আকীদা-বিশ্বাস
সমস্যা: হুযুর! অনেকে গণতন্ত্রকে কুফরিতন্ত্র বলে বেড়ায়। তারা গণতন্ত্রের বিষয়কে আকীদার বিষয় সাব্যস্ত করে। তারা গণতন্ত্রের মধ্যে পার্লামেন্টের অধীনে সংবিধান ও আইন প্রণয়নকে কুফর সাব্যস্ত করে। তাই হুযুরের নিকট অনুরোধ, গণতন্ত্রের এই বিষয়টিকে কুরআন হাদীসের আলোকে সমাধান দানে বাধিত করবেন।
মোঃ আকীল
কোর্ট মসজিদ, ফেনী
শরয়ী সমাধান: গণতন্ত্র স্পষ্ট কুফরি মতবাদ। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে যারা আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় বিশ্বাস করে, তাদেরকে অবশ্যই এ আকীদা ও বিশ্বাস রাখতে হবে যে, গণতন্ত্র একটি কুফরি ও শিরকি মতবাদ। গণতন্ত্র যে কুফরি মতবাদ এটা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এ বিষয়ে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। বিস্তারিত জানতে দেখুন: সূরা তওবা ৩১; তিরমিযী ৩০৯৫; তাফসীরে তাবারী ১৬৬৩৬; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৮/২০; ইকফারুল মুলহিদীন ১১৯-২০; মওকিফুল আকল ৪/২৮০; তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম ৩/৩২৬-৩১; আহসানুল ফাতাওয়া ৬/২৬
সালাত-নামায
সমস্যা: আমি প্রায় সময় ব্যবসার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট সফর করি। সফরটা অধিকাংশ সময় ট্রেনযোগে হয়। ট্রেন চলার সময় যখন নামাযের সময় হয়, তখন নামাযের জন্য ট্রেন বন্ধ করার কোনো সুযোগ এবং নিয়ম নেই। তাই ধর্মভীরু লোকেরা ট্রেনেই নামায আদায় করে থাকেন। আমিও এমন অবস্থায় ট্রেনেই নামায আদায় করে থাকি। তবে এক্ষেত্রে দ্বন্দ্বে পড়ে যাই যে, নামায কি দাঁড়িয়েই পড়তে হবে, না বসে পড়ারও কোনো সুযোগ শরীয়তে আছে? দলীল সহকারে জানালে উপকৃত হব।
সিদ্দিকুল্লাহ
বায়েজিদ, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: মুতাকাদ্দিমীন ফুকাহা তথা পূর্ববর্তী ফকীহগণের যুগে ট্রেন ছিল না বিধায় ট্রেনে নামায পড়ার নিয়ম সম্পর্কে তাঁদের থেকে সরাসরি কোনো মতামত পাওয়া যায় না। তবে নৌকায় নামায পড়া সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান তাঁরা বর্ণনা করেছেন তা হল, নৌকা যদি ডাঙায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে সেটা অন্যান্য জমিনের হুকুম হবে, সুতরাং তাতে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে নামায পড়তে হবে। আর যদি চলন্ত হয়, তখন ইমাম আবু হানিফা রহ. বসে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সাহেবাইন দাঁড়িয়ে নামায পড়া খুব কষ্টকর না হলে বসে অনুমতি দেননি। এখান থেকে মুতাআখখিরিন তথা পরবর্তী ফুকাহায়ে কেরাম মাসআলা নির্ধারণ করেছেন যে, যে বাহনের ওপর মাথা চক্কর দেয় না বা কম দেয়, সেসব বাহনে সাহেবাইনের মাযহাব অনুযায়ী নামায দাঁড়িয়েই পড়তে হবে। যেমনÑ বড় বড় লঞ্চ, স্টীমার ইত্যাদি। অবশ্য যেসব বাহনে মাথা চক্কর দেয়, যেমন নৌকা বা ছোট বোট এসবের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মত অনুযায়ী বসে নামায পড়ার অনুমতি আছে। বর্তমান যুগের ফুকাহাগণ ট্রেনকে প্রথম ক্যাটাগরির বাহনে গণ্য করেছেন। সুতরাং ট্রেনে নামায দাঁড়িয়েই পড়তে হবে। বসে পড়ার অনুমতি নেই। কারণ চলন্ত ট্রেনে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে খুব একটা মাথা ঘোরায় না। অবশ্য দুর্বল টাইপের কোনো মানুষ যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম না হয় এবং মাথা খুব বেশি চক্কর দেয়, তখন তার জন্য বসে নামায পড়ার অনুমতি রয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। তা হল, বোট, ট্রেন যেখানেই হোক, কোনো অবস্থাতে কিবলা সাকেত হবে না। তাই কিবলামুখী হয়ে নামায পড়তে না পারলে নামায পরবর্তী সময়ে আদায় করে দিতে হবে। ইলাউস সুনান ৭/২১২; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১১/৬০৮
সমস্যা: মাঝেমধ্যে আমি একাকী নামায পড়ার সময় ফজরের নামাযে শেষ বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে যাই। এরপর আবার মনে পড়ে। এখন জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
আবদুল্লাহ নাঈম
আজিমপুর, পটিয়া
শরয়ী সমাধান: ফরয নামাযের শেষ রাকাআতে বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাআতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে। কিন্তু অতিরিক্ত নামাযের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই ফজরের নামাযে এমনটি হলে অতিরিক্ত রাকাআতের সিজদার পূর্বে স্মরণ হলে বসে পড়বেন এবং সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবেন। আর যদি সিজদা করে ফেলেন, সেক্ষেত্রে করণীয় হল, তৃতীয় রাকাআতে নামায শেষ না করে আরও এক রাকাআত পড়ে নিবেন। তখন পুরো চার রাকাআতই নফল হিসেবে গণ্য হবে, তাই ফজরের নামায পুনরায় পড়ে দিতে হবে। আর যদি শেষ রাকাআতে তাশাহুদ পড়ার পরিমাণ বসে দাঁড়িয়ে যান, তখন সিজদার আগে স্মরণ হলে বসে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবেন। যদি সিজদা করে ফেলেন, তখন তার সাথে আরেক রাকাআত মিলিয়ে সাহু সিজদা করে নামায শেষ করবেন। এক্ষেত্রে দুই রাকাআআত ফরয এবং অপর দুই রাকাআত নফল হিসেবে গণ্য হবে। এবং ফজরের নামায পুনরায় পড়তে হবে না। জাওহারাহ ৯৩; হেদায়া ১/১৫৯
সমস্যা: আমরা জানি, আমাদের হানাফি মাযহাব মতে যোহরের পূর্বে সুন্নতে মুয়াক্কাদা চার রাকাআত আর পরে দুই রাকাআত। কিন্তু জুমার দিন আগেও চার রাকাআত এবং পরেও চার রাকাআত পড়া হয় কেন? বর্তমানে অনেকেই এটাকে অস্বীকার করে থাকেন। দলিল সহকারে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উসামা হাসান
রামু, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: হাদিস এবং ফকিহদের কথার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, যোহরের মত জুমার আগে পরেও সুন্নত রয়েছে এবং সেগুলো যোহরের মতই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে পার্থক্য হলো, যোহরের আগে চার রাকাআত পরে দুই রাকাআত আর জুমার আগেও চার রাকাআত এবং পরেও চার রাকাআত। তাই এটাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মুসলিম ১/২৮৮; মুজামে আউসাত: ১৬১
সমস্যা: আমি একজন হাফেজে কোরআন। প্রতি বছর তারাবীর নামাযে ইমামতি করি। কোন সময় এমন হয় যে, সিজদার আয়াত পড়লাম কিন্তু সিজদা দিতে ভুলে গেলাম। এ অবস্থায় সিজদা এবং নামাযের হুকুম কী?
মুহাম্মদ আরমান
হোয়াইক্যং, টেকনাফ
শরয়ী সমাধান: নামাযের মধ্যে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার সাথে সাথে সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই কেউ যদি নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে পর পর সিজদা না দেয় এবং এক বা দুই আয়াত পড়ার পর মনে পড়ে, তাহলে তখনই সিজদা দিয়ে দিবে। যদি এর চেয়ে বেশি বিলম্ব হয়ে যায়, তখন মনে পড়ার সাথে সাথেও দিতে পারবে আর সে চাইলে সালাম পর্যন্ত বিলম্বও করতে পারবে। তবে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। যেই রুকনে সিজদা আদায় করবে ওই রুকন দ্বিতীয়বার আদায় করা মুস্তাহাব। যদি সালামের পর মনে পড়ে তখনও আদায় করতে হবে যদি নামাযের বিপরীত কোন কাজ-কর্ম পাওয়া না যায়। যদি নামায শেষ হওয়ার পরে মনে পড়ে তখন এটা ক্বাজা করার কোন সুযোগ নেই। এর জন্য সে গুনাহগার হবে তবে নামায হয়ে যাবে। আদ-দুররুল মুখতার ২/৫৮৪; মাজমাউল আনহুর ১/১৫৭; হিদায়া ১/১৬৪; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৬৮
সমস্যা: আমি একজন ওমান প্রবাসী। পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করি। কিন্তু আমি যে মসজিদে নামায আদায় করি সে মসজিদের ইমাম সাহেব প্রথম দুই রাকাআতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়ে। অন্য কোন সূরা মিলানো ছাড়া রুকুতে চলে যায়। অথচ আমরা জানি যে, ফরজ নামাযে প্রথম দুই রাকাআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলানো ওয়াজিব। এইভাবে আমি তিন বছর নামায আদায় করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমার আদায়কৃত নামায শুদ্ধ হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে আমার করণীয় কী? এবং ভবিষ্যতে ওই ইমামের পেছনে ইকতেদা জায়েয হবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবদুল বাতেন
মাসকাট, ওমান
শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, কোন ইমামের ইকতেদা করে নামায সহিহ ও শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো ইমামের আকিদা সঠিক থাকা। ইমাম ভিন্ন মাযহাবের হলেও তার ইকতেদা করা সহিহ আছে। তবে শর্ত হচ্ছে, ইমাম সাহেব মুকতাদীর (মাযহাবের) নামাযের আরাকান ও শর্তাবলি লঙ্ঘন করতে পারবে না। নামাযে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলানো আমাদের হানাফি মাযহাব মতে ওয়াজিব। কিন্তু অন্য মাযহাব মতে সুন্নত। যেহেতু ইমাম সাহেব নামাযের কোন ফরয বিধান লঙ্ঘন করেনি তাই আপনার আদায়কৃত নামায হয়ে গেছে। তবে ভবিষ্যতে আপনি আপনার মাযহাবের ইমামের পেছনে যথসম্ভব নামায আদায় করতে চেষ্টা করবেন। আর যদি না পাওয়া যায়, চাইলে একা নামায আদায় করতে পারেন অথবা ওই ইমামের পিছনেও নামায আদায় করতে পারেন। তবে জামাতে শরিক হওয়া উত্তম হবে। তাতারখানিয়া ২/২৫৯; কাযীখান ১/৯১; ফাতাওয়া শামী ১/৫৬৩; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/২৮২
সমস্যা: আমাদের হানাফি মাযহাব মতে তাকবিরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোন স্থানে নামাযের ভিতর হাত ওঠানোর বিধান নেই। কিন্তু আমরা বিতিরের নামাযে তৃতীয় রাকাআতে সূরা শেষে তাকবীর বলার সময় হাত উঠিয়ে থাকি। আহলে হাদিসপন্থি কিছু লোক বলে থাকে, এ ব্যাপারে সহিহ কোন নস নেই। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমরা বিতিরের নামাযে তৃতীয় তাকবীরের সময় কেন হাত উঠিয়ে থাকি? অথচ আমরা নামাযের ভিতর তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য স্থানে হাত ওঠানোকে (রফয়ে ইয়াদাইন) রহিত বলে আসছি। আর আহলে হাদিসের দাবি কতটুকু শুদ্ধ? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
এরফান হামিদ
হালিশহর, চট্টগ্রাম
শরয়ী শমাধান: নামাযে কতিপয় জায়গায় রফয়ে ইয়াদাইন তথা দুই হাত ওঠানোর কথা অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সে হুকুমটা পরবর্তীতে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা তাকবীর ব্যতীত অন্য স্থানে রহিত হয়ে গেছে। তবে বিতিরের নামাযে তৃতীয় রাকাআতে তাকবীরের সময় দুই হাত ওঠানোর হুকুমটা রহিত হয়নি। বরং সূরা শেষ করে তাকবীর বলা এবং দুই হাত ওঠানোটা সুন্নাত এবং বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আহলে হাদিসের দাবি ঠিক নয় বরং ভিত্তিহীন। ইলাউস সুনান ৬/৮৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ২/৩০৬; হিদায়া ১/১৪৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকি ৩৭৫
সমস্যা: মুহতালিম অর্থাৎ যার ওপর গোসল ওয়াজিব হয়েছে, এমন ব্যক্তি যদি গোসল না করে আযান এবং ইকামাত দিয়ে দেয় ইসলামী শরীয়তে এর হুকুম কী? পুনরায় আযান দিতে হবে কি না?
সাদ্দাম হোসাইন
সাভার, ঢাকা
শরয়ী সমাধান: গোসল ওয়াজিব অবস্থায় গোসল না করে আযান এবং ইকামাত দেওয়া মাকরুহে তাহরীমী। যদি সময় থাকে আযান পুনরায় দিতে হবে। আর এটা মুস্তাহাব। কিন্তু ইকামাত দ্বিতীয়বার দিতে হবে না। কারণ ইসলামী শরীয়তে দুই বার ইকামাত দেওয়ার নিয়ম নেই। মাবসূতে সারাখসি ১/৩৭০; খুলাছাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৭৫
সমস্যা: যে ব্যক্তি নিজের বোনকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তার ইমামতি কি জায়েয আছে? না নেই। শরীয়তের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মুহাম্মদ আলী
টইটং, পেকুয়া
শরয়ী সমাধান: ইসলামী শরীয়তমতে ফাসেক ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী। উল্লিখিত ব্যক্তি যেহেতু তার বোনকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে এবং পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করেছে, তাই সে ফাসেক এবং জালেম হবে। সুতরাং তার ইমামতিও মাকরূহে তাহরীমী হবে। আলমগীরী ১/৭৮৫; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৫; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৩০২
ওয়াকফ-মসজিদ
সমস্যা: আমার আরয হল যে, মাদরাসা বা মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত জমি বিক্রি করা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েয কি না? না-জায়েয হলে জায়েযের কোনো পন্থা শরীয়তে আছে কি না? কোনো কোনো আলেম থেকে শুনেছি যে, যে সকল ওয়াকফিয়া জমি দ্বারা প্রতিষ্ঠান উপকৃত হতে পারে না তা বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের ইমারত বা কোনো ভবন নির্মাণ করলে জায়েয হবে। তাদের কথা ঠিক কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাওলানা ওসমান
লেঙ্গুরবিল, টেকনাফ
শরয়ী সমাধান: ওয়াকফিয়া জমি বিক্রি করা জায়েয নেই। অবশ্য ওই জমি থেকে যদি একদম উপকৃত হওয়া না যায় বা লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়, তখন সেটা বদলি করা বা বিক্রি করে অন্যত্র জায়গা খরিদ করা বা মাদরাসার জন্য ভবন ইত্যাদি তৈরি করা জায়েয। তবে যে জমি থেকে মোটামুটি উপকৃত হওয়া যায়, সেটাকে বেশি লাভের জন্য বদলি করা বা বিক্রি করা না-জায়েয। বোখারী শরীফ, হাদীস: ২৬৮৩; কাযীখান ৩/২৮৫-৮৬; আল-বাহরুর রায়েক ৫/২২
নিকাহ-তালাক
সমস্যা: আমরা জানি, যদি কেউ কোনো মেয়েকে বিবাহ করে তখন তার মা, ফুফি, খালা ইত্যাদিকে বিবাহ করা যায় না এবং তাদের সাথে কথাও বলা যায়। এখন প্রশ্ন হল, যদি কেউ কারো সাথে যিনা করে, তখনও কি তার ওপর ওই মেয়ের মাহরাম তথা মা, ফুফি, খালা ইত্যাদিকে বিয়ে করা হারাম হয়ে যাবে? আর তাদের সাথে আর পর্দা করতে হবে না?
মুহাম্মদ মীর কাশেম
ঈদগাঁও, কক্সবাজার
শরয়ী সমাধান: কোনো মেয়েকে বিয়ে করার কারণে যেমন স্ত্রীর মা, মেয়ে এবং দাদি, নানি বিয়ে করা স্বামীর ওপর হারাম হয়ে যায়, তেমনি কারো সাথে যিনা করলেও একইভাবে আমাদের হানাফী মাযহাব মতে এরা হারাম হয়ে যায়। আর যিনার কারণে হারাম হওয়া মহিলাদের সাথে পর্দা করতে হবে কি না এ বিষয়ে উলামাদের কিছুটা এখতেলাফ বা মতানৈক্য রয়েছে, তবে যিনার মাধ্যমে হারাম হওয়া মেয়েদের প্রতি যেহেতু শাহওয়াত বা কামভাব থাকে, তাই তাদের সাথে পর্দা করা ফরয। উল্লেখ্য যে, বিয়ে বা যিনার কারণে স্ত্রীর মা, দাদি, নানি (এভাবে ওপরের পূর্বসূরি) এবং মেয়ে, নাতনি (এভাবে নিচের উত্তরসূরি) কেবল এরাই চিরতরে হারাম হয়ে যায়। বোন, খালা, ফুফু ইত্যাদি চিরতরে হারাম হয় না। স্ত্রীকে তালাক দিলে ইদ্দতের পর বা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে এদেরকে বিয়ে করা যায়। তাই এদের সাথে সবসময় পর্দা করা ফরয। হেদায়া ২/৩০৯; তাতারখানিয়া ৪/৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩২
সমস্যা: যদি দুইজন ফাসেক ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখে বিবাহ করে তাহলে সেই বিয়ে সহিহ হবে কি না? এবং স্বামী-স্ত্রী থেকে কেউ যদি বিয়ের কথা অস্বীকার করে তখন বিবাহকে প্রমাণ করার জন্য ওই ফাসেক ব্যক্তির সাক্ষী কাযির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
রফিক আহমদ
সীতাকু-, চট্টগ্রাম
শরয়ী সমাধান: ইসলামী শরীয়তের বিধানমতে বিয়ের সাক্ষীর জন্য ন্যায়পরায়ণতা (আদালাহ) শর্ত নয়। সুতরাং দুইজন ফাসেক ব্যক্তির সাক্ষীর মাধ্যমে বিবাহ করলে তা সহিহ হয়ে যাবে। তবে স্বামী- স্ত্রীর কেউ বিবাহ অস্বীকার করলে তখন বিবাহ প্রমাণ করার জন্য ফাসেকদের সাক্ষী বিচারকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। যেহেতু সাক্ষ্য প্রদান (আদায়ে শাহাদাহ) এর জন্য ন্যায়পরায়ণতা শর্ত। ফাতাওয়া শামী ৪/৮৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২৭; ফাতাওয়া দারুল উলুম ৭/১১৫
মুআমালা-লেনদেন
সমস্যা: শ্বশুর এবং জামাই উভয়ে মিলে ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটা জমি ক্রয় করল। যেখানে শ্বশুর দিয়েছে এগার লক্ষ টাকা আর জামাই দিয়েছে উনিশ লক্ষ টাকা। জামাই টাকা বেশি দেওয়ার কারণে শ্বশুর জামাইকে বলল, জমি তোমার নামে রেজিস্ট্রি করে নাও। পরে আমি যখন সম্পূর্ণ টাকা তোমাকে পরিশোধ করে দেব তখন আমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিও। পরে শ্বশুর টাকাও দেয় নাই, আর জমিও নিজের নামে রেজিস্ট্রি করেনি। এদিকে জামাই ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখে। আর টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণে ব্যাংক জমি নিয়ে নেয়। যখন শ্বশুর দেখল যে, জমি আর পাওয়ার আশা নেই, তখন শ্বশুর কৌশলে জামাই থেকে এগার লক্ষ টাকার পরিবর্তে চল্লিশ লক্ষ টাকা আদায় করে। এমতাবস্থায় শ্বশুরের জন্য এগার লক্ষ টাকার পরিবর্তে চল্লিশ লক্ষ টাকা নেওয়া বৈধ হবে কি না?
নুর আহমদ
জামালপুর, ময়মনসিংহ
শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় শ্বশুর জামাতাকে এগার লক্ষ টাকা দিয়ে কারচুপির মাধ্যমে তার পরিবর্তে যে চল্লিশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইসলামি শরীয়তমতে তা বৈধ হয়নি। বরং তার ন্যায্য হক এগার লক্ষ টাকার অতিরিক্ত জামাতা থেকে তার অনুমতি বিহীন যে টাকা নিয়েছে, তা জামাতাকে ফেরৎ দিয়ে দিতে হবে। নতুবা জামাতা থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। না হলে ইসলামী শরীয়তমতে শ্বশুর জামাতার টাকা আত্মসাৎকারী হিসাবে গণ্য হবে। আর এই টাকাগুলো শ্বশুরের জন্য কোনভাবেই জায়েয হবে না। ফাতাওয়া শামী ৯/২৬৬; আল-বাহরুর রায়েক ৫/৬৮; শরহুল মাজাল্লাহ ৪৮৮
বিবিধ
সমস্যা: অনেক সময় মুসলিম ক্রিকেটাররা সেঞ্চুরি (একশত রান) করে বা পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। এখন আমার জানার বিষয় হল, এটা শরীয়তসম্মত কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুশাররাফ হোসাইন
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
শরয়ী সমাধান: কোনো নেয়ামত অর্জিত হলে বা বড় কোনো বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করলে শুকরিয়াস্বরূপ সিজদা দেওয়াটা ইসলামি শরীয়তে মুস্তাহাব। তবে সেঞ্চুরি করা বা পাঁচ উইকেট লাভ করা ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো নেয়ামত নয়; বরং বর্তমান প্রচলিত ক্রিকেট খেলা (টুর্নামেন্ট, বিশ্বকাপ, হোম-অ্যাওয়ে সিরিজ সবগুলো) যেটার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করতে হয়, এটা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। তাই এ খেলা সংক্রান্ত্র কোনো কারণে শুকরিয়াস্বরূপ সিজদা করার কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৫; তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম ৪/৪৩২; আপ কে মাসায়েল আওর উনকা হল ৮/৪০৫
সমস্যা: বর্তমান সময়ে দেশের অনেক তরুণ ও যুবক ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। এখন আমার প্রশ্ন হল, এটা কি জায়েয? এবং খেলার মাধ্যমে তারা যে আয়-রোযগার করে, তা কি হালাল হবে, না হারাম হবে?
মুহাম্মদ ইবরাহীম
নড়াইল
শরয়ী সমাধান: শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য ব্যায়াম হিসেবে ক্রিকেট খেলার বৈধতা রয়েছে। তবে বর্তমান যে ক্রিকেট খেলা প্রচলিত আছে (সবধরনের টুর্নামেন্ট, দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিদেশীয় সিরিজ ইত্যাদি), তাতে পর্দাহীনতা এবং নামায ত্যাগ করাসহ আরও অনেক হারাম কর্মে জড়িয়ে পড়তে হয়। নিজের সদিচ্ছা থাকলেও এসব পাপাচার থেকে বিরত থাকা অসম্ভব। তাই বর্তমান যুগে প্রচলিত পেশাদারী ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা ও মূল্যবান সময় নষ্ট করে তা দেখা জায়েয ও বৈধ হবে না। যেহেতু পেশাটা অবৈধ, তাই এর মাধ্যমে উপার্জিত টাকাপয়সাও হারাম উপার্জন হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই মুসলমানদের জন্য ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলাধূলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই। আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়া ২/৭৩; তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম ৪/৪৩২; জাওয়াহেরুল ফিকহ ২/৩৫১
বিভাগীয় নোটিশ
দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।