জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১০টি উপায়

পাপিয়া সুলতানা

‘পড়াশোনা করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’ ছোটবেলা থেকেই এই প্রবাদ শুনিয়ে শুনিয়ে বাবা মা আমাদের শুধু পড়তে বসাত। কিন্তু সমস্যা আমাদের সবারই একই জায়গায়, পড়তে বসলেই মাথায় আসে যত ধরনের চিন্তা। মনোযোগ যে কোথায় গায়েব হয়ে যায় কে জানে! পড়ায় মনোযোগ থাকলে যেটা একবার পড়লেই হয়, মনোযোগ না থাকলে সারাদিন পড়েও লাভ নেই। ভালো ছাত্র হতে পারা গৌরবের। মনযোগী ছাত্ররাই পরবর্তী জীবনে মুহাক্কিক আলিমে দীন, মূফতি ও মুহাদ্দিস রূপে স্বীকৃতি পান। চলুন প্রিয় পাঠক আমরা জেনে নিই পড়াশোনায় মনোযোগী হবার কিছু উপায়:

১. মনস্থির

অমনোযোগীতা আনতে পারে এমন সব বিষয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আপনার পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতের কাছেই রাখুন যাতে বারবার উঠতে না হয়। অনেকের বারবার ফোন আসে পড়ার সময়। খুব বেশি দরকার না হলে মোবাইল বন্ধ করে রাখুন । পড়তে বসার অন্তত ৫ মিনিট আগ থেকে মনস্থির করুন।

২. শিক্ষকতা বা তাকরার

আপনি যে বিষয় পড়বেন সেটা অন্য কাউকে শিক্ষা দিন। এমন কাউকে যে সে বিষয়টা সম্পর্কে জানে না। শিক্ষকতা বা সহপাঠীদের নিয়ে তাকরার নিজের জ্ঞান আহরণের জন্য সবচেয়ে উত্তম উপায়। যেমন- আপনি যদি নাহু-সারাফ কম বোঝেন বা আরবী সাহিত্য নিয়ে পড়তে চান ভবিষ্যতে আপনার উচিত এখন থেকেই আরবীর উপর শিক্ষা দান করা অন্যদের। এতে আপনার নিজেরও চর্চা থাকবে বিষয়টির ওপর।

৩. ইন্দ্রিয় সক্রিয়

আপনার সব ইন্দ্রিয় সক্রিয় করুন। আপনি একটি বিষয় যতই পড়–ন না কেন সারাদিন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তা মনে রাখতে পারবেন না অথবা বুঝবেন না যতক্ষণ না আপনি বিষয়টি আপনার চারপাশের কিছুর সাথে সম্পৃক্ত করতে পারছেন। চারপাশের জিনিসের সাথে আপনি আহরণ করা জ্ঞান মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।

৪. সংযোগ

প্রত্যেকটি বিষয়, ধারণার মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে শিখুন। একটি আরেকটির সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আপনার নিজের জ্ঞানের পরিধিও অনেক বাড়বে।

৫. নতুন ধারণা ও পরিচিত

ধারণার মাঝে সংযোগ

আপনি যখন নতুন কোন বিষয় বা তথ্য সম্পর্কে জানবেন তখন তা আপনার বর্তমানের পরিচিত কোন জানা তথ্য বা ধারণার সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন। এতে পরীক্ষার সময় আপনার সে নতুন তথ্য ভুলে যাবার আশঙ্কা কম থাকে।

৬. মস্তিষ্কের ওপর চাপ না দেয়া

পরীক্ষার আগে কিছুদিন পড়লে আপনার মস্তিষ্কের উপর চাপ পড়তে পারে। তাই সবসময় অল্প অল্প পড়ার মাঝে থাকবেন। এতে করে আপনার উপর কোন মানসিক চাপও থাকবেনা আর আপনি পরীক্ষার আগে একটু রিভিশন দিলেই আপনার হয়ে যাবে।

৭. তথ্যের ধরন

পড়ার সময় প্রত্যেকটি তথ্যের ধরন বোঝার চেষ্টা করুন। যেমন- যে তথ্য দেয়া আছে সেটা কি হাদীস, ফিকাহ, উসুল, আরবী ভাষা ও সাহিত্যের তথ্য, নাকি ঐতিহাসিক কোন তথ্য, নাকি কোন মুসান্নিফ বা তার মাসলাক সম্পর্কে তথ্য এসব বিষয়ে ভালো করে বুঝে তারপর মুখস্ত করতে হবে। না বুঝে মুখস্ত করলে তা কোনদিন মনে থাকবে না।

৮. সুদৃঢ় জ্ঞানের ভিত

সব সময় পুস্তকি বিদ্যার সাথে সম্পৃক্ত করলে হবে না। অন্যান্য বিভিন্ন বই থেকে আহরিত জ্ঞানের সাথেও সম্পৃক্ত করতে হবে। সেজন্য দেশ ও দেশের বাইরের অনেক লেখকের বই পড়ার অভ্যাস সব সময় রাখতে হবে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং অনেক কিছু সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা যায় আর নিজের জ্ঞানের ভিত্তিটা অনেক মজবুত ও শক্ত করে গড়ে তোলা যায় যাকে ভিত হিসেবে ধরে আপনি আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে নিতে পারেন।

৯. নিজস্ব রীতি

যখন কোন বিষয় পড়বেন তখন নিজের একটা আলাদা রীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করুন আর বিষয়টির একটি ছবি আপনার মনের মধ্যে এঁকে নিন। এতে বিষয়টি আপনার খুব সহজেই মনে থাকবে।

১০. নোট

আপনার পড়ার মূল লক্ষ্য কিন্তু সেটাকে বুঝে ইলম আহরণ করা আর পরীক্ষায় ভালো করা। কিন্তু আপনি যদি নাই বোঝেন তাহলে ভালো করার প্রশ্নই আসে না। তাই যে বিষয়টি বুঝবেন না তার পেছনে একটু বেশি মনোযোগী হন। প্রয়োজনে খাতায় লিখে, করে বোঝেন। কারণ না বুঝে মুখস্ত করে সেটা বেশিক্ষণ মনে রাখা কোন ছাত্রের পক্ষেই সম্ভব নয়।

উপরোক্ত ১০টি উপায় মেনে চললে আপনি খুব মনোযোগের সাথে লেখাপড়া করতে পারবেন আশা করি আর আপনার পরীক্ষায়ও আশানুরূপ ফল প্রদানে এটি সহায়ক হবে। বর্তমান যুগে জ্ঞান আহরণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতার এই যুগে আপনার কাছে যত ইলম ও জ্ঞান থাকবে তা একসময় আপনার সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ