মোহাম্মদ আনাছ আনোয়ার
বিকাল ছিল মেঘলা। কিন্তু বাতাসে এক অদ্ভুত রকমের স্বচ্ছতা। যেন বর্ষার প্রথম ফোঁটার মতো কোনো এক নতুন জীবনের পূর্বাভাস।
গাযা শহরের কোনো এক কোণে বাস করতো ছোট্ট ত্বোহাদের পরিবার। শহর ছিল নিরব। কিন্তু হঠাৎ নিরব এই শহরটি কেঁপে উঠে গোলা-বারুদের ঝড়ে।
ছোট্ট ত্বোহা থমকে যায়। মনে ছিল আত্মবিশ্বাস। কিন্তু কোথাও যেন ছিল এক গভীর অনিশ্চয়তা।
এতো শব্দ কীসের? কেনো মেঘ আকাশের নিচে অদ্ভুত রকমের কান্না করে? তাই ত্বোহা বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে :
– বাবা! এই বিকট শব্দ কিসের?
ত্বোহার নিষ্পাপ চেহারায় হাসিমুখে চুমু খেয়ে বলেন :
– আব্বু! আমরা জান্নাতের মেহমান তো, তাই আতশবাজি জ্বালিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
ছোট্ট ত্বোহা বাবার দাঁড়ি ছুঁয়ে বলে :
– বাবা! জান্নাত কী? ওখানে গিয়ে আমরা কী করবো?
ত্বোহার বাবা এবার কান্না চেপে জবাব দিলেন :
– আব্বু! জান্নাত এক ধরনের বাগান। ওখানে আমরা পাখি হয়ে ঘুড়ে বেড়াবো। ত্বোহা এবার কান্না জুড়ে দিল। চোখের পানি জড়ো হয়ে গাল বেয়ে থুতনির নিচে নেমে এলো। সে বললো :
– বাবা আমাকে এক্ষুনি জান্নাতে নিয়ে চলো। আমি জান্নাতে যেতে চাই। জান্নাতের পাখি হয়ে ঘুড়ে বেড়াতে চাই।
ত্বোহার বাবা আশ্বাস দিয়ে বলেন :
– অপেক্ষা করো, আব্বু! আমরা অবশ্যই জান্নাতে যাবো। জান্নাতে পাখি হয়ে ঘুড়ে বেড়াবো।
বাবার কাছে এ কথা শুনার পর ত্বোহার মনে এক অজানা শিহরণ বয়ে যায়। তার চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। কিন্তু ত্বোহা কি জানত, এ ঘুমই হবে ধরার বুকে তার শেষ ঘুম? আজই সে জান্নাতের মেহমান হয়ে যাবে? জান্নাতের পাখি হয়ে ঘুরে বেড়াবে?
হ্যাঁ, আজ রাতেই ইজরাইলী বর্রর বাহিনী গাযার প্রতি অলিতে-গলিতে গোলা-বারুদের তুফান বইয়ে দেয়। আর সেই তুফানে বিধ্বস্থ হয়ে স্বপরিবারে জান্নাতের পাখি হয়ে যান ছোট্ট ত্বোহা—সে এখন জান্নাতের মেহমান।
হে ইজরাইলী নরপিচাশ!
যে জাতি জন্মের পর মৃত্যুকে উপহারস্বরূপ গ্রহণ করে, তাদের কখনো ধ্বংস করতে পারবে না। আর কয়টা দিন আনন্দ কর, অচিরেই তোমাদের কবর রচনা করা হবে—ইনশাআল্লাহ।
লেখক : ছাত্র, জামাতে সিওম, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।