জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শায়খ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর হাদীস গবেষণা: জনৈক লা-মাযহাবীর মূল্যায়ন

শায়খ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর হাদীস গবেষণা: জনৈক লা-মাযহাবীর মূল্যায়ন

শায়খ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর হাদীস গবেষণা: জনৈক লা-মাযহাবীর মূল্যায়ন

[শায়খ আবদুল্লাহ আল-দাওয়ীশ সউদী বংশোদ্ভুত একজন বিদগ্ধ মুহাদ্দিস। উদারপন্থি লা-মাযহাবী আলিম পণ্ডিত ব্যক্তিত। ইবনে হাজার আল-আসকালানী (রহ.)-রচিত ফতহুল বারীর সফল টীকাকার। শায়খ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর বিশিষ্ট গুণগ্রাহী একান্ত অনুরক্ত। হাদীস রিজালশাস্ত্রে একজন স্বাধীন চিন্তাধারার অধিকারী। তিনি শায়খ আল-আলবানীর হাদীসগবেষণায় সুতীক্ষ্ণ নিরীক্ষা পরিচালনা করে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি শোধরে দেন। উগ্রবাদী সালাফীদের শায়খ আলবানীর তাকলিদ অনুসরণ বিষয়ে সতর্কীকরণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি تنبيه القارئ على تقوية ما ضعفه الألباني শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। যাতে বিষদ গবেষণার মাধ্যমে ২৯৬টি হাদীসকে সহীহ বলে প্রমাণ করেন যে সকল হাদীসকে শায়খ আলবানী যয়ীফ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার تنبيه القارئ لتضعيف ما قوّاه الألباني শিরোনামে ১৪টি হাদীসকে যয়ীফ সাব্যস্ত করেন, যেগুলোকে শায়খ আলবানী সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। যা শীঘ্রই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে গ্রন্থের ৫-১১ ক্রমিকের হাদীস আলোচনা করা হলো]

আবিদুর রহমান তালুকদার

 

[পূর্বপ্রকাশিতের পর]

হাদীস: পাঁচ

حديث: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ، وَلَا غَائِبًا، إِنَّ الَّذِيْ تَدْعُوْنَهُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ أَعْنَاقِ رِكَابِكُمْ». قال في ضعيف الجامع (6 / 99)، ت عن أبي موسى الأشعري تخريج السنة (618) صحيح أبي داود (1365).

`হে মানবজাতি! তোমরা বধির ও দূরে অবস্থানকারী কোনে সত্বাকে আহ্বান করছো না। তোমরা যাকে ডাকছো, তিনি তোমাদের এবং তোমাদের বাহনের ঘাড়ের মাঝখানে।’[1]

নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী উপর্যুক্ত গ্রন্থাবলিতে হাদীসটি ضعيف হিসেবে বর্ণনা করেন।

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, এটি সহীহ। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এ বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, ‘এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।’ ইমাম আবু দাউদ আবু মুসা আল-আশআরী (রাযি.)-এর বরাতে হাদীসটি বর্ণনা করেন। হাম্মাদ ইবনে সালামা ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সহী আল-বুখারী ও মুসলিমের রাবী। তিনি একজন নির্ভরযোগ্য রাবী। ইমাম বুখারী (রহ.) ও মুসলিম (রহ.) তার নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী আবু মুসা আল-আশআরী (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি তোমাদের এবং বাহনের মাথার মাঝখানে অবস্থান করছেন।

এ হাদীসের রাবী আবু নুআমা আল-সাদীকে তাকরীবুত তাহযীব কিতাবের লেখক (ইবনে হাজার আল-আসকলানী রহ.) নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তার নিকট থেকে ইমাম মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তাখরীজুসুন্নাহ (১/২৭৪-২৭৫) কিতাবে তাকে মুনকার রাবী হিসেবে দাবি করা হয়েছে। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে তাকে যয়ীফ বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো, এ দাবিটি ভিত্তিহীন। কেননা এ হাদীসের অর্থবোধক বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরিমিযী (রহ.)-এর বর্ণনাটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।[2]

হাদীস: ছয়

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: شَرِبَ رَجُلٌ فَسَكِرَ، فَلُقِيَ يَمِيلُ فِي الْفَجِّ، فَانْطُلِقَ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ ^، فَلَمَّا حَاذَى بِدَارِ الْعَبَّاسِ، انْفَلَتَ فَدَخَلَ عَلَى الْعَبَّاسِ فَالْتَزَمَهُ، فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضَحِكَ، وَقَالَ: «أَفَعَلَهَا؟» وَلَمْ يَأْمُرْ فِيهِ بِشَيْءٍ.

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি মদ পান করে মাতাল অবস্থায় পথে প্রান্তরে ঘুরতে লাগলো। আমরা তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট নিয়ে যেতে গেলাম। হযরত আব্বাস (রাযি.)-এর গৃহ বরাবর আসার পর তার হুশ ফিরে আসলো। সে হযরত আব্বাস (রাযি.)-এর গৃহে প্রবেশ করে তাঁকে জড়িয়ে ধরলো। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি হেসে উঠে বললেন, ‘সে কি বাস্তবেই এ কাজটি করেছে?’ তিনি লোকটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি।’[3]

নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী তাখরীজুল মিশকাত গ্রন্থে দুর্বল সনদে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, ‘এখানে ইবনে জুরাইজ عنعنه রেওয়ায়াত দ্বারা হাদীসটি বর্ণনা করেন।’[4]

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, এটি সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ (রহ.)-এর রেওয়ায়াতের কারণে তাকে অনেকে অভিযুক্ত করেছেন। ইমাম বায়হাকী (রহ.)-এর রেওয়ায়াতে ইবনে জুরাইজ এ অভিযোগ স্পষ্টভাবে খণ্ডন করেছেন। ইবনে হাজার আল-আসকালানী (রহ.) ফতহুল বারি (১২/৭২)-এ মন্তব্য করেন, ‘ইমাম আবু দাউদ ও নাসায়ী শক্তিশালী সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন।’[5]

হাদীস: সাত

وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ^، فَقَالَ: إِنِّي لَأُحِبُّكَ. قَالَ: «انْظُرْ مَاذَا تَقُوْلُ»، فَقَالَ: وَاللهِ إِنِّيْ لَأُحِبُّكَ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَ: «إِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافًا لَلْفَقْرُ أَسْرَعُ إِلَى مَنْ يُحِبُّنِيْ مِنَ السَّيْلِ إِلَىٰ مُنْتَهَاهُ» رواه الترمذي وقال: «هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ غَرِيْبٌ».

‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্‌ফাল (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, ‘খুর ভেবে-চিন্তে কথাটি বলো।’ লোকটি আবার বললো, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে ভালোবাসি। কথাটি সে তিনবার বললো। ‡hvMf

ffffরাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি সত্যবাদী হলে অভাবকে বর্ম হিসেবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হও। বন্যার পানি যেভাবে খুব দ্রুত গতিতে প্রান্ত-সীমায় পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যে আমাকে ভালোবাসে অভাব তার নিকট বন্যার পানির চেয়েও অধিক দ্রুত গতিতে পৌঁছে যায়।’[6]

ইমাম তিরমিয (রহ.) হাদীসটি বর্ননা করে বলেন, ‘এটি হাসান ও গরিব হাদীস।’

নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী তাখরীজুল হাদীস কিতাবে বলেন, এ হাদীসের সনদ যয়ীফ, তার মূল বক্তব্য (المتن) হলো منكر|[7]

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, এটি হাসান। যেমনটি ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেছেন, অথবা সহীহ। এ হাদীসের পক্ষে অনেক شواهد রয়েছে। যেমন-

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ h، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ ^، فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ ^: «اللَّهَ» قَالَ: اللهَ، قَالَ: «فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافًا».

‘হযরত আবু যর আল-গিফারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, জনৈক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন, আমি আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যদি তুমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কথাটি বলে থাকো তবে অভাবকে বর্ম হিসেবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হও।’[8]

ইমাম হাকিম (রহ.) হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এটি ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর শর্তসাপেক্ষে সহীহ। তবে হাদীস দুটি তারা রেওয়ায়াত করেননি। ইমাম যাহাবী (রহ.) কিতাবে তাঁর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন।

এ হাদীসের স্বপক্ষে আরেকটি অর্থবোধক হাদীস হচ্ছে,

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوْفٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِيْ عَمْرٌو، عَنْ سَعِيْدِ بْنِ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ، عَنْ أَبِيْهِ، أَنَّهُ شَكَا إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ^ حَاجَتَهُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ^: «اصْبِرْ أَبَا سَعِيْدٍ فَإِنَّ الْفَقْرَ إِلَىٰ مَنْ يُحِبُّنِيْ مِنْكُمْ أَسْرَعُ مِنَ السَّيْلِ مِنْ أَعْلَى الْوَادِيْ، وَمِنْ أَعْلَى الْـجَبَلِ إِلَىٰ أَسْفَلِهِ».

‘হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট নিজের প্রয়োজনের অপূর্ণতার অভিযোগ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে আবু সাঈদ! ধৈর্য ধারণ করো। উপত্যকা এবং পাহড়ের ওপর থেকে প্লাবনের পানি যেভাবে দ্রুত গতিতে নিচে গড়িয়ে পড়ে, যে আমাকে ভালোবাসে অভাব তার দিকে এর চেয়েও বেশি দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পড়ে।’[9]

ইমাম হায়সামী (রহ.) তাঁর মাযমাউয যাওয়ায়িদ কিতাবে এ হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘হাদীসটি ইমাম আহমদ রেওয়ায়াত করেন। এ হাদীসের সকল রাবী সহীহ হাদীসের রাবী। তবে এটি المرسل সদৃশ্য।’[10]

তৃতীয় অর্থবোধক হাদীসটি হচ্ছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ ^ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّكَ، فَقَالَ: «اسْتَعِدَّ لِلْفَاقَةِ». رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ بَكْرِ بْنِ سُلَيْمٍ، وَهُوَ ثِقَةٌ.

‘হযরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট একজন লোক এসে বললেন, আমি আপনাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার উদ্দেশে বললেন, ‘অভাবের জন্য প্রস্তুত থাকো।’[11]

ইমাম বাযযায হাদীসটি বর্ণনা করেন, এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই সহীহ হাদীসের রাবী। বকর ইবনে সালিম একজর নির্ভরযোগ্য রাবী।[12]

হাদীস: আট

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ فَلْيَفْتَتِحْ صَلَاتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ».

‘হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ রাত্রিবেলায় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর প্রথমে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাকাআত নামায আদায় করবে।’[13]

নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলে মন্তব্য করেন।

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, ইমাম মুসলিম (রহ.) এ হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম মুসলিম (রহ.) সংকলিত কোনো হাদীস যয়ীফ হতে পারে না। তাছাড়া এ হাদীসের বর্ণনাসূত্রে এমন কোনো রাবীও নেই যাকে যয়ীফ আখ্যায়িত করা যায়। হাদীসটির সনদ নিম্নরূপ:

قال مسلم في صحيحه: حَدَّثَنَا أَبُوْ بَكْرِ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ^ …

এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর রাবী। রাবীদের পরিচয় হলো, এখানে মুহাম্মদ হলেন ইবনে সিরীন। হিশাম হলেন হাস্‌সানের পুত্র। তিনি মুহাম্মদ ইবনে সিরীনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছাত্র। তাঁর ব্যাপারে হাফিয ইবনে হাজার আল-আসকলানী (রহ.) তাকরীবুত তাহযীব (২/৩১৮)-এ এটিই মন্তব্য করেন। আবু উসামা হলেন হাম্মাদ ইবনে উসামা। তিনি এতোই প্রসিদ্ধ যে, তাঁর সম্পর্কে কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই। আবু বকর ইবনে শয়ইবা হলেন, প্রসিদ্ধ হাদীস সংকলন মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বার রচয়িতা। গ্রন্থকার হাদীসটিকে ইরাউল গালীল (২/৪৫৩)-এ সহীহ বলে মন্তব্য করেন।[14]

হাদীস: নয়

«إِنَّ الَّذِي يَجُرُّ ثَوْبَهُ مِنَ الْـخُيَلَاءِ فِي الصَّلَاةِ لَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ حِلٍّ وَلَا حَرَامٍ».

‘যে ব্যক্তি নামাযে অহংকারবশত গোড়ালির নিচের কাপড় পরিধান করে টেনে-হিঁচড়ে চলে তার জন্য হালাল-হারাম সম্পর্কিত আল্লাহর কোনো বিধান পালন করার প্রযোজন নেই।’[15]

নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) বর্ণিত হাদীসটিকে যায়ীফু জামিয়িস সগীর (২/১৫২৬)-এ যয়ীফ বলে মন্তব্য করেন।

হাদীসটি সম্পর্কে আমার বক্তব্য হলো, এ হাদীসের সনদ مرفوعًا وموقوفًا উভয়টিই সহীহ। ইমাম তায়ালিসী (রহ.) বর্ণিত হাদীসটি হলো,

حَدَّثَنَا أَبُوْ دَاوُدَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، وَثَابِتٌ أَبُوْ زَيْدٍ، عَنْ عَاصِمٍ الْأَحْوَلِ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، رَفَعَهُ أَبُو عَوَانَةَ وَلَمْ يَرْفَعْهُ ثَابِتٌ أَنَّهُ رَأَى أَعْرَابِيًّا عَلَيْهِ شَمْلَةٌ قَدْ ذَيَّلَهَا وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ الَّذِي يَجُرُّ ثَوْبَهُ مِنَ الْخُيَلَاءِ فِي الصَّلَاةِ لَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي حِلٍّ وَلَا حَرَامٍ»

এ হাদীসের রাবীগণ অত্যন্ত মযবুত ও নির্ভরযোগ্য। মরফূ’ রেওয়ায়েতটি প্রধান্য পেলে হাদীসটির ওপর কোনো ধরণের প্রশ্ন তোলা অবান্তর। মওকূফ রেওয়ায়েতটিও মরফূ’র মতো। কেননা বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা এ ধরণের কথা বলা যায় না।[16]

হাদীস: দশ

حديث ابن عمر: «الْقَبَالَاتُ رِبًا».

ওমর (রাযি.)-এর উক্তি: ‘মালিককে নির্দিষ্ট পরিমান শষ্য প্রদান করার শর্তে কোনো ব্যক্তি ক্ষেতের খাজনা উত্তোলনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

ইরাউল গালীল (৩/২৮২)-এ এ হাদীস সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী বলেন, ‘তার সনদ সম্পর্কে আমি অবগত নই।’

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাঁর আল-ফতওয়া আল-মিসরিয়া (৩/৩৯৫)-এ বলেন,

قَالَ حَرْبٌ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِيْ، حَدَّثَنَا سَعِيْدٌ، عَنْ جَبَلَةَ، سَمِعَ ابْنَ عُمَرَ، يَقُوْلُ: «الْقَبَالَاتُ رِبًا».

এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই সহীহ হাদীসের রাবী। হারব হলো, আল-কিরমানী।[17]

হাদীস: এগার

روي أن صفية بنت حيي زوج النبي ^ وقفت علىٰ أخ لها يهودي.

‘বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী সফিয়া বিনতে হুয়াই তার ইহুদি ভাইয়ের জন্য অসিয়ত করে গেছেন।’

ইরাউল গালীল (৬/৮৩)-এ এ হাদীস সম্পর্কে নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী বলেন, আমি এ হাদীসের সনদ সম্পর্কে অবগত নই।

হাদীসটির ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, বায়হাকী (রহ.) বর্ণনা করেন,

عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ صَفِيَّةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لِأَخٍ لَـهَا يَهُوْدِيٍّ: أَسْلِمْ تَرِثْنِي، فَسَمِعَ بِذَلِكَ قَوْمُهُ فَقَالُوْا: أَتَبِيعُ دِينَكَ بِالدُّنْيَا، فَأَبَىٰ أَنْ يُسْلِمَ، فَأَوْصَتْ لَهُ بِالثُّلُثِ.

‘ইকরামা থেকে বর্ণিত, সফিয়া তার ইহুদি ভাইয়ের উদ্দেশে বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো, তবে আমার উত্তরাধিকার সম্পদের মালিক হতে পারবে। সে প্রস্তাবটি অস্বীকার করলো। অতঃপর তিনি স্বীয় সম্পদের এক তৃতীয়াংশ তার জন্য অসিয়ত করে যান।’[18]

এ সনদটি সহীহ। তবে এটি মুনকাতি’। তা সত্ত্বেও হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে সহীহ হাদীসের মর্যাদা লাভ করেছে। এ হাদীসের আরেকটি অর্থবোধক হাদীস হলো,

 روى البيهقي: عَنْ أُمِّ عَلْقَمَةَ مَوْلَاةِ عَائِشَةَ، أَنَّ صَفِيَّةَ بِنْتَ حُيِيِّ بْنِ أَخْطَبَ أَوْصَتْ لِابْنِ أَخٍ لَـهَا يَهُودِيٍّ.

‘ইমাম বায়হাকী আয়িশা (রাযি.)-এর আযাদকৃত দাসী উম্মু আলকামা থেকে বর্ণনা করেন যে, সফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনে আখতাব তাঁর ইহুদি ভাইয়ের জন্য অসিয়ত করেন।’[19]

উম্মু আলকামার সনদে হাদীসটি হাসান। ইবনে সা‘দ সহীহ সনদে বর্ণনা করেন,

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ؛ أَنَّ صَفِيَّةَ أَوْصَتْ لِقَرَابَةٍ لَهَا مِنَ الْيَهُودِ.

‘ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণিত, সফিয়া বিনতে হুয়াই (রাযি.) তাঁর ইহুদি নিকটাত্মীয়ের জন্য অসিয়ত করেন।’[20]

তিনি আরও বর্ণনা করেন,

عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ، قَالَ : رَأَيْتُ شَيْخًا، فَقَالُوْا: هَذَا وَارِثُ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ، فَأَسْلَمَ بَعْدَ مَا مَاتَتْ، فَلَمْ يَرِثْهَا.

‘হযরত হুসাইন ইবনে আবদুর রহমান থেকে সহীহ সনদে তিনি বর্ণনা করে বলেন, আমি এক বৃদ্ধ সম্পর্কে লোকদের বলতে দেখেছি যে, তিনি হলেন সফিয়া বিনতে হুয়াই এর ওয়ারিস। তিনি সফিয়ার মৃত্যুর পর ইসলাম গ্রহণ করার কারণে উত্তরাধিকার সম্পদের মালিক হতে পারেননি।’[21]/[22]

[1] (ক) আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৭৮, হাদীস: ১৫২৬; (খ) আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৫, পৃ. ৫০৯, হাদীস: ৩৪৬১

[2] আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, দারুল উলিয়ান, জিদ্দা, সউদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), পৃ. ৭-৮, হাদীস: ৫

[3] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ১৬২, হাদীস: ৪৪৭৬

[4] আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান (তৃতীয় প্রকাশ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১০৭৫, হাদীস: ৩৬২২

[5] আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ৮-৯, হাদীস: ৬

[6] আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৪, পৃ. ৪৭৬-৫৭৭, হাদীস: ২৩৫০

[7] আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান (তৃতীয় প্রকাশ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ১৪৪৫, হাদীস: ৫২৫২

[8] আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহাঈন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯০ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৩৬৭, হাদীস: ৭৯৪৪

[9] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ২৪, পৃ. ৪০২-৪০৩, হাদীস: ১৫৬৪৫

[10] আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, মাকতাবাতুল কুদসী, কায়রো, মিসর (১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১০, পৃ. ২৭৪, হাদীস: ১৭৯৮৪

[11] আল-বায্যার, আল-মুসনদ = আল-বাহরুয যাখ্খার, মকতবাতুল উলুম ওয়াল হাকাম, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব, খ. ১২, পৃ. ৩৪১, হাদীস: ৬২২২

[12] আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ৯-১০, হাদীস: ৭

[13] (ক) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫৩২, হাদীস: ৭৬৮; (খ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১৫, পৃ. ৯৮, হাদীস: ৯১৮২

[14] আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ১০, হাদীস: ৮

[15] (ক) আবু দাউদ আত-তায়ালিসী, আল-মুসনদ, দারু হিজরা, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯৯ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ২৭৪, হাদীস: ৩৪৯; (খ) আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৩৪৩, হাদীস: ৩৩০৬

[16] আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ১০-১১, হাদীস: ৯

[17]   আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ১৮, হাদীস: ১৫

[18] আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৬, পৃ. ৪৫৯, হাদীস: ১২৬৫০

[19]   আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৬, পৃ. ৪৫৯, হাদীস: ১২৬৫১

[20]   ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, মাকতাবাতুল খানজী, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১০, পৃ. ১২৪, হাদীস: ১১১৬০

[21]   ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, খ. ১০, পৃ. ১২৪, হাদীস: ১১১৬১

[22]   আবদুল্লাহ আদ-দাওয়ীশ, তানবীহুল কারী লি-তাকবিয়াতি মা যা’আফাহুল আলবানী, পৃ. ১৮-১৯, হাদীস: ১৬

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ