জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলা ভাষায় জুমুআর খুতবাদান সুন্নাতের বরখেলাফ

বাংলা ভাষায় জুমুআর খুতবাদান সুন্নাতের বরখেলাফ

মুফতি আবদুল হক

কোনো কোনো বিদগ্ধ দীনপ্রচারক শ্রোতাদের অনুধাবন, উপলব্ধি ও স্পষ্ট বোধগম্যের লক্ষ্যে এবং যুগোপযোগী ইসলামের প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় কিংবা আরবি-বাংলা মিশ্র ভাষায় জুমুআ ও ঈদের খুতবা প্রদান করার পক্ষে জোরালোভাবে আওয়ায তুলেছেন। নানান যুক্তি আর দর্শন অবতারণা করেছেন। দীনের কল্যাণ কামনায় তাদের নিঃস্বার্থ ও নিষ্ঠাপূর্ণ গবেষণা আল্লাহ পাক কবুল করুন এবং তাদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদান করুন। এ প্রসঙ্গে তাদের যুক্তি হচ্ছে, ‘যুগের পরিবর্তন হয়েছে মানুষ সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে, কাজেই পুরানো যুগের মিয়াজির খুতবা এ যুগে অচল। বস্তুত খুতবা হচ্ছে সপ্তাহ ও বছরান্তে উম্মাহর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ। বিশেষ ওয়ায, উপদেশ ও গণপ্রচার মাধ্যম। এটি আরবি ভাষা নির্ভর হওয়ায় বাংলাভাষী মুসলিম সমাজ খুতবার আহ্বান ও আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে দীনী মূর্খতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

আর তাদের দলিল হচ্ছে, (১) মহামান্য ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফারসি ভাষায় খুতবাদান জায়েয বলে অভিমত পোষণ করেন, (২) ১৪০২ হিজরী সালে পবিত্র মক্কায় অনুষ্ঠিত রাবেতা আলমে ইসলামি ৫ম ফিকহ অধিবেশনের অভিমত: ‘অনারবদের বেলায় সূচনা-সমাপন ও আয়াত-হাদীসসমূহ আরবিতে পাঠ করে প্রাসঙ্গিক বিষয় তাদের ভাষায় খুতবা দান করা যায়।’

বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমার অপরিসর অধ্যাবসায়ের আলোকে কুরআন- সুন্নাহ, ফিকহ-উসুলে ফিকহ, ইতিহাস ও বরেণ্য মনীষীগণের দৃষ্টিতে ঈদ ও জুমুআয় বাংলা খুতবাদান বিষয়ক বিতর্কটির অবসান ও অপনোদনের প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

আল-কুরআনের আলোকে

পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমুআর আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে অগ্রসর হও এবং কেনাকাটা (ইত্যাদি) পরিত্যাগ করো (সুরা আল-জুমুআ: ৯)।

এখানে যিক্‌র অর্থ খুতবা বা নামায (মাআরিফুল কুরআন)। মূলত যিক্‌র শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা- (১) সাধারণ আনুগত্য ও (২) যিক্‌র। বলাবাহুল্য আকীদার কিতাবে রয়েছে, যিক্‌র মনসুস আলাই বা কুরআন-হাদীস বর্ণিত পন্থা ও পদ্ধতিতে সম্পাদন করা আবশ্যক। কাজেই জুমুআ ও ঈদের খুতবা মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত পদ্ধতি অর্থাৎ আরবিতেই হতে হবে। অন্য কোনো ভাষায় নয়।

হাদীসের আলোকে

খুতবা মুখ্যভাবে যিক্‌র আর গৌণভাবে ভাষণ বা ওয়ায-উপদেশ। হাদীসে এসেছে ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন ফেরেশতারা যিক্‌র অর্থাৎ খুতবা শ্রবণের জন্যে হাজির হন। আরো ইরশাদ হয়েছে। ইমাম যখন বের হন, ফেরেশতারা তখন স্ব স্ব খাতা বন্ধ করে মনযোগ-সহকারে যিক্‌র বা খুতবা শোনেন (সহীহ আল-বুখারী: ১/১২১)।

রাসুল (সা.)-এর খুতবায় ওয়ায-নসীহতের বাণী অবশ্যই ছিল। অতএব হাদীসের আলোকে দেখা যায়, খুতবা আসলে যিক্‌র হিসাবে নবী করীম (সা.) যে ভাষায় দিয়েছিলেন সে ভাষাতেই হতে হবে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহ.) বলেন, যুগ-যুগান্তরে মুসলমানদের রীতি-নীতি হচ্ছে আরবি ভাষায় খুতবা দান করা। অথচ অনেক দেশে অনারবি লোক বিদ্যমান ছিল। কাজেই জুমুআ ও ঈদের খুতবা আরবি ভাষায় প্রদান করা সুন্নাত, অন্য ভাষায় বিদআত (আল-মুসাফফা শরহুল মুওয়াত্তা)।

হাদীসের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (রহ.) বলেন, জুমুআ ও ঈদের খুতবা হাদীসের গ্রন্থাবলীর সোনালী পাতায় আজো হুবহু শোভা পাচ্ছে। তাতে দেখা যায় শ্রোতাদের মধ্যে বিভিন্ন ভাষার লোক থাকা সত্ত্বেও নবী করীম (সা.) খুতবায় দোভাষী কিংবা অনুবাদকের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আরবিতেই খুতবা দিয়েছিলেন। আর শ্রোতারা না বুঝলেও মনোযোগ সহকারে যিক্‌র শোনেছিলেন।

ফিকহের আলোকে

ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফিয়ী (রহ.), ইমাম আহমদ ইবনে nv¤^j (রহ.), ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে, খুতবা অবশ্যই আরবিতে প্রদান করতে হবে। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফারসি (অনারবি) ভাষায় খুতবাদান জায়েয বলে অভিমত পোষণ করেন (ফতওয়ায়ে শামী: ১/৫৪৩)।

আল্লামা শুরুমবুলালী (রহ.)-এর মতে জুমুআর খুতবার ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ¯^xq মতের ওপর অটল ছিলেন, শিষ্যদ্বয়ের মতামতের প্রতি রুজু করেননি (মারাকিউল ফালাহ, পৃ. ২৭৭)।

শায়খ আবদুল হক দেহলবী (রহ.) বলেন, আরবি ভাষায় খুতবাদান সর্বোত্তম। যদিও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) যেকোনো ভাষায় তা জায়েয বলে থাকেন (শরহু সিফরিস সায়াদাহ, পৃ. ২৬৭)।

মুফতি সাইফুল্লাহ রহমানীর মতে আরবি ভাষায় খুতবা দানই বাস্তব ও সঠিক এবং প্রায় ইমামগণের মতামতের সাথে সামঞ্জস্যশীল। তবে ওয়ায-উপদেশের জন্য খুতবার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এটাকে সুন্নাহ বা আবশ্যক বলা যাবে না (আল-বা’সুল ইসলামি, নদওয়াতুল ওলামা লাখনৌ, নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৯৬)।

প্রখ্যাত ফিকহবিদ মাওলানা আবদুল হাই (রহ.) বলেন আরবি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবাদান করা সুন্নাতের পরিপন্থি কাজ। কেননা হিজরী প্রথম শতকে এর কোনো প্রমাণ নেই। অথচ প্রয়োজন তখনো ছিল। প্রায়শ অনারব দেশসমূহ বিজিত হয়েছে বটে, কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীগণ খুতবার সুন্নাত পদ্ধতিকে পরিবর্তন ও প্রত্যাখান করেননি। কাজেই অনারবি ভাষায় খুতবাদান সুন্নাতে মুতাওয়াতিরার বরখেলাপ বিধায় বিদআত ও মাকরুহ। তাইতো শরয়ী বিধান হচ্ছে, আরবিতেই খুতবা প্রদান করতে হবে। যেন সুন্নাতের বিরুদ্ধাচারণ এবং ইমামগণের মতৈক্যের বেড়া ভেদ করা না হয় (মাজমুউল ফতওয়া, পৃ. ৩৫৮-৩৫৯)।

মাওলানা আবদুল হাই (রহ.) তাঁর রচিত একটি পুস্তিকায় লিখেন, আরবি ভাষায় খুতবাদান করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা অন্য ভাষায় তা মাকরুহ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) যে জায়েয বলেছেন তার অর্থ জওয়ায মায়াল কারাহাত অর্থাৎ জায়েয বটে কিন্তু মাকরুহযুক্ত (আহকামুন নাফায়িস ফি আদাইল আযকার বিল ফারিস)।

মুফতি রশিদ আহমদ বলেন, জুমুআ ও দুই ঈদের খুতবা আরবিতে দেওয়া সুন্নাত- অন্য কোনো ভাষায় বিদআত (আহসানুল ফতাওয়া, পৃ. ৪/১৫০)।

সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আযীয ইবনে বায (রহ.) জনৈক প্রশ্নকারীর জওয়াবে বলেন, হ্যাঁ, আরবিতে খুতবা দেবেন। তবে শ্রোতাদের ভাষায় পূর্বাপর বুঝিয়ে দেবেন (মাজমুউল ফতাওয়া: ১২/৩৭০)।

পাকিস্তানের সাবেক মুফতিয়ে আযম মুফতি শফী (রহ.)-এর মতে জুমুআর খুতবা আরবিতে দেওয়া সুন্নাত। অন্য কোনো ভাষায় বিদআত ও নাজায়েয (জওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৩৫৮)।

বাংলার আলেমকুল শিরোমনি আল্লামা মুযহের আহমদ (রহ.) (সাবেক রেক্টর, হাশেমিয়া আলিয়া কক্সবাজার) দৈনিক সৈকত পত্রিকায় এ প্রসঙ্গে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তার সারসংক্ষেপ এখানে হুবহু তুলে ধরছি, ‘মহানবী রাসুলে পাক (সা.) সবসময় আরবি ভাষাতেই খুতবা দিতেন। আর সাহাবায়ে কেরাম অনারব দেশসমূহে শ্রোতাদের প্রয়োজন এবং অনারবি ভাষা জানা সত্ত্বেও যেহেতু কেবল আরবি ভাষাতেই খুতবা দিয়েছিলেন, অনারবি ভাষায় খুতবা দিয়েছিলেন বলে কদাচ প্রমাণ নেই এবং অদ্যাবধি আরবি ভাষায় খুতবা পাঠের এ ক্রমধারা প্রায়ই সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চলে আসছে। কাজেই খুতবার ভেতরে বাংলা ভাষার সংমিশ্রণ করা হুযুর পাক (সা.)-এর সুন্নাতে মুতাওয়ারিসার বরখেলাপ, যা মুসলমানদের কাম্য হতে পারে না। যদি কোনো মসজিদে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তাহলে ইমাম সাহেব খুতবার আযানের পূর্বে অথবা জুমুআর নামাযের পরে খুতবার সারমর্ম মুসল্লীগণকে বুঝিয়ে দিতে পারেন (দৈনিক সৈকত, ২৯ অক্টোবার ১৯৯৮)।

উসুলে ফিকহের আলোকে

উসুল বা ফিকহ এর মুলনীতির আলোকে আরবি ভাষায় খুতবা অকাট্য ও অলঙ্ঘনীয় সুন্নাত। কেনান মহানবী (সা.) খুলাফায়ে রাশেদীন, অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন ও তবে তাবিয়ীনের জমানায় আরবি ভাষায় খুতবা দান করা হত বিধায়, এটি সুন্নাতে নবী (সা.)। সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন, সুন্নাতে মুতাওয়াতিরা (নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক সুন্নাত) ও সুন্নাতে মুতাওয়ারিসা (বা যুগপরম্পরা সুন্নাত)।

ইতিহাসের আলোকে

ইতিহাস সাক্ষী, সাহাবায়ে, তাবিয়ীন এবং অপরাপর ইসলামের সিপাহসালার ও শাসকগণ বিজিত অনারব দেশসমূহে শ্রোতাদের প্রয়োজন এবং অনারবি ভাষায় তাদের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেউ কোথাও অনারবি ভাষায় খুতবাদান করেছিলেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। সপ্তম শতকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আগত সাহাবা প্রতিনিধি দল, অতঃপর মেঘনার মোহনা থেকে সুদূর কক্সবাজার পর্যন্ত ব্যাপক বিচরণকারী আরব বণিক তথা দীন প্রচারক দলসমূহ এবং বাংলার গ্রেট ধর্মপ্রচারক হযরত শাহ জালাল, নূর কুতুব ও খান জাহান আলী (রহ.)সহ অগণিত অলি-দরবেশ বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁরা এখানকার মাতৃভাষায় দাওয়া কর্মপরিচালনা করেছিলেন বলে ড. এবনে গোলাম সমদ, ড. এনামুল হক ও আবদুল মান্নান তালিব প্রমুখ অভিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনো প্রচারকর্মি সমসাময়িক নব-মুসলিমদের কাছে বাংলায় খুতবাদান করেছিলেন বলে আদৌ প্রমাণ নেই। নচেৎ আজকের পুরাতন মুসলিমদের মধ্যে নতুন করে এই বিতর্ক দেখা দিত না।

খুতবা যিক্‌র না ভাষণ

মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, (ক) খুতবার আসল উদ্দেশ্য যিক্‌র বা বিশেষ ইবাদত। ওয়ায-উপদেশ গৌণভাবে লাভ হয়। কেননা

  1. খুতবায় দুইটি ফরয এবং পনেরটি সুন্নাত রয়েছে (ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/১৪৬)।
  2. জুমুআর খুতবা হচ্ছে, চার রাকআতবিশিষ্ট যুহরের ফরযের বাকী দুই রাকআত নামায (আল-বাহাররু রায়িক: ১/১০৮)।
  3. খুতবার মাঝখানে কথা বলা যাবে না (আল-মাবসুত: ২/২৬)।
  4. খুতবা জুমুআর জন্য শর্তবিশেষ (ফাতহুল কদীর)।
  5. খুতবার সময় নামায পড়া, কথা বলা, তাসবীহ-তাহলীল করা, সালাম দেওয়া, হুযুর (সা.)-এর নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা এবং অন্যায় কাজে মৌখিক নিষেধ করা সবকিছুই নিষিদ্ধ (আল-হিদায়া আল-বাহারুর রায়িক)।

অথচ ওয়ায-বক্তৃতায় এগুলো নিষিদ্ধ নয়। আর না ওয়াযের জন্য কিছু ফরয ও সুন্নাত রয়েছে। না ওয়ায জুমুআর জন্য শর্তস্বরূপ| কাজেই একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, খুতবা প্রচলিত ওয়ায-বক্তৃতা নয়। বরং বিশেষ যিক্‌র যা ইমাম সাহেব উচৈঃস্বরে করেন আর শ্রোতামণ্ডলী না বুঝলেও তা মনোযোগ সহকারে শোনেন।

(খ) নবী করীম (সা.)-এর খুতবায় রোম-পারস্যসহ বিভিন্ন অনারব দেশের লোক শরীক হত। তখন সাহাবীদের মধ্যে অনুবাদকর্মে সক্ষম ব্যক্তি অনেক বিদ্যমান ছিলেন। খুতবা প্রচলিত ওয়ায-বক্তৃতা হলে রাসুল (সা.) নিঃসন্দেহে অনুবাদের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু খুতবার ব্যাপারে তা করেছিলেন বলে ইতিহাসে কোথাও প্রমাণ নেই। নবী করীম (সা.)-এর পরে সাহাবীগণ বাঁধভাঙা জোয়ারের ন্যায় অনারব দেশসমূহে ঢুকে পড়েন এবং বিজিত এলাকায় সর্বত্র জুমুআ ও ঈদ কায়েম করেন। প্রাদেশিক গভর্নরগণ রাষ্ট্রীয় কাজে দোভাষী ব্যবহার করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) দাওয়াতি কাজের জন্য বেতনধারী একজন দোভাষী রেখেছিলেন (সহীহ আল-বুখারী, ওয়াফুদ অধ্যায়)। কিন্তু তারা অনারবি ভাষায় কখনো খুতবা দেননি। আর না কেউ খুতবার কাজে কোনো দোভাষীকে ব্যবহার করেছিলেন। কাজেই বোঝা গেল খুতবা নামাযের কিরাআত, তাসবীহ ও তাশাহুদ ইত্যাদির ন্যায় যিক্‌র বিশেষ।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন,

  1. খুতবা না বুঝলে শুনে লাভ কি? এ জবাবে বলতে হয়, তাহলে নামাযের কিরাআত, তাশাহুদ ও তাকবীর ইত্যাদিও অনুবাদ করতে হবে।
  2. খুতবা বক্তৃতা না হলে খতীব সাহেব শ্রোতামুখী হন কেন? এর তিনটি জবাব।
  3. ভাষা এমন একটি সেতু যা দ্বারা এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশে অনায়সে পারাপার হয় (উদাহরণস্বরূপ ইংরেজি ভাষাকে পেশ করা যেতে পারে) তাই শ্রেষ্ঠ ভাষা বিজ্ঞানী মুহাম্মদ (সা.) কুরআনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি সারা বিশ্বে বিস্তার করার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব-সহকারে দাঁড়িয়ে কুরআন-সুন্নাহর আরবিতেই খুতবা প্রচলন করেন।
  4. খুতবা নামক যিক্‌রটির প্রকৃতিই হলো ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে খুতবা দেবেন, যিক্‌র করবেন। আর শ্রোতারা নিরবে তা শুনবেন। বস্তুত খুতবার ব্যাপারে মহানবী (সা.) ও ইসলামের যুগে প্রচলিত পদ্ধতি-পন্থায় আপত্তি করা কোনো মুমিনের জন্য শোভা পায় না।
  5. আরবি ভাষা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.) সুন্নাহর ভাষা হিসাবে একটি বিশ্বজোড়া আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই আরবির এই আন্তর্জাতিক মান বহাল রাখার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) সপ্তাহ ও বছরান্তে আরবি ভাষায় শোডাউন করার প্রতিবিধান প্রবর্তন করেন। যা মুসলমানদের জন্য আপত্তির বিষয় নয়, বরং গর্ব ও গৌরবের বিষয় (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৩৫৩-৩৫৪)।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধর, নতুন কর্ম থেকে বেঁচে থাক। কেননা নতুন কর্ম বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা ও গুমরাহি (মিশকাত: ১/৩)।

লেখক,      খলীফা: শাহ মাওলানা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.), কলামিস্ট, গ্রন্থপ্রণেতা প্রধান মুহাদ্দিস, রাজারকুল আযীযুল উলুম মাদরাসা, রামু, কক্সবাজার

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ