প্রথা ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত হয়, এ বিষয়ে ইসলামের বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
রশীদ আহমদ
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
সমাধান: যে কোন নামাযের পর চাই তা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরে হোক বা দুই ঈদের নামাযের পরে হোক মুসাফাহা ও মুআনাকা করা মাকরুহ। কারণ সাহাবাযুগে নামাযের পর মুসাফাহা, মুআনাকা করার প্রথা ছিল না, বরং এটা রাফেযী তথা এক ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের গৃহীত প্রথা। তাই আমাদেরকে এ কু-সংস্কার থেকে বিরত থাকা উচিত। ফাতওয়ায়ে শামী: ৫/৩৩৬, আহসানুল ফাতওয়া: ১/৩৫৩
সমস্যা: আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কিছু মানুষকে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে দেখা যায়, এবং মাঝে মধ্যে এ নিয়ে মানুষের মাঝে মতানৈক্যও সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
হারুনুর রশীদ
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: দাফনের পর দুআ করার কথা প্রমাণিত আছে। মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের মাথার দিকে সূরা আল-বাকারার শুরু থেকে مفلحون পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে সূরা বাকারার শেষের দু’আয়াত পাঠ করে আরো কিছু কুরআনের সূরা বা আয়াত পাঠ করে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও শরীয়তসম্মত। আবু দাউদ: ২/৪৫৯, মিশকাত: ১/১৪৯, আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৫৭, আহসানুল ফাতওয়া: ৪/২৩৩
সমস্যা: আমাদের দেশে বেশ জাঁকজমকভাবে জন্মদিবস পালন করার যে প্রথা রয়েছে তা শরীয়ত সমর্থিত কি না? এবং শোক দিবস পালন সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নেজামুদ্দীন শিহাব
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: শোকদিবস ও জন্মদিবস রাসূল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন (রাযি.)-এর যুগে পালিত হয়েছে বলে হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই হক্কানী উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মতামত হলো, শোকদিবস ও জন্মদিবস পালন সম্পূর্ণ বিদআত। বুখারী শরীফ: ২৬৯৭, আবু দাউদ শরীফ: ৪৬০৬, আহসানুল ফাতওয়া: ১/৩৪৭, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১/৫১৬
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: আমি অধিকাংশ সময় নামায আদায়ের পর লুঙ্গির কিছু অংশ ভিজা দেখতে পাই। এতে আমার সন্দেহ হয় যে, এ ভেজা ইস্তেঞ্জার পানির কারণে নাকি পেশাবের কারণে। কোনটাই স্থির করতে পারি না। এ অবস্থায় আমার নামাযের হুকুম কী?
মু. ইয়াহয়া
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: এ অবস্থায় শরীয়তের হুকুম হলো, যদি এমন সন্দেহ জীবনে প্রথম হয় তাহলে পুনরায় পবিত্রতা অর্জন করে নামায দ্বিতীয়বার পড়ে নিতে হবে। আর এমন সন্দেহ যদি বারবার সৃষ্টি হয় তাহলে সন্দেহ হলেও তার প্রতি কোন ধরণের ভ্রুক্ষেপ না করে আপনাবস্থায় নামায পড়ে নিবে। আর এমন সন্দেহ নামাযের পর সৃষ্টি হলে নামায পুনরায় পড়তে হবে না। তবে উল্লিখিত অবস্থায় পেশাবের কারণে ভিজা হওয়ার প্রবল ধারণা হলে পবিত্রতা অর্জন করে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। বুখারী শরীফ: ১/১৯, মাবসূতে শাইবানী: ১/৬৯, ফাতহুল কদীর: ১/৪৮, আলমগীরী: ১/১৩
সমস্যা: বিভিন্ন রোগের কারণে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। তাই ডাক্তারগণ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত নিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ দশ বার ফোঁটার কম নয়। তাই আমার জানার বিষয় হলো, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করার দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে কি না?
আরিফুল ইসলাম
পটুয়াখালী, বরিশাল
সমাধান: অযুর ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম হলো, পেশাব-পায়খানার রাস্তা বা শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে নাপাক বেরিয়ে আসলে অযু ভেঙে যায়। তবে পার্থক্য হলো, পেশাব-পায়খানার রাস্তা থেকে নাপাক বের হয়ে গড়িয়ে পড়া শর্ত নয়; বরং নাপাক বের হওয়া মাত্র অযু ভেঙে যাবে। কিন্তু এই স্থান ব্যতীত শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে নাপাক বের হয়ে শরীরের এমন স্থানে গড়িয়ে আসতে হবে যে স্থান অযু বা গোসলে ধোয়া ফরয। চাই তা নিজে বের করে হোক বা জোর করে বের করা হোক। সুতরাং ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্ত বের করলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১/১৪৩, আলমগিরী: ১/১১, শামী: ১/৯১
সমস্যা: ফরয গোসলের ক্ষেত্রে কৃত্রিম দাঁত খুলে ফেলতে হবে কি না? ভুলবশত দাঁতগুলো লাগানো অবস্থায় গোসল করে ফেললে গোসল হবে কি না? এ-ক্ষেত্রে শরয়ী সমাধান কী?
আরিফ মাহমুদ
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম
সমাধান: ফরয গোসলে শরীরের যেই যেই স্থানে পানি পৌঁছানো সম্ভব তাতে পানি পৌঁছানো ফরয। সুতরাং কৃত্রিম দাঁত খুলে পানি পৌঁছানো সম্ভব হলে পানি পৌঁছাতে হবে, অন্যথায় গোসল সহীহ হবে না। তবে দাঁত না খুললেও পানি ভিতরে পৌঁছে গেলে তখন দাঁত খুলতে হবে না। আর যদি দাঁতগুলো খোলা না যায় তখন না খুললেও গোসল সহীহ হয়ে যাবে। অতএব ভুলে কেউ দাঁত না খুলে ফরয গোসল করলে যদি ভিতরে পানি না পৌঁছে, তাহলে তার গোসল সহীহ হবে না। বুখারী শরীফ: ১/৪০, ফাতহুল কাদীর: ১/৫০, শামী: ১/১৫৪, আলমগিরী: ১/৫০
সালাত-নামায
সমস্যা: একদিন আমি ফজরের নামায পড়া অবস্থায় দেখি, সূর্য উদিত হয়ে গেছে। আমার জানার বিষয় হলো, সেই নামায পুনরায় কাযা করে দিতে হবে কি না?
তকী জলীলী
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: ফজরের নামায পড়া অবস্থায় সূর্য উদিত হয়ে গেলে সেই নামায বাতিল হয়ে যায়। যদিও তা দ্বিতীয় রাকাআতের শেষ বৈঠকে হোক না কেন। তাই আপনাকে সেই নামায পুনরায় কাযা করে দিতে হবে। বুখারী শরীফ: ১/৮২, মাবসূতে সারাখসী: ১/৩০৪, ফাতহুল কদীর: ১/২০২. আহসানুল ফাতওয়া: ২/৩৫
সমস্যা: কিছুদিন পূর্বে আমি বাস যোগে ঢাকায় যাওয়ার পথে যোহরের নামাযের সময় হয়ে গেলে আমি বাসের সিটে বসেই নামায আদায় করে ফেলি। এখন জানার বিষয় হলো, আমার সেই নামায শুদ্ধ হয়েছে কি না? এবং চলমান যানবাহনে বসে নামায আদায়ের জন্য কোন শর্ত আছে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
আয়াতুল্লাহ
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: চলমান যানবাহনে নামাযের সময় হয়ে গেলে যানবাহন থেকে অবতরণ করে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে নামায আদায় করার সুযোগ থাকলে নেমেই আদায় করতে হবে। তবে নেমে আদায় করতে গেলে যদি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তখন কিবলামুখী হয়ে সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে অন্যথায় সিটে বসে রুকু সিজদার সাথে নামায আদায় করবে। তবে সর্বাবস্থায় কিবলা ঠিক রাখতে হবে। সূরা বাকারা: ২৩৫, জামে’উস-সগীর: ১০৭, আল-মুহীতুল বুরহানী: ১/১৬২
সমস্যা: কোন ব্যক্তি যদি তিলাওয়াতে এমন ভুল করে, যে ভুলদ্বারা নামায ভঙ্গ হয়ে যায় কিন্তু তিলাওয়াতের পর ভুল বুঝতে পেরে সেই অংশটুকু যদি পুনরায় তিলাওয়াত করে তখন তার নামায শুদ্ধ হবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. আবদুশ শাকুর
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: নামাযে কুরআন থেকে যা পাঠ করা হয় পুরোটাই শুদ্ধ পাঠ করা আবশ্যক। যদি কোন রাকাআতে এমন অশুদ্ধ তিলাওয়াত করে ফেলে যার ফলে অর্থ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে যায়, তার দ্বারা নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে যদি অশুদ্ধ তিলাওয়াতের পর সেই রাকাআতেই পুনরায় শুদ্ধ করে পড়া হয়, তার দ্বারা নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তা ফরয নামায হোক বা তারাবীর নামায। তাহতাবী: ১/২৬৭, শরহে ইবনে ওয়াহবান: ১/৪৫ আহসানুল ফতওয়া: ৩/৪৪৫
সমস্যা: আমার একজন আত্মীয়ের চক্ষু অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার সাহেব তিন সপ্তাহ পর্যন্ত রুকু-সিজদা করতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছে। এমতাবস্থায় সে কীভাবে নামায আদায় করবে?
মাহমুদুল হাসান নেছার
চকরিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: কোন ধার্মিক বিজ্ঞ ডাক্তার চক্ষু অপারেশনের কারণে বা অন্য কোন কারণে রুকু-সিজদা করতে কঠোরভাবে বারণ করলে তার জন্য সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বসে বসে রুকু-সিজদা ইশারায় আদায় করে নামায পড়ার শরীয়ত কর্তৃক অনুমতি রয়েছে। তবে সে চাইলে দাঁড়ানো অবস্থায়ও রুকু-সিজদা ইশারায় আদায় করতে পারবে অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় রুকু করে বসে ইশারায় সিজদা আদায় করতে পারবে। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে প্রথম পদ্ধতিটিই উত্তম। মাবসুতে সারাখসী: ১/৩৭৮, মুহিতে বুরহানী: ২/২৬৫, রদ্দুল মুহতার: ২/৫৬৭
জানাযা-দাফন
সমস্যা: কিছুদিন পূর্বে আমার একটি ছেলে সন্তান জন্মলাভের সময় মৃত্যু বরণ করেন। তার জানাযার নামায নিয়ে আমার এলাকার এক আলেম বলেন, তার জানাযা পড়তে হবে না। জানার বিষয় হলো, সেই আলেমের কথা সঠিক কি না?
নিহাল মাহমুদ
কবির হাট, নোয়াখালী
সমাধান: সন্তান জন্মলাভের সময় মৃত্যুবরণ করলে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সেই সন্তান তার শরীরের অধিকাংশ প্রসব হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেছে নাকি অধিকাংশ প্রসব হওয়ার আগে মুত্যুবরণ করেছে। অধিকাংশ প্রসব হওয়ার পর মুত্যুবরণ করলে তার জানাযা পড়তে হবে, অন্যথায় পড়তে হবে না।
বি. দ্র. প্রসবের সময় মাথার দিক দিয়ে বক্ষ পর্যন্ত এবং পায়ের দিক দিয়ে নাভি পর্যন্ত বের হলে অধিকাংশ বের হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। মাবসূতে শাইবানী: ১/৪১৫, আল-মুহীতুল বুরহানী: ১/৩১৫, হেদায়া: ১/১৬৩, রদ্দুল মুহতার: ১/২৪৬
হজ-ওমরা
সমস্যা: গত রমযান মাসে আমি ওমরা পালন করে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে তায়েফ গিয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হলো, তায়েফ থেকে ফিরে মক্কায় আসতে হলে নতুন এহরাম পরিধান করতে হবে কি না?
যাইনুল আবিদীন
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: বহিরাগত ব্যক্তির জন্য মক্কায় প্রবেশের পূর্বে মিকাত থেকে এহরাম পরিধান করা ওয়াজিব। কোন প্রয়োজনে মক্কার বাইরে গিয়ে যদি মিকাত অতিক্রম করে ফেলে। তখন মক্কায় প্রবেশের জন্য নতুন করে এহরাম পরিধান করতে হবে। আপনি যেহেতু ওমরা আদায়ের পর তায়েফ গিয়ে মিকাত অতিক্রম করে ফেলেছেন। তাই তায়েফ থেকে ফিরে মক্কায় আসলে পুনরায় নতুনভাবে এহরাম পরে ওমরা আদায় করতে হবে। ইবনে আবীশাইবাহ: ৪/৫২, ইরশাদুস-সারী: ৮৭, ফাতহুল কদীর: ২/৪৩২, আলমগীরী: ১/২২১
সমস্যা: বর্তমান সময়ে প্রায় সব ব্যাংকেই হজ-বীমা চালু রয়েছে। হজ করার জন্য প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে হজ-বীমা করা জায়েয হবে কি না?
রাশেদুল ইসলাম
দেবিদ্বার, কুমিল্লা
সমাধান: বর্তমান ব্যাংকগুলো তাদের প্রচলিত হজ-বীমা শরীয়তসম্মত হওয়ার দাবি করলেও আমাদের অনুসন্ধানে স্পষ্ট যে, তাদের হজ-বীমা শরীয়তসম্মত নয়। সুতরাং প্রচলিত ব্যাংক ও বীমা কোম্পানীগুলোতে হজ প্রকল্পের নামে অর্থ জমা করা এবং তার লভ্যাংশ ভোগ করা নাজায়েয ও হারাম। সূরা বাকারা: ২৭৬, ফাতওয়ায়ে শামী: ৩/৪৫৩, কাযীখান: ১/২৮৩, আলমগীরী: ১/২১৯, ফাতহুল কদীর: ২/৩২২
সমস্যা: বর্তমানে হজে যেতে হলে দুই এক বছর আগেই টাকা জমা করতে হয়। তাই আমার প্রশ্ন হলো বর্তমানে কোন ব্যক্তির যদি হজের মাসগুলোতে টাকার মালিক হয় তখন তার ওপর হজ ফরজ হবে কি না? অথচ তখন টাকা জমা দিলেও হজ করতে পারবে না। এ অবস্থায় তার টাকাগুলো খরচ হয়ে গেলে পরবর্তীতে হজ করা জরুরি কি না?
আবদুল্লাহ
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
সমাধান: যে পরিমাণ টাকা জমা হলে হজ ফরয হয়ে যায়, সেই পরিমাণ টাকা যদি হজের মাসসমূহের মধ্যে কোন একদিনে হস্তগত হয় এবং শরীয়তগ্রাহ্য কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে তার ওপর হজ ফরয হয়ে যায়। তবে যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে মক্কা শরীফ হতে দূরবর্তী স্থানে থাকে, যেখান থেকে হজে যেতে চাইলে অনেক দিন আগেই টাকা জমা দিয়ে দিতে হয়, সে সমস্ত স্থানে হজ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে টাকা জমা দেয়ার সময়টিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তি যেহেতু এমন সময় টাকার মালিক হয়েছে যখন সে হজে যেতে চাইলেও যেতে পারবে না। তাই তার ওপর হজ ফরয হবে না। এ অবস্থায় তার টাকাগুলো খরচ হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে তার ওপর হজ করা জরুরি হবে না। মুহিতে বুরহানী: ২/৪৯৫, কেফায়া: ২/৩২৮, কাসেমিয়া: ১২/৪৬
সমস্যা: আমার শাশুড়ির বয়স ৪০ বছর। তার ওপর হজ ফরয হয়েছে। আমি ব্যতীত তার অন্য কোন মাহরাম নেই। এ অবস্থায় তিনি আমাকে নিয়ে হজে যেতে চাচ্ছেন। আমার জন্য তা শরীয়তসম্মত হবে কি না? এবং এ হজ দ্বারা আমার ফরয হজ আদায় হবে কি না? সম্পদের মালিক হলে আবার পুনরায় হজ করতে হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. শাকের
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: জামাতা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই চারিত্রিক দুর্বলতা না থাকলে শাশুড়ির সাথে হজের সফরে যেতে কোন সমস্যা নেই। তবে যেহেতু যুবতী শাশুড়ির সাথে নির্জনে অবস্থান করা অনুচিত, তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যুবতী শাশুড়ির সাথে হজে যাওয়া যাবে না। কেননা এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। আপনার শাশুড়ি যেহেতু ৪০ বছরে পদার্পণ করেছে এবং আপনি ছাড়া তার অন্য কোন মাহরাম নেই, তাই তার সাথে হজে যেতে কোন সমস্যা নেই। আর যদি আপনি শাশুড়ির সাথে সাথে আপনার হজের কার্যসমূহ হজের নিয়তে সম্পাদন করে নেন তাহলে আপনার ফরয হজ আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে সম্পদের মালিক হলেও পুনরায় হজ পালন করতে হবে না। এলাউস সুনান: ১০/১১, রাদ্দুল মুহতার: ৩/৪৬৪, মুহিতে বুরহানী: ৩/৯
সমস্যা: বদলি হজের ক্ষেত্রে তিন প্রকারের হজ থেকে কোন হজ আদায় করা উত্তম? বিশেষ করে কেউ হজ্বে ইফরাদ করতে চাইলে তখন তার পদ্ধতি কী হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবুল কাসেম
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমধান: বদলি হজের ক্ষেত্রে তিন প্রকারের হজের মধ্যে হজে ইফরাদ করা উত্তম। বদলি হজের ক্ষেত্রে তার পদ্ধতি হলো মামুর (অর্থাৎ হজের আদিষ্ট ব্যক্তি) আমেরের (অর্থাৎ হজের আদেশদাতার) দেশ থেকে সফর করবে এবং আমের ব্যক্তির মিকাত থেকে ইহরাম পরিধান করবে এবং এই সময় আমেরের পক্ষ থেকে হজের নিয়্যত করবে, তারপর অন্যান্য হাজির মত হজের কার্য চালিয়ে যাবে। রাদ্দুল মুহতার: ২/৬১০/২৩৯, মাবসুতে সারাখসী: ৪/১৭৬, মাউসুআতুল ফিকহিয়া, ১৭/৩৪-৪২
কুরবানী-আকীকা
সমস্যা: তাকবীরে তাশরীক পড়ার হুকুম কি? এবং কয়বার পড়া উত্তম? এ ব্যপারে বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন ধরণের মতামত দেখতে পাই, তার সমাধান কি?
মাসুম বিল্লাহ
লামা, বান্দরবন
সমাধান: এ-ব্যপারে নির্ভরযোগ্য মতামত হচ্ছে, তাকবীরে তাশরীক প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার পড়া। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, ইমাম, মুকতাদী, মুনফারিদ, (একাকী নামায আদায়কারী) সবার ওপর ওয়াজিব। তবে তিনবার বলাকে ওয়াজিব মনে করা খিলাফে সুন্নাত। তবে যদি ওয়াজিব মনে না করে, বরং আল্লাহর যিকির হিসেবে বারবার পড়ে তখন কোন সমস্যা নেই। দারে কুতুনী: ২/৩৭, আদ্দুরুল মুখতার: ৩/৬২ তাহতাভী: ২৯৪, খুলাসাতুল ফ. ১/২১৬
সমস্যা: সাতজন ব্যক্তি মিলে কুরবানীর জন্য একটি বড়জন্তু খরিদ করেছে। সেখান থেকে ছয়জন ব্যক্তি ধনি এবং একজন দরিদ্র। ঘটনাক্রমে কুরবানীর দিনগুলোতে তারা কুরবানী করতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হলো কুরবানীর দিন অতিবাহিত হওয়ার পর জন্তুটিকে কী করা উচিত এবং দরিদ্র ব্যক্তিটির কুরবানী আদায় হওয়ার ছুরত কি হবে?
মু. হাবীবুল্লাহ
মিরশরাই, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় কুরবানীর দিনসমূহ অতিবাহিত হওয়ার পর যদি পুরো জন্তুটি সদকা করে দেয়া হয় তাহলে ধনী-গরীব উভয়ের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে এবং জিম্মাদারীও আদায় হয়ে যাবে। যদি জন্তুটি সদকা না করে তাহলে প্রত্যেকের ওপর একটি ছাগলের মূল্য আদায় করা ওয়াজিব হবে। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরীব উভয়ের বিধান এক ও অভিন্ন। তানবীরুল আবছার: ৬/৩২০, তাবয়ীনুল হাকায়েক: ৬/৪৭৮, মুহিতে বুরহানী: ৮/৪৬৪
সমস্যা: আমাদের গ্রামে একটি রেওয়াজ (প্রথা) আছে যে, ধনী-গরীব, ধার্মিক নির্বিশেষে সবাই কুরবানীর জন্তু নিজ হাতে জবাই না করে মৌলভীদের মাধ্যমে জবাই করাকে উত্তম মনে করে থাকে। অথচ চাইলে প্রত্যেকে নিজেই জবাই করতে পারে। আমার জানার বিষয় হলো, নিজ হাতে জবাই করা ও মৌলভীদেরকে দিয়ে জবাই করার মধ্যে কোনটি উত্তম?
আবদুল হালীম
সিতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম
সমাধান: যে ব্যক্তি নিজে জবাই করতে পারে তার জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে নিজেই জবাই করা। যদি নিজে ভালোভাবে জবাই করতে না জানে, অথবা কোন কারণে অন্য কারো দ্বারা জবাই করে, শরীয়তে তারও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জবাই করার সময় উপস্থিত থাকা উত্তম। আর অন্য করো দ্বারা জবাই করাকে আবশ্যক মনে করা যেমন প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে, শরীয়তে তার কোন ভিত্তি নেই। রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৭৪, তাতার খানিয়া: ১৭/৪৩৫, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৪/৪৭৭
সমস্যা: কুরবানীর চামড়ার টাকা এমন মাদরাসায় প্রদান করা যেখানে ছাত্রদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই এবং সেখানে দূরের ছাত্ররা লেখা পড়াও করে না। এমন মাদরাসায় চামড়ার টাকা প্রদান করা বৈধ কি না?
সমাধান: কুরবানীর চামড়া বিক্রি করার পর তার মূল্য সদকা করে দেয়া ওয়াজিব এবং গরীব-মিসকিনরাই তার উপযুক্ত। উল্লিখিত মাদরাসায় যেহেতু তার উপযুক্ত ছাত্র লেখাপড়া করে না, তাই সেই মাদরাসায় চামড়ার টাকা প্রদান করা জায়েয বা বৈধ হবে না। রদ্দুল মুহতার: ৩/২৮৩, হিদায়া: ৪/৪৫০, মাজমাউল আনহুর: ৪/১৭৪
সমস্যা: সাতজন ব্যক্তি কুরবানির জন্য একটি গরু খরিদ করেছে। কিন্তু সপ্তম ব্যক্তি নিজের অংশের মধ্যে আপন ভাইকে অর্ধ ভাগে শরিক করেছে। মূল্যও উভয়ে অর্ধেক অর্ধেক দিয়েছে। এ অবস্থায় সপ্তম ব্যক্তির কুরবানী হয়েছে কি না? এবং সপ্তম ব্যক্তি নিজের ভাইকে শরীক করার কারণে অপর ছয় শরীকের কুরবানীর মধ্যে কোন সমস্যা হবে কি না?
মু. রহমতুল্লাহ
পটিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় কারো কুরবানী শুদ্ধ হবে না। মিসকাত শরীফ: ১/১২৭, দুর্রে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৫৭, তাতারখানিয়া: ১৭/৪৫৩
সমস্যা: জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় অসিয়ত করেছে যে, আমার সম্পদ থেকে আমার জন্য কুরবানী করবে। পরবর্তীতে ওয়ারিশগণ তার জন্য কুরবানী করল। এ অসিয়তকৃত কুরবানীর গোস্তের হুকুম কি?
হায়দার আলী
রামু, কক্সবাজার
সমাধান: অসিয়তকৃত কুরবানীর গোস্ত খাওয়া জায়েয নেই। তবে যদি মৃত ব্যক্তির হুকুম ছাড়াই ওয়ারিশগণ নিজেদের সম্পদ হতে তার জন্য কুরবানী দিয়ে থাকে তা খাওয়া জায়েয ও বৈধ। রদ্দুল মুহতার: ৫/২০৭, রদ্দুল মুহতার: ৫/২১৩, আহসানুল ফতওয়া: ৭/৪৯২
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমার সাথে তাসলিমা আক্তারের সাথে চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে। আমার স্ত্রীর সাথে ৩-৪ বছর ভালো সম্পর্ক ছিল এরপর থেকে আমার স্ত্রী বিভিন্ন কারণে অকারণে আমার সাথে ঝগড়া করতে থাকে। তারপর আমি তাকে খারাপ আচরণ না করার জন্য অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার পরও সে ফিরে আসছে না। তখন আমি সরকারিভাবে হলফনামার মাধ্যমে বলেছি যে, আমি হলফনামার মাধ্যমে তালাক প্রদান করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন করলাম। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি মৌখিকভাবে কোন তালাক প্রদান করিনি এবং আমার মন থেকেও তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। হলফনামার মধ্যে যে তালাক প্রদান করা হয়েছে তা পতিত হয়েছে কিনা? যদি পতিত হয়ে যায় দ্বিতীয়বার সংসার করার পদ্ধতি কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
বি. দ্র. তালাক দেওয়ার পর থেকে আমার স্ত্রীর সাথে আর সহবাস হয়নি।
নাছির উদ্দীন মজুমদার
চাঁদপুর, কচুয়া
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী স্ত্রীকে লক্ষ্য করে লিখিতভাবে যে কঠোর শব্দ ব্যবহার করেছে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন করলাম। তার দ্বারা যদি স্বামী তিন তালাকের নিয়ত করে থাকে তখন স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হবে। আর যদি তিন তালাকের নিয়ত না করে এবং তিন তালাকের নিয়ত না করার কথা শপথ করে বলে, তখন স্ত্রীর ওপর এক বায়েন তালাক পতিত হবে। তার পর তাদেরকে কমপক্ষে দুই স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে নিম্ন মোহর বর্তমান বাজার দর হিসেবে আড়াই হাজার টাকা মোহর ধার্য্য করে আকদে নেকাহ নবায়ন করতে হবে। শরহুন নুকায়া: ১/৬২২, বেনায়া: ৫/১২, আদ্দুররুল মুখতার: ১/২২৪
সমস্যা: আমার স্ত্রীর সাথে মোবাইলে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমাকে বলে যে, আপনি যেখানে চাকরি করেন ওখানে নিয়ে যান, না হয় আমাকে বাদ দিয়ে দেন এবং সে বিভিন্ন সময় আমাকে ছোটলোক, ফকির, ইত্যাদি বলে থাকে। একপর্যায়ে আমি রাগের মাথায় আমার স্ত্রীকে বলি, তালাক দিলাম, দিলাম। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা ছিল না যে, এরকম কিছু বললে তালাক হয়ে যায়। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার স্ত্রীর ওপর এটা বলার কারণে তালাক পতিত হয়েছে কি না? এবং তালাক হলেও কী করণীয়? বিস্তারিত জানতে চাই।
আহমদ সুমন
সদর, যশোর
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী স্ত্রীকে মোবাইলের মাধ্যমে যখন তালাক দিলাম শব্দ দুই বার ব্যবহার করেছে, যদি এটা সত্য হয় যে, স্বামী দুই বারের অধিক বলেনি, তখন স্বামী যদি তালাক দেয়ার কথাকে শক্ত করার নিয়তে দিলাম শব্দ দু’বার বলে থাকে এবং এটা আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারে, তখন তার দ্বারা স্ত্রীর ওপর এক রজয়ী তালাক পতিত হয়ে গেছে। স্বামী যদি তালাকের ইদ্দত তথা মহিলাদের তিন হায়েয (মাসিক স্রাবের) ভিতর রজায়াত করে ফেলে অর্থাৎ মুখে এই কথা বলে, আমি আমার স্ত্রীকে আমার আকদে নেকাহে ফিরিয়ে নিলাম বা স্ত্রীর সাথে সহবাস ইত্যাদি করে ফেলে তখন তাদের নেকাহ বহাল হয়ে যাবে। অতঃপর স্বামী আর দু’তালাকের মালিক থাকবে। আর যদি স্বামী দিলাম দিলাম শব্দ দুই বার বলার দ্বারা দুই তালাকের নিয়ত করে থাকে তখন স্ত্রীর ওপর দুই রজয়ী তালাক পতিত হয়ে গেছে। অতঃপর স্বামী মাত্র আর এক তালাকের মালিক থাকবে। আর যদি তালাকের উপর্যুক্ত ইদ্দতের ভেতর রজয়াত না করে, তখন তালাক বায়েন হয়ে যাবে এবং শরীয়ত সম্মতভাবে আকদে নেকাহের নবায়ন করতে হবে। সুরা বাকারা: ২২৯, আদ দুররুল মুখতার: ১/২২৪, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৪/৪০১, হেদায়া: ২/৩৯৪
সমস্যা: আমি এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি। করার সময় মেয়ে বলেছে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সেটা কুল্লামা তালাক খেয়ে বলেন। তখন আমি তাকে বলেছি, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আবার বললাম, আমি কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তারপর আমি মেয়েকে শপথ করতে বললাম, তখন মেয়ে বলল, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। এখন মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে বিয়ে শুদ্ধ হবে কি না? নাকি ওকেই বিয়ে করতে হবে। শরীয়তে ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কোন দিক আছে কি না? উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধান জানার প্রার্থনা করছি।
মু. সোহাইল
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: উক্ত ছেলে যখন উক্ত মেয়ের সাথে বিয়ে করার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে, তখন উক্ত ছেলের জন্য সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। সেই মেয়ে ব্যতীত অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। আর মেয়ে যে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে ইসলামী শরীয়তে তার কোন গুরুত্ব নেই। আল-বাহরুর রায়েক: ৩/২৪৪, রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৯৫, মাবসুতে সারাখছী: ৬/১১৩, ফাতাওয়ে হিন্দিয়া: ১/৪১৫
বিবিধ
সমস্যা: জনৈক ব্যক্তি পেশায় কোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন এবং সবসময় সুন্নাতি লেবাস পরিধান করেন। এছাড়া তিনি তাবলীগের সাথেও জড়িত। আমার প্রশ্ন হলো ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তার পেশা অর্থাৎ ওকালতি পেশা হালাল না কি হারাম? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো।
সাজিদুল্লাহ
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: উকিল সাহেব যদি সত্য, জায়েয ও হক মুআমালার জন্য ওকালতি করে থাকে, ইসলামী শরীয়তের মধ্যে তাতে কোন অসুবিধা নাই এবং তার ওকালতির টাকা জায়েয, বৈধ ও হালাল হবে। আর মিথ্যা মুআমালা ও নাজায়েয কাজের জন্য ওকালতি করা জায়েয ও বৈধ হবে না এবং সেই ওকালতির টাকাও জায়েয ও হালাল হবে না। ফাতহুল কদীর: ৮/৩, রদ্দুল মুহতার: ৮/৩৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৫১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৫/৭০
সমস্যা: আপনজামাতার সাথে শাশুড়ির কোলাকুলি সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী?
মু. সুলাইমান
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: কোলাকুলির সময় জামাতা ও শাশুড়ির মধ্য থেকে কারো কামভাব না থাকলে কোলাকুলির কারণে কোন ধরণের সমস্যা হবে না। তবে কোলাকুলির কারণে কারো মধ্যে কামভাবের উদ্রেক হলে জামাতার জন্য তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। তাই সর্বাবস্থায় তা পরিহার করা চাই। বাহরুর রায়েক, ১/১৭৯, তাতারখানিয়া: ৪/৫৭, রদ্দুল মুহতার: ৪/১০৭
সমস্যা: এক ব্যক্তি মায়ের জীবদ্দশায় মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখেনি এবং মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের জানাযা ও কাফন-দাফনে উপস্থিত ছিল না। এ অবস্থায় সমাজের মানুষ খারাপ কাজ থেকে নিষেধের অংশ হিসেবে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কেউ কেউ বলে থাকে, তাকে মসজিদেও আসতে দেওয়া হবে না এবং তার ছেলে মেয়েকে ফোরকানিয়া মাদরাসায় পড়তে দেওয়া হবে না। এ-ব্যপারে শরীয়ত কী বলে?
আবদুল্লাহ মেম্বার
ডলুকুল, সাতকানিয়া
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় মায়ের অবাধ্য উক্ত ছেলেকে শাস্তি স্বরূপ সামাজিকভাবে বয়কট করা এবং সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েয ও বৈধ হবে। কিন্তু দ্বীনি কাজ থেকে তাকে বাধা দেওয়া যথা মসজিদে নামাজ পড়া এভাবে তার ছেলে মেয়েদেরকে ফোরকানিয়া মাদরাসায় দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করা থেকে বাধা দেওয়া জায়েয ও বৈধ হবে না। বুখারী শরীফ: ২/৭৯৭, উমদাতুল কারী: ১৫/২২৮, ফাতহুল মুলহিম: ৫/৩৫৫, আহসানুল ফাতাওয়া: ৫/২২৯
মুআমালা-লেনদেন
সমস্যা: আমি এক ব্যক্তি থেকে এক লক্ষ টাকা এ শর্তে নিয়েছি যে, ওই টাকার পরিবর্তে তাকে আমি দু’হাজার ডলার দেবো যার মূল্য ওই এক লক্ষ টাকার চেয়ে বেশি। উক্ত লেনদেন শরীয়তসম্মত হবে কি না?
আবদুর রশীদ
টেকনাফ, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত লেনদেন শরীয়ত মতে জায়েয হবে না, বরং দু’হাজার ডলারের মূল্য যদি এক লক্ষ টাকার বেশি হয় তাহলে যা ডলার বেশি হবে তা ফেরত দিতে হবে। কেননা যে জাতীয় জিনিস কর্জ নেওয়া হয় সে জাতীয় জিনিস দ্বারাই কর্জ পরিশোধ করতে হয়। তাই যদি অতিরিক্ত কিছু দেওয়ার শর্ত করা হয় এটা সুদ হিসাবে গণ্য হবে। আদ-দুররুল মুখতার: ১/১৬৫
সমস্যা: শিয়াল একটি হিংস্র প্রাণী। বনের গুহায় বসবাস করে। শিকার করা অনেক কঠিন। তবুও মানুষ অনেক কলা-কৌশল দ্বারা এগুলো ধরে ফেলে। জবাই করে অনেকে খায়। আর কিছু লোক বিক্রি করে। এখন প্রশ্ন হল, শিয়ালের গোস্ত খাওয়া বৈধ কি না? যদি না হয়, ওষুধ হিসাবে খাওয়া, সেবন করা জায়েয় হবে কি না? শরয়ী সমাধান জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
মুহাম্মদ যোবাইর
মিরসরাই, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: শিয়াল একটি হিংস্র প্রাণী। রাসূল (সা.) হিংস্র প্রাণী খাওয়া নিষেধ করেছেন। সুতরাং শিয়ালের গোস্ত খাওয়া হারাম। ওষুধ হিসাবে খাওয়া ও সেবন করা জায়েয নেই। কেননা হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা করা বৈধ নয়। কিন্তু যদি কোন অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার বলে তখন জায়েয হবে। তবে শর্ত হল তার বিকল্প কোন জায়েয ব্যবস্থা না থাকতে হবে। আর এতে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে আরোগ্য হওয়ার অধিক সম্ভাবনাও থাকতে হবে। সূরা আরাফ ৫৭; সহীহ বোখারী ২/৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৬৩; আল বাহরুর রায়েক ৮/১৭১; ইমদাদুল আহকাম ৪/৩১৯