বৃহস্পতিবার-২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি-১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছড়া-কবিতা (জুন ২০২৫)

আকুতি

তাহেরা জান্নাত আতমিম

শেষ যামানার উম্মাতি
এটাই ছিলো নিয়তি

তনু মনে ইচ্ছে আমার
পেতে শুধু নবীর দীদার।

নবী আমার ভালোবাসা
ময়দানে হাশরে আশা-ভরসা।

ঘাটতি থাকবে ঈমানে
নবী প্রেম না থাকলে মনে-প্রাণে।

সাজালে জীবন সুন্নাতে
প্রবেশ করব জান্নাতে।

প্রস্ফুটিত মনে বাজে
কল্পনারা শুধুই সাজে।

ধুলো মেখে রওজাতে
ধন্য হবো এ জগতে।

 

বন্ধু তুমি

আসাদুজ্জামান আসিফ

বন্ধু, তুমি পাও কি শুনতে
হাজার শিশুর কান্না,
ওইযে দেখ সব গেছে ভুলে
নয়া পোশাকের বায়না।

বন্ধু, তুমি পাও কি দেখতে
মা-বোনদের ইজ্জত,
নৈরাশ তারা আপন শুদ্ধে
নব তাবুকের নিরত।

বন্ধু তুমি পাও কি বলতে
চল চল আজ যুদ্ধে,
রব স্বীকারীর ওপর আজি
শত্রুরা আছে ক্রুদ্ধে।

বন্ধু তুমি পাও কি নিতে
আশ-শুহাদার ঘ্রাণ,
যে ঘ্রাণেতে আছে মিশ্র
সবুজ পাখির প্রাণ।

 

আল্লামা মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী হাফি.-এর প্রতি

একরাশ শ্রদ্ধা

আব্দুল হামিদ (শিহাব)

যার চোখে দীপ্ত পথচিহ্ন, যার শব্দে জাগে দাওয়াতের দীপ্তি,
তিনি সেই তাহের কাসেমী—নদভীর বরকতের পুঁথি।
পটিয়ার বুকে তাঁর ছায়া, মাথার ওপর ইলমের তাজ,
তাঁর সান্নিধ্যে সময় যেন পায় হৃদয়ের মুক্ত অনুরাগ।

তাফসীরে তাঁর দীপ্ত ব্যাখ্যা, হাদীসে সুচারু জ্ঞান,
কথা বলেন যেমন কোমল, ভাবনায় থাকে কুরআনের তামান্না।
চোখে সাহস, বুকে দয়া, সবার মাঝে রাখেন জ্যোতি,
তিনি যেন দীনের বাগিচায় হাঁটা এক আলোকবাতি।

কেউ যদি দেয় তির্যক বাক্য, মুখে তাঁর ঝরে না ক্ষোভ,
বলেন—“তারা ক্লান্ত হবে, আমি হবো না আহত একরোখ।”
উদারতার এক জলছবি, তাহাজ্জুদের কান্না সঙ্গী,
আল্লাহভীতির অন্তরালে—এক পরহেযগারের ধ্বনি।

থাকুন তিনি ছায়া হয়ে, দীনের পথে অটল,
উমর হোক বরকতে ভরা, হৃদয় হোক রহমতে চঞ্চল।
ইলমের এই দীপ্ত প্রদীপ, নেভে না যেন কোনো কাল,
তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে পড়ুক, মানুষের জীবনে অনন্তকাল।

 

আলোর নিদ্রাহীন স্বপ্ন

আসেফ চৌধুরী

নিশ্চুপ দাঁড়িয়েছিলাম—
ভিড়ের মাঝে, ছায়ার স্রোতে,
আলোর তৃষ্ণা জাগে বুকে,
কিন্তু তারা, হায়! গণনার মায়াজালে—
কে বড়, কে ছোট, কে কণ্ঠে চাপা সত্য ঢাকে।

নিঃশব্দ আকাশ দেখেছি আমি,
নক্ষত্ররা ঝিমায়, যেন ম্লান প্রদীপ—
মাটিতে সত্য নিঃস্ব, নির্বাসিত ফেরেশতার মতো,
হক দাঁড়ায় দূরে, নির্জন দ্বীপ।
শাসনের সিংহাসনে বসে অন্য নাম—
যার মুখোশে লুকায় অন্ধকারের ধাম।

তারা বলে, “এই আইন, এই প্রথা!”
তারা বলে, “মানুষই প্রভু, মানুষই গতি!”
কিন্তু আমার কানে বাজে এক নির্মল সুর—
“হুকুম শুধু আল্লাহর, তিনিই একমাত্র পথী!”
(সূরা ইউসুফ: ৪০)

বাতাসকে জিজ্ঞেস করি, হে নিঃশ্বাসের স্রোত!
“দেখেছ কি জাতিকে, যারা ভোটে গোনে হক-বাতিল?”
বাতাস কাঁদে, উত্তর দেয় না—
শুধু গায় বিস্মৃত আয়াতের সুর,
যেন কোনো প্রাচীন কিতাবের পাতা উড়ে।

তারা বেছে নেয় নেতা—
যার কণ্ঠে কুরআনের ধ্বনি নেই,
যার হৃদয়ে তাকওয়ার আলোর বদলে
অঙ্কিত হয় নিজস্ব পতাকা, অহংকারের ছায়ায়।
নবীর নামে অপমান বয়,
আর তারা বলে, “এই তো স্বাধীনতার গান!”
কিন্তু আমার হৃদয়ে বাজে—
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিও না…”
(সূরা আহযাব: ৫৭)

গণতন্ত্রের নৌকা ভাসে, জনতার স্রোতে,
কিন্তু হক ডুবে যায়, অতল জলে—
কারণ সে জনতা কুরআনের আয়নায় দেখে না মুখ,
দেখে শুধু পছন্দের মুখোশ, অপছন্দের ধোঁকা।

ইসলাম বলে—
নেতৃত্ব আমানত, আরশের দরবারে জবাবদিহি,
কিন্তু তারা চিৎকার করে—
“নেতা তো সেই, যাকে জনতা চায়!”

আল্লাহ! এ কেমন খেলা, কেমন মায়া?
যেখানে সংখ্যার দাপটে সত্য বদলায়,
অপরাধ হয় অলঙ্কার, চরিত্র হয় কলঙ্কিত ছায়া।

আমি স্বপ্ন দেখি—
এক শাসন, যেখানে রাতের আঁধারে হক জ্বলে,
এক রাজ্য, যেখানে কুরআনই সংবিধান,
রাসূলের (ﷺ) পথই নীতির শেষ মানচিত্র।
মানুষকে ঠেলি না দূরে,
কিন্তু বলি—আল্লাহর ইচ্ছাই হোক সর্বোচ্চ,
কারণ যিনি সৃষ্টি করেন, তিনিই জানেন—
কার হাতে শাসন, কে হবে বাহির।

শেষরাতের তারারা সাক্ষী,
আমি কাঁদি এক নামাযী রাষ্ট্রের তরে—
যেখানে আয়াতের সুবাসে চলে হুকুম,
আদালত জ্বলে তাকওয়ার আলোয়,
নারী হয় মর্যাদার আলোকবর্তিকা—
নয় কোনো সাজঘরের পণ্য,
নেতৃত্ব হয় ভয়ের ফসল—নয় ফন্দির ফাঁদ।

তাই আমি দাঁড়াই, একা, ভিড়ের মাঝে,
কণ্ঠে সুর, চোখে অগ্নি, হৃদয়ে দৃপ্তি—
“হক নয় সংখ্যায়, নয় জনমতের খেলায়,
হক সেখানে, যেখানে আল্লাহ বলেন—
‘এই আমার পথ, এই আমার আলো!’”

 

নবীকে দেখবো বলে

মুহাম্মাদ হুজাইফা ফাহাদ ওয়াজীহ্

থেকেছি নির্ঘুম আমি কত রাতে
জেগেছি চঞ্চল মনে শত ভোরে
কেঁদেছি দরদ নিয়ে দু’হাত তুলে,
হে নবী, শুধু তোমায় দেখবো বলে।
নুয়েছি সিজদায় আমি শত ভোরে
ভিজিয়েছি বুক দুই আাঁখি জলে
হয়েছি প্রতীক্ষমাণ আমি স্বপ্নে
হে নবী, শুধু তোমায় দেখবো বলে।
তোমারই প্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা করে
রেখেছি শত সুন্নাত আঁকড়ে ধরে
মেখেছি তব পায়ের ধূলি চোখে
হে নবী, শুধু তোমায় দেখবো বলে।
শুনেছি জীবনগল্প হাদীস-দারসে
বিস্মিত প্রিয়নবীর ত্যাগ শুনে
গিয়ে আমি ওলিদের নৈকট্যে
হে নবী, শুধু তোমায় দেখবো বলে।

 

নামে নয়, কাজে পরিচয়

মুহাম্মাদ সাকিব (তাকমীল)

নাম তার আকাশ—ভাবে মনে হয়
বড় কোনো মহাজন, দেখে লাগে ভয়
নাম তো নামই, কাজে নেই ছন্দ
নামের ভেতর নেই তেমন গন্ধ।
পরে চশমা, হাতে মোবাইল, মুখে কথা ভার
প্রশ্ন করলেই শুনি গুণ বেশুমার
নামের ভারে হাঁটে সে, চওড়া তার বুক
কাজে নেই যোগ্যতা, কথায় শুধু লুক।
করো না বিচার কেউ নাম দিয়ে ভাই
চিনতে হলে সবাই কাজের দিকে চাই
নাম শুধু নাম জানো, মুখোশের মতো
মূল্য বুঝো মানুষের ভিতরের যত।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on pinterest
Pinterest
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সর্বশেষ