জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌসুমি ফল সব রোগের ওষুধ

মৌসুমি ফল সব রোগের ওষুধ

 ড. নুরুন নাহার দিলরুবা

লেখক: পুষ্টিবিদ ও শিক্ষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

আমাদের দেশে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। বৈচিত্র্যপূর্ণ আর রসাল সব মৌসুমি ফলের সমারোহ ঘটে এ সময়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি রসাল ফল শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এগুলো পানি, খাদ্য-আঁশ ও প্রাকৃতিক চিনিরও (সুক্রোজ, গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ) উৎস। সব মিলিয়ে এই ফলগুলো শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক। কাজেই করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণের সময় রোজকার খাদ্যতালিকায় কিছু মৌসুমি ফল অবশ্যই রাখুন। এবার জেনে নেওয়া যাক এ সময়ের কোন ফলের উপকারিতা কতটুকু।

আম: আমে বিদ্যমান ক্যারোটিনয়েডগুলো কোলন ও ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে। আমের পটাশিয়াম, খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পেকটিন খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এক দিন পরপর দৈনিক শর্করার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেতে পারেন।

জাম: কালো জামের অ্যান্থোসায়ানিন হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল কমিয়ে ত্বকের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। জামের খনিজ লবণ হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে। শর্করা কম থাকায় এবং খাদ্য-আঁশের উপস্থিতির কারণে কালো জাম খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিনই কালো জাম খেতে পারেন।

কাঁঠাল: রসাল ও সুমিষ্ট স্বাদের ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই ফলে শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম আছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বি ভিটামিনেরও ভালো উৎস এটি। কাঁঠালের বীজ ও কাঁচা কাঁঠালে রয়েছে যথেষ্ট প্রোটিন, ক্যালরি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও খাদ্য-আঁশ। কাঁঠালের ফাইটোকেমিক্যালসগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল দূর করে কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া এর ভিটামিন সি সর্দি-কাশি প্রতিহত করে, খাদ্য-আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

লিচু: মিষ্টি গন্ধ ও স্বাদের রসাল ফল লিচুতে রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এ ছাড়া এই ফলে বিদ্যমান কপার, আয়রন, ফোলেট লোহিত কণিকা তৈরিতে; বি ভিটামিনগুলো বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে; পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লিচুর খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো রোগপ্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আনারস: সুস্বাদু ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল হলো আনারস। সর্দি-কাশিতে আনারস খেলে কাজে দেয়। কৃমি সারাতেও এটি কার্যকর।

তরমুজ: তরমুজ আমাদের দেশের অতি পরিচিত এবং সবার প্রিয় ফল। এটি এখন প্রায় সব সময়ই পাওয়া যায়। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পানি। অতিরিক্ত ঘাম এবং তৃষ্ণা দূর করতে তরমুজের রস খুবই কার্যকর। কাজের কারণে ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের রস খেলে অল্প সময়েই ক্লান্তি দূর হয়। তরমুজের বীজ বেটে ঠান্ডা পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে যকৃৎ পরিষ্কার থাকে।

পেঁপে: পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপেতে আছে প্যাপাইন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পাকা পেঁপে খুব কার্যকর। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিসে সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।

পানিফল: পানিফল আরেকটি পুষ্টিকর ফল। এতে শতকরা ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে শ্বেতসার, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। ক্যালরিও অনেক এই ফলটিতে।

কলা: কলা প্রায় সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা অবশ্যই থাকা উচিত।

শসা: গরমে প্রশান্তি দেয় শসা। গরমে শরীরে যে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, তা শসার মাধ্যমে অনেকটা পূরণ করা যায়। শসা ত্বকের জন্য ভালো।

লেবু: পেট ফাঁপা, পেটের সমস্যা, ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে লেবু খুবই উপকারী। লেবুতে আছে ভিটামিন সি। জ্বর ও মুখের ঘা দূর করতে লেবুর ভূমিকা অনন্য।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ