সুপারসনিক গতি ও সনিক বুম
কোনো বস্তুর গতি যখন শব্দের গতির চেয়ে বেশি হয়, তখন সেটাকে সুপারসনিক গতি বলে। আর বস্তুটি শব্দকে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড রকমের একটি শব্দ হয়। যা বাজ পড়ার মতো শোনায়। সেটাকে সনিক বুম বলে।
শব্দের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৭৬৮.১ মাইল। প্রতি সেকেন্ডে ৩৪৩.৪ মিটার। এটা হল স্বাভাবিক অবস্থায় বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শব্দের গতিবেগ। শব্দ সৃষ্টি হয় কম্পনের মাধ্যমে। কঠিন, তরল ও বায়বীয় মাধ্যমে শব্দ প্রবাহিত হতে পারে। এসব বস্তুর প্রতিটি কণাকে স্পন্দিত করে শব্দ সামনে যায়। মাধ্যমের ভিন্নতার কারণে শব্দের গতির মধ্যেও ভিন্নতা আসে। যেমন- 20°C (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় বাতাসে শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩৪৩.৪ মিটার। পানিতে প্রতি সেকেন্ডে ১৪৫০ মিটার। আর লোহাতে ৫১৩০ মিটার।
সনিক বুম কীভাবে সৃষ্টি হয়?
কোনো বস্তু শব্দকে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় সৃষ্ট প্রচণ্ড শব্দকে সনিক বুম বলে। ধরা যাক একটি সুপারসনিক গতির যুদ্ধ বিমান স্টার্ট করা হয়েছে মাত্র। এখনো সেটি চলছে না। তার ইঞ্জিনের শব্দ চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বৃত্তাকারে। প্রতি মুহূর্তে সেই বৃত্ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রতি মুহূর্তে সেটা চতুর্দিকে চলে যাচ্ছে। তার মানে এখানে অসংখ্য বৃত্তের সৃষ্টি হচ্ছে। যখন বিমানটি সামনে চলতে শুরু করেছে তখনও সেটা প্রতি মুহূর্তে অনেকগুলো শব্দের বৃত্ত সৃষ্টি করে সামনে যাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে তার গতি বাড়ছে। তার মানে বিমানটি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে বিমান থেকে শব্দের বৃত্তের দূরত্ব কমছে। বিমানের গতি আরো বাড়ছে। তখন আগে সৃষ্ট শব্দের বৃত্তগুলোর সামনের সীমানাকে পরে সৃষ্ট শব্দের বৃত্তগুলোর সামনের সীমানা যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। কারণ বিমানটি সেদিকেই যাচ্ছে। একসময় সামনের দিকে অনেকগুলো শব্দের বৃত্তের সামনের সীমানা একই স্থানে একত্রিত হয়ে যাবে। আর তখনই বিমানটি আগের এবং বর্তমানের সৃষ্ট শব্দের বৃত্তগুলোকে ভেদ করে সামনে চলে যাবে। তখন সেই বৃত্তগুলোকে ভেদ করার সময় বাতাসে প্রচণ্ড রকমের কম্পনের সৃষ্টি হয়। সেখানে তখনই সৃষ্টি হয় সনিক বুম। প্রচণ্ড শব্দ। যুদ্ধ বিমান আকাশে ট্রেনিং দেয়ার সময় এই শব্দ আমরা মাঝে মাঝে শুনি।
আগেই বলেছি যে, শব্দ সৃষ্টি হয় কম্পনের মাধ্যমে। এবং বস্তুর প্রতিটি কণাকে স্পন্দিত করেই শব্দ সামনে যায়। হোক সেটা বাতাস, পানি অথবা লোহা ইত্যাদি। সেই কম্পন যদি প্রতি সেকেন্ডে একবার হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় এক হার্জ। আমরা ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ পর্যন্ত শব্দ শুনতে পাই। এর কম বা বেশি হলে আমরা সেটা শুনতে পাই না।