জামেয়া ওয়েবসাইট

শুক্রবার-২৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরবি ভাষার ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

 

 মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী

        লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও আরবি ভাষাবিশেজ্ঞ

আমার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের আকাবের-আসলাফদের দৃষ্টিভঙ্গি একই। কুরআন-সুন্নাহর ভাষা আরবি, এ সম্বন্ধে জ্ঞান হাসিল করতে হলে অবশ্যই আরবি ভাষা ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। শরীয়া সম্পর্কে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হলেও আরবির ওপর ব্যুৎপত্তি অর্জনের বিকল্প নেই। এ জন্যই মূলত আরবি ভাষা চর্চা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি আরবির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমান যুগটা অনেকটা অনলাইন নির্ভর হওয়ার কারণে পৃথিবীর সবাই যেন আমরা একই ঘরের বাসিন্দা। তো ঘরের বড় একটি অংশ আরবি ভাষাভাষী। তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্যও আরবি জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আরব দেশের সঙ্গে যেহেতু আমাদের ধর্মীয়ভাবে মজবুত একটা বন্ধন আছে, অতএব তাদের রাজনীতি নিয়ে আমাদের জানতে হয়, ভাবতে হয়। এটা করতে গেলেও আরবি ভাষা সম্পর্কে জানাশোনার দরকার পড়ে। তাই আরবি ভাষা জানার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অনেক।

সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে গেলে আসলে প্রথমে দেখতে হবে আরবি ভাষা চর্চার লক্ষ্যটা কী। বিশেষত আমাদের কওমি মাদরাসায় আরবি শেখা হয় কুরআন-হাদীস বোঝার জন্য। কুরআন-হাদীস বোঝা বা ফিকহি কিতাবাদির ইবারত পড়ে তরজমা করাটাকেই এখানে যথেষ্ট মনে করা হয়। সে উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিচার করতে গেলে বাংলাদেশে আরবি ভাষার চর্চাটা সফলতার সঙ্গেই হচ্ছে। কিন্তু এ উদ্দেশ্যের বাইরেও আরবি জানার জরুরত আছে। একজন আলিমের জন্য আধুনিক আরবির ওপর দক্ষতা অর্জন আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দরসে নেজামিতে আরবি চর্চার যে ধারাটা চালু আছে, এ ধারায় ছাত্ররা কেবল দরসি কিতাবের আরবি বোঝার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, এর বাইরে আধুনিক আরবি বোঝা বা আরবিতে কথা বলায় তাঁরা খুব একটা দক্ষতা দেখাতে পারেন না। সম্প্রতি আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাকারিকুলামে কিন্তু আধুনিক আরবির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কওমি মাদরাসাগুলোতে সেটা এখনও চালু হয়নি।

এ সমস্যার সমাধান করতে হলে শিক্ষা কারিকুলামের দিকে নজর দিতে হবে। যারা আরবি ভাষার শিক্ষক তাদেরকে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া নাহু-সরফের যে কিতাবগুলো পড়ানো হয়, পড়ানোর সময় কুরআন-হাদীস থেকে উদাহরণ এনে এর বাস্তবিক প্রয়োগের যদি ব্যবস্থা করা হয় তবে আরবি ভাষাটা হৃদয়ঙ্গম করতে ছাত্রদের জন্য সুবিধা হবে।

কয়েক বছর আগে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছুটিতে এসে আমি এ ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম বেফাকের মরহুম মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে। কথা হয়েছিল বেফাকের আরও কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। তাঁদের কাছে আবেদন রেখেছিলাম আরবি ভাষার ওপর আরবি বিষয়ের শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। শিক্ষকরা যাতে আরবি বিষয় পড়ানোর সময় আরবি মাধ্যমটাকে গ্রহণ করতে পারেন। আরবি ক্লাসে আরবিতেই যেন ভাববিনিময় করতে পারেন, এর ওপর তাঁদেরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ যেন বেফাক নেয়। তাহলে যোগাযোগের যে আরবিটা, ‘আল-আরাবিয়াতুল ইত্তেসালিয়া’ যেটাকে বলা হয়, কওমি ছাত্রদের মধ্যে এটা সহজ হয়ে যাবে। বেফাক মহাসচিব তখন সে উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন কিন্তু পরে কেন যেন আর বাস্তবায়ন হলো না। তারপর তো হুজুরের ইন্তেকালই হয়ে গেল।

এখন সাধারণ শিক্ষা-মাধ্যমের অনেকে আরবি শিখতে চাইছেন। তাদের উদ্দেশে সর্বাগ্রে যে কথাটা বলতে চাই, যেহেতু এটা কুরআন-হাদীসের ভাষা, তাই ভাষা শেখার আগে সহিহ শুদ্ধভাবে আরবি পড়াটা শিখে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ভাষা শেখার জন্য ভাষা বিষয়ে বিজ্ঞ আলিমদের শরণাপন্ন থাকা দরকার। কারণ নিজে নিজে শিখতে গেলে অনেক সময় বুঝের তারতম্যের কারণে বিভ্রান্তির শিকার হতে হয়।

এখানে উলামায়ে কেরাম, যারা ভাষা বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের খেদমতে একটা কথা আরজ করতে চাই। আরবি শেখার জন্য এখন অনেক সাধারণ শিক্ষিত মানুষ আগ্রহী, কিন্তু আমাদের মাদরাসাগুলোতে তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। উলামায়ে কেরামকে এই ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ, মারকাজুল লুগাতিল আরাবিয়া বাংলাদেশসহ কিছু প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি জেনারেল শিক্ষিত ভাইদের আরবি ভাষা শেখার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য।

মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ ও মাওলানা শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী সাহেব উভয়ই বাংলাদেশের আরবি ভাষা চর্চার দুই দিকপাল। মৌলিক ক্ষেত্রে তাঁদের চিন্তাটা অভিন্ন। উভয়েই কুরআন-সুন্নাহর ভাষা আরবিটা ছাত্ররা যাতে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে, সেজন্যই কাজ করছেন। তবে আবু তাহের মেসবাহ সাহেব আরবি চর্চার ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীস থেকে উদাহরণ টেনে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এবং তাঁর কাজ মূলত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য। আর ফজলুল বারী সাহেব আরবি চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন আধুনিক আরবিকে। যাতে বৈশ্বিক একটা চেতনা শিক্ষার্থী অন্তরে রোপিত হয়ে যায়। তাঁর কাজ ছিল মূলত দাওরা ফারেগ শিক্ষার্থীদের জন্য। তাই বলা যায়, উভয়ের কাজের প্লাটফর্ম ভিন্ন এবং প্লাটফর্ম অনুযায়ী তাঁদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত সুন্দর এবং উপযোগী।

আরবি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ছাত্রদেরকে কুরআন-সুন্নাহর ভাষা আরবির ওপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করানো। বিশেষত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ ও শহীদুল্লাহ ফজলুল বারী সাহেব আধুনিক আরবির যে ধারা তৈরি করে গেছেন, সে অনুযায়ী কাজ করা। এছাড়া মদীনা বিশ্ববিদ্যালেয়র কারিকুলামে এ দেশের ছাত্রদেরকে আরবি ভাষার ওপর দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। তাছাড়া সাধারণ শিক্ষিতদের যারা আরবি শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য সুব্যবস্থাপনা করা এবং মসজিদের খতীবরা যাতে তাদের খুতবাগুলো বিশুদ্ধ ও চমৎকার আরবিতে ডেলিভারি দিতে পারেন, সেজন্য তাদের নিয়ে বিশেষ কোর্সের আয়োজন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মোরা থাকি

একসাথে মিলে মিশে

মাহাদী হাসান

মোরা হিন্দু মুসলমান

বুদ্ধ খ্রিস্টান,

থাকি এক সাথে

সদা মিলে  মিশে।

হিংসা বিদ্বেষ ঝগড়া ঝাটি

নাইকো মোদের মাঝে,

অনাবিল সুখ তাই

সবার কাছে  আছে।

খালের এপারে ওপারে

ছোট্ট  ছোট্ট নিড়ে

হিন্দু মুসলিম বাস করছি

হাজার বছর ধরে।

সেদিন ও রামেশ বাবু

এসেছিলো মোর ঘরে

চিড়া মুড়ি খই ভাজা গুলি

দিয়ে ছিলোম ঠুলি খুলে।

ইসলাম যখন শিখাইল মোরে

সবাইরে ভালোবাসো

তোমার সবাই আদম জাতি

এই কথাটি  মানো।

নবী যখন শিখাইল মোরে

অমুসলিম ও তোমার ভাই

ধর্ম ভিন্ন হলেও

কায়া ভিন্ন নয়।

তাইতো মোরা ভালোবাসি

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে

সুখে-দুঃখে বুকে টানি

পরম মায়াতে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ