আদালত ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রমিত বাংলার ব্যবহার চাই
বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার। এ ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রক্তের নজরানা দিয়েছি। পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা। বর্তমানে প্রচলিত ৬ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে এবং মনের ভাব আদান প্রদান করে। এ ভাষায় শব্দভাণ্ডার প্রাচুর্যময়। আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি, ফরাসি, চৈনিক ও জার্মানসহ অপরাপর ভাষা ও সাহিত্য থেকে বাংলায় ভাষান্তর করতে গেলে অনুবাদকদের বেগ পেতে হয় না। বহু বিদেশী শব্দ অবলীলায় বাংলার বুকে ঠাঁই নিয়েছে। কওমি মাদরাসায়ও আগের তুলনায় পটন-পাঠনের মাধ্যম বাংলা মুখ্য হয়ে উঠেছে। পটিয়া, হাটহাজারী, দারুল মাআরিফ, জামিয়া রহমানিয়া, দারুর রাশাদ ও ফরিদাবাদ মাদরাসাসহ বড় বড় দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা ধর্মীয়-সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা বের হচ্ছে নিয়মিত। ভাষা, বিষয়, মুদ্রণ ও অঙ্গসৌষ্টবের দিক দিয়ে এসব ম্যাগাজিন মানসম্মত। বাংলা দেয়াল পত্রিকাতো বলতে গেলে প্রায় সব মাদরাসা থেকে বের হয়। ইতোমধ্যে তরুণ ওলামায়ে কেরাম বিপুলসংখ্যক মূল্যবান গ্রন্থ আরবি ও উর্দু হতে বাংলায় ভাষান্তরিত করে রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
স্বাধীনতার ৪৮বছর পরও আমাদের আদালত ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রমিত বাংলার ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত হয়নি। একটু সচেষ্ট হলেই আমরা এটা করতে পারি। আদালত ও আইনের অনেক পরিভাষা রয়েছে এ গুলোর ভাষান্তর করা কোন কঠিন ও জটিল কাজ নয়। এগুলোর যুৎসই পরিভাষা তৈরির জন্য প্রয়োজনে ভাষাবিজ্ঞানীদের সমন্বয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। পৃথিবীর বহু উন্নত ও স্বল্প উন্নত দেশ বিশেষত চীন, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, ইরান, মিসর ও ল্যাটিন আমেরিকা তাদের নিজস্ব ভাষা দিয়ে প্রশাসন, শিক্ষা, মিডিয়া ও আদালত পরিচালনা করে থাকে। ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রভাব আমরা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ইংরেজিপ্রীতি আমাদের আষ্টে পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে।
একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ইংরেজি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ভাষা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল ভাণ্ডার ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হয়েছে। ইংরেজি জানা মানে বৈশ্বিক জানাশ্বৈর্যের অঙ্গনে প্রবেশের সুযোগ অবারিত হয় ঠিক। কেবল ইংরেজি কেন? আরবি, ফার্সি, ফরাসি, স্পেনিশ ও জার্মান ভাষাও যদি কেউ রপ্ত করতে পারে এটা তার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই বলে নিজের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে বিদেশি ভাষার চর্চা ও প্রয়োগ স্বদেশ চেতনার পরিপন্থী। আদালতের আর্জি, রিভিউ পিটিশন, রিট আবেদন, আর্গুমেন্ট ও রায় বাংলায় হওয়া চাই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নাটক ও সংলাপে অনেক সময় এমন ভাষা ব্যবহার করা হয় যা জগাখিচুরি এবং আঞ্চলিকতার প্রভাবে শ্রুতিকটু। তরুণ প্রজন্মের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সর্বস্তরে শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা ভাষা ব্যবহারে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। তবেই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন