জামেয়া ওয়েবসাইট

রবিবার-৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি-৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা বিতাড়নে মিয়ানমারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন: বাংলাদেশকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে

 

আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার বাহিনীর নজীরবিহীন নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যার মূখে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। আরো কয়েক লাখ নো ম্যানসল্যান্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। গত কয়েক দশক ধরে ৪/৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। বলতে গেলে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অর্ধেক বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। শরণার্থীর এ স্রোত কক্সবাজারে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে; পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানবতায় উজ্জীবিত ও আবেগ তাড়িত হয়ে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, যা প্রশংসনীয়। বিদেশি ত্রাণসামগ্রীও আসছে। এসব তৎপরতা কিন্তু একান্ত সাময়িক। কয়েক মাস পর এটা স্বাভাবিকভাবে থাকবে না। তখন ৮ লাখ শরণার্থীর কী অবস্থা হবে? খাদ্য, বস্ত্র, পানীয়, চিকিৎসা ও স্যানিটেশন কে যোগাবে? প্রয়োজন কোন আইন মানে না। হয়তো জীবিকার তাগিদে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

বিগত ৩০/৪০ বছর ধরে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের কাজ সুপরিকল্পিতভাবে শুরু করে। নাগরিকত্ব হরণ, চলা-ফেরায় বিধি-নিষেধ, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিতকরণ, নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। কথিত জঙ্গি হামলার অজুহাত তুলে মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনী ও রাখাইনরা যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্মম নিপীড়ন চালায়, উঠতি বয়সের মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। মিয়ানমার কূটনৈতিকভাবে তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে এ কথা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ‘রোহিঙ্গারা বহিরাগত বাঙ্গালী ও সন্ত্রাসী’। ফলে ভারত, চীন, ইসরাইল, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব রাষ্ট্রের আবার নিজেদের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থও রয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত মংডুকে গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে।

অপর দিকে বাংলাদেশের প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ ও দায়সারা গোছের। বিগত ৩/৪ দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত ৪লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাত্র ৩০/৩৫ হাজার নিবন্ধিত মানুষ জাতিসংঘের নির্ধারিত রেশন পায়। শরণার্থী শিবিরে যে মানুষগুলো বাস করে তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগের অন্ত নেই। এক কথায় তাদের জীবন মানবেতর। সরকারি কঠোর নজরদারির অভাবে দালালরা হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। তারা সেসব দেশে কোন অপরাধ করলে তার দায়ভার সঙ্গতভাবে বাংলাদেশের ঘাড়ে বর্তায়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক ফোরামে ও বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সামনে জোরালোভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার সম্প্রতি আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিবাচক ও দূরদর্শী পদক্ষেপ। জনসংখ্যা বিবেচনায় এনে বুথের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।

সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সামনে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে আরো সোচ্চার ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। নরম কথায় কাজ হবে না; মগের কাছে ভব্যতা ও সভ্যতার মূল্য নেই। বাংলাদেশকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। কূটনৈতিক পন্থায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে কুশলী ভূমিকা নিতে হবে। শরণার্থীদের জন্য নিয়মিত বৈদেশিক সাহায্য আসার ব্যবস্থা করা না গেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এ অঞ্চলে। এ আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে নাগরিক সুবিধা নিয়ে সম্মানজনকপন্থায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই সমাধান।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ