বুধবার-২১শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি-১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওলামা হযরত! তাবলীগের সাথীদের নিয়ে ভাববেন কি?

একজন মানুষ চারটা মাস দেয়ার জন্যে তৈরি হয়। দীন শেখার জন্যে। দীনের মেহনত শেখার জন্যে। পুরো জীবনটা দীনের ওপর চলার জন্যে। বড় আশা নিয়ে সে বের হয়। কঠিন কুরবানী সে দেয়। ব্যবসা-বানিজ্য ছেড়ে আসে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। শত কষ্ট সহ্য করতে সে তৈরি হয়। খাওয়ার কষ্ট। ঘুমানোর কষ্ট। নিজের শত অভ্যাসকে কুরবানী দিয়ে নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার কষ্ট।

কিন্তু যদি এমন হয়, এত কষ্টের পরও সে দীনকে সঠিকভাবে বুঝলো না, সঠিক দীন সে শিখতে পারলো না, তাহলে তা কতই না কষ্টের কথা হবে। একটা মানুষ দীন শেখার জন্যে বের হলো, কিন্তু সে শিক্ষক পেলো না। এই যে ব্যর্থতা—এর দায় কে নেবে?

উম্মতকে সঠিক দীন শেখানোর জিম্মাদারি ওলামাদের। উম্মতের বিশাল অংশের দীন শেখার তলবই নেই। একটা বিশেষ অংশ পুরো জীবনটা দীন শেখার জন্যে ফারেগ করে। তারা খাস তালেবে ইলম। তাদের তালীম ও তারবিয়াতের জন্যে সর্বোচ্চটা দেয়া চাই। এর জন্য যতটুকু করা দরকার, তার মাঝেও অনেক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে আমরা যোগ্য মানুষ পাচ্ছি না।

এর পরের স্তরে রয়েছে ওই সমস্ত মানুষ, যারা কিছু সময় ফারেগ করছে দীন শেখার জন্যে। চারমাসও অনেক বড় একটা সময়। কিন্তু যদি এই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো না হয়, তাহলেও কিন্তু অনেক বড় সমস্যা। চারমাস লাগিয়ে সাথী পুরোনো হয়ে যায়। কিন্তু চারমাসকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে যেখানে সে পৌঁছার কথা ছিলো, সে সেখানে পৌঁছতে পারে না। কারণ সে তো তার সময়কে ফারেগ করলো, কিন্তু যোগ্য উস্তাদ সে পেলো না। এমন কাউকে সে পেলো না, যে তার সামনে পুরো দীনটাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে।

এই চারটা মাস তারই মতো দীন সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারণা রাখে, এমন কিছু মানুষের সাথে কাটিয়ে সে ফিরে যায়। সাথে নিয়ে যায় দীন সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা। তবে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা, দীনের প্রতি ভালোবাসা, আখিরাতের ফিকর নিয়ে সে যায়। তাও এক বিশাল সম্পদ। যা তার ঘাটতি থেকে যায়, তা কেবলই যোগ্য উস্তাদ না পাওয়ার কারণে।

মেহনত নিয়ে আজ অনেক কথা হচ্ছে। সংশোধনের কথা অনেকে বলছেন। কিন্তু যোগ্য ওলামাগণ যতক্ষণ সময় বের না করবেন, সময় দিতে আসা সাথীদের সঠিক তালীম-তারবিয়াতের ফিকর না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু সমস্যা রয়েই যাবে। ওলামাগণ শেখানোর জন্যে এর থেকে যোগ্য শাগরেদ আর কই পাবেন, যারা শেখার জন্যেই বের হয়?

আমি চল্লিশ দিনের জামাতে চেষ্টা করে দেখেছি। কেবল মুযাকারার সময়টুকু কাজে লাগিয়ে পুরো দীন সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা সহজে দেয়া যায়। জরুরতে দীনের একটা বড় অংশের তালীম দেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু শেখানেওয়ালা না থাকলে কেবল খাওয়ার আদব ও ঘুমের আদবেই পুরো চিল্লা পার হয়ে যায়।

এই যে সাধারণ লোকেরা খণ্ডকালীন সময়ের জন্যে দীন শিখতে বের হয়, এদের দীন শেখা যেন কার্যকর হয়—সেটি নিয়ে কারা ভাববেন? এদের তালীম তারবিয়াতের জন্য যোগ্য জনগোষ্ঠী কারা তৈরি করবেন?
ওলামা হজরতগণ যদি নিজের ছাত্রদের নিয়ে জামাতে বের হয়ে আওয়ামদের মাঝে দীন পৌঁছানোর কৌশল ছাত্রদের হাতে কলমে শেখাতেন, নিশ্চয় কার্যকর একটা সমাধান বের হয়ে আসতো।
এদিকে যদি আমাদের মুরুব্বিয়ানে ওলামায়ে কেরামের কেউ একটু মনোযোগী হতেন!

আবদুল গাফফার খান
পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ