জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি-২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যা-সমাধান

সমস্যা-সমাধান ফতওয়া বিভাগ- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া,চট্টগ্রাম

ঈমান-আকীদা

সমস্যা: বিভিন্ন ওয়ায়েযগণের মুখে শোনা যায় যে, কিয়ামতের দিন রাসুল (সা.)-এর সাথে হযরত মারয়াম আ., হযরত মুসা (আ.)-এর বোন এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার সাথে বিয়ে হবে। কথাটা কি ঠিক? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

মুহাম্মদ আইয়ুব

ঈদগাহ, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: তাফসীরে ইবনে কহীর, তাফসীরে রুহুল মাআনী, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াসহ বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জান্নাতে রাসুল (সা.)-এর সাথে হযরত ইমরানের মেয়ে মারয়াম (আ.), হযরত মুসা (আ.)-এর বোন এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়াকে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো দুর্বল, তবে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে তা গ্রহণযোগ্য। আল-মুজামুল কবীর, হাদীস ৮০০৬; ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২/১০৩-১০৪

তাহারাত-পবিত্রতা

সমস্যা: বড় লেপ-তোশক ইত্যাদিতে যদি মানুষের পেশাব লেগে যায়, তবে পবিত্র করার উপায় কী? দয়া করে শরীয়তসম্মত সুস্পষ্ট সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

সিকান্দর মুহাম্মদ মোত্তাকী

শরয়ী সমাধান: ফুকাহায়ে কেরামের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, যদি বড় লেপ-তোশকে মানুষের প্রস্রাব লেগে যায়, সেটা পাক করার উপায় হলো, তা তিনবার ধোয়া এবং প্রত্যেকবার নিঙড়ানো; যদি সম্ভব হয়। যদি এভাবে ধৌত করার দ্বারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে কোনো কিছুতে ঝুলিয়ে রেখে যেখানে নাপাকি লেগেছে সেখানে পানি ঢেলে দেবে। পানি ঝরে গেলে পুনরায় পানি ঢালবে। এভাবে তিনবার করে ধুয়ে ফেললে এবং নাপাকির প্রভাব অর্থাৎ চিহ্ন বা দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেলে তা পাক হয়ে যাবে। রদ্দুল মুহতার ১/৩৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৪৮

সমস্যা: আমি প্রায় সময় গোসল করার পর নাপাক কাপড়চোপড় ধৌত করি বিধায় পুনরায় ভাল করে ওযু করে থাকি। এ সন্দেহে যে, আমার হাতে পায়ে বা মুখে যেন নাপাকি লেগে না থাকে। কিন্তু আমার এক বন্ধু বলল, আমার এই কাজটি নাকি বিদআত হচ্ছে! সুতরাং আমাকে এই মাসআলার সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম

বৃ-পাথুরিয়া, নাটোর

শরয়ী সমাধান: উল্লিখিত সূরতে তথা গোসলের পর নাপাক কাপড়-চোপড় ধোয়ার কারণে নাপাক পানির যে ছিঁটা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে লাগার কথা বলা হয়েছে,তা অযু ভঙ্গের কারণ নয়। সুতরাং যে অঙ্গে নাপাক পানির ছিঁটা লেগেছে শুধুমাত্র সেই অঙ্গ ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট। এর জন্য পুনরায় অযু করার প্রয়োজন নেই। আর যদি পুনরায় অযু করা হয়, তাহলে এটা অপচয় বলে গণ্য হবে। আর ইসলামি শরীয়তে অপচয় করা নিষেধ। আমাদের ফুকাহায়ে হানাফী একবার অযু করার পর কোন ইবাদত ব্যতীত দ্বিতীয়বার অযু করা মাকরূহ বলেছেন। তাই গোসলের পূর্বে অযু করা সুন্নত। কিন্তু গোসলের পরে অযু করা মাকরূহ। তিরমিযি ১/১৯; রদ্দুর মুহতার ১/২৪১; ফতহুল কাদির ১/২৭; মজমাউল আনহুর ১/১০

সালাত-নামায

সমস্যা: আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায়, হাফেযরা তারাবীর নামায পড়িয়ে তার বিনিময় হিসেবে বেশ কিছু টাকা নিয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, কোনো অবস্থায় তারাবীর নামায পড়িয়ে বিনিময় হিসেবে কিংবা হাদিয়া হিসেবে টাকা গ্রহণ করাটা জায়েয আছে কি না? দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

মুহাম্মদ এহতেশামুল হক

চকরিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: ফুকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, ‘উজরত আলাত-তাআত’ তথা ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। তবে মুতাআখখিরিন ফুকাহায়ে কেরাম কয়েকটি ক্ষেত্রে জরুরতের কারণে পারিশ্রমিক নেয়া জায়েয বলেছেন। যেমনÑ দীন শেখানো, ইমামতি করা, মুয়াজ্জিনি করা। এগুলো ছাড়া আর কোনো ইবাদতের পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ নয়; যেমন কুরআন পড়ে ঈসালে সওয়াব করে এবং তারাবীহ পড়িয়ে। কেননা, এগুলো এমন কোনো ‘জরুরতে দীন’-এর অন্তর্ভুক্ত নয়, যা না হলে দীনের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সুতরাং তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেওয়া ও দেওয়া কোনোটাই জায়েয নেই। টাকাদাতা ও টাকাগ্রহীতা সমান গোনাহগার হবে। সূরা আল-বাকারা: ৪১; বায়হাকী ৪/১৯৬; রদ্দুল মুহতার ৯/৭৭

সমস্যা: আরবদেশে দেখা যায়, মাগরিবের আযান হয়ে যাওয়ার পর দুই রাকাত নামায সবাই পড়ে থাকেন, কিন্তু আমাদের দেশে ওই দু’রাকআত পড়া হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যে আদায় করছেন তা সহীহ হাদীসে আছে কি না? এবং আমরা আদায় করলে কোনো সওয়াব পাব কি না? হাদীস শরীফের আলোকে জানতে চাই।

সাইয়েদা রাবিয়া মরিয়াম তাছমিয়া

আশ্রাফাবাদ, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: মাগরিবের আযানের পর সংক্ষিপ্ত দুই রাকাত নফল পড়ার পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় ধরনের বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। ইমাম আহমদ (রহ.) পক্ষের হাদীস গ্রহণ করেছেন, তাই আরবদেশে এই আমল দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক হানাফী মাযহাবের অনুসারী, আর আমাদের হানাফী মাযহাবে এই আমলটি মাকরূহ। তাই আমাদের মাযহাবে তা না করা উত্তম। কেননা, অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদীস না পড়ার পক্ষে রয়েছে। রাসুল (সা.), খোলাফায়ে রাশেদীন ও জমহুর সাহাবায়ে কেরাম মাগরিবের নামাযের পূর্বে কোনো নফল নামায পড়েননি। এলাউসসুনান ২/৬৭-৭৬; মারাকিল ফালাহ পৃ. ১২১

সমস্যা: অনেকে বলে থাকেন যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের জন্য অজু করা, কিবলামুখী হওয়া, জায়গা পাক হওয়া ইত্যাদি শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় আয়াতে সিজদা পড়ে বা শোনে সে অবস্থায় মাথাকে নত করার মাধ্যমে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। এ ধারণা কতটুকু সঠিক? এবং সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করার পদ্ধতি কী? জানালে অত্যন্ত আনন্দিত হব।

রিদুয়ানুল হক শামসী

চকরিয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: সিজদায়ে তিলাওয়াত নামাযের বিশেষ একটা অংশ, যা আদায় করতে হলে নামাযের সকল শর্ত অর্থাৎ শরীর, কাপড়, নামাযের জায়গা পাক হওয়া; কিবলামুখী হওয়া; সতর ঢাকা, নিয়্যত করা জরুরি। এর কোনো একটি পাওয়া না গেলে সিজদায়ে তিলাওয়াত সহীহ হবে না। সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করার পদ্ধতি নামাযের সিজদা আদায় করার মত। নামাযের বাইরে আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করলে বা শুনলে উত্তম হল সাথে সাথে তা আদায় করে দেওয়া। আর যদি পরবর্তীতে আদায় করা হয়, তখন سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَاِلَيْكَ الْمَصِيْرُ দুআটি পড়া উত্তম। আদায়ের সময় নামাযের মত পাক-পবিত্র হয়ে নিয়্যত করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত ওঠানো ছাড়া ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সোজা সিজদায় চলে যাবে এবং নামাযের সিজদার মতো سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়ে সিজদা থেকে উঠে যাবে। এক্ষেত্রে সালাম ফেরাতে হবে না। তেমনিভাবে কোনো ব্যক্তি যদি বসে বসে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সিজদা আদায় করে তবুও আদায় হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি নামাযের ভিতরে আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করা হয়, তখন যেখানে আয়াতে সিজদা শেষ হবে, সেখানেই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সোজা সিজদায় চলে যাবে। সিজদাতে কমপক্ষে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সিজদা থেকে উঠে যাবে। এটাই তিলাওয়াতে সিজদার উত্তম পদ্ধতি। বাদায়েউস সানায়ে ১/১৮৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৯; হিন্দিয়া ১/১৩৫

সমস্যা: সিজদা অবস্থায় কারো উভয় পা যদি মাটি থেকে উঠে যায়, তার নামায সহীহ হবে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুর রহমান

গুরুদাসপুর, নাটোর

শরয়ী সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাবে অধিকাংশ ফতওয়ার কিতাবে বর্ণিত হয়েছে যে, সিজদায় মাটিতে পা রাখা ফরজ। তাই এক পা বা পায়ের কিছু আঙ্গুল কিছুক্ষণের জন্য হলেও মাটির সাথে লেগে থাকলে সিজদা হয়ে যাবে। তবে উভয় পায়ের কোনো অংশ পুরো সিজদাজুড়ে যদি মাটিতে রাখা না হয়, তাহলে সিজদা হবে না এবং নামাযও শুদ্ধ হবে না। ফাতাওয়া আলমগীরী ১/৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১৩৫; ফতহুল কাদির ১/২৬৫; হেদায়া ১/১৯

সমস্যা: নামাযে উভয় সিজদা দেওয়া ফরয, না একটা ফরয এবং অপরটা ওয়াজিব? এক ইমাম সাহেব বলেছেন, কেবল প্রথম সিজদাই নাকি ফরয আর দ্বিতীয়টা নাকি ওয়াজিব। ইমাম সাহেবের কথা সঠিক কি না?

এইচএম আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: ইমাম সাহেবের কথা ঠিক নয়। সকল ফুকাহায়ে কেরামের ঐকমত্যে নামাযে প্রতি রাকাতে উভয় সিজদাই ফরয। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০

জানাযা-দাফন

সমস্যা: জানাযার নামাযে শেষ তাকবীরের পর সালামের আগে বা পরে হাত ছাড়ার সঠিক পদ্ধতি কী? সাধারণত নিয়ম হল সলামের পর হাত ছেড়ে দেওয়া, কিন্তু একজন আলেম সাহেব বলেছেন যে, শেষ তাকবীরের পর আগে হাত ছেড়ে দিবে পরে সালাম ফিরাবে। এখন আমার জানার বিষয় হল উক্ত আলেম সাহেবর কথা সঠিক কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আয়াতুল হক

পেকুয়া, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: জানাযার নামাযে শেষ তাকবীরের পর হাত কখন ছেড়ে দেয়া হবে এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। তাই প্রশ্নোল্লিখিত উভয় নিয়ম জায়েয। তবে আগে হাত ছেড়ে দিয়ে এর পর সালাম দিয়ে নামায শেষ করা উত্তম। কেননা অধিকাংশ ফুকহায়ে কেরামের সরাসরি বর্ণনা এ নিয়মের পক্ষে পাওয়া যায়। ফতওয়ায়ে শামী ২/৯৮-১৮৮; ফতহুল কাদির ১/২৫০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৫

মুআমালা-লেনদেন

সমস্যা: আমি একজনকে টাকা দিলাম, সে শ্রম দেবে, এভাবে ব্যবসার চুক্তি হল। অথবা একজনের সাথে আমার চুক্তি হল, আমি তোমাকে এক লাখ টাকা দেব, তুমি তাতে যত ইচ্ছা মুনাফা করতে পার; তবে আমাকে এক বছর পর দুই লাখ টাকা দিতে হবে। দাতা এবং গ্রহীতা উভয়জন সম্মত হলে লাভ গ্রহণ করা যাবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবদুল গফুর

শি বি কেন্দ্র, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: আপনি প্রশ্নে যে ব্যবসায়িক চুক্তি ও মুনাফা অর্জনের পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন তা নাজায়েয ও সুদ। কারণ এ ধরনের ব্যবসায়িক চুক্তি মুদারাবার মধ্যে হয়ে থাকে। আর মুদারাবা হল, যে ব্যবসায় লভ্যাংশ হারাহারি বণ্টনের শর্তে একপক্ষ পুঁজি সরবরাহ করে, আর অপরপক্ষ ব্যবসার যাবতীয় উদ্যোগ ও শ্রম ব্যয় করে। কোনো এক পক্ষ লভ্যাংশে নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারণ করলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ধরনের কারবারে শ্রমদাতা ইচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি ব্যতিরেকে স্বাভাবিক কারণে যদি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর সে ক্ষতির পরিমাণ যদি লভ্যাংশের সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়ে কম হয়, তাহলে উভয়পক্ষ লভ্যাংশ যে হারে বণ্টনের শর্ত থাকবে সে হারে প্রত্যেকেই ক্ষতির দায়ভার বহন করবে। কিন্তু যদি ক্ষতির পরিমাণ লভ্যাংশ ছেড়ে মূলধনের মধ্যেও হয়, তাহলে মূলধন থেকে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তার দায়ভার শুধু পুঁজি যোগানদাতা বহন করবে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতি শরীয়তসম্মত হয়নি। বরং তা সুদী ব্যবসা হয়েছে। যা স্পষ্টভাবে হারাম ও নাজায়েয। কিতাবুল আসল ৪/১২৯; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৪৪-৪৪৫; কিতাবুল ফাতাওয়া ৫/২৮৫

বিবিধ

সমস্যা: ক. বিভিন্ন গবেষণায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, ‘পেপসি ও কোকাকোলায় রয়েছে শুকরের রক্ত, চর্বি ও নাড়িভুড়ি। আর অন্যান্য কোমল পানীয়তে রয়েছে ০.২% হারে মদ (এলকোহল)। ইসলামধর্মে শুকরের সবকিছু খাওয়া ও মদ পান করা জঘন্য হারাম। ইহা জানার পরও কোনো আলেম, মুফতি বা পীর সাহেব এগুলো (কোমল পানীয়) যদি প্রকাশ্যে পান করে তাহলে তার পেছনে নামায পড়লে নামায কি হবে? ইসলামি শরীয়াহ এরূপ ব্যক্তিকে কী বলে সাব্যস্ত করে যে ব্যক্তি কোনোকিছু হারাম জানার পরেও ত খায় এবং এটাকে হালাল বলে?

খ. যেসব ওয়াজ-মাহফিলে ফটো তোলা হয় বা ভিডিও করা হয় ঐসব ওয়াজ-মাহফিলে অংশগ্রহণ করা কি বৈধ হবে? এবং ঘরে ঘরে, দোকানে বা অফিস-আদালতে নেতা-নেত্রীর ছবি বা পীর ও আমীরের ছাবি রাখা কেমন কাজ?

গ. হুযুর এক পীর সাহেব পবিত্র কুরআন মাথায় রেখে আল্লাহর নামে কসম করে বলেন যে, কাদিয়ানি মতবাদের আলেম-মুফতিরা জঘন্য কাফের। যারা কাদিয়ানিদেরকে মুসলমান বলবে তারাও কাফের। জেনেশুনে যারা কাদিয়ানি আলেমদের পেছনে ইকতিদা করে নামায পড়বে তারাও কাফের। কারণ মুরতাদ ও কাফের ইমামের পেছনে নামায পড়াও নাকি কুফরি। ৫ম বার বললেন, যদি আমি মিথ্য বলি, তাহলে আল্লাহর গযব হোক আমার ওপর। প্রশ্ন হল, এটা কি সত্য ফতোয়া?

মুহাম্মদ পারভেজ

চরলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: ক. স্মরণ রাখতে হবে যে, সাধারণ বস্তুর ক্ষেত্রে শরীয়তের মূলনীতি হল, তা বৈধ ও পাক হওয়া। তবে কোনো পণ্যে হারাম বস্তুর সংমিশ্রণ হওয়াটা যদি স্পষ্ট প্রমাণের দ্বারা প্রমাণিত হয়ে থাকে, তখন তা হারাম ফতোয়া দেয়া যেতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র সন্দেহের বশীভূত হয়ে কোনো জিনিসের ব্যাপারে হারাম ফতোয়া দেয়া যাবে না। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত কোকাকোলা ও পেপসিতে হারাম জিনিসের মিংমিশ্রণের ব্যাপারে যতক্ষণ না কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইহার ব্যাপারে হারাম ফতোয়া দেওয়া যাবে না। তবে সর্বাবস্থায় এ সকল সন্দেহযুক্ত বস্তু খাওয়া ও ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকা উত্তম। শামী ১/২৮৩; মাহমুদিয়া ২৭/২২৮

খ. অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, ছবি ওঠানো একটি নিকৃষ্টতম হারাম কাজ। রাসুল সা. ছবি উত্তোলনকারীর ওপর অভিসম্পাৎ করেছেন। তাই আজ পর্যন্ত কোনো মুফতি প্রয়োজন ছাড়া ছবি ওঠানোর বৈধতা দেননি। চাই তা ক্যামেরার মাধ্যমে হোক বা মোবাইলের মাধ্যমে হোক। অতএব ওয়াজ-মাহফিলে ছবি ওঠানো, ঘরে-দোকানে ও অফিস-আদালতে ছাবি ঝুলানো সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়েয। তবে যে সকল মাহফিলে ছবি ওঠানো হয় সেখানে তাদেরকে নিষেধ করতে হবে এবং ছবি তোলার স্থান থেকে দূরে থেকে মাহফিলে অংশগ্রহণ করা যাবে। কেননা, ওয়াজ-মাহফিল হল একটি ইবাদত, তাই অন্য কোনো কারণে তা বাদ দেওয়া যাবে না। বোখারী শরীফ ২/৮৮০; শামী ২/৪১৬

গ. স্মরণ রাখতে হবে যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার হওয়ার কারণে সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। তার অনুসারী ও ভক্তবৃন্দরা যদি তাকে নবী হিসেবে মানে, তাহলে তারাও কাফের হবে। একইভাবে যারা তার মত আকীদা পোষণ করবে তারাও কাফের হিসেবে গণ্য হবে। চাই সে যত বড় আলেম বা মুফতি হোক না কেন। কাদিয়ানি ইমামের পেছনে ইকতিদা করা কোনোভাবেই জায়েয নেই। যদি কেউ ইকতিদা করে তাহলে তার নামায আদায় হবে না। পুনরায় তাকে তা আদায় করতে হবে। আর জেনেশুনে কাদিয়ানি ইমামের পেছনে ইকতিদা করা চরম অন্যায় ও বড় গোনাহ। এত্থেকে খাঁটি দিলে তওবা করতে হবে। কেননা তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। সূরা আল-আহযাব: ৪০; আবু দাউদ ২/৫৮৪; আদ-দুররুল মুখতার ২/২৯৯-৩০০

সমস্যা: প্রায় হোটেলে নাস্তা বা ভাত খাওয়ার পর হাত মোছার জন্য পত্রিকার টুকরা দেওয়া হয়। প্রশ্ন হল, পত্রিকার টুকরা দিয়ে হাত মোছা যাবে কি?

জসিমউদ্দীন

মহেশখালী, কক্সবাজার

শরয়ী সমাধান: কাগজ ইলম ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। আর ইলমের সকল মাধ্যম অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানযোগ্য। তাই পত্রিকার টুকরা দিয়েও হাত মোছা ঠিক নয়। এটা আদব পরিপন্থী কাজ। আল-মুহীতুল বুরহানী ৮/১২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২

সমস্যা: আমার দোকানে রবি কোম্পানি একটি সাইনবোর্ড গিফট করেছে। সেটা আমি দোকানের সামনে লাগিয়েছি। কিন্তু সেখানে মানুষের ছবি আছে বিধায় আমি ছবিগুলোর মাথা কালি দিয়ে আড়াল করে দিয়েছি। একজন আলেম বলেছেন, এটা নাকি যথেষ্ট হয়নি। শুধু মাথা কেটে দিলে বা মুছে দিলে নাকি যথেষ্ট হয় না। এখন জানার বিষয় হল, আলেমের কথা ঠিক কি না? আমি যে ছবির মাথা কালি দিয়ে আড়াল করে দিয়েছি, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা যথেষ্ট হয়েছে কি না?

শরয়ী সমাধান: বিখ্যাত তাবেঈ হযরত ইকরিমা রা. বলেন, ‘ছবির মূল হল মাথা। মাথা যদি কেটে দেওয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। মুসান্নাফে ইবনে আবু শাইবা ২৫৮৩৮

তাই মাথার অংশ কেটে দিলে বা মুছে দিলে তা আর ছবির হুকুমের থাকে না। ইবনু আবেদীন শামী রহ. বলেছেন, প্রাণীর মূর্তি বা ছবির যদি মাথা কাটা থাকে তাহলে এমন ছবি ঘরে রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে না। রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮

সুতরাং ওই আলেমের কথা ঠিক নয়। আপনি যেহেতু ছবির মাথা মুছে দিয়েছেন তাই ওই সাইনবোর্ড রাখতে আর কোনো অসুবিধা নেই। অবশ্য এ ধরনের সাইনবোর্ড থেকে বিরত থাকা উত্তম।

সমস্যা: ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে দাড়ির পরিামাপ কতটুকু? এবং ওই পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব, না সুন্নত? যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে সাহেবে হেদায়া সুন্নত কেন বলেছেন? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ আবদুল করীম

সিরাজগঞ্জ

শরয়ী সমাধান: শরয়ী দলীলাদি দ্বারা একথা প্রমাণ হয় যে, দাড়ির পরিমাণ হচ্ছে এক মুষ্টি বরাবর এবং এবং এক মুষ্টি দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। আর সাহেবে হেদায়া যে সুন্নত বলেছেন, ওলামায়ে কেরাম এর দুই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন ১. দাড়ি যেহেতু রসুল সা. এর কর্ম এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, কুরআন দ্বারা নয়, তাই সুন্নত বলেছেন; ২. সুন্নতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সঠিক পন্থা। তাই ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব যেটাই হোক, সবই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বুখারী শরীফ ১/৮৭৫; মুসলিম শরীফ ৩৮০; ফতওয়ায়ে শামী ২/৪১৮; ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩৫৮; ফতহুল কাদির ২/৭৭

সমস্যা: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে দাড়ির সংজ্ঞা কী? এবং সংজ্ঞা হিসাবে দাড়ির সীমারেখা কী? আর মুখম-লের লোম ও নিম দাড়ি তার অন্তর্ভুক্ত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সাদ্দাম হুসাইন

চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

শরয়ী সমাধান: শরয়ী দলীল দ্বারা একথা প্রমাণ হয় যে, দাঁড়ির সংজ্ঞা হচ্ছে চোয়ালের হাড়ের ওপর তথা দাঁতের হাড়ের ওপর যে লোমগুলো ওঠে এগুলোকে দাড়ি বলা হয়। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, মুখম-লের লোম দাঁড়ি নয়। কিন্তু ফুকহায়ে কেরাম নিম দাঁড়ি তথা নিচের ঠোঁটের নিচে যে লোম আছে তা কাটতে নিষেধ করেছেন। এমনকি বিদয়াত বলেছেন। তাই নিম দাড়ি কাটা যাবে না। মুসলিম শরীফ ১/১২৯; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩৮৫; শামী ৬/৩৭৩; উমদাতুল কারী ১১/২৯৬

সমস্যা: আমি একটি মসজিদে নিয়মিত জুমার নামাজ আদায় করি। কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, উক্ত জামে মসজিদের খতিব সাহেব মসজিদে বয়ান করার সময় নিজের বয়ানকে ভিডিও করার মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করছেন। এখন আমার জানার বিষয় হল, উল্লেখ্য পদ্ধতিতে মসজিদে ভিডিও করা কতটুকু শরিয়তসম্মত? এবং উক্ত ইমাম সাহেবের পিছনে নামাজ আদায় করার শরয়ী হুকুম কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

মুহাম্মদ কাসেম

নতুন চাকতাই, চট্টগ্রাম

শরয়ী সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, ভিডিও সম্পর্কে আমাদের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যখন মতবিরোধ রয়েছে, অর্থাৎ কেউ তাকে ছবি হিসাবে গণ্য করে, আর কেউ তার মধ্যে স্থিরতা ও স্থায়িত্ব না থাকার কারণে তাকে মানুষের ছায়া এবং আয়না ও পানির প্রতিচ্ছবি হিসাবে গণ্য করেছেন। এবং ভালো কাজের জন্য তাকে জায়েয ও বৈধ বলেছেন। সুতরাং এরকম ভিডিও কাজের দ্বারা উল্লিখিত খতিব সাহেবকে ফাসেক বলা যাবে না। তাই তার পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমা ইত্যাদি জায়েয ও সহীহ হবে। অবশ্য এ ভিডিও না করাটাই উত্তম। তাকমিলাতু ফতহিল মুলহিম ৪/১৬৪; আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যা ১২/৯৩; ফাতাওয়া মুআছিরাহ ৪/১৭৪; ফাতাওয়া আল-লাজনাতিত দায়িমা ১/৪৫৮; ফেকহী মাকালাত ৪/১৩২

বিভাগীয় নোটিশ

দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার ফতওয়া বিভাগে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। এজন্য সরাসরি যোগাযোগ বা বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করুন। প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল বা ফেসবুক ফ্যান-পেইজেও।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ