জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল?

ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল?

মোহাম্মদ আবদুল গফুর

 

এখন ফেব্রুয়ারি মাস চলছে। আর বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রধান পরিচয়ই ভাষা আন্দোলন মাস হিসেবে। উনিশ শো বাহান্নর ফেব্রুয়ারি মাসে বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার কারণে আজ সারা পৃথিবীতে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সেই নিরিখে ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন এক গৌরবোজ্জল অধ্যায় সৃষ্টি করেছে, যেমনটা পৃথিবীর আর কোন দেশের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। অনেক ইতিহাস বিশ্লেষক যে দাবি করেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উদ্ভব ঘটেছে, এ সত্য আর এখন অস্বীকার করার আর কোন উপায় নেই।

অথচ দুঃখের বিষয় জাতির ইতিহাসের এই মহা-মহা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ভাষা আন্দোলনের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আমরা অনেকে প্রায় জানিনা বললেই চলে। ভাষা আন্দোলন কবে, কিভাবে, ইতিহাসের কোন্‌ পটভূমিতে শুরু হয়েছিল, আর তার সমাপ্তিই বা কিভাবে হয়েছিল সেসব আমরা না জানাতে আমরা শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারি পুষ্পার্ঘ অর্পণের আনুষ্ঠিকতার মধ্যে ভাষা আন্দোলন উদযাপন সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। অনেকেরই মনে এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে ভাষা আন্দোলন বুঝি একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সীমাবদ্ধ একটি ঘটনা ছিল।

অথচ প্রকৃত সত্য এই যে, ভাষা আন্দোলন একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সীমাবদ্ধ কোন ঘটনা ছিল না। এমন কি বাহান্নর আন্দোলন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সর্বপ্রথম আন্দোলনও ছিল না। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে যে প্রায়ই বলা হয় আরম্ভেরও আগে যেমন আরম্ভ থাকে, সেভাবে ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও বাহান্নের আগেও ছিল আটচল্লিশ, আটচল্লিশের আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ নেন ভাষা আন্দোলনের মূল নেতারা।

আসলে ভাষা আন্দোলন যেমন বাহান্নর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তেমনি সীমাবদ্ধ ছিল না আটচল্লিশ বা অন্য কোন একটি মাত্র বছর বা কোন একটি মাত্র ঘটনার মধ্যে। ভাষা আন্দোলন জন্ম নেয় সাতচল্লিশে উপমহাদেশের তদানীন্তন রাজনৈতিক পটভূমিতে নানা প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যদিয়ে। এ কারণে ভাষা আন্দোলনের কার্য-কারণ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে উপমহাদেশের তদানীন্তন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিকসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আনা অত্যন্ত জরুরি।

একথা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, ভাষা আন্দোলনের সাথে সাতচল্লিশের পাটিশনের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এই পার্টিশনের ফলে উপমহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম-অধ্যুষিত অথচ ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি জনপদ মিলে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র এবং মধ্যবর্তী হিন্দু-প্রধান অঞ্চল নিয়ে ভারত নামের আরেকটি রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। ভারতের রাষ্ট্রভাষা যে হিন্দি হবে, সে সিদ্ধান্ত সে দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব পূর্বাহ্নে গ্রহণ করলেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে সে সম্পর্কে কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার পূর্বে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলোচনা চলার মধ্যেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়ে যায়। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে উর্দুভাষাভাষীদের বিপুল সংখ্যাধিক্যের সুবাদে তাদের মধ্যে একটা গোপন প্রচেষ্টা শুরু হয়ে যায় উর্দুকে নতুন রাষ্ট্রের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে। এটা বোঝা যায় নতুন রাষ্ট্রের পোস্টকার্ড, এনভেলাপ, মানি অর্ডার ফর্ম প্রভৃতিতে ইংরেজির সাথে শুধুমাত্র উর্দুর ব্যবহার থেকে। এই পটভূমিতে পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন সংস্কৃতিকর্মিদের সংস্থা তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে।

এই পুস্তিকায় তিনজন লেখকের রচনা স্থান লাভ করে। এই তিনজন লেখক ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন এবং খ্যাতনামা সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ। তাদের রচনায় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার পাশাপাশি বাংলাকে অবমূল্যায়ণ করার ক্ষতিকর দিকও তুলে ধরা হয় বিভিন্নভাবে।

অধ্যাপক আবুল কাসেম রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত তাঁর মূল বক্তব্য তুলে ধরেন এভাবে: (এক) পূর্ব পাকিস্তানের অফিস-আদালতের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করতে হবে বাংলাকে। (দুই) পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটি বাংলা ও উর্দু। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভিত্তি ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুসারে উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সমর্থনযোগ্য। সেই তুলনায় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি খুবই ক্ষুদ্র। তাছাড়া পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী এবং তাদের মাতৃভাষা বাংলা। সেই নিরিখে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি খুবই যুক্তিযুক্ত।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ভাষা আন্দোলনের মেনিফেস্টোরূপী পুস্তিকা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু প্রকাশ করেই বসে ছিলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে তিনি বৈঠক ও আলোচনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা সভা চালিয়ে যেতে থাকেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিকে জোরদার করে তুলতে। ভাষা আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে ১৯৪৭ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হক ভূঁইয়াকে কনভেনর করে, প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক ছাত্র কর্মিরা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামের একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মলগ্ন থেকেই এই ছাত্রসংস্থা তমদ্দুন মজলিসের সূচিত ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এ সময়ে তমুদ্দন মজলিস ও ছাত্র-লীগের যুগপৎ সদস্য শামসুল আলমকে কনভেনর করে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়।

প্রায় একই সময়ে, পাকিস্তান গণপরিষদের কংগ্রেস দলীয় সদস্য বাবু ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত গণপরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিতে দাবি উত্থাপন করলে সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সারা পূর্বপাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করা হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে। এটাই ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম হরতাল। এই হরতালের প্রতি রেল শ্রমিক কর্মচারীদের পূর্ণ সমর্থন থাকায় ঐদিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোন ট্রেন রওনা হতেই পারেনি।

ঢাকার অবস্থা ছিল আরও উৎসাহব্যঞ্জক। ভোর থেকেই সেক্রেটারিয়েটের চারদিকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পিকেটিং শুরু হওয়াতে খুব কমসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেদিন সেক্রেটারিয়েটে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেক্রেটারিয়েটের চারদিকে সে সময় পাকা দেয়াল ছিল না। ছিল কাঁটা তারের বেড়া। অনেক পিকেটার কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে ঢুকে পড়ে উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিতির জন্য নিন্দা জানান।

পিকেটারদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করার ফলে অধ্যাপক আবুল কাসেমসহ অনেকে আহত হন। পিকেটিংয়ের অংশ গ্রহণ করায় শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ অনেকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের এসব খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে শহরের বিভিন্ন দিক থেকে আসা বিক্ষুব্ধ জনগণের মাধ্যমে গোটা সেক্রেটারিয়েট এলাকা অচিরেই বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এর ফলে সমগ্র শহরে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

১১ মার্চের এ অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকে ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ মার্চ পর্যন্ত। এতে তৎকালীন প্রাদেশিক প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান। কারণ ১৯ মার্চ তারিখে গর্ভনর জেনারেল কায়েদে আযম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকা সফরে আসার কথা। তিনি ঢাকা এসে যদি এই অরাজক পরিস্থিতি দেখতে পান, খাজা নাজিমুদ্দিন সম্পর্কে তাঁর ধারণা ভালো থাকার কথা নয়। তাই তিনি স্বতো প্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে সাত-দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির অন্যতম শর্ত অনুসারে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দেওয়া হলে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে আসে।

এর পর যথাসময়ে কায়েদে আযম পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। প্রাদেশিক রাজধানীতে অবস্থানকালে তিনি রমনা রেসকোর্স ময়দানে একটি বিরাট জনসভায় এবং কার্জন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে ভাষণ দান করেন। উভয় স্থানেই তিনি ইংরেজিতে ভাষণ দেন, এবং রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। উভয় স্থানেই তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ হয়। রেসকোর্সের বিশাল জনসভায় কোনো দিকে থেকে কে বা কারা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়, তা তিনি খেয়াল না করলেও সমাবর্তনে সীমিত সংখ্যক উপস্থিতিতে তাঁর মুখের সামনে নো-নো প্রতিবাদ উঠায় তিনি বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণের জন্য ভাষণ বন্ধ রাখেন। কারণ এই ছাত্র তরুণরাই মাত্র কিছুদিন আগে তাঁর আহ্বানে পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেছে। অতঃপর তিনি ভাষণ সংক্ষেপ করে কার্জন হল ত্যাগ করেন।

এরপর তিনি ছাত্র নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হয়ে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকাতে আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ওই বছরের (১৯৪৮) ১১ সেপ্টেম্বর কায়েদে আযম ইন্তেকাল করেন। তবে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় ছিল। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে আর কোন প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি। বরং বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাব্বেরের সাংবাদিকের রোজনামচা সূত্রে জানা যায় গ্রন্থ মৃত্যু শয্যায় তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক কর্ণেল এলাহী বখশের কাছে এই বলে একাধিকবার দুঃখ প্রকাশ করেন যে, অন্যের কথায় বিশ্বাস করে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বক্তব্য দিয়ে তিনি বিরাট ভুল করেছেন। ব্যাপারটি গণপরিষদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই তাঁর উচিৎ ছিল। কারণ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি তাদের বক্তব্যের সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি লক্ষ্য করেন।

আগেই বলা হয়েছে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কায়েদ আযম ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিনকে তার স্থানে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিমুদ্দিনকে তার স্থানে প্রধান মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৫২ সালের জানুয়ারী মাসে ঢাকা সফরে এসে তিনি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি ঘোষণা করে বসেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে শুধু উর্দু।

খাজা নাজিমুদ্দিনের এ ঘোষণায় রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন পুনরায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যে নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বপক্ষে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, তার এই ঘোষণা ভাষা সংগ্রামীদের কাছে চরম বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজ বলে বিবেচিত হয়। এই বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে আহূত হয় বায়ান্নর একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর প্রতিবাদ দিবস। এই প্রতিবাদ দিবস পালন করতে গিয়েই সালাম, বরকত প্রমুখ ভাষা শহীদরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ইতিহাস সৃষ্টি করে ভাষা আন্দোলকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যান যা যার ফলে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

ভাষা সৈনিক, সাংবাদিক

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ