জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্ট্রেলিয়ায় ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে

ড. মুহাম্মদ সিদ্দীক

অস্ট্রেলিয়ায় মোট ৪ লাখের মতো মুসলমান রয়েছে। তাঁরা সারা দেশের মানুষের শতকরা দেড় ভাগ। তবে সিডনি শহরে শতকরা দু’ভাগ লোক মুসলমান। বর্তমান যুগে মুসলমানেরা অস্ট্রেলিয়ার ‘ইমিগ্রান্ট’ হলেও মধ্যযুগ থেকেই মুসলমানদের যোগাযোগ ছিল অস্ট্রেরিয়ার উত্তর উপকূলের সাথে। ইউরোপীয়রা অস্ট্রেলিয়া পৌঁছার আগেই মুসলমানেরা উত্তর উপকূলে পৌঁছেছিল। বিলাল কেল্যান্ড নামে এক লেখক তার দি মুসলিমস ইন অস্ট্রেলিয়া : এ ব্রিফ হিস্টরি গ্রন্থ (পৃ. ৩)-এ লিখেন, ‘আরব ও চীনের ট্যাং শাসনামলে (৬০৮Ñ৯০৭ খ্রি.) এ দু’দেশের সাথে বেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার ম্যাকাসারের মুসলমানেরা উত্তর অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখত।’ লুইস লেভাথেস তার হোয়েন চায়না রুলড দ্য সিজ : দি ট্রেজার ফিট অব দ্য ড্রাগন থ্রোন’ (প্রকাশক: সাইমন অ্যান্ড সুস্টার, নিউ ইয়র্ক, ১৯৪৪, পৃ. ১৯৮) গ্রন্থে লিখেছেন, ‘কেনিয়ার সমুদ্র-নিকটবর্তী দ্বীপগুলোর বাজুনি সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসায় করত।’ মজার কথা, ১৭৬০ সালের দিকে ইংরেজ নাবিক আলেকজান্ডার ডালরিমপল লিখেছিলেন যে, ‘এ বাজুনি সম্প্রদায়ের লোকেরাই জানায়, অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে স্বর্ণ আর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা হলো মুসলমান।’ এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সি সি ম্যাকনাইটের দি ভয়েজ টু মারেজ গ্রন্থে। তিনি তা নিয়েছেন আলেকজান্ডার ডালরিমপলের লেখা এ প্ল্যান ফর অ্যাক্সটেনডিং দি কমার্স অব দিস কিংডম অ্যান্ড দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ গ্রন্থ থেকে, যা লন্ডন থেকে ১৭৬৯ সালে প্রকাশিত হয়। ম্যাকনাইট স্পষ্ট করে লিখেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের সম্প্রদায়গুলোর পুরুষেরা খতনা করত।’ উল্লেখ্য, আফ্রিকা পূর্ব উপকূলে মুসলিম শহর মোমবাসা, জানজিবার ও দারুস সালাম অতীত থেকেই প্রখ্যাত সমুদ্রবন্দর ও ব্যবসায়ের কেন্দ্র। ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি প্রদেশের ম্যাকাসার থেকে বছরে প্রতিবার বাণিজ্য নৌবহর যেত উত্তর অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান ডারউইন শহরের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে, যার নাম মারেজ।

ম্যাকনাইটের মতে, মুসলমানদের সাথে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার মারেজ উপকূলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য ১৭৫১ থেকে ১৭৫৪ সালে লেখা পত্রাবলিতে মেলে। ফিল্ডারস নামে এক নাবিক বর্ণনা দিয়েছেন, ‘১৮০৩ সালে তিনি উত্তর অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে আর্নহেমল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম কোণে ইন্দোনেশিয়ার ম্যাকাসার জনগোষ্ঠীর বাণিজ্য নৌবহর দেখতে পান।’ তিনি বলেন, ‘এ লোকগুলো মুসলমান [সূত্র: আলফ্রেড সিয়ারসি ইন অস্ট্রেলিয়ান ট্রপিকস, দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৯০৯, প্রকাশক জর্জ রবার্টসন অ্যান্ড কোম্পানি, লন্ডন]।’

পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে ১৯০১ সালে ইমিগ্রেশন রেসট্রিকশন অ্যাক্ট পাস করে ইন্দোনেশিয়ার সাথে অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ১৮৩৯ সালে টিম্বো নামে এক ম্যাকাসার মুসলমান পোর্ট এসিংটন থেকে অভ্যন্তরে গিয়ে আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগে ইন্টারপ্রেটারের (অনুবাদক) কাজ করেন। আলফ্রেড সিয়ারসি লিখেন, অনেক আদিবাসীর মাঝে রয়েছে মালয় রক্তের প্রভাব। এদের চামড়ার রঙ হালকা কালো, আর চেহারা সুন্দর। মেয়েদের মধ্যে এটা স্পষ্ট।

ধর্মান্তরিত মুসলমান লেখক বিলাল কেল্যান্ড লিখেছেন, ‘মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়নি, যা বলা যাবে না যখন এ নিষ্পেষিত সম্প্রদায় পরবর্তীকালে অন্য বিদেশি সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে (অর্থাৎ পাশ্চাত্য সংস্পর্শে অস্ট্রেলীয় আদিবাসী সংস্কৃতি ধ্বংস হয়)।’ পিএম ওরসলে ঠিকই বুঝেছেন, ‘পার্থক্যটা স্পষ্ট ম্যাকাসার মুসলমানদের মহানুভবতা ও গণতান্ত্রিক বোধ আর শ্বেতাঙ্গদের সংকীর্ণতা ও বর্ণবাদ [আরলি এশিয়ান কন্ট্রাক্টস উইথ অস্ট্রেলিয়া : পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট, ১৯৫৫, পৃ. ৮]।

যত দিন ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তত দিন আদিবাসীদের দিন ভালোই চলছিল। ১৬০৬ সালে ডাচ জাহাজ ‘ডুয়ুফকিন’ এলো অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূলে। আর ক্যাপ্টেন কুক এলেন পূর্ব উপকূলে ১৭৭০ সালের নভেম্বরে জাহাজ নিয়ে। ১৭৮৮ সালে ইংরেজরা সিডনির নিকটবর্তী বোটানি উপকূলে দখল জমালো রাজা তৃতীয় জর্জের নামে।

রেকর্ডপত্র থেকে দেখা যায়, ক্যাপ্টেন কুকের জাহাজে মুসলমান নাবিকও ছিলেন। একজনের নাম জন হাসান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নরফক দ্বীপে ও পরবর্তীকালে তাসমানিয়ায় বাস করেন। ক্যাপ্টেন কুকের জাহাজে ছিলেন আরেক মুসলমান, নাম সুয়া (সায়েব) সুলতান। পরে তিনি পরিবারসহ হোর্বাট শহরে বাস করতেন। মুহাম্মদ কাসিম ছিল অ্যান্ডিয়েভার জাহাজের আরেক আরোহী। ১৭৯১ সালে ইন্ডিয়ার হায়দরাবাদ থেকে আসে সাজাপ্রাপ্ত জিমরান রিয়াম নামে এক মুসলমান আটলান্টিক জাহাজে চড়ে। ওমান থেকে আসে সাজাপ্রাপ্ত নোয়ারদিন। এমনকি বাংলা থেকে গেল জন জোহানেস নামে লন্ডনে সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি। ইংরেজরা কখনো কখনো মুসলমানদের নাম বদলাতে বাধ্য করত।

অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি এলাকায় যানবাহনের সাথে জড়িত কাজে ইন্ডিয়া থেকে ১৮৬০ সালে দু’জন আফগান মুসলমান ঈমান খান ও দোস্ত মুহাম্মদ এবং একজন হিন্দু উটচালক সামলাকে আনা হয়। পরবর্তীকালে আরও মুসলিম উটচালককে আনা হয়। বিলাল কেল্যান্ড দুঃখ করে লিখেন, ‘যদিও অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরে অনেক অভিযানই নির্ভর করত উটের বহর ও তার মুসলিম চালকদের ওপর, তাদের সেবাকে কমই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সব কৃতিত্ব নিয়ে নেয় শ্বেতাঙ্গ মালিকেরা এসব অভিযানের।’

এক তথ্যে দেখা যায়, ১৮৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুলগার্ডি সোনার খনি অঞ্চলে ৩০০ জনের একটি মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে। শুক্রবারে ৮০ জনের মতো মুসলমান জুমা পড়তেন। দুটি মসজিদ গড়ে ওঠে সেখানে। এ মুসলমান অভিবাসীরা সবাই ছিল পরিবারবিহীন, নিঃসঙ্গ। যান্ত্রিক যানবাহন প্রবর্তনের পর এ মুসলিম সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

১৯৯৪ সালের এক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় ৫৭টি মসজিদ রয়েছে। প্রথম মসজিদটি আফগান উটচালকদের দিয়ে অ্যাডিলেডে ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সিডনি শহরের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ১৯৬০ সালের দিকে সারি হিলস এলাকায়। তবে সবচেয়ে বড় মসজিদ লাকেম্বা ও অবার্নে। শেষের এ তিনটি মসজিদেই নামায পড়েছি। অবার্ন মসজিদের নাম গ্যালিপলি মসজিদ। তুর্কি ইমিগ্রান্টরা এটি তৈরি করেছেন। পাঁচ হাজার লোক বসার ব্যবস্থা এতে। লাকেম্বা মসজিদটি লেবাননি মুসলমানেরা তৈরি করে। সে এলাকায় অনেক বাঙালি মুসলমানের বাস। অস্ট্রেলিয়ায় নতুন মসজিদ ও মাদরাসা বা মুসলিম স্কুল তৈরিতে প্রবল বাধা আসে। সিডনির ডুরালং ভ্যালি রিসোর্টকে কিনে মুসলমানেরা স্কুল বানাতে গেলে প্রচণ্ড বাধা এসেছিল। এর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনির ক্যামডেনেও একই ধরনের বাধা আসে। অস্ট্রেলিয়ান প্রটেকশন পার্টির চেয়ারম্যান ডারিন হজেস এক বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘আমি মসজিদ, যৌন-দোকান এবং যা অস্ট্রেলিয়ার সনাতন পারিবারিক মূল্যবোধকে নস্যাৎ করে, তার বিরুদ্ধাচরণ করব [সানডে মর্নিং হেরাল্ড, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮]।’

অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর গেরি ডি বর্ডমা তার মস্কস অ্যান্ড মুসলিম সেটেলম্যান্ট ইন অস্ট্রেলিয়া ১৯৯৪ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া একটি খ্রিস্টান মুলুক। অস্ট্রেলিয়া সেক্যুলার নয়। অস্ট্রেলিয়া শুধু খ্রিস্টান মুলুক নয়, এটা অ্যাংলিকান ও ক্যাথলিক মুলুক। গত শতাব্দীর মাঝ থেকে ক্যাথলিক ও অ্যাংলিকানরা হলো দেশের অধিক জনসংখ্যা। এখন আবার ক্যাথলিক বেশি। ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে শতকরা ২৭ জন ক্যাথলিক আর ২৪ জন অ্যাংলিকান।’ মি. গেরি মেলবোর্নে অ্যাংলিকান পাদ্রিও। তার মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রফেসর গেরি দুঃখ করে লিখেন, ‘যদিও বহির্বিশ্বে মাইক্রোফোনে মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযান হয়, তবে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় কাউন্সিলগুলো তা করেছে নিষিদ্ধ [পৃ. ৫৬]।’ তিনি সমগ্র বিশ্বে মসজিদের গুরুত্ব উল্লেখ করেন, ‘কর্ডোভার গ্রেট মস্ক এত বিশাল যে, একে ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল করাও সম্পূর্ণ সফল হয়নি। মিসর ও মরক্কোর মসজিদগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ছিল সম্পৃক্ত; সবচেয়ে পুরনো হলো মিসরের আল-আযহার। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাহবা নিতে পারে কাসিক্যাল জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক কিছু রক্ষা করা ও তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য, যখন ইউরোপীয় খ্রিস্টজগৎ অন্ধকারে ডুবেছিল। রেনেসাঁর সময় এ জ্ঞানই তো সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর পরবর্তী ইউরোপীয় ধর্মীয় দার্শনিক জ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বে যে ইসলামি প্রভাব পড়ে তা নিয়ে আরও অনুসন্ধান হওয়া উচিত। এ প্রভাবকে অনেক খাটো করে দেখা হয়।’ তিনি লিখেছেন, ‘মুসলমানদের প্রবলভাবে সংগ্রাম করতে হয় মসজিদ, স্কুল ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে।’ পাদরি প্রফেসর গেরি ডি দুঃখ করে লিখেন, ‘মসজিদের মতো পরিকল্পনাগুলো নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করা হলে এর শক্তভাবে বিরোধিতা করা হয়। এটা বিশ্বাসই করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে প্রথম জাহাজ বহর আসা মাত্র চার্চ অব ইংল্যান্ড ধর্মযাজক পাঠাল, আর অস্ট্রেলীয় সরকার বিভিন্ন খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়কে দিলো জমি। এ ধরনের সাহায্য মুসলমান বা অন্য ইমিগ্রান্টদের দেওয়া হয়নি।’

প্রফেসর গেরি বহু মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ করে তথ্য সংগ্রহ করে জানান, ‘প্রায় অর্ধেক তথ্যদাতা মুসলমান বলেন, তারা হয়রানি, বিরোধিতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার।’ প্রফেসর গেরি বলেন, ‘পোশাকের কারণে মুসলমান মেয়েরা সমালোচনার শিকার ও ঘৃণার বস্তু। এ প্রতিক্রিয়া হলো অস্ট্রেলীয়দের অজ্ঞানতার কারণে (আসলে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের করিনথিয়ন অংশে নির্দেশ রয়েছে, মেয়েরা মাথা না ঢাকলে চুল কেটে নেড়ে হোক।’ তাই তো আমরা দেখি, মাদার মেরির ছবি বা মূর্তিতে হিজাব, আর নানেরা (খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীরা) বোরকা পরেন।

প্রফেসর গেরি লিখেন, ‘কোনো কোনো মুসলমান মহিলা বলেন, হিজাব পরিধানের জন্য তাদের চাকরি পেতে অসুবিধা হয়। এক তথ্যদাতা মন্তব্য তুলে ধরেন এভাবে: ‘আমরা পোশাকের কারণে কাজের স্থানে বৈরিতার শিকার। অস্ট্রেলীয়রা ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে অজ্ঞ। এটা সহজে মিটবে না যখন মিডিয়া আগুনে ঘি ঢালছে সব মুসলমানকে ধর্মান্ধ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি লেবেল লাগিয়ে [পৃ. ৮৪]।’’

গেরি আরও মন্তব্য করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় প্রকাশ্য মুসলমান হওয়ার এটা পরিণতি!’ তিনি লিখেন, ‘ইসলামকে শুধু দানবরূপে চিহ্নিত করা হয়নি, একে বলা হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শত্রু। বিশেষ করে গত শতকে গ্যালিপলি যুদ্ধে এ প্রচারণা চলেছিল। আর মিডিয়া এ ধরনের চিত্রকে তরতাজা রেখেছে। ১৯৭০ সালের তেলসংকটে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বন্দ্বে এবং উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মার্কিন মিডিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াতে থাকে। এ মিথ্যাচারের ইতিহাস, এতে অস্ট্রেলীয়রা ইসলাম সম্বন্ধে জানতে বাধাগ্রস্ত হয়। তারা বাধা পায় ইসলামের বিভিন্ন ফিকহ, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব ও ধর্মীয় বিধিবিধানগুলো জানতে। এমনকি তারা বাধাগ্রস্ত হয় মুসলমানেরা যে বিরাট অবদান রাখে কলা, দর্শন, বিজ্ঞান, স্থাপত্যবিদ্যা ও সাহিত্যে তা জানতে। …মিডিয়া ইসলাম সম্পর্কে রিপোর্ট করতে গিয়ে বিশেষভাবে নেগেটিভ কাজ করে [পৃ. ৮৬]।’

প্রফেসর গেরি লিখেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা এশিয়ার সাথে ব্যবসার কথা বলেন, তারা যদি মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় সফলকাম হতে চান, তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। …যদি অস্ট্রেলিয়া এশিয়ার কার্যকর স্থান পেতে চায়, তাহলে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। আশার কথা, অনেক অস্ট্রেলীয় মুসলমান রয়েছেন, যারা অন্য অস্ট্রেলীয়দের এটা জানাতে ইচ্ছুক [পৃ. ৮৬]।’

পাদ্রি প্রফেসর গেরি ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে মন্তব্য করেন, ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তিতে বহু সাংস্কৃতিক অস্ট্রেলিয়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, আর এতে অস্ট্রেলিয়া হবে শক্তিশালী। অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে হয়েছে; আরও সমৃদ্ধ হবে মুসলমানদের কর্মপ্রচেষ্টা, জ্ঞান ও কলাকৌশল দিয়ে। উভয় সম্প্রদায়কে নতুন বিষয় জানতে হবে, সমঝোতা করতে হবে, সহিষ্ণুতা ও স্বীকৃতি জাগরূক করতে হবে। মুসলমানেরা নতুন কিছু জানতে ও সৃজনশীল কিছু করতে আগ্রহী।’ তিনি ইসলামের প্রশংসায় লিখেন, ‘বহু-সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণুতা ইসলামে নতুন কিছু নয়। অনেক দেশে, যেমনঃ স্পেন, ফিলিস্তিন ও ইন্ডিয়ায় ইসলাম বহু যুগ পর্যন্ত বহু সাংস্কৃতিক, বহুমাত্রিক সহিষ্ণুতা দেখিয়েছে। উসমানি সাম্রাজ্যে সাংস্কৃতিক বহুমাত্রা ছিল সমাজের মূল অবস্থান।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ