জামেয়া ওয়েবসাইট

শনিবার-৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞান

ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞান

ইসলাম ও চিকিৎসাবিজ্ঞান

কামরুল হাসান

প্রথমেই জানা যাক, স্বাস্থ্য বলতে কি বুঝায়, Health is a state of complete physical, mental, social and spiritual wellbeing and not merely an absence of disease or infirmity, so that each citizen can lead a socially and economically productive life. WHO’s definition (1948)

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা। সেই ১৪০০ বছর আগ থেকেই ইসলাম আমাদেরকে প্রতিটি পদে পদে দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে।

আল্লাহ পাক বলেন, ‘তোমাদের জন্য মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তোমরা সেই শান্তির নিকেতন কে অনুসরণ কর!’ (আল-কুরআন)

‘স্বচ্ছলতা ও স্বাস্থ্য এ দুটি মহাদানের মূল্য প্রায় লোকই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না।’ (আল-হাদিস)

সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কি দরকার? সঠিক আহার-পানীয়, পর্যাপ্ত নিন্দ্রা আর পরিশ্রম। দেখা যাক এই সব ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলে এবং তার বৈজ্ঞানিক সমর্থনই বা কি।

আহার

আহারের ক্ষেএে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হালাল খাবার। ‘আল্লাহ তা’য়ালা যেসব বস্তু তোমাদেরকে দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।’ (Al-Maaida: 88)

‘হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (Al-Baqara: 168)

‘অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।’ (An-Nahl: 114)

রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা উদরপূর্তি করে ভোজন করো না, কেননা এতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের আলো নিষ্ট্রভ হয়ে যাবে।’

খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত অত্যন্ত স্বাস্থ্যস¤মত। অতিভোজন তিনি পছন্দ করতেন না। অতিভোজন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এখন চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, অতিভোজনের ফলে ডায়াবেটিস, হƒদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস ইত্যাদি হতে পারে।

ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে, যখন ক্ষুধা পাবে কেবল তখনই খাদ্য গ্রহণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা খাওয়ার প্রয়োজন ব্যতীত খাদ্য গ্রহণ করি না। আর যখনই আমরা খাদ্য গ্রহণ করি তৃপ্তির সঙ্গে (উদরপূর্তি করে) ভক্ষণ করি না।’

নবী করীম (সা.) পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাবার দিয়ে এবং এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলেছেন। বাকি এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখতে বলেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ডান হাতে ভক্ষণ কর।’ (মুসলিম শরীফ: ৩৭৬৬)

নবী করীম (সা.) দুধ ও মাছ একত্রে খেতে নিষেধ করেছেন, কেননা এর দ্বারা ক্ষতি সাধনের যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। (যাদুল মাআদ)

তিন আঙুলে ভক্ষণ করা, আঙুল চেটে খাওয়া (সুনানুল কুবরা লিল-বায়হাকী) দস্তরখানায় ভক্ষণ করা, খাদ্য গ্রহণের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলা ইসলামী আদর্শ-সুন্নাত।

পানীয়

মুসলিম শরীফেই ছয়টির বেশি সহীহ হাদীস আছে যেখানে মুসলমানদেরকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলো রসূল (সা.) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম: ৫০১৭) মহানবী (সা.) কোনো ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।’ (সহীহ মুসলিম) নবী করীম (সা.) দাঁড়িয়ে পান করা সতর্ক করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম: ৫০২০) ‘কেউ দাঁড়িয়ে পান করবে না।’ (সহীহ মুসলিম: ৫০২২)

If the standing water drinker, knew the damage her stomach, vomit drinking water to the outside, no doubt. (Abdurrezzak 10/427 19 588 hadith)

সুতরাং এ সকল হাদীসগুলো দাঁড়িয়ে পান করাকে অনুমোদন দিচ্ছে না।

দাঁড়িয়ে পান করার কুফল

১.         ক্ষতিগ্রস্ত হয়।(stomach damage)

২.         স্নায়ুতন্ত্র হ্মতিগ্রস্ত হয়।(vagal inhibition)

৩. কিডনী হ্মতিগ্রস্ত হয়।(due to unequal distribution of water to whole kidney of both side)

When one of you drink slowly drink of water, drink it in a breath. After all, a breath, drink water, inflammation of the liver (and breathing obstruction) constitute. the stated (Adürrezzak 10/428 19 594 Hadith)

রাসূলুল্লাহ (সা.) পানির মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তার মধ্যে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম)

এ ক্ষেত্রে বর্তমান বিজ্ঞানীরা তাদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল হিসেবে যা বর্ণনা করেছেন, তা প্রিয়নবী (সা.)-এর উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা মাত্র। পানি বিশেষজ্ঞ বা পানি বিজ্ঞানীদের মতে প্রাণীর নিঃশ্বাস ও ফুঁকের সাথে কার্বনডাই অক্সাইড বের হয় আর এ কার্বনডাই অক্সাইড যখন পানির সাথে গিয়ে মিশ্রিত হয় তখন তা থেকে কার্বলিক এসিড তৈরি হয়। আজ থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে নবীজী (সা.)-এর এ জাতীয় রাসায়নিক তথ্যাদি আজকের রসায়নদিবদেরকেও হতভম্ব করে। এ প্রসঙ্গে ডান হাতে পানি পান করা এবং থেমে থেমে পানি পান করার বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। কেননা সকল কাজ ডান দিক থেকে করা সুন্নাত।

নিন্দ্রা

রাসূলুল্লাহ (সা.) ডান কাত হয়ে শুতেন। তাঁর ডান হাত রাখতেন ডান গালের নিচে। সাহাবীদেরকেও এভাবেই শুতে বলতেন।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডান কাতে শোয়াই অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এতে হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে কম। পেটের ভেতর ভারি যকৃৎ ঝুলে থাকে না। ফলে পাকস্থলীর ওপর চাপ পড়ে না। পাকস্থলীর স্বাভাবিক নড়াচড়া ঠিক থাকে এবং পাকস্থলীর ভেতরের খাদ্যদ্রব্য হজমের উপযোগী হয়ে সহজেই খাদ্যনালীর পরবর্তী অংশে চলে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান যখন ততটা উন্নত ছিল না, সেই সময়ে আজ থেকে প্রায় চৌদ্দ শ’ বছর আগে নবী করীম (সা.) এসব স্বাস্থ্যকর বিষয় চর্চা করে আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন।

মিসওয়াক

রসুলের (সা.) আদর্শের একটি হলো ‘মিসওয়াক’! এটি সুন্নত। পাঁচটি সময়ে মিসওয়াক করা উত্তম:

১.         দাঁত যখন পাণ্ডবর্ণ হয়ে মুখে দুর্গন্ধ আসে।

২.         নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর।

৩.        প্রত্যেক নামাযের প্রস্তুত প্রাক্বালে।

৪.         অজুর প্রারম্ভে।

৫.         মিথ্যা কথা বা গিবত করার পর!

মিসওয়াকের উপকারিতা

মিসওয়াক সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম হাদীসের আলোকে ৬০টি উপকার বর্ণনা করেছেন,

১. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।

২. এক রাকাআত নামাযের সওয়াব ৭০ বা গুণ বর্ধিত হয়।

৩. পাবন্দির সহিত মিসওয়াক করলে আর্তিক স্বচ্ছলতা লাভ হয।

৪. ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায়।

৫. সহজে রিজিক লাভ হয়।

৬. মুখ সুগন্ধময় হয়।

৭. মাড়ি শক্ত করে।

৮. মাথা ব্যথা দুর করে।

৯. মাথার শিরাগুলি সংযত রাখে।

১০. মাথা ধরা বন্ধ করে।

১১. কফ দূর করে।

১২. দন্ত মজবুত থাকে।

১৩. কণ্ঠনালী ময়লা মুক্ত রাখে।

১৪. পাকস্থলী কর্মম রাখে।

১৫. বাকশক্তি বৃদ্ধি করে।

১৬. স্মরণশক্তি বর্ধিত করে।

১৭. বুদ্ধির উৎকর্ষ সাধন করে।

১৮. অন্তর পবিত্র রাখে।

১৯. সৎকাজে উৎসাহ জন্মায়।

২০. পারিবারিক জীবন সুখময় হবে।

২১. চেহারা উজ্জ্বল হয়।

২২. ফেরেশতা গন মুসাফাহা করেন।

২৩. মিসওয়াকের পর নামাযের উদ্দেশ্যে বাহির হলে ফেরেশতারা অভিবাদন জানান।

২৪. মসজিদ থেকে বের হলে আরশ ধারণ ও বহন কারী ফেরেশতারা তার জন্য ইস্তেগফার করেন।

২৫. নবীগণ ইস্তেগফার করেন।

২৬. রসুলগণ ইস্তেগফার করেন।

২৭. শয়তান অসন্তুষ্ট ও লজ্জিত হয়।

২৮. শয়তান বিতাড়িত হয়।

২৯. মেধাশক্তিকে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখে।

৩০. ভুক্তদ্রব্য পরিপাক করে।

৩১. সন্তানাদি বৃদ্ধি করে।

৩২. বিদ্যুৎ চমকের মতো পুলসিরাত অতিক্রম করা যায়।

৩৩. হায়াত বৃদ্ধি করে।

৩৪. আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে।

৩৫. ইবাদতের জন্য শরীরকে শক্তিশালী করে।

৩৬. কুরআন পাঠের পথ সহজে করে।

৩৭. শরীরের বেদনা দূর করে।

৩৮. মেরুদণ্ড শক্ত করে।

৩৯. মৃত্যু সহজে হয়।

৪০. দ্রুত রুহ বের হয়।

৪১. দাঁত চকমকে রাখে।

৪২. মুখ সুবাসিত করে।

৪৩. চরিত্র মধুর করে।

৪৪. জিহ্বা সংযত রাখে।

৪৫. বোধগম্যতা প্রখর হয়।

৪৬. মৃত্যুকালে কালেমায়ে শাহাদাত নসীব হয়।

৪৭. দৃষ্টিশক্তি সতেজ হয়।

৪৮. সওয়াব দ্বিগুণ করে।

৪৯. মাল-সম্পদ বর্ধিত করে।

৫০. উদ্দেশ্য সিদ্ধিত সহায়ক হয়।

৫১. কবর প্রশস্ত হয়।

৫২. কবরে নির্ভীক থাকা যায়।

৫৩. মিসওয়াক যে করে না সওয়াব মিসওয়াককারীকে দেওয়া হয়।

৫৪. বেহেশতের দরজাগুলি তার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

৫৫. দোযখের দরজা তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।

৫৬. ফেরেশতারা বলেন, মিসওয়াককারী নবীর অনুসারী।

৫৭. মিসওয়াককারী প্রত্যেকে নবী চরিত্র কুড়িয়ে গ্রহণ করছে।

৫৮. দুনিয়া থেকে পবিত্র অবস্থায় বিদায় নেবে।

৫৯. তার রুহ কবজের সময় ফেরেশতাগণ ওই সুরতে আসবেন যে সুরতে নবী ও রাসূল ও অলীদের নিকট আসেন।

মিসওয়াক ব্যবহার করার নিয়ম

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে হুযুর (সা.) বলেন যখন তোমরা মিসওয়াক করবে তখন প্রস্থ দিয়ে করবে অর্থাৎ ডানহাত দ্বারা মিসওয়াক করা দন্তে মাড়ির দিক থেকে না মাঝিয়ে প্রস্থ দিয়ে মাজা, তার সাথে জিহ্বাকেও মাজা উত্তম।

হঠাৎ যদি মিসওয়াক ভুলে যায় অথবা সাথে না থাকে তাহলে ডান হাতের আঙুলি দিয়ে মাজলে মিসওয়াকের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

মধু

মধু একটি খুব উপকারী খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ।প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে, মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চাসহ নানাভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে। শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক।

আল-কুরআনে আছে, আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন, ‘পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরি কর, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নাহল: ৬৮Ñ৬৯)

মধুর ব্যবহার

আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার জনক নামে পরিচিত হিপ্পোক্রেটস শরীরের প্রদাহ ও সিফিলিস রোগের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করতেন বলে কথিত আছে। ২ হাজার বছর আগেও যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান আজকের মতো এতটা উন্নত ছিল না, তখনও মানুষ জানত মধুর কী গুণ! গ্রিক অ্যাথলেটরা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের আগে প্রচুর পরিমাণ মধু সেবন করত শক্তি বাড়ানোর জন্য। তাদের ধারণা ছিল, মধু খেলে তাদের পারফরমেন্সের উন্নতি হবে।কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে।

শক্তি প্রদায়ী

মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।

হজমে সহায়তা

এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।

রক্তশূন্যতায়

মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

অনিদ্রায়

মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

যৌন দুর্বলতায়

পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন। এছাড়া, প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসেবে, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়, পাকস্থলীর সুস্থতায়, দেহে তাপ উৎপাদনে, পানিশূন্যতায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, রূপচর্চায়, ওজন কমাতে, হজমে সহায়তায়, তারুণ্য বজায় রাখতে, হাড় ও দাঁত গঠনে, রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে, হাঁপানি রোধে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে, রক্ত উৎপাদনে, রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়াতে, ব্যথা নিরাময়ে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তিতে মধু ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।

জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ঠাণ্ডা দূর করে মধু

মধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা দূর হবে। চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়, টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া, জিহ্বার ঘা (ঠাণ্ডাজনিত) ভালো হয়। সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ঠাণ্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয়।

পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর। মধুর এই ঠাণ্ডাজনিত রোগনিরোধী গুণের কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়, যা কবিরাজি মতে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।

ক্ষত সারাতে মধু

প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোন ব্লেয়ার বলেছেন, ক্ষতে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতেও ড্রেসিংয়ের সময় মধু মেশানো উচিত। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী। মধু ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণকেও ঠেকায়। তাছাড়া দেহের ক্ষত এবং ফোঁড়ার ওপর মধু এবং চিনি চমৎকার কাজ করে থাকে। এটি যে কোনো ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে।

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিয়মিত মধু খেতেন। প্রতিদিন সকালে অন্য কিছু খাওয়ার আগে এক কাপ পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করতেন।

কালোজিরা

প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

প্রায় ১৪শ’ বছর আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছিলেন, ‘কালোজিরা রোগ নিরাময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তোমরা কালোজিরা ব্যবহার কর, নিশ্চয়ই প্রায় সব রোগের নিরাময় ক্ষমতা এর মধ্যে নিহিত রয়েছে।’ সেজন্য যুগ যুগ ধরে পয়গম্বরীয় ওষুধ হিসেবে সুনাম অর্জন করে আসছে।

সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম চিকিত্সা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ কানুন অব মেডিসিনে বলেছেন, ‘কালোজিরা দেহের প্রাণশক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে।’

কালোজিরাতে শতাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর প্রধান উপাদানের মধ্যে প্রোটিন ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। প্রতি গ্রামে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিম্নরূপ—প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-বি ১.১৫ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম, জিঙ্ক ৬০ মাইক্রোগ্রাম, ফোলাসিন ৬১০ আইউ।

কালোজিরার গুণের শেষ নেই

* প্রতিদিন সকালে এক চিমটি কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

* হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় কালোজিরায় উপকার পাওয়া যায়।

* নারী-পুরুষের যৌন অক্ষমতায় নিয়মিত কালোজিরা সেবনে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।

* কালোজিরায় রয়েছে ১৫টি অ্যামাইনো এসিড। আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন ৯টি এসেনসিয়াল অ্যামাইনো এসিড যা দেহে তৈরি হয় না, অবশ্যই খাবারের মাধ্যমে এর অভাব পূরণ করতে হয়। আর কালোজিরায় রয়েছে আটটি এসেনসিয়াল অ্যামাইনো এসিড।

* সর্দি-কাশি সারাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

* প্রসূতি মাতাদের দুগ্ধ বাড়াতে ও নারী দেহের মাসিক নিয়মিতকরণে এবং মাসিকের ব্যথা নিবারণে কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে।

* নিয়মিত কালোজিরা সেবনে চুলের গোড়ায় পুষ্টি ঠিকমত পায়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত সঞ্চালন ও বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।

আঙুর

ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) বলেছেন, বেহেস্তে চারটি ফল থাকবে সেগুলো হলো, আঙুর, তাজা খেজুর, বেদানা এবং আপেল। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনকোনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আঙুরে এক ধরনের লোহিত উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। রেজভারেট্রল নামের এই রাসায়নিক উপাদান হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলোকে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কম ক্যালোরিযুক্ত এ লোহিত উপাদান আয়ু বাড়ায় এবং বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া, ভিটামিন এ, বি ও সি ছাড়াও আঙুরে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, আয়োডিন এবং ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান। আঙুরের ফ্রুকটোজ সহজে রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং একে গুরুত্বপূর্ণ শর্করা হিসেবে গণ্য করা হয়।

পবিত্র কুরআনে অন্তত ১১টি আয়াতে আঙুরের উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আলী (রাযি.) আঙুরকে শুধু উপকারী ফলই বলেননি একে ও পুর্ণাঙ্গ খাদ্য হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

চিকিৎসা ও পুষ্টিবিদরা আঙুর, খেজুর এবং কিশমিশকে পূর্ণাঙ্গ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এ তিনটি খাদ্য থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যায়। আঙুর গোত্রীয় ফল দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে আঙুর বা কিশমিশ খেয়ে মানুষ দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমের জন্য প্রচুর শক্তি পেতে পারেন।

আঙুর হতাশা প্রতিহত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে দুঃখ-বেদনা, মানসিক পীড়ন ও বিষন্নতা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আঙুর বিশেষ ফলদায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা কিশমিশ বা আঙুর খেতে অবহেলা করো না কারণ আঙুর ও কিশমিশ দেহমন ভালো রাখে।

ইরানের বিশ্বখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ও বিজ্ঞানী আবু আলী সিনা আঙুরকে অন্ত্রের বেদনা উপশমকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দেহে টক্সিন বা অধিবিষ নামে যে সব বিষাক্ত উপাদান জন্মে তা দূর হয় আঙুর খাওয়ার মাধ্যমে। এ ছাড়া, আঙুর রক্ত পরিশোধনের কাজও করে। আর এ কারণে শ্রান্তি দূর হয় ও দেহ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আঙুর উচ্চরক্ত চাপ, ডায়রিয়া ও ত্বকের সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে।

আঙুর শুকিয়ে তৈরি হয় কিশমিশ এবং কিশমিশে ৬০ শতাংশ ফ্রুকটোজ রয়েছে। খুবানি বা কুল জাতীয় ফলে যতটা এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে কিশমিশেও প্রায় সে পরিমাণ বিজারক উপাদান থাকে। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, কিসমিসকে যতই শুকানো হবে ততই তার পুষ্টিমান বাড়বে। তাই কিশমিশ আঙুরের চেয়ে বেশি শক্তির যোগান দিতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের অসুখ-বিসুখসহ যকৃত, মুত্রথলি, বৃক্ক বা কিডনির নানা রোগ সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করে কিশমিশ। বিশেষ ধরণের কিশমিশের চমৎকার সব গুণের কথা বলা হয়েছে পবিত্র হাদিসে। বীচি ছাড়া কালো ও লাল আঙুর থেকে যে সব কিশমিশ তৈরি হয় সে প্রসঙ্গে কথা বলেছেন নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

হাদিসে বলা হয়েছে, সকালে নাস্তার আগে খালি পেটে বীচি ছাড়া আঙুর হতে তৈরি ২১টি কিশমিশ খেলে শারীরিক দুর্বলতা এবং আল জাইমার(AlzheimerÕs disease) রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিক জরীপেও এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে। বৃটেন থেকে প্রকাশিত কেমেস্ট্রি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নামের সাময়িকীতে বলা হয়েছে, কিশমিশে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান আছে যা আলজাইমার রোগ(Alzheimer’s disease) প্রতিহত করতে সহায়তা করে। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিশমিশের অ্যান্টো-সিয়ানিন এবং পলি-ফেনোলিক উপাদানসহ আরো কিছু উপাদান আছে যা আলজাইমার সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। এ ছাড়া, এ জাতীয় কিশমিশে ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স, ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই পাওয়া যায়।

ইরানের চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েব সাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বীচিবিহীন আঙুর থেকে তৈরি কিশমিশে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। শুধু তাই না কোনো কোনো ক্যান্সার এবং হৃদরোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এ ধরনের কিশমিশ। এ জাতীয় কিশমিশ রক্তনালীগুলোকে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে এবং রক্তনালীগুলোর কোমলতা বজায় রাখে।

যায়তুন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পাজরের ব্যাথা জনিত রোগে কুস্তেবহরী এবং যায়তুন তৈল দ্বারা চিকিৎসা নাও। (ইবনে মাজাই, আহমদ ও হাকেম)

প্রাচীন এবং আধুনিক চিকিৎসকগণ যায়তুন তেলের অশেষ প্রশংসা করেছেন এবং এটিকে ত্বক ও সতেজকারী হিসেবে সকলেই মেনে নিয়েছেন। ঠাণ্ডা জনিত ব্যাথা, দুর্বল শিশু ও অঙ্গ প্রত্তাঙ্গের শক্তি বর্ধনে এ তেল খুবই উপকারী। যায়তুনের তেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হাতের পাঞ্জা প্রশস্ত করে এবং ব্যাথা উপশম করে।

রোগ প্রতিরোধ

কিভাবে রোগ প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, তা তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন আজ থেকে প্রায় চৌদ্দ শ’ বছর আগে, যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান ততটা উন্নত ছিল না। উদাহরণ¯¦রূপ উল্লেখ করা যায়, হাই তোলার সময় তিনি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দিতে বলেছেন (সহীহ আল-বুখারী)।

হাই তোলা মানুষের একটি সাধারণ শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার। হাই তোলার সময় আমরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস টানি। আর এই দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে বাতাস থেকে হাজারো জীবাণু মুখে প্রবেশ করতে পারে। জীবাণু যাতে মুখে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য নবী করিম (সা.) হাই তোলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দিতে বলেছেন।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে অজু করতে হয়। অজু কিভাবে করতে হবে, শরীরের কোন কোন অঙ্গ ধুতে হবে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সেই নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দু’হাত কনুইসহ ধৌত করবে। তারপর মাথা মাসেহ করবে, আর দু’পা গিরা পর্যন্ত ধুবে।’ (সূরা মায়েদা: ৬)

নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায় বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত। অজুর মাধ্যমে হাত ধোয়ার পর খুব কম জীবাণুই হাতে লেগে থাকতে পারে। তাই নিজের ও অন্যের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

খোলা পানীয় ও খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাসূলুল্লাহ (সা.) খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় ঢেকে রাখতে বলেছেন। (সহীহ আল-বুখারী) খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার কথাও বলেছেন তিনি। (সহীহ আল-বুখারী)

সুস্থ থাকার জন্য নবী করীম (সা.)-এর আদর্শকে আমাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে। হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’

চিকিৎসা

ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা হলো তিন ধরনের। যথাÑ

১. যা মুখে গ্রহণ করা যায় (সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ইত্যাদি),

২. কাটা-ছেঁড়া করা (সিঙা লাগানো, অস্ত্রোপচার),

৩. আগুনের ছ্যাঁকা (ফিজিওথেরাপী)।

তবে আল্লাহর নাম বলে ফুঁক করার কথাও হাদীস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায়। তাবীজের ব্যাপারে দু’ধরনের বক্তব্যই রয়েছে। তবে বর্তমানে তাবীজের যে অপপ্রয়োগ ও অন্যায্যতা চলছে। ফলে এর না জায়েজের দিকটিই প্রাবল্য।

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই ধবল রোগ থেকে, পাগল হওয়া থেকে, কুষ্ঠ রোগ থেকে এবং দূরোরোগ্য ব্যাধি থেকে।’ (আবু দাউদ শরীফ: ১৩২৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কারণ যিনি রোগ দিয়েছেন, তিনি তার প্রতিকারের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রোগ হলে চিকিৎসা করি, তা কি তাকদির পরিপন্থী নয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না, চিকিৎসা গ্রহণ করাই হলো তাকদির।’

জ্বর সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে, ‘জ্বর মূলত দোযখের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট, সুতরাং তোমরা তা পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।’

চৌদ্দশতাধিক বছর পূর্বে প্রিয়নবী (সা.)-এর শেখানো পানি দ্বারা জ্বরের চিকিৎসার বিষয়টিকেই অকপটে মেনে নিলেন বর্তমান বিজ্ঞানীরা। জ্বরের জন্য তারা যেসব ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন তার মধ্যে পানিই হচ্ছে প্রধান।

হযরত আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, চারটি বস্তুকে চারটি কারণে ক্ষতিকর মনে করবে না। যথাÑ

১.         চোঁখ ওঠাকে ক্ষতিকর মনে কর না, কেননা তা অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে।

২.         কফ-সর্দিকে খারাপ মনে করবে না, কেননা এটা কুষ্ঠরোগের মূলোৎপাটনকারী।

৩.        কাশিকে অকল্যাণকর ভেবনা- কেননা তা অর্ধবিকলঙ্গতার শিকড় কেটে দেয়।

৪.         দমল (এক ধরনের ফোড়া)-কে খারাপ মনে করনা কেননা উহা শ্বেত ও কুষ্ঠরোগের উৎপত্তিতে বাধা দেয়। (নুজহাতুল মাজলিস)

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।’ (সূরা আলে ইমরান: ৩১)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পথে জীবনযাপন করার তওফীক দান করুন। আমীন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ