জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে উত্তরাধিকার ঐতিহ্য ও কৃষ্টির প্রতিফলন চাই
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ৪১ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নের কাজ ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে মাদরাসা শিক্ষকরাও এনসিটিবির সাথে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অথচ স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিংয়ের জন্য প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়, শব্দ এবং ছবির ব্যবহার এ দেশের মুসলমানদের তাহজিব-তামাদ্দুন, কৃষ্টি-কালচার বিশেষকরে মাদরাসা শিক্ষার উপযোগী নয় বলে এক সাক্ষাৎকারে ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. একেএম মাহবুবুর রহমান অভিমত ব্যক্ত করেন। বইগুলো এমনভাবে রচিত যাতে সংশোধনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ১০টি বিষয় নিম্নরূপ বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও ধর্ম শিক্ষা। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এস এস সি-এর সামষ্টিক মূল্যায়নে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেওয়া হয়েছে (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০)।
আলিয়া মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের বৃহত্তর সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেসীন নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও বিশেষকরে মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন ও যুগোপযুগিকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা দেশের আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে। এদেশের মুসলমানদের দীর্ঘকালের দাবি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি, ভৌত অবকাঠামো, জনবল কাঠামো, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে স্বতন্ত্র অধিদপ্তর, ৫৬০টি মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে বহুমুখী পদক্ষেপের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ইতিহাসে সোনালি হরফে লেখা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ১৭ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ধর্মের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করার আহ্বান জানান। এতে ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ স্পষ্টত দৃষ্ট হয় কিন্তু তার আশেপাশের একটি সিন্ডিকেট ধর্মশিক্ষাকে সংকুচিত করার বা ক্রমবিতাড়নের সুপরিকল্পিত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নইলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর নতুন প্রজন্ম অন্তঃসারশূন্য সর্বনাশের দিকে ধাবিত হবে।
সাধারণ শিক্ষার জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে শিক্ষাক্রমকে সংশোধন করে দেশের বেশিরভাগ মানুষের ঈমান-আকীদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য বজায় রেখে শিক্ষাক্রমকে পরিমার্জন করা প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক সমূহের ক্যাপশন, বিষয়বস্তু ও কন্টেন্টসমূহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং নীতি-আদর্শের পরিপন্থি। তাড়াহুড়া না করে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বিঘোষিত মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে জরুরি ভিত্তিতে আলিয়া মাদরাসার জন্য পৃথক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের আবশ্যকতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন