বৃহস্পতিবার-২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি-১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল-জামিয়ার দিন-রাত

মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফিজী রহ. স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল

জামিয়ার মুহতামিম মুফতী আবু তাহের কাসেমী সাহেব দা.বা.-এর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

মাওলানা আকরাম সাদী : সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরস্থ হাফেজ্জী হুজুর মসজিদ মাঠে মরহুম মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্মরণে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের বরেণ্য আলেম-ওলামা ও বিভিন্ন ইসলামী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর খলীফা, শাইখুল হাদীস মাওলানা ইসমাইল ইউসুফ বরিশালী।
বক্তব্য প্রদান করেন—বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী, শাইখ যাকারিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাইদ, মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. ঈসা শাহেদী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, খেলাফত মজলিসের উপদেষ্টা মাওলানা খুরশীদ আলম কাসেমী, ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা জুবাইর আহমাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সংগঠক সানাউল্লাহ খান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী সুলতান মুহিউদ্দীন, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী বশির উল্লাহ, খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের আমীর মুফতী নূর হোসাইন নুরানী, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, জামিয়া এমদাদুল উলূম ফরিদাবাদের মুহাদ্দিস মুফতী ইমাদুদ্দীন, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুহাদ্দিস মুফতী রফিকুল ইসলাম মাদানী, মারকাজুত তারবিয়্যাহ বাংলাদেশের পরিচালক মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা শেখ আজিমুদ্দীন, মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানী, নায়েবে আমীর মাওলানা সাঈদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী এবং অন্যান্য প্রথিতযশা আলেমগণ। যেমন: মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী, রুকনুজ্জামান রোকন, মাওলানা ইহতেশামুল হক উজানী, মাওলানা মূসা বিন ইজহার, মাওলানা মাহমুদুল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহ. এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর ‘শরাফত’ ও অমায়িক আচরণ। তিনি ছিলেন সহজ-সরল, নম্র প্রকৃতির মানুষ। তিনি যেকোনো মানুষের সঙ্গে ভাইয়ের মতো আচরণ করতেন এবং প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। বক্তারা আরও বলেন, তিনি সহজে রাগ করতেন না—যা ছিল তাঁর বিশেষ গুণ।
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহ. আজীবন খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন এবং সে লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে গেছেন। এখন তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সবার ওপর।
আল্লামা মুফতী আবু তাহের কাসেমী সাহেব দামাত বারাকাতুহু বলেন: “আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী রহ.-এর আলোচনা করতে গেলে স্বয়ং হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর কথা চলে আসে। আমি স্মৃতিচারণ করতে চাই ১৩৯৭ হিজরিতে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর দু’জন সম্মানিত খলীফার সাথে সাক্ষাৎকালীন অভিজ্ঞতার কথা। আমি তাঁদের চেহারা দেখে কুরআনের এই আয়াত স্মরণ করি:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
(হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎলোকদের সঙ্গ গ্রহণ করো)।
এই বুযুর্গদের সাক্ষাত আমার জীবনের স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে। হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর আলোচনা নতুন করে করার প্রয়োজন নেই। কারণ তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। তাঁর সুযোগ্য সন্তান আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহ. সম্পর্কেও বহু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ইতোমধ্যে হয়েছে।”
তিনি বলেন—“হাফেজ্জী হুজুর রহ. ছিলেন সেইসব আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের একজন, যাঁদের চেহারা দেখলেই মানুষ হেদায়াত পেত। তিনি ছিলেন সৃষ্টির প্রতি দয়ালু এবং সত্য-নীতি ও খেলাফতের এক নির্ভীক সৈনিক।”
তিনি একটি উর্দু শায়ের উল্লেখ করেন:
نہ کتابوں سے، نہ وعظوں سے، نہ زر سے پیدا
دین ہوتا ہے بزرگوں کی نظر سے پیدا
অর্থাৎ, দীন কিতাব-পুস্তক, বক্তৃতা বা ধনসম্পদ থেকে নয়; বরং আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের দৃষ্টিতেই বিকশিত হয়। হাফেজ্জী হুজুর রহ. এই শে’রের এক জীবন্ত বাস্তবতা ছিলেন।
হাদীসে পাকে এসেছে—
قال النبي ﷺ: إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث: صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له
(সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ “মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি ব্যতিক্রম-
১. সদকা জারিয়া,
২. এমন ইলম (জ্ঞান), যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়,
৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।”
এই হাদীসের পূর্ণ মিসদাক ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর রহ.। তিনি তাঁর সুযোগ্য সন্তানগণকে রেখে গিয়েছেন। তারা খেলাফতের জন্য যে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাও ছিল এই হাদীসের বাস্তব প্রতিফলন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁদের আদর্শে চলার তাওফিক দান করেন। আমীন।

৩ মে সমাবেশ: জামিয়ার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা

এহতেশাম আনাস : দেশের নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের প্রক্রিয়ায় যখন নানা সংস্কার কমিশন গঠিত হচ্ছিল, তখন নারী বিষয়ক কমিশন একটি বিতর্কিত প্রস্তাবনা পেশ করে। সেখানে ইসলামী পারিবারিক আইনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শরীয়াহর প্রতি স্পষ্ট বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করে, ইসলামসম্মত বিবাহ, তালাক ও ভরণপোষণের বিধান নারীর প্রতি অবিচার তৈরি করছে—যা একেবারে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
এরচেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তারা পতিতাবৃত্তিকে ‘পেশা’ হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব দেয়—যা আমাদের সমাজ ও মূল্যবোধকে চরমভাবে আঘাত করে। শ্রমের সংজ্ঞাকে বিকৃত করে পাপাচারকে স্বাভাবিক জীবিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত স্পষ্ট।
এই ইসলামবিদ্বেষী অবস্থানের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রতিবাদ জানায় এবং ৩ মে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল গণজমায়েতের ডাক দেয়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে আল-জামিআল-ইসলামিয়া পটিয়া ২৫ এপ্রিল জুমার পর বিশাল মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
হাজারো ছাত্র ও শিক্ষক শহরের রাজপথে ইসলামী আইন রক্ষার দাবি নিয়ে নেমে আসে। মিছিল ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও অত্যন্ত মার্জিত। বক্তব্যে ছিল সুস্পষ্ট ও সংযত প্রতিবাদ—যেখানে ইসলাম, শরীয়াহ ও নারীর মর্যাদা রক্ষার যৌক্তিক অবস্থান তুলে ধরা হয়।
জামিয়ার এই ঐতিহাসিক ভূমিকা আবারও প্রমাণ করে যে, ইসলামবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা সর্বদা সজাগ ও সক্রিয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ এই প্রতিবাদ আজকের সমাজে দীনদারিত্বের উজ্জ্বল নিদর্শন।

প্রশিক্ষণমূলক তর্কবিতর্ক অনুষ্ঠানে মুখরিত জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিনিধি
জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম ● ১৪ মে
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এক বর্ণাঢ্য, সুশৃঙ্খল ও জ্ঞানগর্ভ তর্কবিতর্ক অনুষ্ঠান। যা একাধারে ছিল প্রশিক্ষণ, চেতনা ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের অনবদ্য বহিঃপ্রকাশ। উপমহাদেশের হক-বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও মতবাদের সংঘাতে হকের বিজয় কতটা সুদৃঢ় দলিল ও যুক্তিনির্ভর হতে পারে—তারই এক প্রাণবন্ত উদাহরণ ছিল এ আয়োজন।
জামিয়ার ‘তর্কবিদ্যা বিভাগ’-এর বার্ষিক আয়োজনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এবারের আলোচ্য বিষয় ছিল: ‘বেরলভিয়্যাত ও রদ্দে বেরলভিয়্যাত’। অনুষ্ঠান শুরু হয় এশার নামাযের পর রাত ৯টায়, জামিয়ার দারুল হাদীস মিলনায়তনে। কুরআন তেলাওয়াত ও হৃদয়গ্রাহী নাশিদ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী পর্ব সম্পন্ন হয়।
ভূমিকাস্বরূপ উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তর্কবিদ্যা বিভাগের প্রধান হযরত মাওলানা আখতার হোসাইন আনোয়ারী সাহেব। হুজুর তাঁর বক্তব্যে তর্কবিতর্কের গুরুত্ব ও ছাত্রদের প্রস্তুতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানের মূল পর্বে ছাত্রদের দু’টি দলে ভাগ করা হয়। এক দল ‘বেরলভি মতাদর্শের’ পক্ষ গ্রহণ করে, অপর দল সেই মতাদর্শ খণ্ডনের মাধ্যমে হকের অবস্থান তুলে ধরে। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবেই ‘বাতিল পক্ষ’ নিজেদের দৃষ্টিকোণকে জোরালো যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছে; যেন বাস্তব বাতিলপন্থীদের অবস্থান হুবহু অনুকরণ করা যায়। অপরপক্ষে ‘হক পক্ষ’ শরঈ দলিলের আলোকে তাদের দলিল খণ্ডন করে ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদা তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব ছিল এর প্রেজেন্টেশনে। আন্তর্জাতিক মানের তর্কবিতর্কের আদলে সাজানো এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জামিয়ার প্রবীণ ও মেধাবী উস্তাদগণ—যাঁদের দীপ্তিময় উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস ছিল।
বিশেষ করে, বাতিল পক্ষের ছাত্ররা তাদের দলিল পেশের শুরুতেই বেরলভি অনুসৃত রীতি অনুযায়ী মীলাদ-কিয়াম পরিবেশন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হকপন্থী ছাত্ররা তা শরীয়তের আলোকে খণ্ডন করে যথাযথ জবাব প্রদান করে।
ছাত্রদের পারফর্মেন্স দেখে উস্তাদগণ সন্তোষ ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানের পরিবেশ ছিল উদ্দীপনাময় ও প্রাণবন্ত।
আয়োজন শেষে সকলেই মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, যেন তিনি সবাইকে দীন ইসলামের ধারক ও বাহক হিসেবে কবুল করেন এবং বাতিল মতবাদগুলোর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন।
আমীন।

সোহরাওয়ার্দীতে গণজমায়েত জামিয়ার প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ

১ মে যোহরের নামাযের পর জামিয়ার জামে মসজিদে সিনিয়র মুহাদ্দিস মুহতারাম আখতার হোসাইন আনোয়ারী হাফিজাহুল্লাহ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এক উদ্বুদ্ধকর বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, নারীনীতি সংস্কারের নামে ইসলামবিরোধী ধারা চাপিয়ে দিতে চায় একটি মহল। এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম ৩ মে সোহরাওয়ার্দীতে গণজমায়েত আহ্বান করেছে। এতে অংশগ্রহণ আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
তিনি হাদীসের আলোকে বলেন, অন্যায় প্রতিরোধে হাত, মুখ এবং অন্তর দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো ঈমানের দাবি। এ প্রেক্ষিতে জামিয়ার ছাত্রদের উপস্থিতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিনিয়রদের নামের তালিকা জমা দিতে বলেন। জুনিয়রদের নিরাপত্তার কারণে যেতে নিষেধ করা হয়। তবে ছোটদের আবেগ ছিল চোখে পড়ার মতো।
সিনিয়রদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। বহু শিক্ষার্থী বাড়ি না গিয়ে সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। শেষ পর্যন্ত দাওরা ও কিছু মেশকাত শ্রেণির ছাত্রদের নিয়ে চার-পাঁচটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
২ মে রাত ১১টায় বাস যাত্রা শুরু করে। ছাত্রদের মধ্যে ছিল ঈমানী আবেগ, নতুন পোশাক, আতরের ঘ্রাণ আর গুনগুন করা নাশিদ। গাড়ি চলেছে শান্ত রাতের নীরবতা ভেদ করে, বাতাস আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে।
ভোরে ঢাকায় পৌঁছে ছাত্ররা ফজরের নামায আদায় করে বাইতুল মোকাররম চত্বরে অবস্থান নেয়। পরে হেফাজতের বিশাল সমাবেশে তারা অংশ নেয়। মুরব্বিদের সুশৃঙ্খল পরিচালনায় বক্তৃতা শুরু হয়।
মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী হাফিজাহুল্লাহ জোরালো বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
১. নারীনীতির নামে ইসলামবিরোধী প্রস্তাব বাতিল করতে হবে।
২. শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার চাই।
৩. পিলখানা হত্যা ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বিশ্বময় মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
যোহরের আযানের পর সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। জামিয়ার ছাত্ররা নামায পড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে আসে। রাত বারোটায় সফল সফর শেষে জামিয়ায় পৌঁছায় সবাই, আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লামা সুলতান যওক নদভী (রহ.)-এর ইন্তিকালে জামিয়া প্রধানের গভীর শোক

২ মে 2025 খ্রি. উপমহাদেশের বরেণ্য আলেম, জামিয়া দারুল মা’আরিফের মুহতামিম, আল্লামা সুলতান যওক নদভী (রহ.) ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সুযোগ্য মুহতামিম আল্লামা মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী দা. বা.। তিনি বলেন, আল্লামা সুলতান যওক নদভী (রহ.)-এর ইন্তেকাল কেবল একজন আলেমের চলে যাওয়া নয়; বরং ইলম, আমল ও আখলাকের এক দীপ্ত আলোকবর্তিকার নিভে যাওয়া।
তিনি ছিলেন একাধারে প্রজ্ঞাবান আলেম, দূরদর্শী মুরব্বি ও স্নেহশীল পথপ্রদর্শক। দীনের খেদমতে তাঁর অবদান, দাওয়াতী প্রজ্ঞা, ও মাদরাসা পরিচালনার দক্ষতা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর শিক্ষা, ভাষা ও নেতৃত্ব অসংখ্য মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে।
জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পক্ষ থেকে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং আল্লাহর কাছে তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং আমাদের সবাইকে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে দীনের খেদমতে আত্মনিয়োগের তাওফিক দেন—আমীন।
আমরা তাঁর পরিবার, ছাত্র, সহকর্মী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ