চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে সিয়াম সাধনা
লিলবর আর-বারাদী
‘সাওম’ আরবী শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা, সংযম, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। মানবজাতির প্রতি আল্লাহ তাআলার আদেশসমূহের মধ্যে সিয়াম অন্যতম। সিয়াম একটি আধ্যাত্মিক ইবাদত। সিয়ামের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব হচ্ছে মানুষকে মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু করা। হিজরী দ্বিতীয় সনে সিয়াম ফরয হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ۰۰۱۸۳
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাযানের সিয়াম পালন করে, তার বিগত সকল গোনাহ (সগীরা) মাফ করে দেওয়া হয়।’
আমরা অনেকেই মনে করি, সিয়াম সাধনার ফলে গোনাহ মাফ হয় ঠিকই, কিন্তু শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য তা ভীষণ ক্ষতিকর। সারা মাস সিয়াম পালনের ফলে শরীর-স্বাস্থ্যের পুষ্টি সাধনে বাধাপ্রাপ্ত হয় ইত্যাদি। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে চির শাশ্বত তথ্যের সত্যতা বেরিয়ে এসেছে যে, সিয়াম শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। সিয়াম নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করেছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. হেপোক্রেটিস বহু শতাব্দী পূর্বে বলেছেন, The more you nourish a diseased body the worse you make it অর্থাৎ অসুস্থ দেহে যতই খাবার দিবে, ততই রোগ বাড়তে থাকবে। সমস্ত দেহে সারা বছরে যে জৈব বিষ(Toxin) জমা হয়, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার ফলে সে জৈব বিষ দূরীভূত হয়। তাছাড়া মানুষের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর সিয়াম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে সিয়ামের গুরুত্ব আলোচনা করা হল:
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র
সিয়াম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে, তাকে উজ্জীবিত ও উর্বর করে। এর ফলে মানুষের ধ্যান-ধারণা, মন-মানসিকতা পরিচ্ছন্ন হয় এবং স্নায়ুবিক অবসাদ ও দুর্বলতা দূর করে, সুদীর্ঘ অনুচিন্তন ও ধারণ সম্ভব হয়। যার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের এক অতুলনীয় ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, যা সুস্থ স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ার পথ প্রদর্শন করে এবং সূক্ষ্ম অনুকোষগুলি জীবাণুমুক্ত ও সবল রাখে।
প-িতগণ বলেছেন, Empty stomach is the power house of knowledge(ক্ষুধার্ত উদর জ্ঞানের আধার)। সিয়াম সাধনায় মানুষের মানসিক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। মনঃসংযোগ ও যুক্তি প্রমাণে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। আর স্নায়ুবিক প্রখরতার জন্য ভালোবাসা, আদর-স্নেহ, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। তাছাড়া ঘ্রাণ শক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বোধশক্তির তীক্ষণতা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে ডা. আলেক্স হেইগ বলেন, ‘সিয়াম হতে মানুষের মানসিক শক্তি ও বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলি উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনঃসংযোগ ও শক্তি পরিবর্ধিত হয়।’
হৃদপিণ্ড ও ধমনীতন্ত্র
মানবদেহে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমে রক্তে কোলেস্টেরল(Cholesterol) বেশি থাকে। রক্তে স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের পরিমাণ হল ১২৫-২৫০ মিলিগ্রাম ১০০ মিলিলিটার সিরামে (প্লাজমে)। এর বেশি হলে হৃদপিণ্ড, ধমনীতন্ত্র ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি মারাত্মক রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে এবং ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যেমন- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, পিত্ত থলিতে পাথর, বাত প্রভৃতি মারাত্মক জটিল রোগ। কিন্তু নিয়মিত সিয়াম পালনের ফলে দেহে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না এবং রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্থিতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া হৃদপিণ্ডের ধমনীসহ সকল প্রকার ধমনীতন্ত্রগুলিও স্বাভাবিক পরিষ্কার ও সক্রিয় রাখে।
লিভার ও কিডনি
যকৃত(Liver) মানবদেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। যকৃতের ডান অংশের নীচে পিত্তথলি থাকে। যকৃত কর্তৃক ক্ষারিত পিত্ত জীবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। যকৃতের কার্যক্ষমতা লোপ পেলে জন্ডিস, লিভার সিরোসিস সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। স্নেহ পদার্থ শোষণে পিত্তলবণ অংশ নেয়। এ ছাড়াও ল্যাক্সেটিভ কাজে অংশ নেয় এবং কোলেস্টেরল লেসিথিন ও পিত্তরঞ্জক দেহ হতে বর্জন করে। কিন্তু সিয়ামসাধনার ফলে এই কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং সকল অঙ্গগুলি সক্রিয় হয়ে উঠে। অন্যথায় সিয়ামের অসীলায় যকৃত ৪ হতে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্বস্তিগ্রহণ করে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ দাবি খুবই যুক্তিযুক্ত যে, যকৃতের এই অবসর গ্রহণের সময়কাল বছরে কমপক্ষে একমাস হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। কেননা যকৃতের দায়িত্বে খাবার হজম করা ব্যতীত আরো পনের প্রকার কাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাছাড়া যকৃত স্বীয় শক্তিকে রক্তের মধ্যে Globulin সৃষ্টিতে ব্যয় করতে সক্ষম হয়।
অনুরূপ কিডনিও(Kidney) শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম। কিডনীকে জীবনও বলা হয়। কিডনি দেহে ছাকনী হিসাবে কাজ করে। যাকে রেচনতন্ত্র বলা হয়। কিডনী প্রতি মিনিটে ১ হতে ৩ লিটার রক্ত সঞ্চালন করে। রক্তের অপদ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে মূত্রথলিতে প্রেরণ করে। সিয়াম অবস্থায় কিডনী বিশ্রামে থাকে। কিন্তু তার রেচনক্রিয়া অব্যাহত রেখে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে। যার জন্য মানুষ সুস্থ থাকে এবং রক্ত পরিষ্কার ও বর্ধিত হয়।
পাকস্থলী ও অন্ত্র
যকৃত ও পাকস্থলীর অবস্থান পাশাপাশি। কখনো বিভিন্ন খারাপ খাদ্যের প্রভাব যকৃতের ওপর পড়ে। পাকস্থলী স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড মেশিন। যার ভিতরে অনায়াসে বিভিন্ন প্রকার খাবার হজম হয়। পাকস্থলীসহ অন্যান্য অঙ্গ সক্রিয়ভাবে ২৪ ঘণ্টা কর্তব্যরত থাকা ছাড়াও স্নায়ুচাপ ও খারাপ খাদ্যের প্রভাবে এতে এক প্রকার ক্ষয় সৃষ্টি হয়। আবার অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর আয়তনও বৃদ্ধি পায়। আর এ আয়তন বর্ধিত হওয়াতে মানুষের শরীরের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
কিন্তু দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা পাকস্থলীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। শরীরের অন্যান্য পেশির মত পাকস্থলীকে খাদ্যমুক্ত বা বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন। এতে করে ক্ষয় পূরণ ও পুনর্গঠন কাজে সাহায্য করে। তাছাড়া গ্যাস্টিক জুইস এনালাইসিস করে যে এসিড কার্ভ পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় যে, সিয়াম অবস্থায় পাকস্থলীর এসিড সবচেয়ে কম থাকে। আমরা ধারণা করি যে, সিয়ামের অবস্থায় এসিডিটি বেড়ে যায়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। প্রকৃত সত্য হল, সিয়াম অবস্থায় এসিডিটি বাড়ে না, বরং কমে যায় এবং পেপটিক আলসার নির্মূলে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে ডা. মুহাম্মাদ গোলাম মুয়াযযম দীর্ঘ গবেষণা করে (১৯৫৮Ñ১৯৬৩ পর্যন্ত) বলেন, শতকরা প্রায় ৮০ জন সিয়াম পালনকারীর পাকস্থলীতে অম্লরসের প্রভাব স্বাভাবিক। আমার প্রায় ৩৬% জনের অস্বাভাবিক এসিডিটি স্বাভাবিক হয়েছে। প্রায় ১২% সায়েমের এসিডিটি সামান্য বেড়েছে। তবে কারো ক্ষতির পর্যায়ে যায়নি। সুতরাং সিয়াম পালনকারীর পেপটিক আলসার হতে পারে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও মিথ্যা।
উত্তর নাইজেরিয়ায় অবস্থিত জারিয়ার Wusasa Hospital– এর ডাক্তার E. T. Hess১৯৬০ সালে লিখেছেন, ‘পেপটিক আলসার রোগীর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ অঞ্চলে দেখা গেছে যে, উপজাতীয় জীবন ধারায় যারা জীবন-যাপন করে তাদের মধ্যে একজনও পেপটিক আলসারের রোগী নেই। কারণ উপজাতিরা সিয়াম পালন করত এবং মদ ও তামাকযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত ছিল। তাই তাদের পাকস্থলীতে কোন প্রকার জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।
অগ্নাশয় ও কোষ নিয়ন্ত্রণ
অগ্নাশয়(Pancreas) মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর গ্রন্থিরসে ইনস্যুলিন(Insulin) নামক এক প্রকার হরমোন তৈরি হয়। এ ইনস্যুলিন রক্তের মাধ্যমে দেহের প্রত্যেক কোষে পৌঁছে এবং গ্লুকোজেন(Glycogen) অণুকে দেহ কোষে প্রবেশে সাহায্য করে। অন্যথায় ইনস্যুলিন তৈরি ব্যাহত হলে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। কিন্তু সিয়াম সাধনার ফলে পাকস্থলী বিশ্রামে থাকে হেতু সেখানে খাদ্যরস বা গ্লুকোজ তৈরি ব্যাহত হয়। পক্ষান্তরে ইনস্যুলিন তৈরি অব্যাহত থাকে। যার কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হয় না এবং ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য মারাত্মক রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা সিংহভাগ কমে যায়।
দেহের কোষের(Cell) মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে, শরীর নিস্তেজ হয়ে যায় এবং কোষগুলি পূর্বের চেয়ে অনেক সংকুচিত হয়। এছাড়া শরীরে বাড়তি মেদ (চর্বি) জমতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ক্যালোরির অভাবে মেদ ক্ষয় হতে থাকে। যার জন্য স্থূলাকার কমে যায় এবং স্বাস্থ্য স্বাভাবিক সুঠাম হয়। শরীরের অধিক ভার কমানোর জন্য এটাও এক প্রকার থেরাপিউটিক ব্যবস্থা। জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথা সহজেই বলা যায় যে, লালা তৈরিকারী কোষগ্রন্থি, গর্দানের কোষগ্রন্থি এবং অগ্নাশয়ের কোষগ্রন্থিসমূহ অধীর আগ্রহের সাথে মাহে রামাযানের অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ থাকে। আর এভাবেই সিয়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও স্থূলাকার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার ওযন কমেও মানুষ দুর্বলবোধ করে না। বরং স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সুস্থতাবোধ করে।
জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি
জিহ্বা মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জিহ্বায় অসংখ্য কোষের সমষ্টি স্বাদ নলিকা রয়েছে। এগুলি দ্বারা খাবারের বিভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করা যায়। স্বাদ নলিকা চার ভাগে বিভক্ত। যথাÑ জিভের গোঁড়ায় ঝাল-মিষ্টি, পেছনের অংশে তেতো, দু’পাশে নোন্তা, টক ও কষা। তবে জিভের ঠিক মাঝখানে কোন স্বাদ নলিকা না থাকায় সেখানে কোন স্বাদ পাওয়া যায় না।
সিয়াম সাধনায় ছায়েমের জিহ্বা ও লালাগ্রন্থিগুলি বিশ্রাম গ্রহণ করে। যার দরুন জিহ্বার ছোট ছোট স্বাদ নলিকাগুলি সতেজতা ফিরে পায় এবং খাবারের প্রতি রুচিরও প্রবলতা ফিরে আসে। তাছাড়া আহারের সময় খাদ্যদ্রব্য চিবাতে, গলাধঃকরণ ও হযম করতে লালা গ্রন্থিগুলি থেকে এক প্রকার রস নিঃসৃত হয়। সিয়াম পালনের ফলে এ রস বেশি বেশি নির্গত হয়। ফলে পাকস্থলীর হযম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি দূর হয়।
মনের প্রতিক্রিয়া
শারীরিক কতগুলি রোগ-ব্যাধির উৎসের অন্যতম কারণ হ’ল মানসিক অশান্তি বা অমানবিক পীড়া। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কতগুলি শারীরিক ব্যাধির কারণ হচ্ছে ‘মানসিক পীড়া’। এগুলিকে পৃথক রোগ সাইকোসোমেটিক(Psychosomatic) ব্যাধি হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। যেমনÑ হাঁপানি, গ্যাসটিক-আলসার, বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, হৃদরোগ, হিপার থিরোডিজম, কোরনারী, মাসিক ঋতুর অনিয়ম প্রভৃতি।
সাধারণতঃ মানুষ পরস্পর দু’টি বিরোধী স্বভাব পশুত্ব ও মানবিক দিক দ্বারা পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তির ওপর যদি পশুত্বের প্রভাব বেশি পড়ে, তবে মানুষ পশু সুলভ হয়। পক্ষান্তরে মানবিক দিকের প্রভাব বেশি প্রাধান্য পেলে সে আদর্শবান, নিষ্ঠাবান, সৎ, ধার্মিক হয়।
রামাযানে এক মাস সিয়াম সাধনা মানুষের মনের সকল প্রকার পশুত্বকে ভস্মীভূত করে এবং মানবিক দিক সমূহ উন্মোচিত করে। যার কারণে মানুষ আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় এবং আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে উঠে। এ বিষয়ে The Culture History of Islam গ্রন্থে যথার্থই বলা হয়েছে, The fasting of Islam has a wonderful teaching for establishing social unity, brotherhood and equity. It has also an excellent teaching for building a good moral character অর্থাৎ সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্যপ্রতিষ্ঠায় ইসলামের ছিয়ামে রয়েছে এক অভাবনীয় শিক্ষা। এতে উত্তম নৈতিক চরিত্রগঠনের এক চমৎকার শিক্ষাও রয়েছে।
সমাপনী
সিয়াম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং অত্যন্ত কার্যকরী ও উপকারী। অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণা করে আরো বিস্ময়কর তথ্য উদঘাটন করবেন। আর সকলে স্বীকার করবেন, আল্লাহর প্রত্যেকটি ইবাদত বান্দার জন্য কল্যাণকর এবং পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস হল, বিজ্ঞানের মূল উৎস। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে তাঁর ইবাদত করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা, ২:১৮৩
(ক) আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান (তৃতীয় প্রকাশ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৬১০, হাদীস: ১৯৫৮; (খ) আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ৪৫Ñ৪৬, হাদীস: ২০১৪; (গ) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫২৩, হাদীস: ৭৬০, হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, আল-কাউসার প্রকাশনী, ঢাকা (প্রথম সংস্করণ: ১৪২০ হি. = ১৯৯৯ খ্রি.), খ. ১ ও ২, পৃ. ১৫১
অধ্যাপক সাইদুর রহমান, মাহে রমজানের শিক্ষা ও তাৎপর্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি কেন্দ্র, ঢাকা (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ১৭
নুরুল ইসলাম, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিভঙ্গিতে সিয়াম সাধনা, মাসিক আত-তাহরীক, নভেম্বর ২০০১
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩২
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, আল-কাউসার প্রকাশনী, খ. ১ ও ২, পৃ. ১৪৮
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, আল-কাউসার প্রকাশনী, খ. ১ ও ২, পৃ. ১৪৭
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, খ. ১ ও ২, পৃ. ১৪৮
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩৫
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, আল-কাউসার প্রকাশনী, ঢাকা (প্রথম সংস্করণ: ১৪২০ হি. = ১৯৯৯ খ্রি.), খ. ১ ও ২, পৃ. ১৪৯
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, খ. ১ ও ২, পৃ. ১৪৭
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩০Ñ৩২
ডা. মুহাম্মাদ গোলাম মুয়ায্যম, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও ইসলাম, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা (১৪১৭ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), পৃ. ৮Ñ৯
[1] Scientific Indications in the Holy Quran, Islamic Foundation Bangladesh, Dhaka (1995 E.), p. 63
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩১
[1] Scientific Indications in the Holy Quran, Islamic Foundation Bangladesh, Dhaka (1995 E.), p. 63
ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান, খ. ১ ও ২, পৃ. ১৫০
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩৩
শরীর বিদ্যা, সেলফ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩৩