জামেয়া ওয়েবসাইট

বুধবার-৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামি জ্ঞানার্জনে উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা ও উস্তাদের যোগ্যতা

ইসলামি জ্ঞানার্জনে উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা ও উস্তাদের যোগ্যতা

মু. সগির আহমদ চৌধুরী

(এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সংখ্যা)

এক. জ্ঞানার্জনে প্রত্যক্ষ উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা

ইসলামের শিক্ষণ-শিষ্টাচার, আদব বা নীতিতে একটি প্রবচন বহুলপ্রচলিত আছে। প্রবচনটি হচ্ছে, مَنْ كَانَ شَيْخُهُ كِتَابَهُ فَخَطَؤُهُ أَكْثَرُ مِنْ صَوَابِهِ (যার উস্তাদ হচ্ছে বই-পুস্তক তার শুচি-শুদ্ধতার চেয়ে ভুল-ভ্রম হয় বেশি)। অর্থাৎ যে লোক বই-পুস্তক পড়ে জ্ঞানার্জন করে তার বুঝ-ব্যবস্থা অনেকাংশে ভুলেভরা, ত্রুটিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর হয়ে থাকে। প্রবচনটি অনেকে এভাবেও বলেছে, مَنْ كَانَ شَيْخُهُ كِتَابَهُ ضَلَّ عَنْ صَوَابِهِ অর্থাৎ সে যাথার্থ্য থেকে বিচ্যুৎ হয়েছে বা সত্যতা ও বিশ্বস্ততা থেকে বিপথগামী বা পথভ্রষ্ট হয়েছে। সুফিয়ায়ে কেরাম প্রবচনটি বিবৃত করেছেন এভাবে: مَنْ لَا شَيْخَ لَهُ فَشَيْخُهُ الشَّيْطَانُ অর্থাৎ যার কোনো উস্তাদ নেই, তার উস্তাদ শয়তান।

প্রবচনটির বাস্তবতা নিশ্চিত করে সালাফী চিন্তাধারার সর্বজনাব ও মান্যবর ব্যক্তিত্ব শায়খ আবদুল আযীয ইবনে বায p (মৃ. ১৪২০ হি.)-এর মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি জবাবে বলেন,

المعروف أن من كان ‌شيخه ‌كتابه ‌فخطؤه ‌أكثر من صوابه هذه هي العبارة التي نعرفها.

وهذا صحيح: أن من لم يدرس على أهل العلم، ولم يأخذ عنهم، ولا عرف الطرق التي سلكوها في طلب العلم، فإنه يخطئ كثيرا، ويلتبس عليه الحق بالباطل، لعدم معرفته بالأدلة الشرعية، والأحوال المرعية التي درج عليها أهل العلم، وحققوها وعملوا بها.

أما كون خطئه أكثر فهذا محل نظر، لكن على كل حال أخطاؤه كثيرة، لكونه لم يدرس على أهل العلم، ولم يستفد منهم، ولم يعرف الأصول التي ساروا عليها فهو يخطئ كثيرا، ولا يميز بين الخطأ والصواب في الكتب المخطوطة والمطبوعة.

وقد يقع الخطأ في الكتاب ولكن ليست عنده الدراية والتمييز فيظنه صوابا، فيفتي بتحليل ما حرم الله، أو تحريم ما أحل الله، لعدم بصيرته.

অর্থাৎ ‘বহুল প্রসিদ্ধ مَنْ كَانَ شَيْخُهُ كِتَابَهُ فَخَطَؤُهُ أَكْثَرُ مِنْ صَوَابِهِ এ প্রবচনটি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। প্রবচনটি সঠিক: নিশ্চয়ই যারা আহলে ইলমদের কাছে শিক্ষালাভ করেনি, তাঁদের কাছে জ্ঞানার্জন করেনি, জ্ঞানার্জনে তাঁদের পথ-পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচত নয়, নিঃসন্দেহে এদের ভুল-ভ্রান্তি হবে অনেক। এরা হককে বাতিলের সাথে গুলিয়ে ফেলবে। এটা শরয়ী দলীলাদি এবং আহলে ইলমদের কর্মপরিক্রমা, গবেষণা ও কর্মপদ্ধতিগত অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে।

এখানে ‘তাদের অনেকাংশে ভুল-ত্রুটি হবে’ কথাটি লক্ষণীয়। হ্যাঁ, সর্বাবস্থায় তাদের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে। কারণ তারা আহলে ইলমদের কাছে জ্ঞানার্জন করেনি, তাঁদের কাছ থেকে উপকৃত হয়নি এবং তাঁদের গৃহীত শাস্ত্রীয় নীতি-উসুল সম্পর্কে অবগতি অর্জন করেনি। অতএব তারা অনেকাংশে ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার। তারা তো পাণ্ডুলিপি ও প্রিন্ডেড কিতাবগুলোর মধ্যকার শুদ্ধ-অশুদ্ধ ও ভালো-মন্দও পরখ করতে পারে না।

কিতাবের মধ্যে যখন মুদ্রণপ্রমাদ সংঘটিত হয় যেহেতু তাদের কোনো অভিজ্ঞতা থাকে না, ফলে তারা সেটাকে সঠিক মনে করে বসে। অতঃপর আল্লাহর নিষিদ্ধ করা বিষয়কে বৈধ এবং আল্লাহর বৈধকৃত বিষয়কে হারাম বলে ফতওয়াও দিয়ে দেয়। এটা তাদের অন্তরর্দৃষ্টি, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকার কারণে।’ (মাজমূউল ফতওয়া: খ. ৭, পৃ. ২৩৯-২৪০ ও খ. ২৩, পৃ. ৩৭১-৩৭২)

বস্তুত ইসলামি জ্ঞান হচ্ছে একটি অনুসৃত সুন্নত, এটি অর্জন করতে হবে ব্যক্তির জবান থেকে, যা প্রবাহিত হয় বুক থেকে বুকে (সীনা ব-সীনা), এজন্য প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে একজন উস্তাদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হয় এবং তাঁর হাতেই দীনী ইলম অর্জন করতে হয়। শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানের কথন-বিবরণী যেমন শুনবে, তেমনি প্রত্যক্ষ কর্মপ্রক্রিয়া বা হাতে-কলমে তার বাস্তব প্রশিক্ষণও গ্রহণ করবে। বিখ্যাত হাদীসে জিবরীলের বিবরণী থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামকে ইলম অন্বেষণের প্রশিক্ষণদানে হযরত জিবরীল 5 একবার নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)-এর কাছে এসেছিলেন। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)–এর নিকট তাঁর বসা সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে,

فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَىٰ رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَىٰ فَخِذَيْهِ.

অর্থাৎ ‘তিনি নিজের দুই হাঁটু নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)–এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন এবং তাঁর দুই হাত নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)–এর দুই উরুর ওপর রাখলেন।’ (সহীহ মুসলিম, /৩৬, হাদীস: )

বোঝা গেল, দীনী ইলমের জন্য উস্তাদের শরণাপন্ন হওয়া, তাঁর সামনাসামনি বসা, প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য-সুহবতের জরুরত অপরিসীম। সহীহ আলবুখারী (1/25)-এর একটি অধ্যায়ের শিরোনামে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)- থেকে বর্ণিত হয়েছে, «وَإِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ» অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই জ্ঞান অর্জিত হবে শিক্ষণ পদ্ধতিতে।’ এটিকে অনেকে ইমাম বুখারী p-এর বক্তব্য মনে করে ভুল করেন। এমন ভুলের নাকচ করে হাফিয ইবনে হাজর আল-আসকলানী (রহি:) বলেন,

قَوْلُهُ: «وَإِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ»، هُوَ حَدِيْثٌ مَرْفُوْعٌ أَيْضًا، أَوْرَدَهُ بْنُ أَبِيْ عَاصِمٍ وَالطَّبَرَانِيُّ مِنْ حَدِيْثِ مُعَاوِيَةَ أَيْضًا بِلَفْظِ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ! تَعَلَّمُوْا إِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ وَالْفِقْهُ بِالتَّفَقُّهِ، وَمَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُّفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ». إِسْنَادُهُ حَسَنٌ، إِلَّا أَنَّ فِيْهِ مُبْهَمًا اعْتُضِدَ بِمَجِيئِهِ مِنْ وَجْهٍ آخر، وروى الْبَزَّار نَحْوَهُ مِنْ حَدِيْثِ بْنِ مَسْعُودٍ مَوْقُوفًا، وَرَوَاهُ أَبُوْ نُعَيْمٍ الْأَصْبَهَانِيُّ مَرْفُوْعًا، وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ وَغَيْرِهِ، فَلَا يغتر بقول مَنْ جَعَلَهُ مِنْ كَلَامِ الْبُخَارِيِّ، وَالْمَعْنَىٰ لَيْسَ الْعِلْمُ الْـمُعْتَبَرُ إِلَّا الْـمَأْخُوْذَ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ وَوَرَثَتِهِمْ عَلَىٰ سَبِيْلِ التَّعَلُّمِ.

অর্থাৎ এটি হাদীসের অংশ; যারা এটিকে ইমাম বুখারীর বক্তব্য ভেবেছে তারা বিভ্রান্তির শিকার। ইবনে আবু আসিম, তাবারানী (মু’জামুল কবীর: 19/395) ও বাযযায (মুসনদ: 5/423) ও আবু নুআয়ম আল-ইসফাহানী (হিলয়াতুল আউলিয়া: 5/174) প্রমুখ বিভিন্ন সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির তাৎপর্য হচ্ছে, গ্রহণযোগ্য ইলম হচ্ছে যা শিক্ষণ পদ্ধতিতে আম্বিয়ায়ে কেরাম ও তাঁদের উত্তরাধিকারী ওলামায়ে কেরামের নিকট থেকে অর্জন করা হয়। (ফাতহুল বারী: 1/161)

দীনী ইলম অন্বেষণের স্বরূপ বর্ণনা করে বিশিষ্ট তাবিয়ী, মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী (রহি:) বলেন,

 أَوَّلُ الْعِلْمِ الْإِنْصَاتُ، ثُمَّ الْاِسْتِمَاعُ، ثُمَّ الْحِفْظُ، ثُمَّ الْعَمَلُ بِهِ، ثُمَّ النَّشَرُ.

অর্থাৎ ‘ইলমের প্রথম ধাপ হচ্ছে, চুপ থাকা, এরপর শ্রবণ, তারপর মুখস্তকরণ, অতঃপর আমল, অবশেষে প্রসার।’ (রওযাতুল উকালা ওয়া নুযহাতুল ফুযালা, পৃ. 34)

আরববিশ্বের খ্যাতনামা শায়খ বকর আবু যায়দ (১৪২৯ হি.) বলেন,

الأصل في ‌الطلب ‌أن ‌يكون ‌بطريق التلقين والتلقي عن الأساتيذ، والمثافنة للأشياخ، والأخذ من أفواه الرجال لا من الصحف وبطون الكتب، والأول من باب أخذ النسيب عن النسيب الناطق، وهو المعلم أما الثاني عن الكتاب، فهو جماد، فأنى له اتصال النسب؟

অর্থ: ‘জ্ঞানার্জনের মূলনীতি হচ্ছে, তা উস্তাদ থেকে শিক্ষণ ও সাক্ষাতের পদ্ধতিতে হওয়া, শায়খের সামনাসামনি বসা এবং শিক্ষকের জবানি থেকেই অর্জন করা, পুস্তক বা পুস্তকের পৃষ্ঠা থেকে নয়।  প্রথমটি বাক্শক্তিসম্পন্ন বংশীয় থেকে বংশীয়ের জ্ঞানার্জনের অধ্যয়, তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। দ্বিতীয়টা কিতাব থেকে, আর তা হচ্ছে জড়, তার সাথে কি বংশের কোনো সম্পর্ক হয়?’ (হিলয়াতু তালিবিল ইলম, পৃ. ১৫৮)

হাফিয শামসুদ্দীন আস-সাখাওয়ী (রহি:) বলেন, مَنْ دَخَلَ فِي الْعِلْمِ وَحْدَهُ خَرَجَ وَحْدَهُ অর্থাৎ ‘যে লোক একাই ইলমি জগতে বিচরণ করেছে সে একাই সেখান থেকে বেরিয়েছে।’ (আল-জাওয়াহির ওয়াদ দুরার, ১/৫৮) কথাটির ব্যাখ্যায় শায়খ বকর আবু যায়দ বলেন,

وقد قيل: «مَنْ دَخَلَ فِي الْعِلْمِ وَحْدَهُ ‌خَرَجَ ‌وَحْدَهُ»، أي: من دخل في طلب العلم بلا شيخ؛ خرج منه بلا علم، إذ العلم صنعة، وكل صنعة تحتاج إلىٰ صانع، فلا بد إذًا لتعلمها من معلمها الحاذق.

অর্থাৎ ‘যে লোক উস্তাদ ছাড়াই জ্ঞানার্জনে জগতে প্রবেশ করেছে সে বেরিয়েছেও কোনো জ্ঞান ছাড়াই। যেহেতু ইলম হচ্ছে একটি কলা, প্রত্যেক কলার জন্য একজন কর্মকৌশলীর প্রয়োজন। অতএব যখন তুমি ইলম অর্জন করবে তার জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ ও প্রজ্ঞাবান শিক্ষকের প্রয়োজন।’ (হিলয়াতু তালিবিল ইলম, পৃ. ১৫9)

অতএব একথা স্পষ্ট হয় যে, দীনী ইলম, ধর্মীয় জ্ঞান ও শাস্ত্রীয় তত্ত্ব গুরুনির্ভর জ্ঞান। উস্তাদ ও তাঁর সান্নিধ্য ছাড়া শুধু কিতাব পড়ে বা ইন্টানেটে কারো বক্তব্য শুনে এর ফাকাহত, প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন যোগ্যতা অর্জন সম্ভব নয়। কারণ দীনী ইলম হচ্ছে আল্লাহর নুর, যা উস্তাদ-শাগরিদের সীনা ব-সীনা বা বুক-বাহিত হয়ে পরস্পরে মধ্যে প্রবাহিত হয়। এর বাস্তবতা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)-এর নিম্নের হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য, তিনি ইরশাদ করেন,

«إِنَّ اللهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّىٰ إِذَا لَـمْ يُبْقِ عَالِـمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوْسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوْا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوْا وَأَضَلُّوْا».

অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলা বান্দাদের অন্তর থেকে উঠিয়ে নেবেন না, বরং আলিমদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোনো আলিম বাকি থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতওয়া দেবে। ফলে তারা নিজেরাই গোমরাহ হবে এবং অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে।’ (সহীহ আলবুখারী: /৩২, হাদীস: ১০০)

আল্লাহ তাআলা ইলম উঠিয়ে নেবেন আলিমদেরকে উঠিয়ে নিয়ে, কিতাবপত্র ও বই-পুস্তক ধ্বংস করে নয়। অতীতে বগদাদ পতনের পর মুসলমানদের জ্ঞান-সম্পদের বিশাল ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহর অশেষ দয়া ও কৃপায় ওলামায়ে কেরামের সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে ইসলামি জ্ঞানের পুরোটাই সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে কিতাব-বই-পুস্তক মুখ্য নয়, নিশ্চয়ই এগুলো জ্ঞানের সহায়ক। তবে ওলামায়ে কেরামের সান্নিধ্য, শিক্ষণপদ্ধতিতে জ্ঞানার্জন ও সিলসিলাবাহিক ধারাবাহিকতায় প্রশিক্ষণ ছাড়া এই জ্ঞান মানুষের গোমরাহির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাদীসটি উদ্ধৃতি করে প্রত্যক্ষ উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বর্তমান আরববিশ্বের প্রখ্যাত শায়খ মুহাম্মদ আল-মুখতার আশ-শানকীতী হাফিযাহুল্লাহ বলেন,

‘হাদীসটি একথার দলিল যে, বই-পুস্তক পড়ে জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। যখন বই-পুস্তক থেকে এটি সম্ভব নয় তাহলে ইন্টারনেট থেকে তো মোটেও সম্ভব নয়। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী শুধু এসবের ওপর নির্ভর করতে পারে না। একজন শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, ওলামায়ে কেরামের মজলিসে বসে জ্ঞানার্জন করা। যদি তোমার গ্রামে কোনো আলিম না থাকে তাহলে তুমি ছুটি বা অবসর সময়ের জন্য অপেক্ষা করবে। অতঃপর আলেম-ওলামা অবস্থান করে এমন অঞ্চলে সফর করবে আর তাঁদের কাছে মতন বা কিতাব পড়বে, যতটুকু সম্ভব জ্ঞানার্জন করবে এবং যতটা সম্ভব তা নিয়ে তোমার গ্রামে ফিরে আসবে। যদি তুমি এভাবে মাঝে মাঝে কোনো উস্তাদের উদ্দেশে সফর করতে পার তাহলে তাঁর কাছে তাহারত, রোজা, হজ, ইবাদত ও মুআমালাত প্রভৃতি কিতাবগুলো পড়বে। এটি অত্যন্ত জরুরি, জ্ঞানের সংরক্ষণের জন্য জরুরি এটি। ওলামায়ে কেরামের সাথে প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ ছাড়া শুধু নেট থেকে শোনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের পদ্ধতি যথার্থ নয়।

নেটনির্ভর জ্ঞানার্জনের পরিণতিতে অনেক ধরনের সমস্যা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আমাদের। যেসব শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করছে তারা ভয়াবহ ভুল-ভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, ওলামায়ে কেরামের মজলিসে তাদের না বসা, তাঁদের হাতে তারবিয়তপ্রাপ্ত না হওয়া এবং জ্ঞানের জন্য তাঁদের প্রত্যক্ষ সাক্ষাতে না যাওয়া। যেমনটি একজন শিক্ষার্থীর জন্য ওলামায়ে কেরামের মজলিসে হাজির হয়ে জাহিরি-বাতিনিভাবে লাভ করা এবং ওলামায়ে কেরামের কর্মপদ্ধতি, ফতওয়া ও ব্যাখ্যার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন ছিল। … অতএব সর্বদা ওলামায়ে কেরামের নিকট থেকে মৌখিকভাবে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য যতটা সম্ভব।’ (দুরূসুশ শায়খ আশশানকীতী: 6/10, শামেলা সংস্করণ)

এক. জ্ঞানার্জনে বিশ্বস্ত,নির্ভরযোগ্য ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি-উৎসের প্রয়োজনীয়তা

আরবিতে একটি প্রবচন আছে, لَا تَنْظُرْ إِلَىٰ مَنْ قَالَ وَانْظُرْ إِلَىٰ مَا قَالَ অর্থাৎ ‘কথা কে বলছেন সে দিকে দেখো না, তুমি দেখো তিনি কী বলছেন সে দিকে।’ কথাটা শিয়া লিটারেচরে বহুল ব্যবহৃত হযরত আলী (রাদি:)-এর বাণী হিসেবে। কিন্তু এটা দীনী ইলমের ক্ষেত্রে খাটে না পুরোপুরি। দীনী ইলম, ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মশাস্ত্রীয় তত্ত্বার্জনে এখানকার উসুল ঠিক উলটো। এখানে কী বলছেন সেই দিকটার চেয়ে যিনি বলছেন তাঁর বিশ্বস্ততা, নির্ভরযোগ্যতা, নৈতিকভাবে উত্তীর্ণতা, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞা অধিকতর বিবেচ্য। কারণ দীনী ইলম হচ্ছে আল্লাহপ্রদত্ত, যা তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদেরকে দান করবেন, তাঁরাই দীনী ইলম বহন করবেন এবং উত্তরাধিকার লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)- ইরশাদ করেন,

«يَرِثُ / يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُهُ، يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ، وَانْتِحَالَ الْـمُبْطِلِيْنَ، وَتَأْوِيْلَ الْـجَاهِلِيْنَ».

অর্থ: ‘এই ইলমকে ধারণ বা উত্তরাধিকার লাভ করবেন প্রত্যেক উত্তর প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণি। তাঁরা একে মুক্ত রাখবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে ও মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে।’ (আসসুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী: ১০/৩৫৩, হাদীস: ২০৯১১ মুসনদুল বাযযায: ১৬/২৪৭, হাদীস: ৯৪২৩ ৯৪২৯)

কাজেই দীনী ইলম অর্জন ও তার ব্যক্তি-উৎস বা উস্তাদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম তাঁর বিশ্বস্ততা, নির্ভরযোগ্যতা, নৈতিকভাবে উত্তীর্ণতা ও ন্যায়পরায়ণতা বিচার করতে হবে। ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে এই দিকটায় শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং নির্দেশনা দিয়ে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে সীরীন p বলেন,

«إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ، فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ».

অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই এই জ্ঞান হচ্ছে দীন। সুতরাং তোমরা কার কাছে তোমাদের দীন শিখছো সে দিকে লক্ষ করো।’ (সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ১৪)

দ্বিতীয়ত স্বশিক্ষিত কারও থেকে দীনী ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞান কিংবা ধর্মশাস্ত্রীয় তত্ত্ব না নেওয়া। স্বশিক্ষিত বলতে যারা বাংলা অনুবাদ বা কয়েকটা বই-পুস্তক পড়ে ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবিদার; ধর্মীয় জ্ঞানের উৎসগ্রন্থ, মূল টেক্সট বুক ও উসুলের বইসমূহ পড়েনি অথবা পড়েছে কিন্তু সেটা নিজ চেষ্টায় কোনো উস্তাদের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য ব্যতিরেকে। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মারফত শত-সহস্র স্বশিক্ষিত ধর্মবেত্তার আবির্ভাব হয়েছে। যাদের ধর্মীয় জ্ঞানের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা বিষয়ে সমসাময়িক ও প্রতিষ্ঠিত ওলামায়ে কেরামের কোনো প্রত্যয়ন, স্বীকৃতি ও সমর্থন নেই। এ ধরনের ধর্মীয় বক্তা, লেকচারার ও প্রচারকদের থেকে ইলম নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাততে হবে। ওলামায়ে কেরামের সান্নিধ্য নেই এমন স্বশিক্ষিত লোকদের থেকে জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে ইমাম জালালউদ্দীন আস-সুয়ুতী p বর্ণনা করেন, ইসহাক ইবনে মুহাম্মদ আল-ফারওয়ী বলেছেন,

سئل مالك: أيؤخذ ‌العلم ‌عمن ‌ليس ‌له ‌طلب ‌ولا ‌مجالسة؟ فقال: لا، فقيل: أيؤخذ ممن هو صحيح ثقة، غير أنه لا يحفظ ولا يفهم؟ فقال: لا يُكتب العلم إلا ممن يحفظ، ويكون قد طلب وجالس الناس، وعرف وعمل، ويكون معه ورع.

অর্থ: ‘ইমাম মালিক (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, যাদের উস্তাদের নিকট থেকে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জনের অভিজ্ঞতা ও সান্নিধ্য নেই তাদের থেকে কি ইলম নেওয়া যায়? তিনি বলেন, না। আবারও জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য, কিন্তু মুখস্ত করেননি এবং বুঝেননি তার থেকে কি জ্ঞান নেওয়া যাবে? জবাবে তিনি বলেন, যারা মূল টেক্সট মুখস্ত করেননি তাদের থেকে ইলম নেওয়া যাবে না। অবশ্যই উস্তাদ থেকে তার প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জনের অভিজ্ঞতা ও সান্নিধ্য থাকতে হবে, জ্ঞানে সুনিপুণ দক্ষতা ও আমল থাকতে হবে, সেই তাঁকে হতে হবে তাকওয়াসম্পন্ন।’ (মুহাম্মদ ইসমাইল আলমুকাদ্দম, আললাম বিহুরমতি আহলিল ইলম ওয়াল ইসলাম, পৃ. ১৪৪)

তৃতীয়ত উস্তাদের সার্বজনীন স্বীকৃতি। ইসলামি জ্ঞানের উৎস বা উস্তাদ নির্বাচনে এটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসের সনদ বিচারে রিজাল (ব্যক্তি-নিরীক্ষা) শাস্ত্রের ভূমিকা অপরিসীম। এই শাস্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি রাবী বা বর্ণনাকারীর তিনটি জিনিস বিচারে আসে। ১. তাঁর শায়খ (শিক্ষক), ২. তাঁর শাগরেদ ও ৩. তাঁর সম্পর্কে সমসাময়িক ওলামায়ে কেরামের স্বীকৃতি, প্রশংসা বা প্রত্যয়ন। বর্ণনাকারীদের যার উস্তাদের ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় মর্যাদা ও ইলমি অবদান যত বেশি তাঁর সনদ তত উঁচু, শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ বলে স্বীকৃত হয়। বৃক্ষের পরিয় হয় ফলে, সেই হিসেবে শাগরেদ ও তাঁদের খেদমত দ্বারা তাঁর ইলমি অবদান স্বীকৃত হয়। অন্যদিকে তাঁর ব্যাপারে সমসাময়িক আলেমদের প্রত্যয়ন, প্রশংসা ও সমর্থন দ্বারা তাঁর ব্যক্তিমর্যাদা স্বীকৃত হয়।

এজন্য দেখা যায় যে, বিনয়ী, খোদাভীরু ও নিজের জ্ঞানের ওপর একান্ত নির্ভরকারী নয় পূর্ব-উত্তরসূরি ওলামায়ে কেরাম ফতওয়াদানের পর তাতে সমসাময়িক ওলামায়ে কেরামের স্বীকৃতি, প্রত্যয়ন ও সমর্থনপ্রার্থী হতেন। যখন কোনো আলেমে দীন কোনো বিষয়ে কিতাবপত্র লিখতেন, কিতাবখানার প্রারম্ভে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বুজুর্গ ও প্রবীণ আলেমদের তকরীয বা প্রশংসাপত্র সংগ্রহ করে জুড়ে দিতেন। এ পদ্ধতি ছিল দীনী ইলমের বিশুদ্ধতা, সংরক্ষণ ও অধিকতর নির্ভরযোগ্যতার প্রয়োজনে। ইমাম আনাস ইবনে মালিক (রহি:) খোদ নিজের ব্যাপারে বলেছেন,

وما جلست حتىٰ شهد لي ‌سبعون شيخًا من أهل العلم إني لموضع لذلك.

অর্থাৎ ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ৭০জন আলেম আমার যোগ্যতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেননি তার আগ পর্যন্ত আমি শিক্ষকতার আসনে বসিনি।’ (কাযী আয়ায, তারতীতুল মাদারিক ওয়া তাকরীবুল মাসালিক, /১৪২)

চতুর্থত আজকাল এ ধরনের নবীন ইসলামি বক্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, তারা ইসলামি জ্ঞানের নিত্য-নতুন ব্যাখ্যা করছে এবং চটকদার ও চাকচিক্যপূর্ণ বিশ্লেষণ দাঁড় করাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সমসাময়িক মূলধারার ওলামায়ে কেরামের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং প্রবীন ওলামা-মাশায়েখের সার্বজনীন মতামত ও ঐতিহ্যবাহী ইলমি কাঠামোর তীব্র সমালোচনা করছে। এ ধরনের ইসলামি বক্তাদের বক্তব্য এবং তাদের থেকে জ্ঞান আহরণ অত্যন্ত বিপদজ্জনক। হাদীসে এ ধরনের তৎপরতাকে কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে,

«وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَوَّلَـهَا».

অর্থাৎ ‘এ উম্মতের পরবর্তী লোককেরা পূর্ববর্তী লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে।’ (সুনানে তিরমিযী, /৪৯৪, হাদীস: ২২১০)

পঞ্চমত জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি-উৎস বা উস্তাদ হিসেবে প্রবীণ, বয়োজ্যেষ্ঠ ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া এবং সার্বজনীন ও সর্বস্বীকৃত মতামতের বিপরীতে বিচ্ছিন্ন, একক ও হঠকারী নতুন ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা। কারণ অনভিজ্ঞ নবীনদের থেকে জ্ঞান নেওয়াও কিয়ামতের আলামত হিসেবে বর্ণিত হয়েছে হাদীসে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া-সাল্লাম)- ইরশাদ করেন,

«إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ ثَلاثًا: إِحْدَاهُنَّ أَنْ يُلْتَمَسَ الْعِلْمُ عِنْدَ الأصَاغِرِ».

অর্থাৎ ‘কিয়ামতের লক্ষণসমূহের মধ্যে তিনটি লক্ষণ আছে, যার একটি হচ্ছে, নবীনদের কাছে দীনী ইলম তলব করা।’ (ইবনুল মুবারক, আল-যুহদ, পৃ. ২০, হাদীস: ৬১)

নবীন কারা? হাফিয ইবনে আবদুল বারর (রহি:) হাদীসটি বর্ণনা করে এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,

قَالَ نُعَيْمٌ: قِيْلَ لابْنِ الْـمُبَارَكِ: مَنِ الْأَصَاغِرُ؟ قَالَ: «الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ بِرَأْيِهِمْ، فَأَمَّا صَغِيْرٌ يَرْوِيْ عَنْ كَبِيْرٍ فَلَيْسَ بِصَغِيْرٍ».

অর্থ: ‘নুয়াইম (রহি:) বলেছেন যে, ইবনুল মুবারক (রহি:)-কে জিজ্ঞেস করা হল, الْأَصَاغِرُ (নবীন বলতে) কারা? তিনি বললেন, যারা (শরীয়তের ইলমে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও শরীয়তের ব্যাপারে) নিজেদের মত/রায় পেশ করে কথা বলে। তবে যেসব নবীনরা প্রবীনদের কাছ থেকে (কোনো বিষয়ে শরয়ী সিদ্ধান্ত কী তা জেনে নিয়ে অন্যকে) মতামতটি বলে দেয় সে (হাদীসে উল্লেখিত) নবীনদের মধ্যে গণ্য নয়।’ (জামিউ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাযলিহি: ১/৬১২, হাদীস: ১০৫২)

অতএব দীনী ইলম শেখার জন্য মাদরাসাসমূহ শ্রেষ্ঠতম জায়গা। এখানে শিক্ষার্থীদেরকে বারটি বছর নিবিড় পরিচর্যায় দীনী ইলম শেখানো হয়। সার্বিকভাবে দীনী ইলম বহনের জন্য নৈতিকতা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়। তা সত্ত্বেও ফি বছর মাদরাসাসমূহ থেকে বেরুনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী সকলেই ধর্মীয় সিদ্ধান্ত দেন না। তাঁরা শিক্ষানবীস হিসেবেই দীনী খেদমত শুরু করেন। ধর্মীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের উস্তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, উস্তাদদের জীবদ্দশায় তাঁদেরই কাছে শরণাপন্ন হন এবং উস্তাদদের সাথে সম্পর্ক রেখে সঞ্চায়িত অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞায় পরবর্তীকালে তাঁরা নিজেরা ধর্মীয় সিদ্ধান্তের নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করেন। দীনী ইলম এভাবেই সংরক্ষিত হয়। এটিই নিয়ম। এতো সহজ নয়, যে কেউ এলো, দুই-চার পৃষ্ঠা পড়লো, তারপর ধর্মীয় বিতর্ক জুড়ে দিল। এটা কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ