জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদালত ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রমিত বাংলার ব্যবহার চাই

আদালত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রমিত বাংলার ব্যবহার চাই

বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার। এ ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রক্তের নজরানা দিয়েছি। পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা। বর্তমানে প্রচলিত ৬ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে এবং মনের ভাব আদান প্রদান করে। এ ভাষায় শব্দভাণ্ডার প্রাচুর্যময়। আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি, ফরাসি, চৈনিক ও জার্মানসহ অপরাপর ভাষা ও সাহিত্য থেকে বাংলায় ভাষান্তর করতে গেলে অনুবাদকদের বেগ পেতে হয় না। বহু বিদেশী শব্দ অবলীলায় বাংলার বুকে ঠাঁই নিয়েছে। কওমি মাদরাসায়ও আগের তুলনায় পটন-পাঠনের মাধ্যম বাংলা মুখ্য হয়ে উঠেছে। পটিয়া, হাটহাজারী, দারুল মাআরিফ, জামিয়া রহমানিয়া, দারুর রাশাদ ও ফরিদাবাদ মাদরাসাসহ বড় বড় দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা ধর্মীয়-সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা বের হচ্ছে নিয়মিত। ভাষা, বিষয়, মুদ্রণ ও অঙ্গসৌষ্টবের দিক দিয়ে এসব ম্যাগাজিন মানসম্মত। বাংলা দেয়াল পত্রিকাতো বলতে গেলে প্রায় সব মাদরাসা থেকে বের হয়। ইতোমধ্যে তরুণ ওলামায়ে কেরাম বিপুলসংখ্যক মূল্যবান গ্রন্থ আরবি ও উর্দু হতে বাংলায় ভাষান্তরিত করে রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

স্বাধীনতার ৪৮বছর পরও আমাদের আদালত ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রমিত বাংলার ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত হয়নি। একটু সচেষ্ট হলেই আমরা এটা করতে পারি। আদালত ও আইনের অনেক পরিভাষা রয়েছে এ গুলোর ভাষান্তর করা কোন কঠিন ও জটিল কাজ নয়। এগুলোর যুৎসই পরিভাষা তৈরির জন্য প্রয়োজনে ভাষাবিজ্ঞানীদের সমন্বয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। পৃথিবীর বহু উন্নত ও স্বল্প উন্নত দেশ বিশেষত চীন, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, ইরান, মিসর ও ল্যাটিন আমেরিকা তাদের নিজস্ব ভাষা দিয়ে প্রশাসন, শিক্ষা, মিডিয়া ও আদালত পরিচালনা করে থাকে। ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রভাব আমরা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ইংরেজিপ্রীতি আমাদের আষ্টে পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে।

একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ইংরেজি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ভাষা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল ভাণ্ডার ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হয়েছে। ইংরেজি জানা মানে বৈশ্বিক জানাশ্বৈর্যের অঙ্গনে প্রবেশের সুযোগ অবারিত হয় ঠিক। কেবল ইংরেজি কেন? আরবি, ফার্সি, ফরাসি, স্পেনিশ ও জার্মান ভাষাও যদি কেউ রপ্ত করতে পারে এটা তার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই বলে নিজের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে বিদেশি ভাষার চর্চা ও প্রয়োগ স্বদেশ চেতনার পরিপন্থী। আদালতের আর্জি, রিভিউ পিটিশন, রিট আবেদন, আর্গুমেন্ট ও রায় বাংলায় হওয়া চাই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নাটক ও সংলাপে অনেক সময় এমন ভাষা ব্যবহার করা হয় যা জগাখিচুরি এবং আঞ্চলিকতার প্রভাবে শ্রুতিকটু। তরুণ প্রজন্মের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সর্বস্তরে শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা ভাষা ব্যবহারে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। তবেই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।

ড. খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ