কুরআন করীম অন্তরের অবস্থা শোধরানোর একমাত্র উৎস
হযরত মাওলানা খলীলুর রহমান সাজ্জাদ নু’মানী
অনুবাদ: মাওলানা আবদুল আযীয
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
একজন মাদরাসাছাত্র ইমারতে ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা
যার হাত ধরে এ পুরো আন্দোলনের কাঠামো দাঁড়িয়েছে তিনি কিছু নারীকে সাহায্য করার জন্য নিজের ঘরহ থেকে বের হয়েছিলেন। মানুষের ইতিহাস একেবারেই জানা নেই। ঘটনা ছিল এরকম, সে দেশে তৎকালীন সময়ে নারীদের ইজ্জ্বত লুণ্ঠন করা হচ্ছিল। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। প্রতিটি গ্রামে কিছু জমিদার এবং ঠিকাদার ছিল। যাদের প্রবল প্রতাপে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারত না। তারা যখন ইচ্ছে মেয়েদেরকে ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেত। সম্ভ্রম হরণ করত। কাউকে বা হত্যাও করত। কাউকে তার ঘরেই বন্দি করে রাখত। কারও যেন কিছু বলার ছিল না। সেসময় একজন মাদরাসাছাত্র এসব সংবাদ শুনে নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছিল। অত্যন্ত দারিদ্র নিপীড়িত ঘরের একজন মাদরাসাছাত্র তার বন্ধুদেরকে বলল, এটা কত বড় পাপ। অথচ আমরা এটা রুখতে পারছি না। বন্ধুদের সে ছাত্রের তাকওয়ার প্রতি আস্থা ছিল। তারা জানত এ ছাত্রটি তাহাজ্জুদে কীভাবে কান্নাকাটি করে। এও জানত তার চোখ কখনও কোনো বেগানা নারীকে দর্শন করেনি। খুবই নেককার এবং ভদ্র মানুষ। এরপর সকল সাথীরা মিলে ইস্তিখারা করল। অতঃপর সে মহান ব্যক্তি নুবুওয়তের দরবার থেকে যে নির্দেশনা পেলেন… আল্লাহু আকবর! তিনি বললেন, আমার কাছে তো নির্দেশ এসে গেছে। তোমরা যারা অংশগ্রহণ করতে চাও তারা আসতে পার। জমিদারদের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে কিছু না করতে পারলে এ পথে শহিদ হয়ে যাব। তবে আমরা জীবিত থাকতে আমাদের মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠিত হবে এ আমরা হতে দেব না। এ মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন লোক যাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০-৪০ জন। এখান থেকেই আন্দোলনের সূচনা হল। যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল নারীদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে যখন সে আন্দোলন বড় পরিসরে সাফল্য লাভ করল তখন বলা হতে লাগল আমরা নারীদের অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন!? মিথ্যারও একটা সীমা থাকা উচিত। এ আন্দোলনের লক্ষ্যই তো ছিল নারী-শিশু এবং দুর্বলদের অধিকার রক্ষা করা। তাদের মনে ক্ষমতা দখল করা কিংবা দেশব্যাপী বিপ্লব সংঘটিত করা মোটেই ছিল না।… হয়তো আল্লাহ তাআলা নিজের বাঁদীদের ইজ্জতের হেফাজত করার এ আগ্রহের মূল্যায়ন করে তাদেরকে জীবনের সমস্ত সেক্টরে সংস্কার কর্মের জন্য এ সাধারণ ছাত্রদের হাতেই দায়িত্ব সোপর্দ করেছেন। কারণ নিজের বাঁদীদের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হেফাজত করার কাজটি আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয়। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
উঁচু উঁচু লক্ষ্যের জন্য মনে আশা জাগাও। তুচ্ছ সকল লক্ষ্য থেকে নিজেদের অন্তরকে পরিষ্কার করে নাও। কোনো কিছুরই পরোয়া কর না। জানা কথা, যখন মানুষ এধরণের জযবা আর আগ্রহ অন্তরে লালন করে তখন নিজের কাছের লোকেরাই তার সহযোগিতা ত্যাগ করে। তার বাবা-মা ভাই-বোনরাই তাকে বোঝাতে শুরু করে এটা তুমি কি করতে যাচ্ছ? এভাবে তো জীবন কাটবে না। এত হতেই পারে না যে, প্রথম দিন থেকেই লোকেরা আপনাকে সাধুবাদ জানাতে আরম্ভ করবে আর বলতে থাকবে তুমি এগিয়ে চলো আমরা তোমার সঙ্গে আছি। মনে রাখবেন, আপনি যদি এ পথে অন্যের সাহায্যে পথচলা শুরু করেন তবে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই সাহায্য করার জন্য কাছের লোকদের থেকে বিরোধিতা করান। সবাই বিরোধিতা করবে যেন তার তাওয়াক্কুল নসিব হয়। এটাই উদ্দেশ্য। নইলে সবার পক্ষ থেকে সমর্থন পাইয়ে দেওয়া আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। এজন্য যে বান্দার এ তরবিয়ত আর ট্রেনিং থাকবে সে কখনও নিজের কাছের লোকদের ব্যাপারে কুধারণার শিকার হবে না। সে জানে সবাই তার কল্যাণকামী। কিন্তু তাদের সবাই সে ট্রেনিং পায়নি, যা সে পেয়েছে। তারা যা বলছে এটা তাদের বলাই উচিত। তাদের সদিচ্ছা, ভালোবাসা আর কল্যাণকামনায় কোনো সন্দেহ করা উচিত নয়। তাদের অনেক আশঙ্কা হয়তো আমাদের সন্তানকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। এজন্য তাদের কথায় মনে কষ্ট নেবেন না। তাদের ভালোবাসার প্রতি আপনার আস্থা আরও বাড়িয়ে দেবেন। তবে হ্যাঁ, কখনও সুযোগ হলে তাদের কাঁধে হাত রেখে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলবেন, যখন আমাদেরকে ইলমে দীনের রাস্তায় পাঠিয়েছেন তাই এখন আমাদের পথচলায় আমাদের সাহস যোগাতে থাকুন। আমাদের জন্য দোয়া করতে থাকুন। ইনশাল্লাহ আপনাদের চক্ষু একদিন শীতল হবে।
ঈমানের বিজয় হয়েছে
বর্তমান অবস্থার সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঈমানের বিজয় হয়েছে এবং বস্তুবাদের পরাজয় ঘটেছে। কতদিন ধরে এ বাস্তবতা শুনে আসছি কিন্তু শোনা কি কখনও দেখার মতো হতে পারে? আল্লাহর শোকর যে, আল্লাহ আমাদেরকে সে দৃশ্য দেখিয়েছেন। কুরআনে করীমে বর্ণিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গল্পের আলোকে আমরা বারবার শুনে আসছি যে, ঈমানের বিজয় হয়েছে আর পরাজিত হয়েছে বস্তুবাদ। ফিরআউনের সঙ্গে বস্তুবাদ ডুবে গিয়েছিল। কারুন এবং হামানের সঙ্গে বস্তুবাদ পরাজিত হয়েছিল। হযরত মুসা এবং হারুনের সঙ্গে ঈমানের বিজয় হয়েছে। হযরত সালেহের সঙ্গেও বিজয় হয়েছে ঈমানের। হযরত শোয়াইবের সঙ্গেও বিজয় হয়েছে ঈমান। সামূদ গোত্র, হুদ গোত্রের বস্তুবাদ পরাজিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা রসুলুল্লাহ (সা.)-কে হুকুম দিয়েছিলেন, وَذَكِّرْهُمْ بِاَيّٰىمِ اللّٰهِؕ ۰۰۵[1] ইতিহাসের সেসকল ঘটনাবলির আলোকে আপনার সঙ্গীদের তারবিয়াত করুন। যার সারাংশ হচ্ছে এই যে, আল্লাহর শক্তি যুগে যুগে জয়লাভ করেছে। ঈমানের শক্তি বিজয়ী হয়েছে। দৃড়তা, নিষ্ঠা এবং ত্যাগ বিজয়ী হয়েছে আর হাতিয়ার ও সাজসরঞ্জাম পরাজিত হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বড় বড় সেনাদল পরাজিত হয়েছে। মিডিয়ার ঘটেছে শোচনীয় পরাজয়। আল্লাহ বিজয়ী হয়েছেন আর জয়ী হয়েছে বিশ্বাসীগণ।
একথাগুলো আমরা শুনে আসছিলাম। কিন্তু মানুষের স্বভাব অস্বীকার করলে চলবে না। শোনা আর দেখার মধ্যে অনেক ব্যবধান। দেখার মাধ্যমে যে ঈমান বৃদ্ধি পায় সেটা সত্যিকারার্থে দেখার মাধ্যমেই বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্তর থেকে সন্দেহ অপনোদন করার জন্য একটা ঝলক দেখিয়ে দিয়েছেন। এখন তো আর কোনো সন্দেহ নেই। হুজ্জত তথ্য-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যারা জয়লাভ করেছে তোমরা কি তাদের অবস্থা জানো? তারা পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব জাতি। সাইন্স আর টেকনোলজির হিসেবে তারা সবার চেয়ে পিছিয়ে। আজ অব্দি সেখানকার অধিকাংশ লোকদের বাহন ঘোড়া ও খচ্চর। অনেক কম এলাকায় ভালো সড়কব্যবস্থা আছে। অল্পসংখ্যক যেসব সড়ক আছে তা বিদেশি শক্তির হাতে নির্মিত। হয়তো আল্লাহ তাআলা সড়ক নির্মাণের জন্য এ আন্তর্জাতিক শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমে সড়ক বানিয়ে দিয়েছেন, ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর ব্যবস্থাপনা বড় বিস্ময়কর। যখন কাজ শেষ হল তখন আল্লাহ তাআলা কান ধরে তাদেরকে বের করে দিলেন। তারা জুতো পর্যন্ত রেখে পালিয়েছে। কাপড় ছেড়ে, হাতিয়ার ছেড়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়েছে। আল্লাহু আকবার! আল্লাহর কুদরত কত মহান! সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেছে। দখলদার শক্তি যখন দেখল এখানে তারা আর সাফল্য পাবে না তখন তারা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু পিছু হটারও তো একটা ভদ্রোচিত পদ্ধতি আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নও এ লোকদের দৃড়তা আর অবিচলতার সামনে হার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন কেবল একটি দেশের নাম ছিল না। বরং অনেকগুলো রাষ্ট্র মিলে একটি ইউনিয়ন ছিল। তারাও গিয়েছিল কিন্তু এভাবে যায়নি। তারা এক বছর আগে থেকেই ইঙ্গিত দিল এবং ধীরে ধীরে সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের নাগরিক আর সৈন্যদের সরিয়ে নিয়েছিল। আজও সে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। وَتِلْكَ الْاَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِۚ ۰۰۱۴۰[2]-এর আশ্চর্য বাস্তবায়ন! এসব দেশের সরকারই আজ এ পরিবর্তনকে সমর্থন করছে। আল্লাহর কি কুদরত! অনেক বেশি ভাবতে হবে। এসময়ের বিশেষ আলোচ্য বিষয় এটাই যে, আমাদের সবাইকে আল্লাহকে চিনতে হবে। অন্তরে আল্লাহর প্রতি আস্থা-বিশ্বাস মজবুত করতে হবে।
আল্লাহর ক্ষমতার ওপর নিজের বিশ্বাসকে তাজা করুন
বন্ধুরা, আমাদেরকে এটা স্বীকার করতে হবে-আর এ স্বীকারোক্তি নিজেদের মধ্যে নৈরাশ্য সৃষ্টির জন্য নয়-এখনও আমাদের ঈমানের হাকিকত নসিব হয়নি। আমরা যেভাবে আল্লাহকে চিনি এভাবে চেনাকে ঈমান বলা যায় না। ঈমান তো হচ্ছে আল্লাহকে যথাযথ চেনা। আল্লাহ তাআলা তার কুদরত দেখিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর বড় বড় নামজাদা বিশ্লেষকরাও এখন কোনো বিশ্লেষণ করতে পারছেন না। গত দশ পনের দিন যাবৎ আমার শরীর অনেক খারাপ। আমি রুম থেকে বেশি বের হতে পারিনি। ফলে আমি অনেক সময় পেয়েছি। দুনিয়ার নামিদামি বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ আমি পড়েছি। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ান এবং টাইমসসহ আন্তর্জাতিক ১৫-১৬টি পত্রিকায় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। কোথাও এ প্রশ্নের সঠিক জবাব পাইনি। আখের হল কি? সবাই বিস্ময় প্রকাশ করছে। নিবন্ধের শেষে সবাই একথা স্বীকার করেছেন যে, সত্য কথা হল নিশ্চিতভাবে এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিহাসে এ প্রথম নিজেদের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা জনসমক্ষে স্বীকার করেছে। কি অস্বাভাবিক ব্যাপার! যদি ব্যর্থতার শিকার হতো তবুও তো তারা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এর স্বীকৃতি দিত না। কেননা এর ফলে নিজের লোকদের সাহস হারিয়ে যায়। কিন্তু ব্রিটিশ আর্মি চীফ দুইদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে সম্বোধন করে বলেছেন আমরা ২০ বছর পর্যন্ত বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছি। বিবিসিতে তার যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে সেখানে তিনি পরিষ্কার শব্দে বলেছেন এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের লোকেরাও ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে। আমাদের দেশের লোকেরা যদিও এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেনি কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাপারেও অন্য দেশের বিশ্লেষকরা একই কথা বলেছেন। এখন কথা হল এ ব্যর্থতা কেন? এর কারণ তো বলতে হবে। এ ব্যর্থতা এজন্য হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা একে ব্যর্থ করার ফয়সলা করেছেন। তারা এ তাৎপর্য পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে না। তারা যদি এ তাৎপর্য খুঁজে না পায় তারা অপারগ হতে পারে কিন্তু আমরাও যদি এ তাৎপর্য না বুঝি তাহলে কীভাবে হবে? যারা দিবানিশি কালাল্লাহ আর কালার রসুলের মধ্যে ডুবে আছি। এ মুহূর্তে আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর শক্তিতে বিশ্বাস আকাশসম উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়া দরকার। আল্লাহ তাআলা বাস্তবেও তাই যেমন তিনি বলেছেন। তিনি আযীযুন যুনতিকাম তথা মহাপরাক্রমশালী এবং প্রতিশোধ গ্রহণকারী। তিনি কাওয়িয়্যুন আযীয তথা মহাশক্তিধর এবং মহাপ্রতাপশালী। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সামনে সংখ্যার কোনো মূল্য নেই। হাতিয়ার আর অস্ত্রশস্ত্রের কোনো দাম নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোনো অর্থ নেই। আল্লাহর সিদ্ধান্তকে কেউ টলাতে পারে না। আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন। আল্লাহ নিজ বিষয়ে সর্বোচ্চ স্বাধীন। তিনি যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন শুধু এটুকু বলেন, হয়ে যাও তা সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়। আল্লাহ যা সিদ্ধান্ত নেন তা হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।
প্রিয় ভাইয়েরা, আল্লাহর ওপর বিশ্বাসকে দৃড় করুন। বর্তমানের বিষয়ই তো হল বিশ্বাস আর ইয়াকিন। এ সময়ের বিশেষ ইঙ্গিত এবং এ ঘটনার যেটা প্রধান শিক্ষা সেটা হল, নিজের বিশ্বাসকে অবিচল বানানো। আল্লাহর প্রতি ইয়াকিনকে তাজা করা। দ্বিতীয় যে শিক্ষা সেটা হচ্ছে, আমরা আগেও যেমনটা বলেছি, আমাদের এ শিক্ষাব্যবস্থার উপকারিতা এবং শক্তি। আল-হামদু লিল্লাহ সবরকম দুর্বলতা সত্ত্বেও আজও এ দীনী শিক্ষাব্যবস্থার কল্যাণে যুবকদের মধ্যে যে আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখা যায় সেটা কোথাও এভাবে দৃষ্টিগোচর হয় না। তাই আপনারা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করুন যে, আপনারা একটি দীনী শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। এ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সামান্য ডিগ্রি অর্জন করাকে যথেষ্ট মনে করা আমি মনে করি আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানকে সস্তায় বিক্রি করে দেওয়া। এজন্য পূর্ণ দৃড়তা, সাহস, গাম্ভীর্য এবং আত্মনিবেদনের সঙ্গে নিজের ঈমান আর বিশ্বাসকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হল, আপনি নিজের অধ্যয়নের জন্য সেসব কিতাব নির্বাচন করুন, যেগুলো আপনার আগ্রহ আর সাহস বাড়াবে। যেমন আল্লামা ইকবালের কাব্যমালা অধ্যয়ন করুন। সেসব লেখকদের বই পড়ুন, যারা কেবল লেখকই নন; বরং ময়দানেরও লোক। সম্প্রতি আমি মাওলানা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদবী রাহিমাহুল্লাহর সফরনামা ‘কাবুল দরিয়া থেকে ইয়ারমুক দরিয়া পর্যন্ত’ পড়ছিলাম। পড়ে সমগ্র সত্তা আন্দোলিত হয়ে উঠল। আবুল হাসান আলী নদবী কত বড়মাপের জ্ঞানী ছিলেন আল্লাহু আকবর! এ সফরনামা কেবল সফরনামা নয়; বরং সেসব দেশের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যত। এভাবে সেসব বই পাঠ করুন, যেগুলো আপনার ভেতরে জযবা আর উদ্দীপনা তৈরি করবে। আর নিজের চেয়ে উত্তম ঈমান এবং আমলের অধিকারী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য থেকে বেশি বেশি উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করুন।
ঈমানী দৃঢ়তা তৈরি করার সহজ নিয়ম
আপনি যদি চান যে, আপনার হৃদয়ে ঈমানী দৃড়তা, আগ্রহ-উদ্দীপনা এবং বাস্তব সাহস তৈরি করবেন তাহলে আমি আপনাকে একটি সহজ পদ্ধতি বলতে চাই। প্রতিদিন শোয়ার আগে উম্মাহর যারা মুজাদ্দিদ আর সংস্কারক ছিলেন, যারা উম্মাহর জন্য বিপ্লবী অবদান রেখেছেন এবং ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য নিজেদের জীবন কুরবান করেছেন তাদের নাম ধরে ধরে তাদের জন্য ঈসালে সাওয়াব করবেন। এখানে কোনো বিশেষ কষ্ট নেই। ঈসালে সাওয়াবের জন্য আলাদা করে কিছু পড়তেও হবে না। আপনি শুধু এটুকু করুন, যদি সম্ভব হয় দুই রকআত নামাজ আদায় করুন। যদি না পারেন শুধু দোয়াই করুন কোনো অসুবিধা নেই। বলুন হে আল্লাহ, আমার আজকের পুরো দিনের নফল আমলের সাওয়াব রসুলুল্লাহ (সা.) এবং তার পরিবারবর্গের উসিলায় কবুল করে এর সাওয়াব উম্মাহর সংস্কারক এবং মুজাহিদদের কবরে অধমের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেন। এখানে আপনি নাম নিতে পারেন মুজাদ্দিদে আলফে সানী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী এবং তার সন্তানেরা, হযরত সাইয়েদ আহমদ শহিদ, হযরত নানুতুভী, হযরত গঙ্গুহী, হযরত শায়খুল হিন্দ, হযরত থানভী, হযরত মাওলানা ইলিয়াস এবং মাওলানা ইউসুফ, আল্লামা ইকবাল এবং হাসান আল-বান্না রাহিমাহুমুল্লাহর প্রমুখের নাম। এভাবে বলুন, হে আল্লাহ, আমার নফল আমলের সাওয়াব এদের পর্যন্ত পৌঁছে দেন। এটা যুগপৎ বিস্ময়কর এবং সহজ পদ্ধতি। এ আমলের মাধ্যমে প্রথমত আপনার হৃদয়ে এ ব্যক্তিদের ভালোবাসা এবং এদের সঙ্গে মুনাসাবাত তৈরি হতে থাকবে ধীরে ধীরে। দ্বিতীয়ত যখন আপনি তাদের খেদমতে দৈনন্দিন এ হাদিয়া পাঠাতে থাকবেন, তারাও এমন কৃতজ্ঞ ব্যক্তি যে, যখন তাদের কাছে হাদিয়া পৌঁছুবে তারা অবশ্য আল্লাহর কাছে এ দোয়া করবেন হে আল্লাহ, আপনার যে বান্দা আমাদের কাছে এ হাদিয়া প্রেরণ করছে তাদেরকে আপনি নিরাপদে রাখুন এবং দীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন। আপনি সামান্য ভাবুন তো যাদের জন্য স্বয়ং মুজাদ্দিদ সাহেব, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দোয়া করবেন, মাওলানা ইলিয়াস আর আল্লামা ইকবাল দোয়া করবেন আল্লাহ কি তাদের দোয়া প্রত্যাখ্যান করবেন? আমাকে এক ভাই বিশেষ গোপনীয়তার সঙ্গে বিশেষ জায়গায় বসে বিশেষ মজলিসে এ পদ্ধতি বলেছিলেন। এমনভাবে বলেছিলেন যেন তিনি আমাকে সবচেয়ে মূল্যবান তথ্য দিচ্ছিলেন। আজকে আমি সবার ভালোবাসায় আপনাদের সবাইকে এ পদ্ধতি সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি। আপনি যাদেরকেই চান এ দোয়ায় শামিল করতে পারেন। আপনার বাবা-মা, আপনার বিশেষ শিক্ষক যাদের কাছ থেকে আপনি পর্থিব দিক থেকে, ইলমী-রুহানী-চিন্তাগত দিক থেকে উপকৃত হয়েছেন তাদেরও নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন। দশ মিনিট লাগবে এ আমল করতে। কিন্তু দেখবেন এর ফলে আপনার আধ্যাত্মিকতা কীভাবে উন্নতি লাভ করে। যে ব্যক্তিদের নাম আমি উল্লেখ করেছি তারা নিংসন্দেহে এমন ব্যক্তিত্ব, তারা যদি আগের যুগে আসতেন তাহলে হয়তো নিজের যুগের নবী হতেন।
আচ্ছা কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আমরা মুহাম্মদ (সা.) এবং তার পরিবারের ওপর কেন দরুদ পাঠ করি? কেন আমরা হযরত ইবরাহীম এবং তার পরিবারবর্গের জন্য দরুদ পাঠ করি? তাদেরকে স্মরণ করার কি উদ্দেশ্য? নবীজি বা নবীজির পরিবার কি আমাদের দোয়ার মুখাপেক্ষী? আমাদের দোয়ার কারণে কি তাদের বিশেষ কোনো উপকার হবে? না হবে না। এটাই সে জিনিস যে, দরুদ ও সালামের এ বিস্ময়কর কর্মপন্থা আমাদেরকে এজন্য দান করেছেন যে, যদি তোমরা খুব অনুভূতির সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে দরুদ ও সালাম পাঠ কর তাহলে সরাসরি তোমরা নবীজির পক্ষ থেকে ফয়েযপ্রাপ্ত হবে। কারণ এটা সম্ভবই নয় যে, নবীজিকে সালাম প্রেরণ করা হবে আর তিনি এর জবাব দেবেন না। স্বয়ং নবীজি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাদের কাজ হল, পৃথিবীর যে প্রান্তে যেকোনো মুসলমান আমার জন্য দরুদ পাঠ করবে সে দরুদ সে ফিরেশতাগণ আমার কাছে পৌঁছে দেবেন। তারা নাম ধরে ধরে বলবেন আপনার অমুক উম্মত আপনার খেদমতে দরুদ ও সালামের হাদিয়া পাঠিয়েছেন। নবীজি (সা.) সঙ্গে সঙ্গে এর জবাব দেন। নবীজির জবাব যদি কেউ পান তিনি কি গুনাহে লিপ্ত হতে পারেন? তিনি কি লাঞ্চিত হবেন? তিনি কি ক্ষুধার্ত থেকে যাবেন?
আপনাদেরকে বলছি, আমরা মনে করি রিজিক লাভ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কোনো জায়গায় কোনো জব পেয়ে গেলাম বা কোথাও কোনো চাকুরি হয়ে গেল। আল্লাহর বান্দা, নামাজের মাধ্যমে কি রিজিক পাওয়া যায় না? অপর ভাইয়ের কল্যাণ কামনার দ্বারা কি রিজিক লাভ হয় না? ভালোবাসা দয়ার মাধ্যমে কি জীবিকা লাভ করা যায় না? আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার দ্বারা কি রিজিক পাওয়া যায় না? কোনো বন্ধুকে সাহায্য করলে কি রিজিক পাওয়া যায় না? রিযিকের দুয়েকটি মাধ্যমের দিকে কেবল আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি আপনাদের সত্যি করে বলছি রিযিকের আসল মাধ্যম আধ্যাত্মিক। وَمَنْ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًاۙ۰۰۲ وَّيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُؕ ۰۰۳[3] এটা আল্লাহর ওয়াদা। তাকওয়া অবলম্বন করার মাধ্যমে অবশ্যই রিজিক পাওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের আল্লাহর প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস নেই। রাব্বে কাবার শপথ! রিযিকের বাস্তব মাধ্যম বস্তুগত কোনো কিছু নয়; বরং আধ্যাত্মিক।
সবদিক থেকে নিজের দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টা আমাদের দায়িত্ব
একটি শেষ কথা। আমাদের মনে এ আগ্রহ এ ব্যথা আর প্রত্যয় অবশ্যই থাকা প্রয়োজন যে, আমাদেরকে আল্লাহ এ ভূখণ্ডে সৃষ্টি করেছেন। এ দেশকে সাজানো, এদেশের এমন সেবা করা যেন এদেশে কোনো গরিব না থাকে, কোনো নিপীড়িত লোক না থাকে, কোনো অধিকার বঞ্চিত মানুষ না থাকে। এদেশের সবাই যেন ইনসাফ লাভ করে। এদেশের কাচা-পাকা প্রতিটি ঘরে যেন সম্মানের সঙ্গে জীবিকা পৌঁছে যায়। এসব বিষয় আমাদের ধর্মীয়, ইসলামি এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সবদিক থেকে আমাদের এদেশকে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। আজকাল যখন ‘ডেভেলপমেন্ট’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয় তখন এর কেবল দুটি দিকই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কেবল বস্তুগত উন্নতি আমাদের কল্পনায় আসে। বস্তুগত উন্নয়নও হচ্ছে এক অদ্ভূত পন্থায়। রাষ্ট্র দিনদিন সম্পদশালী হচ্ছে আর জনগণ দিনদিন গরিব হচ্ছে। কারণ একটি দেশ সম্পদশালী হয় স্টক মার্কেট আর রিজার্ভ অর্থের মাধ্যমে। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কোনো লাভ নেই। বর্তমানের অর্থনৈতিক একেই বলে। আমাদের কামনা এটা হওয়া উচিত যেহেতু এটা আমাদের দায়িত্বও বটে সবদিক থেকে যেন আমাদের দেশ উন্নত হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগী প্রমাণিত হই। জ্ঞানের প্রচারপ্রসার, নিরক্ষরতা দূরিকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, নৈতিক অবস্থার উন্নয়ন মোটকথা সর্বদিক থেকে যেন আমরা সহযোগী হতে পারি।
আমরা যখন এসব সক্রিয়তা অবলম্বন করি তখন কিছু মানুষের ভুল বোঝাবুঝিও তৈরি হতে থাকে। তাদের মনে হয় আমরা দেশের শত্রু। অন্য কোনো দেশের এজেন্ট আমরা। তাদের কথায় আমাদের মন খারাপ করা উচিত নয়। আমাদের প্রিয় নবীজি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন ‘হে আল্লাহ, আমার জাতিকে সঠিক বুঝ দান করুন, কেননা তারা বুঝতে পারছে না।’ এ শব্দবন্ধ ‘তারা বুঝতে পারছে না’ স্মরণ রাখলে কখনও রাগ আসবে না। মুসলমানের গৃহে জন্ম নেওয়া লাখো মানুষ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া হাজারও মানুষ পর্যন্ত যখন বুঝতে পারেন না তখন এই বেচারারা, যাদের জন্ম হয়েছে অমুসলিম পরিবারে তারা যদি বুঝতে না পারে তাহলে আমাদের অভিযোগ করার অধিকার কোথায়? এটা তো হওয়ারই কথা। বলাবাহুল্য যে, আন্তরিক প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় অদ্ভূত অদ্ভূত তামাশা করা হবে। মিডিয়া তাদের বিরুদ্ধে বিষ উদগীরণ করবে। তাদের বদনাম করার চেষ্টা করবে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রিপোর্ট করা হবে। আরও কত কিছু হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এ পরিস্থিতিতে বান্দার পরীক্ষা হয় সে কি একে খারাপ মনে করছে কিনা। যদি সে একে খারাপ মনে করে তাহলে বুঝতে হবে তার মনে অহংকার আছে। অহংকারীদের সঙ্গে আল্লাহর সাহায্য থাকে না। যদি এ আচরণে বিরক্ত না হয়ে আল্লাহর কাছে এ বলে ফরিয়াদ জানায় হে আল্লাহ আমি কি করব? আমি তাদেরকে বোঝাতে পারছি না। মুসা (আ.) তো এটাই বলেছিলেন, وَيَضِيْقُ صَدْرِيْ وَلَا يَنْطَلِقُ لِسَانِيْ ۰۰۱۳[4] আমি বলতে পারছি না। হযরত মুসার মতো দৃড়তাসম্পন্ন নবী পর্যন্ত নিজের অক্ষমতার কথা অকপটে স্বীকার করছেন। নবীজি তায়েফ থেকে ফিরে আসার সময় অত্যন্ত ভগ্নহৃদয়ে এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ আমি আপনার পায়ে মাথা রেখে কাঁদছি। আমি কি করব আমার কাছে তো কোনো শক্তি নেই। কোনো কৌশল আমার মাথায় আসছে না। মানুষের মধ্যে আমার কোনো মূল্য নেই। যার ইচ্ছে আমার ওপর অত্যাচার করছে। সব দোষ আমার হে আমার রব।’ সকল নবীরাই উম্মতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে বারবার বলতেন, ‘হে লোকসকল আমি তোমার আমি তোমাদের কল্যাণকামী, আমার ওপর তোমরা ভরসা করতে পার।’ একথাগুলো তারা নিজেদের ছাত্র আর অনুগামীদের নয়; যারা তাদেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করত, এমন শত্রুদেরকে বলতেন।
এদেশ সম্পর্কে আমাদের মনে কি কি কামনা-বাসনা আছে আমরা তো মন খুলে দেখাতে পারি না। খুব সত্য মন নিয়ে আমরা কামনা করি আমাদের এ দেশ সমগ্র পৃথিবীতে সবার চেয়ে অগ্রসর থাকুক। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয় হিসেবে নয়; বরং দায়িত্ববোধ থেকে বলছি, আমাদের মনে সবার আগে একথা এসেছে যে, এদেশ সবদিক থেকে কীভাবে উন্নতি লাভ করবে? আমাদের জানা আছে এদেশে কখন, কীভাবে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। কীভাবে নিরাপত্তার বিকাশ ঘটবে। এজন্য আমরা পূর্ণ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আপন-পর সবাইকে সম্বোধন করে এ নিশ্চয়তা প্রদান করতে চাই আল্লাহ আমাদের এ আওয়াজ প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিন মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা সর্বোচ্চ অনুগ্রহকারী প্রতিপালক আমাদের জীবনের জন্য যে নিয়মনীতি দান করেছেন, যদি সে নিয়মনীতি প্রয়োগ করা হয় তবে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, নিরাপত্তা এবং শান্তি আসবে। সৃষ্টি হবে স্বচ্ছলতা। এজন্যই আমরা মহান অনুগ্রহশীল প্রতিপালকের প্রদত্ত নিয়মনীতি অনুসারে সমাজের পুনর্গঠন করতে চাই। প্রজন্মকে এ নীতির ওপর গড়ে তুলতে চাই। এটাই আমাদের আশা। আমরা এদেশে একটি বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি করতে চাই না। আমরা অত্যন্ত জোর দিয়ে সেসব দল থেকে সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা করছি, যারা মনে করে নিরাপত্তা বিঘ্ন করে, সন্ত্রাসবাদ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাজ সংস্কার করবে। এটা তাদের ভুল ধারণা। আমরা চাই কথাবার্তার মাধ্যমে, মতবিনিময়ের মাধ্যমে, সমাজসেবা এবং মানবসেবার মাধ্যমে সর্বোপরি ধৈর্য আর সহনশীলতা দিয়ে এ দেশকে আমরা পরিবর্তন করব। আর এটা কোনোভাবেই অপরাধ নয়। যেটা অপরাধ নয় তাকে কিছু লোক কিছুদিন অপরাধভাবে। এটা কোনো নতুন জিনিস নয়। নবীদের কল্যাণকামনাকে পর্যন্ত অপরাধ মনে করা হয়েছে। কোনো কোনো নবীকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। তাদের সামনে আমাদের কি মূল্য? আমাদের কোনো মূল্য নেই ঠিক আছে। তবে এ দেশের মানুষের কল্যাণকামনার দায়িত্ব আমাদের। আমি আপনাদেরকে এবং বিশেষ করে এ দেশ ও জাতির ভবিষ্যত প্রিয় যুবকদের কাছে আবেদন করতে চাই আপনারা আল্লাহর সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন এবং সম্ভব হলে আমার সামনেও প্রতিজ্ঞা করুন আমরা সবদিক থেকে আমাদের দেশের কল্যাণের জন্য নিজের জান-মাল মনোযোগ সববিছু কুরবান করে দেব। মুহূর্তের জন্যও পেছনে ফিরে তাকাব না। কে আমাদের মূল্যায়ন করল কে করল না তা মোটেই দেখব না। কারও কাছে আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকবে না। ‘আমরা তোমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাওয়াব। তোমাদের কাছে আমরা এর কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চাই না। সুরা দাহর’ আমাদের প্রতিদান তো একমাত্র আল্লাহই দেবেন। সুতরাং আজকে সত্যমনে প্রতিজ্ঞা করুন। হতে পারে এ মুহূর্ত তোমাদের কবুলিয়তের কারণ হয়ে যাবে। আমি আল্লাহকে সাক্ষী বানিয়ে বলছি আমি নিজের দেশ ও জাতির সর্বদিক উন্নতির নিমিত্তে সবকিছু কুরবান করে দেব। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন এবং এ পথে আমাকে কবুল করুন। ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
অনুবাদক: শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া সিলোনিয়া ফেনী
[1] আল-কুরআনুল করীম, সূরা ইবরাহীম, ১৪:৫
[2] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আলে ইমরান, ৩:১৪০
[3] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আত-তালাক, ৬৫:২-৩
[4] আল-কুরআনুল করীম, সূরা আশ-শুআরা, ২৬:১৩