ইমাম-খতীবদের প্রতি খোলা চিঠি
মিযানুর রহমান জামীল
আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
শ্রদ্ধেয় ইমাম ও খতীব সাহেব!
আপনারা আমাদের আস্থা ও ভালোবাসার মানুষ। আপনারা প্রত্যেকেই মিম্বারের এক একজন আলোকিত কণ্ঠস্বর| দীন-ইসলামের পতাকাবাহী সমাজের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি আপনারা। আপনাদের কথা মুসল্লিরা মান্য করার চেষ্টা করে থাকেন। কারণ আপনারা মুসল্লিদের ইমাম। আপনারা মসল্লিদের নেতা। আপনাদের কাজ নেতৃত্ব প্রদান করা। মুসল্লিরা আপনাদের মসজিদভিত্তিক নেতৃত্বে যথেষ্ট অনুরাগী। আপনারা মসজিদ আবাদি মেহনতের উদ্যোক্তা। আপনাদের উদ্যোগে এলাকার সামাজিক অবকাঠামো এবং সুন্দর পরিবেশ অক্ষণ্ন থাকার দাবী রাখে। সর্বোপরি আপনাদের মতো সুযোগ্য ইমাম-খতীবদের নেতৃত্বে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই ইমামপ্রেমিক খতীবভক্ত মুসল্লিরা যে কোনো সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। আপনাদের জ্ঞানে-গুণে অভিভূত হয়ে সমাজের মোড় নিমিষেই পাল্টে যাওয়ার কথা! কিন্তু কেন তা হচ্ছে না বা আশানুরূপ করা যাচ্ছে না?
সম্মানিত ইমাম ও খতীব সাহেব!
বৈরি পরিস্থিতি বা অশুভ পরিবেশের প্রভাবের কারণে আপনারা পরিবর্তন না হয়ে পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করুন। এ ক্ষেত্রে যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন, আপনারা হক কথা বলা বন্ধ করবেন না। আপনাদের জবানে কেয়ামত পর্যন্ত এক কালিমার সত্যবাণী উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আপনাদের অবস্থানও হঠাৎ নড়বড় হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কালামের অক্ষয় নির্দেশনাগুলো যেন নড়বড় না হয়, সে দিকে রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি। আপনারাই আল্লাহর হাকিমিয়্যাতের রক্ষক। আপনারাই তো সুন্নাতে রাসুলের ধারক-বাহক। সমাজ তো আপনাদের আলোচনা থেকেই জানবে এবং আমল করবে। মুসল্লিরা তো আপনাদের জবান থেকে শিখবে এবং জীবন সাজাবে।
মুহতারাম ইমাম ও খতীব সাহেব!
আজ বড় দুঃখের সাথে বলতে হয়- মসজিদগুলো বর্তমানে টাইলসের ভারে কাঁপছে; অথচ মসজিদের ইমাম খতীবদের আলোচনায় কোনো পাপীর হৃদয় কাঁপছে না। মসজিদের মিনারাগুলো আকাশ ছুঁয়ে যাওয়ার মত অবস্থা; কিন্তু মসজিদের দায়িত্বশীলদের ঈমান আমলের অবস্থা যে পরিমাণ নীচে নেমে যাচ্ছে তা বলার মত নয়। তাদের ঈমান আমলের এ অবস্থা সম্পর্কে অন্যেরা যা জানে তার চেয়ে বেশি আপনারাই জানেন। এ সতর্কতা প্রদর্শনের একমাত্র দায়িত্ব আপনাদের কাছে। যে কোনো মূল্যে তাদের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আদায়ের সর্বাধিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। থাকতে হবে তাদের ঈমানী উন্নতির জন্য একক ফিকিরও। এ বিষয়ে তাদের প্রতি আপনাদের সতর্কতা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনাব ইমাম ও খতীব সাহেব!
বর্তমানে ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য চলছে কঠিন ফিতনা। এ ফিতনার তুফান ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে, এমনকি বহির্বিশ্বেও। ফিতনার এই বাতাস যেভাবে আমাদের সমাজকে নষ্ট করে যাচ্ছে সেভাবে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। মানুষের চারিত্রিক মূল্যবোধে চলে আসছে স্থবিরতা। আপনারা যদি এ সময় এ বিষয়ে বয়ানের মাধ্যমে জাতিকে জানান না দেন; তবে জাতির এই উদ্ভ্রান্ত ছুটে চলা রুখবে কারা? যেমন- ধর্মের নামে হেজবুত তাওহীদের ঈমান বিধ্বংসী কর্মপরিকল্পনা, ইসলামের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে নাস্তিকতার অবাধ আনাগোনা, পৃথিবীর দিকে দিকে কুফ্ফারদের মুসলিম নির্যাতন, সাধু সেজে ধর্মের নামে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর প্রপাগাণ্ডা, শিরক-বিদআতের উন্মুক্ত জৌলুশতা এখনও চলছে। এ সম্পর্কে সচেতন করার দায়িত্ব আপনাদের।
হযরত ইমাম ও খতীব সাহেব!
হক কথা বলা কঠিন হলেও যে কোনো মূল্যে তা বলতে হবে। না হক কথা বলা সহজ হলেও যে কোনো অবস্থায় তা ছাড়তে হবে। উম্মাহর ঈমানের আকাশে ভেসে বেড়ানো হতাশার এ কালো মেঘ দূর করার দায়িত্ব আপনাদেরই। সুতরাং আপনারা এ বিষয়ে আওয়াজ তুলে সবাইকে সতর্ক না করলে এমন এক সময় আসবে যখন আপনারা আপনাদের অবস্থানও টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। আল্লাহ না করুন; ধরে রাখতে পারবেন না- ঈমান আমলের প্রচারকেন্দ্র আল্লাহর ঘর মসজিদগুলোও। এক কথায় বাঁচানো সম্ভব হবে না মসজিদ, মাদরাসা, ঘর, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। ধরে রাখা যাবে না শেয়ারে ইসলাম। রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে মুসলিম ভৌগলিক অবস্থান। যেমনি ধরে রাখা যায় নি বোখারা, সমরকন্দ ও তাসখন্দের বাসিন্দাদের ঈমান-আমল ও তাদের বসবাসের আবাস ভূমি।
নবীর ওয়ারিস ইমাম ও খতীব সাহেব!
আপনারা সত্য কথা বলুন আর নাই বলুন! অসত্যকে গোপন করুন আর নাই করুন আল্লাহর কাছে কিন্তু আপনাদের প্রতিটি আলোচনার প্রতিটি শব্দ-বাক্য কাল কেয়ামতের ময়দানে সরল বা বিরল সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য আপনাদের অধীনে থাকা মুসল্লিদের লাগামহীন গুনাহ তথা সার্বিক জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনের বড় একটি দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে। কারণ আপনারা প্রত্যেকেই মসজিদভিত্তিক সমাজের একেকজন দায়িত্বশীল। আর দায়িত্বশীলদের জন্য রয়েছে জবাবদিহিতার কাঠগড়া। কাজেই মুসলিম সমাজ তথা মুসল্লি ও উম্মাহর প্রতি আপনাদের নির্দেশনা প্রদান ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আপনাদের আওয়াজ তোলা অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। আমাদের জন্য দীনের পথকে সহজ করে দিন।
সম্পাদক, কলমসৈনিক