আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসেম্মলন ২০১৭
মাতা-পিতার ওপর ছেলে-মেয়ের হক
মাওলানা আবদুল বাসেত খাঁন সিরাজী
অদ্যকার চট্টলার ঐতিহ্যবাহী খালিস দীনী বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া কর্তৃক আয়োজিত দু’দিনব্যাপী বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনের আখেরী দিবসের শ্রদ্ধাভাজন সম্মানিত সভাপতি, মুআয্যায হযরাতে ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দীনী মাদ্রাসা থেকে আগত আমার আযীয তলাবা, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শুভাগত সম্মানিত সুধী!
সর্বপ্রথম আল্লাহ পাকের দরবারে আলী শানে লাখো কোটি শোকর, যে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত দয়া করে মায়া করে ভালোবেসে আমাদের হায়াতকে বৃদ্ধি করে আজকের এ মহতী জলসায় উপস্থিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, দুনিয়ার সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত করে দীনের নিসবতে, কুরআনে পাকের মহাব্বতে, জান্নাতী আয়োজনের মাঝে, সাম্প্রতিককালের শ্রেষ্ঠ মানুষ ওলামায়ে কেরামের সাথী হয়ে কুরআনী আলোচনার মাঝে আমাদেরকে তাশরীফ আনার তাওফীক দান করেছেন, সে আল্লাহ পাকের দরবারে মহাব্বতের সাথে উঁচু আওয়াজে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি আল-হামদুলিল্লাহ।
আপনারা গতকাল থেকে আজ এ পর্যন্ত দেশের প্রতিভাবান ওলামা মাশায়েখের কাছ থেকে মুক্ত ধারণার তথ্যসমৃদ্ধ, দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা শুনতে ছিলেন। মাহফিলের এ পর্যায়ে আমার মতো এক নগন্য ব্যক্তিকে আপনাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। আমি আল্লাহ পাকের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে কুরআনে পাক থেকে একটি আয়াত ও অসংখ্য হাদীস থেকে একটি হাদীসে মোবারক এর অংশ বিশেষ আপনাদের সামনে পাঠ করেছি। আল্লাহ যদি আমাকে তাওফীক দান করেন, তার দয়া যদি শামিলে হাল হয় তাহলে তেলাওয়াতকৃত আয়াত ও হাদীসকে সামনে রেখে নির্ধারিত সময়ে তথ্যসমৃদ্ধ, এখলাসপূর্ণ ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুগোপযোগী আলোচনা আপনাদের সামনে পেশ করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে তাওফীক দান করেন সে জন্য আপনাদের নিকট আমি দুআ কামনা করছি। আমি যে বিষয়ের ওপর আলোচনা করার জন্য মনস্থ করেছি তা হল ‘সন্তানের হক’। এ বিষয়টিকে নির্বাচন করার পেছনে সবচে বড় কারণ হলো দুটি।
১. দিন যত গড়াচ্ছে মুসলিম সমাজের মুসলমান নব্য এসমাজের সন্তানেরা তাদের পিতা মাতার নিকট থেকে তাদের প্রাপ্য হক্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আপনাদের প্রশ্ন জাগতে পারে যে আমার কথার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই, কারণ আমরা যখন ছোট ছিলাম। পিতা-মাতার ৭-৮-১০ জন সন্তান ছিলাম। আমাদের পিতা মাতারা আমাদের পেছনে ঐপরিমাণ সময়, ভালবাসা আর টাকা-পয়সা ব্যয় করতে সক্ষম হননি যে পরিমাণ সময়, ভালোবাসা, টাকা-পয়সা আর শিক্ষা বর্তমান কালের পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের দিয়ে থাকে। অথচ আপনি বলছেন, ইদানিংকালের পিতা মাতারা তাদের সন্তানদেরকে তাদের প্রাপ্য হক্ব থেকে বঞ্চিত করছে। আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে আমার আলোচনা শ্রবণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, বর্তমান কালের পিতা মাতারা তাদের সন্তানদের হক আদায় করছে কি না?
২. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিয়ে রাজধানী ঢাকা শহর সহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করার দ্বারা এ অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, আলোচনা কমিটির পক্ষ থেকে আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সে নির্ধারিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সন্তানের হক্ব। আমাকে একবার বলা হল হুযূর ইদানিং কালে সন্তানেরা পিতা-মাতার হক আদায় করেনা, সম্মান করে না, গুরুত্ব দেয় না। এজন্য পিতা-মাতার হক সম্পর্কে আলোচনা করবেন।
কিন্তু আমার যেটা মনে হয় সেটা হলো, আজকের সমাজে আমার সন্তান আমাকে সম্মান না করার পিছনে অনেক কারণ আছে। তারমধ্যে অন্যতম কারণ হলো পিতা- মাতার হকের আগে সন্তানের হক। সন্তানের হক হলো আগে, পিতা-মাতার হক হলো পরে। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার হক ৫টি আর পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক তার বাবা-মায়ের প্রতি ১৪ টি। তম্মধ্যে ৭ টি জীবিতাবস্থায় আর বাকী ৭টি মৃত্যুর পর। পিতা মাতা যদি তাদের সন্তানের ৫টি হক আদায় না করে তাহলে সন্তানও তার বাবা-মায়ের ১৪ টি হক আদায় করবেনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি সন্তানের হকগুলো ভালোভাবে আদায় করা হয় তাহলে সন্তান ও তার দায়িত্ব পালন করবে।
প্রথমেই একটি ছোট পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছি। পিতা মাতা বা সন্তানের হকগুলো কুরআন হাদীসের কোথাও ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ নেই; বরং বিক্ষিপ্তভাবে আল্লাহ পাক ও রাসূল সা. বর্ণনা করেছেন। তাই এর সংখ্যা নিয়ে আপনাদের সন্দেহ হতে পারে যে, কোথাও এ বিষয়গুলো ৫ এবং ১৪ এর কম বা বেশি করে আলোচনা করছে। আসলে মূল বিষয়গুলো একই, বরং কেউ এগুলোকে ভেঙে ভেঙে আলোচনা করেছেন যে কারণে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কেউ হয়তবা এক প্রকারের সাথে আরেক প্রকারকে মিলিয়ে আলোচনা করেছেন। যে কারণে সংখ্যা কমে গেছে। যা হোক মূল কথা একই।
আমি সন্তানের হকগুলো ৫ প্রকারে বিভক্ত করব। খুব ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন। হক জিনিসটা খুবই জটিল জিনিস। সময় স্বল্পতার কারণে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তাই খুব অল্প সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।
সন্তানের ৫ হকের মধ্যে প্রথম হকটি হলো তার উপযুক্ত মা নির্বাচনে ভুল না করা। যে পুরুষ বিয়ে করেনি বা করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তাকে খুবই সতর্কতার সাথে তার সন্তানের মা নির্বাচন করতে হবে। কারণ আপনি যাকে আজ নববধূর সাজে সাজিয়ে আপনার গৃহে আনছেন, সে নববধূই আগামীতে আপনার সন্তানের মা। এজন্য সন্তানের মা নির্বাচনে অবশ্যই সতর্কতা অবল¤ন করতে হবে। সুতরাং খুব চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যে, সে কি আমার সন্তানের আদর্শবান মা হওয়ার উপযুক্ত? সে কি ঘরে থাকতে পছন্দ করে? সে কি তার মা-বাবার কথা মান্য করে? সে কি ঘরে খাবার খেতে পছন্দ করে নাকি বাইরে গিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে? সে কি তার বাবা-মায়ের চোখ রাঙ্গানোকে ভয় পায়? মাকে চোখ রাঙ্গায়? সে কি ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসে না? পর্দা পুশিদাকে পছন্দ করেনা? যদি এমন কোন মেয়েকে বিয়ে করি তাহলে তার পেট থেকে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে সে আমাকে মানবে না, ইজ্জত করবে না এটাই স্বাভাবিক।
অল্প সময়ে মূল কথাগুলো বোঝাতে চাই। আমের মৌসুমে আম ব্যবসায়ীরা চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম আমদানী করে। অনেক প্রকারের আম আছে। যেমন ফজলী আম, ল্যাংড়া আম, আম্রপালী ইত্যাদি। উল্লিখিত আমগুলো খুবই মজাদার হয়ে থাকে। আরেক প্রকার আম আছে যার নাম আশ্বিনী আম। সেগুলো খেতে খুবই টক। কারও মনে স্বাদ জাগলো সে তার সন্তানকে ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু আম খাওয়াবে। এজন্য সে সুদূর চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমের চারা এনে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করল। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত সেটি ছিল আশ্বিনী আমের চারা। এখন আপনিই বলুন, এলোকটি কি এ গাছ থেকে কখনও ফজলী বা ল্যাংড়া আম খেতে পারবে? কখনও না। ঠিক তদ্রƒপভাবে যে রাস্তায় অবাধে বিচরণকারীনী বেহায়া, নির্লজ্জ নারীকে বিয়ে করে সুসন্তানের আশা করে সে কখনও সুসন্তান লাভ করতে পারে না।
অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বুকভরা ব্যথা নিয়ে জাতির সামনে কথাগুলো তুলে ধরছি। দিন যত গড়াচ্ছে, মুসলিম সমাজের ভিতরে অত্যন্ত সুকৌশলে নগ্নতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, উলঙ্গপনা প্রবেশ করানো হচ্ছে। ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। ইদানিংকালে কিছু মুসলিম যুবতী নারীকে টাইট স্কিন প্যান্ট, শার্ট পড়তে দেখা যায়। যা বিগত ১০ বছর পূর্বেও দেখা যেতনা। ১০ বছর পূর্বে রাজধানী ঢাকার কিছু নামী দামী অভিজাত জায়গা ব্যতীত অন্য কোথাও এগুলো ছিল না। আর এখন এ ভাইরাস চট্টগ্রামকে দখল করে বিভিন্ন জেলা শহরকে অতিক্রম করে, গ্রাম থেকে গ্রামে ঢুকে পড়েছে।
চিন্তার বিষয় হলো একজন মুসলিম যুবতী স্কিন প্যান্ট আর শার্ট পরিধান করে কিভাবে তার বাবা ভাই ভাগিনা, ভাতিজার সামনে দাঁড়ায়? আমারতো দৃঢ় বিশ্বাস যে নারীর সামান্যতম হায়া,লজ্জা-শরম আছে সে কখনও এ ধরনের নোংরা পোশাক পরিধান করে বাবা, ভাই, ভাগিনার সামনে দাড়াতে পারে না। যে নারী তার হায়া-শরম, মান সম্মান বিনা পয়সায় বিদেশে পাচার করছে সে এগুলো করতে পারে। এজন্য কথিত আছে, إذا فات الـحياء فافعل ما شئت অর্থাৎ তোমার লজ্জা যখন ফুরিয়ে যায় তখন তুমি যা খুশি তাই করতে পার। কিন্তু আমার রাসূল সা. বলেছেন, লজ্জা কিন্তু ফুরাবার বিষয় নয়। الـحياء شعبة من الإيمان অর্থাৎ লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ। যার লজ্জা নেই তার যেন ঈমানই নেই।
দুঃখের সাথে বলতে হয়, দিন যত গড়াচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে নগ্নতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, বেড়েই চলছে। আপনারা বলুন, আজকের সমাজের যে সমস্ত যুবতী নারীরা স্কিন প্যান্ট শার্ট পরিধান করে এদের দাদী-নানীরাও কি এ ধরনের স্কিন প্যান্ট, শার্ট পড়ত? অবশ্যই না। তাদের ১২ হাত শাড়ী থেকে যদি এক হাত কম হত তাহলে নানা-দাদাদের সাথে ঝগড়া করত। আপনারা এ বিষয়ে অবশ্যই অবগত থাকবেন। তারা বলত তুমি এ কোন ধরনের কাপড় নিয়ে এসেছ? আমি এটি পড়তে পারবো না। এটা দিয়ে আমার আচল হয়না, মাথা ঢাকে না, পীঠ ঢাকে না, এ কাপড় পড়ে আমি কিভাবে আমার ছেলের সামনে যাব? না না এ কাপড় আমি পরতে পারবো না। খুব ভাল করে বুঝবেন। যেই দাদী-নানী ১২ হাত থেকে কম মেনে নিতে পারেনি সেই দাদী আর নানীদের পরবর্তী প্রজন্ম নাতনীরা যদি স্কিন প্যান্ট আর শার্ট পরিধান করতে পারে এ নাতনীদের পেট থেকে যে সমস্ত সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে তারা স্কিন প্যান্টও পরতে চাইবে না; বরং উলঙ্গ থাকতে চাইবে।
সম্মানিত সূধী! এজন্য মুসলিম তরুণদের বলতে চাই যে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও, তোমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা কর আমরা কখনো প্যান্ট শার্ট পরিহিত নারীকে বিবাহ করবো না। কারণ এসমস্ত নারীদের পেট থেকে যারা জন্মগ্রহণ করবে তারা অর্ধ নগ্ন বা পূর্ণ নগ্ন থাকার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করার কোন সুযোগ থাকবে না। এজন্য আমাদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে সন্তানের প্রথম হকের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সন্তানের প্রথম হক তার মা নির্বাচনে ভুল না করা।
সম্মানিত সূধী! রাসূল সা. এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন,
تُنْكَحُ الْـمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِـمَالِـهَا وَلِـحَسَبِهَا وَجَمَالِـهَا وَلِدِيْنِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ، تَرِبَتْ يَدَاكَ – رواه البخاري في صحيحه (৭/৭) (رقم: ৫০৯০).
‘আরবের লোকেরা চার বস্তু দেখে বিয়ে করে, তাহলো, মাল, বংশ, সৌন্দর্য ও দীন।’
নবী (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা দীনকে প্রাধান্য দাও। যদি নারীর মাঝে দীন ব্যাতী রেখে সবগুলো দিক বিদ্যমান থাকে তাহলে খবরদার তোমরা ঐ নারীর কাছেও যেও না। যদি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাদের কাছে যাও তাহলে আখেরাতে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পূর্বে দুনিয়াতেই তোমাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
যদি রাসূলের কথাকে উপেক্ষা করে এ জাতীয় নারীকে বিয়ে কর তাহলে বিয়ের দু’মাসের মধ্যেই তেল পড়া আর পানি পড়ার জন্য লাইন ধরতে হবে। আমার জানা মতে একজন শত শত কোটি কোটি টাকার মালিক। খুব শখ করে একমাত্র ছেলেকে বিবাহ করিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই পুত্রবধূর অশালীনভাবে চলা ফেরার কারণে পুরো পরিবারের শান্তি বিনষ্ট হয়ে গেছে। অশান্তির দাবানল জ্বলছে। এজন্য আবারও বলছি সন্তানের প্রথম হক তার মা নির্বাচনে ভুল না করা।
সন্তানের দ্বিতীয় হক হলো আকীকা করা এবং সুন্দর নাম রাখা। আল-হামদুলিল্লাহ, আমাদের সমাজে আকীকা খুব ভালো করে পালন করা হয়, তার কারণ হলো এটা একটি লাভ জনক হক। তিন লক্ষ টাকা ব্যয় করলে চার লক্ষ টাকা আসে, তাছাড়া এটা বর্তমান সমাজে একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, দীনের যে কোন কাজ যদি কেউ ফ্যাশন হিসেবে করে আল্লাহ তাআলার নিকট তার কোন মূল্য নেই। চাই তা হজ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতই হোক না কেন।
সুতরাং দীনী কোন কাজ করতে হলে অবশ্যই সেটা রাসূল (সা.) এ তরীকাতেই করতে হবে। অন্যথায় সেটা ইসলামের কাজ হতে পারে না।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো সন্তানের সুন্দর নাম রাখা। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ আমাদের সন্তানেরা এ হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইদানিংকালে দেখা যায়, আধুনিক বাবা আধুনিকা মা তাদের সন্তান জন্মের ৫-৭ মাস আগ থেকেই অত্যাধুনিক নাম নির্বাচন করতে বেরিয়ে পড়ে। এজন্য আপনারা জেনে থাকবেন যে আধুনিক মা বাবা তাদের মেয়ের নাম রাখে তমা, ইতি, প্রিয়াঙ্কা, ইত্যাদি।
আমার দূর সম্পর্কীয় এক মামার সাথে পরিচয় হওয়ার পর তিনি তার দু’ছেলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি সৌজন্য মূলক কথা বলতে গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা কেমন আছ ভাইয়া? তারা বলল ভালো ভাইয়া।
একজনকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কী ভাইয়া? সে বললো রুজবেল্ট। অপরজনকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কী? সে বলল আমার নাম রিগেল। আমি তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম তারা যেন কোন যমানার পয়গাম্বর? তারা বললো, না না ভাইয়া পয়গাম্বর নয়। আমি বললাম, তাহলে কী? তারা বললো, রুজবেল্ট আর রিগেন হলো আমেরিকান দুইজন প্রেসিডেন্টের নাম। আমি বললাম, সর্বনাশ, আমেরিকার দুইজন প্রেসিডেন্ট এক বাসাতেই। এরপর জিজেস করলাম, রুজবেল্ট আর রিগেন এরা উভয়ে বোধ হয় মুসলমান ছিল তাই না? তারা বললো খ্রিস্টান ছিল। আমি বললাম, তারা যদি খ্রিস্টান হয়ে থাকে আর ওদের অনুকরণে তোমাদের নাম। তাহলে তোমরা কী? তৎক্ষণাৎ পাশে অবস্থানরত মামার চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। হয়তোবা ভাবছিলেন পরিচয়টা না হলেই ভালো হত। তড়িঘড়ি করে বললেন, এগুলো তাদের আসল নাম নয়। একথা বলে তিনি দুটি ইসলামী নাম বললেন। নাম দুটো আসলেই সুন্দর। আমি বললাম, মামা তাদের ইসলামীক নামগুলো খোদাই করে সযতেœ আলমারীর ভিতর রেখে দিবেন যাতে নষ্ট না হয়। আমার মামার মতো এরকম হাজারও মামা আছে যাদের অবস্থা এরকম করুণ। ইদানিংকালে দেখা যায়, আধুনিক বাবা মা সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে একাধিক নাম ব্যবহার করে থাকে। ইসলাম এটাকে নিষেধ করেনা। কিন্তু একাধিক নাম রাখার ক্ষেত্রে মুসলমান যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না। অর্থাৎ তারা যে নাম রাখে এর দ্বারা বোঝার উপায় থাকে না সে কি মুসলিম নাকি অমুসলিম। মুসলমান হিসেবেও একটি নাম রাখে ডায়রিতে জন্ম তারিখের পাশে লিখে রাখার জন্য। কিন্তু তা কখনও ব্যবহার করে না। অবস্থা আজ এরকম হয়েছে যে, মুসলমানদের পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে ইসলামের কোন নিদর্শন নেই, তাদের চেহারার মধ্যে কোন নিদর্শন নেই, নামের মধ্যেও যদি কোন নিদর্শন না থাকে তাহলে অপরিচিত এলাকায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে কি ইসলামের নিয়মানুসারে দাফন করা হবে নাকি চিতায় নিয়ে জ্বালানো হবে?
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. লিখেছেন, একজন কোটিপতি ল্যান্ড প্রোপার্টির মালিক ট্রেন যোগে সফর করার মনস্থ করল। একাকী সফর করাটা কঠিন বলে একজন খাদেমকে সঙ্গে নিল। খাদেমসহ ষ্টেশনে পৌছার পর নিজের জন্য ফার্স্ট ক্লাশে সিট বুকিং দিল আর খাদেমের জন্য দিল থার্ড ক্লাশে। খাদেম সমস্ত মালপত্র মালিকের অঢ়ৎধঃসবহঃ (কামরা) এ নিয়ে আসার পর মালিক বললো, তোর জন্য ফার্স্ট ক্লাশে কোন সিট বুকিং দেয়াহ য়নি। থার্ড ক্লাশের অমুক সিট বুকিং দেওয়া হয়েছে, তুই ওইখানে যা। আর শোন, আমি অমুক স্টেশনে নামব। ওই স্টেশনে পৌঁছার পূর্বেই আমার নিকট চলে আসবি। বেচারা খাদেম নিজের আসন গ্রহণ করার পর মুহূর্তেই নিদ্রায় বিভোর হয়ে যায়। ওদিকে মালিকের শুরু হয়ে যায় ডায়রিয়া। অতিরিক্ত পায়খানা হওয়ার কারণে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। উক্ত অঢ়ৎধঃ সবহঃ-এর লোকজন ভাবলো, লোকটির যে অবস্থা গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বেই হয়ত বা মারা যেতে পারে। এজন্য তাকে পূর্বের স্টেশনে নামিয়ে দেয়া হয়। উক্ত স্টেশনে যারা নামে তারা যে যার গন্তব্যে চলে যায়। কিন্তু ওই কোটিপতি ল্যান্ড প্রোপার্টির মালিক অধিক দুর্বলতার কারণে কোথাও যেতে পারেনি। একজন হিন্দু কুলি তার নিকট এগিয়ে আসে। কিন্তু সেবা শশ্রুষা করার আগে ভাবল লোকটি আমার স্বধর্মী কিনা জানা দরকার। কারণ ভিন্ন ধর্মীয় হলে কথা। আর মুসলমান হলে তো কোন কথাই নেয়। কারণ সে জাত শত্রু। তাই সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কিন্তু কুলি শুনতে পারল না, পরবর্তীতে মুখের নিকট কান নিয়ে শুনতে পেল আবদুর রহমান। তৎক্ষণাৎ সে স্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেল। ইতিমধ্যে লোকটি মৃত্যুবরণ করে। একে একে হিন্দু মুসলিম সবাই সেখানে একত্রিত হয় তার শেষ কার্য সমাধা করার জন্য হিন্দু মুসলিম উভয়ের মাঝে দ্বন্ধ সৃষ্টি হলো। হিন্দুরা বললো, তাকে চিতায় জ¦ালানো হবে। কারণ সে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মৃত্যুবরণ করেছে। মুসলমানরা বললো, তাকে কবরস্থান এ দাফন করা হবে। কারণ সে এখানকার লোক নয়। সে একজন মুসাফির ভিন্ন জায়গা থেকে এসে মৃত্যুবরণ করেছে। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কোন বান্দাকে সন্দেহ প্রবণ হয়ে চিতায় জ্বালানো যায় না। ঐ হিন্দু কুলি তাদের এ হাঙ্গামা দেখে এগিয়ে আসে। তাদের কথা শুনার পর সে বলে মৃতু্যুবরণ করার পূর্বে আমি তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে জবাবে বলছিল আবদুর রহমান। আর আবদুর রহমান কোন হিন্দু লোকের নাম হতে পারে না। শুধুমাত্র মুসলমানেরই এ রকম নাম হতে পারে। এ কথা শুনার পর মুসলমানরা তার লাশ কবর স্থানে নিয়ে দাফন করে।
প্রিয় সুধী! লোকটির নামের মাধ্যমেই শুধু বোঝা গিয়েছিল সে একজন মুসলমান। যদি তার নাম জানা না যেত তাহলে তার লাশকে চিতার আগুন থেকে রক্ষার দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। এজন্য রাসূলে করীম (সা.) ও ওলামায়ে কেরাম ইসলামী নাম রাখার জন্য বলেছেন।
সবচেয়ে সুন্দর নাম হলো, আবদুল্লাহ, তারপর আবদুর রহমান, আবদুর রহীম। আল্লাহর সিফাতী নামের পূর্বে عبد শব্দ বৃদ্ধি করে দিলেই সুন্দর নাম হয়ে যাবে। আউলিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরামের নাম সুন্দর।
আমি আধুনিক কালের মা বাবাকে বলতে চাই, যদি তোমরা সুন্দর নাম খুঁজে না পাও, তাহলে বাবার নামেই সন্তানের নাম রাখ। আধুনিক বন্ধুগণ হয়ত বলতে পারেন, পিতা-পুত্রের একই নাম কিভাবে রাখা যায়? আমি তাদেরকে বলতে চাই, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এরকম নামের প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা বলতে পারে এটাতো ১৪০০ বছর পূর্বের বিরতী। তাহলে আমি বলব তুমি কত বড় আধুনিক হয়েছ? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ। তার ছেলের নামও বুশ। বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল তারকা নেইমার তার ছেলের নামও নেইমার। সিনিয়র নেইমার ও জুনিয়র নেইমার। সুতরাং প্রয়োজন বোঝে পিতা-পুত্রের একই নাম রাখ। তারপরও এমন নাম রেখ না যা দ্বারা হিন্দু-মুসলিম পার্থক্য করা যায় না।
সন্তানের তৃতীয় হক হলো, সন্তানকে নীতি, নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও ইসলামী শিক্ষা প্রদান করা। আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় দিন যত গড়াচ্ছে সন্তান তার পিতা-মাতা থেকে এ হকটি ভালোভাবে পাচ্ছে না। আপনাদের একটি রিপোর্ট জানাই, আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর পূর্বের শিক্ষিত লোকেরা আমাদেরকে বলতেন তোমরা তোমাদের সন্তানকে ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে স্কুলে দিও না। কারণ এখনও তার মস্তিস্ক পরিপক্ক হয়নি। যদি এখনই তোমার সন্তানকে স্কুলে পাঠাও তাহলে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তখন আমরা দেখেছি, সন্তানের বয়স চার হলেই মা বাবা তাদের সন্তানকে অযু করিয়ে হাতে নূরাণী কায়েদা, আমপারা ধরিয়ে দিয়ে মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনের নিকট পাঠিয়ে দিত। বাচ্চারা সেখানেই কুরআন তেলাওয়াত, দুআ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী, আল্লাহ- রাসূল চিনে ফেলত। ইসলামী আচার-ব্যবহারের সাথে নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে নিত। আর বর্তমান কালের তথাকথিত শিক্ষিতরা আমাদেরকে বলে, দেখ মানুষের আয়ু কমে গেছে। তাই তুমি যদি তোমার সন্তানকে ছয় বছর বসিয়ে রাখ তাহলে তো সে বড় ডিগ্রিধারী হতে পারবে না। কারণ চঝঈ, ঔঝঈ, ঝঝঈ, ঐঝঈ, ইইঅ, গঅ আরও কত কি হতে হবে। তাই তাকে সাড়ে তিন বছর বয়সেই স্কুলে পাঠিয়ে দাও। এখন সমস্যা হলো, এত ছোট ছেলে কি সব বুঝে নিতে পারবে? সে তো স্কুলে যেতে চাইবে না। উত্তরে তারা বলবে, সমস্যা কী? ছেলের মা তো আছে। তাকে সহকারে পাঠিয়ে দাও।
এভাবে তারা মুসলমানদের সন্তানদেরকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। আর তাদের বড় অভিভাবক তার মাকে রাস্তায় বের করে তাকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সম্মানিত সুধী! আমাদের দেশে কিছু জ্ঞানপাপী লোক আছে, আমাদের কথা শুনলে তাদের মধ্যে সাইক্লোন শুরু হয়ে যায়। তারা আমাদের ব্যাপারে কটূক্তি করে বলে, মোল্লারা নাকি এদেশে অত্যুক্তি করে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, যে প্রকৃত আলেম হয় সে কখনও অতুক্তি করতে পারে না। কারণ আমি জানি, বাংলাদেশের গোয়েন্দা যদি রিপোর্ট নাও করে আমার এ আলোচনা আল্লাহ তাআলা রেকর্ড করছেন,
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ۰۰۱۸ {ق: ১৮}
আমার বক্তব্য যদি অবাস্তব বা অসত্য হয় দুনিয়ার সরকারের কাছে জবাব দিহি করতে না হলেও আসমানের মালিকের কাছ থেকে মাফ পাওয়া যাবে না। এজন্য আমরা কটূক্তি করা শিখিনি আমরা বাজে বা অতিরঞ্জিত কথা বলতে শিখিনি।
তবে আমাদের কথা তোমাদের বুঝে না আসার কারণ হলো, আমাদের ও তোমাদের বিষয় ভিন্ন। ডাক্তারের থিওরি যেমন প্রকৌশলী বোঝে না, আবার প্রকৌশলীর থিওরি ডাক্তার বোঝে না। তদ্রƒপ আমাদের থিওরিও তোমাদের বুঝে আসবে না।
আমাদের দেশের আইন হলো দুটি সন্তান নেয়া তবে সরকার এ ব্যাপারে বাধ্য করে না। চাই আপনি ৫-১০ নেন,এতে কোন হস্তক্ষেপ করে না।
ধরে নিন কারও তিনটি সন্তান আছে। প্রত্যেকটি সন্তানকে স্কুলে যাওয়ার অভ্যস করতে অন্তত চার বছর লাগে। তাহলে এ তিনটি সন্তানকে স্কুলে যাওয়ার অভ্যস করতে একজন মায়ের টানা ১২ বছর লাগবে।
এখন আপনারাই বলুন যে মা টানা ১২ বছর বাইরে গিয়ে অভ্যস্ত সে মাকে কি ১২ বছর পর ঘরে রাখা সম্ভব হবে? কুরআনের বাণী:
يٰنِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّ قُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًاۚ۰۰۳۲ {الأحزاب: ৩২}
অন্যত্র বলা হয়েছে,
وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ ؕ ۰۰۳۳ {الأحزاب: ৩৩}
আসমানের বাণী দ্বারা নবীর স্ত্রীদের বলা হলো, তোমাদের অবস্থানস্থল হলো ঘর। তোমাদের সব কাজ হলো ঘরে। আল্লাহ বললেন, নারীদেরকে ঘরে থাকতে আর আমরা তাদের কাজ নিচ্ছি ঘরের বাইরে। আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কখনও শান্তির আশা করা যায় না।
সম্মানিত সুধী! সাড়ে তিন বছর বয়সে সন্তানকে লেখা-পড়ার জন্য ইংলিশ মিডিয়াম কেজি ও প্রি ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করা এগুলো খ্রিস্টানদের চক্রান্ত। আপনাদের কাছে আমার ঈমানী প্রশ্ন।
আপনার সন্তানকে প্রাইমারি, হাই স্কুল থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সকল ডিগ্রি অর্জন করালেন। এখন আপনিই বলুন, আপনার মেয়ে কি দুআয়ে কুনুত, দুআয়ে মাছুরা শিখার সুযোগ পেয়েছে। এ সন্তান দেশের সব ডিগ্রি অর্জন করে বিদেশের ডিগ্রি অর্জন করার পর দেশে ফেরার সময় নাস্তিক হয়ে ফিরবে। কারণ, সেই সাড়ে তিন বছর থেকে প্রায় ৩২ বছর পর্যন্ত এ সময়টাতে তাকে তো ইসলামী শিক্ষা দেয়াই হয়নি। তথাকথিত মা বাবাকে বলে যাই, জেনে রাখুন আল্লাহর বাণী:
رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيْنِ اَضَلّٰنَا مِنَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ ۰۰۲۹ {فصلت: ২৯}
আপনার সন্তান যদি জাহান্নামী হয় তখন সে আল্লাহর নিকট আরজ করবে হে আল্লাহ! আজ এ দুর্দিনে আমার মা বাবাকে আমার সামনে উপস্থিত করেন। আমার মা বাবা আমাকে জাগতিক শিক্ষা অর্জন করার জন্য দেশ থেকে বিদেশে প্রেরণ করেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু আপনাকে চেনার জন্য কখনও মাদরাসা-মাসজিদে পাঠাইনি।
সন্তান বলবে, আমার মা বাবাকে আমার সামনে উপস্থিত করো, আমি তাদেরকে পা দ্বারা পিষ্ট করব। কারণ,তাদের জন্যই আজ আমাকে জাহান্নামে যেতে হচ্ছে।
এজন্য আজ অভিভাবকদের বলতে চাই, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে পাগল হয়ে গেছ। পড়াতে পার আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ইইঅ, গইঅ, গইইঝ করিয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়ে বিজাতিদের সাথে প্রতিযোগিতার গোল্ড মেডেল পেয়ে নীতি-নৈতিকতা ভুলে গিয়ে ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে চলে গেলে চলবে না। এরপরও যদি কোন সন্তানকে নীতি- নৈতিকতা, শিষ্টাচার শিক্ষা না দাও তাহলে দেখ তোমার ঘরে যেন ঐশির মত সন্তানের জন্ম না হয়। মনে রাখবেন আপনার সন্তানকে জাগতিক শিক্ষা দেয়ার পূর্বে যেন ইসলামী শিক্ষা দেয়া হয়।
সন্তানের চতুর্থ হক হলো, সন্তানকে স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে বড় করে তোলার চেষ্টা করা। এ স্নেহের মধ্যে কিন্তু সন্তানকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর বিষয়টিও আছে। দুঃখের সাথে বলতে হয় আজকের আধুনিকা মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চায়না। আমি সে মাকে প্রশ্ন করতে চাই। যখন এ সন্তান তোমার গর্ভে ছিল না তখন তোমার স্তনে দুধ ছিল না। যেহেতু তোমার গর্ভে সন্তান আসার পর তোমার স্তনে দুধ এসেছে। বুঝতে হবে এটা তোমার সন্তানের হক্ব। এরপরও যদি তুমি তোমার সন্তানকে বুকের দুধ না খাইয়ে ফাওডার খাওয়াও। তাহলে জেনে রেখ বৃদ্ধা বয়সে তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে। সুতরাং তুমি তোমার দায়িত্ব ভালোভাবে আদায় কর, তা না হলে পরবর্তী তোমাকে তার কুফল ভোগ করতে হবে। তখন তুমি হারে হারে টের পাবে।
সন্তানের পঞ্চম হক হলো প্রাপ্তবয়স্ক হলে বুঝে শুনে সন্তানকে বিয়ে করিয়ে দেয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ হকগুলো ভালোভাবে আদায় করার তওফীক দান করুন। আমীন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَاؕ ۰۰۱۳۲
‘তুমি তোমার পরিবারকে নামায আদায়ের হুকুম করো এবং এর ওপর দৃঢ় থাক।’ [সুরা তাহা, ২০:১৩২]
অনুলিখন: মুহাম্মদ আবদুর রউফ
দাওরায়ে হাদীস, জামিয়া পটিয়া ২০১৭