জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উইগুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের নির্মম বর্বরতা বন্ধ করতে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে

উইগুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের নির্মম বর্বরতা বন্ধ করতে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে

জিংজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইগুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের নির্মম বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে এ পর্যন্ত তিন হাজার মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার। সরকারীভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হচ্ছে দু’শ। নিহতদের মধ্যে রয়েছে পুরুষ, নারী ও শিশু। ধর পাকড় অব্যাহত রয়েছে। নিপীড়ন সত্ত্বেও প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে রাজধানী উরুমকী-এর রাস্তায় রাস্তায়। নিরীহ মহিলাদের লাঠিপেঠা করতে পুলিশ দ্বিধা করেনি। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে উইগুর মুসলিমকে গ্রেফতার করা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্যাতনের তান্ডব যাতে বহিঃর্বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ শিথিল ও বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদে উইগুর মুসলমানদের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র। দাবী আদায়ে তারা এ পর্যন্ত কোন সহিংস পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ চীনা কর্তৃপক্ষ উইগুরদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক কোন সশস্ত্র বা জঙ্গি সংগঠনের সাথে উইগুরদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ নেই।

চীন সরকার সে দেশের মুসলমানদের জাতিসত্ত্বা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্য মুছে ফেলার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রায় ৯০ লাখ মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলের নাম ছিল পুর্ব তুর্কিস্তান। চীনা কর্তৃপক্ষ নাম দিয়েছে জিংজিয়াং (পশ্চিমের অংশ)। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় হান জাতিগোষ্ঠীর চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে জিংজিয়াং প্রদেশে বসতি স্থাপন করছে। কালক্রমে যাতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টতা হৃাস পায়। পুরনো মসজিগুলো সংস্কারের অভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন মসজিদ তৈরি, সংস্কার বা পুন নির্মাণের সরকারী অনুমতি নেই। ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হয় সংগোপনে। পবিত্র হজ পালনকে নিরুৎসাহিত করা হয়। চলতি মাস থেকে হুই জেলার লিউ কাউলান ও কাশগড়ের প্রাচীনতম হানটাগ্রী মসজিদে জুমার নামায আদায়ে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এসব মসজিদের প্রত্যেকটিতে ১০০০ জন মুসলমান নামায আদায়কালে ১০০ জন পুলিশ অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে মসজিদের চারপাশে দণ্ডায়মান থাকে প্রতি জুমাবার। মসজিদের দরজায় পোস্টার লাগানো হয়েছে ‘নামায পড়ার জন্য ঘরে যাও’ (Go home to pray)| এক কথায় মুসলমানদের ধর্ম কর্ম পালনের কোন অধিকার নেই চীনে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকাও দায়সার গোছের।
এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, যারা কিউবা ও আফ্রো-এশিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য হামেশা চিৎকার করে বেড়ায় তাদের কেউ বেইজিং সরকারের এ নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করছে না। আন্তর্জাতিক মিডিয়া দু’লাইনের খবর প্রচার করে তাদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দায়িত্ব শেষ করেছে। বিবিসি যেখানে দক্ষিণ সুদানের খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত এক ঘটনার সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য তাদের সাংবাদিক ও চিত্র গ্রাহকদের বিশেষ টিম প্রেরণ করে, সেখানে ঝিংজিয়াং এর হাজার হাজার মুসলমান নিপীড়নের খবর প্রচারের জন্য বিশেষ সংবাদদাতা প্রেরণ তো দূরের কথা স্থানীয় ব্যুরো অফিসের মাধ্যমেও কোন বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রচার করেনি। মানবাধিকার কর্মী, যারা ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরে খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে সে দেশের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, কই চীনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষায় তো তারা এগিয়ে এলোনা। ইউরোপীয় মুরব্বীদের মুসলিম বিদ্বেষ কতটা প্রকট এসব ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. মো. মাইমুল আহসান খানের সুচিন্তিত মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য ‘কোন জাতিকে ধর্মীয় বা অন্য কোন কারণে নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ মানব সভ্যতা কখনই বেশিদিন সহ্য করেনা। এটিই ধর্ম। ইতিহাস হালাকু, চেঙ্গিজ, হিটলার ও ষ্টালিনকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সহ্য করেছে। কাউকে জীবদ্দশায়, কাউকে মৃত্যুর পর ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। জাতি বা আদর্শের উপর ভর করে ফ্যাসিবাদী শক্তিও বেশিদিন ইতিহাসে দর্প দেখাতে পারে না। সাম্রজ্যবাদ ও ইউরোপীয় কমিউনিজমের তাই আজ করুণ পরিণতি। সার্ব, ইংরেজ, রুশ ও কট্টর ইহুদীরা আজ তাই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দন্ডায়মান’ (সমকালীন মুসলিম বিশ্ব, ইসলাম ও বাংলাদেশ, মুখবন্ধ)।

স্মর্তব্য যে, চীনে মুসলমানদের ইতিহাস ১৪৫৮ বছরের। জোর করে তাদের নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। চীনের মাটির গভীরে তাদের শেকড়। ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাযি.)-এর আমলে সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাযি.)-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দাওয়াত নিয়ে চীনে পৌঁছেন। তখন থেকে ইসলামের যাত্রা শুরু। চীনের অধিকাংশ মুসলমান হানিফী ও মালিকী মাযহাবের অনুসারী। শত নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখেও চীনের মুসলমানদের ঈমানী জযবা ও দেশপ্রেম ভাটা পড়েনি। তাঁরা তাদের মাতৃভূমি চীনকে ভালবাসে। উইগুর মুসলমানগণ তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। নজীরবিহীন দমন নীতি চালিয়েও তাদের মনোবল ভাঙ্গা যায়নি। যুলুম ও বৈষম্য তাদের শক্তি যোগাচ্ছে। চীনের মুসলমানগণ প্রতিরোধ সংগ্রামে জেগে উঠেছে। দিন দিন বেগবান হচ্ছে তাদের আন্দোলন। আমরা কি পারি না চীনের মযলুম ভাইদের পাশে দাঁড়াতে? অবস্থার প্রেক্ষাপটে দুনিয়ার মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে ঝিনজিয়াং এর মুক্তি সংগ্রামের সহায়তায়। ওআইসি নয়, জাতিসংঘ নয়, আরবলীগ নয়, একমাত্র সশস্ত্র জিহাদই মুক্তির রাজপথ। আল্লাহ্‌ তায়ালা চীনের মযলুম ভাইদের প্রতি গায়েবী মদদ দান করুন।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ