সমকামিতা কী? ধর্ম ও আইন কী বলে? বাঁচার উপায় কী?
মুহাম্মদ আযীম ও মুহাম্মদ আল-মুনাজ্জিদ
সমকামিতা বলতে আমরা সকলেই বুঝি একই সেক্স বা লিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণবোধ করা। লেসবিয়ান, গে দিয়ে আমরা মেয়ে ও ছেলেদের মাঝে সমকামিতা বুঝিয়ে থাকি। সমকামিতা একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রেম কিংবা যৌন আচরণ বোঝায়। প্রবৃত্তি হিসেবে, সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি জেগে ওঠা ‘এক যৌন, স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের স্থায়ী স্বাভাবিক প্রবণতা’; ‘এছাড়া এর দ্বারা এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক সম্প্রদায়ের সদস্যতাও নির্দেশিত হয়। সহজ ভাষায় কোন ছেলের প্রতি ছেলের আকর্ষণ অথবা কোন মেয়ের প্রতি মেয়ের আকর্ষণকে সমকামিতা বলে।
সমকামিতার ইংরেজি প্রতি শব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি, যা ১৮৬৯ সালে প্রথম ব্যবহার করেন Karl Maria Cutberry তার লেখা ছোট একটি আইনি পুস্তিকায়। Homosexual শব্দটি গ্রিক হোমো এবং ল্যাটিন সেক্সাস শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সমকামীদের কয়েকভাগে ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
১. Gay বা পুরুষ সমকামী,
২. Lesbian বা নারী সমকামী,
৩. Shemale বা হিজড়া ও
৪. Bisexual বা দ্বৈত যৌন জীবন।
হিজড়া আর বাইসেক্সুয়ালরা মূলত উভকামী তবে তাদের মধ্যে সমকামী বৈশিষ্ট্য বেশি প্রকট থাকে। যৌন তাড়না বা প্রবৃত্তির ভিত্তিতে মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাÑ
(ক) সমকামী: সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি যারা যৌন তাড়না অনুভব করে।
(খ) উভকামী: যারা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করে।
(গ) বিসমকামী বা অসমকামী: যারা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন তাড়না অনুভব করে।
বিভিন্ন ধর্ম সমকামিতার ব্যাপারে কি বলেছে তা একটু আলোচনা করি। তিনটি ধর্মে সমকামিতার ব্যাপারে আলোচনা আছে এবং ওই তিনটি ধর্মে সমকামীতা পাপ। ধর্ম তিনটি হলো ইসলাম খ্রিস্টান ও ইহুদি। বাকী যত ধর্ম আছে সেখানে সমকামিতার ব্যাপারে নিষিদ্ধ বা প্রসিদ্ধতার ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়নি। অর্থাৎ এটাকে পাপ বা পূণ্য কিছুই বলা হয়নি। নিম্নে যে তিনটি ধর্মে সমকামিতার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে তার আংশিক আলোচনা করছি।
ইসলামে সমকামিতা সম্পূর্ণ হারাম এবং এ ব্যাপারে কুরআনের অনেক আয়াতে বর্ণনা দেয়া আছে। যদিও কুরআনে এ কাজের শাস্তির ব্যাপারে সাজা কি হবে তার স্পষ্ট কিছু বলা নেই তবে অনেক হাদীসে শাস্তির বিভিন্ন বর্ণনা আছে। আমি কিছুটা লিখছি আপনাদের কাছে তথ্য থাকলেও আমায় জানাবেন। কুরআনে বর্ণিত,
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِيْنَ۰۰۸۰ اِنَّكُمْ لَتَاْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ١ؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ۰۰۸۱
‘আর আমি লূতকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলাম। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশত পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। তোমরা নিশ্চিতই সীমালঙ্ঘনকারী।’
পরবর্তী আয়াতে তাদের ওপর শাস্তির ব্যাপারে বর্ণিত হয়,
وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَّطَرًا١ؕ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِيْنَؒ۰۰۸۴
‘এরপর ওদের ওপর (সমকামীদের) মুষলধারে (কঙ্কর) বর্ষণ করেছিলাম। অতএব অপরাধীদের পরিণতি কী হয়েছিল বুঝতেই পারছ।’
اَتَاْتُوْنَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعٰلَمِيْنَۙ۰۰۱۶۵ وَتَذَرُوْنَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ اَزْوَاجِكُمْ١ؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ عٰدُوْنَ۰۰۱۶۶
‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’
وَلُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَاَنْتُمْ تُبْصِرُوْنَ۰۰۵۴ اَىِٕنَّكُمْ لَتَاْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسَآءِ١ؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ۰۰۵۵ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ قَالُوْۤا اَخْرِجُوْۤا اٰلَ لُوْطٍ مِّنْ قَرْيَتِكُمْ١ۚ اِنَّهُمْ اُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُوْنَ۠۰۰۵۶ فَاَنْجَيْنٰهُ وَاَهْلَهٗۤ اِلَّا امْرَاَتَهٗ١ٞ قَدَّرْنٰهَا مِنَ الْغٰبِرِيْنَ۰۰۵۷ وَاَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَّطَرًا١ۚ فَسَآءَ مَطَرُ الْمُنْذَرِيْنَؒ۰۰۵۸
‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা স্বজ্ঞানেই অশ্লীল কাজ করছ? তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। আমি ওদের ওপর (শাস্তি স্বরূপ কঙ্কর) বর্ষণ করেছিলাম।’
وَلَمَّا جَآءَتْ رُسُلُنَاۤ اِبْرٰهِيْمَ بِالْبُشْرٰى١ۙ قَالُوْۤا اِنَّا مُهْلِكُوْۤا اَهْلِ هٰذِهِ الْقَرْيَةِ١ۚ اِنَّ اَهْلَهَا كَانُوْا ظٰلِمِيْنَۚۖ۰۰۳۱
‘আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।’
যখন আমার ফায়সালা কার্যকর করার সময় এলো, তখন ওই জনপদকে উলেঠ দিলাম এবং অবিরাম বর্ষিত হলো প্রস্তর কঙ্কর, যা সবই চিহৃতি ছিলো আগে থেকেই।
হাদীসে সমকামিতার কি বর্ণনা আছে তাঁর আংশিক বর্ণনা:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ، وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ.
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন (রাযি.), রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।’’
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: لَا يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَىٰ عُرْيَةِ الرَّجُلِ، وَلَا الْـمَرْأَةُ إِلَىٰ عُرْيَةِ الْـمَرْأَةِ، وَلَا يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِيْ ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلَا تُفْضِي الْـمَرْأَةُ إِلَى الْـمَرْأَةِ فِيْ ثَوْبٍ.
‘হযরত আবু সাইদ আল-খুদরী (রাযি.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন পুরুষ আরেক পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক নারী আরেক নারীর যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে অন্তত undergarment না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না। এক নারী আরেক নারীর সাথে কখনও অন্তত undergarment না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না।’’
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: لَا يُفْضِيَنَّ رَجُلٌ إِلَىٰ رَجُلٍ، وَلَا امْرَأَةٌ إِلَىٰ امْرَأَةٍ، إِلَّا وَلَدًا أَوْ وَالِدًا قَالَ: وَذَكَرَ الثَّالِثَةَ فَنَسِيْتُهَا.
‘হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে বা এক নারী আরেক নারীর সাথে ঘুমাতে পারবে না লজ্জাস্থান ঢাকা ব্যতীত। তবে ব্যতিক্রম করা যাবে শিশু আর পিতার ক্ষেত্রে।’ রাসুল (সা.) তৃতীয় আরেকজনের কথা বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি।’’
عَنْ جَابِرٍ يَقُوْلُ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَىٰ أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمِ لُوْطٍ.
‘হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আমার কওমের জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে…।’’
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي الْبِكْرِ يُؤْخَذُ عَلَى اللُّوْطِيَّةِ، قَالَ: يُرْجَمُ.
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, ‘অবিবাহিত কাউকে যদি সমকামিতায় পাওয়া যায় তাহলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।’’
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ.
‘হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেন, ‘যে কাউকে লুতের কওমের মতো করতে দেখলে যে দিচ্ছে আর যে পাচ্ছে দু’জনকেই হত্যা কর।’’
মুওয়াত্তা শরীফের হাদীসে এর শাস্তি বলা আছে পাথর মেরে হত্যা।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ:… مَلْعُونٌ مَنْ وَقَعَ عَلَىٰ بَهِيمَةٍ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অভিশপ্ত সে যে কিনা কোন পশুর সাথে সেক্স করে, আর অভিশপ্ত সে যে কিনা সেটা করে যা লুতের সম্প্রদায় করত।’’
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ عليَّا أحرَقَهُمَا وَأَبَا بَكْرٍ هَدَمَ عَلَيْهِمَا حَائِطًا.
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, আলী (রাযি.) তাঁর সময়ে দু’জন সমকামীকে পুড়িয়ে দেন। আর হযরত আবু বকর (রাযি.) তাদের ওপর দেয়াল ধ্বসিয়ে দেন।’
পবিত্র কুরআনের প্রায় চৌদ্দ জায়গায় সমকামিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাইবেলে সমকামিতার আলোচনা তেমন ব্যাপক না হলেও আংশিক যা এসেছে তার সারমর্ম।
সমকামিতা একরকমের পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর ‘লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে’ তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিস্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, যারা সমকামিতায় ‘দোষী’, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না।
পবিত্র বাইবেল বলেছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয় ১:২৪-২৭) এবং এটা তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ ইচ্ছার পরিণতি। একজন ব্যক্তি সমকামিতার মত এমন সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে; যেমন কেউ কেউ আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে এবং অন্যান্য পাপস্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার মানে কিন্তু এ-ই নয় যে, ওই ব্যক্তি তার পাপ স্বভাবের অধীনে নিজেকে চালাচ্ছে বলে তাকে ক্ষমা করা যায়। যদি কোন ব্যক্তি রাগ বা উগ্রতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তাকে কি ওই রকম ইচ্ছার অধীনে থাকতে দেওয়া যায়? অবশ্যই দেওয়া যায় না! সমকামিতার ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা বলা যায়।
যা হোক বাইবেল কিন্তু সমকামিতাকে অন্যান্য পাপের চেয়ে ‘বড়’ বলে বর্ণনা করেনি। ১ করিন্থীয় ৬:৯-১০ পদে যে পাপগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সমকামিতা হচ্ছে সেগুলোর একটি, যা কিনা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে একজনকে দূরে রাখে। বাইবেল অনুসারে- ব্যভিচারী, প্রতিমাপূজক, খুনি, চোর ইত্যাদির মতোই সমকামীও ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা পাবার সুযোগ পেতে পারে। তবে যারা যিশুকে উদ্ধারকর্তা বলে বিশ্বাসে গ্রহণ করেছে, তাদের সকলকেই সমকামিতাসহ সকল পাপের উপরে বিজয়ী হওয়ার শক্তি দিতে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন (১ করিন্থীয় ৬:১১; ২ করিন্থীয় ৫:১৭; ফিলিপীয় ৪:১৩)।
বাংলাদেশের আইনে
সমকামিতার শাস্তি
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই সমকামিতাকে বৈধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের যৌন-সহবাস, তা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সমকামিতার ব্যাপারে বাংলাদেশের আইন কি বলে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সাথে প্রকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
এ ধারায় বর্ণিত অপরাধীরূপে গণ্য হবার জন্য যৌন সহবাসের নিমিত্তে অনুপ্রবেশই যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
[Section 377. Unnatural offences– Whoever voluntarily has carnal intercourse against the order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with imprisonment for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine.
Explanation– Penetration is sufficient to constitute the carnal intercourse necessary to the offence described in this section.]
এ ধারার অধীনে সমলিঙ্গ মানুষের মধ্যে পরস্পর যৌন-সহবাস, পায়ুকাম এবং পশ্বাচার (পশুর সাথে নর বা নারীর পায়ু বা যোনিপথে সংগম) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ স্বেচ্ছায় বা পারস্পরিক সম্মতিতে করলেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বাঁচার উপায়
এ ধরনের বিশাল পাপে জড়িত হওয়ার শাস্তি যে শুধু পরকালেই হবে তা নয়, বরং দুনিয়ার জীবনেও এ শাস্তির অংশ বিশেষ ভোগ করতে হয়। যদি সার্বক্ষণিক আফসোস ও যন্ত্রণা হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে রাখে তাহলে এটাই তো শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট। এর সাথে যদি মারাত্মক রোগ-ব্যাধি সংযোগ হয়, যেগুলোর ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে তা সমকামীদের হয়ে থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রশ্ন নং ১০০৫০ থেকে এ ব্যাপারে আরো দিকনির্দেশনা নেবে বলে আশা রাখি।
এ রোগের চিকিৎসা
নিম্নবর্ণিতভাবে হতে পারে
এক. হৃদয় থেকে সত্যিকার অর্থে তাওবা করতে হবে। আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। অতীতে যা করেছ তার জন্য লজ্জিত হতে হবে। বেশি-বেশি দুয়া করতে হবে এবং কায়মনোবাক্যে আকুতি করতে হবে আল্লাহ যেন ক্ষমা করে দেন। তিনি যেন এই বিষয় থেকে নিষ্কৃতি পেতে সহায়তা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ আরাধ্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেহেরবান এবং দুয়া কবুলে অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا١ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ۰۰۵۳
‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।’
তাই আল্লাহর সামনে পড়ে যাও। কাঁদো, নিজের মনকে বিগলিত করে অশ্রু ঝরাও, তোমার প্রয়োজন ও দীনতা প্রকাশ করো। গুনাহ মাফ চাও। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বিপদমুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী হও।
দুই. নিজের হৃদয়ে ঈমানের বীজকে যতœ করো। যখন এ-বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে, তখন তা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কামিয়াবি নিয়ে আসে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসই, আল্লাহর তাওফিকের পর, বান্দাকে হারাম কাজ থেকে বাঁচায়। নবী (সা.) কি বলেননি,
لَا يَزْنِي الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ
‘ব্যভিচারকারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন অবস্থায় থাকে না।’
তাই ঈমান যখন হৃদয়কে কর্ষিত করবে তোমার অন্তরাত্মা ও অনুভূতি ঈমান দিয়ে ভরে যাবে, তখন আর তুমি হারাম কাজ করতে সাহস পাবে না। আর মুমিন যদি একবার পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই সে চৈতন্য ফিরে পায়। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طٰٓىِٕفٌ مِّنَ الشَّيْطٰنِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَاهُمْ مُّبْصِرُوْنَۚ۰۰۲۰۱
‘নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, যখন শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা তাদেরকে স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।’
তিন. রাসূলুল্লাহ (সা.) যুবসমাজকে যে উপদেশ দিয়েছেন তা পালন করার চেষ্টা করো। সেটা হলো বিয়ের উপদেশ যদি তুমি এ ব্যাপারে সক্ষম হও। তোমার বয়স কম বলে অজুহাত দাঁড় করিও না, কেননা কম বয়স বিয়ের প্রতিবন্ধক নয়; কখনো না। যেহেতু তোমার বিয়ে করা জরুরি, তাই তোমার বেলায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্তাবে। তিনি বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، وَمَنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ.
‘হে যুবসম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার ক্ষমতাসম্পন্ন সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা দৃষ্টিকে অধিক অবদমনকারী, যৌনাঙ্গকে অধিক হেফাজতকারী। আর যে তা পারবে না, সে যেন রোযা রাখে, এটা তার জন্য যৌন-উত্তেজনা দমনকারী।’
তুমি নবীর এই উপদেশকে আঁকড়ে ধরো। এতে আল্লাহ চাহে তো মুক্তির উপায় পাবে। মাতা-পিতাকে এ ব্যাপারে খোলাখুলি বলে বিয়ের আগ্রহ ব্যক্ত করতেও কোনো সমস্যা নেই। লজ্জা যেন তোমাকে মাতা-পিতার কাছে খোলামেলা বলা থেকে বিরত না রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক হও।
বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তা করো। দারির্দ্যকে ভয় পেয়ো না; আল্লাহ তার করুণায় অভাবমুক্ত করে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে,
وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصّٰلِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآىِٕكُمْ١ؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ١ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ۰۰۳۲
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যবান ও মহাজ্ঞানী।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন যে, সৎ উদ্দেশে যে ব্যক্তি বিয়ে করল আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللهِ عَوْنُهُمْ: الْـمُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَالْـمُكَاتَبُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْأَدَاءَ، وَالنَّاكِحُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْعَفَافَ.
‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারী, মূল্য পরিশোধ করার সদিচ্ছা আছে এমন মুকাতেব দাস, ইজ্জতের পবিত্রতা রক্ষার ইচ্ছায় বিয়েকারী ব্যক্তি।’’
চার. যদি বিয়ে সম্ভব না হয় তাহলে আরেকটি সমাধান হল রোযা রাখা। তাহলে মাসে তিনদিন রোযা রাখার চিন্তা করছ না কেন? অথবা প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার? রোযায় তো অনেক সাওয়াব রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীসে কুদসীতে বলেন,
الصِّيَامُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِيْ بِهِ.
আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের; তবে রোযা ব্যতীত। নিশ্চয় রোযা আমার এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’
তাকওয়া সৃষ্টির উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা রোযার বিধান দিয়েছেন মর্মে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইরশাদ হয়েছে,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ۰۰۱۸۳
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হবে।’
রোযার মধ্যে প্রবৃত্তির টানে ছুটে যাওয়া থেকে যেমন রয়েছে সুরক্ষা, রয়েছে আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান মানুষের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নাফসের খায়েস ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীক্ষাও রয়েছে রোযায়। তাই রোযা রাখার ব্যাপার মনস্থির করো। আশা করা যায় আল্লাহ তোমার বোঝা হালকা করবেন।
পাঁচ. হারাম জিনিসে দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজেকে সংবরণ করার ক্ষেত্রে কখনো অলসতা করবে না। যেমনÑ অশ্লীল ম্যাগাজিন, বিবস্ত্র ছবি ইত্যাদি, যা পাপ ও অশ্লীল কর্মে জড়িয়ে যেতে মানুষকে উৎসাহিত করে, মনের মধ্যে খারাপ প্রভাব জিইয়ে রাখে। এসব থেকে আমরা সবাই আল্লাহর আশ্রয় চাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَ يَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ١ؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِيْرٌۢ بِمَا يَصْنَعُوْنَ۰۰۳۰
‘মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’
তোমার জেনে রাখা উচিত, যখন এই অবৈধ কাজ থেকে বিরত হওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করবে, শয়তানকে সুযোগ করে দেবে যাতে সে এর পরবর্তী পদক্ষেপকে তোমার সামনে সজ্জিত করে উপস্থাপন করতে পারে। সে এই কর্ম সম্পাদনের জন্য এ-জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে যে তুমি একবারের জন্য হলেও তার ইচ্ছার সামনে নতজানু হয়েছে।
ছয়. যখন গুনাহ করার মনস্কামনা সৃষ্টি হবে অথবা এই পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য শয়তানের ওয়াসওয়াসা অনুভূত হবে, তখন স্মরণ করবে যে তোমার এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাল কিয়ামতের মাঠে তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তুমি কি জান না যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এই যৌবন ও উদ্যম তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার নেয়ামত? এই নেয়ামতকে পাপ অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যয় করলে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করলে, আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের কি শুকরিয়া আদায় হবে?
আরেকটি বিষয় আছে যে ব্যাপারে তোমাকে সতর্ক হতে হবে, আর তা হলো আল্লাহ তাআলার বাণী:
حَتّٰۤى اِذَا مَا جَآءُوْهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَاَبْصَارُهُمْ وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ۰۰۲۰ وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ لِمَ شَهِدْتُّمْ عَلَيْنَا١ؕ قَالُوْۤا اَنْطَقَنَا اللّٰهُ الَّذِيْۤ اَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَّهُوَ خَلَقَكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ۰۰۲۱
‘অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দেবে, আর তারা তাদের চামড়াগুলোকে বলবে, কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের বাকশক্তি দিয়েছেন যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَضَحِكَ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُوْنَ مِمَّ أَضْحَكُ؟ قَالَ قُلْنَا: اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: مِنْ مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ، يَقُوْلُ: يَا رَبِّ أَلَـمْ تُجِرْنِيْ مِنَ الظُّلْمِ؟ قَالَ: يَقُوْلُ: بَلَىٰ، قَالَ: فَيَقُولُ: فَإِنِّيْ لَا أُجِيزُ عَلَىٰ نَفْسِيْ إِلَّا شَاهِدًا مِنِّيْ، قَالَ: فَيَقُوْلُ: كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ شَهِيْدًا، وَبِالْكِرَامِ الْكَاتِبِيْنَ شُهُوْدًا، قَالَ: فَيُخْتَمُ عَلَىٰ فِيْهِ، فَيُقَالُ لِأَرْكَانِهِ: انْطِقِيْ، قَالَ: فَتَنْطِقُ بِأَعْمَالِهِ، قَالَ: ثُمَّ يُخَلَّىٰ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَلَامِ، قَالَ فَيَقُولُ: بُعْدًا لَكُنَّ وَسُحْقًا، فَعَنْكُنَّ كُنْتُ أُنَاضِلُ.
হযরত আনাস (রাযি.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) হেসে উঠলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি জান, কি নিয়ে হাসছি?’ আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। ‘বান্দা তাঁর রবকে সম্বোধন করে যা বলবে তা নিয়েই হাসছি। বলবে, হে আমার রব! আপনি কি জুলুম থেকে আমাকে আশ্রয় দেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। অতঃপর বান্দা বলবে, তাহলে আমি নিজের ওপর নিজেকে সাক্ষী মানা ব্যতীত অন্য কারও সাক্ষীকে বৈধতা দেব না। আল্লাহ বলবেন, তুমি নিজেই তোমার ওপর সাক্ষী হিসেবে আজ যথেষ্ট, আর রেকর্ডসংরক্ষণকারী ফেরেশতারাও সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। অতঃপর ব্যক্তির মুখ আটকে দেয়া হবে। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বলা হবে কথা বলো। তখন তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। তারপর তাকে এসব কথা শোনার সুযোগ দেয়া হবে। অতঃপর সে বলবে, তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমরা নিপাত যাও। তোমাদের জন্যই আমি শ্রম-মেহনত করতাম?’’
সাত. কখনো একাকী নিভৃতে থেকো না। কেননা একাকীত্ব যৌনবিষয়ে চিন্তা করা কারণ হতে পারে। আর তোমার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হও। যেমনÑ সৎকাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, নামায ইত্যাদি।
আট. ফাসেক ও অসৎপ্রবণ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করো; যারা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যারা যৌনউত্তেজক কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, গুনাহকে যারা তুচ্ছভাবে পেশ করে এবং সেটাকে কর্মে পরিণত করতে নির্ভয়। ওদেরকে ছেড়ে তুমি সৎলোকদের সঙ্গ নাও, যারা তোমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে তোমাকে সহায়তা দেবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
الرَّجُلُ عَلَىٰ دِيْنِ خَلِيْلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ.
‘মানুষ তার বন্ধুর দীনের ওপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও।’
নয়. যদি ধরে নিই যে দুর্বলতার এক মুহূর্তে তুমি পাপে নিপতিত হয়েছ তবে আমার পরামর্শ থাকবে তুমি আর ওদিকে যেও না, বরং ষুংত শক্তভাবে তওবা করো। আশা করি, তুমি ওই লোকদের দলভুক্ত হবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسْتَغْفَرُوْا۠ لِذُنُوْبِهِمْ١۪ وَ مَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللّٰهُ١۪۫ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ يَعْلَمُوْنَ۰۰۱۳۵
‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না।’
তুমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। হুঁশিয়ার থাকো, শয়তান যেন তোমার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তোমাকে যেন ওয়াসওয়াসা না দেয় যে, আল্লাহ তোমার গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না; কেননা আল্লাহ তওবাকারীর জন্য সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
আল-কুরআন, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৮০-৮১
আল-কুরআন, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৮৪
আল-কুরআন, সূরা আশ-শুআরা, ২৬:১৬৫Ñ১৬৬
আল-কুরআন, সূরা আন-নামল, ২৭:৫৪Ñ৫৮
আল-কুরআন, সূরা আল-আনকাবূত, ২৯:৩১
আবু দাউদ, আস-সুনান, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ৪, পৃ. ১৫৮, হাদীস: ৪৪৬২
আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৪১, হাদীস: ৪০১৮
আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৪১, হাদীস: ৪০১৯
আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, মুস্তফা আলবাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রুপ, কায়রো, মিসর, খ. ৪, পৃ. ৫৮, হাদীস: ১৪৫৭
আবু দাউদ, আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ১৫৯, হাদীস: ৪৪৬৩
আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৫৮, হাদীস: ১৪৫৬
মালিক ইবনে আনাস, আল-মুওয়াত্তা, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবনান (১৪০৬ হি. = ১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ৮২৫, হাদীস: ১১
আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২১ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ৮৩, হাদীস: ২৯১৪
আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ১০৬৫, হাদীস: ৩৫৮৪
আল-কুরআন, সূরা আয-যুমার, ৩৯:৫৩
(ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, বয়রুত, লেবনান (প্রথম সংস্করণ: ১৪২২ হি. = ২০০১ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১৩৬, হাদীস: ২৪৭৫; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৭৬Ñ৭৭, হাদীস: ৫৭
আল-কুরআন, সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২০১
(ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৭, পৃ. ৩, হাদীস: ৫০৬৫; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ১০১৮Ñ১০১৯, হাদীস: ১৪০০
আল-কুরআন, সূরা আন-নূর, ২৪:৩২
(ক) আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ১৮৪, হাদীস: ১৬৫৫; (খ) আন-নাসায়ী, আল-মুজতাবা মিনাস-সুনান = আস-সুনানুস সুগরা, মাকতাবুল মতবুআত আল-ইসলামিয়া, হলব, সিরিয়া, খ. ৬, পৃ. ৬১, হাদীস: ৩২১৮; (গ) ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৮৪১, হাদীস: ২৫১৮
(ক) আল-বুখারী, আস-সহীহ, খ. ৩, পৃ. ২৬, হাদীস: ১৯০৪; (খ) মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ২, পৃ. ৮০৬Ñ৮০৭, হাদীস: ১১৫১
আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা, ২:১৮৩
আল-কুরআন, সূরা আন-নুর, ২৪:৩০
আল-কুরআন, সূরা ফুসসিলাত, ৪১:২১-২১
মুসলিম, আস-সহীহ, খ. ৪, পৃ. ২২৮০, হাদীস: ২৯৬৯
আত-তিরমিযী, আল-জামি‘উল কবীর = আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৫৮৯, হাদীস: ২৩৭৮
আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৫