মাওলায়ে করীমের সান্নিধ্যে উস্তাদে মুহতরম আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী (রহ.)
এই সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে হৃদয়তন্ত্রী ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম। বিদায়ের আকস্মিকতায় আমরা স্তম্ভিত ও বিমূঢ়। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন উস্তাদ, মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আবদুল হালিম বোখারী (রহ.)-এর ইন্তেকালে লাখ লাখ ছাত্র-শিষ্য, ভক্ত-অনুরক্ত ও গুণগ্রাহী স্বজন হারানোর ব্যথায় বেদনার্ত ও শোকাতুর। লোকচক্ষুর অন্তরালে তিনি এখন আলমে বরযাখে বেহেশতি মলয়সৌরভে সুখনিদ্রায় বিভোর।
৭৭ বছরের পুরো জীবন তিনি কাটিয়েছেন উলুমে ইলাহী ও উলুমে নববীর পবিত্র খিদমতে। অন্য কোন পেশা বেছে নেননি। জ্ঞানআহরণ ও জ্ঞানবিতরণ ছিল তাঁর
ধ্যান-আরাধনা, নেশা ও পেশা। তাঁর জীবনধারা ছিল পরিশীলিত, পরিচ্ছন্ন ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষে অভিষিক্ত। কোন ধরনের মোহ-মাৎসর্য ও চারিত্রিক বিচ্যুতি তাঁর পূত জীবনকে কালিমালি
প্ত করতে পারেনি। এখানে তাঁর সফলতা নিহিত। হযরতের সান্নিধ্যের সৌরভে ও ইলমের প্রস্রবণধারায় আমরা আলোকিত, মুগ্ধ ও অবগাহিত।
তাকওয়াসঞ্জাত তাঁর বিনয়, সৌজন্যতাবোধ, পরার্থপরতা ও চারিত্রিক সৌকর্য বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছে, করেছে প্রণোদিত। তাঁর ইলমের বহুমাত্রিকতায় তিনি গড়ে তুলেছেন এক ঝাঁক মেধাবী ও মননশীল শিক্ষার্থী যারা দেশে এবং দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত ও দ্বীনের খিদমতে নিয়োজিত।
জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়াকে তিনি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছিয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে মৃত্যু অবধি
প্রধান পরিচালক হিসেবে খিদমত আঞ্জাম দেন। তাঁর আমলে জামিয়া অ্যাকাডেমিক ও অবকাঠামোগত বেশ উন্নতি সাধন করে। যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের মেহনতের ফলে প্রতি বছর ইত্তেহাদ ও হাইআতুল উলইয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট করতে থাকে। আন্তর্জাতিক স্কলার মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা (হাফি.)-কে নায়েবে মুহতামিম ও বিশিষ্ট বুজুর্গ ও আলেমে দীন মাওলানা আবু তাহের নদভী কাসিমী (হাফি)-কে মুঈনে মুহতামিম নিযুক্ত করে বোখারী সাহেব হুজুর প্রজ্ঞার পরিচয় দেন, যাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে মাদরাসা পরিচালনা বিঘ্নিত না হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য অনুসরণ করেন এবং উত্তরসূরিদের জন্য দৃষ্টান্ত রেখে যান।
তাঁর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে একটি বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল। ইসলামী অর্থনীতির ওপর তাঁর গবেষণালব্ধ বহু কর্মপন্থা ও নির্দেশনা ইসলামি ব্যাংকসমূহকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি মুসলিম উম্মাহকে সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে একটি শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য সহায়তা প্রদান করেছে। পটিয়া জামিয়ায় তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানে স্কলারদের নিয়ে ৪০ খণ্ডের ফতোয়াকোষ প্রণয়নের বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজ বেশ এগিয়ে চলে কিন্ত হায়াতের অভাবে তিনি পূর্ণতা দিতে পারেননি।
আল্লামা শাহ আবদুল হালিম বোখারী (রহ.) তার কর্ম, সাধনা ও কীর্তির মাঝে বেঁচে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাহবারকে জান্নাতুল ফিরদউস নসিব করুন এবং দারাজাত বুলন্দ করে দিন, আমিন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন