জামের যত পুষ্টিগুণ
এখন চলছে সবরকম মৌসুমী ফলের ভরা মৌসুম। এখন যত্রতত্র মিলছে আম, জাম, কাঁঠালসহ অন্যান্য সব ধরনের মিষ্টি ফল। এর মধ্যে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি হচ্ছে জাম। কালো রঙের এই ফলটিতে কী কী পুষ্টিগুণ ও খাদ্য গুণ আছে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. কাঁচা জামের পেস্ট পেটের জন্য উপকারী। এতে পেটের রোগ সেরে যায়। ক্ষুধামন্দা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জামের আচার পানির মধ্যে সমপরিমাণে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
২. বর্তমানে কিছু দেশে জাম দিয়ে বিশেষ ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, যা ব্যবহারে চুল পাকা বন্ধ হবে।
৩. গলার সমস্যার ক্ষেত্রে জাম ফলদায়ক। জাম গাছের ছাল পিষে পেস্ট তৈরি করে তা পানিতে মিশিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে গলা পরিষ্কার হবে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে, মাড়িতে কোনো সমস্যা থাকলে তাও কমে যাবে।
৪. জামে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’। প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সময় জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রবণতা বাড়ে, জামে এটি দূর হয়।
৫. জামের ভিটামিন ‘এ’ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। সঙ্গে স্নায়ুগুলোকে কর্মক্ষম রেখে দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়ায়।
৬. জামে থাকা গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরেও শক্তি সঞ্চিত করে।
৭. দাঁত, চুল ও ত্বক সুন্দর করতে খেতে পারেন জাম। জামের উপাদানগুলো ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৮. ক্যান্সারের জীবানু বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা আছে জামের। বিশেষ করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
৯. জামে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও ভিটামিনগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
১০. জামের উপাদানগুলো মেমোরি সেলগুলোকে উজ্জীবিত করে স্মৃতিশক্তি বাড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১১. নিয়মিত জাম খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। জাম ডায়াটরি ফাইবারে পূর্ণ। তাই দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরাও জাম খেলে উপকার পাবেন।
১২. যাদের কোনো কিছুই মুখে রোচে না, তারা রুচি ফিরিয়ে আনতে জাম খেতে পারেন। ভ্রমণজনিত বমিভাবও দূর করে এই ফল।
১৩. যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত জাম খেতে পারেন। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে জামের জুড়ি নেই।
১৪. নিয়মিত জাম খেলে হৃদরোগ এড়ানো যায়।
১৫. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও আছে সুখবর। রক্তে চিনির মাত্রা সহনীয় করে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জামের জুড়ি নেই।
জাম খুব উপকারী ফল। পুষ্টিগুণে অতুলনীয় এ ফলটিতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্যালিসাইলেট, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফুকটোজসহ অসংখ্য উপাদান। পুষ্টি বিশ্লেষণে জামে পাওয়া যায় পানি ৮৩.১৩ গ্রাম, আমিষ ০.৭২ গ্রাম, শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.২৩ গ্রাম, আয়রন ০.১৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, থায়ামিন (ভিটামিন-বি১) ০.০০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন-বি২) ০.১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন (ভিটামিন-বি৩ ) ০.২৬০ মিলিগ্রাম, প্যানথোনিক অ্যাসিড (ভিটামিন-বি৫) ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি৬ ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম জামের ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে। জামের ইলাজিক অ্যাসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধক। এ ছাড়া হৃৎপিন্ডের অসুখ, জরায়ু, ডিম্বাশয়, মলদ্বার ও মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ থেকে প্রাপ্ত পাউডার বহুমূত্র রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।