আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসেম্মলন ২০১৭
মুত্তাকীরাই জান্নাতে যাবেন
মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী
نَحْمَدُهُ، وَنَسْتَعِيْنُهُ، وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنُؤْمِنُ بِهِ وَنَتَوَكًّلُ عَلَيْهِ، وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ، ونَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَنَشْهَدُ أَنَّ سَيِّدَنَا، وَسَنَدَنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَرْسَلَهُ اللهُ بِالْـحَقِّ بَشِيْرًا وَنَذِيْرًا، وَدَاعِيًا إِلَى اللهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيْرًا، اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كُلَّمَا ذَكَرَهُ الذَّكِرُوْنَ، وَكُلَّمَا غَفَلَ عَنْ ذِكْرِهِ الْغَافِلُوْنَ.
أَمَّا بَعْدُ: فَقَالَ تَعَالَىٰ: [يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹] {التوبة: ১১৯}.
عَنْ أَبِيْ مُوْسَىٰ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: إِنَّمَا مَثَلُ الْـجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَجَلِيْسِ السُّوْءِ كَحَامِلِ الْـمِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيْرِ، حَامِلُ الْـمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيْرِ، إِمَّا أَنْ يَحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثًا رواه الرياني في مسنده (১ / ৩১৮) (رقم: ৪৭৪).
উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, হযরাতে ওলামায়ে কেরাম এবং মুরব্বিয়ানে এজাম ও বেরাদারানে ইসলাম। প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! আল্লাহ পাক দয়া ও অনুগ্রহ করে আমাদেরকে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রসিদ্ধ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসার দুু’দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের আজকে শেষ দিন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে জুমার নামাজের পূর্বমুহূর্তে আল্লাহর দীনের নিসবতে ও দাওয়াতে তাবলীগের নিসবতে এবং কুরআন ও হাদিসের নিসবতে কিছু কথা বলার এবং শোনার তাওফীক দান করেছেন, সেই কারণে আমরা আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করি আল-হামদুলিল্লাহ।
মহান আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর কিন্তু মহান আল্লাহ اتَّقُوا لِيْ বলেননি অর্থাৎ আমাকে ভয় কর এরকম বলেননি, اتَّقُوا اللّٰهَ ۰۰۱۱۹ কেন বলেছেন? আমরা আল্লাহকে নরম মনে করি, কিন্তু আল্লাহ যেমন নরম তেমন গরমও। এমন যেন মনে না হয় যে তোমরা আমাকে নরম মনে করে উলট পালট না কর। যারা আল্লাহকে নরম মনে করে দুই নাম্বারী কাজ করেছে তাদের রক্ষা হয়নি, যারা আল্লাহকে নরম মনে করে নাফরমানী করেছে তাদেরও রক্ষা হয়নি, কারুন আল্লাহকে নরম মনে করে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে, তখন আল্লাহ মুসা (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন, হে মুসা! জমিনকে তুমি যা নির্দেশ করবে জমিন কারূনের ব্যাপারে তাই করবে, সাথে সাথে মুসা (আ.) জমিনকে নির্দেশ দিলেন كُنْ সাথে সাথে জমিন তাকে গ্রেফতার করে ফেলল।
এখনও নাস্তিক-মুরতাদেরা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদেরকেও কারূন, ফেরআউন ও হামান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
হে আমার বন্ধুরা! বলুন তো আমরা আল্লাহ পাকের দোস্ত কিনা? অবশ্যই হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর দোস্ত ও বন্ধু, দোস্তদের কেউ কি খারাপ পরামর্শ দেয়? কখনো না, এবার বলুন তো আল্লাহ তার দোস্তদেরকে যে পরামর্শ দিবেন তা কি ভাল হবে না খারাপ? অবশ্যই ভাল হবে।
রাসূল (সা.) বলেন, মা যেরকম সন্তানকে আদর করেন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে তার চেয়ে বেশি আদর করেন, আর যদি মুমিন হয় তাহলে তো আল্লাহর বন্ধু। এখন আল্লাহ যে বলেছেন, اتَّقُوا اللّٰهَ ۰۰۱۱۹ কেন আমরা আল্লাহকে ভয় করবো? প্রথম কথা হল ভয়ের অর্থ কী? ভয়ের অর্থ হল গুনাহ ছেড়ে দেওয়া এবং নেক কাজ করতে থাকা। গুনাহের কাজ না করা আর নেক কাজ করা একে বলে ভয়, নাকি শুধু নেক কাজ করবে আর সাথে সাথে গুনাহের কাজও একাধারে চালিয়ে যাবে এটাকে কি ভয় বলে? না, না।
এলার্জি নামক একটি রোগ আছে, ওই রোগ থেকে ভাল হওয়ার জন্য সারা জীবন যদি ওষুধ খান এবং সাথে সাথে বোয়াল মাছ, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ ইত্যাদিও খান, তাহলে কি সারা জীবনে কি এলার্জি রোগ ভাল হবে? কখনো না। তেমনিভাবে মসজিদের সামনের সারিতে নামাজ আদায় করে, জুমার নামায, ঈদের নামায সাথে সাথে ওমরাহ এবং বছরে বছরে হজ্বও করে সব ঠিক আছে। কিন্তু সুদ খায়, ঘুষ গ্রহণ করে এবং অন্যান্য নোংরা কাজও করে, এবার বলুন তো এর ভেতরে যে রোগগুলো আছে তা কি ভাল হবে? না, না। কখনো ভাল হবে না।
আর তাকওয়া অর্থ হল গুনাহ ছেড়ে দেওয়া ও ভাল কাজ করা। আর যদি কখনো গুনাহ হয়ে যায় সাথে সাথে তাওবা করা এটাই হলো তাকওয়ার অর্থ।
এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কেন আল্লাহকে ভয় করবো? কেননা আল্লাহকে ভয় করা ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না, কিন্তু আমাদের সবার জান্নাতে যেতে মন চায়, জান্নাতে যেতে কেন মন চায়? জানি না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَسَارِعُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ١ۙ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَۙ۰۰۱۳۳ {آل عمران: ১৩৩}
অর্থাৎ তোমরা দৌড় তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে, যে কাজ করলে তোমাদের মাফ করে দেবে সেই কাজের দিকে দৌড়। ক্ষমতা পাওয়ার অথবা প্রধানমন্ত্রীত্ব পাওয়ার জন্য দৌড়ানোর কথা বলেননি। বলছেন তোমরা ক্ষমার দিকে দৌড়, আর ওই জান্নাতের দিকে দৌড় যার প্রশস্ততা সাত জমিন এবং সাত আসমান সমান, তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে যে নিম্নমানের জান্নাতী তার নেয়ামত বেহেশতের। এগুলোকে এক হাজার বছর দূরের রাস্তা থেকে দেখা যাবে, এখান থেকে আসমান ৫০০ বছরের রাস্তা, আমরা আসমান দেখতে পাইনা, দেখলেও অস্পষ্টভাবে দেখি। তাহলে জমীন থেকে আসমান পর্যন্ত দিগুণ হবে, তার অর্থ হল এই যে এক হাজার বছর রাস্তার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তার মালিকানায়, সেখানে আর কারো অংশীদারিত্ব থাকবে না। সব ওই ব্যক্তির মালিকানায় থাকবে। আর যে ব্যক্তি উচ্চ মানের জান্নাতের অধিকারী হবেন সে সব সময় তার মালিককে দেখতে পাবেন। আমাদের রবকে আমাদের সদা সর্বদা দেখার ইচ্ছা আছে তো? ইনশাআল্লাহ আছে।
আল্লাহকে ভয় করুন, কেননা আল্লাহকে ভয় করা ব্যতীত জান্নাতে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান! আপনারা কি জান্নাত ক্রয় করে নিছেন? না, না । জান্নাত মুত্তাকীদের জন্যই সংরক্ষিত। তবে গুনাহ ছাড়তে হবে, দাড়ি শেভ করা যাবে না, দাড়ি রাখলে সময় নষ্ট হয় না, টাকাও খরচ হয়না। সেলুনের দোকানে হিন্দুদের দ্বারা গাল টানা খেতে হয় না, আরো অনেক দুনিয়াবী উপকার রয়েছে। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে দাঁড়ি দিয়ে আর মহিলাদেরকে লম্বা চুল দিয়ে সুন্দর করেছেন। হযরত জিবরাঈল (আ.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে প্রেরণ করেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষকে নির্বাচন করার জন্য, তিনি বলেন, মেরাজের রজনীতে আমি পৃথিবীর সকল মানুষকে বায়তুল মুকাদ্দাসে এক স্থানে দেখেছি, কিন্তু আমি রাসূল (সা.)-এর চেয়ে সুন্দর, নম্র, ভদ্র আর কাউকে দেখিনি। তাহলে বলুন তো, জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সা.)-কে দাড়ি ওয়ালা দেখেছেন নাকি দাড়ি ছাড়া? তখন রাসূল (সা.) ছিলেন দাড়িঅলা, দাড়ি যদি সুন্দর না হতো তাহলে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-কে দাড়ি দিতেন না। তাহলে বুঝা গেল দাড়ি হল পুরুষের সৌন্দর্য। নফস বড় মারাত্মক জিনিস, নফসের সাথে মুকাবালা করা যায় না, নফসের সাথে সারা জীবন যুদ্ধ করতে হবে, নফস আপনাকে বাহ্যিকভাবে সাওয়াবের কাজ দেখাবে, আর অন্তরে গোনাহ সৃষ্টি করবে। জান্নাতে কারা যাবেন? মুত্তাকিরা। মুত্তাকি বলা হয় যারা গুনাহ করেন না এবং সাথে সাথে নেক কাজও করেন, আর কোন সময়ও গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করে। আর জান্নাতে যেতে কিছু কষ্ট করতে হবে, অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। কেননা মানুষ দুনিয়াতে যা কিছু করুক না কেন দুনিয়াতে কাারো সব চাহিদা পূর্ণ হয় না এবং পূর্ণ করতে পারবেও না। মানুষের সব চাহিদা পূর্ণ হওয়ার জায়গা হল একমাত্র জান্নাত। জান্নাত ছাড়া আর কোথাও মানুষের সব চাহিদা পূর্ণ হবে না, একমাত্র জান্নাতে মানুষের সব চাহিদা পূর্ণ হবে, পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের মূল চাহিদা হল ৪টি:
১. সারা জীবন বেঁচে থাকা, প্রত্যেকেই চায় সারা জীবন বেঁচে থাকতে, কেউ মরতে চায় না।
২. প্রত্যেকেই চায় সারা জীবন যুবক থাকতে, কেউ বৃদ্ধ হতে চায় না।
৩. প্রত্যেকেই চায় সারা জীবন সুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকতে, কেউ চায় না যে সে কোন রোগে আক্রান্ত হোক। দেখুন না? একটু সর্দি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে দেখা করে।
একটি মাসআলা হল, যারা ধূমপান করে তাদের ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ যারা ধূমপান করে তাদের মুখে দুর্গন্ধ থাকে, দুর্গন্ধের কারণে মুসলমান কষ্ট পায়। আর যে কারণে মুসলমান কষ্ট পায় সে কারণে ফেরেশতাও কষ্ট পায়, সুতরাং তার কাছে রহমতের ফেরেশতা আসতে পারে না। যে রাস্তায় পুলিশের পাহারাদারি থাকে না সে রাস্তায় ডাকাতের চলাচল বেশি হয়, তখন তার পাশে ইবলিস চলে আসে, ফলে সে ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
৪. প্রত্যেকেই চায় সে যেন প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মিনিটে সারা জীবন শান্তিতে থাকতে, কোন কষ্টের সম্মুখীন না হয়ে সদা সুখে থাকতে চায়।
আর এসব চাহিদা জান্নাতে পূরণ করা হবে। যেমন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,
يُنَادِيْ مُنَادٍ : إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوْا فَلاَ تَسْقَمُوْا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلاَ تَمُوْتُوْا أَبَدًا ، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوْا فَلاَ تَهْرَمُوْا أَبَدًا ، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلاَ تَبْأَسُوْا أَبَدًا رواه مسلم في صحيحه (৮ / ১৪৮) (رقم: ৭২৫৯).
এই চাহিদাগুলোর মধ্যে কারো কোন মতভেদ নেই, এগুলো হল সবার চাহিদা, এটাই বাস্তব। এগুলোর সাথে আরেকটা সম্পৃত্ত করি, প্রত্যেকটা মানুষের চাহিদা হল আল্লাহকে দেখা, আর এই চাহিদা কী দুনিয়াতে পূরণ করা যায়? না। কোথায় পাওয়া যাবে? জান্নাতে। কাফের-মুশরিকদের শাস্তির কথা যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
كَلَّاۤ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَىِٕذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَؕ۰۰۱۵ {المطففين: ১৫}
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কাফেরদেরকে তাদের রবের দেখা হতে বিরত রাখবেন, তারা কেয়ামত দিবসে আল্লাহকে দেখতে পাবে না, এটা হল ধমক। কাফেরদের যদি আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা না থাকত তাহলে তাদের ধমক দিতেন না, যেমন মনে করুন, আমাকে যদি কেউ বলে, তুমি অমুক কাজ না কর তাহলে তোমাকে বিড়ি দেওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে ভাই! আপনি যদি আমাকে শুধু বিড়ি না সিগারেটও না দেন তাহলে আমার কিছু আসে যায় না, কারণ আমি বিড়ি সিগারেট কিছুই খাই না। আর যে ব্যক্তির বিড়ি সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে তাকে যদি বলা হয় তাহলে তার জন্য সমস্যা আছে। কেননা সে প্রতিদিন ২/৩ প্যাকেট সিগারেট খায় এখন যদি একটাও না পায় তাহলে তার অবস্থা কেমন হবে আপনারা বলুন! ঠিক তেমনিভাবে কাফেররা যেহেতু আল্লাহকে দেখার জন্য পাগল, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তোমাদেরকে দেখা দেব না, এটা ধমক দিলেন, কেননা তারা ধমক পাওয়ার পর যেন ইসলাম গ্রহণ করে। এবার বলুন তো ১. সারা জীবন বেঁচে থাকা। ২. সারা জীবন যুবক থাকা। ৩. সারা জীবন সুস্থ থাকা। ৪. সারা জীবন শান্তিতে থাকা। এগুলো কি দুনিয়াতে পাওয়া যাবে? কখনো না। এগুলো পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে। হাদীস শরীফে আছে জান্নাতীরা জান্নাতে যাওয়ার পর আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাওয়ার পর কিছু জান্নাতী ফেরেশানিতে থাকবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, নিশ্চয়ই জান্নাতীরা জান্নাতে সারা জীবন জীবিত থাকবেন, কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। এটা খুশির বিষয়। মনে করুন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যদি বলা হয় আপনি যতদিন জীবিত থাকবেন ততোদিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, বলুন তা ইনি কী পরিমাণ খুশি হবেন? যে সারা জীবন জীবিত থেকে যদি বৃদ্ধ হয়ে যায় তাহলে কেমন হয়? তাইতো রাসূল সা. বলেছেন, জান্নাতে সারা জীবন যুবক থাকবেন। আচ্ছা ঠিক আছে জান্নাতে বৃদ্ধ হবো না, যদি রোগাক্রান্ত হয়ে যাই? তাই রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতে কেউ অসুস্থ হবে না। আচ্ছা ঠিক আছে সেখানে কোন রোগ-ব্যাধি হবে না, যদি সেখানে কষ্টে থাকি? তাই রাসূল সা. এরশাদ করেন, জান্নাতে সদা সুখে থাকবে। নেই কোন কষ্ট ক্লেশ। এসব জান্নাতেই পাওয়া যাবে। আর জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা হলো তাকওয়া। রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালায়, কিন্তু মুত্তাকি তাহলে জান্নাতি। কৃষক মুত্তাকি তাহলে জান্নাতি, বাসের হেলপার মুত্তাকি তাহলে জান্নাতি। মাফ করবেন, এমপি মুত্তাকি না জাহান্নামী, মন্ত্রী মুত্তাকি না জাহান্নামী? মাফ করবেন দূরের দিকে গেলে বেয়াদবি হয় সে কারণে বললাম না, বেয়াদবি না হলে বলতাম প্রধানমন্ত্রী মুত্তাকি না জাহান্নামী।
যে দুই নাম্বারী করবে কিন্তু তাওবা করবে না তাহলে সে জাহান্নামী, আর যে যতই দূর্বল হোক না কেন তার মধ্যে তাকওয়া থাকলে সে জান্নাতি।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹
এখন আমরা তাকওয়ার শপিং করার জন্য কোথায় যাব? ঢাকার নিউ মার্কেটে? সেখানে তো তাকওয়া পাওয়া যাবে না, তাহলে তাকওয়া কোথায় পাওয়া যাবে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹ তাকওয়া দুনিয়ার বড় বড় নেতার কাছে পাওয়া যাবে না, বড় বড় ব্যবসায়ির কাছে পাওয়া যাবে না, তাকওয়া কোথায় পাওয়া যাবে? স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ۰۰۱۱۹ সত্যবাদীদের সাথে থাক, তাবলীগঅলার সাথে থাক, মাদরাসাঅলাদের সাথে থাক, হক্কানী পীরদের সাথে থাক, তাহলে তাকওয়া পাবে, আর তাকওয়া পেলে চার বৈশিষ্টঅলা জান্নাতে যেতে পারবে। কওমী মাদরাসার হক্কানী রব্বানী ওলামাদের সাথে সম্পর্ক রাখার তাওফীক দান করুক, আর দাওয়াতে তাবলীগের সাথে সম্পর্ক রাখার তওফীক দান করুক। আমীন।
অনুলিখন:
মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম
আরবী সাহিত্য বিভাগ, জামেয়া পটিয়া ২০১৭