হযরতুল আল্লাম হাফেজ মাহবুবুর রহমান (রহ.)-এর ইন্তেকাল
ঐতিহ্যবাহী দীনী বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম আল্লামা মুফতী আজীজুল হক (রহ.)-এর সুযোগ্য বড় সাহেবজাদা ও আজিজিয়া কাসেমুল উলুম দোহাজারী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেজ মাহবুর রহমান (রহ.) গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে দীর্ঘদিন রোগশয্যায় শায়িত থেকে জরাগ্রস্ত এই দুনিয়াকে পিছনে ঠেলে দিয়ে মাওলায়ে পাকের দরবারে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন। জাতির এই আধ্যাত্মিক রাহবারের ইন্তেকালের খবর জামিয়া ও পরিচিত মহলে ছড়িয়ে পড়লে সকলেই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। হযরতের জানাজায় শরীক হতে এবং শেষবারের মতো হযরতের দর্শন লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসলমান জামিয়া-অভিমুখে পঙ্গপালের ন্যায় ছুটে আসেন।
হযরতের অসিয়ত অনুযায়ী দ্রুত সময়ে দাফনপ্রক্রিয়া সমাধা করার লক্ষ্যে সেদিনই রাত দশটায় জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। হযরতের নামাযে জানাজায় ইমামতি করেন জামিয়া দারুল মাআরিফের প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক আল্লামা সুলতান যওক নদভী (দা. বা.)।
জানাজাপূর্ব সংক্ষিপÍ বক্তব্যে রইসুল জামিয়া শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতী আব্দুল হালীম বুখারী (দা. বা.) জামিয়ার পক্ষ থেকে হযরতের রুহের মাগফিরাত ও রফয়ে দারাজাত কামনা করেন। এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
‘সকল সাহাবা (রা.) মিয়ারে হক’ শীর্ষক মুনাযারা অনুষ্ঠিত
২ অক্টোবর ২০১৭ সোমবার বাদে মাগরিব হতে জামিয়ার দারুল হাদিস মিলনায়তনে সকল ইসলাম-বিদ্বেষী ও ইসলামের নামে প্রচলিত ভ্রান্ত মতবাদের মোকাবেলায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্তকারী জামেয়ার মুনাজারা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ‘সকল সহাবা (রা.) মিয়ারে হক’ বিষয়ক মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন, জামিয়ার তাফসির ও মুনাজারা বিভাগীয় প্রধান আল্লামা রফিক আহমদ (দা.বা.)। বিতর্কে অবতীর্ণ ছাত্রবৃন্দ সত্যপ্রকাশে পক্ষে-বিপক্ষে কুরআন ও হাদিসের আলোকে ও যুক্তি-তর্কের নিরিখে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিপুনতার সঙ্গে বিসয়টিকে ফুটিয়ে তোলে। আর বিষয়টি যুগোপযোগী হওয়ায় বিপুল পরিমাণে উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অবশেষে সভাপতির দোয়ার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
কারী মাওলানা মোহম্মদ তৈয়ব (দা. বা.)-এর জামিয়া পরিদর্শন
গত ২২ অক্টোকর রবিবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ও হংকং প্রবাসী বিশিষ্ট আলেমে দীন কারী মাওলানা মোহাম্মদ তৈয়ব (দা. বা.) জামিয়া পরিদর্শনে আসেন। বাদে ফজর মেহমানের সম্মানার্থে জামিয়ার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন কর হয়। তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন, যথাক্রমে জামিয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লামা হাফজ আহমদুল্লাহ (দা. বা.) ও জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা উবাইদুল্লাহ হামযাহ (দা. বা.)।
তিনি শুরুতেই বিশেষকরে জামিয়ার গত দশ বছরে বিয়োগান্ত মুরুব্বিদের স্মৃতিচারণ করেন (কারণ দশ বছর পূর্বে তিনি আরেকবার এসেছিলেন) ও তাঁদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বুখারী শরিফে সাহাল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। যেখানে নবি (সা.) বলেন, যে আমাকে দুটি জিনিসের নিশ্চয়তা দিবে আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। এক. জিহ্বা ও দুই. লজ্জাস্থান।
তিনি বলেন, ছাত্রদের উচিত এ দুটি ব্যাপারে বেশি খেয়াল রাখা। অহেতুক কথা-বার্তা ও সকল প্রকার ফাহেসা কাজ থেকে বিরত থাকা। কেননা অর্জিত ইলমকে ধ্বংস করার জন্য এ দুটি জিনিসই যথেষ্ট। পরিশেষে তিনি রইসুল জামিয়ার সুদক্ষ পরিচালনা এবং জামিয়ার সকল কার্যক্রমের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার হতে জামিয়ার সকল বিভাগ-এবতেদায়ি থেকে দাওরা (মাস্টার্স) ও সকল তাখাস্সুসাত (উচ্চতর গবেষণা বিভাগ) এ একযোগে ১৪৩৮-৩৯ হি. শিক্ষাবর্ষের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ২৪ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত জুমাবার বাদ দিয়ে একটানা পরীক্ষা চলবে। পরীক্ষার পর তিন দিন বিরতি দিয়ে ৪ নভেম্বর থেকে পুনরায় জামিয়ার দরস আরম্ভ হবে।
তথ্যসূত্র: নূর আহমদ তালহা
জামিয়া প্রতিবেদক, মাসিক আত-তাওহীদ
(মাসিক আত তাওহীদ, নভেম্বর ২০১৭)