মুক্তাদীর ওপর কি ফাতিহা পড়া ওয়াজিব?
মূল: শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.)
তাসহীল ও তারতীব
শায়খুল হাদীস মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী
অনুবাদ: মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী
অনুবাদক: লেখক, গবেষক ও পীর সাহেব বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম।
এই মাআসলা মুক্তাদী ফাতিহা পড়বে কি পড়বে না সে বিষয়ে। সিররি (চুপিচুপি পড়া যায়) ও জাহরি (উচ্চস্বরে পড়া যায়) নামাজের বিধান কি এক নাকি ভিন্ন? এ বিষয়ে মুজতাহিদীনে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। যার বিস্তারিত নিম্নরূপ:
ফকীহদের বিভিন্ন মাযহাব
১. হানাফীদের মাসলাক: ইমাম আযম w, ইমাম আবু ইউসুফ w ও ইমাম মুহাম্মদ w-এর নিকট সর্বাবস্থায়—নামাজ সিররি হোক বা জাহরি এবং মুক্তাদী ইমামের কিরাআত শুনতে পায় বা না পায়—মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পড়া জায়েয নয়, বরং মকরুহে তাহরীমী। হিদায়া-প্রণেতা যে ইমাম মুহাম্মদ w-এর একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন, যেখানে সিররি নামাজে সূরা ফাতিহা পড়া উত্তম (বলা হয়েছে)।[1] সেটি মুহাক্কিক ইবনে হুমাম w এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ইমাম মুহাম্মদ w-এর কিতাবুল আসার[2] ও মুয়াত্তা[3]র বক্তব্য তার পরিপন্থী।[4] আদ-দুররুল মুখতারে আছে,
وَالْـمُؤْتَمُّ لَا يَقْرَأُ مُطْلَقًا، وَلَا الْفَاتِحَةَ فِي السَّرِيَّةِ اتِّفَاقًا، وَمَا نُسِبَ لِـمُحَمَّدٍ ضَعِيْفٌ كَمَا بَسَطَهُ الْكَمَالُ، فَإِنْ قَرَأَ كُرِهَ تَحْرِيْمًا، وَتَصِحُّ فِي الْأَصَحِّ.
وَفِيْ «دُرَرِ الْبِحَارِ»: عَنْ «مَبْسُوْطِ خُوَاهَرْ زَادَهْ»، أَنَّهَا تَفْسُدُ وَيَكُوْنُ فَاسِقًا، وَهُوَ مَرْوِيٌّ عَنْ عِدَّةٍ مِنْ الصَّحَابَةِ، فَالْـمَنْعُ أَحْوَطُ، بَلْ يَسْتَمِعُ إذَا جَهَرَ، وَيُنْصِتُ إذَا أَسَرَّ لِقَوْلِ أَبِيْ هُرَيْرَةَ h: كُنَّا نَقْرَأُ خَلْفَ الْإِمَامِ فَنَزَلَ: [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204}».
‘মুক্তাদী একদমই কিরাআত পড়বে না এবং সিররি নামাজেও সর্বসম্মতভাবে ফাতিহা পড়বে না। আর যে বক্তব্য ইমাম মুহাম্মদ w-এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে তা দুর্বল, যেমন ইবনে হুমাম (w) বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যদি মুক্তাদী কিরাআত পড়ে, তবে তা মকরুহে তাহরীমী হবে। অবশ্য বিশুদ্ধ বক্তব্য অনুসারে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
দুরারুল বিহারে[5] আছে, খুওয়াহরজাদা[6]র মাবসূত থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে এবং কিরাআত পাঠকারী মুক্তাদী ফাসেক সাব্যস্ত হবে। বেশকিছু সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে, এজন্য নাপড়ার মধ্যেই অধিক সতর্কতা। বরং যখন ইমাম জোরে কিরাআত পড়েন তখন মুক্তাদী মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং যখন আস্তে কিরাআত পড়েন তখন চুপ থাকবে। দলিল হযরত আবু হুরায়রা h-এর ইরশাদ: ‘আমরা ইমামের পেছনে কিরাআত পড়তাম। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়: তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক।’[7]’[8]
আল্লামা শামী (w) তাঁর টীকায় লিখেছেন,
وَقَوْلُهُ: «فِي السَّرِيَّةِ» يُعْلَمُ مِنْهُ نَفْيُ الْقِرَاءَةِ فِي الْـجَهْرِيَّةِ بِالْأَوْلَىٰ، …، قَوْلُهُ: «اتِّفَاقًا» أَيْ بَيْنَ أَئِمَّتِنَا الثَّلَاثَةِ، قَوْلُهُ: «وَمَا نُسِبَ لِـمُحَمَّدٍ» أَيْ مِنْ اسْتِحْبَابِ قِرَاءَةِ الْفَاتِحَةِ فِي السَّرِيَّةِ احْتِيَاطًا، قَوْلُهُ: «كَمَا بَسَطَهُ الْكَمَالُ» حَاصِلُهُ أَنَّ مُحَمَّدًا قَالَ فِي كِتَابِهِ «الْآثَارِ»: «لَا نَرَى الْقِرَاءَةَ خَلَفَ الْإِمَامِ فِي شَيْءٍ مِنْ الصَّلَوَاتِ يَجْهَرُ فِيْهِ أَوْ يُسِرُّ»، وَدَعْوَى الْاِحْتِيَاطِ مَمْنُوْعَةٌ، بَلْ الْاِحْتِيَاطُ تَرْكُ الْقِرَاءَةِ، لِأَنَّهُ الْعَمَلُ بِأَقْوَى الدَّلِيلَيْنِ، وَقَدْ رُوِيَ أَنَّهَا تَفْسُدُ وَيَكُوْنُ فَاسِقًا، وَهُوَ مَرْوِيٌّ عَنْ عِدَّةٍ مِنْ الصَّحَابَةِ، فَالْـمَنْعُ أَحْوَطُ.
‘আদ-দুররুল মুখতার প্রণেতা যে فِي السَّرِيَّةِ বলেছেন, তা থেকে স্বাভাবিকভাবে বুঝে আসে যে, জাহরি নামাজে কিরাআত নিষিদ্ধ হবে। আর ‘সর্বসম্মতি’ দ্বারা উদ্দেশ্য আমাদের তিন ইমামের (ইমাম আবু হানিফা w, ইমাম আবু ইউসুফ w ও ইমাম মুহাম্মদ w) ঐকমত্য। যে বক্তব্য ইমাম মুহাম্মদ w-এর প্রতি সম্বন্ধ করা হয় তা দ্বারা উদ্দেশ্য সিররি নামাজে সতর্কতাবশত ফাতিহা পড়া মুস্তাহাব। আল্লামা ইবনে হুমাম w-এর খণ্ডন করার সারাংশ হচ্ছে যে, ইমাম মুহাম্মদ w তাঁর কিতাবুল আসারে লিখেন,
«لَا نَرَى الْقِرَاءَةَ خَلَفَ الْإِمَامِ فِي شَيْءٍ مِنْ الصَّلَوَاتِ يَجْهَرُ فِيْهِ أَوْ يُسِرُّ».
‘আমরা কোনো নামাজেই ইমামের পেছনে কিরাআত পড়া জায়েয মনে করি না, সেটি জাহরি নামাজ হোক বা সিররি নামাজ।’[9]
তাছাড়া একথা বলা যে, এতেই সতর্কতা—এটা গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সতর্কতা হচ্ছে কিরাআত না পড়ার মধ্যেই। কেননা দুই দলিলের মধ্যে থেকে শক্তিশালী দলিলের ওপর আমল করাই শ্রেয়। তাছাড়া কিরাআত পড়ার দ্বারা নামাজ ফাসিদ হওয়া অনেক সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে। অতএব কিরাআত নাজায়েয হওয়াই শক্তিশালী।’[10]
২. (মালিকী মাযহাব:) ইমাম মালিক w-এর নিকট জাহরি নামাজে মুক্তাদীর জন্য ফাতিহা পড়া মকরুহ, চায় সে ইমামের কিরাআত শুনতে পায় বা শুনতে না পায়। আর সিররি নামাজে ফাতিহা পড়া মুস্তাহাব। কিতাবুল ফিকহি আলাল মাযাহিবিল আরবাআয় আছে,
الْـمَالِكِيَّةُ قَالُوْا: تُكْرَهُ الْقِرَاءَةُ لِلْمَأْمُوْمِ فِي الصَّلَاةِ الْـجَهْرِيَّةِ، وَإِنْ لَـمْ يَسْمَعْ أَوْ سَكَتَ الْإِمَامُ.
‘মালিকীরা বলেন, জাহরি নামাজে মুক্তাদীর জন্য কিরাআত পড়া মকরুহ, যদিও তিনি ইমামের কিরাআত শুনে না কিংবা ইমাম নীরবতা অবলম্বন করে থাকেন।’[11]
আল্লামা দারদীর w-এর আশ-শারহুস সগীরে আছে,
وَرَابِعُهَا: فَاتِحَةٌ لِإِمَامٍ وَفَذٍّ؛ أَيْ مُنْفَرِدٍ لَا مَأْمُومٍ، لِأَنَّ الْإِمَامَ يَحْمِلُهَا عَنْهُ.
‘আর নামাজের চতুর্থ ফরজ হচ্ছে ফাতিহা পাঠ করা। ইমাম ও একাকী নামাজির জন্য, মুক্তাদীর জন্য নয়। কেননা ইমাম মুক্তাদীর পক্ষ থেকে ফাতিহা পড়ার দায়িত্ব বহন করেন।’[12]
وَنُدِبَ قِرَاءَةٌ خَلْفَ إمَامٍ سِرًّا فِيْهِ: أَيْ السِّرِّ؛ أَيْ فِي الصَّلَاةِ السِّرِّيَّةِ، وَأَخِيْرَةِ الْـمَغْرِبِ، وَأَخِيْرَتَيْ الْعِشَاءِ.
‘ইমামের পেছনে সিররি নামাজে আস্তে কিরাআত পাঠ করা মুস্তাহাব। মাগরিবের শেষ রকআতে এবং এশার শেষ দুই রকআতে।’[13]
৩. (শাফিয়ী মাযহাব🙂 ইমাম শাফিয়ী w-এর পূর্বের (পুরোনো) বক্তব্য ছিল এই যে, জাহরি নামাজে মুক্তাদীর ওপর ফাতিহা ওয়াজিব নয়। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে মৃত্যুর দুই বছর আগে যখন তিনি মিসর অবস্থান করছিলেন তখন তিনি নতুনভাবে বলেছেন যে, জাহরি নামাজেও মুক্তাদীর ওপর ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। শাফিয়ীদের নিকট ফতওয়া এই নতুন মতের ওপরই। আর সিররি নামাজে কোনো মতানৈক্য ছাড়াই মুক্তাদীর ওপর ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। শারহুল মুহাযযাবে আছে,
وَهَلْ تَجِبُ عَلَى الْـمَأْمُوْمِ؟ يُنْظَرُ فِيْهِ: فَإِنْ كَانَ فِيْ صَلَاةٍ يُسِرُّ فِيْهَا بِالْقِرَاءَةِ وَجَبَتْ عَلَيْهِ، وَإِنْ كَانَ فِيْ صَلَاةٍ يُجْهَرُ فِيْهَا فَفِيْهِ قَوْلَانِ: قَالَ فِي «الْأُمِّ» وَالْبُوَيْطِيِّ: يَجِبُ، … وَقَالَ فِي الْقَدِيْمِ: لَا يَقْرَأُ.
‘মুক্তাদীর ওপর কি ফাতিহা ওয়াজিব? এ প্রসঙ্গে দেখতে হবে, যদি সেটি সিররি নামাজ হয় তাহলে তার ওপর ফাতিহা ওয়াজিব। আর যদি জাহরি নামাজ হয় তাহলে এ ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। ইমাম শাফিয়ী (w) কিতাবুল উম্মে[14] ও বূওয়ায়তী[15] (w) বলেন, ওয়াজিব। আর ইমাম শাফিয়ী (w)-এর প্রাচীন মত হচ্ছে, মুক্তাদী কিরাআত পড়বে না।’[16]
وَقَالَ النَّوَوِيُّ فِيْ شَرْحِهِ: قَدْ ذَكَرْنَا أَنَّ مَذْهَبَنَا وُجُوْبُ قِرَاءَةِ الْفَاتِحَةِ عَلَى الْـمَأْمُوْمِ فِيْ كُلِّ الرَّكَعَاتِ مِنْ الصَّلَاةِ السِّرِّيَّةِ وَالْـجَهْرِيَّةِ، وَهَذَا هُوَ الصَّحِيْحُ عِنْدَنَا.
‘আর ইমাম নববী (w) বলেন, আমরা উল্লেখ করেছি যে, আমাদের মাযহাব হচ্ছে, সিররি বা জাহরি নামাজের সকল রকআতে মুক্তাদীর ওপর ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। এটিই আমাদের নিকট বিশুদ্ধ মাযহাব।’[17]
৪. (হাম্বলী মাযহাব:) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল w-এর নিকট জাহরি নামাজে যদি মুক্তাদী ইমামের কিরাআত শুনতে পায় তাহলে ফাতিহা পাঠ জায়েয নয়। আর যদি সে এতটা দূরত্বে থাকে যে, সে পর্যন্ত ইমামের আওয়াজ পৌঁছায় না, তাহলে ফাতিহা পাঠ জায়েয আছে। আর জাহরি নামাজে ইমামের নীরবতার সময় এবং সিররি নামাজে ফাতিহা পাঠ মুস্তাহাব। মুখতাসারে খিরাকীতে আছে,
وَالْـمَأْمُوْمُ إذَا سَمِعَ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ فَلَا يَقْرَأُ بِالْـحَمْدِ وَلَا بِغَيْرِهَا، وَالْاِسْتِحْبَابُ أَنْ يَقْرَأَ فِيْ سَكَتَاتِ الْإِمَامِ وَفِيْمَا لَا يُجْهَرُ فِيْهِ، فَإِنْ لَـمْ يَفْعَلْ فَصَلَاتُهُ تَامَّةٌ، لِأَنَّ «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةً»، فَإِنْ لَـمْ يَسْمَعْهُ لِبُعْدٍ، قَرَأَ.
‘মুক্তাদী যখন ইমামের কিরাআত শুনতে পায় তখন না সূরা ফাতিহা পড়বে, না অন্য কোনো সুরা। আর ইমামের নীরবতার মধ্যে ও সিররি নামাজে পড়া মুস্তাহাব। অতএব যদি মুক্তাদী ফাতিহা নাও পড়ে তাহলেও তার নামাজ পুরো হয়ে যাবে। কেননা ‘যার ইমাম আছে তবে ইমামের কিরাআত তার কিরাআত বলে গণ্য হবে।’[18] আর যদি মুক্তাদী দূরে অবস্থানের কারণে কিরাআত শুনতে না পায়, তখন সূরা ফাতিহা পড়বে।’[19]
দলিলসমূহ
মুক্তাদীর কিরাআত বিষয়ে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ও অত্যন্ত স্পষ্ট দলিল হচ্ছে আল্লাহ পাকের এই নির্দেশনা:
وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۰۰۲۰۴
‘যখন কুরআন পড়া হয় তখন তোমরা সবাই সেদিকে কান লাগিয়ে রেখ এবং নীরব থেক, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষিত হয়।’[20]
এই আয়াতে পাক দুটি চূড়ান্ত ফয়সলা দিচ্ছে যে, ইমাম জোরে কিরাআত পড়লে মুক্তাদীর উচিত তা শুনবে। আর ইমাম আস্তে পড়লে সে খামোশ থাকবে।
রেওয়ায়েতসমূহ
আর এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ দুভাবে বিবৃত হয়েছে।
- প্রথমত সেসব হাদীস যা দ্বারা জানা যায় যে, মুক্তাদী কিরাআত পড়তে পারে।
- দ্বিতীয়ত সেসব হাদীস যা দ্বারা জানা যায় যে, মুক্তাদীর জন্য ফাতিহা না পড়ে খামোশ থাকা উচিত।
বৈধতার রেওয়ায়েতসমূহ
হযরত উবাদা ইবনুস সামিত h বর্ণনা করেছেন যে, একবার নবী করীম D ফজরের নামাজ পড়ালেন, যেখানে তাঁর জন্য কিরাআত পড়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নামাজ শেষে তিনি মুক্তাদীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেন যে, ‘আমার মনে হয়, তোমরা ইমামের পেছনে কিরাআত পড়ছিলে।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জি হ্যাঁ! আমরা পড়েছি। হুযুর আকরম D ইরশাদ করেন,
«لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ، فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِهَا».
‘সূরা ফাতিহা ছাড়া এমনটা করো না। কেননা সেটি পড়া ছাড়া নামাজ হয় না।’[21]
প্রথমত: এ হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম তিরমিযী w এটিকে স্রেফ হাসান বলেছেন। ইমাম তিরমিযী (w)-এর হাসান তা নয়, যার সংজ্ঞা উসূলে হাদীসে করা হয়েছে। যাকে حَسَنٌ لِذَاتِهِ (হাসান লি-যাতিহি) বলা হয়। বরং ইমাম তিরমিযী w কিতাবুল ইলালে হাসানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করছেন যে,
قَالَ أَبُوْ عِيْسَىٰ: وَمَا ذَكَرْنَا فِيْ هَذَا الْكِتَابِ حَدِيْثٌ حَسَنٌ، فَإِنَّمَا أَرَدْنَا بِهِ حُسْنَ إِسْنَادِهِ عِنْدَنَا، كُلُّ حَدِيْثٍ يُرْوَىٰ لَا يَكُوْنُ فِيْ إِسْنَادِهِ مَنْ يُتَّهَمُ بِالْكَذِبِ، وَلَا يَكُوْنُ الْـحَدِيْثُ شَاذًّا، وَيُرْوَىٰ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ نَحْوَ ذَلِكَ، فَهُوَ عِنْدَنَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ.
‘ইমাম তিরমিযী (w) বলেন, আমরা আমাদের সুনানে যেখানেই حَدِيْثٌ حَسَنٌ বলেছি, সেখানে এর দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য স্রেফ সনদের শ্রেয়তা। সেটিও আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ মোতাবেক। প্রত্যেক সেসব বর্ণিত হাদীস যার সনদে মিথ্যাবাদিতার অভিযুক্ত কোনো রাবী নেই, হাদীসটি শাযও নয় এবং একাধিক সনদে বর্ণিত হবে। এমন হাদীসই আমাদের নিকট حَدِيْثٌ حَسَنٌ।’[22]
মোদ্দাকথা ইমাম তিরমিযী (w)-এর হাসান حَسَنٌ لِذَاتِهِ থেকেও নিম্নস্তরের। সাধারণ যয়ীফ হাদীসকেও তিনি হাসান বলেছেন।
দ্বিতীয়ত: উপর্যুক্ত হাদীস দ্বারা মুক্তাদীর ওপর ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না, স্রেফ জায়েয প্রমাণিত হয়। কেননা নাহি (নিষেধাজ্ঞা) দ্বারা যে ইসতিসনা (ব্যতিক্রম) হয় তা ইবাহাত (বৈধতার) জন্য হয়ে থাকে, উজূব (আবশ্যিক হওয়ার) জন্য নয়। যেমন- কোনো ব্যক্তি নিজের শিষ্যদেরকে বলেছেন যে, এখানে কেউ বসবে না, কিন্তু আব্বাস এর ব্যতিক্রম। এর দ্বারা আব্বাসের জন্য স্রেফ বসা জায়েয প্রমাণিত হয়।
আর হাদীস শরীফের শেষ অংশ: «فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ» إلخ (যে সূরা ফাতিহা পড়বে না ত তার নামাজ হবে না) এই হাদীস শরীফের অংশ নয়, বরং তা হযরত উবাদা h-এর আরেকটি স্বতন্ত্র হাদীস। যা অত্যন্ত উঁচু মানের এবং যেটি সিহাহ সিত্তাহ (হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাব)-এর রচয়িতারা বর্ণনা করেছেন। হযরত উবাদা h নিজের পক্ষ থেকে সেই দ্বিতীয় হাদীসকে এ হাদীসের সাথে মিলিয়েছেন।
(প্রথম দলিল:) এর সবচেয়ে বড় দলিল হচ্ছে যে, যদি এমন না মানা হয়, তাহলে নববী বক্তব্যের প্রথম ও শেষাংশের সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি হয়। «إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ» দ্বারা স্রেফ বৈধতা প্রমাণিত হয় এবং «لَا صَلَاةَ …» الخ দ্বারা ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয়। আর উভয়ের মধ্যে সাংঘর্ষিতা স্পষ্ট।
দ্বিতীয় দলিল হচ্ছে, ইমাম তিরমিযী w উক্ত হাদীসের পরে বলেন,
حَدِيْثُ عُبَادَةَ حَدِيْثٌ حَسَنٌ، وَرَوَىٰ هَذَا الْـحَدِيْثَ الزُّهْرِيُّ، عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ الرَّبِيْعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ»، وَهَذَا أَصَحُّ.
‘হযরত উবাদা (h) বর্ণিত হাদীসটি হাসান। মাহমুদ ইবনুর রাবী (w) উবাদা ইবনুস সামিত (h) সূত্রে ইমাম যুহরী (w) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম D ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না, তার সালাত হবে না।’ এই রেওয়ায়েতটি সবচেয়ে সহীহ।’[23]
অর্থাৎ হযরত উবাদা (h)-এর হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ হচ্ছে সেই হাদীসটি যা «لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ» শব্দে বর্ণিত, যা একটি স্বতন্ত্র হাদীস। এই হাদীসের অংশ নয়। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, «فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ» إلخ অংশটুকু হযরত উবাদা h কারণ হিসেবে বৃদ্ধি করেছেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
উল্লিখিত হাদীস ছাড়া ফাতিহা ফাঠের প্রবক্তাদের কাছে আর কোনো দলিল নেই। আর এর অবস্থা আপনারা পড়েছেন। এজন্য ইমাম বুখারী w এটি তাঁর সহীহ গ্রন্থে আনেননি। একান্ত বাধ্য হয়ে হযরত উবাদা (h)-এর দ্বিতীয় ব্যাপকতাবোধক হাদীস অর্থাৎ «لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ» দ্বারা ফাতিহা ওয়াজিব হওয়ার দলিল দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দলিল। কেননা সেই হাদীসটি নামাজিদের সাথে প্রাসঙ্গিকই নয়, বরং সেটি অন্য এক মাসআলার সাথেই প্রাসঙ্গিক। আর সেই মাসআলাটি হচ্ছে যে, সূরা ফাতিহার সাথে নামাজের সম্পর্ক কী? অর্থাৎ নামাজে সূরা সূরা ফাতিহা পাঠ কি মুস্তাহাব বা সুন্নত কিংবা ওয়াজিব—কী? যেহেতু হাদীসটি নেহায়েত সহীহ ও সরীহ, কিন্তু খবরে ওয়াহেদ। তাই হানাফীরা এ হাদীস দ্বারা নামাজে ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব সাব্যস্ত করেন। আর আয়াতে পাক: فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُۙ ۰۰۲۰ (কুরআনে যাই তোমাদের জন্য সহজ, তাই আবৃত্তি করো)[24] দ্বারা কিরাআত পাঠ করাকে ফরজ সাব্যস্ত করেন।
ফাতিহা পাঠের প্রবক্তাদের কাছে যেহেতু কোনো সহীহ ও সরীহ রেওয়ায়েত নেই, তাই তারা সাধারণভাবে এ রেওয়ায়েত দ্বারা দলিল দেন এবং বলে থাকেন যে, যেহেতু হাদীস মুতলাক (সাধারণ) ও আম (ব্যাপক) তাই সকল নামাজি এমনকি মুক্তাদীও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু আমরা বলেছি যে, এ রেওয়ায়েত নামাজিদের সম্পর্কেই নয়। তাহলে আম-খাসের কথা কীভাবে আসে?
আর একথা আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে বলছি না, বরং হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ h এই ব্যাপকতাবোধক হাদীসের এ উদ্দেশ্যই বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষ্য তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে,
«مَنْ صَلَّىٰ رَكْعَةً لَـمْ يَقْرَأْ فِيْهَا بِأُمِّ القُرْآنِ فَلَمْ يُصَلِّ، إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ وَرَاءَ الْإِمَامِ».
‘যে ব্যক্তি এমন কোনো রকআত পড়ল যাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না, তো সে নামাজই পড়ল না, কিন্তু যদি সে ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে।’[25]
এ হাদীস শরীফ সনদের দিক থেকে অত্যন্ত উঁচু মানের। ইমাম তিরমিযী w এটি হাসান সহীহ বলেছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল w হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ h-এর একথার ব্যাখ্যা করেছেন যে,
قَالَ أَحْمَدُ: فَهَذَا رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ تَأَوَّلَ قَوْلَ النَّبِيِّ ﷺ: «لَا صَلَاةَ لـِمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ».
‘ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল) w বলেন, তিনি (হযরত জাবির h) একজন সাহাবী, যিনি হুযুর আকরম D-এর ইরশাদ: «لَا صَلَاةَ لـِمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ» (যে ফাতিহা পড়ে না তার নামাজই নেই)-এর তাৎপর্য বর্ণনা করেছেন যে, এই হাদীস এককী নামাজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’[26]
আর ইমাম বুখারী w তাঁর সহীহগ্রন্থে বলেন, ব্যাপকতাবোধক হাদীস মুক্তাদীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এখন বলুন তো, আমরা কার কথা মানবো? হযরত জাবির h-এর, নাকি ইমাম বুখারী w-এর? স্পষ্টত সাহাবীর কথার সামনে অন্য কারও কথা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেননা কালামে নুবুওয়াতকে অন্যদের তুলনায় সাহাবায়ে কেরামই ভালো বুঝতে পারেন।
নিষেধারোপের রেওয়ায়েতসমূহ
মুক্তাদীর জন্য কিরাআতের প্রয়োজন নেই, বরং কিরাআত মকরুহ। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। যার বিবরণ নিম্নরূপ:
প্রথম রেওয়ায়েত: পাঁচজন সাহাবায়ে কেরাম থেকে হুযুর আকরম D-এর এ ইরশাদ বর্ণিত আছে যে,
«مَنْ كَانَ لَهُ إمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ».
‘যে ব্যক্তি মুক্তাদী হয়ে নামাজ পড়ে, ইমামের কিরাআত তারই কিরাআত হবে।’[27]
আর সূরা ফাতিহাও কিরাআতের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য যেভাবে ইমামের পড়া সূরাসমূহ মুক্তাদীর অংশ গণ্য হয় ফাতিহাও সে হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় রেওয়ায়েত: হযরত আবু হুরায়রা h ও হযরত আবু মুসা আশআরী h থেকে বর্ণিত,
«إِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوْا».
‘যখন ইমাম কিরাআত পড়ে তোমরা চুপ থাক।’[28]
প্রথম হাদীস থেকে মুক্তাদীর জন্য ফাতিহা প্রয়োজনীয় নয় সেটি প্রমাণিত হয়েছে। আর দ্বিতীয় হাদীস থেকে মুক্তাদীর জন্য কিরাআতের প্রতি নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়। উভয় হাদীসের সমন্বয়ে সেই কথাই প্রমাণিত হয় পবিত্র কুরআনের আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে)[29] থেকে প্রমাণিত হয়েছিল যে, মুক্তাদীকে ইমামের কিরাআত শুনতে হবে এবং খামোশ থাকতে হবে।
বৈধতা ও নিষেধাজ্ঞায় সাংঘর্ষিকতা নেই
যদি এ সন্দেহ করা হয় যে, এক রেওয়ায়েত থেকে মুক্তাদীর জন্য ফাতিহা পড়ার বৈধতা প্রমাণিত হয়, আরেক রেওয়ায়েত থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়। তা হলে তো রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে সাংঘর্ষিকতা তৈরি হয়ে গেল। কেননা নিষেধাজ্ঞা তো অবৈধতারই নাম। বৈধতা ও অবৈধতার মধ্যে সাংঘর্ষিকতা পরিষ্কার।
এর জবাব হচ্ছে, সাংঘর্ষিকতা ও বিরোধের জন্য আটসমন্বয়ের শর্ত প্রযোজ্য। যার মধ্যে একটি সময়ের সমন্বয়ও অর্থাৎ উভয় হুকুম একই সময়ে হয়, তবেই সাংঘর্ষিকতা হবে। কিন্তু যদি এক হুকুম পূর্ববর্তীকালে হয় আর অপর হুকুম পরবর্তীকালের হয় তাহলে সাংঘর্ষিকতা অব্যাহত থাকে না। এখানে এ পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। প্রাক-ইসলামের যুগে মুক্তাদী ফাতিহা ও সূরা সবই পড়ত। প্রথমে সূরা পড়তে নিষেধ করা হয় আর ফাতিহার বৈধতা অব্যাহত রাখা হয়। অতঃপর وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে)[30] নাযিল হয় তখন ফাতিহার বৈধতাও সমাপ্ত করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে জাহরি নামাজসমূহে মুক্তাদীরা সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করে। সুতরাং বৈধতার রেওয়ায়েত এবং নিষেধারোপের দলিলসমূহে সাংঘর্ষিকতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তাই হযরত (শায়খুল হিন্দ) u জবাবে আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে)[31] দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
আয়াতে করীমা বিলুপ্তকারী হওয়ার দলিল
এখন কথা হচ্ছে, কুরআনের উপর্যুক্ত আয়াতে করীমা বিলুপ্তকারী এবং মুক্তাদীর জন্য ফাতিহা পাঠের বৈধতার রেওয়ায়েতসমূহ বিলুপ্ত এর দলিল কী? তাহলে জানা প্রয়োজন যে, এর তিনটি দলিল রয়েছে।
প্রথম দলিল: শানে নুযূলের বিভিন্ন রেওয়ায়েত রয়েছে, সেগুলো থেকে কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হল:
- হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে আব্বাস k বলেন,
صَلَّى النَّبِيُّ ﷺ، فَقَرَأَ خَلْفَهُ قَوْمٌ، فَنَزَلَتْ [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204}.
‘নবীয়ে আকরম D নামাজ পড়ান। কিছু লোক তাঁর পেছনে কিরাআত পড়লে আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক)[32] নাযিল হয়।’[33]
২. হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা’ব কুরাযী, যিনি বিশিষ্ট তাবিয়ীদের একজন তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا قَرَأَ فِي الصَّلَاةِ أَجَابَهُ مَنْ وَرَاءَهُ؛ إِذَا قَالَ: «بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ»، قَالُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ، حَتَّىٰ تَنْقَضِيَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَالسُّوْرَةُ، فَلَبِثَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَلْبَثَ، ثُمَّ نَزَلَتْ: [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204} الآية، فَقَرَأَ وَأَنْصِتُوْا.
‘রসুলে আকরম D যখন নামাজে কুরআনে করীম পড়তেন তখন মুক্তাদীরা এর জবাব দিতেন। যখন হুযর D বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম পড়তেন তখন মুক্তাদীরাও অনুরূপ বলতেন। এভাবে ফাতিহা ও সূরার শেষ পর্যন্ত পড়তেন। এ অবস্থায় যতদিন আল্লাহ চেয়েছেন চলছিল। অতঃপর যখন আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক, যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়)[34] নাযিল হয় তখন হুযুর D পড়তেন এবং লোকজন নীরব থাকতেন।’[35]
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল h-কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, যদি কোনো ব্যক্তি কুরআন পড়ে, তাহলে তা শোনা ও নীবরতা পালন করা কি ওয়াজিব? তিনি বললেন, না। অতঃপর বলেছেন যে,
إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204} فِيْ قِرَاءَةِ الْإِمَامِ، إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَاسْتَمِعْ لَهُ وَأَنْصِتْ.
‘আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক)[36] কেবল ইমামের কিরাআত বিষয়ে নাযিল হয়েছে। ইমাম যখন পড়বে তখন আপনি শুধু শুনবেন এবং নীরব থাকবেন।’[37]
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ h একবার তাঁর শিষ্যদের নামাজ পড়ালেন। তিনি তাঁদের কাউকে কাউকে পেছনে কিরাআত পড়তে শুনেন। তিনি নামাজ শেষে বললেন যে,
أَمَا آنَ لَكُمْ أَنْ تَفْهَمُوْا؟ أَمَا آنَ لَكُمْ أَنْ تَعْقِلُوا؟ [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204} كَمَا أَمَرَكُمُ اللهُ.
‘তোমাদের কি এখনও বোঝার সময় হয়নি? তোমাদের কি এখনও বোধ করার সময় আসেনি? ‘যখন কুরআনে করীম পড়া হয় তখন শোন ও নীরব থেক।’[38] যেভাবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।’[39]
৫. আবুল আলিয়া বলেন, যখন নবীয়ে আকরম D সাহাবায়ে কেরামকে নামাজ পড়াতেন তখন হুযুর Dও পড়তেন এবং হুযুর D-এর পেছনে সাহাবায়ে কেরামও পড়তেন। অতঃপর আয়াতে করীমা: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক)[40] নাযিল হয়, তখন লোকেরা নীরবতা অবলম্বন করেন এবং হুযুর আকরম D একাই পড়তে থাকেন।[41]
দ্বিতীয় দলিল: হচ্ছে, যেসব হযরাত মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব বা মুস্তাহাব বলে থাকেন যেমন মুহাদ্দিসীনে ইযাম, হাম্বলী ও শাফিয়ীগণ। এ সকল হযরাতও আয়াতে পাকের আমলে রূপান্তরের চিন্তা থেকে গাফেল নন। তাই মুহাদ্দিসীন ও হাম্বলীগণ এর জন্য প্রস্তাব করেছেন যে, মুক্তাদীগণ ইমামের বিরতির সময় পড়বে। আর শাফিয়ী হযরাতের প্রস্তাব হচ্ছে যে, ফাতিহা পড়া শেষ করে ইমাম নীবর হয়ে যাবেন, যাতে মুক্তাদীরা ফাতিহা পড়তে পারে।
স্পষ্টত, এ দুই প্রস্তাবই একান্ত বাধ্যগত। হাদীসসমূহে কোথাও এর আলোচনা নেই। মারফু হাদীসসমূহে দীর্ঘ বিরতি একটি মাত্র জায়গায় প্রমাণিত। তাও তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাআত শুরু করার পূর্বে সানা পড়ার জন্য। ফাতিহার পর বিরতি এবং সূরা পাঠের পর বিরতির রেওয়ায়েতসমূহ মুখতারিব[42]।[43]
যা হোক, সেই সকল হযরাতের এই প্রস্তাব আয়াতে পাকের আমলে রূপান্তরের চিন্তায় নয় তো আর কি? অতএব বোঝা গেল, আয়াতে পাক অনাগ্রগণ্য। কেননা এর আমলে রূপান্তর নিয়ে ফাতিহা পাঠের প্রবক্তারাও চিন্তিত।
তৃতীয় দলিল: প্রায় নব্বই শতাংশের ঐকমত্য যে, ফাতিহা পাঠ ফরজ নয়। ঐকমত্যও কোনো কারণ ছাড়া হতে পারে না। ঐকমত্য ও সর্বসম্মতির ভিত্তিও আয়াতে করীমাটির বিলুপ্তকারী হওয়ার। বিশাল একদল বিশেষজ্ঞের ইজমা প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতসমূহ লক্ষ করুন:
১. ইমাম শা’বী w বলেন, আমার সঙ্গে ৭০ জন বদরী সাহাবায়ে কেরামের সাক্ষাৎ হয়েছে, যাঁদের সকলেই মুক্তাদীকে ইমামের পেছনে কিরাআত পড়তে নিষেধ করতেন।[44]
২. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল w বলেন,
مَا سَمِعْنَا أَحَدًا مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ يَقُوْلُ: إنَّ الْإِمَامَ إذَا جَهَرَ بِالْقِرَاءَةِ لَا تُجْزِئُ صَلَاةُ مَنْ خَلْفَهُ إذَا لَـمْ يَقْرَأْ، وَقَالَ: هَذَا النَّبِيُّ ﷺ وَأَصْحَابُهُ وَالتَّابِعُوْنَ، وَهَذَا مَالِكٌ فِيْ أَهْلِ الْـحِجَازِ وَهَذَا الثَّوْرِيُّ فِيْ أَهْلِ الْعِرَاقِ، وَهَذَا الْأَوْزَاعِيُّ فِيْ أَهْلِ الشَّامِ، وَهَذَا اللَّيْثُ فِيْ أَهْلِ مِصْرَ، مَا قَالُوْا لِرَجُلٍ صَلَّىٰ خَلْفَ الْإِمَامِ، وَقَرَأَ إمَامُهُ، وَلَـمْ يَقْرَأْ هُوَ: صَلَاتُهُ بَاطِلَةٌ.
‘আমরা কোনো মুসলমান থেকে শুনিনি যে, যখন ইমাম উচ্চস্বরে কিরাআত পড়ে তখন যে মুক্তাদীর কিরাআত পড়ে না তার নামাজ হয়নি। তিনি আরও বলেছেন যে, এই নবীয়ে আকরম D, তাঁর সাহাবা, তাবিয়ীন, এই ইমাম মালিক (w) হিজাযে, সুফিয়ান সাওরী (w) ইরাকে, এই ইমাম আওযায়ী (w) সিরিয়ায় এবং লায়স ইবনে সা’দ (w) মিসেরে—তাঁদের কেউই (একথা) বলেননি যে, যে ব্যক্তি নামাজ পড়েছেন, ইমাম কিরাআত পড়েছেন বটে, কিন্তু তিনি পড়েননি তার নামাজ বাতিল।’[45]
দেখুন, আমরা তো নব্বই ভাগ বলেছিলাম, ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল w) তো একশ ভাগ বলছেন। আর এতই স্পষ্টতার সাথে বলেছেন যে, ‘আমরা কোনো মুসলমান থেকে শুনিনি।’ সুতরাং সেসব লোকদের নিয়ে একটু চিন্তা করুন, যারা মুক্তাদীর ওপর ফাতিহাকে ফরজ ঘোষণা করেন, তারা কোন ঘরানার?
২. ইমাম নাখয়ী w বলেন,
«أَوَّلُ مَنْ أَحْدَثَ الْقِرَاءَةَ خَلْفَ الْإِمَامِ، وَكَانُوْا لَا يَقْرَءُوْنَ».
‘সর্বপ্রথম কাজ যা মানুষ নতুন তৈরি করেছে তা হচ্ছে ইমামের পেছনে কিরাআত পাঠ। অথচ সলফে সালিহীন পড়তেন না।’[46]
বাতিল ব্যাখ্যা
ফাতিহা পাঠের প্রবক্তাগণ বলে থাকেন যে, আয়াতে করীমাটি জুমার খুতবার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ যখন খুতবায় কুরআনে করীম পাঠ হয় তখন লোকজনের নীরবতা অবলম্বন এবং শোনা জরুরি। অথবা একথা বলা হয় যে, আয়াতে করীমাটি নামাজে কথাবার্তা বিষয়ে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে নামাজে কথা বলা জায়েয ছিল। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর কথাবার্তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে এ দুই ব্যাখ্যাই বাতিল।
এ ব্যাপারে যেসব রেওয়ায়েত রয়েছে তা আয়াতে করীমার প্রকৃত শানে নুযূল নয়। বরং সেসব স্রেফ একথা বলার জন্য যে, জুমার খুতবায়ও কুরআনে করীম শোনার একই বিধান। অনুরূপভাবে ইমামের পেছনে কথা বলার বিধানও একই। কেননা সাহাবায়ে কেরাম নিশ্চিত সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও نَزَلَتْ فِيْ كَذَا (এ বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে) শব্দের ব্যবহার করেন। যেমন হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ সাহেব দেহলভী (রহ) আল-ফাওযুল কবীরে এটি স্পষ্ট করেছেন।[47]
তাছাড়া রেওয়ায়েতসমূহে এটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, নামাজের কথা বলা তা আয়াতে করীমা: قُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِيْنَ۰۰۲۳۸ (আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও)[48] দ্বারা বিলুপ্ত হয়েছে।
বিশেষ উদ্দেশ্যে আয়াত
যদি ফাতিহা পাঠের প্রবক্তাগণ একথা বলেন যে, আয়াতে করীমাটি কিরাআতের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ ইমাম যখন (ফাতিহা পাঠের পর) অন্যান্য সূরাসমূহ পাঠ করবে তখন মুক্তাদীরে জন্য জরুরি হচ্ছে, তারা শুনবেন এবং নীরব থাকবেন। আয়াতে করীমাটিতে ফাতিহা শামিল নয়।
এর জবাব হচ্ছে, এভাবে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণয়নের কোনো দলিল নেই। যদি আপনাদের এই উদ্দেশ্যপ্রণয়ন মেনেও নিই যা কিনা দলিলহীন। তাহলে আমরা হাদীসের যে মতলব বর্ণনা করেছি এবং হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ h-এর বরাতে বর্ণিত হাদীসে «لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ» (যে ব্যক্তি ফাতিহা পড়ে না, তার নামাজ নেই) মুক্তাদী অন্তর্ভুক্ত নয়, সেটি কেন গ্রহণযোগ্য হবে না?
[متن ادلۂ کاملہ]
دفعۂ چہارم: آپ ہم سے اُن احادیث کے طالب ہیں جن سے خاص مقتدیوں کو ممانعتِ قراءت ثابت ہو—ہم آپ سے اُس حدیث کے طالب ہیں جس سے مقتدیوں کو اَمْرِ وجوب قراءت بطور نَصْ نکلتا ہو، اور پھر وہ حدیث صحیح بھی ہو، اور صحیح بھی کیسی؟ مُتَّفَق عَلَیْہ بھی ہو، اگر ہو تو لائیے اور دس نہیں بیس لے جائیے—پَرْ حدیثِ عُبَاؔدہؓ جو ترمذی میں مَرْقوم ہے اُس کی طرف توجہ نہ فرمائیے، اول تو وہ صحیح نہیں، اور کسی نے صحیح بھی کہہ دیا، تو اس سے اتفاق ثابت نہیں ہو سکتا، جو آپ کی شرائطِ مَقْبُولہ میں سے ہے۔
علاوہ بریں آپ حدیث مانگتے ہیں، ہم اول تو قرآن کی آیت عرض کرتے ہیں وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴ {الأعراف: 204}، اور پھر یہ عرض کرتے ہیں کہ یہ دلیل وہ ہے جس کو حضرت ابوؔ ہریرۃ اور حضرت امام شاؔفعیؒ بھی مان گئے ہیں، جو تمام جہان میں ایجابِ قراءت علی المقتدی میں مُمْتاز ہیں، یہی وجہ ہے کہ ایک[49])) صاحب تو تَتَبُّعِ سکتاتِ امام کی تکلیف دیتے ہیں، اور ایک صاحب فاتحہ اور سورت کے درمیان سکتۂ طویلہ نکالتے ہیں، اگر مخالفتِ آیت کا کھٹکا نہ تھا تو پھر مَأْخَذِ[50])) وجوبِ قراءتِ فاتحہ علی المقتدی تو خودہی مطلق اور عام تھا، اس تجویزِ غیر ضروری کی ضرورت کیا تھی؟
اب آپ کی خدمت میں یہ گذارش ہے کہ یا تو آپ کسی حدیثِ صحیح، مُتَّفَقٌ علیٰ صِحَّتِہ[51])) سے چھوڑ، ضعیف ہی سے سکتہ طویلہ درمیان فاتحہ وسورت کے، یا مطلقًا ہر رکعت میں ثابت فرمائیں، اور دس نہیں بیس لے جائیں، یا تَتَبُّعِ سکتاتِ امام ہی کسی روایتِ مرفوع سے ثابت فرمائیں، صحیح نہ ہو ضعیف ہی روایت سہی، پَرْ اتنا تو ہو کہ اجتہادِ صحابی کا احتمال نہ[52])) رہے، پھر ہم سے دس نہیں بیس لیجیئے، ورنہ پھر عدمِ تعمیلِ آیت کی فکر کیجیئے۔
اور یہ بھی سمجھ لیجیئے کہ اول تو حدیثِ غیر متواتر وجوبِ عمل میں ہم سنگِ قرآن نہیں ہو سکتی، اور بالفرض بفرضِ محال ہوئی بھی تو اگر آپ مُتَّبِعِ حدیث ہوں گے، تو ہم مُتَّبِعِ قرآن۔
؏ ببیں تفاوت رَہ از کُجاست تا بَکُجا!؟
اس کے بعد اگر آپ آیت میں کچھ تخصیص کریں گے، تو ہم حدیث میں تاویل کریں گے، اور بر وقتِ موازنہ آپ کو اِن شاء اللہ معلوم ہو جائے گا کہ کس کی بات غالب ہے؟ باقی رہی اور احادیث اور سوائے ان کے اور دلائل اور اتّفاقِ جَمِّ غَفِیْر ان کو ابھی ہم بھی پیش نہیں کرتے، یار باقی صحبت باقی!
‘চতুর্থ দফা: আপনারা আমাদের কাছে সেসব হাদীস দাবি করেছেন যা দ্বারা বিশেষভাবে মুক্তাদীদের জন্য কিরাআত পড়তে নিষেধ প্রমাণিত হয়। আমরা আপনাদের কাছে সেই হাদীসের দাবি করছি যা দ্বারা মুক্তাদীদের জন্য কিরাআত পড়া ওয়াজিব হওয়ার নির্দেশ স্পষ্ট নসে সাব্যস্ত হয়। আর সে হাদীস সহীহও হবে, সহীহও কেমন! মুত্তাফাক আলায়হি। যদি থাকে আনুন আর দশের বদলে ২০ নিয়ে যান। কিন্তু (হযরত) উবাদা h-এর হাদীস, যেটি তিরমিযীতে উল্লেখ রয়েছে, সেটির দিকে যাবেন না। প্রথমত সেটি সহীহ নয়। কেউ সহীহ বলে দিলে তাতে ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়ে যায়। গ্রহণযোগ্যতার যে শর্তাবলি আপনার আছে সেই অনুযায়ী।
এছাড়া আপনারা হাদীস চেয়েছেন। আমরা প্রথম তো কুরআনের আয়াত: وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴ (তোমাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হলে শোন ও নীরব থেক)[53] পেশ করছি। অতঃপর আমরা আবেদন করছি যে, দলিল হচ্ছে মূলত সেটি যা হযরত আবু হুরায়রা h ও ইমাম শাফিয়ী w পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন। যাঁরা পুরো বিশ্বে মুক্তাদীর ওপর কিরাআত ওয়াজিব প্রবর্তনে বিশিষ্টতার মর্যাদা রাখেন। এটাই কারণ যে, এক ব্যক্তি তো বিরতি অনুসন্ধানে ইমামকে কষ্ট দেন। আর অন্য ব্যক্তি ফাতিহা ও সূরার মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি আবিষ্কার করেছেন। যদি আয়াতের বিরোধিতা হয় যায় কিনা সেই খটকা না থাকত, তাহলে মুক্তাদীর ওপর কিরাআত পাঠ ওয়াজিব হওয়ার দলিল তো নিজেই বিস্তৃতি ও ব্যাপকতাবোধক ছিল। এই অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাবের কি দরকার ছিল?
এখন আপনাদের খেদমতে আবেদন হচ্ছে যে, হয়তো আপনারা কোনো সহীহ হাদীস, মুত্তাফাক আলায়হি থাক, যয়ীফ দ্বারাই ফাতিহা ও সূরার মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি প্রমাণ করুন এবং দশের পরিবর্তে ২০ নিয়ে যান। অথবা ইমামের বিরতি অনুসন্ধানে কোনো মরফু’ রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণ করুন, সহীহ না হোক অন্তত যয়ীফ রেওয়ায়েত দ্বারা। কিন্তু এতটুকু হতে হবে যে, সাহাবাদের ইজতিহাদের সম্ভাবনা না থাকে। তারপর আমাদের থেকে দশের পরিবর্তে বিশ নিয়ে যান। নতুবা আয়াতকে আমলে রূপান্তরের ব্যর্থতার চিন্তা করুন।
আর একথাও বুঝতে হবে যে, প্রথম তো হাদীস গায়রে মুতাওয়াত আমল ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে কুরআনের মোকাবেলা করতে পারে না। মনে করুন, অস্বাভাবিকভাবে হয়েও যায় তাহলে আপনি হাদীসের অনুসারী হবেন, আমরা কুরআনের অনুসারী। চরণ: দেখুন তো, আমাদের পথচলার পার্থক্য কোথা থেকে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?
এর যদি আপনার আয়াতে কিছু উদ্দেশ্য প্রণয়ন করেন, তাহলে আমরাও হাদীসে ব্যাখ্যা করবো। পর্যালোচনার সময় আপনারা জেনে যাবেন ইনশাআল্লাহ কার কথা বিজয়ী হয়? বাকি থাকলো আরও বহু হাদীস, এছাড়াও অনেক দলিল ও বিশাল একদলের ঐকমত্য, সেসব এখন উপস্থাপন করছি না। বন্ধু থাকলে সান্নিধ্যও অব্যাহত থাকবে!’
[1] আল-মারগীনানী, আল-হিদায়া ফী শরহি বিদায়াতুল মুবতাদী, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৫6, তিনি বর্ণনা করেন,
وَيُسْتَحْسَنُ عَلَىٰ سَبِيْلِ الْاِحْتِيَاطِ فِيْمَا يُرْوَىٰ عَنْ مُحَمَّدٍ w.
‘ইমাম মুহাম্মদ (w) থেকে বর্ণিত মত অনুযায়ী সতর্কতা হিসেবে এটি (সিররি নামাজে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া) উত্তম।’—স. চৌ.
[2] মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী, কিতাবুল আসার, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৩ হি. = ১৯৯৩ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৬৩-১৬৪, আসার: ৮৪
[3] মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী, মুয়াত্তা আল-ইমাম মালিক, আল-মাকতাবাতুল ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (দ্বিতীয় সংস্করণ), পৃ. ৬০, হাদীস: ১১৫ ও পৃ. ১৮৭, হাদীস: ৮৭
[4] ইবনুল হুমাম, ফাতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, খ. ১, পৃ. ৩৬১, তিনি বলেন,
وَالْـحَقُّ أَنَّ قَوْلَ مُحَمَّدٍ كَقَوْلِـهِمَا، فَإِنَّ عِبَارَاتِهِ فِيْ كُتُبِهِ مُصَرِّحَةٌ بِالتَّجَافِيْ عَنْ خِلَافِهِ، فَإِنَّهُ فِيْ «كِتَابِ الْآثَارِ» فِيْ بَابِ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الْإِمَامِ بَعْدَ مَا أَسْنَدَ إلَىٰ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسٍ: «أَنَّهُ مَا قَرَأَ قَطُّ فِيْمَا يُجْهَرُ فِيْهِ وَلَا فِيْمَا لَا يُجْهَرُ فِيْهِ»، قَالَ وَبِهِ نَأْخُذُ: «لَا نَرَى الْقِرَاءَةَ خَلْفَ الْإِمَامِ فِيْ شَيْءٍ مِنْ الصَّلَاةِ يَجْهَرُ فِيْهِ أَوْ لَا يَجْهَرُ»، ثُمَّ اسْتَمَرَّ فِيْ إسْنَادِ آثَارٍ أُخَرَ، ثُمَّ قَالَ: قَالَ مُحَمَّدٌ: «لَا يَنْبَغِيْ أَنْ يُقْرَأَ خَلْفَ الْإِمَامِ فِيْ شَيْءٍ مِنْ الصَّلَوَاتِ».
وَفِيْ «مُوَطَّئِهِ»: بَعْدَ أَنْ رَوَىٰ فِي مَنْعِ الْقِرَاءَةِ فِي الصَّلَاةِ مَا رُوِيَ قَالَ: قَالَ مُحَمَّدٌ: «لَا قِرَاءَةَ خَلْفَ الْإِمَامِ فِيْمَا جَهَرَ وَفِيْمَا لَـمْ يَجْهَرْ فِيْهِ، بِذَلِكَ جَاءَتْ عَامَّةُ الْأَخْبَارِ، وَهُوَ قَوْلُ أَبِيْ حَنِيْفَةَ».
‘সঠিক কথা হচ্ছে, ইমাম মুহাম্মদ (w)-এর বক্তব্যও তাঁদের দুইজনের (ইমাম আবু হানিফা w ও ইমাম আবু ইউসুফ w-এর) অনুরূপ। কারণ তাঁর কিতাবসমূহে প্রদত্ত বক্তব্য স্পষ্টভাবে এর পরিপন্থী। তিনি কিতাবুল আসারের ‘ইমামের পেছনে কিরাআত অধ্যয়ে হযরত আলকামা ইবনে কায়স (w) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনি (হযরত আলকামা w) জাহরি বা সিররি কোনো নামাজেই কখনো কিরাআত পড়তেন না।’ তিনি (ইমাম মুহাম্মদ w) আরও বলেন, ‘আমরা ইমামের পেছনে জাহরি বা সিররি কোনো নামাজে কিরাআত পড়া জায়েয মনে করি না।’ আরেক বর্ণনায় ইমাম মুহাম্মদ (w) বলেন, ‘কোনো নামাজেই ইমামের পেছনে কিরাআত পড়া অনুচিত।’ তাঁর মুয়াত্তায় নামাজে কিরাআত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বর্ণনায় ইমাম মুহাম্মদ (w) বলেন, ‘জাহরি বা সিররি কোনো নামাজে ইমামের পেছনে কিরাআত নেই। এভাবেই এসেছে সকল বর্ণনা এবং এটিই ইমাম আবু হানিফা (w)-এর বক্তব্য।’—স. চৌ.
[5] দুরারুল বিহার: ফিকহে হানাফীর শাখা মাসায়িলের ওপর রচিত একটি কিতাব। এর রচয়িতা: শামসুদ্দীন, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ ইবনে ইলিয়াস আল-কূনূভী (৭১৫-৭৮৮ হি. = ১৩১৫-১৩৮৬ খ্রি.)। তিনি মূলত তুর্কি, পরবর্তীকালে তিনি দামেস্কে বসবাস করেছেন। একজন হানাফী ফকীহ। দুরারুল বিহার ছাড়াও রিসালাতুন ফিল হাদীস, শারহু তালখীসিল মিফতাহ, শারহু মাজমাউল বাহরাইন ও শারহু উমদাতিন নাসাফীসহ বিভিন্ন রচনা রয়েছে তাঁর। যদিও এসব রচনাবলি এখন বেশ দুষ্প্রপাপ্য। দ্র. আর-যিরিকালী, আল-আ’লাম, খ. ৭, পৃ. 1৫৩
[6] খুওয়াহরজাদা: আবু বকর, মুহাম্মদ ইবনুল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ আল-বুখারী (০০০-৪৮৩ হি. = ০০০-১০৯০ খ্রি.)। বকর খুওয়াহরজাদা বা খুওয়াহরজাদা নামে খ্যাত ট্রান্স অক্সিয়ানা অঞ্চলের একজন হানাফী ফকীহ, তিনি কাজী আবু সাবিত মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল-বুখারীর ভাগিনেয় ছিলেন। এ কারণেই তাঁকে ফারসিতে খুওয়াহরজাদা বলা হত, যার অর্থ হচ্ছে বোনের ছেলে। ফিকহে তাঁর আল-মাসবূত, আল-মুখতাসার ও আত-তাজনীস উল্লেখযোগ্য রচনা, তবে এগুলো এখন দুষ্প্রাপ্য। দ্র. আর-যিরিকালী, আল-আ’লাম, দারুল ইলম, বয়রুত, লেবনান (পঞ্চদশ সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০২ খ্রি.), খ. 6, পৃ. 100
[7] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৭৫
[8] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ৭৫
[9] মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী, কিতাবুল আসার, খ. ১, পৃ. ১৬৩-১৬৪, আসার: ৮৪
[10] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, খ. ১, পৃ. ৪৪৪-৪৪৫
[11] আবদুর রহমান আল-জযীরী, আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, খ. ১, পৃ. ২৩০
[12] আদ-দারদীর, আশ-শারহুস সাগীর, খ. ১, পৃ. ৩০৯
[13] আদ-দারদীর, আশ-শারহুস সাগীর, খ. ১, পৃ. ৩২৬
[14] আশ-শাফিয়ী, উম্ম, খ. ১, পৃ. ১2৯
[15] আল-বুওয়ায়তী, আল-মুখতাসার, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব (মাস্টার্স থিসিস: ১৪৩০ হি. = ২০১০ খ্রি. শিক্ষাবর্ষ), পৃ. ১৩০
[16] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৩৬৩
[17] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৩৬৫
[18] (ক) আল-খিরাকী, আল-মুখতাসার, পৃ. ২৪; (খ) ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, খ. ১, পৃ. ৪০৩ ও ৪০৬; (গ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৭, হাদীস: ৮৫০, হাদীসটি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ h থেকে বর্ণিত
[19] ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, খ. ১, পৃ. ৪০৭
[20] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[21] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১১৬-১১৭, হাদীস: ৩১১, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: صَلَّىٰ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الصُّبْحَ، فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «إِنِّيْ أَرَاكُمْ تَقْرَءُوْنَ وَرَاءَ إِمَامِكُمْ»، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ، إِيْ وَاللهِ، قَالَ: «لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِأُمِّ القُرْآنِ، فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِـمَنْ لَـمْ يَقْرَأْ بِهَا».
[22] (ক) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ৫, পৃ. ৭৫৮; (খ) আত-তিরমিযী, আল-ইলালুস সগীর, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৩৫৭ হি. = ১৯৩৮ খ্রি.), পৃ. ৭৫৮
[23] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১১৭, হাদীস: ৩১১
[24] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-মুযযাম্মিল, ৭৩:২০
[25] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১২৩-১২৪, হাদীস: ৩১৩
[26] আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১২৪, হাদীস: ৩১৩
[27] এ হাদীসের তাখরীজের জন্য দেখুন: আয-যায়লায়ী, নাসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, খ. ২, পৃ. ৬-১২, [হাদীস: ৫৭, হাদীসটি পাঁচজন সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত:
- হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ h থেকে বর্ণিত:
(ক) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৭, হাদীস: ৮৫০; (খ) মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী, মুয়াত্তা আল-ইমাম মালিক, পৃ. ৬১, হাদীস: ১১৭; (গ) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১০৭, হাদীস: ১২৩৩ ও পৃ. ২৫৯, হাদীস: ১৫০১; (ঘ) আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ২, পৃ. ২৮৮, হাদীস: ২৮৯৮; (ঙ) ইবনে আদী, আল-কামিল ফিয যুআফা, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৮ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ৩৩৪, হাদীস: ৩২৬; (চ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত, খ. ৮, পৃ. ৪৩, হাদীস: ৭৯০৩; (ছ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ২৩, পৃ. ১২, হাদীস: ১৪৬৪৩; (জ) আত-তাহাওয়ী, শরহু মা‘আনিয়াল আসার, আলামুল কিতাব, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৪ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. 1, পৃ. 217, হাদীস: 1294
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর k থেকে বর্ণিত:
(ঝ) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. 113, হাদীস: ১২38 ও পৃ. ২৬০, হাদীস: ১৫০৩; (ঞ) মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী, মুয়াত্তা আল-ইমাম মালিক, পৃ. ৫০-৬০, হাদীস: ১১২
- হযরত আবু সাইদ আল-খুদরী h থেকে বর্ণিত:
(ট) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত, খ. ৭, পৃ. ৩০৮, হাদীস: ৭৫৭৯; (ঠ) ইবনে আদী, আল-কামিল ফিয যুআফা, খ. ১, পৃ. ৫২৪, হাদীস: ১৫০
- হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত:
(ড) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ২৬০, হাদীস: ১৫০৪
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস k থেকে বর্ণিত:
(ঢ) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ১২৬, হাদীস: ১২৬৬
- হযরত আনাস ইবনে মালিক h থেকে বর্ণিত:
(ণ) ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ওয়ায যুআফা ওয়াল মাতরূকুন, খ. ২, পৃ. ২০২, ক্রমিক: ৮৫৫।]—স. চৌ.
[28] (হযরত) আবু মুসা আশআরী (h)-এর হাদীসটি ইমাম মুসলিম (w) তাঁর সহীহগ্রন্থে (১/১৪৭) তাশাহহুদ অধ্যয়ে উল্লেখ করেছেন এবং হযরত আবু হুরায়রা h-এর হাদীসকে সহীহ বলেছেন। আর ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল w)ও হাদীসদুটো সহীহ বলেছেন। [দেখুন: (ক) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৩০৪, হাদীস: ৪০৪; (খ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ১৪, পৃ. ৪৬৯, হাদীস: ৮৮৮৯ ও খ. ১৫, পৃ. ২৫৮, হাদীস: ৯৪৩৮, হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত ও খ. ৩২, পৃ. ৪৯৬, হাদীস: ১৯৭২৩, হযরত আবু মুসা আল-আশআরী h থেকে বর্ণিত]—স. চৌ.
[29] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[30] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[31] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[32] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[33] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, দারুল ফিকর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, বয়রুত, লেবনান, খ. ৩, পৃ. ৬৩৪; (খ) আল-বায়হাকী, আল-কিরাআতু খালফাল ইমাম, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪০৫ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ১০৯, হাদীস: ২৫৫
[34] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[35] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, খ. ৩, পৃ. ৬৩৪; (খ) সায়ীদ ইবনে মনসুর, আস-সুনান, দারুস সামীয়ী লিন-নাশর ওয়াত তাওযী’, রিয়াদ, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৭ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ১৮১-১৮২, হাদীস: ৯৭৮; (গ) ইবনে আবু হাতিম, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, মাকতাবাতু নিযার মুস্তাফা আল-বায, মক্কা মুকাররমা, সৌদি আরব (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৯ হি. = ১৯৯৮ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ১৬৪৫, হাদীস: ৮৭২৭
[36] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[37] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, খ. ৩, পৃ. ৬৩৫; (খ) ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ ফিল আহাদীস ওয়াল আসার, খ. ২, পৃ. ২৫৫, হাদীস: ৮৩৭৮; (গ) ইবনে আবু হাতিম, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, খ. ৫, পৃ. ১৬৪৬, হাদীস: ৮৭৩২
[38] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[39] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, খ. ৩, পৃ. ৬৩৫; (খ) ইবনে জরীর আত-তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাওয়ীলিল কুরআন, দারু হিজর লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’ ওয়াল ই’লান, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ১০, পৃ. ৬৫৯, হাদীস: ১৫৫৮৪; (গ) ইবনে আবু হাতিম, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, খ. ৫, পৃ. ১৬৪৬, হাদীস: ৮৭৩০
[40] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
[41] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, খ. ৩, পৃ. ৬৩৫; (খ) আল-বায়হাকী, আল-কিরাআতু খালফাল ইমাম, পৃ. ১০৭, হাদীস: ২৪৯, তিনি বর্ণনা করেন,
عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ، أَنَّ النَّبِيُّ ﷺ كَانَ إِذَا صَلَّىٰ بِأَصْحَابِهِ فَقَرَأَ قَرَأَ أَصْحَابُهُ خَلْفَهُ، فنَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: [وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا ۰۰۲۰۴] {الأعراف: 204}، فَسَكَتَ الْقَوْمُ وَقَرَأَ النَّبِيُّ ﷺ.
এসব রেওয়ায়েত (হাফিয জালালুদ্দীন) সুয়ুতীর তাফসীরে আদ-দুররুল মানসুর (৩/১৫৫) থেকে গৃহীত, এই রেওয়াযেতসমূহ উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক রেওয়াযেত আদ-দুররুল মানসুরে উল্লেখিত হয়েছে।
[42] মুযতারিব (আরবি: مُضْطَرِبٌ): সমশক্তিসম্পন্ন বিভিন্ন সনদ ও শব্দে বর্ণিত রেওয়াযেতকে মুযতারিব বলা হয়। অর্থাৎ সেসব রেওয়ায়েত যা এমন পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে যার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব নয়। আর সেই রেওয়ায়েতগুলো সার্বিকভাবে মানগত দিক দিয়ে এমন সমমর্যাদাসম্পন্ন যে, কোনো দিক দিয়েই একটিরকে অপরটির ওপর প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয়। দেখুন: ড. মুহাম্মদ আত-তাহ্হান, হাদীসের পরিভাষা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা (প্রথম সংস্করণ: ১৪৩১ হি. = ২০১০ খ্রি.), পৃ. 102।—স. চৌ.
[43] দেখুন: খলীল আহমদ আস-সাহারনপুরী, বাযলুল মাজহূদ ফী হল্লি আবী দাউদ, খ. ৪, পৃ. ১৫৩
[44] (ক) আল-আলুসী, রূহুল মাআনী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবউল মাসানী, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৫ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ১৪২; (খ) আল-বাবরতী, আল-ইনায়া শরহুল হিদায়া, মুস্তফা আল-বাবী আল-হালাবী অ্যান্ড সন্স লাইব্রেরি অ্যান্ড প্রিন্টিং কোম্পানি, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৩৮৯ হি. = ১৯৭০ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৩৪০, তিনি বর্ণনা করেন,
وَقَالَ الشَّعْبِيُّ: أَدْرَكْتُ سَبْعِيْنَ بَدْرِيًّا كُلُّهُمْ يَمْنَعُوْنَ الْـمُقْتَدِيْ عَنْ الْقِرَاءَةِ خَلْفَ الْإِمَامِ.
[45] ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, খ. ১, পৃ. ৪০৪-৪০৫
[46] (ক) আস-সুয়ুতী, আদ-দুররুল মানসুর ফিত তাফসীর বিল মা’সুর, খ. ৩, পৃ. ৬৩৫; (খ) ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ ফিল আহাদীস ওয়াল আসার, খ. ৭, পৃ. ২৫৮, হাদীস: ৩৫৮৬৩
[47] শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, আল-ফওযুল কবীর ফী উসূলিত তাফসীর, দারুস সাহওয়া, কায়রো, মিসর (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪০৭ হি. = ১৯৮৬ খ্রি.), পৃ. ৯৫-১০০
[48] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-বাকারা, ২:২৩৮
[49] ایک صاحب: অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা h ইমামের বিরতি অনুসন্ধানে থাকার কষ্ট দিয়ে থাকেন। কিন্তু হযরত আবু হুরায়রা h-এর এ ধরনের বক্তব্যের সন্ধান আমরা পায়নি। অবশ্য এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা h-এর একটি মরফু’ হাদীস মুসতারাকে হাকিমে (১/২৩৮) ও সুনানে দারাকুতনীতে (১/৩১৭) আছে।
{عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «مَنْ صَلَّىٰ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مَعَ الْإِمَامِ فَلْيَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِيْ سَكَتَاتِهِ، وَمَنِ انْتَهَىٰ إِلَىٰ أُمِّ الْقُرْآنِ فَقَدْ أَجْزَأَهُ».
‘হযরত আবু হুরায়রা h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ D ইরশাদ করেছেন যে, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করবে সে সূরা ফাতিহা তার নীরবতার সময় পড়ে নেবে। যে ব্যক্তি উন্মুল কুরআন (ফাতিহা) শেষ করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।” দ্র. (ক) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৯৫, হাদীস: ১২০৯; (খ) আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, খ. ১, পৃ. ৩৬৪, হাদীস: ৮৬৮]
তবে এর এক রাবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (ইবনে উবায়দ ইবনে উমায়র আল-)লায়সী (আল-মক্কী)। যাকে ইমাম বুখারী (w) মুনকারুল হাদীস (যার হাদীস প্রত্যাখ্যাত) [দ্র. আল-বুখারী, আত-তারীখুল আওসাত, দারুল ওয়ায়ী, আলেপ্পো, সিরিয়া ও মাকতাবাতু দারিত তুরাস, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৩৯৭ হি. = ১৯৭৬ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৮০, ক্র. ২২২২] ও ইমাম নাসায়ী (w) মাতরূক (বিবর্জিত) [দ্র.আন-নাসায়ী, আয-যুআফা ওয়াল মাতরূকীন, পৃ. 9১, ক্র. 522] আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া লায়সী এই হাদীসে আমর ইবনে শুআয়ব, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে সনদেও বর্ণনা করেছেন। যেমনটি এসেছে সুনানুদ দারাকুতনী (১/৩২১),
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «مَنْ صَلَّىٰ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً أَوْ تَطَوُّعًا فَلْيَقْرَأْ فِيْهَا بِأُمِّ الْكِتَابِ وَسُوْرَةً مَعَهَا، فَإِنِ انْتَهَىٰ إِلَىٰ أُمِّ الْكِتَابِ فَقَدْ أَجْزَىٰ، وَمَنْ صَلَّىٰ صَلَاةً مَعَ إِمَامٍ يَجْهَرُ فَلْيَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِيْ بَعْضِ سَكَتَاتِهِ، فَإِنْ لَـمْ يَفْعَلْ فَصَلَاتُهُ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ».
‘হযরত আমর ইবনে শুআয়ব থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা শুয়ায়ব ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস k থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ D ইরশাদ করেছেন যে, ‘কোনো ব্যক্তি ফরজ অথবা নফল নামাজ পড়লে সে যেন তাতে সূরা আল-ফাতিহা এবং তার সাথে আরও একটি সূরা পড়ে। যদি সে সূরা আল-ফাতিহা পড়েই শেষ করে তাহলে তা যথেষ্ট হবে। আর কোনো ব্যক্তি ইমামের সাথে সশব্দে কিরাআত সংবলিত নামাজ পড়লে সে যেন তার (ইমামের) বিরতির ফাঁকে ফাঁকে সূরা আল-ফাতিহা পড়ে। যদি সে এ রকম না করে তাতে তার নামাজ ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ হবে।” দ্র. আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. 102-103, হাদীস: ১২23] এই হচ্ছে হাদীসটির সনদের অসামঞ্জস্য। দ্র. (ক) শাব্বির আহমদ উসমানী, মাওসূআতু ফাতহিল মুলহিম বি-শারহি সাহীহ মুসলিম, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৬ হি. = ২০০৬ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ২৭৩; (খ) আন-নায়মূওয়ী, আত-তা’লীকুল হাসান আলা আসারিস সুনান, মাকতাবাতুল বুশরা লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, করাচি, পাকিস্তান (প্রথম সংস্করণ: ১৪৩২ হি. = ২০১১ খ্রি.), পৃ. ১৩০
[50] مَأْخَذْ: অর্থাৎ দলিল এবং উদ্দেশ্য হযরত উবাদা (ইবনুস সামিত) h-এর হাদীস অর্থাৎ «لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ» (সূরা ফাতিহা ছাড়া এমনটা করো না।) ব্যাপকতাবোধক, এতে ইমামের বিরতি বা ফাতিহার পর দীর্ঘ বিরতির উদ্দেশ্যপ্রণয়ন নেই।
[51] এখানে আদিল্লায়ে কামেলা ও ইযহারুল হক উভয়ে علیٰ صحّتِہا এসেছে। কিন্তু যেহেতু সহীহ হাদীসই এর উদ্দেশ্য, এজন্য আমরা علیٰ صحّتِہ লিখেছি। আর ইবারতের তাৎপর্য হচ্ছে যে, এমন হাদীস যার বিশুদ্ধতার ওপর সকলের ঐকমত্য হওয়া ছাড়ুন, কোনো দুর্বল হাদীস দ্বারাই দীর্ঘ নীরবতা প্রমাণ করুন।
[52] এটি হযরত আবু হুরায়রা h-এর প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত, যে বিষয়ে আমরা লিখেছি যে, এ ধরনের বর্ণনা আমরা অনুসন্ধানে পায়নি।
[53] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০৪
অহংকার
মাহমুদুল হাসান নিজামী
জ্ঞান কম যত যার
ততো তার অহংকার
নিজের চোখে দেখে নারে
নিজের দুই নয়ন
তবুও মানুষ হৈলো না তোর
বোধের উন্নয়ন॥