মোহাম্মদ জাবের বিন শিহাব উখিয়ভী
ইতিহাসের মহাকাব্যে কিছু চরিত্র থাকে, যাঁরা শুধু সময়ের ক্যানভাসে নয়, ন্যায় ও নীতির চিরস্থায়ী মর্মরপ্রতিমায় অঙ্কিত হয়ে থাকেন। খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তেমনই এক অতুলনীয় মহামানব—যিনি ন্যায়বিচারের নক্ষত্রপুঞ্জে শ্রেষ্ঠতম এক দীপ্ত নক্ষত্র।
জাহেলিয়াতের কঠিন প্রান্তর থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন হেদায়াতের সৌরলোকের দিকে। চরিত্রে ছিল প্রাগাঢ় দৃঢ়তা, চিন্তায় ছিল দুর্লঙ্ঘ দূরদৃষ্টি, আর হৃদয়ে ছিল আল্লাহভীতির জ্যোতির্ময় সমুদ্র। তাঁর শাসন ছিল ধর্মনিষ্ঠ সুবিচার, সামাজিক সাম্য এবং মানবিক মর্যাদার এক অপরূপ প্রতিমূর্তি।
উমরের (রা.) গভীর রাত্রির নির্জনতায় নগর পরিদর্শন, অনাহারী বিধবার পাশে বসে নিজ হাতে রুটি সেঁকে দেওয়া, কিংবা ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নায় তাঁর চক্ষুর সজলতা—এসবই এক বিরল মানবিকতার দৃষ্টান্ত। ক্ষমতার শিখরেও তিনি ছিলেন মাটির নিকটবর্তী, বিনয়ের অবিচল ছায়ায় অবগাহিত।
তিনি ঘোষণাদান করেন—“ফোরাতের তীরে এক কুকুরও যদি না খেয়ে মরে, উমর এর দায় এড়াতে পারবে না।” এ এক অসামান্য ন্যায়বোধের সাক্ষর, যা বিশ্বশাসনের ইতিহাসে যুগান্তকারী অনুপম দৃষ্টান্ত।
উমর (রা.) কেবল একজন শাসক নন; তিনি ছিলেন এক নীতিবদ্ধ বিপ্লব, এক আত্মমর্যাদাশীল সভ্যতার স্থপতি। তাঁর জীবনগাথা এক মহাকাব্যিক সৌন্দর্য, এক জ্যোতির্ময় পাঠ—যা আজও শাসন, ন্যায় ও মানবতার অম্লান মানদণ্ড।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।