জামেয়া ওয়েবসাইট

বৃহস্পতিবার-১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামিক স্টেট (আইএস); নব্য খারেজি চিন্তার মূর্তিমান রূপ

 

ইসলামিক স্টেট (আইএস); নব্য খারেজি চিন্তার মূর্তিমান রূপ

 ড. আহমদ আলী

লেখক: প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নব্য খারেজি চিন্তার সর্বশেষ মূর্তিমান রূপ হলো ইসলামিক স্টেট (আইএস)।[1] এটি হালের সর্বাপেক্ষা উগ্র ও চরমপন্থি একটি সুন্নি সংগঠন। আমেরিকা কর্তৃক ইরাক দখলের পরিপ্রেক্ষিতে দখলদারদের প্রতিরোধ ও সুন্নিদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য সংগঠনটির উদ্ভব ঘটে; কিন্তু ক্রমে এটি একটি চরম সন্ত্রাসী সংগঠনের রূপ নেয়। এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদী। সর্বপ্রথমে ইরাকে এর উদ্ভব হলেও ক্রমে এর কার্যক্রম সিরিয়া, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল, মিসরের সিনাই উপদ্বীপ, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের নানা কর্মকাণ্ড বিশ্বময় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। তাদের এসব কাজের মধ্যে রয়েছে বিনাবিচারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা, শিরশ্ছেদ ও আগুনে পুড়িয়ে প্রতিপক্ষ ও বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা-দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশ ইত্যাদি। তাদের ফতওয়া হচ্ছে,

কাফির ও যেসব মুসলিম দেশ যারা আল্লাহর আইন ছাড়া বিচার করে, সেখানে স্বেচ্ছায় নাগরিক হওয়া কুফর। কারণ কোন দেশে নাগরিক হওয়ার দ্বারা সে দেশের আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি কনসেন্ট বা সম্মতি দিতে হয়। এখন কেউ যদি বুঝে-শুনে এসব দেশের নাগরিক হয়, তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আল-কায়েদা, বোকো হারাম সহ সালাফী-জিহাদী গ্রুপেরও অনুরূপ ফতওয়া রয়েছে। তাদের সকলের অভিমত হচ্ছে, কেউ যদি কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছাড়া স্বেচ্ছায় এ জাতীয় দেশের নাগরিক হয় এবং সেই কুফরি নাগরিকত্ব অনুযায়ী দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে কাজ করে, দেশের আইনকানুন মেনে চলে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। এখানে তার কোনো তা’বীল বা অজ্ঞতার উজর গ্রহণযোগ্য হবে না। এ প্রসঙ্গে শায়খ আলী ইবনে খুদাইর বলেন,

إن التجنس بجنسية الكفار من غير إكراه بل كان مختارا طائعا ثم العمل بمقتضى هذه الجنسية الكافرة من الدفاع عن الوطن الكافر وأهله وغيرها من القوانين، هذا كفر، لا عذر فيه بالتأويل ولا الجهل، لأنه من الطاعة في التشريع ومن الطاعة في التحليل والتحريم، وهو بهذا اتخاذهم أربابا. ..

‘কোনো ধরনের শরয়ী প্রতিবন্ধকতা ছাড়া স্বেচ্ছায় আনুগত্যের সাথে কোনো কাফিরদের দেশের নাগরিক হওয়া এবং এই কুফরি নাগরিকত্ব অনুযায়ী আমল করা, যেমন- এই কুফরি দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করা, তাদের অন্যান্য আইনকানুন মেনে চলা স্পষ্ট কুফরি। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের তা’বীল বা অজ্ঞতার ওযর গ্রহণ করা হবে না। কারণ এর মাধ্যমে বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যের আনুগত্য করা হচ্ছে, হালাল-হারাম নির্ধারণে অন্যের আনুগত্য করা হচ্ছে। আর এটিই হলো তাদেরকে ‘রব’ হিসেবে গ্রহণ করার অর্থ। এ কাজ কুফরি হওয়ার বিষয়ে তার কোনো উজরও গ্রহণ করা হবে না।’[2]

তাদের আরেকটি ফতওয়া হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার আইন ছাড়া অন্য আইন দিয়ে বিচার করা সরাসরি কুফর। একইভাবে কেউ যদি আল্লাহর আইন ছাড়া বিচার করে, এমন বিচারক বা শাসকের কাছে বিচার নিয়ে যায়, তাহলেও সে শিরক ও কুফর করবে। ‘তাহাকুম ইলাত তাগুত’ বা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়াও শিরক বা কুফর। আল-কায়েদার অন্যতম নেতা শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরী (১৯৫১-২০২২ খ্রি.) তার আল-হাসাদুল মুর (الحصاد المر) কিতাবে প্রসিদ্ধ সালাফী শায়খ মুহাম্মদ হামিদ আল-ফকীর বক্তব্য এনেছেন। সেখানে তিনি বলেন,

من اتخذ من كلام الفرنجة قوانين يتحاكم إليها في الدماء والفروج والأموال ويقدمها علىٰ ما علم وتبين له من كتاب الله وسنه رسوله ﷺ فهو بلا شك كافر مرتد إذا أصر عليها ولـم يرجع إلى الحكم بما أنزل الله، ولا ينفعه بأي أسم تسمى به، ولا أي عمل من ظواهر أعمال الصلاة والصيام والحج ونحوها.

‘যে ব্যক্তি ফিরিঙ্গিদের নিয়মনীতিকে আইন হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং তার রক্ত, সম্পদ, সম্ভ্রম ইত্যাদির জন্য এর কাছে বিচার নিয়ে যায় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বক্তব্য যা কুরআন- সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, তার ওপর এগুলোকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফির ও মুরতাদ, যদি সে তা পুনঃপুন করে এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারের দিকে ফিরে না আসে। এ অবস্থায় সে যে নামেই নিজেকে অভিহিত করুক না কেন, তা তার কোনো উপকারে আসবে না এবং তার প্রকাশ্য কোনো আমলই যেমন- সালাত, সাওম ও হজ প্রভৃতি তার কোনো কাজে আসবে না।’[3]

বোকো হারামের প্রধান আবু ইউসুফ বারনাবীর বক্তব্যও প্রায় অনুরূপ। এ কারণে এরা তাগুতের দেশ থেকে হিজরতের কথা বলেন। কেউ যদি ইচ্ছা করে হিজরত না করে শক্ত গোনাহগার হবে। কিন্তু তাদের মতে, সব মুসলিম দেশই তো তাগুতের দেশ, তাহলে মুসলিমরা হিজরত করবে কোথায়? আইএসের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর বাগদাদী তার খিলাফত ঘোষণার পর সবাইকে হিজরতের আহ্বান করেছিলেন।

উল্লেখ্য, মুসলিমবিশ্ব আজ তার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম সময় পার করছে। একদিকে ইসলামী জাগরণের ঢেউ বহমান, অপরদিকে এ প্রাণ-সঞ্জীবনী দীন ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োজিত করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে কুচক্রী মহল। তারা ইসলামের শান্তিকামী চরিত্র ও সৌন্দর্যকে ধ্বংস করার জন্য নানামুখী প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বর্তমানে আমরা এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি, যে সম্পর্কে আমাদের চিন্তাশক্তি বা কল্পনাশক্তিও হার মেনে যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তারা মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন উগ্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটিয়ে ইসলামের নামে দুর্নাম রটাতে চায় এবং এর মাধ্যমে এর অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করে দেওয়ার ফন্দি খোঁজে। অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে উপর্যুক্ত খারেজি চিন্তার অনুসারীরা অনেক সময় বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক ইসলামের শত্রুদের খপ্পরে পড়ে যায়। এরা সুযোগ বুঝে তাদেরকে নিজেদের স্বার্থে ও প্রয়োজনে সুকৌশলে ব্যবহার করে থাকে। তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে জনমনে প্রায়ই এ প্রশ্ন তৈরি হয় যে, এরা ওদের ব্লুপ্রিন্টে কাজ করছে না তো? এরা ওদেরই পোষ্য নয় তো? অনেকেরই প্রবল ধারণা হলো, ওরা অনেক দূর থেকে তাদেরকে প্রচুর অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে দেশে নৈরাজ্য তৈরি করছে, আর এ অভিযোগে ওরা দেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, তাদের নেতাকর্মী, দায়ী এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ওপর হামলে পড়ছে, তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিচ্ছে বা প্রচণ্ড বাধা তৈরি করছে, তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, আজ বিশ্বব্যাপী অনেকেই এ তথ্য জানে যে, বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত আইএস হলো মূলত পশ্চিমা পরাশক্তির প্রচ্ছন্ন মদদে মোসাদের সৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষত্যাগী গুপ্তচর অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের প্রকাশিত গোপন দলিলের তথ্যানুযায়ী জর্দানের অভ্যন্তরে গোপন ক্যাম্পেই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মোসাদ আইএস জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতো। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসসহ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই-মেইল থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডেমোক্রেসি নাউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারিকে আইএসের প্রতিষ্ঠাতা বলেও উল্লেখ করেন।[4]

বর্তমানে খারেজি চিন্তা বিস্তারের কারণসমূহ

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সাধারণ মুসলিমদের ‘কাফির’ আখ্যা দেওয়ার প্রবণতা সাম্প্রতিককালের নতুন কোনো প্রবণতা নয়; বরং এটি অনেক প্রাচীন একটি প্রবণতা। ইসলামের ইতিহাসে খারেজিরাই প্রথম এ চিন্তার বীজ বপন করেছিলো। যদিও তাঁরা কালক্রমে তাঁদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারেনি; কিন্তু তারা পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য তাঁদের চিন্তা ও কার্যকলাপের একটি বিরাট প্রভাব রেখে যেতে সক্ষম হয়। বর্তমান যুগে নতুনভাবে এ প্রবণতা বিস্তারের পেছনে নানা কারণকে দায়ী করা হয়। নিম্নে আমরা সংক্ষেপে প্রধান প্রধান কয়েকটি কারণ তুলে ধরছি,

ক. জুলুম, পাপাচার ও অধর্মের ব্যাপক প্রসার: খারেজি চিন্তার উত্থানের পেছনে একটি প্রধান কারণ হচ্ছে বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম সমাজই কলুষিত। নানা জুলুম-অবিচার, পাপাচার ও কদর্যে সমাজগুলো দিনদিন ভরে যাচ্ছে, চারিদিকে নৈরাজ্য আর দৌরাত্ম্যের প্রাবল্য। পক্ষান্তরে সমাজগুলোকে সত্যিকার অর্থে এসব কদর্য ও নৈরাজ্য থেকে পবিত্র ও মুক্ত করার কোনো কার্যকর প্রয়াস ও উদ্যোগ নেই, না শাসকগণের পক্ষ থেকে, না সমাজের পক্ষ থেকে। এ অবস্থায় সৎ ও নিষ্ঠাবান ধর্মপ্রাণ লোকগুলো ক্রমে যেমন বর্তমান সমাজব্যবস্থার প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠছেন, তেমনি সরকারের প্রতিও বিদ্বেষী হয়ে উঠছেন।

খ. ইসলামী সংগঠন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের নিপীড়ন, আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র: খারেজি চিন্তার উত্থানের পেছনে অপর একটি বড় কারণ হচ্ছে, ইসলামী সংগঠন ও নেতাকর্মী এবং ইসলামের দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের নিপীড়ন, আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র। সরকারগুলো তাদের নিজস্ব অবৈধ খায়েশ পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন করে থাকে, কখনো আবার তাদের ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ করা হয়, কখনো তাদের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয় কিংবা তাদেরকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধাগ্রস্ত করা হয়। বলাই বাহুল্য, সরকারের পক্ষ থেকে যে যাবত এরূপ নিপীড়ন ও আগ্রাসন চলতে থাকবে, ততদিন যে কোনো দেশে কিছু মানুষ অজ্ঞতা ও আবেগের প্রেষণে উগ্রতায় লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। এরূপ সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গ. উগ্রতাবাদের সমর্থক বইপুস্তক ও লেখালেখির প্রসার: একদিকে সমাজে জুলুম, পাপাচার ও অধর্মের প্রাবল্য, অপরদিকে ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও দায়ীদের ওপর দমনপীড়ন। এরূপ কঠিন পরিস্থিতিতে বর্তমানে একদিকে এমন অনেক বইপুস্তকও প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে, যেগুলোতে উপর্যুক্ত উগ্র চিন্তাগুলো কমবেশি প্রচার করা হচ্ছে এবং সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতেও এ জাতীয় অনেক লেখালেখি বাধাহীনভাবে চলছে। এর ফলে অনেক ধর্মপ্রাণ ছাত্র ও যুবক বিভ্রান্ত হচ্ছে। সমাজপরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক ও বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া অনুশীলনের পরিবর্তে তারা চরম পন্থা অবলম্বনের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে।

ঘ. ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধ চর্চার অভাব: বর্তমানে খারেজি চিন্তার উত্থানের পেছনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং একে উপর্যুক্ত সকল কারণের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, কারো যদি সঠিক ইসলামী জ্ঞান থাকে, তাহলে তাকে ইসলামের নামে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয় না। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে যতগুলো উগ্রবাদী দলের তালিকা করা হয়েছে, যত উগ্রবাদী গ্রেফতার করা হয়েছে বা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে একবার তাকালেই যে কেউ জানতে পারবেন যে, এদের অধিকাংশই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। উপরন্তু এদের অধিকাংশই আলিমগণের ঘোর বিরোধী। তারা আলিমদেরকে আপোষকামী ও অজ্ঞ বলে প্রচার করে এবং তাদের অনুসারীদেরকে আলিমদের সাথে মিশতে বারণ করে। শুধু তাদের মতের সাথে যে সব আলিমের মত মিলে যায়, তারা শুধু তাদেরই প্রশংসা করে। এদের ধর্মীয় আবেগের সাথে সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে এদের মধ্যে উগ্রতা জন্ম নিয়েছে। বলাই বাহুল্য, ধর্মের প্রতি মানুষের যে অনুভূতি তা সন্তানের প্রতি স্নেহ, পিতামাতার প্রতি ভালোবাসা ও সম্পদের প্রতি মোহ প্রভৃতির মতোই সহজাত। এ অনুভূতিকে নির্মূল করা যায় না এবং নির্মূলের প্রচেষ্টা বুমেরাং হয়। একে সঠিক খাতে প্রবাহিত করাই মানবতার কল্যাণের একমাত্র পথ। কাজেই কারো মধ্যে ইসলামের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসার পাশাপাশি ইসলামের সঠিক জ্ঞান না থাকলে তাকে সহজেই বিভ্রান্ত করা সম্ভব।

অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হলো, মুসলিম দেশগুলোর প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাগুলোতে ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রশিক্ষণের অবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোটাই সেক্যুলার। এগুলোতে ধর্ম শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ চর্চার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে মুসলিম ছাত্র-যুবকরা দীর্ঘসময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করেও ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষালাভ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধিকন্তু, আমাদের সমাজ ও পরিবেশ-প্রতিবেশও এমন কলুষিত যে, সেখানেও তারা ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভ ও নৈতিক শিক্ষার অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে ধর্মপ্রাণ ছাত্র-যুবকগুলো ইসলামের সঠিক শিক্ষা লাভের অভাবে অনেক সময় সালাফের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পরিহার করে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যগুলোর ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা করছে, ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে নানারূপ বাড়াবাড়ি করছে। অধিকন্তু ইতিহাস, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা, বাস্তব জীবনবোধ এবং সমাজ পরিবর্তনের নিয়মরীতি প্রভৃতি প্রসঙ্গেও তাদের অনেকেই খুব কম জ্ঞান রাখে। এভাবেই সমাজে এক শ্রেণির লোকদের মধ্যে উগ্রতা ও চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়ছে।

ঙ. খারেজি ট্যাগের ছড়াছড়ি: বর্তমানে আমাদের মধ্যে একশ্রেণির লোক যখন তখন যাকে তাকে ‘খারেজি’ বলে চিহ্নিত করে থাকেন। তাদের কেউ কেউ আবার এতোই উদ্ধত যে, পৃথিবীর ইসলামী আন্দোলনকারী আলিম ও দলসমূহকে ঢালাওভাবে ‘খারেজি’ বলে ট্যাগ লাগিয়ে থাকেন। যেমন বর্তমানে এক শ্রেণির সালাফী এতোই অসহিষ্ণু যে, তাদের চিন্তার সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করলেই তাকে তারা অতিসহজেই ‘খারেজি’ বা ‘খারেজির সহযোগী’ হিসেবে আখ্যা দেন।

আমরা মনে করি, এটা সত্য যে, খারেজিদের কিছু চিন্তাদর্শন, কার্যকলাপ ও বৈশিষ্ট্য ইসলামের অনুসারীদের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে। তাই বলে ঢালাওভাবে কোনো ব্যক্তি, দল বা জনগোষ্ঠীকে এ নামে বিশেষায়িত করা সমীচীন নয়। আবার এটাও অস্বীকার করা যায় না, যারা অন্যদেরকে এ নামে অভিহিত করে, তাদের কারো কারো মধ্যেও এ রোগ মারাত্মকভাবে আছে। তাই নির্দিষ্ট কোনো দল বা জনগোষ্ঠীকে এ নামে অভিহিত করা সুবিচার হবে না।

একথাও মনে রাখতে হবে, কেবল সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা করার জন্য কাউকে ‘খারেজি’ বলা সমীচীন নয়। উল্লেখ্য যে, সরকারের অন্যায় পদক্ষেপসমূহের বিধিসম্মতভাবে প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব। উপরন্তু, যদি খারেজি হওয়ার জন্য সরকারের বিরোধিতাই একমাত্র লক্ষণ হয়, তাহলে তো ইসলামের ইতিহাসে অনেক সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ইমামগণকেও খারেজিদের তালিকায় আনতে হবে, যা অন্যায় ও অবাস্তব। ইসলামে যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলার নির্দেশ প্রদান করেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, «إِنَّ أَفْضَلَ الْـجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ» (অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা উচ্চারণ করা সর্বোত্তম জিহাদ।)[5] বলা হয় যে, «السَّاكِتُ عَنْ الْـحَقِّ شَيْطَانٌ أَخْرَسُ» (যে সত্য কথা বলা থেকে চুপ থাকে, সে বোবা শয়তান।)[6]

কাজেই বোঝা যায়, একজন সত্যিকার মুমিনের দায়িত্ব হলো, তিনি সবসময় শাসকবর্গের কাছে সত্যটা বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরবেন, যদিও তিনি শাসকের পক্ষ থেকে কোনোরূপ অন্যায়-অবিচারের আশঙ্কা করেন। কঠিন বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্যকে গোপন করা কিংবা নীরব থাকা অথবা বিভিন্ন স্বার্থে অন্যায় ও মিথ্যার পক্ষাবলম্বন করা মোটেই প্রকৃত ঈমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতএব কোনো ব্যক্তি বা দল যদি দেশের স্বীকৃত নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের অন্যায় কার্যকলাপের সমালোচনা ও বিরোধিতা করে, তবে তাকে এ জন্য ‘খারেজি’ বলে ট্যাগ দেওয়া সম্পূর্ণ অবান্তর। অনুরূপভাবে যারা কোনো জালিম ও পাপিষ্ঠ সরকারের পরিবর্তনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, মিটিং-মিছিল করে, তাদেরকেও ‘খারেজি’ বলে ট্যাগ দেওয়া সম্পূর্ণ অমূলক ও বাড়াবাড়ির নামান্তর।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, দেশের নাগরিকদের একান্ত কর্তব্য হচ্ছে, তারা শাসকদের আনুগত্য করে যাবে, সহযোগিতা করবে, তবে তা কোনোক্রমেই নিঃশর্ত ও অন্ধভাবে নয়। তারা শাসকদের আনুগত্য করবে, যে যাবত তাঁরা দেশ ও উম্মাহর কল্যাণে কাজ করে যাবেন এবং সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। যদি কোনো শাসক তাঁর ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট না হন কিংবা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর পক্ষে দেশের জনগণের আনুগত্য ও সমর্থন আশা করা সমীচীন নয়; বরং তাঁর জন্য সমীচীন হচ্ছে, তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন এবং এমন কোনো যোগ্যতর ব্যক্তিকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেবেন, যিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে এবং সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। যদি তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে না দেন, তাহলে নাগরিকদের জন্য এ অধিকার রয়েছে, তারা তাঁকে বিধিবদ্ধ পদ্ধতিতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে পারেন এবং অন্য যোগ্যতর ব্যক্তিকে নির্বাচিত বা মনোনীত করবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, «لَا طَاعَةَ لِـمَخْلُوْقٍ فِيْ مَعْصِيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ» (স্রষ্টার অবাধ্য আচরণ করে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করার সুযোগ নেই।)[7] অন্য একটি হাদীসে শাসকদের আনুগত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ حَقٌّ مَا لَـمْ يُؤْمَرْ بِالْـمَعْصِيَةِ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ».

‘(শাসকের কথা) শোনা ও মেনে চলা (জনগণের ওপর তার একটি ন্যায্য) অধিকার, যে যাবত না অন্যায় কিছুর আদেশ করা হয়। যখন অন্যায় কিছুর আদেশ করা হবে, তখন সেই আদেশ শোনাও যাবে না, আনুগত্যও করা যাবে না।’[8]

সাইয়িদুনা আবু বকর (রযি.) খলীফা মনোনীত হওয়ার পর তাঁর উদ্‌বোধনী ভাষণে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

أَيُّهَا النَّاسُ! فَإِنِّيْ قَدْ وُلِّيتُ عَلَيْكُمْ وَلَسْتُ بِخَيْرِكُمْ، فَإِنْ أَحْسَنْتُ فَأَعِيْنُوْنِيْ، وَإِنْ أَسَأْتُ فَقَوِّمُوْنِيْ، …، أَطِيْعُوْنِيْ مَا أَطَعْتُ اللهَ وَرَسُوْلَهُ، فَإِذَا عَصَيْتُ اللهَ وَرَسُوْلَهُ، فَلَا طَاعَةَ لِيْ عَلَيْكُمْ.

‘আমাকে তোমাদের শাসক নিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। যদি আমি ভালো কাজ করি, তবেই তোমরা আমাকে সহযোগিতা করবে। আর যদি বিপথে চলি, তা হলে তোমরা আমাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবে। … তোমরা আমরা নির্দেশ মেনে চলবে, যে যাবত আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবো। যদি দেখো যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্যতা করছি, তখন আমার নির্দেশ মান্য করা তোমাদের ওপর কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’[9]

এ থেকে বোঝা যায়, জালিম-পাপিষ্ঠ ও অযোগ্য শাসকদের পরিবর্তন করে সৎ ও যোগ্য লোকদের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মতান্ত্রিক চেষ্টা করা ‘খারেজিপনা’ বা অন্যায় নয়; বরং তা শরীয়তেরই একান্ত দাবি। তবে অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রতি সম্যক লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে তা করতে গিয়ে অযাচিত কোনো পরিস্থিতি ও বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়। সালাফে সালিহীন, মুজতাহিদ ইমাম ও পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কিরাম প্রায় সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কোনো মুসলিম শাসকের মধ্যে যদি কোনো সুস্পষ্ট কুফরি দেখা যায়, তাহলে তাকে সরিয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক (যিনি এসব কুফরি করবেন না; বরং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী শাসন করবেন) নিয়োগের ব্যবস্থা করা ওই এলাকার সামর্থ্যবানদের একান্ত দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে সহীহুল বুখারীর বিশিষ্ট ভাষ্যকার ইবনুত তীন (মৃ. ৬১১ হি.) থেকে বর্ণিত, ইমাম দাউদী (রহ.) বলেন,

الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعُلَمَاءُ فِيْ أُمَرَاءِ الْـجَوْرِ أَنَّهُ إِنْ قَدَرَ عَلَىٰ خَلْعِهِ بِغَيْرِ فِتْنَةٍ وَلَا ظُلْمٍ وَجَبَ، وَإِلَّا فَالْوَاجِبُ الصَّبْرُ، وَعَنْ بَعْضِهِمْ: لَا يَجُوْزُ عَقْدُ الْوِلَايَةِ لِفَاسِقٍ ابْتِدَاءً، فَإِنْ أَحْدَثَ جَوْرًا بَعْدَ أَنْ كَانَ عَدْلًا فَاخْتَلَفُوْا فِيْ جَوَازِ الْـخُرُوْجِ عَلَيْهِ، وَالصَّحِيْحُ الْـمَنْعُ إِلَّا أَنْ يَكْفُرَ فَيَجِبُ الْـخُرُوْجُ عَلَيْهِ.

‘আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, শাসক জালিম হলে যদি কোনোরূপ ফিতনা ও জুলুমের আশঙ্কা ছাড়া তাকে অপসারণ করার সামর্থ্য থাকে তাহলে তা আবশ্যক। আর তা না হলে ধৈর্যধারণ করা আবশ্যক। তাদের কারো কারো মতে, ফাসিকের নেতৃত্ব শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠিতই হয় না (বিধায় তাকে অপসারণ করতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই)। আর যদি সে প্রথমে ন্যায়পরায়ণ থাকে, পরবর্তীতে সে জুলুম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ‘খুরূজ’ করার ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। সঠিক মত হচ্ছে, এটা নিষিদ্ধ। তবে যদি সে কুফরি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ‘খুরূজ’ করা অপরিহার্য হয়ে যায়।’[10]

[1] এর আরবি রূপ হলো ‘দায়েশ’ অর্থাৎ ‘আদ-দাওলা আল-ইসলামিয়া ফিল ইরাক ওয়াশ শাম’।

[2] আল-ফাহদ, নাসির ইবনে হামদ, আত-তিবইয়ান ফী কুফরী মান আয়ানাল আমরিকান (আমেরিকার সাহায্যকারীর কুফরের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য), পৃ. ১১

উল্লেখ্য, এ বইটির লেখক একজন সালাফী শায়খ। এটি বিন লাদেনের একটি প্রিয় বই ছিল। তিনি আবু মুসআব আয-যারকাভী (১৯৬৬-১৯৭০ খ্রি.)-কে বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করেন। ধারণা করা হয় যে, যারকাভী ‘জামাআতুত তাওহীদ ওয়াল জিহাদ’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন, যা ১৯৯০-এর দশকে ইরাকে আল-কায়েদা নামে পরিচিত লাভ করে।

[3] আজ-জাওয়াহিরী, আল-হাসাদুল মুর, পৃ. ২৯ (ফাতহুল মজীদ শারহু কিতাবিত তাওহীদ [পৃ. ৩৯৬] সূত্রে বর্ণিত)

[4] আহমদ আলী, জঙ্গিবাদের উত্থান বনাম ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা, পৃ. ৩-৪

[5] আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস সুনান = আস-সুনানুস সুগরা, মাকতাবুল মতবুআত আল-ইসলামিয়া, হলব, সিরিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৬ হি. = ১৯৮৬ খ্রি.), খ. ৭, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪২০৯

[6] একথাটি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীসরূপে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু হাদীসের কোনো গ্রন্থেই আমি কথাটি খুঁজে পাইনি। যতটুকু জানা যায়, আবু আলী আদ-দাক্কাক (মৃ. ৪০৬ হি.)ই সর্বপ্রথম একথাটি বলেন। (নববী, আল-মিনহাজ শারহু সাহীহি মুসলিম, খ. ২, পৃ. ২০।)

[7] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত-তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ৩৩৩, হাদীস: ১০৯৫, খ. ৬, পৃ. ৪৩২, হাদীস: ৩৮৮৯, খ. ৩৪, পৃ. ২৫১, হাদীস: ২০৬৫৩ ও পৃ. ২৫৩, হাদীস: ২০৬৫৬

[8] আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ৫০, হাদীস: ২৯৫৫

[9] (ক) ইবনে কসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৮ হি. = ১৯৮৮ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ২৬৯; (খ) ইবনুল আসীর, আল-কামিল ফিত তারীখ, দারুল কিতাব আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৭ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৯২

[10] বদরুদ্দীন আল-আইনী, উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবি, বয়রুত, লেবনান, ক. ২৪, পৃ. ১৭৯

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ