জামেয়া ওয়েবসাইট

সোমবার-৯ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাতা-পিতার সেবাই ছেলে-মেয়ের মুক্তির সোপান

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসেম্মলন ২০১৭

আল্লামা মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া (দা. বা.)

মুফতী, মুহাদ্দিস ও শিক্ষাপরিচালক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম

الْـحَمْدُ للهِ نَحْمَدُهُ، وَنَسْتَعِيْنُهُ، وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلْهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ، ونَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَآلِهِ وَأَصْحَابِهِ، وَبَارِكْ وَسَلِّمْ.

أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، [وَقَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِيَّاهُ وَ بِالْوَالِدَيْنِ۠ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا۰۰۲۳ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًاؕ۰۰۲۴] {الإسراء: ২৩ – ২৪}.

أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُوْلَ الله, مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ:  أُمَّكَ قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: ثُمَّ أَبَاكَ، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: الْأَقْرَبَ فَالأَقْرَبَ.

আল্লাহ পাকের অসংখ্য শুকরিয়া, আমাদের মত নগণ্য লোকদেরকে দীনী পরিবেশ এনেছেন।

যদি মন্দির থেকে লোক জাহান্নামে যায় তা আশ্চর্যের বিষয় নয়। এর জন্য কেউ আশ্চর্য হবে না। মসজিদ মাদরাসায় জীবন কাটানোর পরেও যদি জাহান্নামে যেতে হয় সেটাই বড় আশ্চর্যের বিষয়, ফাসিক, ফাজির শরাবী জাহান্নামে গেলে সেটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। আমরা দাঁড়ি-টুপি নিয়ে জাহান্নামে গেলে সেটা আশ্চর্যের বিষয়, সাধারণ লোক জাহান্নামে গেলে সেটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। আমরা বক্তা হয়ে জাহান্নামে গেলে সেটা বড় আশ্চর্যের বিষয়।

হাদীস শরীফে আছে, রাসুল (সা.) মেরাজে গেছেন, যাওয়ার পর সেখানে দেখলেন, কতগুলো লোককে জিহ্বায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা? বললেন এরা আপনার উম্মতের সেসব খতীব (বক্তা) যারা মানুষকে ওয়ায করতেন কিন্তু নিজে আমল করতেন না।

সেজন্য পরের ফিকির (চিন্তা) ছেড়ে নিজের ফিকির করা দরকার, অপরকে ওয়ায করার সময় নিজেকে ওয়ায করার ফিকির (চিন্তা) করা জরুরি, অপরকে ওয়ায করার সময় নিজেকে ওয়ায করা প্রয়োজন। তাই আমরা (বক্তারা) নিজেকে ওয়ায করার চেষ্টা করি।

আমরা যারা ওয়ায শুনতে এসেছি, একটা জিনিস লক্ষ করি, কিছু জিনিস আছে যার মজা বেশি, কিন্তু ভিটামিন কম। আর কিছু জিনিসের মজা অল্প হলেও ভিটামিন বেশি। আম খেতে খুব মজা কিন্তু অনেক সময় পেট নষ্ট করে। অপর দিকে সাদাসিধে (সাধারণ) খানার মজা একটু কম হলেও ভিটামিন বেশি।

দেখা যায় যে, মানুষ ওয়াযে মজার চিন্তা করে, কার ওয়াযে মজা বেশি সেটা চিন্তা করে, প্রবাদে আছে মজা খেলে সাজা পায়, অনেকে বলে অমুকের ওয়ায হলে শুনব, অমুকের ওয়ায হলে শুনব না। এটা ওয়ায শোনা নয়, বক্তারা ওয়াযে যা বলে, তা আল্লাহ রাসুলের কথা বলে, সে জন্য যে বক্তাই ওয়ায করুন না কেন আমরা তা শুনব, তখনই বলা হবে আমি আল্লাহ-রাসুলের কথা শুনছি অমুকের ওয়ায শুনব অমুকের ওয়ায শুনব না সে রকম কেন? এটা খুব খারাপ কথা (ওয়ায শেষ করার সময়) একজন বক্তা ওয়ায করলেন পুরো মাঠ ভরে গেল তিনি উঠার সাথে সাথেই সবাই চলে গেল এটার দ্বারা উঠে যাওয়ার কারণে আপনি পরবর্তী বক্তাকে অপমান করলেন, এক বক্তার ওয়ায শুনে অপর বক্তাকে অপমান করলেন। এ ওয়ায শুনে কি লাভ হবে? একজন আলেমকে অপমান করে, এখানে ওয়ায শোনার জন্য এসেছেন না স্বাদ নেওয়ার জন্য এসেছেন? অমুকের বয়ান কখন? অমুকের বয়ান কখন? সেটা কী জন্য? ওয়াযের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য নাকি ওয়ায শুনে কুরআন-হাদীসের ওপর আমল করার জন্য? তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বয়ান করার সময় কারো নাম উল্লেখ করে? হযরত বোয়ালভী সাহেব (আলী আহমদ) হুযুর ভাঙা গলায় কথা বলতেন, তাতে মানুষ হেদায়ত হয়? যারা কণ্ঠ দিয়ে ওয়ায করে তারা কি হেদায়ত হয়েছে? এখানে কণ্ঠ শোনার জন্য এসেছেন নাকি হেদায়ত হওয়ার জন্য এসেছেন? তাই আমরা ওয়াযে আসব আর ওয়াযের আদব রক্ষা করব। আমাদের দ্বারা যেন কোনো আলেমের অবমাননা না হয়, উঠতে হলে আস্তে আস্তে উঠব যাতে মানুষ বুঝতে না পারে, আমি এর ওয়ায শোনার জন্য এসেছি, এরপর আর কারো ওয়ায শুনবো না, এরকম আর যাতে না হয়।

আমাকে বিষয় দেওয়া হয়েছে, পিতা-মাতার হক, আল্লাহর মা-বাবার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা নিজের নামের পরই মা বাবার কথা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন,

وَقَضٰى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِيَّاهُ وَ بِالْوَالِدَيْنِ۠ اِحْسَانًا١ؕ اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا۰۰۲۳

‘আপনার রব আদেশ করেছেন তারা যেন আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত না করে, আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি বার্ধ্যকে উপনীত হয় তোমার জীবদ্দশায় তবে তাদেরকে উহ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা।’

আমাদের দেশের কিছু ভাইয়েরা ওরশের জন্য গরু নিয়ে টানাটানি করে এবং বিভিন্ন মাযারে গিয়ে তারা কিছু দেয়। কিন্তু পিতার জন্য একটি মুরগিও যবেহ করে না। এখন তোমার জন্য তোমার পিতা বড় নাকি বড় বুযুর্গ নাকি অন্য কেউ? তোমার জন্য তোমার পিতাই বড় বুযুর্গ। রাসুল (সা.) বলেছেন,

ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ، لَا شَكَّ فِيْهِنَّ.

‘তিন ধরণের দোয়া আল্লাহর কাছে গুলির মতো পৌঁছে যায়:

প্রথমত (মযলুমের দোয়া) তুমি কাউকে যুলুম করেছ, সে যদি বদদোয়া করে সেটা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাবে। কবি বলেন,

بترس از مظلوماں كہ ہنگام دعا كردن

اجابت از در حق بہر استقبال من آيد

অর্থ: অন্য দোয়া আমার কাছে পাঠাতে হয়। কিন্ত মযলুমের দোয়া আল্লাহ ফেরেস্তা পাঠিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায়।

আল্লাহর পক্ষ থেকে কবুলিয়্যাত (গ্রহণযোগ্যতা) মযলুমের দোয়াকে ইস্তেকবাল (স্বাগতম) জানানোর জন্য আসে। সেই জন্য আমি খেয়াল করব,আমি কারো প্রতি যুলুম করেছি কিনা? প্রয়োজনে আমি মযলুম হবো। কিন্তু যালেম যেন না হই। হাদীসে আছে,

الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘কিয়ামতের দিন যুলুম (অত্যাচার) অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’

রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কিয়ামতের ময়দানে পুলসিরাতে মানুষের আলোর প্রয়োজন পড়বে যেসব মানুষ অন্যের ওপর যুলুম করেছে তারা আলো পাবে না। অন্ধকারে থাকবে। পুলসিরাত জাহান্নামের অন্ধকারে অন্ধকার হবে। যাদের আমলের আলো থাকবে, ঈমানের আলো থাকবে, তারা পার হয়ে যাবে, যাদের আলো থাকবে না তাদের জন্য অন্ধকার হবে, তারা কর্তিত হয়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে। কিয়ামতের দিন সব স্থানে যুলুম অন্ধকার হবে, ফলে যালেম (অত্যাচারকারী) জাহান্নামে যাবে। যুলুম অনেক বড় পাপ, তাই কেউ অন্য কারো ওপর যুলুম করবে না। হাদীস শরীফে আছে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের ময়দানে জালিম থেকে মযলুমের বদলা নেবেন। যেমনÑ দুনিয়ায় যদি কোন শিংঅলা ছাগল, শিং ছাড়া ছাগলকে শিং মারে, আর কোন সবল ছাগল কোন দুর্বল ছাগলকে লড়াই করে পরাজিত করে, কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ উভয় ছাগল কে ডাকবেন। আর যে ছাগল দুনিয়াতে শিং ছাড়া ও দুর্বল ছিল, সেই ছাগলকে আল্লাহ শিংঅলা ও সবল হিসেবে তৈরি করবেন, দুনিয়ায় যে ছাগলের ওপর যুলুম করা হয়েছিল, তার দ্বারা যুলুমকারী ছাগল থেকে বদলা নেবেন, তারপর উভয়কে বলবেন, وَكُنْتُمْ تُرَابًا ۪ۙ۰۰۳۵ (তোমরা মাটি হয়ে যাও)  এভাবে একজন অপরজনকে যুলুম করলে তার বদলা নেওয়া হবে। আর মানুষ যদি যুলুম করে তার বদলা না নিয়ে কি আল্লাহ ছেড়ে দিবেন? কখনো ছাড়বেন না। সেই জন্য আমরা যুলুম থেকে বাঁচার চেষ্টা করব।

হযরত ওসমান (রাযি.) নিজের কোন গোলামের ওপর কোন কাজে রাগান্বিত হয়ে তার কান টেনে দিলেন। কান টেনে দেওয়ার পর তিনি চিন্তা করছেন, ভুল করলাম, ওকে কান টেনে দেওয়াটা ভালো হয়নি, তিনি গোলাম কে ডেকে বললেন, তুমি আমার কান টেনে দাও, গোলাম বলল, আমি আপনার কান টানব? আপনিতো আমার মালিক, তিনি বললেন, একথা তো এখন বলছ, দুনিয়াতে যদি দশ বিশজনের সামনে আমার কান টেনে প্রতিশোধ না নাও। তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাকে দিয়ে আমার কান টানাবেন।

হাদীস শরীফে আরও আছে, কারো পাওনা দাওনা থাকলে দুনিয়ায় পরিশোধ করে যাও, যদি দুনিয়ায় পরিশোধ না করে যাও কিয়ামতের ময়দানে তার বদলা হিসাবে সওয়াব দিতে হবে। অন্য হাদীসে আছে কিয়ামতের ময়দানে একজন মানুষ আসবে উহুদ পাহাড় পরিমাণ সওয়াব নিয়ে, তাতে থাকবে সে হজ করেছে বারবার, রোযা রেখেছে বারবার। আরো থাকবে বিভিন্ন আমলের স্তূপ, কিন্তু কিছু মানুষ আসবে আল্লাহর কাছে তার নামে নালিশ করবে, তারা এক একজন বলবে,

وَضَرَبَ هَذَا، وَشَتَمَ هَذَا، وَسَبَّ هَذَا …

(সে কাউকে মেরেছে, কাউকে গালি দিয়েছে আর কাউকে সীমালঙ্ঘন করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি করেছে) তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের যত হক আছে তা তোমরা নিয়ে নাও। সেই ব্যক্তি মানুষের হক দিতে দিতে তার সমস্ত আমল শেষ হয়ে যাবে। তার কাছে কোন সওয়াব অবশিষ্ট থাকবেনা। আরো হকদার থেকে যাবে তার কাছে কোন সওয়াব না থাকার কারণে সে তাদের কিছু বদলা দিতে না পেরে তাদের গোনাহসমূহ নিয়ে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা জান কি সবচেয়ে বড় মিসকিন কে? ওই ব্যক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিসকিন যে কিয়ামতের ময়দানে হাজার হাজার থলে নিয়ে আসবে, কিন্তু মানুষের গুনাহের থলে নিয়ে জাহান্নামে যাবে, সেই ব্যক্তিই হলো সবচেয়ে বড় মিসকিন। সেই জন্য আমরা যুলুম থেকে বাঁচব,বলতে ছিলাম কার দোয়া বেশি কবুল হয়। মযলুমের দোয়া।

দ্বিতীয়ত وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَىٰ وَلَدِهِ (পিতা-মাতার দোয়া তার সন্তানের জন্য) কবুল হয়। একজন বুযুর্গ ছিলেন। তার পিতা-মাতা মারা যাওয়ার পর তার কাছে ইলহাম হল, এখন তুমি সতর্ক হও ইতঃপূর্বে তোমার পিতা-মাতার দোয়ায় তোমাকে মুসিবত হতে হেফাজত করা হয়েছে, এখন যখন তোমার পিতা-মাতা মারা গেছে তোমার জন্য দোয়া করার কেউ নেই। তাই তোমাকে সতর্ক হতে হবে। মা বাবার দোয়া আল্লাহর কাছে বেশি কবুল হয়। তাই আমরা সবাই জানি পিতা-মাতা কত বড় জিনিস। রাসুল (সা.) হযরত ওমর (রাযি.)-কে বলছেন, ইয়ামনের ‘করন’ এলাকা থেকে একজন লোক আসবে, তাঁর নাম হবে ‘ওয়াইয’ তুমি যখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে বলবে সে যেন আল্লাহর কাছে তোমার জন্য গোনাহ মাফ চায়। একথা রাসুল (সা.) কাকে বলেছেন? ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আর জান্নাতে যার স্থান হযরত আবু বকর (রাযি.)-এর পর। সেই ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযি.)-কে রাসুল (সা.) তাঁর কাছে দোয়ার জন্য বলেছেন, কারণটা কি? كان بار الأم (সে তার মায়ের সাথে সদাচরণ করত)। সে তাঁর মায়ের সেবা করত। কোন বর্ণনায় আছে তিনি সাহাবী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মায়ের খেদমতের কারণে সুযোগ হয়নি।

অন্য বর্ণনায় আছে তিনি রাসুল (সা.)-এর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন কিন্তু রাসুল (সা.) যুদ্ধে ছিলেন তাই মায়ের খেদমতের ব্যাঘাত হবে ভেবে রাসুল (সা.) এর জন্য অপেক্ষা না করে আবার তাঁর মায়ের কাছে ফিরে গেলেন। মায়ের খেদমত করার কারণে আল্লাহ এমন এক মর্যাদা তাকে দান করেছেন, যার ফলে সাহাবী ওমর (রাযি.)-কেও রাসুল (সা.) তাঁর কাছে দোয়ার জন্য বলেছেন কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় তাবেয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে উচু মর্যাদার অধিকারী ছিলেন ‘ওয়াইয’। তার এত মর্যাদা কিসের দ্বারা অর্জিত হয়েছে? একমাত্র পিতা-মাতার খেদমত করার কারণে। তাই পিতা-মাতার খেদমত করা সবার ওপর জরুরি।

সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে তিনজন লোক এক জায়গায় ভ্রমণ করছিল, পথিমধ্যে ঝড় বৃষ্টি আসা শুরু করল, তারা কোন আশ্রয়স্থল না পেয়ে পাহাড়ের একটি গর্তে আশ্রয় নিল। কিছুক্ষণ পর দেখল একটি পাথর এসে গর্তের মুখটা বন্ধ হয়ে গেল। গর্তের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা তিন জন চিন্তা করল, এই গর্ত থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই।

আর এত বড় পাথর আমরা তিনজন সরাতে পারব না। তারা পরস্পর পরামর্শ করল, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, بِأَحَبِّ الْأَعْمَالِ إِلَيْهِ, যার কাছে যে আমলটা বেশি কবুল হয়েছে বলে মনে হয়, সেই আমলের উসিলা দিয়ে দোয়া করি। তাদের মধ্য হতে একজন দোয়া করছে, হে আল্লাহ! আমি গরু ছাগল চরাতাম, দিনের শেষে আমি দুধ দোহন করতাম সেই দুধ আমি প্রথমে আমার পিতা-মাতাকে খাওয়াতাম তারপর আমার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনকে খাওয়াতাম। একদিন গরু ছাগল নিয়ে দূরে যাওয়ার কারনে আসতে রাত হয়ে গেছে, আমার পিতা-মাতাও ঘুমিয়ে পড়ে ছিল, আমি দুধ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে দেখলাম আমার পিতা-মাতা ঘুমন্ত, এখন যদি ঘুম থেকে ডাকি তারা কষ্ট পাবে, আবার যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তালাশ করে দুধ না পায় তাহলেও কষ্ট পাবেন, তাই আমি তাদের ঘুমও ভাঙেনি, তারা যতক্ষণ জাগ্রত হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও ঘুমাইনি। আর অপর দিকে আমার সন্তানরা আমার ক্ষুধায় কাঁদছিল। আমার পিতা-মাতাকে দেওয়ার পূর্বে আমার সন্তানদের দেওয়া আমি পছন্দ করিনি। হে আল্লাহ! এটা যদি আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি। তাহলে আমাদের এ বিপদ থেকে মুক্তি দিন। একথা বলার সাথে সাথে পাথর কিছুটা সরে গেল। দেখা যাচ্ছে পিতা-মাতার খেদমত করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে ব্যক্তি পিতা-মাতার খেদমত করে আর সেই খেদমতের উসিলা দিয়ে দোয়া করে আল্লাহ সেই দোয়াও কবুল করে থাকেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমার একজন সুন্দর চাচাতো বোন ছিল, আমি তাঁর কাছ থেকে তাই চেয়েছিলাম যা একজন পুরুষ যা চায় একজন মহিলা থেকে, কিন্তু আমি তাকে কোন রকমেই রাজি করাতে পারিনি। একসময় সে অভাব অনটনে পড়ার কারণে কিছু স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। তাকে আমি তাঁর চাহিদা মতে স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করলাম, আমি তাঁর চাহিদা পুরুণ করার পর আমার চাহিদা পূরণ করার জন্য আমি তাঁর নিকটে গেলাম। এমন কি আমি তাঁর উপরে বসে পড়লাম, তৎক্ষণাৎ তাঁর চেহরার দিকে তাকালে সে কাঁদতে আরম্ভ করল, আর সে বলে উঠল,

يا عبد الله! اتقوا الله.

(হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর) আর আমি তাঁর কাঁদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আমি এ কাজ কোন দিন করিনি, আজ অভাবের কারণে করছি তাই আমি কাঁদছি। সে একথা বলার সাথে সাথে আমি তাঁর ওপর থেকে সরে গেলাম। আর তাঁর সাথে ওই কাজও করিনি, তাঁর কাছ থেকে স্বর্ণমুদ্রাও ফেরত নেইনি। হে আল্লাহ! আমি যদি এই কাজটি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আমাদের কে এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। সে একথা বলার সাথে সাথে পাথর আরো কিছু মাত্রায় সরে গেল। দেখা যায় যে, কোন ভালো কাজের উসিলা দিয়ে দোয়া করলে তখন দোয়া কবুল হয়। এ জন্য কারো যদি কোন প্রয়োজন হয়, কোন ভালো কাজ করে তথা ছদকা দিয়ে ও রোযা ইত্যাদি রেখে তাঁর উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, সে দোয়া কবুল হয়। আমরা দোয়া কবুল করার জন্য অনেক কিছু করি। যখন কারো বড় মসিবত আসে, নিজে দোয়া করুন, ছদকা করেন, সালাতুল হাজত পড়েন, দেখবেন দোয়া কবুল হয়, ইনশাআল্লাহ আমাদের কোন কোন বুযুর্গ ছিলেন তাদের কোন রোগ ব্যাধি হলে, ডাক্তারকে ফি দেওয়ার আগে সে পরিমাণ আল্লাহকে দিতেন। রোগ আল্লাহ ভালো করবেন না ডাক্তার? আল্লাহকে আগে ফি দিয়ে পরে ডাক্তারকে ফি দিতেন, ফলে তাদের রোগ ভালো হয়ে যেত। আমরা তো ডাক্তারকে ফি দেওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহকে ফি দিই না।

আমাদের কোন রোগ হলে ডাক্তারকে ফি দেওয়ার আগে আল্লাহকে ফি দেব, ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো হয়ে যাব। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন শ্রমিক ছিল, সে আমার কাছে কাজ করেছিল। তাঁর পারিশ্রমিক হিসেবে আমার কাছ থেকে এক মন ধান পেত। সেই ধানগুলো দেওয়ার জন্য তাকে খুঁজে পাইনি তাই আমি সেই ধানগুলো দিয়ে চাষ করেছি, তা থেকে যে ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে আমি ছাগল ক্রয় করেছি। মাত্র কয়েক বছরে সেই ছাগল থেকে হাজার হাজার ছাগল হয়ে গেল। একদিন সে আমার কাছে এসে বলল, আমি আপনার কাছ থেকে কিছু ধান পেতাম, তা আমাকে দিয়ে দিন, তখন আমি তাকে বললাম, ওই ছাগলের পালটাই হলো তোমার মজুরি, সেটা নিয়ে যাও, সে বলল, আমার সাথে কৌতুক করছেন? আমি আপনার কাছ থেকে এক মন-ধান পেতাম, আর আপনি আমাকে দেখাচ্ছেন একটি ছাগলের পাল, যাতে হাজার হাজার ছাগল আছে।

আমি বললাম, তুমি আমার কাছ থেকে যে ধান পারিশ্রমিক হিসেবে পেতে, সে ধানগুলোকে চাষ করে এতটুকু পর্যন্ত করেছি, আর তোমার জন্য রেখে দিয়েছি, এখন যখন তুমি এসেছ এগুলো তুমি নিয়ে যাও। সে ছাগলের পালটা নিয়ে গেল, তা থেকে আমি একটি ছাগলও গ্রহণ করিনি।

হে আল্লাহ! এটা যদি আমি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আমাদেরকে এই মসিবত থেকে মুক্তি দিন। সে একথা বলার সাথে সাথে পুরা পাথর গর্তের মুখ থেকে সরে গেল, তারা তিন জন মুক্তি পেয়ে গেল। এখানে লোকটা কি করল, তার শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু আমরা তাঁর বিপরীত আমাদের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আমরা খাওয়ার চেষ্টা করি।

রাসুল (সা.) বলেন, مَطْلُ الْغَنِيِّ ظُلْمٌ (ধনির টালবাহানা যুলুম)  আমাদের কাছ থেকে যদি কেউ পারিশ্রমিক পায়। আমরা তা পরিশোধ করার ক্ষেত্রে আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু এভাবে টালবাহানা করে থাকি। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মারাত্মক যুলুম।

অন্য হাদীসে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও, সে জন্য আমাদের দরকার শ্রমিকের দিকে দৃষ্টি রাখা ও তাদের অধিকারের প্রতি গুরত্ব দেওয়া। যাতে তারা কষ্ট না পায়।

আমি আলোচ্য বিষয় পিতা-মাতার খেদমতের কথা। পিতা-মাতার খেদমত করা, তাদেরকে রাজি রাখা কত যে লাভের কাজ হাদীসের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। এক রমযানে রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরের প্রথম আরোহণ করলেন, আর বললেন,  (আমিন)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করার পরও যথাক্রমে ‘আমীন’ বললেন। নামায শেষে সাহাবায়ে কেরামগণ রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আজ আপনি এমন একটি কাজ করলেন যা কোন দিন দেখিনি। তা করার কারণ কি? তিনি বললেন, তার কারণ হলো, আজ আমি মিম্বরে উঠার সময় জিবরাইল (আ.) এসেছিলেন। তিনি তিনটি বদ-দোয়া করছিলেন। তার বদ দোয়ায় আমি আমিন বলেছি। আমি যখন প্রথম আরোহণ করি তখন জিবরাইল দোয়া করলেন। যে ব্যক্তি পিতা-মাতা পেয়ে তাদের খেদমত করে জান্নাতে যেতে পারেনি তার ওপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)। তখন আমি বলেছি, আমিন। এখানে বদ দোয়া করেছেন জিবরাইল আর আমিন বলছেন রাসুল (সা.) অর্থাৎ দোয়া করছে সাইয়িদুল মালাইকা (ফেরেস্তাদের সর্দার) আর আমিন বলছেন সাইয়িদুল বাশার (মানুষের সর্দার) এই দোয়া কি কবুল না হয়ে থাকবে?

অন্য হাদীসে আছে রাসুল (সা.) বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সে কে? যে ব্যক্তি সে তার পিতা-মাতাকে জীবিত অবস্থায় পেয়েও নিজেকে জান্নাতের উপযোগী করতে পারেনি।

এখন আমাদের মধ্যে যাদের পিতা-মাতা আছে তারা তাঁদের মূল্যায়ণ করি না। দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্যায়ণ হয় না। কথিত আছে, সময় থাকতে হাঁট। ধন থাকতে দান কর। যাদের পিতা-মাতা আছে তারা পিতা-মাতাকে মূল্যায়ণ কর।

হযরত ওমর পুত্র আবদুল্লাহ এর একজন স্ত্রী ছিল তাদের মধ্যে (স্বামী-স্ত্রী) খুব মিল ও ভালবাসা ছিল। কোন কারণে হযরত ওমর (রাযি.) স্বীয় পুত্র আবদুল্লাহকে বললেন, তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও। রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) কোন ঝগড়া-ফাসাদ না থাকলেও তোমার পিতার আদেশ মতে তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও। أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيْكَ (তুমি ও তোমার তোমার মাল তোমার পিতার)।  সে জন্য পিতা-মাতার কথা মানতে হয়।

আল্লাহ আরও বলছেন, وَبِالْوَالِدَيْنِ۠ اِحْسَانًاؕ ۰۰۲۳  (পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ কর ) إحسان বলতে বোঝায়, পিতা-মাতা যে সমস্ত কাজে সন্তুষ্ট হয় সে কাজসমূহ করা। আর যে সমস্ত কাজে তারা অসন্তুষ্ট হয়, সে কাজসমূহ থেকে বিরত থাকা। রাসুল (সা.) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গোনাহের সংবাদ দেব না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেন দেবেন না? তিনি বললেন, الشِّرْكَ بِاللهِ، وَعُقُوْقَ الْوَالِدَيْنِ (কবীরা গোনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো শিরিক করা। দ্বিতীয়ত হলো পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া)।  এ হাদীসের প্রথমে আল্লাহর কথা বলেছেন তার পরই পিতা-মাতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ বোঝা যায় আল্লাহ তায়ালার পরই পিতা-মাতার স্থান। সেজন্য পিতা-মাতাকে আল্লাহর হুকুমের পরপরই মানতে হবে।

হাদীস শরীফে আছে, পিতা-মাতা বেঁচে থাকলে তাদের খেদমত কর। আর যদি তাঁরা মৃত্যুবরণ করে, পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব ও তারা যাদেরকে ভালবাসতেন তাদেরকে ভালবাস ও তাদের সাথে সদ্ব্যব্যবহার কর। তাদের খেদমত করা সেটা মাতা-পিতার খেদমত করার মতো।

তোমার ভাই-বোন আছে। তোমার পিতা-মাতা থাকাবস্থায় তুমি গরু যবেহ করেছ বা মুরগি-মাছ এনেছ। তা থেকে যখন মাকে দাও তখন তোমার মা বলে আমার অমুক ছেলে-মেয়েকে না দিলে আমি তোমার গোস্ত মাছ খাব না। পিতা-মাতারা এরকম বলে কিনা? পিতা-মাতা না থাকা অবস্থায় তোমার ভাই-বোন ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে তুমি যথাসম্ভব সু-সম্পর্ক রাখ। এটা তোমার পিত-মাতার খেদমত করার মতো হবে।

শরীয়তে ইসলাম মহিলাদের ব্যাপারে পুরুষের অর্ধেক ঘোষণা করেছে। আজ আমরা অনেক ভাই আছি যারা বোনদের সম্পদ দিতে চাইনা। তাদেরকে বঞ্চিত করি। আর বর্তমানে মহিলারা সমান অধিকার দাবি করে। তাতো এমনিই দিতে চাইবে না।

আমরা পুরুষরা বোনদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করি। অনেকে আবার সম্পত্তি চাইলে না দেয়ার জন্য বিভিন্ন পন্থাবলম্বন করি। যেমন অনেকে বলে থাকি কিতাবে আছে বোনেরা ঘরের ভিটা থেকে পাবে না। জমি থেকে পাবে। আমি মাওলানা মুজাফফর সাহেব হুযুর থেকে শুনেছি। হুযুর বর্তমানে আমার পাশে বসা। তিনি বলেন, খতীবে আযম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ সাহেব হুযুরের একভাই বোনদের সম্পদের বণ্টনের সময় খতীবে আযমকে বলল, বোনদের কিছু কম দিলে কী হয়? তিনি (খতীবে আযম) বললেন, তাদের কিছু বেশি দিলে কি হয়। তিনি আরো বললেন, আমরা (পুরুষরা) টাকা কামাই করতে পারি আর তারা তো (মহিলারা) টাকা কামাই করতে পারে না। তাই তাদের একটু বেশি দিলে কী হয়? সে বলল, আমি কি বদ্দার (বড় ভাই) সাথে পারব?

সে আবার বলল, তাদের সম্পত্তি ঘরের বাইরের জায়গা থেকে দিলে কী হয়? তিনি তার প্রতোত্তরে বলেন, আমরা (পুরুষরা) মায়ের ভিতরের পেট হতে, আর তারা (মহিলারা) মায়ের বাহিরের পেট হতে বের হয়েছে? আমরা যেমন ভেতর থেকে তারাও তো ভেতর থেকে এসেছে। তাই আমরা যেমনÑ ভেতর থেকে নেব তাদেরও ভেতর থেকে দেব।

বোনদেরকে আমরা সম্পত্তি দেওয়ার সময় বলি, দাগে দাগে (স্থানে, স্থানে) নিতে হবে। এ স্থান থেকে দু’হাত অন্যস্থান থেকে চার হাত ওই স্থান থেকে পাঁচ হাত এভাবেই নিতে হবে। এটাও বোনদের ঠকানোর বিশেষ এক পদ্ধতি। তোমরা ভাইয়েরা তোমাদের সুবিধার্থে দাগে দাগে নাও না। তুমি একস্থান থেকে নিয়েছ। অন্যান্য ভাইয়েরা কেউ এক এক স্থান থেকে দিয়েছ। যখন বোনদের দেওয়ার কথা আসে তখন বল দাগে দাগে নাও। এটা তাদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা মাত্র। তখন বোনেরা নিরূপায় হয়ে বলে, কম দিলে কম দাও তার পরও একস্থান থেকে দাও। এ পদ্ধতি অবলম্বনের কারণ হলো, বোনদেরকে ভিটার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করে দেওয়া।

তুমি বলছ, কিতাবে আছে বোনেরা ভিটা (ওই স্থান যেখানে তাদের ঘর থাকে) থেকে ভাগ পাবে না। কিন্তু কুরআনে আছে, مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدٰنِ ۪ ۰۰۷ (পিতা-মাতা যা কিছু রেখে গেছেন)  কোন মানুষ যখন মারা যায় তার কিছু ব্যবহৃত আসবাব পত্র রেখে যান, যেমন তার পোশাক পরিচ্ছদ। তখন আমরা বলি, এ শাড়িটা অমুকের বউকে দাও, ওই শাড়িটা অমুকের বউকে দাও, এভাবে মনগড়া বণ্টন করে থাকি। কিতাবে আছে মানুষ মারা যাওয়ার পর তার শরীর থেকে যে কাপড়টা কেটে বের করতে হয় তা সহ ডেক্সি, ঘর ও ইত্যাদি সমস্ত সম্পদে ছেলের যেমন অধিকার আছে তেমনি মেয়েরও অধিকার রয়েছে, مِمَّا قَلَّ مِنْهُ اَوْ كَثُرَ١ؕ۰۰۷ (তা কম হোক বা বেশি হোক) , مَا تَرَكَ (পিতা-মাতা যা রেখে গেছেন)  সব সম্পদ থেকে শরীয়তের বণ্টন অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে উভয়ে যার যার নির্ধারিত অংশ পাবে।

অনেকেই বলে থাকি, বোনকে একটু কম দাও, কারণ সে মাঝে মাঝে আসে আর খায়। বোন মাঝে মাঝে আসলে তাকে মেহমানদারি কর নাকি তুমি তোমার বাড়িতে হোটেল খুলেছ। তোমার বাড়িতে কি কোন মেহমান আসলে তার থেকে আগে টাকা নিয়ে ফেল? তা না হলে তোমার বোন মাঝে মাঝে আসে বলে তার সম্পত্তি কেন রেখে দিতে চাচ্ছ। এখন তোমার ভিটা (যার ওপর ঘর নির্মিত) থেকে তোমার বোন যে সম্পদ পাবে, তার বার্ষিক লাগিয়ত (খাজানা) ধরলে আসবে, ৬ হাজার টাকা। বছরের সে হয়তো তোমার বাড়িতে এসে দশ বিশ টুকরা গোস্ত খায়? ছয় হাজার টাকা রেখে দশ বিশ টুকরা গোস্ত দাও। এক টুকরার দাম কত পড়ে বলতো? তোমার এই হোটেল যত দামি, সাধারণত উন্নত হোটেলও এত দাম না। হোটেলে মানুষ আগে খায় পরে টাকা দেয়। তোমার ঘরের হোটেলের তো আগে দাম নাও তার পর খেতে দাও। এটা ভালো কাজ নয়। সেজন্য তোমরা পিতা-মাতার খেদমতের উদ্দেশ্যে বোনকে সাহায্য ও মেহমানদারি করবে। তাতে তোমার পিতা-মাতার মৃত আত্মা-শান্তি পাবে তুমিও পিতা-মাতার খেদমতে সাওয়াব পাবে। এখনতো আমরা বোনদের সাহায্য সহযোগিতা ও মেহমানদারি করা দূরের কথা উল্টো তাদের ওপর যুলুম করে তাদের সম্পদ নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। এটা বড় নিষ্ঠুরতা।

বর্তমানকালে পিতা-মাতারাও খারাপ হয়ে গেছে। বড় লোকেরা কোন কিছু ক্রয় করলে নিজের নামে ক্রয় না করে ছেলেদের নামে ক্রয় করে। গাড়ির লাইসেন্স নিজের নামে না করে ছেলেদের নামে করে। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমরা এ রকম কেন করছ? উত্তরে তারা বলত পরের জমি উচু করে লাভ কি? তারা মনে করে, যদি আমার নামে ক্রয় করি তাহলে মেয়েরাও পাবে। হাদীস শরীফে আছে, কোন ব্যক্তি ষাট-সত্তর বছর ইবাদত করেছে। কিন্তু মারা যাওয়ার সময় যদি ওয়ারিশদের ওপর যুলুম করে তাহলে সব ইবাদত শেষ। যখন পিতার মৃত্যুর সময় গণিয়ে আসে ছেলেরা পিতাকে কোন মহলে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সম্পদ তাদের নামে লিখে নেই। পিতাও চিন্তা করে, সবগুলো ছেলেদের দিয়ে দিলে ভালো হয়। এরকম যদি কোন পিতা-মাতা করে থাকে তা স্পষ্ট যুলুম (অত্যাচার)। হাদীস শরীফে রাসুল (সা.) বলেছেন,

مَنْ قَطَعَ مِيْرَاثًا فَرَضَهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ قَطَعَ اللهُ مِيْرَاثه مِنَ الْـجَنَّةِ.

‘যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ওয়ারিস হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন।’

তুমি যে, ছেলেদের রাজি করছ তারা কি তোমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে? যদি তারা না পারে কেন তুমি তোমার জাহান্নাম ক্রয় করে নিচ্ছ। আমাদের বোয়ালভী সাহেব হুযুর বলতেন, তোমরা ছেলেদের জন্য হালাল হারাম এনে একত্রিত করে দাও। তারা দুনিয়াতে হালাল-হারাম মিশ্রিত করে পিঠা খাবে। আর তুমি কবরে পিঠা (মার) খাবে। কারণ তোমার ছেলেদের সম্পদে হারাম মিশ্রিত করেছ তাই তোমার সম্পদ দিয়ে দুনিয়াতে তারা মজা করবে। তুমি কবরে সাজা ভোগ করবে। তাই তুমি সমস্ত সম্পদ ছেলেদের দিয়ে তাদেরকে হারামে লিপ্ত করে দিও না। আর তুমি নিজের সাজা নিজে নিও না। বলছিলাম পিতা-মাতা না থাকা অবস্থায় তাদের মেয়েদের অর্থাৎ তোমাদের বোনদের ওপর দয়াবান হওয়ার কথা। তাদের খেদমত করা মানে পিতা-মাতার খেদমত করা। তাই আমরা সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার খেদমত করব।

পিতা-মাতার খেদমতে আরেকটি খেদমত হলো তাদের মৃত্যুর পর যিয়ারত করা। পিতা-মাতার বেশি বেশি কবর যিয়ারতের দ্বারা ছেলেদের গোনাহ মাফ হয়। আর পিতা-মাতা কবরে শান্তিতে থাকে। রাসুল (সা.) হাদীসে বর্ণনা করেন, بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُوْرَةً.।  মা-বাবার খেদমত করা এটা কোন ধরণের সাওয়াব বলছেন। অন্য খেদমত তো দূরের কথা পিতা-মাতার চেহারার দিকে যদি কোন ছেলে রহমতের নজরে দেখে। তার প্রত্যেক নজরে আল্লাহ তার আমল নামায় এক একটা হজের সাওয়াব দেবেন।

আমাদের বুযুর্গরা বলেছেন, হজ কয়েক ধরণের আছে। যথা বার্ষিক হজ, সাপ্তাহিক হজ দৈনিক হজ ও মিনিটে মিনিটে হজ। বার্ষিক হজ, যা নির্দিষ্ট সময়ে ধনীরা করে থাকে। কুরআনে আছে, اَلْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمٰتٌۚ ۰۰۱۹۷।

সাপ্তাহিক হজ الـجمعة حجة الـمساكين (জুমা গরীবের হজ) একটা হলো কেন্দ্র, যেমন ব্যাংকে একটা কেন্দ্রীয় অফিস থাকে, আর কতগুলো ব্রাঞ্চ (শাখা) থাকে। তেমনি কাবা শরীফ হলো সেন্টার আর মসজিদগুলো হলো তার ব্রাঞ্চ (শাখা)। সেজন্য কিতাবে আছে, কিয়ামতের দিন কা’বা শরীফকে বলা হবে তোমাকে কেন্দ্র করে যারা নামায পড়েছে তাওয়াফ করেছে তাদেরকে নিয়ে জান্নাতে যাও এবং তাদেরকে ডাকা হবে। কা’বা শরীফ বলবে আমি একা যেতে পারব না। আমার ব্রাঞ্চ আছে। আমার ব্রাঞ্চ (শাখা) হলো দুনিয়ার সমস্ত মসজিদ। সেখানে যারা নামায পড়েছে তাদের সবাইকে ডাকা হবে। কাবা শরীফ হবে ইঞ্জিনের মত, আর সমস্ত মসজিদ হবে বগির মত। আমরা যারা মসজিদের মুসল্লি ছিলাম তাদেরকে তার ওপর উঠানো হবে। আমাদেরকে নিয়ে মসজিদগুলো জান্নাতে পৌঁছে যাবে। কেন্দ্র কোনটা? কা’বা শরীফ। আর ব্রাঞ্চ কোনটা? মসজিদগুলো। তাই কেন্দ্রের মধ্যে বার্ষিক একবার হজ হয়। আর ব্রাঞ্চ গুলোতে সপ্তাহে একবার হজ হয়। আল্লাহ তায়ালা মিসকিন (গরীবদের) জন্য সহজ করে দিয়েছেন, হজকে ঘরের দরজায় এনে দিয়েছেন। ধনীদের দূরে গিয়ে হজ করতে হয়। আর গরীবদের জন্য হজ ঘরের দরজায় চলে আসছে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে হজ করলে তো দম দিতে হয় আমার যেহেতু দম দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই আমি সাপ্তাহিক হজ জুমাতে যাব না। প্রতি জুমাতে গেলে একটি দম বা একটি ছাগল কোত্থেকে দেব। আল্লাহ বলছেন, আমি গরীবদের জন্য দমের ব্যবস্থা করে রেখেছি। জুমার আযানের সাথে সাথে আগে আগে মসজিদে চলে যাও হজ যখন করতে হবে এখন গরু জবেহ কর। মসজিদে আগে গেলে উট, তারপর গেলে গরু, তারপরে গেলে ছাগল, তারপর গেলে মুরগি। হজ যখন করতে হবে দম দিতে হবে। যারা হজ করবে তারা ছাগল দিবে, তোমরা কি দেবে? উট দেবে, উট সেখানে কয় জনে দিতে পারি। গরু দম দিতে পারি। ৫২ সপ্তাহে ৫২টা উট দিলাম, ৫২টা হজ করলাম। এটা কি হজ? সাপ্তাহিক হজ।

আরেকটা আছে দৈনিক হজ। রাসুল (সা.) হাদীসে বলেছেন,

مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّىٰ تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ .. تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ.

‘ফজরের নামাযের পর যে ব্যক্তি দুই বা চার রাকআত ইশরাকের নামায আদায় করবে, তার জন্য একটা হজ ও একটা ওমরা।’  কারো সন্দেহ হতে পারে আমল এত ছোট একেবারেই একটি কবুল হজ ও একটি ওমরা, এরকম কেন হবে? তুমি সন্দেহ কর না। تَامَّةٍ تَامَّةٍ (পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ)। কথায় আছে। আল্লাহর দেওয়া অফুরাণী (অফুরন্ত), বান্দার দেওয়া কুয়াশার পানি (শিশির)।

আল্লাহ এত হাজার সাওয়াব কোত্থেকে দিবেন? একথা বল না। মানুষ দিতে পারে না মানুষের কাছে অভাব, তাদের ইমপোর্ট করতে হয়। আল্লাহ কোত্থেকে ইমপোর্ট করেন।

اِذَاۤ اَرَادَ شَيْـًٔا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ۰۰۸۲

‘যখন তিনি কোন কাজ করা ইচ্ছা করেন, তখন শুধু বলেন হয়ে যাও, তার পর জিনিসটি হয়ে যায়।’

আমি (আল্লাহ) দেওয়ার জন্য কারে কাছ থেকে আমার ইমপোর্ট (আমদানি) করতে হয় না। আমি বললেই হয়ে যায়। সেই জন্য আমার দিতে কোন অসুবিধা নেই। আলোচনা করছিলাম কোন ধরনের হজের? দৈনিক হজের।

আরেকটি হলো ‘মিনিটে মিনিটে হজ। হাদীস শরীফে আছে, কোন ছেলে যদি নিজের পিতা-মাতার দিকে রহমতের নজরে দেখে, প্রত্যেক নজরে তার একটি হজের সাওয়াব হবে। চোখে দেখলে যদি হজ হয়। আঙ্গুর খাওয়ালে কী হবে? শাক খাওয়ালে কী হবে? তাদের কোন পছন্দনীয় জিনিস খাওয়ালে, বা এনে দিলে কি হবে? দেখলে যদি হজের সাওয়াব হয় এগুলো করলে আরো বেশি হবে না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন। তাহলে আমরা দিনে একহাজার বার দেখব। রাসুল (সা.) বললেন, একহাজার বার নয়, এক লক্ষ বার দেখ, আল্লাহ এর চেয়ে বেশি দিতে পারেন। যাদের কাছে মা-বাবা আছে তাদের কদর (মূল্যায়ণ) কর। قدر نعمت بعد زوال (নেয়ামত চলে যাওয়ার পরই তার মূল্য বুঝে আসে)। মা-বাবা চলে যাওয়ার পর আফসোস করলেও পাবে না। সেজন্য মা-বাবা থাকতে তাদের গুরুত্ব দাও। তাদের প্রতি খেয়াল রাখ। মিনিটে-মিনিটে, সেকেন্ডে-সেকেন্ডে সাওয়াব হবে যদি পিতা-মাতার খেদমত কর।

রাসুল (সা.) হাদীস শরীফে বলেন,

بَرُّوا آباءَكُمْ تَبَرُّكُمْ أَبْنَاؤُكُمْ.

‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যব্যবহার কর, তোমার সন্তানরা তোমাদের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করবে।’

পিতা-মাতার সেবা করলে কি হয় জানেন? আপনার সন্তানরা সদা আপনার সেবায় নিবেদিত প্রাণ থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, جَزَآءُ الْاِحْسَانِ اِلَّا الْاِحْسَانُۚ۰۰۶۰। অন্যত্রে বলেন, جَزَآءُ سَيِّئَةٍۭ بِمِثْلِهَاۙ ۰۰۲۷ অর্থাৎ উত্তম আচরণের বদলা একমাত্র উত্তম আচরণই।  আর মন্দ কাজের বদলা তার মত মন্দ কাজই হয়।  তুমি যদি তোমার পিতা-মাতার সেবা কর। আল্লাহ আপনাকে যে সন্তান দান করবেন সে আপনার সেবা করবে। আর যদি তুমি পিতা-মাতার নাফরমানি (অবাধ্য) কর। তোমার ছেলে তোমার নাফরমানি (অবাধ্য) করবে।

তোমরা সৎ হও তোমাদের ছেলে মেয়েরাও সৎ হবে আল্লাহ বলেন,

اَلْخَبِيْثٰتُ لِلْخَبِيْثِيْنَ۠ وَالْخَبِيْثُوْنَ لِلْخَبِيْثٰتِ١ۚ وَالطَّيِّبٰتُ لِلطَّيِّبِيْنَ وَالطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبٰتِۚ ۰۰۲۶

মানুষ বিয়ে করার আগে চিন্তা করে আমার বউটা ঠিক আছে কিনা, নাকি কারো সাথে লাইন লাগাইছে, নাকি কারো সাথে প্রেম করেছে। চিন্তা করে কিনা? হাদীসে আছে তুমি যদি কারো সাথে লাইন লাগাও তোমার স্ত্রীটাও লাইন লাগাবে। তুমি যদি কারো মেয়েকে নষ্ট করে ফেল। তোমারটাও নষ্ট করে ফেলবে। তোমার স্ত্রী ভালো কিনা বাইরে দেখার দরকার নেই, তোমাকে দেখ। তুমি যদি ভালো থাক কারো মেয়েকে নষ্ট না কর। তাহলে তোমার বিবিও ভালো থাকবে। তুমি যদি কারো সাথে লাইন না লাগিয়ে থাকো। তোমারটাও কারো সাথে লাইন লাগাবে না। একটু কন্ট্রোল করে তোমরা ভালোভাবে চল, তোমাদের বিবিরাও ভালোভাবে চলবে। তোমরা অসৎ হলে তারাও অসৎ হবে। বলছিলাম, بَرُّوا آباءَكُمْ (তোমাদের পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর)। بَرُّوا آباءَكُمْ (তোমাদের ছেলে তোমাদের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করবে)।  তোমরা যদি তাদের সাথে অসৎ ব্যবহার কর, তোমাদের ছেলেরাও তোমাদের সাথে অসৎ ব্যবহার করবে। লোক মুখে একটি ঘটনা শুনা যায় একজন ছেলে তার পিতাকে দৌঁড়াচ্ছে, কত দূর যাওয়ার পর পিতা তার ছেলেকে বলছে, তুমি আমাকে আর ধাওয়া কর না। ছেলে বলল, কেন? পিতা বলল, আমি আমার পিতাকে ধাওয়া করে এইস্থান পর্যন্ত এনেছিলাম। আপনি আপনার সন্তান থেকে সে রকম আচরণ প্রাপ্ত হবেন যে রকম আচরণ আপনার পিতার সাথে আপনি করবেন। সেজন্য পিতা-মাতার খেদমত কর ও তাদের সাথে সদাচারণ কর।

রাসুল (সা.)-এর কাছে এক সাহাবী এসে বলেছেন, আমি আপনার সাথে জিহাদ করার জন্য আসছিলাম। কিন্তু আমার পিতা-মাতা আমাকে জিহাদে আসতে দিতে চাচ্ছেন না। আমি তাদের কথা না শুনে আপনার দরবারে চলে এসেছি জিহাদে যাওয়ার জন্য। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তোমার এ জিহাদের প্রয়োজন নেই। তুমি পিতা-মাতার সেবা করলে জিহাদের সাওয়াব পাবে। তুমি আসার সময় তারা কেদেঁছে এখন তুমি গিয়ে তাদের হাসাও এটা তোমার জিহাদের সাওয়াব হবে।

অন্য হাদীসে আছে, এক সাহাবী রাসুল (সা.)-কে এসে বলেছেন। হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি এসেছি আপনার সাথে যাওয়ার জন্য। রাসুল (সা.) বললেন তোমার পিতা-মাতা আছে? সে বলল, জি হ্যাঁ! তিনি বললেন, তুমি যাও তোমার পিতা-মাতার খেদমত (সেবা) কর। তা বলে তিনি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তার পর সে আবার সামনে গিয়ে একই কথা বলল, তাকে রাসুল (সা.) একই উত্তর দিলেন। এভাবে চার বার একই প্রশ্ন করলে তিনি চারবারই একই উত্তর দিলেন, তুমি যাও তোমার পিতা-মাতার খেদমত কর।

الْـجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَامِ الْأُمَّهَاتِ.

‘জান্নাত পিতা-মাতার পায়ের নিচে।’

আমাদের পায়ের নিচে কি? জুতা, পিতা-মাতার পায়ের নিচে কি? জান্নাত। সে জন্য জান্নাত সেখান থেকে অর্জন করার চেষ্টা করবে। অন্য হাদীসে আছে,

رِضَا الرَّبِّ فِيْ رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِيْ سَخَطِ الْوَالِدِ.

‘পিতা-মাতা যেখানে সন্তুষ্ট আল্লাহ সেখানে সন্তুষ্ট, পিতা-মাতা যেখানে অসন্তুষ্ট আল্লাহও সেখানে অসন্তুষ্ট।’

হাদীস শরীফে আছে, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে একটি আলামত হলো, ছেলে তার পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখবে না বন্ধুদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখবে। এখন বন্ধু বান্ধব নিয়ে নাচানাচি করছে কিন্তু পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক নেই। নিজের স্ত্রীর কথা শুনে মায়ের কথা শুনে না। বন্ধুর কথা শুনে পিতার কথা শুনে না। সেই জন্য একটা কথা চিন্তা করা দরকার। তোমার স্ত্রী তোমার বিশ বছর বা ২৫ বছর বয়সে এসেছে। তুমি যখন ছোট ছিলে প্রথম থেকে তোমার ‘মা’ তোমার সাথে ছিল। একমাত্র তোমারই কারণে ছিল। এটা তোমার মনে থাকার কথা না, কারণ তখন ছোট ছিলে। আল্লাহ বলছেন,

اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا۰۰۲۳

‘আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি বার্ধ্যকে উপনীত হয় তোমার জীবদ্দশায় তবে তাদেরকে উহ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা।’

সাধারণ পিতা-মাতা যৌবনকালে খেদমতের মুখাপেক্ষী হয় না। কুরআন বলছে পিতা-মাতা যখন মুখাপেক্ষী হয়। যেমন ছোট বেলায় তুমি তাদের মুখাপেক্ষী ছিলে। কিন্তু তারা একটু একটু মুখাপেক্ষী বেশি। কারণ ছেলে দুর্বল থেকে আস্তে আস্তে সবল হয়। আর তারা সবল থেকে দুর্বলের দিকে যায়। সেই জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা পিতা-মাতার সেবা তাদের যৌবন কালে তো করবে। কিন্তু বৃদ্ধ হলে একটু বেশি করবে। সে অবস্থায় বেশি করবে কেন? কারণ সেই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাকে তুলে এনেছেন।

তারপর আল্লাহ বলেন,

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًاؕ۰۰۲۴

‘আমাকে শৈশবে যেভাবে তারা দয়া, অনুগ্রহের সাথে লালন পালন করেছেন, আল্লাহ আপনিও তাদেরকে দয়া দিয়ে লালন পালন কর।’

আমাকে যেভাবে লালন-পালন করেছেন নিজে না খেয়ে আমাকে খেতে দিয়েছেন। একটা মাছ পেলে নিজে কাটা খেয়ে মাছটা তোমাকে দিয়েছে। যখন তুমি কম্বলে পেশাব করে দিয়েছ। যে অংশ ভিজে গেছে তা নিজে নিয়ে শুকনোটা তোমাকে দিয়েছে। নিজে না পরে তোমাকে পরিয়েছে। নিজে না খেয়ে তোমারে খেতে দিয়েছে। নিজে ওষুধ না খেয়ে তোমাকে খাইয়েছে। তোমাকেও তেমন করতে হবে। নিজে না খেয়ে তাদেরকে খাওয়াতে হবে। নিজে পরিধান না করে পিতা-মাতাকে পরিধান করাতে হবে। এরকম করতে হবে শুধু দোয়া করলে হবে না,

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًاؕ۰۰۲۴

পিতা-মাতার খেদমত কিভাবে করবো? পিতা-মাতা যেভাবে তোমার খেদমত করে তেমনিভাবে তুমিও খেদমত করবে। নিজে না খেয়ে তোমাকে খাইয়েছে। নিজে না পরে তোমাকে পরিয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا۰۰۲۳

এখানে اُفٍّ ۰۰۲۳  বলেছেন কেন? বৃদ্ধকালে মানুষের মেজাজ একটু কড়া হয়ে যায়, উল্টা-পাল্টা কথা শুনলে তাদের খারাপ লাগে। তাই তাদের খারাপ লাগার মত কোন কথা তাদের সাথে বলবে না। যেখানে اُفٍّ ۰۰۲۳  বলা যাবে না সেখানে পিতা-মাতাকে মারা যাবে? কিছু কিছ মন্দ কপাল ছেলে আছে, পিতা-মাতাকে প্রহার করে, গালি দেয়,

وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا۰۰۲۳ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَ قُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيٰنِيْ صَغِيْرًاؕ۰۰۲۴

পিতা-মাতাকে কিভাবে রাখবে? পাখি যেমন নিজের বাচ্চাকে বিভিন্ন মসিবত থেকে বাঁচার জন্য ডানা দিয়ে ঢেকে রাখে। তুমিও তোমার পিতা-মাতাকে সব দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচিয়ে পাখির মত হেফাজত করবে।

আর পিতা-মাতার কোন কর্জ থাকলে পরিশোধ কর। হাদীসে আছে,

إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ، انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ صَدَقَةٍ تَجْرِي لَهُ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.

‘মানুষ মারা যাওয়ার পর তার আমল বন্ধ হয়ে যায়) তিনটি কাজের কারণে সাওয়াব জারি (প্রবাহিত) থাকে। যথা

প্রথমত عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ (যে ইলমের কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায় সেটার একাউন্ট জারি (প্রবাহিত) থাকে)। যেমনÑ আমার উস্তাদ, তিনি মারা গেলেও আমরা যদি বেঁচে থাকি আমাদের কাজের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছতে থাকবে। إِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْـخَيْرِ كَفَاعِلِهِ  হিসেবে আমি যে উস্তাদ থেকে পড়েছি আমি যত বড় হই না কেন, যত কাজ আমি করি না কেন আমার চেয়ে আমার উস্তাদের সওয়াব বেশি হবে। কারণ আমি যা সওয়াব অর্জন করেছি সব আমলের সওয়াব উস্তাদ পাবে। আমার সাওয়াব ও তার সাওয়াব মিলে আমার চেয়ে বেশি হবে। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের একাউন্টে সওয়াব পৌঁছতে থাকবে।

একজন রিক্সাওয়ালা যখন কিয়ামতের দিন উঠবে তার আমলনামা দেখবে বুখারী শরীফ, ফতওয়ায়ে শামী। এখন সে ফতওয়ায়ে শামী তো দেখেওনি বুখারী তো দূরের কথা। সে চিন্তা করবে এটা হয়তো কোন আলেমের আমলনামা। আমি তে বুখারী পড়িনি। ভুলে কোন ফেরেস্তা কারো আমলনামা আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। ফেরেস্তা কি ভুল করে? ফেরেস্তা ভুল না করলে আমি তো বুখারী পড়িনি। এটা এখানে কীভাবে আসল। তার উত্তরে বলা হবে না! এটা তোমার আমলনামা। তুমি পটিয়া মাদরাসায় যে চাঁদা দিয়েছিলে। সেই চাঁদা দিয়ে আলেম হয়েছে আলেমরা বুখারী পড়েছে, শামী পড়েছে। সেটা তোমার আমলনামায় এসেছে। সেই জন্য একাউন্ট খোলা থাকবে ইলমের সাথে সম্পৃক্ত কাজ করলে। কেউ চাঁদা দেবে, কেউ দোয়া করবে। এভাবে ইলমের সাথে সম্পর্ক রাখবে।

দ্বিতীয়ত صَدَقَةٍ تَجْرِي لَهُ (সাদকায়ে জারিয়া)। টিউবওয়েল দিয়ে মানুষের পানির ব্যবস্থা করে দেয়া ছদ্কায়ে জারিয়া।

তৃতীয়ত وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ (পূণ্যবান ছেলে)। আর যদি নেককার ছেলে থাকে তাদের জন্য যদি দোয়া করে। তাদের কাছে মরে যাওয়ার পরও সাওয়ার পৌঁছাতে থাকবে। তাই আমাদের প্রয়োজন পিতা-মাতা মারা গেলে তাদের জন্য দোয়া করা। ইবরাহীম (আ.) ও পয়গম্বরগণ দোয়া করেছেন, رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَ لِوَالِدَيَّ ؒ۰۰۴۱।

আমরা দোয়া করি, আবদুল কাদের জিলানীর নাম ধরে, অমুকের নাম ধরে, অমুকের নাম ধরে, ধরি কি না? ইবরাহীম (আ.) ও পায়গাম্বগণ দোয়া করেছেন কারো নাম ধরে না। তারা বলেছেন। হে আল্লাহ! আমাকে মাফ কর আমার পিতা-মাতাকে মাফ কর তারপর বলেছেন, وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ۠ ؒ۰۰۴۱। এটা বলার সাথে সাথে সমস্ত মু’মিন মুসলমান অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তাই ছেলেদের কর্তব্য হলো পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা।

রাসুল (সা.)-এর দু’জন বিবি ছিল যাদের রাসুল (সা.) বেশি ভালবাসতেন। একজন খদিজা (রাযি.) অন্যজন আয়েশা (রাযি.)। রাসুল (সা.) কথায় কথায় হযরত খদিজা (রাযি.)-এর কথা বলতেন। একদিন অন্যান্য বিবিগণ বললেন, উনি তো মারা গেছেন বৃদ্ধা মহিলা ছিলেন। আমরা আপনার বিবিরা আছি। আপনি উনার কথা বলেন কেন? আমাদের কথা বলেন না কেন? রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, খদিজা ছিল আমার বিপদের বন্ধু। তোমরাতো আমার সুখের বন্ধু। খদিজার কথা না বলে কার কথা বলব।

রাসুল (সা.) কারো কাছে কোন হাদীয়া প্রেরণ করতে চাইলে খদিজার (রাযি.) বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন। ঘরে কোনদিন গোস্ত রান্না হলে খাদিজার বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন। বিবি মারা যাওয়ার পর বিবির বান্ধবীদের প্রতি খেয়াল রাখা এটা বিবির হক আমাদের মতে তার প্রতি ভালবাসার নিদর্শন।

তেমনি মাতা-পিতা মারা যাওয়ার পর তাদের বন্ধু বান্ধবদের প্রতি খেয়াল রাখা, পিতা-মাতার হক আদায়ের মত। ইবনে ওমর (রাযি.) রাস্তা দিয়ে একদা যাচ্ছিলেন, তার কাছে একটি উট ও এক গাধা ছিল পথিমধ্যে একজন গ্রাম্য ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলো। সেই মানুষকে তার উটটা দিয়ে দিলেন, তিনি তার গাধার ওপর আরোহণ করে ফিরে এলেন। তাঁর কাছে তার খাদেম জিজ্ঞেস করল একজন গ্রাম্য ব্যক্তিকে গাধাটা দিলেও তো পারতেন। উটটা কেন দিলেন? তুমি হয়তো জান না যে ওই ব্যক্তি আমার পিতার বন্ধু ছিল। আমি আমার পিতার বন্ধুকে খুশি করা আমার পিতাকে খুশি করার মত। হাদীসে আছে কোন ছেলে যদি পিতা-মাতার জীবদ্দশায় খেদমত করতে না পারে কোন কারণে। তারা মারা যাওয়ার পর যদি তাদের কবর যিয়ারত না করে তাহলে তার নাম নাফরমান (অবাধ্য) ছেলের খাতায় লেখা হবে। তাই পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করতে হবে।

রাসুল (সা.) ছোট্ট বেলায় মায়ের সাথে নানার বাড়ি থেকে আসার সময় ‘আবুয়া’ নামক স্থানে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তাকে সেই স্থানে দাফন করা হয়। এক সময় রাসুল (সা.) নবুয়তের পর সে দিকে ভ্রমণ করছিলেন। তখন তিনি মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য আল্লাহ তায়ালা কাছে প্রার্থনা করেন। রাসুল (সা.) তারপর মায়ের কবর যিয়ারত করলেন। সাহাবায় কেরামগণ বলেন রাসুল (সা.) মায়ের কবর যিয়ারতের সময় এমন কাঁদলেন। যা দেখে আমাদেরও কান্না এসে গেল। তাই আমরা পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করব। রাসুল (সা.) বলেছেন পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করাও একটি হজ।

রাসুল (সা.) বলেন, প্রাথমিক যুগে আমি তোমাদের কবর যিয়ারত হতে বারণ করেছিলাম। তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে যিয়ারত থেকে বারণ করেছিলাম। আমাদের দেশের কিছু লোক আছে কবরে গেলে মুরগী রোগ এসে যায়। মুরগির যখন রোগ হয় তখন মুরগি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে যায়। তেমনি আগেকার লোকেরাও কবরে গেলে মুরগি রোগের মত সিজদাহ করত। রাসুল (সা.) দেখলেন যে, তাদেরকে যদি কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে তারা আগের (জাহিলিয়্যাতের) মতো সিজদা করবে। তাই তাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে বারণ করা হয়েছে। পরে দেখলেন যখন তাদের কবরে সিজদাহ দেওয়ার প্রতি ঘৃণা এসে গেল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, কবর যিয়ারতে লাভ আছে। তোমরা কবর যিয়ারত কর, কবর যিয়ারতের ফলে কী হবে? প্রথমত তোমাদের মধ্যে দুনিয়া বিমুখতা আসবে। আখেরাতের প্রতি তোমাদের খেয়াল আসবে। কিভাবে আসবে সেখানে বড় বড় চৌধুরী পড়ে রয়েছে, বড় বড় লোক পড়ে রয়েছে এরা চলে গেছে। আমরা কি থাকতে পারব? এটা মনে আসবে। এখন তো দরগাহে গেলে মনে এরকম আসে না বরং আসে কি? এই দরগাহ কতই সুন্দর এটার মতো একটা ঘর নির্মাণ করতে পারতাম। এজন্য রাসুল (সা.) সাহাবাদের কবর যিয়ারত থেকে মানা করেছেন। পরে যখন সেই আশংকা চলে গেছে তিনি বললেন, তোমরা তা কর।

কবর যিয়ারতের আমার ফায়দা বেশি নাকি কবরবাসীর ফায়দা বেশি? আমার ফায়দা বেশি। কবর ওয়ালা আমাকে কিছু দিতে পারে না إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ، انْقَطَعَ عَمَلُهُ কবরে যে গেছে সমুদ্রে সাতাঁরুর ন্যায়। সমুদ্রে সাঁতারু যেমন বাঁচার জন্য কোন কাঠ ধরতে চায় তেমনি মানুষ মারা যাওয়ার পর সে চায় তার আত্মীয়স্বজন ভাই-বন্ধুদের কেউ তার জন্য কিছু পাঠাচ্ছে কিনা। সে আমার মুখাপেক্ষী না আমি তার মুখাপেক্ষী? আমরা কবরে তাদেরকে দিতে যাব। তাদের থেকে নিতে যাব না। দুনিয়াতে থাকতে সে দরগাহঅলা কিছু দিতে পারেনি। কবর থেকে কি দেবে।

বল ছিলাম যিয়ারতের কথা। আমরা কবর যিয়ারত করব এবং বেশি বেশি পিতা-মাতার করব যিয়ারত করবে। বিশেষ করে জুমাবারে করবো।

হাদীস শরীফে আরো আছে, পিতা-মাতার কথা মানতে হবে। সাহাবায়ে কেরামগণ জিজ্ঞাসা করলেন। যদি তারা সন্তানের ওপর যুলুম করে? রাসুল (সা.) বললেন যদিও যুলুম করে! তারপর ও তাদের কথা মানতে হবে। সেই জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيْكَ (তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার)।  তাই পিতা-মাতার কথা মানতেই হবে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) মুসলমান হয়ে গেছেন। কিন্তু তার ‘মা’ মুসলমান হননি। তিনি প্রতিদিন তাঁর মাকে দাওয়াত দিতেন। একদা তিনি মাকে দাওয়াত দিচ্ছেন। মুসলমান হওয়া তো দুরের কথা উল্টো রাসুল (সা.)-কে গালি দেওয়া শুরু করল। তিনি রাসুলের (সা.) দরবারে এসে তা বর্ণনা করলেন। রাসুল (সা.) বললেন, তাই নাকি? তিনি আবার বললেন আমার মায়ের জন্য দোয়া চাই। রাসুল (সা.) বললেন হে আল্লাহ উম্মে আবু হুরাইরাকে (আবু হুরাইরার মাকে) হেদায়ত করুন। কে দোয়া করেছেন? রাসুল (সা.) দোয়া করছেন। আবু হুবাইরা (রাযি.) জানেন, রাসুল (সা.) এর দোয়া কবুল হবে। তাই তিনি বাড়ির দিকে দৌড়ছিলেন। বাড়িতে পৌঁছে দেখলেন পানির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি দরজায় করাঘাত করলেন। তার মা গোসল সেরে ভালো কাপড় পরিধান করে দরজা খুলে দিলেন। তারপর তাঁর মা কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। রাসুল (সা.) এর দেয়ার বরকতে। তাই আমাদের ওপর ফরজ (জরুরি) পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করা ও তাদের উত্তমভাবে খেদমত করা।

অনুলিখন: মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ

ছাত্র: আদব বিভাগ, জামিয়া পটিয়া-২০১৭

(মাসিক আত তাওহীদ, নভেম্বর ২০১৭)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ