মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহপরিচারিকা প্রেরণ বন্ধ করা প্রয়োজন
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ দিন পর জনশক্তি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হওয়ায় বাংলাদেশ মাসে ৮০০ সৌদি রিয়ালে (১৬ হাজার টাকা) ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারী গৃহ পরিচারিকা (খাদিমা) পাঠাতে সম্মত হল। মাসে ১০ হাজার করে ১২ মাসে ১ লাখ ২০ হাজার নারীকর্মী যাবেন সৌদি আরব। সৌদি আরবে শ্রমের বাজার পুনরায় মুক্ত হওয়ার সংবাদটি সুখকর এতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হবে-এতে দেশবাসী আনন্দিত ও পুলকিত। কিন্তু নারী গৃহকর্মী প্রেরণের সিদ্ধান্ত আতœঘাতী বলে আমরা মনে করি। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা বড় তিক্ত ও অমর্যাদাকর। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ১২৬০ জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে সৌদি আরবে গেছেন (সূত্র: জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বি.এম.ই.টি)।
সৌদি আরবসহ মধপ্রাচ্যে কর্মরত নারী গৃহপরিচারিকাদের জীবন ও সম্মানের নিরাপত্তা নেই। অনেকে চাকুরিদাতার অথবা তাদের পৌষ্যদের দ্বারা লাঞ্চনা ও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার মেয়েরা বিদেশে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। সঙ্গত কারণে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়েছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা ও দেখবাল করার কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নেই। রিক্রুটিং এজেন্সি চাকুরিদাতাদের হাতে মেয়েদের তুলে দিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। সৌদী আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে নজরদারি করার সময় ও সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।
সরকারি হিসাব মতে গত ২৬ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকরা গিয়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে মোট জাতীয় উৎপাদনে নারীর অবদান ২০%। গত বছর ১৮টি দেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ১লাখ। এর মধ্যে সৌদি আরবে যান ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন।
মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির গবেষণামূলক প্রতিবেদনে নারীগৃহকর্মীদের দূর্বিসহ জীবনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা রীতিমত আতংকজনক। আরব আমিরাতে বাংলাদেশি অনেক নারীকর্মী যৌন ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করছেন যা আমাদের জন্য অত্যন্ত অগৌরবের ও অমর্যাদাকর। এত করে এইড্স ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশংকা দেখা দিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে পাপের বোঝা মাথায় নেয়ার কোন মানে হয় না। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লাখ লাখ যুবক বেকার হয়ে বসে আছে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। ভাষাসমস্যা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অভাব, চাকুরবিধির অপ্রতুলতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে সৌদি আরসেহ মধ্যপ্রাচ্যে নারীগৃহ পরিচারিকা প্রেরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। মহিলাদের জন্য স্বদেশে পর্দা, শালীনতা ও আত্মমর্যাদা বজায় রেখে অর্থোপার্জনের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা সরকারের গুরুদায়িত্ব। মায়ের জাতির অবমাননা ও লাঞ্চনা আমাদের কারো কাম্য নয়।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন