জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাঠকের কলাম- নতুন বছরে জনপ্রত্যাশা

নতুন বছরে জনপ্রত্যাশা

২০২৩ নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছি। ২০২২ সাল কেমন গেছে সেটা বলে লিখে পিছনে যেতে চাই না। তবুও বিগত বছরের কিছু কথা স্মৃতিকথায় কথায় এসে যায়। পুরোনো বছরটা পাওয়া না পাওয়ার অনেক কথা আছে। পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্টীয়ভাবে অনেক ভালো ছিলাম। রাজনৈতিক হাঙ্গামা, হরতাল, ধর্মঘট, জ্বালাও পোড়াও ছিল না। মহামারি করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপকভাবে সফলতা অর্জিত হয়। শিক্ষার পাঠকার্যক্রম চালু হয়। ছাত্র-ছাত্রী তাদের পাঠকার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছে। ব্যাপকভাবে শহর ও গ্রামে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। দেশের রোড ঘাট কালভার্ট ব্রিজের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে।

সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখার মতো সফলতা অর্জিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নে মানুষ যাতায়াতে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। এবং দিন দিন এ অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহতভাবে চলছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে দেশের আমজনতা মহাখুশি। তবে বিগত বছরে সফলতার সাথে কয়েকটি বিষয়ে জনগণ সরকারের প্রতি রাগ ও অভিমানী হয়ে উঠেছে। যেমন দ্রব্যে মূল্যের অনিয়ন্ত্রিত গতি। ওষুধপত্রের আকাশচুম্বী মূল্য বৃদ্ধি। পরিবহণ খাতে ভাড়া বৃদ্ধি। অফিস-আদালতে ভোগান্তি ও হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের বেতন ভাতা বৃদ্ধি না হলে ও ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। এসব কারণে জনগণ একটু পারিবারিক ভাবে চাপের মধ্যে এখনো আছে।

ব্যয়ভার জনগণ সামলাতে পারছে না। মানুষ করোনাকে জয় করতে পারলেও জীবন যাপনের ব্যয়ভার সামলাতে পারছে না। সেদিকে দেশের মানুষ খুবই পারিবারিক  ও সামাজিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে আছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার স্থান ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের সংবাদে জনগণ ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ তুলে ফেলার দৃশ্য দেখা যায়। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা মেরে খাওয়ার প্রবণতা জনগণ দেখতে পেয়েছে। ফলে আমানতদার জনগণ অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের ওপর হতে বিশ্বাস হারাতে যাচ্ছে জনগণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি দুনিয়ার মানুষকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলছে। সে পরিস্থিতি বাংলাদেশেও নানাভাবে প্রভাব ফেলেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। খুন, হত্যা, রাহাজানি, ছিনতাই, অনেকটা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এটা অনেক বড় সফলতা । মোটামোটিভাবে বিগত বছরে জনগণ স্বস্তির মধ্যে ছিল বলে বলা যায়।

চলতি বছর  কেমন যাবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সে কথা আগাম বলা মুশকিল জাতীয় নির্বাচন সামনে নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলো নানামুখী কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে, তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী জোট ও দলের কর্মসূচি কী হবে এবং কতটুকু বাস্তবায়ন করতে  পারবে সে বিষয়গুলো এখন জনগণের পর্যালোচনায় রয়েছে।

তবুও বলা যায় ২০২৩ সাল সময়টা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অস্থিরতার সময়। যদি রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ধর্মঘট হরতাল দেখা দেয়, তাহলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, আমদানি, রফতানি সবকিছুর মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

জনগণ চায় না দেশে হিংসা করে হাঙ্গামা বাঁধুক। জনগণ ও রাজনৈতিক দল জোট তারা  ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে লালন পালন করুক সেটায় জনগণের চিন্তা ও মতামত, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও পরিবেশ সাধারণ মানুষ চায় না; নতুন বছর দেশ জাতির জন্য সার্বিক সফলতা বয়ে আনুক। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শান্তি ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হোক, দুনিয়ার সকল মানুষ ও প্রাণী শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীতে বাস করুক। জনগণের মৌলিকত অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক, অন্যায়ভাবে জুলুম-ব্যভিচার,  নির্যাতন বন্ধ হোক, ধর্মীয় ভাবসম্প্রীতি অব্যাহত থাকুক।

বাংলাদেশের জনগণের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় সরকারের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন সঠিক নিয়মে অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন বছরে অফিস-আদালত, সেবাখাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণ করতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য যেভাবেই হোক ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারি পরিবহণ খাত, বিমান, রেল, নৌ, স্থল খাতকে দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালনা করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করে আদর্শিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ২০২৩ সালকে স্বাগতম।

মাহমুদুল হক আনসারী

সমাজকর্মি

মক্তব: প্রাথমিক শিক্ষার ঐতিহ্যিক স্মারক

প্রতিদিন সকালে গ্রামে এক উৎসবমুখর জান্নাতি পরিবেশ নেমে আসত। সবাই কায়েদা-সিপারা, আমপারা বা কুরআন নিয়ে হাতে-হাত রেখে নেচে-গেয়ে ছুটতাম মক্তবে। আমাদের ছিল অনেক কথা, অনেকরকম গল্প; ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ মধুময় সম্পর্ক। ভোরের পাখিদের সাথে জেগে এক সুরে মেতে উঠতো মক্তবের পাখিরাও। গ্রামগুলো বরকতময় হতো চারিদিকে মধুরতা ছড়িয়ে যেত কুরআনের শব্দে। এক ফুলের বাগানে চাষ করতেন হুযুর, মধুপূর্ণ বাগানে আমরা ভ্রমরের রূপে নাচি নাচি যেতাম মধু আহরণে। কী সুন্দর আনন্দঘন এক মিলনমেলা ছিল প্রতিটি সকালে। যেখানে খোদার রহমত, বরকত ও ভালোবাসা ছিল ভরপুর।

গ্রাম বাংলার মুসলমানদের ঐতিহ্য মক্তব এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। যেখানে আমরা আগে কুরআন নিয়ে ভিড় জমাতাম, সেদিন ফজর আদায় করে দেখলাম মসজিদের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন সকালে পাখিরা জেগে উঠলেও কোন শিশু যেন বলে না, ‘সুয্যি মামা জাগার আগে উঠবো আমি জেগে।’

পাড়া-মহল্লার মসজিদ বারান্দায় বা অন্য কোথাও বেতের পাটি বা মাদুর বিছিয়ে শিশুকিশোরদের জন্য উম্মুক্ত কুরআন শিক্ষা, ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো। শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে ছিল বহু মক্তব। সময়ের পরিক্রমায় সকালবেলা শিশু-কিশোররা টুপি বা হিজাব পরে দল বেঁধে কায়দা-সিপারা বা কুরআন হাতে নিয়ে মক্তবে যাওয়ার দৃশ্য আগের মতো আর নজরে কাড়ে না। মুসলমানদের ঐতিহ্যের স্মারক মক্তবগুলোর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। মুসলমানদের শিশুশিক্ষার মূলভিত্তি মক্তব এখন ডিজিটালাইজেশনের নিচে যেন চাপা পড়ে গেল।

আমাদের মক্তবের শিক্ষক যে নৈতিক শিক্ষা দিতেন সে শিক্ষার ভূমিকা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মক্তবে কুরআন ও ধর্মীয় প্রাথমিক বিধিনিষেধ শিক্ষার সাথে সাথে শিখানো হতো কথা বলার আদব, চলাফেরার আদব, মা-বাবার সাথে ব্যবহারের শিষ্টাচার এবং শিক্ষার আদলে জাগানো হতো সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রিক ও জাতিগত দায়িত্ববোধ। সেই শিক্ষার দরজা যেন ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। আশঙ্কা হয়, এভাবে চলতে থাকলে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যগত এই প্রাথমিক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থা একসময় শুধু ইতিহাসের পাতার অক্ষর ও গাল্পিকের গল্প হয়ে যাবে, থাকবে না অস্তিত্ব।

গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা এখন সময়ের দাবি। এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুরা যে আলোতে আলোকিত হয় তার আবেদন টিকে থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। আলোকিত শিশুরা আলোকিত তরুণ হয়ে জন্মে, তাদের হাতে গড়ে উঠে আলোকিত সমাজ। মৃতপ্রায় এই ঐতিহ্যের স্মারক প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে ফিরে আসুক। বেঁচে থাকুক আলোকিত এই উম্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা।

খোবাইব হামদান

শিক্ষার্থী: ওমরগনি মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি কলেজ, চট্টগ্রাম

ইসলাম এক মহা ইনকিলাব

ইসলামপূর্ব যুগে নারী ছিল চরম অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকারহারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ ঠাওরানো হত! গৃহপালিত পশু, বাজারের পণ্য সামগ্রী আর নারীর মাঝে তেমন কোনো ব্যবধান ছিল না, সেই সময়ে নারীদেরকে মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হত না এবং তাদের কোনো সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানব জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের জন্ম নেওয়া ছিল মান-হানির কারণ, তাই তাদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত! তাদের এমন বিবেক বর্জিত কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَاِذَا الْمَوْءٗدَةُ سُىِٕلَتْ۪ۙ۰۰۸ بِاَيِّ ذَنْۢبٍ قُتِلَتْۚ۰۰۹

‘আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’? (সূরা তাকভীর: ৮-৯)

সে যুগে নারীদেরকে স্ত্রী অধিকার ও তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হত। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহণের অবকাশও দেওয়া হত না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানুষিক জুলুম-অত্যাচার নারী জাতির ওপর করা হত। অধঃপতনের এই ভয়ানক দুর্দিনে আবির্ভূত হল এক নতুন সভ্যতা! শুরু হল মহা ইনকিলাব! বলা যায় নারী জাতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত, একটি নতুন নির্দেশনা, একটি নতুন পথ, এবং এক বরকতময় বিপ্লব, এ বিপ্লব ছিল চরিত্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, থেকে শুরু করে পরিবার ও দাম্পত্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা প্রতিষ্ঠার বিপ্লব এবং বরকতময় এই বিপ্লবের ছোঁয়া লেগেছিল সর্বত্রই!

আর সেই সভ্যতা সেই বিপ্লব হল পবিত্র আল-কুরআন ও ধর্ম শ্রেষ্ঠ ইসলাম, ইসলামের এই মানবিক উপহার সে সব ধর্মের ভ্রান্ত মতবাদকে অসার সাব্যস্ত করতে পেরেছে, যারা মনে করত ‘নারীর ন্যায় এত পাপ-পঙ্কিলতাময় প্রাণী জগতে আর নেই। নারী প্রজ্বলিত অগ্নি স্বরূপ। সে ক্ষুরের ধারালো দিক। এই সমস্তই তার দেহে সন্নিবিষ্ট।’ নারীদের প্রতি ঘৃণাভরে যারা বলেছে, Men should not love their অর্থাৎ ‘নারীদেরকে ভালোবাসা পুরুষদের উচিত নয়।’

এই মানবিক উপহার সে সব দেশে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে, যেখানে বিধবা নারীরা স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দিত অবলীলায়! মিথ্যা প্রমাণিত করেছে সে সব সভ্যতাকে যেখানে মনে করা হত ‘মানব সমাজে নারীদের স্থান সর্বনিম্নে। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! নারী সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য প্রাণী। জগতে নারীর মত নিকৃষ্ট আর কিছু নেই।’

নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা: ইসলাম যেভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইসলামের আগে পৃথিবীর বুকে কোনো ধর্ম বা সভ্যতা এভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি! ইসলাম ও মহানবী (সা.) বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এক অভিনব বিপ্লব ও আদর্শ শিক্ষা স্থাপন করেছেন! মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে এক বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছেন, ইসলামে নারীর স্বাধীন মত পেশ করার মৌলিক বাকস্বাধীনতা আছে! উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত এবং উভয়ে সৎকর্মের মাধ্যমে জান্নাত লাভের সম-অধিকার রাখে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزٰۤى اِلَّا مِثْلَهَا١ۚ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓىِٕكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ۰۰۴۰

‘আর যে, মুমিন পুরুষ অথবা নারী সৎকর্ম করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদেরকে বেহিসাব রিযিক দেওয়া হবে।’

(সূরা আল-মুমিন: ৪০)

ইসলামের কষ্টিপাথরে নারী পুরুষের মর্যাদা তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সমমর্যাদা নয় বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে।

মা হিসেবে ইসলামে একজন নারীকে একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও মর্যাদার অধিকারী করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা।’ ওই লোক জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা।’ ওই লোক আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা।’ (সহীহ আল-বুখারী)

কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর মর্যাদা:

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: «لَا يَكُوْنُ لِأَحَدِكُمْ ثَلَاثُ بَنَاتٍ أَوْ ثَلَاثُ أَخَوَاتٍ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِنَّ إِلَّا دَخَلَ الْـجَنَّةَ».

‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযি.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (জামে তিরমিযী, ৪/৩১৮, হাদীস: ১৯১২)

স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে,

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّؕ ۰۰۱۸۷

‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)

কুরআনে আরও বলা হয়েছে,

وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِۚ ۰۰۱۹

‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’

(সূরা আন-নিসা: ১৯)

পারিবারিক জীবনে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য থাকলেও সার্বিক মূল্যায়নে ইসলাম নারী জাতিকে পুরুষের সমমর্যাদা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিক মান-মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোনো ধর্ম বা জাতি করেনি। নারী জাতির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের এই বিপ্লবকে বিশ্বের ইতিহাসের এক মহা ইনকিলাব বলা যায়!

সাখাওয়াত হোসাইন কামালী

তরুণ লেখক

প্রত্যাবর্তন

إرجعو إلىٰ ربك। একটি সময় স্বপ্ন দেখতাম গৌরবোজ্জ্বল ভবিষ্যতের। জৌলুসময় আগামীর। জাকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের। কল্পনার তুলিতে আঁকতাম স্বপ্নিল ভুবন। রঙিন জীবন। ইচ্ছে ডানায় অহর্নিস উড়াল দিতাম স্বপ্নের রাজ্যে। দু-চোখভরে স্বপ্ন দেখতাম পার্থিব জীবনের মরীচিকাময় প্রাচুর্যতার। সে রাঙানো রঙিন স্বপ্নে ছিল না কোনো ফ্যাকাশেটে ও ধূসরতা। যৌবন ও প্রবৃত্তি চাহিদার প্রতি আমি ছিলাম বড্ড ওয়াফাদার। রাত-দিনের পালা বদলে আমার সে স্বপ্ন অঙ্কুর; চারা অতঃপর গাছে পরিণত হতে শুরু করল। কিন্তু রব্বে করীমের এই পয়গম সে গাছের শিকড়ে আঘাত হানে,

بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيٰوةَ الدُّنْيَاٞۖ۰۰۱۶ وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى ؕ۰۰۱۷

‘বস্তুত তোমরা প্রার্থীর জীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকো, কিন্তু শুনে রাখো পরকালের জীবনে উত্তম।’ (সূরা আলা: ১৬-১৭)

প্রচণ্ড আঘাত। নিমিষেই ধসে গেল আমার সাজানো রাঙানো স্বপ্ন। মুখ থুবড়ে পড়ল আমার স্বপ্ন মহিরুহ। আমার অন্তর কেঁপে উঠলো। লোম শিউরে গেলো। আমার কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে রব্বে করীমের আরেকটি বানী ও হুঁশিয়ারি:

يٰۤاَيُّهَا الْاِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيْمِۙ۰۰۶ الَّذِيْ خَلَقَكَ فَسَوّٰىكَ فَعَدَلَكَۙ۰۰۷

‘হে মানুষ কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম প্রতিপালকের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে দিল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর সুন্দর অবয়ব দিয়ে সুষম করেছেন।’ (সূরা ইনফিতার: ৬-৭)

দু চোখে নহর বইলো। নোনা জলের। তখনই মনে পড়ল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালামের একটি অমূল্য বাণী:

«كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيْلٍ».

‘তুমি এভাবে নশ্বর পৃথিবীতে বসবাস কর;যেন তুমি কোনো ভিনদেশি অথবা মুসাফির।’ (সহীহ আল-বুখারী: ৬৪১৬)

হ্যাঁ, আমি মুসাফির। এ সফরের আমার যতটুকু পাথেয় প্রয়োজন তা-ই আমি সাথে নেবো। ততটুকুই আমি অর্জন করব। আমাকে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। গন্তব্য অনেক দূর। বহুদূর।

ইমরান বিন তালেব

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

জানুয়ারি, ফ্রেবুয়ারী সংখ্যা ২০২৩

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ