জামেয়া ওয়েবসাইট

মঙ্গলবার-১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি-৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নিতে মিয়ানমার আগ্রহী নয়

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

সংখ্যা: নভেম্বর ২০১৭

১৯৬২ সাল থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা তাঁদের স্বদেশ আরাকান রাজ্যে ফিরে যেতে পারেননি। নাগরিক অধিকার নিয়ে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবাসনের কোন কার্যকর উদ্যোগ মিয়ানমার সরকার নেয়নি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের চাপে লোক দেখানো কিছু ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হয়। সময়ক্ষেপণ মিয়ানমারের সামরিক জেনারেলদের কৌশল। আগষ্ট থেকে অক্টোবর’১৭ পর্যন্ত ৬লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নর নারী, শিশু ও বৃদ্ধ কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো প্রতিদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লোক আসছে। আগে থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আছে ৪লাখ। প্রায় ১০ লাখ মানুষের বোঝা বহনে বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন রোহিঙ্গাদের কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করতে হবে।

নির্মম নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা ৭১হাজার ৫০০ একর জমির ফসল ফেলে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এসব জমির ধান সরকারী কৃষি বিভাগের লোকেরা কেটে নিয়ে গেছে এবং জমি বাজেয়াপ্ত করেছে। সরকার মেশিনের সাহায্যে এসব জমি আগামীতে চাষাবাদ করবে এবং কর্তিত ফসল সরকারি গুদামে মজুদ করবে। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর মগ দুর্বৃত্তগণ জ্বালিয়ে দিয়েছে। গবাদি পশু, নগদ অর্থ, সোনাদানা, দোকান পাট লুট করে নিয়েছে। গত কালের বিত্তশালী পরিবার আজ নিঃস্ব ফকির। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে বলে মনে হয় না; নিলেও তারা কোথায় দাঁড়াবেন। বড়জোর এক উদ্বাস্তু শিবির থেকে আরেক উদ্বাস্তু শিবিরে স্থানান্তরিত হবেন মাত্র।

২০১২ সালের সহিংসতায় যাদের বাড়ীঘর ভস্মিভূত হয়ে গেছে মিয়ানমার সরকার তাদের নতুন করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে দেয়নি। তাঁদের রাখা হয়েছে বাস্তুচ্যুত ক্যাম্পে। এদের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলো বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা ও দেখভাল করে আসছে। মিয়ানমার সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে এখন থেকে এসব ক্যাম্পে সরকার আর কোন সহযোগিতা দেবে না।

রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত জমিতে সরকারের সহযোগিতায় মিয়ানমারের কব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন দি ইউনিয়ন অব ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (টঋঈঈও) এক বিশাল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এসব অর্থ চিকিৎসা, মৎস্য, তথ্য-জনসংযোগ, গবাদি পশু, পর্যটন, অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করা হবে।

উপর্যুক্ত ঘটনা পরম্পরা একথা প্রমাণ করে যে, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে আরাকানে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগ্রহী নয়। জাতিসংঘের ভাষ্য মতে রোহিঙ্গা বিতাড়নে প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে অং সান সু চি’র। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবি ও প্রচারণা জোরদার করে আরও দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাববে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ