ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি ও হুতি শিয়াদের আকীদা মতাদর্শ
শেখ আহসান উদ্দিন
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বিআইইউ, ঢাকা
ইয়েমেন বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ। গত কয়েকবছর ধরে এই দেশটা বিভিন্ন কারণে আলোচনায় এসেছে। বিশেষত ইয়েমেনে যুদ্ধ, সংকট, হুতি শিয়া ও দক্ষিণাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান ইত্যাদি বিষয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে অনেকেই ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার। বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্রে ইয়েমেন ইস্যুতে অনেক সময় ইহুদিবাদী জায়োনিস্ট সেক্যুলার ও ইরানি শিয়া সমর্থিত মিডিয়াগুলোর সংবাদকে ফলাও প্রচার করে। এতে অনেকেই বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে এবং অনেকে শিয়া হুতিদেরকে না জেনে বুঝেই সমর্থন দেওয়া শুরু করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। তাই ইয়েমেন প্রসঙ্গে এই প্রবন্ধ লেখা হল।
ইয়েমেন। বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম দেশ। ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা দেশ। যে দেশের ব্যাপারে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দোয়া এসেছে। এই ইয়েমেনে অসংখ্য মুসলিম মনীষীর জন্ম হয়েছিল। সিরিয়ার উত্তর আফ্রিকা ও স্পেন জয়ের অভিযানে তাদের বৃহত্তম অবদান ছিল। ইয়েমেনি জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য তারা সুহৃদ ও বিনয়ী জাতি। ইলম, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অঙ্গনে ইয়েমেন সোনালি অবদান রেখেছিল। নবীজি (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় থেকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে মুসলিম উম্মাহর নিকট ইয়েমেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সানা হচ্ছে ইয়েমেনের রাজধানী ও এডেন হল সেদেশের বন্দরনগরী। সানা ও সাদা হতে যায়েদি ও এডেনে সুন্নি মুসলিমদের বসবাস বেশি। তবে সানায় সুন্নি ও যায়েদিদের সমান বসবাস আছে। যায়েদিরা মূলত যায়েদ ইবনে আলী (রহ.)-এর অনুসারী। তারা শিয়া মতবাদের ব্যানারে পরিচিত হলেও কিন্তু সুন্নিদের সাথে তাদের সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ। এরা ১২ ইমামি শিয়াদের ভ্রান্ত মতাদর্শের সংক্রমণ থেকে মুক্ত ছিল। ইমাম কাজী আল্লামা শাওকানীসহ এমন অনেক যায়েদি মনীষীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ইয়েমেনে রয়েছে। ইয়েমেনে ৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইয়াহিয়া ইবনুল হুসাইন আর-রাসসী যায়েদি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই যায়েদিয়া ইমামত শাসন সাম্রাজ্য ২৮৪ হিজরী/৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৮২ হিজরী বা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। ইয়েমেনে যায়েদি ইমামত সাম্রাজ্যের শেষ ইমাম ছিলেন মুহাম্মদ আল-বদর। এর মাঝখানে ইয়েমেনে উসমানিয়া সালতানাত খিলাফত ও ব্রিটিশ শাসন ছিল। উল্লেখ্য সানা ছিল ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে ও এডেন ছিল দক্ষিণাঞ্চলে।
১৯৬২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে ইয়েমেনি বিপ্লব শুরু হয় ও ইমামি সাম্রাজ্যের অবসান হয়। তার এক বছর পরে ১৯৬৩ সালের ১৪ অক্টোবর এডেনসহ দক্ষিণ ইয়েমেনে ব্রিটিশ শাসনামল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ ইয়েমেন ব্রিটিশ সৈন্যমুক্ত হয়। ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর ইয়েমেন স্বাধীনতা লাভ কর। কিন্তু হঠাৎ ইয়েমেন দ্বিখণ্ডিত হয় উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন। উত্তর ইয়েমেনের নাম হয় ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র আর দক্ষিণ ইয়েমেনের নাম হয় গণতান্ত্রিক ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র। উত্তর ইয়েমেন রাষ্ট্র ইসলাম ধর্মের ভাবাদর্শে চলতো আর দক্ষিণ ইয়েমেন রাষ্ট্র বামপন্থি কমিউনিস্ট সমাজতান্ত্রিক ভাব আদর্শে চলতো। উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ছিল আলী আবদুল্লাহ সালেহ ও দক্ষিণ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ছিল আলী সালিম আল-বাঈদ। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ ইয়েমেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ও ১৯৭৫ সালের দিকে উত্তর ইয়েমেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯০ সালের ২২ মে ২ ইয়েমেন এক হয়ে যায় রিপাবলিক অফ ইয়েমেন যার রাজধানী হয় সানা। সেসময় ইয়েমেন এক হয়ে যাওয়ার পর আলী আবদুল্লাহ সালেহ ইয়েমেনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন ও আলী সালিম আল-বাঈদ ভাইস প্রেসিডেন্ট হন পরে। ১৯৯৪ সালে আবদুরাব্বুহ মানসুর আল-হাদী ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।
দুই ইয়েমেন এক হওয়ার পরে ইয়েমেনে রাজনীতির পথ উন্মুক্ত হয়। তখন জিপিসি (পিপলস কংগ্রেস), ইসলাহ পার্টি, নাসেরবাদী দল, ইশতিরাকি (সমাজতন্ত্রী), হিযবুল হকসহ অনেক দল ইয়েমেনে রাজনীতি শুরু করে। এর মধ্যে জিপিসি সরকার প্রভাবিত দল, ইসলাহ ছিল সুন্নি মুসলিমদের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম, হিযবুল হক ছিল যায়েদিপন্থি আর আনসারুল্লাহ ছিল শিয়া হুতিদের রাজনৈতিক দল। আশির দশকে বদরুদ্দীন হুতি এবং তার ছেলে হুসেইন ইবনে বদরুদ্দীন আল-হুতি ও আবদুল মালিক হুতি; এই হুতি শিয়া মতাদর্শ শুরু করেন। বদরুদ্দীন হুতি একজন যায়েদি শিয়া আলেম ছিলেন, তবে তিনি জারুদিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী ছিলেন। যায়েদিদের মধ্যে কয়েকটা উপদলীয় সম্প্রদায় আছে যেমন বাতরিয়া, সুলাইমানিয়া, তাফযিলিয়া, জারুদিয়া ইত্যাদি। এদের মধ্যে জারুদিয়া সম্প্রদায় হল ১২ ইমামি শিয়াদের কাছাকাছি বিশ্বাসধারী সম্প্রদায়। ইয়েমেনের যায়েদিদের অন্যতম রাজনৈতিক দল হিযবুল হকের সদস্য ছিলেন বদরুদ্দীন হুতি। কিন্তু সেই দলের অন্যতম নেতা যায়েদি আলেম শায়খ মাজদুদ্দীনের সাথে বদরুদ্দিনের মতবিরোধ বিবাদ শুরু হয়, বদরুদ্দীন হুতি ইরানি শিয়াদের সমর্থন করেন। যেকারণে বদরুদ্দীন হুতি ইয়েমেনের মূলধারার যায়েদি সম্প্রদায়ের আলেম ওলামাদের বিরোধিতা করেন ও ৯০-এর দশকে বদরুদ্দীন হুতি ও তার ছেলেরা হিযবুল হক ছেড়ে আশ শাবাবুল মুমিনীন নামক নতুন দল গঠন করে। সেখান থেকেই হুতি শিয়াদের উৎপত্তি হয়েছে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত আন্দোলন শুরু হয় যা প্রথমে মিসর, তিউনিসিয়া, সিরিয়া ও লিবিয়া থেকে শুরু হয়েছিল। যার প্রভাব ইয়েমেনে এসে পড়ে। শুরু হয় প্রেসিডেন্ট সালেহ এর পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন। মিসরের হোসনী মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফী ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ এই তিন শাসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসে। যেকারণে এসব দেশের বিতর্কিত শাসকদের পদত্যাগ/পতন/ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ইয়েমেনে আলী আবদুল্লাহ সালেহকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন হয় হাজার হাজার লোকজন আন্দোলনে শরিক হয়। ইয়েমেনের রাষ্ট্রায়ত্ত/সরকার প্রভাবিত সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম (যেমন আল-সাওরা, 14 অক্টোবর, আল-জুমহুরিয়া, সাবা এজেন্সি), রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও ও টিভি চ্যানেল যেমন ইয়েমেন টিভি, এডেন টিভি, সাবা টিভি (قناة سبأ, قناة عدن, قناة اليمن, Yemen TV)-তে সালেহের পক্ষে প্রচারণা প্রোপাগান্ডা চলে। ইয়েমেনের ইসলাহ পার্টির শায়খ জিন্দানী সালেহকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে আন্দোলন চালাতে থাকে। সেসময় হুতি শিয়া ও দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও সালেহ বিরোধী আন্দোলন তাদের মতো করে চালিয়ে রাখে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট সালেহের পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলনকারী দুই পক্ষের মধ্যে পালটাপালটি হামলা হয়েছিল। এর মধ্যে আবদুল্লাহ সালেহ দেশ ত্যাগ করে সৌদি আরবে চলে যান। সে সময় ইয়েমেনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন মানসুর হাদী। পরে ২০১২ সালে দুর্নীতিতিসহ কতিপয় কারণে সালেহকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মনসুর হাদী ইয়েমেনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ ছিলেন যায়েদি শিয়া ও মনসুর হাদী ছিলেন সুন্নি মুসলিম। মনসুর হাদী ক্ষমতায় এসে নতুন করে সরকার ঢেলে সাজান। মনসুর হাদী ক্ষমতায় থাকাকালীন হঠাৎ সেদেশের দাম্মাজে নতুন সমস্যা শুরু হয়। ২০১১-১৩-এর মাঝামাঝি সময়ে হুতি শিয়াদের সাথে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী এবং সেখানকার স্থানীয় সালাফিদের ত্রিমুখী যুদ্ধ শুরু হয় সে সময় শায়েখ মুকবিল ইবনে হাদীর দারুল হাদীসসহ এ জাতীয় সমমনা মসজিদ-মাদরাসা ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় শিয়া হুতিরা।
২০১৩-১৪ এর মাঝামাঝি সময় প্রেসিডেন্ট হাদী ইয়েমেনের সব রাজনৈতিক দল পক্ষগুলোর মাঝে আনুষ্ঠানিক সংলাপ আলোচনা শুরু করেন কিন্তু এই সংলাপ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পর হঠাৎ ২০১৪ সালে ইয়েমেনের সা’দা শহর হুতিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হঠাৎ জ্বালানি ভর্তুকি অপসারণের জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে হুতি শিয়ারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তখন সামরিক বাহিনীর মধ্যে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের অনুগত লোকজন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদীর বিরোধিতা করে। হুতিদের আন্দোলন রাজধানী সানা পর্যন্ত পৌঁছায় এবং সেখানে হুতিরা প্রভাব বিস্তার শুরু করে। তখন ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট হাদী অনুগত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে হুতি শিয়াদের সংঘর্ষ হয় ও পরে ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সামরিক বাহিনীতে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ অনুগত সদস্য ও হুতি শিয়ারা রাজধানী সানা দখল করে যাকে তারা ২১ সেপ্টেম্বর বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করে। এতে ইয়েমেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাদী উদ্বিগ্ন হন। ইয়েমেনে নতুন সংকট শুরু হয়। ২১ সেপ্টেম্বরের পরের দিন ২২ তারিখ সানায় সরকার, হুতি শিয়াদের সাথে ইয়েমেনের সরকার সমর্থক ও সেনাবাহিনীসহ সুন্নি মুসলমানদের হামলা সংঘর্ষ হয় এতে ৩৪০ জন মানুষ নিহত হয়। সেদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বাসিন্দাওয়া পদত্যাগ করেন ও জিন্দানীর ইসলাহ পার্টি সমর্থিত আবদুল্লাহ মুহসিন আকওয়া মাত্র ৪৬ দিন ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী হন। তখন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদী সংকট নিরসনে নতুন সরকার গঠন ও ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। নভেম্বর ২০১৪ সালে সংকট নিরসনে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদীর নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করে। ৯ নভেম্বর ২০১৪ সালে খালেদ বাহা ইয়েমেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হন। শায়খ জিন্দানী ও তার দল ইয়েমেন ইসলাহ পার্টি হুতি শিয়াদের বিরোধিতা শুরু করে ও প্রেসিডেন্ট হাদীকে সমর্থন করে।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হুতি শিয়া ও সালেহপন্থিদের সাথে ইয়েমেন প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্স গার্ড ও সামরিক বাহিনীর পালটা আক্রমণ সংঘর্ষ শুরু হয় ও তখন হুতিরা প্রেসিডেন্ট হাউস ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে ফেলে। হুতিরা প্রেসিডেন্ট ভবন দখলের চেষ্টা করে। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি হুতি শিয়ারা ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল স্টেশনসমূহ দখল করে সেগুলোর সম্প্রচার কার্যক্রম তাদের হাতে চলে যায় ও এবং ইয়েমেনের দুইটা রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল দ্বিখণ্ডিত করে, যার একটা ভাগ মনসুর হাদী সরকারের হাতে চলে যায় অপর ভাগ শিয়া হুতিদের দখলে চলে যায়। ইয়েমেনের আল-ছাওরা, সাবা এজেন্সিসহ অনেক সংবাদপত্র ও রেডিও স্টেশন হুতি শিয়ারা দখল করে পরে আল-সাওরা ও সাবা এজেন্সিসহ অনেক সংবাদপত্র দ্বিখণ্ডিত হয়। ইরানের বর্তমান শিয়া শাসক গোষ্ঠী, লেবাননের অন্যতম শিয়া মিলিশিয়া দল হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার বিতর্কিত শাসক বাশার আল-আসাদ সরকার, ইরাকের হরকাত আল-নুজবা, কাতায়িব হিযবুল্লাহ, আসায়িব আহলুল হক, আল-হাশদ শা’বী (পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স)সহ অনেক ইরান ভিত্তিক শিয়া মিলিশিয়া দলগুলো হুতি শিয়াদেরকে সমর্থন করে। ২২ জানুয়ারি ২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদী ও প্রধানমন্ত্রী খালেদ বাহা পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পদত্যাগ করেন ও প্রেসিডেন্ট হাদীকে গৃহবন্দী করে হুতিরা। খালেদ বাহা ঘোষণা করেছেন যে তিনি ‘কোনো আইনের ভিত্তিতে অগঠনমূলক নীতির অতল গহ্বরে টেনে আনা এড়াতে’ পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে, দক্ষিণাঞ্চলের এডেন এবং অন্যান্য দক্ষিণ শহরগুলির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন যে তারা আর রাজধানী সানা থেকে কোনো আদেশ গ্রহণ করবেন না, কিছু প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তারা একটি স্বাধীন দক্ষিণ চাইবে। ২৩ জানুয়ারি হুতি আগ্রাসন অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এডেন, আল-হুদায়দাহ, ইব্ব এবং তায়িযসহ অন্যান্য শহরগুলোতে হাজার হাজার জনগণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। তবে রাজধানী সানায় হুতিদের সমর্থনে কয়েক হাজার লোকজন বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেছে। তারা সবুজ পতাকা ও ব্যানার সহকারে হুতি শিয়াদের স্লোগান উচ্চারিত করে। ইয়েমেনের অনেক অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জেলখানা কারাগার হুতিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
২৭ জানুয়ারি ২০১৫ একটি টেলিভিশন ভাষণে হুতি নেতা আবদুল মালিক আল-হুতি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অবসানের চেষ্টা করার জন্য রাজনৈতিক দল ও উপজাতীয় নেতাদের মধ্যে ৩০ জানুয়ারি সানায় একটি বৈঠকের আহ্বান জানান। অধিকাংশ দলই সভা বয়কট করেছে, শুধুমাত্র আলী আবদুল্লাহ সালেহের জিপিসি আলোচনায় যোগ দিয়েছে। হুতিরা উত্তর ও দক্ষিণের সমান প্রতিনিধিত্বসহ একটি ছয় সদস্যের ট্রানজিশনাল প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু আল-জাজিরা বলেছে যে সাউদার্ন মুভমেন্ট আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছে এবং শত শত মানুষ এডেনে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।
তখন অনেক আমেরিকা ভিত্তিক মিডিয়া আউটলেটে খবর এসেছিল যে মার্কিন সরকার হুতি শিয়া গোষ্ঠীর সাথে একটি কাজের সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টায় হুতিদের কাছে পৌঁছানো শুরু করেছে। ২০১৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি, সানায় হুতি গ্রুপটি তাদের আয়োজিত এক সভায় ইয়েমেনের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি আল্টিমেটাম জারি করে সতর্ক করে যে তারা যদি ‘বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে না পৌঁছায়’ তাহলে হুতি ‘বিপ্লবী কমিটির নেতৃত্ব’ রাষ্ট্রের ওপর আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে। পরে সেটাই হয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট হাদীকে গৃহবন্দী করে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ৬ ফেব্রুয়ারি হুতি শিয়ারা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহপন্থিরা কথিত বিপ্লবী কমিটি গঠন করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেছিল। সেখানে মুহাম্মদ আলী আল-হুতিকে সেই কমিটি ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘ ঘোষণাটি স্বীকার করতে অস্বীকার করে। হুতি বিরোধী জয়েন্ট মিটিংয়ে ভবিষ্যদ্বাণী আসে যে হুতি “অভ্যুত্থান” ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাবে। সৌদি আরব ও কাতারসহ গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল জিসিসিও অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে (সময় টিভি) পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইয়েমেনের বড় বড় শহর হুতিদের এই সরকার গঠনের বিপক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ মিছিল হয়। সেসব সমাবেশে হুতিদের সরকারকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করা হয় (ইয়েমেন শাবাব টিভি, আল-আরাবিয়া ও আল-জাজিরা)। তখন ইয়েমেনের প্রধান রাজনৈতিক দল জিপিসি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট হাদী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ পৃথক দুটো জিপিসি হয়। তখন ইয়েমেনের সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র/সামরিক ও নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুইভাগ হয়ে যায় ১.প্রেসিডেন্ট হাদী প্রশাসন অনুগত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী ও ২. হুতি শিয়া প্রশাসন অনুগত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী।
২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদী সানা থেকে পালিয়ে এডেনে উপনীত হন। তিনি টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ঘোষণা করেন যে, আমরা দেশের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করব এবং ইরানের পতাকার পরিবর্তে সানায় ইয়েমেনের পতাকা উত্তোলন করব, হুতিদের ঘোষণা অবৈধ এবং তিনিই ইয়েমেনের সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি । এখান থেকে ব্যাপক ঘাত-প্রতিঘাত শুরু হয়। ইয়েমেনের অসংখ্য লোকজন জীবন বাঁচানোর জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মিসরসহ বিদেশের অনেক দেশে চলে যায়। এখান থেকে ২০১৫ সালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা হল।
- ১৯ মার্চ ২০১৫: হাদীর অনুগত সৈন্যরা এডেন বিমানবন্দরে হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং পরাজিত হয়। হুতিদের যুদ্ধবিমান থেকে হাদীর বাসভবনে বোমা ফেলা হয়।
- ২০-২৩ মার্চ ২০১৫: আল-কায়েদা সানার কেন্দ্রীয় মসজিদে বোমা হামলা করে। রাষ্ট্রপতি হাদী এডেনকে ইয়েমেনের অস্থায়ী রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন। হুতিরা প্রাদেশিক রাজধানী লাহিজ দখল করে নেয়।হুতি বাহিনী ইয়েমেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর তায়িয দখল করে নেয়। মারিব প্রদেশে হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাদীর ছয় আত্মীয় নিহত হয়। হুতি বাহিনী বাব-এল-মান্দেব প্রণালি অভিযান করে। এই প্রণালি দিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ বাণিজ্য জাহাজ চলে। আবদুল-মালিক হুতি, এক ভাষণে বলেছিলেন যে তার গ্রুপের যুদ্ধের জন্য একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যকীয় ছিল।
- ২৪ ও ২৫ মার্চ ২০১৫: হুতিরা লাহিজ প্রশাসনিক এলাকা ও এডেন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আনাদ বিমান ঘাঁটি দখল করে নেয়। হুতিবিরোধী সরকারের শীর্ষ কমান্ডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাহমুদ আল-সুবাইহীকে গ্রেফতার করে সানায় নিয়ে যায়। মাঝে এডেনকে রেখে তারা ২০ কিলোমিটার উত্তরে দারুস সাদ নামক একটি ছোট শহর দখল করে। এই দিনে হুতি কমান্ডার আলী আল-শামি ঘোষণা করে বসে, My forces would invade the larger kingdom and not stop at Makka, but rather Riyadh। আমার বাহিনী বৃহত্তর রাজ্য আক্রমণ করবে এবং মক্কায় থামবে।
- হুতিরা এডেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সেনাঘাঁটি দখল করে নেয়। প্রেসিডেন্ট হাদী এডেন থেকে নৌকায় করে পালিয়ে যান। হাদী জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘ইয়েমেনকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক দেশগুলিকে ইয়েমেনকে রক্ষা করতে এবং হুতি আগ্রাসন রোধ করার জন্য সব উপায়ে এবং ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈধ কর্তৃপক্ষের জন্য অবিলম্বে সহায়তা প্রদান করতে অনুমোদন করার আহ্বান জানান। ইয়েমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াসিন, ২৫ মার্চ আরব লিগের কাছে সামরিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
- ২৬ মার্চ ২০১৫: প্রেসিডেন্ট হাদী সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে উপনীত হন এবং যুবরাজ (তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী) মুহাম্মদ ইবনে সালমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বিন সালমান আরব স্থলবাহিনী প্রেরণ করতে অস্বীকার করলেও বিমান সহায়তা প্রেরণ করে। এই দিনে প্রেসিডেন্ট হাদীর অনুগত বাহিনী এডেনে পালটা আক্রমণ করে। তাদের আর্টিলারি গোলার মুখে হুতিরা আল-আনাদ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
তখন সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব দেশগুলোর সামরিক জোট ইয়েমেনকে হুতি আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু করে যাকে আসিফাতুল হাযম হিসেবে অভিহিত করা হয়।
- ২৭-২৯ মার্চ ২০১৫: হুতি বাহিনী এডেন শহরকে ঘিরে ফেলে এবং হাদী অনুগত বাহিনীর অবস্থানগুলিতে হামলা করে। এখানে ভয়ানক যুদ্ধ হয়। নগরবাসীরা প্রেসিডেন্ট হাদী অনুগত বাহিনীর সহায়তায় এগিয়ে আসে। উভয় পক্ষই যার যার অবস্থানে থাকে। এডেনে হুতি শিয়ারা আগ্রাসন শুরু করে।
- ২৯ ও ৩১ মার্চ ২০১৫: হুতি ও সুন্নি উপজাতিদের মধ্যে লড়াইয়ে ৩৮ জন নিহত হয়। হুতি মিলিশিয়ারা বাব এল মান্দেব প্রণালির নিকটে সামরিক ঘাঁটি দখল করে। তারা পেরিম নামক দ্বীপে ব্যাপক ভারী অস্ত্র ও দ্রুতগামী নৌকা মোতায়েন করে।
- এপ্রিল-জুন ২০১৫: ১লা এপ্রিল দালিতে আরব জোটের বিমান হামলায় একটি হুতি ব্রিগেড তছনছ হয়ে যায়। তারা উত্তরাঞ্চলের দিকে পালিয়ে যায়। পরেরদিন প্রেসিডেন্ট হাদীর অস্থায়ী বাসভবন হুতিরা দখল করে নেয়। মর্টার হামলা চালিয়ে ২রা এপ্রিল থেকে আল-কায়েদা একিউ দক্ষিণাঞ্চলে হাদরামাউতের আল-মুকাল্লাসহ অনেক এলাকা ও হাদরামাউতের আশপাশে দক্ষিণের অনেক এলাকা এর দখলে নিয়ন্ত্রণ নেয়। ৩রা এপ্রিল স্থানীয় উপজাতিরা হাদী বাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মুকাল্লায় প্রবেশ করে এবং আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহরের কিছু অংশ উদ্ধার করে। শহরের অপর প্রান্তে আল-কায়েদা যোদ্ধারা সৌদি আরবের একটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা করে দুই সৌদি সৈনিককে হত্যা করে তা দখল করে নেয়। ১৩ এপ্রিলে সাউদার্ন মিলিশিয়ারা বালাহাফের নিকটবর্তী হুতিদের ঘাঁটি দখল করে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ আমিরাত ও হাদীর অনুগত সৈন্যরা প্রায় ৮০০ আল-কায়েদা যোদ্ধাকে হত্যা করে মুকল্লা পুনরুদ্ধার করে। রমজান মাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে ১২ জুন মুকাল্লায় এক আল-কায়েদা নেতা মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন।
- জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৫: হুতি শিয়াদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে হঠাৎ রমজান মাসে অন্যরকম অবস্থা দেখা যায়। সৌদি আরবে বিশেষত মক্কা ও মদীনা, আরব-আমিরাত, কুয়েত ও কাতারের অধিকাংশ মসজিদগুলোতে তারাবীর নামাজে হুতিদের আগ্রাসন থেকে ইয়েমেন মুক্ত করার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে ২১ জুলাইয়ে কয়েক মাস যুদ্ধের পর হাদী বাহিনী সৌদি আরবের সহায়তায় এডেন পুনরুদ্ধার করে। এর ফলে, প্রথম ইয়েমেনে ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে আরব-আমিরাতের একটি প্রযুক্তি দল হাজির হয় এবং দ্রুত বিমানবন্দর মেরামত করে। ২২ জুলাইয়ে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সৌদি সামরিক বিমান এডেন বিমানবন্দরে অবতরণ করে। একই দিনে আরব-আমিরাত থেকে একটি জাহাজ ভর্তি চিকিত্সা সহায়তা পৌঁছায়। ২৪ জুলাই আরব-আমিরাতের সামরিক বিমানে করে ত্রাণ পৌঁছায়।
৪ঠা আগস্ট প্রেসিডেন্ট হাদীপন্থি বাহিনী আল-আনাদ বিমানঘাঁটি থেকে হুতি বাহিনীকে পুশ ব্যাক করে। ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে একটি হুতি ক্ষেপণাস্ত্র মারিবের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত করে এতে ৪৫ আমিরাতি, ১০ সৌদি এবং ৫ বাহরাইনি সেনা নিহত হয়। দক্ষিণে জিঞ্জিবার অঞ্চল ২রা ডিসেম্বর একিউ পুনরায় দখল করে। ১৪ ডিসেম্বরে সালেহপন্থি সেনা এবং হুতি শিয়ারা তাইজ শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে সামরিক ক্যাম্পের বিরুদ্ধে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে যখন ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হয় তখন এই যুদ্ধে চার পক্ষ ছিল: ১. কেবিনেট অফ ইয়েমেন বা প্রেসিডেন্ট হাদী প্রশাসন সরকার, ২.হুতি শিয়া প্রশাসন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহ সমর্থক বাহিনী, ৩. জঙ্গি সন্ত্রাসী দল আইএস, ৪. আল-কায়েদা একিউ। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহ কখনো হুতিদের সমর্থন করেছেন আবার কখনো হুতিদের বিরোধিতা করেছেন। ইয়েমেনের জাতীয় সংসদ পার্লামেন্ট (House of representatives) দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। রাজধানী সানার সংসদ হুতি শিয়া প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ও ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদী অনুগত সরকার এডেনে তাদের সংসদ পার্লামেন্ট ভবন স্থানান্তর করে। ২০১৫-২০১৭ সালে ইয়েমেনের অনেক মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হুতি শিয়াদের দখলে চলে যায়। ২০১৬-১৭ সালের ইয়েমেনের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল।
- জানুয়ারি-মার্চ ২০১৬: জানুয়ারিতে এডেনে একটি নতুন সংঘাত শুরু হয়, যেখানে আইএস আইএস (ISIS) বা দায়েশ সন্ত্রাসীরা এবং একিউ আল-কায়েদা শহরের আশেপাশের এলাকাগুলো দখল করে। ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হাদীর অনুগতরা মিদি জেলার কৌশলগত বন্দর দখল করে, কিন্তু হুতি প্রশাসন সমর্থিত বিদ্রোহীরা শহর এবং এর আশেপাশে আক্রমণ চালিয়ে যায়। ৩১ জানুয়ারিতে আল-আনাদ এয়ারবেস ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ঘটে। যেখানে হুতি শিয়ারা একটা মিসাইল আক্রমণ চালায় এতে ২০০ জন হুতিবিরোধী সৈনিক নিহত হন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, হাদীপন্থি বাহিনী নিহম জেলা দখল করে কয়েক ডজন হুতি যোদ্ধাকে হত্যা করে সানা প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে, কিছু শহর ও গ্রাম দখল করে। ২২ ফেব্রুয়ারিতে আবিয়ানে হাদী সরকার-হুতি শিয়া ও আল-কায়েদা একিউ ত্রিমুখী সংঘাত শুরু হয়। ২৫ মার্চ এডেনে আইএস বা আইএল (ISIS/ISIL) সন্ত্রাসীরা এডেনে গাড়িতে জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলা করে যেখানে বোমার আঘাতে ২৭জন মানুষ যার মধ্যে ১৭জন সামরিক কর্মকর্তা তারা নিহত হয়। মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসেও ইয়েমেনের অনেক এলাকায় বিশেষত এডেন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আইএস সন্ত্রাসীরা জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলা চালায়, এসব এলাকায় আইএস সন্ত্রাসী ও আল-কায়েদার সাথে প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদী প্রশাসন অনুগত বাহিনীর যুদ্ধ হয়।
- ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হুতি শিয়ারা এবং সালেহপন্থিরা তাদের ২০১৫ সালের বিপ্লব কমিটি বাতিল করে সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল বা মাজলিসুল সিয়াসিল আ’লা (المجلس السياسي الأعلى) নামে নতুন সরকার প্রশাসন গঠন করে। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণের কিছু এলাকা সেই সরকারের অধীনে চলে যায়, ইরানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী, সিরিয়ার আসাদ সরকার এদেরকে স্বীকৃতি ও সমর্থন দেয়। যেখানে প্রেসিডেন্ট হাদীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা, হুতি নেতা সালেহ সাম্মাদ কে হুতিরা নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে। সালেহ সাম্মাদ সেই সরকারের নতুন প্রেসিডেন্ট হন ও জিপিসি নেতা আবদুল আজিজ হাবতুর সেই সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হন। অপরদিকে হুতিবিরোধী কেবিনেট অফ ইয়েমেন প্রশাসন (প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদী) একে অবৈধ বলে ঘোষণা দেন।
- ২০ আগস্ট ২০১৬ হুতি নিয়ন্ত্রিত সানায় সাবিয়ীন স্কয়ারে হুতি শিয়া প্রশাসন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের পক্ষে সমাবেশ হয়।
- ২-৩ ডিসেম্বর ২০১৬ জিঞ্জিবার এবং জায়ার শহরগুলি আল-কায়েদার হাতে চলে যায়। ১০ ও ১৮ ডিসেম্বর এডেনে আইএস বা দায়েশ সন্ত্রাসীরা এডেনে বোমা হামলা চালায় যাতে ১০২ জন মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬-এ ফের তা’ইজে হুতি শিয়ারা আগ্রাসী হামলা চালায় এতে ইয়েমেনের ৫৩ ও সৌদি আরবের ২৩ সৈনিক নিহত হয়।
- জানুয়ারি-মার্চ ২০১৭: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা আলকায়েদার ঘাটিতে হামলা চালায় ও শত শত আল-কায়েদার লোককে মেরে ফেলে। ২৫ মার্চে হুতি শিয়া নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় একটা হুতি সমর্থিত আদালতে প্রেসিডেন্ট হাদী এবং অন্য ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপবাদে তাদের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। হুতি নিয়ন্ত্রিত সাবা নিউজ এজেন্সি এই আজব শাস্তি ঘোষণা করেছে।
- এপ্রিল-অক্টোবর ২০১৭: মে মাসে ইয়েমেনে আইএসের সন্ত্রাসীরা তাদের প্রোপাগান্ডা ভিডিও প্রচার করে। ২২ জুলাই হুতিরা পার্শ্ববর্তী দেশ সৌদি আরবকে টার্গেট করে মিসাইল উৎক্ষেপণ করে হামলা চালায়। ২৭ জুলাই হুতিরা আরেকটা মিসাইল উৎক্ষেপণ করেছিল যেটার উদ্দেশ্য ছিল মক্কা মুকাররমায় আঘাত করার মতো ন্যাক্কারজনক কাজ। ১৬ অক্টোবর আল-বায়দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএসের সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।
- নভেম্বরের শেষদিকে ও ২রা ডিসেম্বর ২০১৭ তে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ হুতিদের সাথে সম্পর্ক বাতিলের ঘোষণা দেয় ও ইয়েমেনের জনগণকে হুতি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য আহ্বান জানায়। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ছয়দিন সানায় হুতি ও সালেহপন্থিদের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। এতে সানায় হুতিবিরোধী আন্দোলন চলে। কিন্তু ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৭-এ হুতি শিয়ারা সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে হত্যা করে। এতে সালেহ শহীদ হন। হুতিদের অধীনে যায় রাজধানীর সানা। অন্যতম মসজিদ আল-সালেহ মসজিদ হুতিদের দখলে চলে যায় ও মসজিদের নাম পাল্টিয়ে ফেলে। সালেহের দল জিপিসি তিনভাগে বিভক্ত হয়ে একভাগ হুতিদের সঙ্গে যোগ দেয়।
২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে হঠাৎ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান হয়। এডেনের তৎকালীন গভর্নর আইদারুস জুবাইদি ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদীর আনুগত্য থেকে সরে এসে সাউদার্ন মুভমেন্ট বা দক্ষিণ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনের প্রতি আনুগত্যের কারণে প্রেসিডেন্ট হাদী আইদারুস জুবাইদীকে বরখাস্ত করেন। জুবাইদির নেতৃত্বে এডেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ৩রা মে ২০১৭-এ বড়ধরনের সমাবেশ হয়। পরে তারা সাউদার্ন ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল STC বা মাজলিসুল ইন্তিকালিল জুনুবী গঠন করে যাকে প্রেসিডেন্ট হাদী অবৈধ বলে প্রত্যাখান করেন।
এসটিসির প্রতিনিধিত্বকারী দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হুতিদের বিরুদ্ধে হাদী সরকারকে সমর্থন করছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উত্তেজনা শুরু হয়। মনসুর হাদীর মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে ২৮ জানুয়ারি ২০১৮-এ এডেনে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। প্রোএসটিসি বাহিনী হাদী সরকারের সদর দফতরসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস দখল করে। 30 জানুয়ারি নাগাদ, STC শহরের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
তখন থেকে ২০২০ পর্যন্ত ইয়েমেনের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল:
- ২৬ মার্চ ২০১৮: হুতিরা সৌদি আরবে রকেটের একটি ব্যারেজ হামলা চালায়, রিয়াদে একজন মিসরীয় ব্যক্তিকে নিহত এবং আরও দুইজনকে আহত করে। এর জবাবে ২ এপ্রিল হোদাইদায় সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালায়।
- ১৯ এপ্রিল আবিয়ানে আল-কায়েদার দুই নেতা ইয়েমেনি ফোর্সের আক্রমণে মারা যায়। একই দিন হুতি প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট সালেহ সাম্মাদ হোদাইদায় এক মিসাইলের আক্রমণে নিহত হয়ে মারা যান। পরে হুতি শিয়ারা ইয়েমেনে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে যা মনসুর হাদী প্রশাসন প্রত্যাখ্যান করে। সানায় সালেহ সাম্মাদের জানাযা হয় যেখানে হাজার হাজার হুতি শিয়া ও তাদের সমর্থকরা যোগ দেয় ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ব্যান্ডপার্টি (বাদক দল) সহকারে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। সেখানে হুতি শিয়াদের স্লোগান ও বাদক দল/ব্যান্ডপার্টি দ্বারা জাতীয় সংগীতের বাজনা বাজিয়ে সাম্মাদকে শেষ বিদায় জানানো হয় (সোর্স: আল-জাজিরা, হুতি শিয়াদের মুখপাত্র আল-মাসিরাহ টিভি, ইরান ও ইরাকের শিয়াসমর্থিত গণমাধ্যম)। পরে মাহদি মাশাত ইয়েমেনের হুতি প্রশাসনের নতুন রাষ্ট্রপতি হন।
- ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮: হোদায়দায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
- ২৩ জুন ২০১৯: হুতি শিয়ারা আবহা বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালায় একজন নিহত হয়।
- ১২ আগস্ট ২০১৯: আমিরাত সমর্থিত সাউদার্ন ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল বাহিনী ও সিকিউরিটি বেল্ট ফোর্স এর যোদ্ধারা এডেনে নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রেসিডেন্ট হাদী প্রশাসনের সাথে লড়াই যুদ্ধ হয়। এতে এসটিসির অনেকেই নিহত হয়।
- আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৯: ইয়েমেন-সৌদি সীমান্তে বিতর্কিত নাজরান অঞ্চলে হুতিদের সাথে সৌদি আরব প্রশাসনের যুদ্ধ হয়। তখন নাজরানে হুতি শিয়ারা প্রভাব সৃষ্টি করে।
- ২৯ আগস্ট ২০১৯: ইয়েমেনের মনসুর হাদী প্রশাসন এডেনে হামলার জন্য আমিরাতকে দায়ী করে।
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯: হুতি শিয়ারা সৌদি আরবের দিকে ড্রোন হামলা চালায়।
- ১৩ নভেম্বর ২০১৯: ওমান ইয়েমেন ইস্যুতে মধ্যস্থতা শুরু করে।
- ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯: হুতি শিয়ারা এডেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেনাদের কুচকাওয়াজে মিসাইল হামলা চালায়।
- ১৮ জানুয়ারি ২০২০: মারিবে হুতি শিয়ারা হামলা আক্রমণ চালায় এতে ১১১ জন নিহত হয়।
- ১০ মার্চ ২০২০: মারিবের সিরওয়া এলাকা হুতিদের দখলে যায়।
- করোনাভাইরাসের কারণে জাতিসংঘের অনুরোধে ইয়েমেনে এপ্রিল ২০২০-এ যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
- ২৬ এপ্রিল ২০২০: এসটিসি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষত এডেনে তাদের পৃথক স্বায়ত্তশাসন ঘোষণা করে।
- ১১ মে ২০২০: হাদীর সরকারি বাহিনী আবিয়ান প্রদেশের রাজধানী জিনজিবারে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থানে হামলা চালায়। নভেম্বর মাসে হুতিদের কারাগারে বন্দি থাকা বাংলাদেশের পাঁচ নাগরিক মুক্ত হন।
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ প্রেসিডেন্ট হাদী অনুগত সরকারের নতুন মন্ত্রীসভা শপথগ্রহণ করে।
- ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০২০: ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদী অনুগত নতুন সরকার মন্ত্রীসভার সদস্যদের বহনকারী একটি ইয়েমেনীয় বিমান সৌদি আরব থেকে ইয়েমেনের বন্দরনগরী অ্যাডেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এডেন বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের সময় বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। হামলায় ২৮ জন নিহত এবং ১০৭ জন আহত হয়েছে। হামলায় যাত্রীদের কেউ আহত হয়নি। নতুন সরকার এই হামলার জন্য হুতি শিয়াদেরকে দায়ী করে।
২০২১ থেকে বর্তমানে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল:
- ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ শেষদিকে মারিবে হুতি শিয়ারা হামলা আক্রমণ চালায়। রমজান মাসে রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে হুতি শিয়া প্রশাসন তারাবীহর নামাজ এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ও অনেক মসজিদে তারাবীর নামাজে বাধা দেয়, একই রকম কাজ ২০১৬ সাল থেকেও শুরু করেছিল। মিসরের আল-আযহার এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিন্দা জানায়।
- ৪ ডিসেম্বর ২০২১: সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন হুতিবিরোধী জোট জানায় তারা হুতিদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২০-২১ সালে হুতি শিয়ারা রাজধানী বাদে যেসব এলাকা তাদের দখলকৃত ছিল সেগুলো তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় ও হুতি আগ্রাসন মুক্ত হয়। মূলত ২০১৫-২০২২ সালে দীর্ঘ সাত বছরের ইয়েমেনের যুদ্ধ ও অভিযানে এখন বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানা ব্যতীত ৭০% অঞ্চল হুতিদের থেকে মুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদী/রাশাদ আলিমীর সরকার ও সৌদি আরব-আমিরাত-কুয়েত-মিসর নেতৃত্বাধীন জোট এর হাতে ফিরে আসে। বাকি ৩০ % অঞ্চল হুতি শিয়া প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। ইয়েমেনের মা’রিব বাদে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা হুতি শিয়া প্রশাসন (সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল)-এর হাতে নিয়ন্ত্রিত।
- ১৭ ও ২৪ জানুয়ারি ২০২২ এ হুতি শিয়া মিলিশিয়ারা UAE আরব-আমিরাতে হামলা চালায়। এতে আমিরাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের অনেক এলাকায় হুতিরা ড্রোন হামলা চালায়।
- ২৫-২৬ মার্চের মাঝামাঝি সময়ে রাতে হুতি শিয়ারা সৌদি আরবে আরামকো তেলের ডিপোতে হামলা চালায়। বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়।
- এপ্রিল ২০২২-এ রমজান মাস উপলক্ষ্যে সমগ্র ইয়েমেনে জাতিসংঘ ও সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট দুইমাস যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। তখন সবাই এটার প্রশংসা করেছিল। পরে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স এই যুদ্ধবিরতি আরও কয়েক মাস বৃদ্ধি করে। এতে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।
- ৭ এপ্রিল ২০২২: ইয়েমেনে সাত বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ অবসানে থমকে থাকা শান্তি আলোচনা নতুন করে শুরু করার জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার সহায়ক হিসাবে ড. রাশাদ আলিমীর নেতৃত্বে নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়। এই কাউন্সিলের নিকট প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদী ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছাড়েন এবং ড. রাশাদ আলিমী সেদিন থেকে এখন ইয়েমেনের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বে।
- ৭ আগস্ট ২০২২ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের শাবওয়া ও আবিয়ানে আমিরাত সমর্থিত সাউদার্ন ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল এসটিসি বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর লোকেরা এসব এলাকার অনেক অঞ্চল দখলের জন্য যুদ্ধ শুরু করে। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ জানালেও তাতে এসটিসি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সাড়া দেয়নি।
- সেপ্টেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হুতি মিলিশিয়ারা তায়িযে সরকার অনুগত সেনাবাহিনীর ঘাটিতে হামলা চালায়। অক্টোবরে হুতিরা হাদরামাউতের তেলের ডিপোতে হামলা চালায়। ৭ নভেম্বর ২০২২-এ মা’রিব শহর হুতিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়।
ইয়েমেনের পরিস্থিতি বিষয়ে এখানে লেখা হল। ইয়েমেনে এই যুদ্ধ সংকটের কারণে অনেক মানুষ দারিদ্রতার শিকার হয়, অনেক মানুষ কলেরা আক্রান্ত হয় যা খুবই দুঃখজনক। ইয়েমেন যুদ্ধ সংকটে ইয়েমেনের জনগণের পাশে বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ বস্ত্রসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা আসে। তবে ২০১৮-১৯-এ জাতিসংঘ এবং সৌদি আরবসহ জিসিসিভুক্ত দেশগুলো ও মিসরের দেওয়া ত্রাণ ও সাহায্য চিকিৎসা সরঞ্জাম হুতি শিয়ারা লুটপাট চুরি করে বলে অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। হুতি শিয়াদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, গুম ও অপহরণের মতো অভিযোগ এসেছিল।
অনেকেই হয়তো হুতি শিয়াদের প্রসঙ্গে তেমন কিছু জানেন না। প্রবন্ধের শুরুর দিকে হুতিদের পরিচয় বিষয়ে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছিল। ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে ২৪০ কি. মি. দূরে অবস্থিত সা’দা শহরে। যায়েদিয়াদের বড় একটি অংশ সেখানেই বসবাস করে। ধর্মীয় মতাদর্শ পঠনপাঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৮৬ সালে তারা ইত্তেহাদুশ শাবাব বা যুব পরিষদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। যায়েদি মতাদর্শের তৎকালীন শীর্ষ আলেম বদরুদ্দীন হুতি ছিলেন এই সংগঠনের প্রধান। ১৯৯০ সালে ইয়েমেনী ঐক্য সংঘটিত হয়। তখন হিযবুল হক নামে যায়েদিদের রাজনৈতিক দল জন্ম নেয় ও ইত্তেহাদুশ শাবাব বিলীন হয়।
ঘটনার এক বাঁকে যায়েদিয়ারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। সে এক ঐতিহাসিক ফতোয়ার ঘটনা, যাতে বদরুদ্দীন হুতি নিজ ঘরনার আলেমদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন ইয়েমেনের জমহুর ওলামায়ে কেরামের মুখপাত্র ছিলেন হিযবুল হকের সভাপতি জনাব মাজদুদ্দীন আল-মুয়াইদী। শায়খ মাজদুদ্দীন ফতোয়ায় বলেন, ইমামতের জন্য হাশেমী গোত্রভুক্ত হওয়ার যে শর্ত ছিল, তা আর এই যুগে প্রযোজ্য নয়। মূলত সেটির একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে জনসাধারণের অধিকার আছে যে, তারা চাইলে উপযুক্ত যে কাউকে ইমাম নির্ধারণ করতে পারে—চাই সে হযরত হাসান বা হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুমার বংশধর হোক বা না হোক। জনাব বদরুদ্দীন হুতি ছিলেন যায়েদিয়ার শাখা জারুদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। চিন্তা-চেতনায় এই সম্প্রদায় ছিল ১২ ইমামি ইসনা আশারিয়া মতাদর্শ দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত। মূলত এ কারণেই তিনি উল্লিখিত ফতোয়ার জোরালো বিরোধিতায় লিপ্ত হন।
বদরুদ্দীন হুতি হিযবুল হক দলের সহ-সভাপতি হিসেব কাজ করতেন। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি মাজদুদ্দীনের সাথে তার মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। মতবিরোধের কারণ ছিল দুটি: (১) ইমামিয়া মাসয়ালায় হুতি এবং তার অনুসারীদের গোঁড়ামিপূর্ণ ধ্যানধারণা পোষণ করা। (২) ইরানের খোমেনি বিপ্লবের আদর্শের দিকে প্রচণ্ড ভাবে ঝুঁকে পড়া।
যেকারণে বিষয়টি তার সঙ্গে অনেকদূর গড়ালে একপর্যায়ে তিনি প্রকাশ্যে ১২ ইমামি শিয়া মতবাদের পক্ষাবলম্বন শুরু করেন। শুধু তাই নয়, আয-যায়েদিয়া ফিল ইয়ামান নামে একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন; যাতে তিনি ইসনা আশারিয়া শিয়াদের সঙ্গে যায়েদিয়া শিয়াদের সুসম্পর্কের সকল কারণ ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। বস্তুত এতে তিনি যায়েদিয়া মতাদর্শ বাদ দিয়ে যে ভ্রান্ত মতাদর্শ গ্রহণ করেছেন, তার পক্ষে সর্বাত্মক সাফাই গাওয়ার প্রয়াস পান। বদরুদ্দীনের চিন্তাচেতনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে আপন গতিতে; বিশেষত সা’দা শহরে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল; বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে যেন জোয়ার এসেছিল। এসব কারণে বদরুদ্দীন হুতি ও তার ছেলে হুসেইন বিন বদরুদ্দীন আল-হুতি হিযবুল হক ছেড়ে আশ শাবাবুল মুমিনীন নামক নতুন দল গঠন করে। ইরানের শিয়া শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় দলটি প্রভাব সৃষ্টি করে। এর মধ্যেই হঠাৎ তারা ইয়েমেনের সরকারের বিরোধিতা শুরু করে।
৯০-এর দশকে হঠাৎ বদরুদ্দীন হুতি ১২ ইমামি শিয়াদের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হন। তখন তিনি ও তার অনেক ছেলেরা ইরানে চলে যায়। তার আগে ইয়েমেনের ইতিহাসজুড়ে কোথাও ১২ ইমামি বা শিয়া ইসনা আশারিয়া মতাদর্শের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েক বছর পর্যন্ত তেহরানে বদরুদ্দীন হুতিকে মেহমানদারিও করা হয়। এসময় বদরুদ্দীন হুতি দেখতে পান ক্ষমতার মসনদে আরোহণের জন্য খোমেনী কর্তৃক প্রবর্তিত ‘বেলায়তে ফকীহ’ আকীদা চমৎকার এক সিঁড়ি, যাতে রয়েছে ফাতিমা (রাযি.)-এর বংশধর না হয়েও ক্ষমতাপ্রাপ্তির সহজ ব্যবস্থা; অথচ যায়েদিয়া মতাদর্শে এমন কিছু কখনই ছিল না। এর মধ্যে ১২ ইমামি শিয়া আলেমদের সাথে তার উঠাবসা হয় ও লেবাননের ইরান সমর্থিত শিয়া দল হিজবুল্লাহ ও এর নেতাদের সাথে দেখা করে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা শুরু করে।
২০০৪ সালে ঘটে যায় মহাকাণ্ড। হুসাইন বদরুদ্দীন হুতির নেতৃত্বে ইয়েমেনে বড়ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এসব নিয়ে ইয়েমেন সরকার বড়সড়ো ঝামেলার সম্মুখীন হয়। এরপর জানা যায়, জনৈক হুতি নিজেকে ইমাম এবং মাহদী দাবি করেছে। এমনকি নবুওয়তের দাবিও নাকি করেছে তাদের একজন। এসব দেখে ইয়েমেন সরকার নড়েচড়ে বসে এবং একপর্যায়ে হুতি শিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধে ৩০ হাজারেরও বেশি ইয়েমেনী সেনা অংশগ্রহণ করে; ব্যবহৃত হয় ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমান। প্রথম সংঘর্ষেই সংগঠনের প্রধান হুসাইন বদরুদ্দীন হুতি নিহত হন, কয়েকশ হুতি যোদ্ধা বন্দি হয় ও সরকারের হস্তগত হয় এক বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার। এটাই ছিল হুতিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের সর্বপ্রথম যুদ্ধ। এরপর আবার ২০০৯ সালে হুতি মিলিশিয়াদের সাথে ইয়েমেনের সরকারের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়। ২০০৯-১০ সালে ইয়েমেন-সৌদি সীমান্তে হুতিদের উত্তেজনা শুরু হলে সৌদি আরবের সামরিক বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অভিযান গড়ে তোলে সেই হুতিরা ইয়েমেনের সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ২০১০ সালে নভেম্বর মাসে বদরুদ্দীন হুতি মারা যায়।
কতিপয় গবেষক নিশ্চিতভাবে বলেছেন যে, হুসাইন হুতি শিয়াদের ইমামি ইসনা আশারিয়া মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তার লিখিত বই-পুস্তক এবং বক্তৃতার বিভিন্ন ক্যাসেট দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। এই হুতি শিয়া তথা বদরুদ্দীন হুতি, তার ছেলে হুসেইন ও আবদুল মালিক আল-হুতি ও তাদের অনুসারীদের কতিপয় আকীদা মতাদর্শ উল্লেখ করা হল:
- তাদের দাওয়াতের মূল কথা ইমামিয়া আকীদা মজবুত করা, এই আকীদা পোষণ করা যে, নবী (সা.), তার পরে আলী (রাযি.)-কে খলীফা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন, ইমাম হওয়ার পরম্পরা হাসান-হুসাইন (রাযি.)-এর বংশধর থেকে কখনো বাইরে যাবে না। কোনো ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম আকীদা পোষণ করলে সে কাফের।
- হুসাইন বদরুদ্দীন হুতির এক বক্তব্য লেকচার যা বই ও ক্যাসেট ভিডিও আকারে আছে সেই বক্তব্যে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাযি.)-এর বিরুদ্ধে দোষারোপ করে।
- তাদের আকীদা হল, মুসলিম বিশ্বে আজ পর্যন্ত যত ফেতনা-ফ্যাসাদ আর সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার মূল কারণ হল, ইসলামের প্রথম তিন খলীফাসহ অন্য সাহাবীগণ। বদরুদ্দীন হুতি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তারা (অর্থাৎ সাহাবীরা) কাফের। কারণ তারা রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।’ হুসাইন হুতি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আবু বকরের বায়আত গ্রহণের অনিষ্ট এবং কুপ্রভাব এখন পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বের সকল সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং শত্রুরা মুসলিম জাতির ওপর চড়াও হয়েছে।’ (নাউযু বিল্লাহ)
- হুতি শিয়া সমর্থক আলেম খালেদ কারুতি তার এক বক্তব্যে হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.), হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.)সহ অনেক সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে গালমন্দ করে তাদেরকে উম্মতে মুহাম্মদী থেকে খারিজ এসব বলে গালমন্দ করে। আরেক বক্তব্যে হযরত ওমর (রাযি.)-কে নাসারা বলে আক্রমণ করেন। (নাউযু বিল্লাহ)
- তারা মক্কা মদীনা উদ্ধারের নামে দখলের আগ্রাসন শুরু করে একে আবশ্যিক বলে।
- ইয়েমেনের প্রধান সংবাদপত্র আল-সাওরার সানার হুতি শিয়া নিয়ন্ত্রিত সংস্করণে ২০১৫ সালে আয়িশা (রাযি.)-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক কবিতা প্রকাশের অভিযোগ আসে।
এসব দেখে বুঝা যায় এই হুতি শিয়ারা এখন পুরোপুরি পথভ্রষ্ট ও ১২ ইমামি রাফেযি শিয়াদের কাছাকাছি। যেকারণে আরবের হাজার হাজার আহলুস সুন্নাহর ওলামায়ে কেরাম হুতি শিয়াদের বিরোধিতা করেছেন।
এই বিষয়ে জানার জন্য ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতি শিয়াদের আসল চেহারা (প্রফেসর ডক্টর সুলাইমান বিন সালিহ আল-গুসন), ড. রাগিব সারজানীর শিয়া মতবাদ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা, الشيعة نضال أم ضلال, لكي لا ننسي: الحوثيون وصناعة الموت, التشيع في صعدة عقيدة الحوثيين في القرآن الكريم, كشف حقيقة الحوثيين (حقائق.. وثائق.. صور..), خطر الرافضة (الحوثيين) وفتوى علماء اليمن الحوثيين ও مسيرة الشيعة الزيدية في اليمن। এই বইগুলো পড়তে পারেন। বর্তমানে ইয়েমেনের অনেক যায়েদিরা হুতিদের দলে ঢুকছে যা খুবই দুঃখজনক।
ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিৎ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ড. রাশাদ আলিমীকে সমর্থন দেওয়া। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ইরাক, মিসর, তুরস্ক, মরক্কো, পাকিস্তানবাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ এজাতীয় মুসলিম দেশগুলোর শাসক, সরকার ও সামরিক বাহিনির উচিৎ ইয়েমেনে সংকট দূরীকরণে উদ্যোগ নেওয়া। সম্প্রতি জাতিসংঘে ইয়েমেনে শান্তি আলোচনা প্রস্তাব এসেছে যেখানে যুদ্ধরত বিভিন্ন পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন ইয়েমেনে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। আমিন।