জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র রামযানে খাদ্যাভ্যাস

পবিত্র রামযানে খাদ্যাভ্যাস

পবিত্র রামযানে খাদ্যাভ্যাস
ড. এ. ফয়েজ এম. জামাল উদ্দিন

প্রতিদিন আমরা সাধারণত সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু রমযান মাসে আমরা সাধারণত শুধু সন্ধ্যা থেকে ভোর এই সময়ের মধ্যেই তিনবার খাবার খেয়ে থাকি। তাই রজমান মাসে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সচেতন হতে হয়। একটু পরিকল্পনামত খাবার খেলে এ পবিত্র নেয়ামতের মাসকে উপভোগ করা যায় ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে।
রমযান মাসে খাবার যতটা পারা যায় অন্য মাসের মতোই স্বাভাবিক ও সাধারণ হওয়া উচিত। তবে রমযান মাসে খাদ্য তালিকায় যথাসম্ভব সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার বেশি রাখা উচিত। যেখানে সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার সাধারণত ডাইজেস্ট হতে প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে দ্রুত-ডাইজেস্টিং খাবার মাত্র ২-৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাইজেস্ট হয়ে যায়। আঁশ বা ফাইবার প্রধান খাবারগুলোই সাধারণত সস্নো-ডাইজেস্টিং হয়ে থাকে। যেমন ঢেঁকি ছাটা চাল, আটা, সবুজ মটরশুঁটি, ছোলা, সবুজ শাক যেমন ডাটাশাক, পালং শাক, খোসাসহ ভক্ষণ উপযোগী ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি এবং শুকনা ফল খোরমা, খেজুর ইত্যাদি তবে খাবার অবশ্যই সুষম হতে হবে অর্থাৎ খাদ্য তালিকায় দানাদার খাবারের সাথে পরিমাণমতো ফল, শাক সবজি, মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার থাকা আবশ্যক।
অধিক পরিমাণে মসল্লা সমৃদ্ধ গুরুপাক ও ভাঁজা-পোড়া তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ এবং ইফতারের পর অধিক পরিমাণে চা কফি বা কোলা গ্রহণের ফলে বুকে জ্বালা পোড়া বা পেটে গ্যাসের সমস্যা রমযান মাসের একটি কমন বা সাধারণ সমস্যা। তাই তেলে ভাঁজা পোড়া খাবার না খাওয়াই উত্তম। ইফতারে তেলে ভাঁজা খাওয়ার চেয়ে ওভেন গ্রিল্ড খাবার খেলে গ্যাস প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পায়।
ইফতারের সময় খোরমা-খেজুর, পেঁপে, তরমুজ, কলার পাশাপাশি হালিম খেলে দেহে অনেক শক্তি পাওয়া যায়। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘন ঘন পানি পান করা ভালো। শরীরের পানি ঘাটতি পূরণের জন্য ঘরে বানানো তাজা ফলের রস বেশি কার্যকারী। তবে ইফতারের পর ডাবের পানিও খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের সময় কার্বনেটেড পানীয় যেমন কোকাকোলা জাতীয় পানীয় না গ্রহণ করাই উত্তম। কার্বনেটেড পানীয় পেটে গ্যাস প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। অতিচিনি সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়াই উচিত। বেশি চিনি সমৃদ্ধ খাবার পেশাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে দেহের অতিপ্রয়োজনীয় মিনারেলগুলোও পেশাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ইফতারে আদা কুঁচি এবং স্প্রাউটেড ছোলা লবণ ছিটিয়ে খেলে এসিডিটি উপশম হয়। ইফতারের পরপরই সন্ধ্যা রাতের খাবার খেয়ে নেয়া উত্তম। আর সেহেরিতে সস্নো-ডাইজেস্টিং খাবার খেলে দিনের বেলা ক্ষুধার প্রবণতা হ্রাস পায়।
তবে সেহেরিতে ভরপেটে না খাওয়াই উত্তম। সেহেরিতে টক দই খেলে পেট ভার ভার মনে হবে না। সেহেরি খাওয়ার সাথে সাথে না শুয়ে, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ফজরের নামাজ আদায় করে অল্প সময় ঘুমিয়ে নেয়া উত্তম। তবে ডায়াবেটিক ও বস্নাডপ্রেসারে যারা ভুগছেন, আপনাদের অবশ্যই রমযান মাসের পূর্র্বেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সম্ভাব্য খাদ্য তালিকা করে নেয়া উচিত। আপাতদৃষ্টিতে একজন সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখায় কোনো বাধা নেই। তবে রমযানে ওষুধ? ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করে নেয়া উত্তম।
সহযোগী অধ্যাপক, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ