আবদুল হান্নান
হামাসের যাত্রা শুরু হয় অবিরাম দৃর্বার গতিতে। এক সময় হামাস কালের গতি ভেদ করে, সময়ের উজান স্রোত পাড়ি দিয়ে, সময়ের সাথে যোগ্য পাল্লা দিয়ে পৌঁছে যায় শেকড় থেকে শিখরে। যা কোন দিন কেউ কল্পনা করেনি তা দেখিয়েছে তারা। গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, ইসরায়েলের ওপর বড় কোনো আক্রমণ চালানোর শক্তি হামাসের নেই। কিন্তু যেটি হিজবুল্লাহর পক্ষে থেকে আসার কথা ছিল সেটি অপ্রত্যাশিতভাবে আসে হামাসের পক্ষে থেকে।
গত বছর ০৭ অক্টোবর তুফানুল আকসা নামে হামাসের যুদ্ধবাজ সৈনিকরা অদম্য সাহস নিয়ে জারজদের ওপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব হাওয়ার মতো মিসাইল নিক্ষেপ করে তাদের ঘুমকে সাগরের অজানা স্রোতের সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তাদের জীবনধারাকে তছনছ করে দিয়েছে। জারজরা প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে যুদ্ধনীতির সব ধারাকে ভেঙে গণহত্যায় নেমে পড়েছে। অবিরাম মিসাইল নিক্ষেপ করে যাচ্ছে,যেন তারা ফিলিস্তিনদের খেবড়ে-খুবড়ে খেলেও তাদের ক্ষুধা নিবারণ হবে না। হাজারো বোমা নিক্ষেপ করে গাযার কৃষি ক্ষমতাকে হরণ করে নিয়েছে। গাযা এক সময় ছিল মানুষের শোরগোল ও কর্মচাঞ্চল্যে সর্বদা মেতে উঠা উজ্জ্বলময় শহর—যা আজ নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ধ্বংস স্তূপে নিজেকে জাতির সামনে প্রকাশ করছে।
হায় গাযা!
যে শহর হাজারো স্মৃতিকে বহন করে নিজেকে স্মৃতিসৌধ হিসেবে প্রকাশ করছিল, তা আজ মাটির সাথে মিশে গেছে। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় করবস্থান হলো গাযা। যেখানে শুধু মানুষকে দাফন করা হয় নি; বরং বিশ্বের মনবতাকেও দাফন করা হয়েছে।
গাযার মায়েরা হাসিমুখে ছেলেদেরকে শহীদ হতে উৎসাহিত করছেন বটে, কিন্তু জ্বালিয়েছেন বিরহের চিতা। কেঁদেছেন নীরবে নিভৃতে। অশ্রু জলে ভাসিয়েছেন বুক। হাজারো পুস্প এতিম হয়েছে। জানি না, তাদের জীবন কীভাবে রূপ নিবে,তারা কীভাবে নিজেদের ইতিহাসকে বুকে চেপে ধরে তপ্ত আগুনের লৌহশিখা নিয়ে জারজদের জীবনকে বন্যার খড়ের মতো ভাসিয়ে দিবে।
১৯৬৫ সালে আরব আমিরাত বনাম ইসরায়েল একটি যুদ্ধ হয়েছিল। সমস্ত আরব আত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে ৬দিন তাদের সাথে উত্তপ্ত যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু পরিশেষে আরবের ‘বুজদিল’ সৈনিকরা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে ইতিহাসের পাতায় এক কালো অধ্যায় রচনা করে যুদ্ধের ইতি টানল।
আর হামাসের সৈনিকরা আবারো গাযার ময়দানে বদরকে উজ্জীবিত করল। সাগরের গভীর তলদেশ থেকে মণিমুক্তা ছিনিয়ে আনার মতো ক্ষুধার্ত বাঘের মুখ থেকে শিকারকে ছিনিয়ে আনছেন। যার কারণে এই শতাব্দীর নতুন প্রজন্ম তাওহীদি জনতা আরবের বুজদিল সৈনিকদেরকে ধিক্কার দিয়ে বের করে হামাসের অপরাজেয় সৈনিকদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে দিলের গহীনে তাদের জন্য রাখছে অজস্র ভালোবাসা প্রেম মমতা। অশ্রুসিক্ত মোনাজাত। আশা-হতাশা মিশ্রিত হাজারো স্বপ্ন। অচিরেই আল্লাহর বিজয়ী বাহিনী হিসাবে তারা বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ করে হাজারো মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নকে পূরণ করবে। ইনশাআল্লাহ—যে মসজিদের প্রতি কণায় কণায় রয়েছে হাজারো রাসূলের স্মৃতি, সেই মসজিদ আবারও বাজবে বেলালের ধ্বনি।
একদিন তারা শেষ প্রহর গুনবে। জুলুম-অত্যাচারের দাস্তান শেষ নিঃশ্বাস নিবে। তিমিরাচ্ছন্ন রাতের পর উজ্জ্বল প্রভাতের সোনালী সূর্যের কিরণ উঁকি মারবে। অবশেষে নিয়তি হাসবে। উদিত হবে সৌভাগ্যের প্রদীপ্ত সেতারা। একদিন নতুন সূর্য উদিত হবে। সেইদিন উৎফুল্ল হৃদয় নিয়ে শিশির ভিজা ঘাসে হাঁটবে তারা।
সালাম
হে জান্নাতের সবুজ পাখিরা।
লেখক : শিক্ষার্থী, জামাতে দুয়াম, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া