জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি-২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ-১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নামাজে হাত কোথায় বাঁধবে?

নামাজে হাত কোথায় বাঁধবে?

মূল: শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.)

তাসহীল ও তারতীব

শায়খুল হাদীস মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)

মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী

অনুবাদ

মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী

ফকীহদের বিভিন্ন মাযহাব

১. (হানাফী মাযহাব:) হানাফীদের নিকট নামাজে হাত বাঁধা একটি সুন্নত। পুরুষদের নাভির জন্য নীচে হাত বাঁধা আরেকটি সুন্নত। আদ-দুররুল মুখতারে আছে,

وَوَضْعُ يَمِيْنِهِ عَلَىٰ يَسَارِهِ، وَكَوْنُهُ تَحْتَ السُّرَّةِ لِلرِّجَالِ.

‘আর স্ব স্ব ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখা এবং পুরুষের নাভির নীচে রাখা (নামাজের সুন্নত)।’[1]

আল্লামা শামী (w) وَكَوْنُهُ-এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,

قَدَّرَ الْكَوْنَ لِـمَا ذَكَرْنَا قَبْلَهُ.

আদ-দুররুল মুখতার প্রণেতা كَوْنٌ শব্দ এই কারণে উহ্য মেনেছেন যা আমরা আগে উল্লেখ করেছি।’[2]

অর্থাৎ একথা বলার জন্য যে, এই পৃথক পৃথক দুটো সুন্নত। একটি হচ্ছে হাত বাঁধা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে নাভির নীচে বাঁধা। আর এ বিধানটি পুরুষের জন্য। হাত বাঁধার নিয়ম হচ্ছে, ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বৃত্ত করে বাম হাতের কবজি পেঁচিয়ে ধরবে। অবশিষ্ট তিন অঙ্গুলিগুলো কবজির ওপর প্রসারিত করে রাখবে। আর মহিলারা ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে হাতদুটো বুকের ওপর রাখবে।[3]

২. (মালিকী মাযহাব:) মালিকীদের নিকট নফল নামাজে বুকে হাত বাঁধা জায়েজ আছে আর ফরজ নামাজে (সেটি) মকরুহ। তাঁদের নিকট মুস্তাহাব হচ্ছে, হাত ছেড়ে দেবে। আল্লামা দারদীর w-এর আশ-শারহুস সগীরে আছে,

وَنُدِبَ إرْسَالُـهُمَا …، وَجَازَ الْقَبْضُ أَيْ قَبْضُهُمَا عَلَى الصَّدْرِ بِنَفْلٍ أَيْ فِيْهِ، وَكُرِهَ الْقَبْضُ بِفَرْضٍ لِلْاِعْتِمَادِ: أَيْ لِـمَا فِيْهِ مِنْ الْاِعْتِمَادِ أَيْ كَأَنَّهُ مُسْتَنِدٌ.

‘দুই হাত ছেড়ে দেওয়া মুস্তাহাব। আর দুই হাত বুকের ওপর বাঁধা নফল নামাজে জায়েজ এবং ফরজ নামাজে মকরুহ। ঠেস লাগানোর কারণে অর্থাৎ হাত বাঁধার ক্ষেত্রে ঠেস লাগানো হয় অর্থাৎ সে যেন কোনো জিনিসের সাথে ঠেস লাগাচ্ছে।’[4]

৩. (শাফিয়ী মাযহাব🙂 শাফিয়ীদের নিকট হাত বাঁধা সুন্নত এবং বুকের নীচে নাভির ওপরে বাধা মুস্তাহাব। শারহুল মুহাযযাবে আছে,

وَيَجْعَلُهُمَا تَحْتَ صَدْرِهِ وَفَوْقَ سُرَّتِهِ، هَذَا هُوَ الصَّحِيْحُ.

‘স্বীয় দুই হাত বুকের নীচে নাভির ওপরে বাঁধবে। শাফিয়ী w মাযহাবে এটিই সঠিক ও সুস্পষ্ট মত।’[5]

৪. (হাম্বলী মাযহাব:) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল w থেকে তিনটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে, (১) নাভির নীচে বাঁধবে, (2) নাভির ওপর বাঁধবে এবং (৩) দুই জায়গায় বাঁধার অবকাশ। অবশ্য মতন (মৌলিক কিতাবের ভাষ্য)-এ যে মতটি গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, হাত নাভির নীচে বাঁধবে। মুখতাসারুল খিরাকীতে আছে, وَيَجْعَلُهُمَا تَحْتَ سُرَّتِهِ. (স্বীয় দুই হাত বুকের নীচে নাভির ওপরে বাঁধবে।)[6] এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ আল-মুগনীতে মত-তিনটি উল্লেখ রয়েছে।[7]

বিশেষ দ্রষ্টব্য

মাযহাবসমূহের উপর্যুক্ত বিস্তারিত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, সে সকল হযরতের নিকট হাত বাঁধা সুন্নত, তাঁদের মাঝে শক্ত কোনো মতবিরোধ নেই। কেননা হানাফীদের নিকট নাভির নীচে এমনভাবে হাত বাঁধা সুন্নত, যেন নাভি হাতের উপরের অংশে লেগে থাকে এবং শাফিয়ীদের নিকট এমনভাবে হাত বাঁধা সুন্নত যেন নাভি হাতের নীচের অংশের সাথে লেগে যায়। আর চার ইমামের কেউ বুকের ওপর হাত বাঁধা মুস্তাহাব হওয়ার বক্তা নন। মালিকীদের এখানেও নফল নামাজে বুকের ওপর হাত বাধা স্রেফ জায়েজ, মুস্তাহাব নয়।

হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহ

নামাজে হাত বাঁধা সুন্নত। এ বিষয়ে সহীহ বর্ণনা বিদ্যমান। আর এর সংখ্যা ২০ পর্যন্ত পৌঁছুয়। যার মধ্যে দুটি মুরসাল, বাকিগুরো মরফু।[8] খোদ ইমাম মালিক w মুআত্তায় হাত বাঁধার রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন।[9] উদাহরণস্বরূপ[10] এখানে তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হচ্ছে,

১. প্রথম রেওয়ায়েত: বুখারী শরীফে আছে,

قَالَ سَهْلُ بْنُ سَعْدٍ: كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ ذِرَاعِهِ الْيُسْرَىٰ فِي الصَّلَاةِ، قَالَ أَبُوْ حَازِمٍ: لَا أَعْلَمُهُ إِلَّا يَنْمِيْ ذَلِكَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ.

‘হযরত সাহল h বলেন, লোকদেরকে হুকুম দেওয়া হত যে, তারা যেন নামাজে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখে। হযরত সাহল (h) থেকে বর্ণনাকারী আবু হাযিম (w) বলেন, আমার জানা মতে একথা হযরত সাহল (h) হুযুর আকরম D-এর দিকে সম্বন্ধ করেছেন।’[11]

আবু হাযম (w)-এর কথার তাৎপর্য হচ্ছে, লোকদের হাত বাঁধার হুকুম হুযুর আকরম D-এই দিয়েছেন।

২. দ্বিতীয় রেওয়ায়েত: মুসলিম শরীফে হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুযুর h-এর দীর্ঘ রেওয়ায়েতে আছে,

ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَى الْيُسْرَىٰ.

 ‘এরপর হুযুর আকরম D তাঁর ডান হাত হাতের ওপর রেখেছেন।’[12]

৩. তৃতীয় রেওয়ায়েত: হযরত জাবির h বলেন, হুযুর আকরম D এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি নামাজ পড়ছিলেন এবং স্বীয় বাম হাত ডান হাতের ওপর রেখেছিল। হুযুর আকরম D তাঁর হাত ছাড়িয়ে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখেন।[13]

নোট: নামাজে হাত ছেড়ে দাঁড়ানোর কোনো রেওয়ায়েত আমাদের জানা নেই। মালিকীরাও এ বিষয়ে কোনো রেওয়ায়েত উল্লেখ করেননি। বরং তাঁরা হাত ছেড়ে দাঁড়ানোর নিছক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ দিয়েছেন যে, হাত বাঁধা মানে ঠেস লাগানো। আর নফল নামাজে ঠেস লাগানো সাধারণভাবে জায়েয, তবে ফরজ নামাজে বিনাপ্রয়োজনে মকরুহ। এজন্য তাঁরা ফরজ নামাজে হাত বাঁধাকে মকরুহ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু নুসুসের মোকাবেলায় বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ চলে না।

হাত বাঁধার জায়গাবিষয়ক রেওয়ায়েতসমূহ

নামাজে হাত কোথায় বাঁধা যায়? এ প্রসঙ্গে তিনটি মত পাওয়া যায়। (১) বুকের ওপর, (২) নাভির নীচে ও (৩) নাভির ওপর বুকের নীচে। এই তৃতীয় মতটি শাফিয়ীদের নিকট গৃহীত মাযহাব। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কোনো রেওয়ায়েত নেই। মাআরিফুল সুনানে আছে,

وَمَذْهَبُ الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ فِيْ رِوَايَةِ: تَحْتَ الصَّدْرِ وَفَوْقَ السُّرَّةِ ، وَلَكِنْ لَا دَلِيْلَ فِي الْـمَرْفُوْعِ وَلَا فِي الْـمَوْقُوْفِ لِـهَذَا التَّفْصِيْلِ.

‘এক বর্ণনা মতে, ইমাম শাফিয়ী (w) ও ইমাম আহমদ (ইবনে হাম্বল w)-এর মাযহাব হচ্ছে বুকের নীচে ও নাভির ওপর হাত বাঁধার। কিন্তু এ বিষয়ে না তো কোনো মরফু রেওয়াতে কোনো দলিল আছে, না মওকুফ রেওয়ায়েতে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের কথা ও কর্মে)।’[14]

এজন্য শাফিয়ীরা স্বীয় মাযহাব অনুযায়ী عَلَىٰ صَدْرِهِ (বুকের ওপর হাত বেঁধেছেন) বিষয়ক রেওয়াতসমূহ দ্বারা দলিল পেশ করেন। ইমাম নববী (w) লিখেছেন,

وَاحْتَجَّ أَصْحَابُنَا بِحَدِيْثِ وَائِلِ بْنِ حُجُرٍ، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ يَدِهِ الْيُسْرَىٰ عَلَىٰ صَدْرِهِ، رَوَاهُ أَبُوْ بَكْرِ بْنُ خُزَيْمَةَ فِيْ «صَحِيْحِهِ».

‘আমাদের ইমামরা হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর (h)-এর হাদীস দ্বারা দলিল দেন যে, ‘আমি রসুলুল্লাহ D-এর পেছনে নামাজ পড়েছি। তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের ওপর রেখেছেন। আর হাতদুটি ছিল বুকের ওপর।’ হাদীসটি আবু বকর ইবনে খুযায়মা তাঁর সহীহে[15] বর্ণনা করেছেন।’[16]

অবশিষ্ট দুই মতের প্রসঙ্গে রেওয়ায়েত বিদ্যমান, যা নিম্নরূপ:

বুকে হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহ

(বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে রেওয়ায়েত) তিনটি এবং তিনটিতে বিতর্ক রয়েছে।

১. হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুযুর h-এর রেওয়ায়েত যা সহীহ ইবনে খুযায়মা থেকে বর্ণনা করা হয়।[17] এ সম্পর্কে কথা হচ্ছে, ইবনে খুযায়মার সহীহ শুধু নামেই সহীহ, এর প্রত্যেকটি রেওয়ায়েত সহীহ হওয়া জরুরি নয়। যেমনটি সাখাভী (w) ফাতহুল মুগীসে এবং শায়খ আবু গুদ্দাহ (w) আল-আজবিবাতুল ফাযিলা (পৃ. ১৪৬)-এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।[18]

এছাড়া হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর h-এর প্রকৃত হাদীস মুসলিম শরীফে বিদ্যমান। হাদীসটি হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহের অধীনে দ্বিতীয় নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।[19] আল্লামা ইবনে কাইয়িম ই’লামুল মুওয়াক্কিয়ীন আন রব্বিল আলামীনে অদ্ভুত এক ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছেন যে, হযরত ওয়ায়িল h-এর বর্ণনায় عَلَىٰ صَدْرِهِ (বুকের ওপর হাত বেঁধেছেন) এটা শুধু মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের বাড়ানো[20], যাকে ইমাম বুখারী (w) মুনকারুল হাদীস (যার হাদীস প্রত্যাখ্যাত) আখ্যা দিয়েছেন।[21] তাছাড়া সুফিয়ান সাওরী (w)-এর অন্যান্য সকল শাগরেদ এ হাদীলে এ শব্দ বাড়াননি।

২. হযরত তাউস (w)-এর মুরসাল রেওয়ায়েত, যা আবু দাউদ শরীফে আছে।[22] এর সনদে সুলায়মান ইবনে মুসা একজন রাবী রয়েছেন, মৃত্যুর পূর্বেই যার স্মৃতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। যার কারণে তাঁর হাদীসসমূহ আর সহীহ থাকেনি।

৩. হযরত হুলুব (w)-এর হাদীস[23], যার রাবী সিমাক ইবনে হারব। প্রথমত তিনি দুর্বল রাবী, দ্বিতীয়ত তাঁর উস্তাদ ভাই ইমাম ওয়াকী (w) ও আবুল আহওয়াস (w)-এর রেওয়ায়েতে عَلَىٰ صَدْرِهِ (বুকের ওপর হাত বেঁধেছেন)-এর সংযুক্তি নেই। তাই সিমাকের রেওয়ায়েত শায (দুর্লভ)।

নাভির নীচে হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহ

(নাভির নীচে হাত বাঁধার রেওয়ায়েত)ও তিনটি।

১. হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রেওয়ায়েত, যা মুসনদে আহমদ, সুনানে দারাকুতনী, সুনানে বায়হাকী এবং আবু দাউদ শরীফের দুই সংস্করণে অর্থাৎ শুধু ইবনে দাসতা ও ইবনুল আ’রাবীর সংস্করণে বিদ্যমান।[24] এর এক রাবী আবু শায়বা আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক ওয়াসিতী মাতরূক (বিবর্জিত) এবং অন্য রাবী যিয়াদ ইবনে যায়েদ সুওয়ায়ী মজহূল (অজ্ঞাত)।

২. হযরত আবু হুরায়রা h-এর রেওয়ায়েত, যা আবু দাউদ শরীফে রয়েছে।[25] কিন্তু এ রেওয়ায়েতটিও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক ওয়াসিতীর, যিনি মাতরূক (বিবর্জিত)।

৩. হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর (h)-এর রেওয়ায়েত, যা মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বায় বিদ্যমান।[26] যার সনদ অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার। এর ওপর আপত্তি তোলা হয় যে, মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বার সাধারণ সাধারণ সংস্করণগুলোতে এ রেওয়ায়েতে تَحْتَ السُّرَّةِ (নাভির নীচে) শব্দগুলো নেই। মুসান্নাফের যে সংস্করণের তাহকীক ও সম্পাদনা উস্তায আবদুল খালেক আফগানী করেছেন, তার প্রথম খণ্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় রেওয়ায়েতটি আছে, কিন্তু তাতেও تَحْتَ السُّرَّةِ (নাভির নীচে) শব্দগুলো নেই। তবে এ সংস্করণটি আহলে হাদীস হযরাতই ছেপেছেন। তাই বলা যায় যে, মুসান্নাফ থেকে এ শব্দগুলো কখন গায়েব হয়ে গেছে? কেননা অনেক হযরাত শব্দুগুলো মুসান্নাফে দেখেছেন। বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন: বাজলুল মাজহূদ, খ. ২ পৃ. ২৩।[27]

মওকুফ রেওয়ায়েতসমূহ

অবশ্য এ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীদের নির্দেশনা-সংবলিত বক্তব্য সহীহ সনদে প্রমাণিত। হযরত ইবারহীম নাখয়ী w-এর বক্তব্য[28], আবু মিজলায (w)-এর বক্তব্য[29] ও  হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর ইরশাদ[30] মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বায় সহীহ সনদে বর্ণিত করা হয়েছে। আর হানাফীরা এসব মওকুফ রেওয়ায়েতের কারণেই تَحْتَ السُّرَّةِ (নাভির নীচে) হাত বাঁধাকে প্রাধান্য দেন। আদ-দুররুল মুখতার প্রণেতাও দলিলে কোনো মরফু’ হাদীস উল্লেখ করেননি, বরং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর বক্তব্যই দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন,

وَكَوْنُهُ (تَحْتَ السُّرَّةِ) لِلرِّجَالِ لِقَوْلِ عَلِيٍّ h: «مِنْ السُّنَّةِ وَضْعُهُمَا تَحْتَ السُّرَّةِ».

‘(দুই হাত বাঁধা) নাভির নীচে। কেননা হযরত আলী h বলেন, দুই হাত নাভির নীচে বাঁধা সুন্নত।’[31]

আর নিয়ম হচ্ছে, যখন সাহাবী (কোনো বিষয়ে) مِنْ السُّنَّةِ ব্যক্ত করেন তখন তা মরফু’ হওয়া কার্যকরীভাবে (নবীজি D থেকে বর্ণিত বলে) রূপান্তরিত হয়।

কিতাবের সার-সংক্ষেপ

হযরত (শায়খুল হিন্দ) u বিপক্ষের কাছে দুটি বিষয়ের মধ্য থেকে যেকোনো একটির দাবি করেছেন।

  1. প্রথম কথা: হয় তারা হাদীস দ্বারা বিস্তৃতি ও ব্যাপকতা প্রমাণ করে নাভির নীচে হাত বাঁধা জায়েয এবং বুকের ওপর ও বুকের নীচে বাঁধাও জায়েয।
  2. দ্বিতীয় কথা: অথবা নাভির নীচে ব্যতিরেকে অন্য কোনো জায়গায় সবসময় হাত বাঁধা প্রমাণ করুন।

হযরত (শায়খুল হিন্দ) u এ দাবি করে বিপক্ষকে এমন কুপোকাত করে দিয়েছেন যে, সে বুঝতেই পারেনি যে, কি হয়ে গেল? সেই বেচারা নাভির নীচে ব্যতিরেকে অন্য কোনো জায়গায় সবসময় হাত বাঁধা কি প্রমাণ করবে। মিসবাহুল আদিল্লায় বিস্তৃতি ও ব্যাপকতাকে স্বীকারই করে বসে। আর সেটাকেই জওয়াবুল জওয়াব অর্থাৎ ঈযাহুল আদিল্লায় হযরত (শায়খুল হিন্দ) u ধরে ফেলেছেন। হযরত ঈযাহুল আদিল্লায় লিখেছেন,

جب آپ تَوَسُّع اور تعمیم کو تسلیم کر چکے، اور زیرِ ناف اور زیرِ صدر دونوں جگہ ہاتھ باندھنا آپ کے نزدیک صحیح ودرست ہوا تو اب ذرا قبلۂ ارشاد، مجتہد العصر محمد حسین صاحب سے پوچھئے کہ انہوں نے ہم سے جو زیرِ ناف ہاتھ باندھنے کا سوال کیا تھا، کہ کیا مُہْمَل سوال تھا؟ اگر پوچھنا تھا تو زیرِ ناف ہاتھ باندھنے کی تعین ہی کو پوچھنا تھا، الغرض حضرتِ سائل نے ہم سے جو سوال کیا تھا اس کا جواب تو آپ ہی نے مکرر سکرر مَسَلَّم کر لیا۔

‘যখন আপনারা বিস্তৃতি ও ব্যাপকতা মেনে নিয়েছেন এবং বুকের নীচে ও বুকের নীচে উভয় জায়গায় হাত বাঁধা আপনাদের কাছে সহীহ ও বৈধ। তাহলে এখন কেবলায়ে ইরশাদ ও যুগের স্বঘোষিত মুজতাহিদ মুহাম্মদ হুসাইন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন যে, তিনি আমাদেরকে নাভির নীচে হাত বাঁধা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সেটা কি একটা চাতুর্যপূর্ণ প্রশ্ন? জিজ্ঞাসা করার থাকলে নাভির নীচে হাত বাঁধার নির্ধারিণ করেই জিজ্ঞাসা করতে পারত। যাহোক প্রশ্নকারী হযরত যে প্রশ্ন করেছেন তার জবাব তো আপনিই পুনঃপুনঃ স্বীকার করে নিয়েছেন।’[32]

এরপর হযরত (শায়খুল হিন্দ w) লিখেন, যদি বিপক্ষ হযরত তাউস (w)-এর মুরসাল রেওয়ায়েত[33] দ্বারা দলিল দিতে চান, যা সুনানে আবু দাউদের স্রেফ ইবনে আরাবীর সংস্করণে বিদ্যমান, যেখানে ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَىٰ صَدْرِهِ শব্দগুলো এসেছে। তাহলে তাকে সর্বাগ্রে এ রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করতে হবে। যা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য হবে। অথচ একথা প্রমাণ করা যাবে না। কেননা এর সনদে একজন সুলায়মান ইবনে মুসা আশদাক উমাভী আছেন, যার ব‌্যাপারে ইমাম বুখারী (w) বলেন, وَعِنْدَهُ مَناكِيْرُ  (তার কাছে বহু মুনকার; অশুদ্ধ ও অপ্রমাণিত রেওয়ায়েত রয়েছে।)[34] ইমাম নাসায়ী (w) বলেন, لَيْسَ بِالْقَوِيِّ فِي الْـحَدِيْثِ (তিনি হাদীসশাস্ত্রে শক্তিশালী নন।)[35] আলী ইবনুল মাদীনী (w) বলেন, قَدْ كَانَ خُلِطَ قَبْلَ مَوْتِهِ بِيَسِيْرٍ  (মৃত্যুর আগে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল)।[36]

অতঃপর আরেকটি বিষয় এই প্রমাণ করতে হবে যে, এ রেওয়ায়েত ও নাভির নীচে হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে সাংঘর্ষিকতা রয়েছে। এরপরই প্রাধান্য দেওয়ার কথা সামনে আনা যায়। কিন্তু আপনি জানেন যে, যখন বিস্তৃতি ও ব্যাপকতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে তখন সেখানে সাংঘর্ষিকতা কোথায় রইল? আর যখন সাংঘর্ষিকতা রইল না তখন প্রাধান্য কিভাবে?

বাকি নাভির নীচে হাত বাঁধার রেওয়ায়েতসমূহ তো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হযরত (শায়খুল হিন্দ) uও ঈযাহুল আদিল্লায় এর সেগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। (হযরত) আলকামা (w)-এর শ্রবণ (অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ h থেকে হাদীস শুনেছেন তা) তিনি স্পষ্ট ও শক্তিশালী দলিলে প্রমাণিত করেছেন। সেটি অবশ্যই দেখে নেবেন।

[متن ادلۂ کاملہ]

دفعۂ سوم: آپ ہم سے اُن احادیث کے طالب ہیں جو زیرِ ناف ہاتھ باندھنے پر بطورِ نَصْ دلالت کریں، اور پھر صحیح بھی ہوں، اور صحیح بھی کیسی؟ مُتَّتَقْ عَلَیْہ! ہم آپ سے اُن احادیث کے طالب ہیں جن سے تَوَسُّعْ اور تَعْمِیْم نکلتی ہو، یا سوائے زیرِ ناف کے کسی خاص مقام پر دوام ہو، اگر ہو تو لائیے، اور دس نہیں بیس لے جائیے، ورنہ پھر زبان نہ ہلائیے! بلکہ باز آئیے! اور سمجھ جائیے کہ حنفیوں کی بات بے ٹھکانے نہیں!

اور اگر آپ کو ابؔو داؤدؒ وغیرہ کے کسی خاص نسخہ پر نظر ہے تو بعد تسلیم صحت واتفاقِ صحت کے جو آپ کے ہاں عمل کیلئے شرط لگائی گئی ہے اِس بات کو اول ثابت فرمائیے کہ وہ نسخہ احادیثِ زیرِ ناف ہاتھ باندھنے کی نسبت کیونکر مُعَارِض ہے، جو متروک ہو جائیں، اور اِس بحث میں حنفیہ کے نزدیک بھی روایاتِ صحیحہ مَرْفُوعَہ ومَوْقُوفہ موجود ہیں، جس کو شوقِ تفصیل ہو رسالہ ملا ہاؔشم سندی ومُلَّا قاؔئم سندی ملاحظ کر لے۔

তৃতীয় দফা: আপনি আমাদের কাছে এমন সব হাদীস দাবি করেছেন, যা নাভির নীচে হাত বাঁধার বিষেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ করে, তাও আবার সহীহ হতে হবে। সহীহও কেমন? মুত্তাফাক আলায়হি! আমরা আপনার নিকট এমন হাদীস দাবি করছি, যা থেকে বিস্তৃতি ও ব্যাপকতা প্রকাশ পায় অথবা নাভির নীচে ব্যতিরেকে কোনো বিশেষ জায়গায় সবসময় (হাত বাঁধার) প্রমাণ বহন করে। যদি থাকে তাহলে নিয়ে আসুন এবং দশের পরিবর্তে ২০ নিয়ে যান। নতুবা মুখ খোলা থেকে বিরত হোন। মনে রাখবেন যে, হানাফীদের কথা ভিত্তিহীন নয়।

যদি আপনার আবু দাউদ ইত্যাদির কোনো বিশেষ সংস্করণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে। তা হলে বিশুদ্ধতা স্বীকার ও বিশুদ্ধতা বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য আপনার নিকট যে আমলের জন্য শর্ত রয়েছে সেই অনুযায়ী আগে একথা প্রমাণ করতে হবে যে, সেই সংস্করণটি নাভির নীচে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের সাথে কীভাবে সাংঘর্ষিক হল, যার (হাদীসগুলো) পরিত্যাজ্য হয়ে যাবে। এ আলোচনায় হানাফীদের কাছেও মরফু’ ও মওকূফ বহু রেওয়ায়েতও রয়েছে। বিস্তারিত বিবরণ জানতে আগ্রহী হলে মোল্লা হাশেম সিন্ধী ও মোল্লা কায়েম সিন্ধীর পুস্তিকা দেখে নিতে পারেন।’

অনুবাদক: লেখক, গবেষক ও পীর সাহেব বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম

[1] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ৬৫

[2] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, খ. ১, পৃ. ৪৭৬

[3] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, খ. ১, পৃ. ৪৭৮

[4] আদ-দারদীর, আশ-শারহুস সাগীর, খ. ১, পৃ. ৩২৪

[5] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৩১০

[6] আল-খিরাকী, আল-মুখতাসার, দারুস সাহাবা লিত-তুরাস, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৩ হি. = ১৯৯৩ খ্রি.), পৃ. ২২

[7] ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, খ. ১, পৃ. ৩৪১

[8] ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪৩৬

[9] মালিক ইবনে আনাস, আল-মুয়াত্তা, খ. ২, পৃ. 220-221, হাদীস: ৫৪৫/১৬৪ ও ৫৪৬/১৬৫, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ عَبْدِ الْكَرِيْمِ بْنِ أَبِي الْـمُخَارِقِ الْبَصْرِيِّ؛ أَنَّهُ قَالَ: مِنْ كَلَامِ النُّبُوَّةِ إِذَا لَـمْ تَسْتَحْيِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ، وَوَضْعُ الْيَدَيْنِ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فِي الصَّلَاةِ – يَضَعُ الْيُمْنَىٰ عَلَى الْيُسْرَىٰ.

‘হযরত আবদুল করীম ইবনে আবুল মুখারিক (w) বলিয়াছেন, নুবুওয়তের কালাম হচ্ছে, যখন তুমি লজ্জা পরিহার কর, তবে তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পার। নামাজে উভয় হাতের একটিকে অপরটির ওর রাখা (এভাবে) যে, ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখবে।’

তিনি আরও বর্ণনা করেন,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ؛ أَنَّهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ ذِرَاعِهِ الْيُسْرَىٰ فِي الصَّلَاةِ، وَقَالَ أَبُوْ حَازِمٍ: لَا أَعْلَمُ إِلَاّ أَنَّهُ يَنْمِيْ ذلِكَ.

‘হযরত সাহল ইবনে সাদ আস-সায়িদী (w) থেকে বর্ণিত, লোকদরকে নির্দেশ প্রদান করা হত যেন নামাজে প্রত্যেকে তার ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখে। হযরত আবু হাযিম (w) বলেন, আমি জানি যে, তিনি এই বাক্যের সনদ রসুলল্লাহ D পর্যন্ত পৌঁছাতেন।’—স. চৌ.

[10] বিস্তারিত বিবরণ জানতে দেখুন: (ক) আয-যায়লায়ী, নাসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, খ. ১, পৃ. ৩১৭-৩১৮; (খ) বদরুদ্দীন আল-আইনী, উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী, ক. ৫, পৃ. ২৭৮; (গ) যফর আহমদ উসমানী, লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৬৭৯-৬৮৮ (بَابُ وَضْعِ الْيَدَيْنِ تَحْتَ السُّرَّةِ وَكَيْفِيَةِ الْوَضْعِ)

[11] আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ১৪৯, হাদীস: ৭৪০

[12] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১৩, হাদীস: ৪০১

[13] (ক) আল-হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, খ. ২, পৃ. ১০৪, হাদীস: ২৬০৭; (খ) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ২৩, পৃ. ৩১৪, হাদীস: ১৫০৯০; (গ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত, দারুল হারামইন লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৫ খ্রি.), খ. ৮, পৃ. ২৭, হাদীস: ৭৮৫৬; (ঘ) যফর আহমদ উসমানী, লাউস সুনান, খ. ২, পৃ. ৬৭৯, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ جَابِرٍ h، قَالَ: مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِرَجُلٍ، وَهُوَ يُصَلِّيْ، قَدْ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَىٰ عَلَى الْيُمْنَىٰ فَانْتَزَعَهَا، وَوَضَعَ الْيُمْنَىٰ عَلَى الْيُسْرَىٰ. (رواه أحمد والطبراني في «الأوسط»، ورجاله رجال الصحيح، «مجمع الزوائد»)

‘হযরত জাবির (ইবনে আবদুল্লাহ h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলল্লাহ D এক লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি নামাজ পড়ছিলেন, তিনি তার বাম হাত ডান হাতের ওপর রেখেছিলেন। অতঃপর (রসুলল্লাহ D) হাতদুটো ছাড়িয়ে বাম হাতের ওপর ডান রাখেন।’ [হাদীসটি (ইমাম) আমদ (ইবনে হাম্বল w) ও (ইমাম) তাবরানী (w) আল-মু’জামুল আওসাতে বর্ণনা করেছেন, এর রাবীবর্গ সহীহের রাবী, দ্র. মাজমাউয যাওয়ায়িদ]—স. চৌ.

 

[14] ইউসুফ বানূরী, মাআরিফুস সুনান শারহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ৪৪৫

[15] ইবনে খুযায়মা, আস-সহীহ, খ. 1, পৃ. ২৪৩, হাদীস: ৪৭৯

[16] আন-নাওয়াওয়ী, আল-মাজমূ’ শারহুল মুহাযযাব, খ. ৩, পৃ. ৩১৩

[17] ইবনে খুযায়মা, আস-সহীহ, খ. 1, পৃ. ২৪৩, হাদীস: ৪৭৯

[18] (ক) আস-সাখাওয়ী, ফাতহুল মুগীস বি-শারহি আলফিয়াতিল হাদীস, মাকতাবাতুস সুন্নাহ, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৪ হি. = ২০০৩ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৫৪; (গ) মাওলানা আবদুল হাই লখনউভী (সম্পাদক: আবুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দা), আল-আজবিবাতুল ফাযিলা লিল-আসয়িলাতিল আশরা আল-কামিলা, দারুস সালাম লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’ ওয়াত তারজামা, কায়রো, মিসর (প্রঞ্চম সংস্করণ: ১৪২৮ হি. = ১৯০৭ খ্রি.), পৃ. ১৪৬

[19] মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১৩, হাদীস: ৪০১, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ ﷺ رَفَعَ يَدَيْهِ حِينَ دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ – وَصَفَ هَمَّامٌ حِيَالَ أُذُنَيْهِ -، ثُمَّ الْتَحَفَ بِثَوْبِهِ، ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَى الْيُسْرَىٰ.

‘হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর (h) থেকে বর্ণিত, তিনি রসুলল্লাহ D-কে দেখেছেন তিনি যখন নামাজ শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হাম্মাম (w) বলেন, উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে নিলেন (গায়ে চাঁদর দিলেন)। তারপর তার ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখলেন।’—স. চৌ.

[20] ইবনে কাইয়িম আল-জাওযিয়া, ই’লামুল মুওয়াক্কিয়ীন আন রব্বিল আলামীন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪১১ হি. = ১৯৯১ খ্রি.), খ. 2, পৃ. 289

[21] আয-যাহাবী, মান তুকাল্লিমা ফীহি ওয়া হুয়া মুওয়াসসাক আও সালিহুল হাদীস, আবদুল্লাহ ইবনে যায়ফুল্লাহ আর-রুহায়লী (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৬ হি. = ২০০৫ খ্রি.), পৃ. ৫১৩, ক্র. ৩৫১, তিনি বলেন,

مُؤَمَّلُ بْنُ إسْمَاعِيْلَ: صَدُوْقٌ، وَقَالَ الْبُخَارِيُّ: مُنْكَرُ الْـحَدِيْثِ.

‘হযরত মুওয়াম্মাল ইসমাইল (w): তিনি সত্যবাদী, তবে ইমাম বুখারী বলেছেন, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত।’

‘হাদীসের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত’ একথার টীকায় মুহাক্কিক শায়খ আবদুল্লাহ আর-রুহায়লী বলেন,

لَـمْ أَجِدْهُ فِي «الضُّعَفَاءِ الصَّغِيْرِ»، وَلَا فِي «التَّارِيْخِ الْكَبِيْرِ»، وَلَا فِي «التَّارِيْخِ الصَّغِيْرِ»، لَكِنْ قَالَ فِي «الْكَبِيْرِ»: 8/49، فِيْ مُؤَمَّلُ بْنُ سَعِيْدٍ: مُنْكَرُ الْـحَدِيْثِ.

‘আমি এ তথ্য (ইমাম বুখারী w-এর) না আয-যুআফাউস সগীরে পেয়েছি, না আত-তারীখুল কবীরে আর না আত-তারীখুস সগীরে। অবশ্য আত-তারীখুল কবীরে (৮/৪৯)* ও মুয়াম্মাল ইবনে সাঈদ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত ।’

* দেখুন: আল-বুখারী, আত-তারীখুল কবীর, আন-নাশিরুল মুতামাইয়িযু লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’ ও দারুন নাসীহা, রিয়াদ, সৌদি আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪৪০ হি. = ২০১৯), খ. ৯, পৃ. ৩৭১, ক্র. ১১২৩৯।—স. চৌ.

[22] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২০১, হাদীস: ৭৫৯, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ يَدِهِ الْيُسْرَىٰ، ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَىٰ صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ.

‘হযরত তাউস (w) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ D নামাজরত অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের ওপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের ওপর বেঁধে রাখতে।’—স. চৌ.

[23] (ক) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ৩৬, পৃ. ৩০৪, হাদীস: ২১৯৭৪ ও ২১৯৭৫; (খ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৩৬৬, হাদীস: ৮০৯; (গ) আত-তিরমিযী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৩২, হাদীস: ৫২৫, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ هُلْبٍ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَؤُمُّنَا فَيَأْخُذُ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ».

‘হযরত হুলব (w) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম D আমাদের ইমামতি করতেন। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।’—স. চৌ.

[24] (ক) আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, খ. ২, পৃ. ২২২, হাদীস: ৮৭৫; (খ) আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২০১, হাদীস: ৭৫৬; (গ) আদ-দারাকুতনী, আস-সুনান, খ. ২, পৃ. ৩৫, হাদীস: ১১০২; (ঘ) আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ২, পৃ. ৪৮, হাদীস: ২৩৪১, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল w বর্ণনা করেন,

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: «إِنَّ مِنَ السُّنَّةِ فِي الصَّلاةِ وَضْعُ الْأَكُفِّ، عَلَى الْأَكُفِّ تَحْتَ السُّرَّةِ».

‘হযরত আলী (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজে এক হাতের ওপর আর এক হাত রেখে নাভির নীচে রাখা সুন্নত।’—স. চৌ.

[25] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২০১, হাদীস: ৭৫৮, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ، قَالَ: قَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ: «أَخْذُ الْأَكُفِّ عَلَى الْأَكُفِّ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ».

‘হযরত আবু ওয়ায়িল (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (h) বলেছেন, আমি নামাজে নাভির নীচে (বাম) হাতের ওপর (ডান) হাত রাখি।’—স. চৌ.

[26] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ, খ. ১, পৃ. ৩৪৩, হাদীস: ৩৯৩৮, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَضَعَ يَمِيْنَهُ عَلَىٰ شِمَالِهِ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ».

‘হযরত ওয়ায়িল ইবনে হুজর (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম D-কে নামাজে নাভির নীচে (বাম) হাতের ওপর (ডান) হাত রাখতে দেখেছি।’—স. চৌ.

[27] খলীল আহমদ আস-সাহারনপুরী, বাযলুল মাজহূদ ফী হল্লি আবী দাউদ, মারকাযুশ শায়খ আবিল হাসান আন-নাদভী লিল-বুহূস ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া, ইউপি, ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৭ হি. = ২০০৬ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ১০৩-১০৪

[28] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ, খ. ১, পৃ. ৩৪৩, হাদীস: ৩৯৩9, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، قَالَ: «يَضَعُ يَمِيْنَهُ عَلَىٰ شِمَالِهِ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ».

‘হযরত ইবরাহীম (আন-নাখয়ী w) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজে নাভির নীচে (বাম) হাতের ওপর (ডান) হাত রাখবে।’—স. চৌ.

[29] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ, খ. ১, পৃ. ৩৪৩, হাদীস: ৩৯৪২, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ حَجَّاجِ بْنِ حَسَّانَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا مِجْلَزٍ أَوْ سَأَلْتُهُ، قَالَ: قُلْتُ: كَيْفَ يَصْنَعُ؟ قَالَ: «يَضَعُ بَاطِنَ كَفِّ يَمِيْنِهِ عَلَىٰ ظَاهِرِ كَفِّ شِمَالِهِ وَيَجْعَلُهَا أَسْفَلَ مِنَ السُّرَّةِ».

‘হযরত হাজ্জাজ ইবনে হাসসান (w) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু মিজলায (w) থেকে শুনেছি বা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করেছি, (হাত) কিভাবে রাখবো? তিনি বলেন, ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর রাখবে এবং তা নাভির নীচে বাঁধবে।’—স. চৌ.

[30] ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ, খ. ১, পৃ. ৩৪৩, হাদীস: ৩৯৪৫, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: «مِنْ سُنَّةِ الصَّلَاةِ وَضْعُ الْأَيْدِيْ عَلَى الْأَيْدِيْ تَحْتَ السُّرَرِ».

‘হযরত আলী (h) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক হাতের ওপর আর এক হাত রেখে নাভির নীচে রাখা নামাজের সুন্নত।’—স. চৌ.

[31] আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার, পৃ. ৬৫

[32] মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ঈযাহুল আদিল্লা, মাতবায়ে কাসেমি দেওবন্দ, ইউপি, ব্রিটিশ ভারত (প্রথম সংস্করণ: ১৩৩০ হি. = ১৯১২ খ্রি.), পৃ. ৩১

[33] আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২০১, হাদীস: ৭৫৯, তিনি বর্ণনা করেন,

عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَىٰ عَلَىٰ يَدِهِ الْيُسْرَىٰ، ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَىٰ صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ.

‘হযরত তাউস (w) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ D নামাজরত অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের ওপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের ওপর বেঁধে রাখতে।’—স. চৌ.

[34] আল-বুখারী, আত-তারীখুল কবীর, খ. ৪, পৃ. ৬০৬, ক্র. ৪৭৩৮

[35] আন-নাসায়ী, আয-যুআফা ওয়াল মাতরূকীন, দারুল ওয়া’য়ী আল-আরবী, হলব, সিরিয়া (প্রথম সংস্করণ: ১৩৯৬ হি. = ১৯৭৬ খ্রি.), পৃ. 49, ক্র. 252

[36] আলাউদ্দীন মুগলতায়ী, ইকমালু তাহযীবিল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, আল-ফারুক আল-হাদীসিয়া লিত-তাবাআ ওয়ান নাশর, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. 6, পৃ. 100, ক্রমিক: 2228/4

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ