জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ- আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান ফতওয়া বিভাগ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

সমস্যা ও সমাধান

ফতওয়া বিভাগ

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭

ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com

পেইজ লিংক: Facebook.com/Darul-ifta-Jamia-Patiya

 

 

আকীদা-বিশ্বাস

সমস্যা: মাহে রবিউল আউয়াল আগমন করলে দেখা যায় আমাদের দেশের কিছু মুসলমান প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে খুবই জাঁকজমকপূর্ণভাবে নিজেরা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করে আর যারা এটিকে উদযাপন করে না তাদেরকে কাফের-মুশরিকসহ বিভিন্ন ঘৃণ্য উপাধিতে ভূষিত করে থাকে। এ ব্যাপারে আমার জানার বিষয় হলো, মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী? এবং যারা তা উদযাপন করে না তাদেরকে কাফের বা মুশরিক বলা যাবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

আবদুল্লাহ

মহেশখালী, কক্সবাজার

 

সমাধান: রবিউল আউয়াল মাসে রাসুল (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এবং ইন্তেকাল উপলক্ষে শোকদিবস পালন করা শরীয়তে তার কোন ভিত্তি নেই। আর ওই দিনকে কেন্দ্র করে যেসব বিদআত-কুসংস্কার (শরীয়ত পরিপন্থী কার্যকলাপ) প্রচলিত আছে, তার সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। বরং মুসলমানদের উচিত সেসব দিন বিদআত-রুসুমাত থেকে বিরত থেকে অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করা। সহীহুল বুখারী: ২৬৯৭, আল-মাদখাল: ১৮৫, ইমদাদুল মুফতীন: ১/১৭৪, কিফায়াতুল মুফতি: ১/১৪৫

 

সমস্যা: অনেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাম শুনলে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুমু খেয়ে ওই আঙুল দ্বারা চোখ মালিশ করে থাকে এবং এটাকে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি ও সাওয়াবের কারণ মনে করে। তারা এ আমলের ওপর দলিলও দিয়ে থাকে। আমার প্রশ্ন হলো, নবী (সা.)-এর নাম শুনে এমন করা শরীয়ত সম্মত কি না?

মুহাম্মদ ওনাইস

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: হাদীস শরীফে নবী করীম (সা.)-এর নাম শুনে দুরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো মজলিসে একাধিকবার নবী (সা.)-এর নাম মুবারক শ্রবণ করলে প্রত্যেকবার দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব; একবার পড়া ওয়াজিব। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। মনগড়া কোনো পন্থায় সম্মান প্রদর্শন শরীয়ত সমর্থন করে না। তদ্রূপ নবী (সা.)-এর নাম শুনে আঙুল চুম্বন করে ওই আঙুল দ্বারা চোখ মালিশ করা শরীয়ত স্বীকৃত নয়। সুতরাং এ আমলকে মুস্তাহাব মনে করা বিদআত ও গোমরাহি। কেননা হাদীসে এ জাতীয় আমালের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদুপরি এ বিষয়ে যে হাদীসটি পাওয়া যায় তা নিতান্তই অগ্রহণযোগ্য ও যয়ীফ তথা দুর্বল হাদীস বলে হাদীস বিশারদগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে ইসলামের স্বর্ণ যুগেও তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবয়ে তাবেয়ীন, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন ও ফকীহগণের কেউই রাসুল (সা.)-এর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের জন্য এধরনের আমল করেছেন বলে প্রমাণ নেই। রদ্দুল মুহতার: ১/২৯৮, ইমদাদুল ফতওয়া: ৫/২৫৯, ইমদাদুল আহকাম: ১/১৮৮, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১/১৮৬

 

সমস্যা: মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের খতম এবং গরু-মহিষ জবাই করে লোকজন দাওয়াত করে চার দিনা, ত্রিশা ও চল্লিশা করা জায়েয আছে কি? এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? জানালে উপকৃত হবো।

আবদুল আজীজ

মালিবাগ, ঢাকা

 

সমাধান: মৃত ব্যক্তির জন্য দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে দাওয়াতের আয়োজন করা ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা বিদআত ও বর্জনীয়। তবে তিন দিনা, চার দিনা, ত্রিশা ও চল্লিশার মতো তারিখ নির্ধারণ না করে মৃত ব্যক্তির ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে গরীব- মিসকীনদের খানা খাওয়ানো যেতে পারে। ফতহুল কদীর: ২/১০২ ইমদাদুল আহকাম: ১/২০৬

সমস্যা: আমাদের দেশে ঝাড়ফুঁক করা ও তাবিজ লটকানোর যে প্রথা প্রচলিত আছে শরীয়তে তার হুকুম কী? কেউ কেউ বলে থাকেন, তাবিজ লটকানো কুফরি। তাদের একথা কতটুকু সঠিক? দলিলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহিব্বুল্লাহ কুতুবী

কক্সবাজার

 

সমাধান: কুরআন-হাদীস থেকে ঝাড়-ফুঁক করা এবং এমন কোন কালিমা দ্বারা তাবিজ লিখা যার মধ্যে কোন কুফরি বা শিরকি কথা-বার্তা নেই, ইসলামি শরিয়তে এতে কোন সমস্যা নেই; বরং তা জায়িয ও বৈধ। হাদীস শরিফে যে তাবিজকে কুফরি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে তা হলো, যদি তার মধ্যে কুফরি বা শিরকি কোন কথা-বার্তা থাকে। কুরআন-হাদীস দ্বারা যে ঝাড়-ফুঁক করা হয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। বাযলুল মজহুদ: ১৬/২১৩, সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৩/৪৫৭, রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৩

 

সমস্যা: রাসুল (সা.)-এর ওপর সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে যে দরুদ শরীফ পড়া হয় এটি দরুদে জিবরাইলী নাকি দরুদে নববী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

ডা. এমএন আহমদ

চট্টগ্রাম

 

সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত দরুদ এটি দরুদে নববী, যার অসংখ্য প্রমাণ আমাদের হাদীসের গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে। বুখারী শরীফ: ১/৭, মুসলিম শরীফ: ১/১৭৫, মিশকাত শরীফ: ১/৮৭

তাহারাত-পবিত্রতা

সমস্যা: ওযুতে গর্দান মাসেহ করার ব্যাপারে অনেক মতানৈক্য দেখা যায়, কেউ বলেন সুন্নাত, কেউ বলেন মুস্তাহাব, আবার কেউ বলেন বিদআত। এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত কী?

ওমর ফারুক

ঈদগড়

 

সমাধান: ওযুতে গর্দান মাসেহ করার ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত হল, গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব। যেমনটি আল্লামা শামী (রহ.)সহ অনেক ফুকাহায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন। দলিলসমূহ পর্যালোচনা করলে মুস্তাহাব হওয়াটাই রাজেহ (প্রণিধানযোগ্য মত) বলে প্রমাণিত হয়। তাই একে বিদআত বলা কিছুতেই উচিত নয়। বুখারী শরীফ: ১/২৫৬, আল-মুহিতুল বুরহানী: ১/৬১৬, বাদায়িউস সানায়ি: ১/২৩, রদ্দুল মুহতার: ১/২৪৭

 

সমস্যা: কোন ব্যক্তিকে জোঁক কামড়ে ধরে রক্ত চুষে মাটিতে পড়ে গেলে যদি ওই স্থান থেকে কোন রক্ত বের না হয়, তাহলে এতে ওযু ভঙ্গ হবে কি?

নুরুল ইসলাম

ইদগাহ, কক্সবাজার

 

সমাধান: জোঁক যদি এ পরিমাণ রক্ত চোষণ করে যে তা প্রবাহমান রক্তের সম পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে ওযু ভেঙ্গে যাবে; অন্যথায় ভাঙবে না। ফতহুল কদীর: ১/৩৪, দুররুল মুখতার: ১/২৬৮, হিন্দিয়া: ১/১১, আল-মুহিতুল বুরহানী: ১/৬১৬

সমস্যা: মুহতারাম, ফ্লোরে বাচ্চারা প্রস্রাব করে দেওয়ার পর তা পবিত্র করার পদ্ধতি কি? এক্ষেত্রে টাইলস ও টাইলস্‌বিহীন ফ্লোরের মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি?

মুহিব্বুল্লাহ

শরফভাটা, রাঙ্গুনিয়া

 

সমাধান: উল্লিখিত ক্ষেত্রে ফ্লোর যদি টাইলসবিহীন হয়, তাহলে নাপাকির ওপর পানি ঢেলে দিলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। তবে পানি ঢালার পূর্বেই যদি শুকিয়ে যায়, তাহলেও পবিত্র হয়ে যাবে। কেননা তা মাটির হুকুমে। আর যদি ফ্লোর টাইলসবিশিষ্ট হয় এবং টাইলসগুলো আয়নার মতো সমান হয় এবং পানি চোষার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে তা আয়নার হুকুমে। অর্থাৎ কোন কাপড় জাতীয় বস্তু দ্বারা মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু টাইলসে যদি মাটির মতো শোষণ ক্ষমতা থাকে, তাহলে তা মাটির হুকুমে। অর্থাৎ শুকানোর দ্বারা পবিত্র হয়ে যাবে। আর যদি শোষণ ক্ষমতা না থাকে এবং আয়নার মতো সমানও না হয়, তাহলে নাপাকি দূর হওয়া পর্যন্ত পানি দিয়ে তা ভালো ভাবে ধুতে হবে। ’লাউস সুনান: ১/৩৯২, হিদায়া: ১/৫৬, ফতহুল কদীর: ১/১৭৪, মাবসুতে সারখসী: ১/২০৬

 

সমস্যা: আমি একজন ছাত্র। ব্যক্তিগত বাথরুম কিংবা গোসলখানা না থাকায় পুকুরেই গোসল করতে হয়। জানার বিষয় হচ্ছে, গোসল ফরয হলে নাপাক (মিশ্রিত) লুঙ্গি পরিধান করে সরাসরি পুকুরে নেমে ভালোভাবে গোসল করলে আমার শরীর এবং কাপড় পবিত্র হবে কি?

আবদুল্লাহ আল-মামুন

মহেশখালী

 

সমাধান: হানাফী মাযহাব মতে গোসলে কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করা ফরয। কাপড়ে নাপাকি দেখা না গেলে তা দূর হওয়ার প্রবল ধারণা পর্যন্ত ধুয়ে নিলে তা পাক হয়ে যায়। তাই যে ব্যক্তি গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় নাপাক (মিশ্রিত) লুঙ্গি নিয়ে পুকুরে নেমে ভালোভাবে ঘষা-মাজা করে গোসল করবে তার শরীর ও কাপড় উভয়টা পাক হয়ে যাবে। (যদি নাপাকি দূর হওয়ার প্রবল ধারণা হয়।) অন্যথায় পাক হবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ১/৯৫, দুররুল মুখতার: ১/২৩৩, মাবসুত: ১/৫১, বাহরুর রায়িক: ১/২৩৭

 

সমস্যা: সফর অবস্থায় পানি পাওয়া না গেলে বাসে বা ট্রেনে লেগে থাকা ধুলো-বালি দ্বারা তায়াম্মুম করলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে কি?

জুনাইদ

ইদগাহ, কক্সবাজার

 

সমাধান: হানাফী মাযহাবে তায়াম্মুম শুদ্ধ হওয়ার জন্য মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু হওয়া শর্ত। যেহেতু ধুলো-বালি মাটির অংশ, তাই সফর অবস্থায় পানি পাওয়া না গেলে বাসে বা ট্রেনে লেগে থাকা ধূলি-বালি দ্বারা তায়াম্মুম করলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। মুসান্নাফে আবদুর রায্‌যাক: ১/২১৬, তাতারখানীয়: ১/৩৭৬, মুনিয়াতুল মুসল্লী: ৩৮, ফতহুল কদীর: ১/১০৩

 

সালাত-নামায

সমস্যা: আযান ও ইকামতে حى على الصلاة এবং حي على الفلاح  বলার সময় মুওয়াযযিনের চেহারা ডানে-বামে করার হুকুম কী? কেউ যদি চেহারা ডানে-বামে না করে আযান বা ইকামত দিয়ে ফেলে, তাহলে তা শুদ্ধ হবে? না নতুন করে পুনরায় দিতে হবে?

রাশেদুল ইসলাম

পটিয়া, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: আযান ইকামত বলার সময় মুওয়াযযিন সাহেবের চেহারা ডানে-বামে করার হুকুম হলো, সুন্নাত। সুতরাং কেউ যদি চেহারা ডানে-বামে না করে আযান বা ইকামত দিয়ে দেয়, তাহলে তার আযান, ইকামত শুদ্ধ হয়ে যাবে নতুন করে আবার আযান বা ইকামত দিতে হবে না। কিতাবুল আসল: ১/১২৯, মাবসুতে সরখসী: ১/২৭২, দুর্‌রুল মুখতার: ১/২৩, বাহরুর রায়িক: ১/২৫৮

 

সমস্যা: ইকামতের পর ইমাম সাহেব বলেন, ‘দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করুন। সামনের কাতার পূরণ করুন। মোবাইল ফোন বন্ধ করুন। টাখনুর নিচের কাপড় ওপরে উঠিয়ে নিন।’ তারপর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে থাকেন। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, ইকামতের পর ইমাম সাহেবের এসব কথা বলা উত্তম, না কি না বলা উত্তম? দলীল সহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সোহাইল মাহমুদ

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: হুযুর (সা.)-এর বিভিন্ন হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)-এর আমল এবং ফুকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে একথা বোঝা যায় যে, ইকামতের পর ইমাম সাহেবের এসব কথা বলাটা উত্তম। তবে এসব না বলে তাকবীর বলে নামায শুরু করে দিলে কোনো সমস্যা হবে না। বুখারী শরীফ: ১/২০০, বাদায়িউস সানায়ি: ১/৫০০, বাহরুর রায়িক: ১/৩৫৩, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৩১০

 

সমস্যা: আমি একদিন নামাযের অবস্থায় ছিলাম। পাশে দু’জন বসে কথা বলছিলো। তাদের কথা শুনে আমার খুব জোরে হাসি পাচ্ছিলো। তাই হাসি বন্ধ করার জন্য দুই-তিনটা কাশি দিয়েছি। অর্থাৎ কাশির মাধ্যেমে হাসি বন্ধ করেছি। এর দ্বারা আমার নামায ভঙ্গ হয়েছে কি?

আশফাক হোসেন

আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে নামাযে শব্দ করে হাসলে অযু এবং নামায উভয়টা ভঙ্গ হয়ে যায়। এবং বিনাওযরে কাশি দিলেও নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। সুতরাং হাসি বন্ধ করার জন্য আপনার দেওয়া কাশিগুলো যদি শুনতে হাসির মতোই হয়ে থাকে তাহলে আপনার অযু এবং নামায উভয়টা ভঙ্গ হয়ে গেছে। আর যদি কাশির মতোই মনে হয়, তাহলে আপনি যেহেতু নামায ঠিক রাখার জন্য কাশিগুলো দিয়েছেন, তাই নামায ভঙ্গ হয়নি। কাশিগুলো ওযর হিসেবে ধরা হবে। আল-ফিকহুল হানফী ফি সাওবিহিল জদীদ: ১/৯০, তাবয়ীনুল হাকায়িক: ১/১১, শরহুন নুকায়া: ১/৩৩

 

সমস্যা: সিজদার জায়গায় বালু পড়ে থাকার কারণে কোনো মুসল্লী যদি সিজদা করার সময় হাত দিয়ে বা ফুঁ দিয়ে বালু সরিয়ে ফেলে, তখন নামায মাকরুহ হবে কি?

আহসান হাবীব

চাঁদপুর, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: সিজদার জায়গায় পড়ে থাকা বালু সিজদা করার সময় হাত দিয়ে সরিয়ে ফেললে নামায মাকরুহ হবে। তবে বালুর কারণে যদি সিজদা করতে খুব বেশি সমস্যা হয় যেমন: নিঃশ্বাসের সাথে নাক দিয়ে বালু প্রবেশ করা ইত্যাদি; তাহলে হাত দিয়ে শুধুমাত্র একবার বালু সরানোর অনুমতি আছে। যেমন ফুকাহায়ে কেরাম পাথরের ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন। আর যদি কোনো মুসল্লী ফুঁ দিয়ে বালু সরিয়ে ফেলে, তাহলে ফুঁ দেওয়ার সময় যদি কোনো শব্দ বের হয়, তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি কোনো শব্দ বের না হয়, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে ফুঁ দেওয়ার কারণে নামায মাকরূহ হবে। বাহরুর রায়িক: ২/৪০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০১, মুনিয়াতুল মুসল্লী: ১৩২

 

সমাস্যা: নিম্নস্বরে কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম রাকআতে ইমাম সাহেব সানা পড়ে, কিরাআত শুরু করে দেওয়ার পর কোন মুসল্লী নামাযে প্রবেশ করলে, সানা কখন আদায় করবে?

আয়াতুল হক

কুয়াকাটা, বরিশাল

 

সমাধান: নিম্বস্বরে কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম রাকআতে ইমাম সাহেব সানা পড়ে কিরাআত শুরু করে দেওয়ার পর কোন মুসল্লী যদি নামাযে প্রবেশ করে, তাহলে সে নামাযে প্রবেশ করে সানা আদায় করবে কি করবেনা এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকে কিরাআতের মতো সানা ও না পড়ার কথা বলেছেন, আবার অনেকে সানা পড়ার ওপর ফতওয়া দিয়েছেন। তাই যে কোনটির ওপর আমল করা যেতে পারে। দুররুল মুখতার: ১/৬৬, দুরারুল হুক্কাম: ১/৬৮, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/১৯৫, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/১৯০

 

সমাস্যা: আমি আমার বাসায় নামাযে ছিলাম, আমার ছোট বাচ্চাটি চৌকির ওপর ছিল, তাকে চৌকি থেকে পড়ে যেতে দেখে দুয়েক কদম আগে বাড়িয়ে ধরে ফেলি। এরপর আপন জায়গায় ফিরে এসে বাকি নামায শেষ করি। এর দ্বারা আমার নামায ভঙ্গ হয়েছে কি?

সালাহ উদ্দীন

ডুলাহাজারা, কক্সবাজার

 

সমাধান: নামাযে হাঁটার ব্যাপারে হুকুম হল, যদি সামান্য সামনের দিকে হাঁটে এবং কেবলা থেকে সিনা ফিরে না যায়, তাহলে নামায ভঙ্গ হবে না। আর যদি হাঁটতে হাঁটতে দুই কাতার অতিক্রম করে ফেলে বা মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় বা কেবলার বিপরিত দিকে হাঁটে, তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। সুতরাং উল্লিখিত অবস্থায় আপনার নামায ভঙ্গ হয়নি। তবে বাচ্চা ধরার সময় যদি কেবলার দিক থেকে শরীর ফিরে গিয়ে থাকে তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে গেছে। দুররুল মুখতার: ১/৮৬, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/২৩০, বাহরুর রায়িক: ২/২২, ফতহুল কদীর: ১/৪১৩

 

সমাস্যা: কোন মুসাফির ব্যাক্তি যদি চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে ইমামতি করে, দুই রাকআতের মাথায় সালাম না ফিরিয়ে চার রাকআত পড়ে ফেলে, তখন নামায শুদ্ধ হবে কি? এক্ষেত্রে কোন মুসাফির মুক্তাদী যদি দুই রাকআতের মাথায় সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তখন তার নামাযের কি হুকুম হবে?

নুরুল আবছার

রামু, কক্সবাজার

 

সমাধান: কোন মুসাফির ব্যাক্তি চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে যদি ইমামতি করে আর দুই রাকআতের মাথায় সালাম না ফিরিয়ে চার রাকআত পড়ে ফেলে। তাহলে ইমামের নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর মুকিম মুকতাদীর ব্যাপারে কথা হচ্ছে। যদি শেষ দুই রাকআতেও ইমামের অনুসরণের নিয়্যত থাকে, তাহলে তার নামায ফাসেদ হবে না। এক্ষেত্রে মুসাফির মুকতাদীর করণীয় হল, তাসবীহ পড়ে ইমামকে অবগত করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে, ইমাম ফিরে না আসলে সে দ্বিতীয় রাকআতে তাশাহুদ পড়ে বসে থাকবে ইমামের সাথে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতের জন্য দাঁড়াবে না, বরং বসে বসে ইমামের জন্য অপেক্ষা করবে এবং ইমাম যখন সালাম ফেরাবে তখন ইমামের সাথে সালাম ফেরাবে। তবে কেহ অপেক্ষা না করে সালাম ফিরিয়ে নামায থেকে বেরিয়ে গেলে কারো কারো মতে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। দুররুল মুখতার: ১/১০৬, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৫১৯, আল-মুহিতুল বুরহানী: ২/৪২, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৬০৯

 

সমস্যা: আমরা অনেক সময় টিভি রেডিও এবং মোবাইলে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে থাকি। সেখানে আয়াতে সিজদাহ তিলাওয়াত করা হয়। জানার বিষয় হল ১. উক্ত আয়াতে সিজদাহ উনার দ্বারা সিজদা তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে কি? ২. মোবাইলের স্ক্রীনে কুরআনের আয়াত উদ্ভাসিত থাকাবস্থায় অযুবিহীন স্পর্শ করা যাবে কি?

সাখাওয়তুল্লাহ

দাউদকান্দি, কুমিল্লা

 

সমাধান: ১. স্মরণ রাখতে হবে যে, বর্তমানে টিভি রেডিওতে সরাসরি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয় না। বরং আগে ভিডিও রেকর্ড করে পরে সম্প্রচার করা হয়। সুতরাং এভাবে আগে ভিডিও বা রেকর্ড করে কুরআন তিলাওয়াত সম্প্রচার করলে সেখানে আয়াতে সিজদাহ শ্রবণ করলে সিজদাহ দিতে হবে না। হ্যাঁ, যদি সরাসরি তিলাওয়াত করে আর তা সম্প্রচার করে তখন আয়াতে সিজদাহ শ্রবণ করলে সিজদাহ দিতে হবে। ২. কুরআন শরীফ মোবাইলের স্ক্রীনে উদ্ভাসিত থাকাবস্থায় তা অযুবিহীন স্পর্শ করা জায়েয হবে না। আর যখন স্ক্রিন থেকে সরে যাবে তখন মোবাইলকে অযুবিহীন স্পর্শ করা জায়েয হবে। ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৪৮৮, কবীরী: ৫৮, হিন্দিয়া: ১/৪৮৮, বাদায়িউস সানায়ি: ১/১৮৬, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১১/৫৫০

যাকাত

সমস্যা: নেসাবের দিক থেকে যাকাত এবং সদকায়ে ফিতরের মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি? বিশেষ করে জানতে চাই, কোন কোন সম্পদের ওপর যাকাত এবং সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে?

আশফাক হোসেন

চাঁদগাও, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: নেসাবের দিক থেকে যাকাত এবং সদকায়ে ফিতরের মাঝে কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে। ১. যাকাতের নেসাবের ওপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হয়। কিন্তু সদকায়ে ফিতরের নেসাবের ওপর পূর্ণ একবছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় নেসাবের মালিক থাকলে যথেষ্ট। ২. যাকাতের নেসাব ‘মালে নামী’ বর্ধনশীল সম্পদ যেমন- স্বর্ণ-রূপা, নগদ অর্থ, ব্যবসায়ীমাল, গৃহপালিত পশু উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি হওয়া শর্ত। কিন্তু সদকায়ে ফিতরের নেসাব ‘মালে নামী’ হওয়া শর্ত নয়। বরং নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অতিরিক্ত যেকোন সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়ে যাবে। যাকাত এবং সদকায়ে ফিতর যে সব সম্পদের ওপর ওয়াজিব হয়। ১. স্বর্ণ-রূপা, নগদ অর্থ। ২. বাণিজ্যিকবস্তুসমূহ। ৩. নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ব্যতীত অতিরিক্ত যে কোনো সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। নাসবুর রায়া: ২/৩২৯, ’লাউস সুনান: ৯/২, শরহে বিকায়া: ১/২১৭, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৩/১৩৩

 

সমাস্যা: কোনো ব্যক্তি দারিদ্রতার কারণে নিজের জন্য যাকাত কালেকশন করলে যদি তা নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তারপর যাকাত কালেকশন করা জায়িয হবে কি? এ অবস্থায় যাকাত প্রদানকারীর যাকাত আদায় হবে কি?

আবদুর রহমান

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: কোনো ব্যক্তি দারিদ্রতার করণে যদি নিজের জন্য যাকাত কালেকশন করে, এবং তা নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তা দ্বারা যদি তার দারিদ্রতা এবং অভাব বিমোচন না হয়, তাহলে তার জন্য নেসাব পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত যাকাত কালেকশন করা জায়িয হবে। আর যদি প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত যাকাত কালেকশন করে, তাহলে তা তার জন্য জায়িয হবে না। আর একজন বক্তিকে প্রয়োজন ছাড়া নেসাবের চেয়ে অতিরিক্ত যাকাত প্রদান করা মাকরূহ। তবে সেক্ষেত্রে যাকাত প্রদানকারীর যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যাকাতদাতা জেনেশুনে যদি নেসাবের মালিক কোনো ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করে, তাহলে তার যাকাত আদায় হবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা: ৩/৯৮, বাদায়িউস সনায়ি: ২/৪৭, হিদায়া: ১/২০৮, ফতহুল কদীর: ১/২০২

বিয়ে-শাদি

সমস্যা: আমাদের এলাকায় মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় ২/৩ ভরি (সম্বল মত) স্বর্ণ মোহর ধার্য করার পর লক্ষ (সম্বল মতো) টাকার কাবিনও ধার্য করাহয়। সাধারণত দেখা যায় স্বর্ণ (মোহর) নগদ বা বাকি হলেও আদায় করে ফেলে। কিন্তু কাবিনে ধার্য টাকাসমূহ অর্ধেক নগদ ও অর্ধেক বাকি বলে উল্লেখ করে। অথচ দেখা যায় স্বর্ণ গুলি ছাড়া ১৫/২০ হাজার টাকার কাপড় বা কিছু সামানা দেওয়া হয় যা কাবিনে ধার্য টাকার এক পঞ্চমাংশও হবে না, বাকি টাকাসমূহ থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করা হয়। হ্যাঁ. যদি তালাক দেওয়া হয়, কাবিনে লেখা বাকি অর্ধেক টাকা জরিমানা হিসাবে দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে কাবিনে লেখা টাকা গুলি মোহর হিসাবে গণ্য হবে কিনা? আর যদি না হয় বাকি অর্ধেক টাকা স্বামীর ওপর আদায় করা জরুরি কিনা? আর যদি মোহর হিসাবে গণ্য করা হয়, স্বর্ণ ও টাকা গুলি এক সাথে উল্লেখ না করে স্বর্ণগুলোকে মোহর এবং কাবিনের টাকা গুলিতে জরিমানা কেন বলা হয়, তাছাড়া তালাকের মামলা না হলে কাবিনে লেখা বাকি অর্ধেক টাকা আদায় করা হয় না কেন? আর একপঞ্চমাংশ টাকা কাপড় দিয়ে অর্ধেক নগদ বলে কিভাবে লেখা হয়। কুরআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানালে খুশি হব।

জসীম উদ্দিন

টেকনাফ, কক্সবাজার

 

সমাধান: শরীয়ত মতে নেকাহের কাবিন নামায় যে পরিমাণ স্বর্ণ ও টাকা লেখা হয় তাতে যখন স্বামী সন্তুষ্টচিত্তে স্বাক্ষর করেছে তাতে বুঝা গেল যে, স্বামী সেই পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণ দিতে রাজী আছে। সুতরাং ওই পরিমাণ স্বর্ণ ও টাকাই মোহর হিসাবে গণ্য হবে এবং এর মধ্যে যা বাকি থাকবে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সময় তা স্ত্রীকে পরিশোধ করা স্বামীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় বলে গণ্য হবে। কেননা বিবাহের সময় যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে তার কাবিননামায় আরো অতিরিক্ত যে পরিমান টাকা লেখা হয়েছে এবং স্বামী তার ওপর সন্তুষ্টিচিন্তে স্বাক্ষর করেছে। সুতরাং তা স্বামীর পক্ষ থেকে মোহরের মধ্যে বৃদ্ধি হিসাবে গণ্য হবে। আর মোহর নির্ধারিত হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে মোহরের মধ্যে কমবেশী করতে পারে। অতএব উল্লিখিত বর্ণনা মতে বাকি অপরিশোধিত টাকা স্বামীর ওপর আদায় করা ওয়াজিব হবে। আর তালাকের মামলা না হলে ও স্ত্রী মাফ করে না দিয়ে থাকলে তা স্বামীর জন্য আদায় করা ওয়াজিব হবে। তা ছাড়া একপঞ্চমাংশ পরিশোধ করে অর্ধেক পরিশোধ বলাও সহীহ হবে না বরং অপরিশোধিত পুরো টাকাই পরিশোধ করা ওয়াজিব হবে। সুরা আন-নিসা: ২৪, বাদায়িউস সানায়ি: ২/৫৮৩, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৪/২৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩১৩

 

মুয়ামালাত-লেনদেন

সমস্যা: হুন্ডি ব্যবসা শরীয়তের বিধান মতে জায়িয কিনা এবং জায়েয হলে তার নির্দিষ্ঠ রূপরেখা কী? বিস্তারিত জানতে চাই।

আবদুল্লাহ

ঈদগাহ, কক্সবাজার

 

সমাধান: হুন্ডি করার মধ্যে শরীয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ কোন অসুবিধা নেই, কেননা ইহা বাস্তবে মুদ্রার বিনিময় অর্থাৎ একদেশের মুদ্রার সাথে আরেক দেশের মুদ্রার বিনিময় ও বেচাকেনা। কিন্তু তার দ্বারা যেহেতু সরকার টেক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেহেতু সরকার হুন্ডিকে নিষেধ বলে ঘোষণা করেছে। আর ফেকাহে শাস্ত্রের কায়দা অনুযায়ী সরকার শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন কোন জিনিষকে নিষেধ ঘোষণা করলে তা জনগণের মানা কর্তব্য। সুতরাং হুন্ডি ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাসবুর রায়া: ৪/৪৩, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/১৭১, ফতহুল মুলহিম: ১/৫৯০

সমস্যা: জমি বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া সুদ হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, বন্ধক গ্রহীতা যদি ঋণ ফেরত নেওয়ার সময় বন্ধকদাতা থেকে কিছু মাফ করে দেয়। এ অবস্থায় উক্ত বন্ধকি জমি বন্ধক গ্রহীতার জন্য সুদ হিসেবে গণ্য হবে কি?

আবদুল মালেক

ইদগড়, কক্সবাজার

 

সমাধান: ঋণের পরিবর্তে বন্ধক গ্রহীতার জন্য বন্ধকী বস্তুর মুনাফা ভোগ করা হারাম ও নাজায়েয। ঋণ পরিশোধ করার সময় পূর্ণ মুনাফা টাকা ঋণ থেকে কর্তন করতে হবে। নতুবা যে পরিমাণ মুনাফা ভোগ করেবে সে পরিমান সুদ হিসেবে গন্য হবে। তিরমিযী শরীফ: ১/২৪৮, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৭/২৯৫, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৪১১

বিবিধ

সমস্যা: বর্তমান সমাজে দেখা যায় যে মুসল্লীরা যখন মসজিদে নামায পড়ার জন্য যায় মসজিদের বিদ্যুতে মোবাইল লাইট ইত্যাদি চার্জে দেয় এবং মসজিদে দাঁড়িয়ে সমাজিক বিভিন্ন সমস্যার কথা-বার্তা বলে। অথচ যেখানে অনেক কথা অন্য কোন ব্যক্তিকে ঘায়েল করে বলে থাকে। সুতরাং আমার জানার বিষয় হচ্ছে, মসজিদের মধ্যে সমাজিক কার্যকলাপ তথা সমাজিক বিভিন্ন মিটিং সেমিনার করা, সমজিদের বিদ্যুতে মোবাইল চার্জ দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

আবদুল হাকিম

টেকনাফ, কক্সবাজার

 

সমাধান: মসজিদের বিদ্যুৎ থেকে সাধারণ মুসল্লীর জন্য মোবাইল লাইট ইত্যাদি চার্জ দেওয়া না জায়েয ও হারাম। এরকম মসজিদের মধ্যে সমাজিক কার্যকলাপ কথা-বার্তা বলা এবং কোন মানুষের সমালোচনা করা ইত্যাদি মাকরুহে তাহরীমী ও না জায়েয। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১১০, বাহরুর রায়িক: ২/২৫০, ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/৪৩৬

সমস্যা: কোন ব্যক্তি ঘুষের মাধ্যমে চাকরিতে নিযুক্ত হল। এ অবস্থায় শুধু তার ঘুষের টাকা হারাম হবে? নাকি তার প্রাপ্ত বেতনও হারাম বলে বিবেচিত হবে?

ওমর ফারুক

রংপুর

 

সমাধান: শুধু ঘুষ দেওয়াটা হারাম হবে। বাকি উপার্জন চাকরির বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে। যা জায়েয ও বৈধ। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৪১১, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদয়া: ২৫/১৫২

 

সমস্যা: ছেলেদের জন্মদিন উপলক্ষে বার্থডে নামের যে অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে অনেক রকমের বাতি জালানো কেক ও অন্যান্য দামি দামি মিষ্টি ইত্যদি কাটা হয় এবং বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠান প্রত্যেক বছর করা হয়। তেমনিভাবে বিয়ের আগের রাত্রে যে অনুষ্ঠান করা হয়। সেই সব অনুষ্ঠানগুলো সম্বন্ধে শরীয়ত কি বলে? আর এর পরিবর্তে ইসলামী কোন অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা?

হাজী জাফর

পটিয়া, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: স্মরণ রখতে হবে যে, শরীয়ত মতে বার্থডে প্যাকেজ ও মেহেদী অনুষ্ঠান ইত্যাদি শরীয়তে ঘৃণ্য অশ্লীল বেহায়াপনা লজ্জাজনক কাজ যা থেকে বিরত থাকা মুসলিম সমাজের একান্ত অপরিহার্য এবং দীনী দায়িত্ব। নতুবা মুসলিম সমাজ আল্লাহর অভিশাপ ও লা’নতের যোগ্য হয়ে যাবে। শরীয়তে এ ধরণের অনুষ্ঠানের অনুমতি থাকা তো দূরের কথা, বরং সম্পুর্ণ রূপে নাজায়েয ও হারাম। সূরা লুকমান: , আল-বাহরুর রায়িক: ৮/১৮৮, ফাতাওয়ায়ে শামী: ৯/৫০১, আহসানুল ফাতাওয়া: ৮/১৫৪

 

সমস্যা: আত্মীয়-স্বজন মারা যাওয়ার পর চার পাঁচ বা চল্লিশ দিন পরে যে জিয়াফতের আয়োজন করা হয় তা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানালে চির কৃতজ্ঞ হব।

আলী আহমদ

ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

 

সমাধান: প্রকাশ থাকে যে, কোন ব্যাক্তি মারা যাওয়ার চারদিন বা পাঁচদিন পর যে জিয়াফতের আয়োজন করা হয়, তা শরীয়ত পরিপন্থী ও নাজায়েয। কেননা এটা মাইয়েতের পরিবারবর্গের ওপর চরম অন্যায় ও জুলুম। অনেক সময় মাইয়েতের কর্জ ও নাবালেগ ছেলে-মেয়ে থাকে তার দিকেও কোন লক্ষ করা হয় না। বরং এটা আত্মীয়-স্বজনের পুনর্মিলনী খুশির অনুষ্ঠানের মতো দেখায় যা একেবারে অযৌক্তিক ও নাজায়েয। ফাতাওয়ায়ে শামী: ২/২৪০, ফাতাওয়ায়ে বাযযাযিয়া: ৪/৮০, কাযীখান: ৪/৩৬৬

 

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ